এক লোক রাতের
অন্ধকারে একা জঙ্গলের
পথধরে বাড়ি ফিরছিল।
হাতে টিমটিম
করে জ্বলা হারিকেন।
চলতে চলতে হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো –
হারিকেনের আলো পড়ে রাস্তার
পাশে কি যেন ঝিলিক
দিয়ে উঠলো।
কৌতুহলী হয়ে লোকটা এগিয়ে গেল
সেই
দিকে। গিয়ে দেখল এক তরুনী মেয়ের
লাশ
পড়ে আছে। সে ভয় পেলেও ঠিকই
দেখলো মেয়েটির ডান হাতের মধ্যম
আঙুলে একটি হীরার আংটি জ্বল জ্বল
করছে।
একটু ইতস্তত
করে সে হারিকেনটা পাশে নামিয়ে রেখে লাশেরআঙুল
থেকে আংটিটা খোলার
চেষ্টা করলো। কিন্তু আঙুল ফুলে ওঠায়
কিছুতেই
ওটা খুললো না। লোকটা তখন তার
পকেট
থেকে একটি ছুরি বের করলো। তারপর
সেই
ছুরি দিয়ে পুচিয়ে পুচিয়ে লাশের
আঙুলটা কেটে ফেলল। ঠিক তখনই
রাতের
নিস্তব্ধতা ভেঙে কাছাকছি কোথাও
একটা শেয়াল ডেকে উঠলো।
লোকটা প্রচন্ড
ভয় পেয়ে ঐ আঙুল সহ
আংটি পকেটে পুরে ছোটা শুরু
করলো। এক
ছুটে বাড়িতে এসে কাউকে কিছুনা বলে সে ঐ
রাতেই চুপে চুপে আঙুল
থেকে আংটি ছাড়ালো। তারপর
আংটিটা লুকিয়ে রেখে আঙুলটা পুঁতে ফেলল
মাটিতে।
এরপর অনেক দিন প্রায় দশ ববছর
কেটে গেছে।
ঐ
আংটিটা বেচে ব্যাবসা করে লোকটা এখন
অনেক টাকার মালিক।
লোকটা সেই মেয়েটির কথা প্রায়
ভুলে গেছে। এক
অমাবস্যা রাতে সে তখন
বাড়িতে একা।
চারিদিকে শুনশান নিরবতা। হঠাত্
বাইরে দরজার কড়া নড়ে উঠলো – খট্
খট্ খট্
খট্। সে একটু
বিরক্তি নিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।
দেখলো দরজার
সামনে শাদা শাড়ি পড়ে এক
তরুনী দাঁড়িয়ে আছে। মাথায়
ঘোমটা দেয়া থাকলেও
তাতে তার রূপ
ঢাকা পড়ছে না এতটুকু। লোকটা গদ গদ
হয়ে প্রশ্ন করলো – কি ব্যাপার ?
কাকে চান?
তরুনী কেমন
খসখসে গলায় বলল – ভাই আমি অনেক দূর
থেকে এসেছি।
যাবো আপনাদের পাশের গ্রামে।
কিন্তু
এতরাতে অন্ধকারে পথ
হারিয়ে ফেলেছি।
এদিকে প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে।
আমাকে যদি আজরাতে একটু আশ্রয়
দিতেন,
একটু খাবার দিতেন! লোকটা যেন এমন
সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল।
বাড়িতে সে একা তায় আবার এমন
সুন্দরী মেয়ে। সে বলল – আসুন আসুন,
কোন
চিন্তা নেই। সব ব্যবস্থা হবে।
সে মেয়েটিকে বসতে দিয়ে খাবার
নিয়ে এল। মেয়েটি খাবারের
থালা টেনে নিয়ে খাবার
মাখাতে লাগলো।
লোকটা তখন লোভাতুর
চোখে মেয়েটির
দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ
সে চমকে উঠলো।
দেখলো মেয়েটি যে হাত
দিয়ে খাবার
মাখাচ্ছে সে হাতে চারটি আঙুল।
মধ্যমা আঙুলটা যেখানে থাকার
কথা সেখান
থেকে রক্ত ঝরছে। লোকটির
আত্মা কেঁপে উঠলো। সে ভয়
পাওয়া গলায়
জানতে চাইলো – আ..আপনার
হাতের আঙুলের কি হয়েছে!? তখনই
মেয়েটা সরাসরি লোকটার
দিকে তাকিয়ে একটা বিকট
হাসি দিল।
যা দেখে লোকটা প্রচন্ড ভয়
পেয়ে গেল।
এবং ভয়ের
একটা অদ্ভুত শিরশিরানি তার
মেরুদন্ড
বেয়ে নেমে গেল। মনে হল
মেয়েটাকে সে কোথাও দেখেছে।
তখনই
মেয়েটা কথা বলে উঠলো, আপনিই
তো জানেন আমার আঙুলের খবর।
লোকটা ভয়ে ভয়ে বলল মানে?
মেয়েটা ভয়ংকর
একটা হাসি দিয়ে বলল
মনে পড়ে আজ থেকে দশ বছর
আগে রাস্তার
পাশে একটা মেয়ের লাশ
পড়ে থাকতে দেখেছিলেন?
আপনি লাশের মূল্যবান অলংকার
গুলো নিয়ে সরে পড়েছেন
সাথে লাশটার মধ্যমা আংটির জন্য
আঙুলটাও। মনে পড়ে আপনার?
আপনি যদি লোকজনকে লাশটার
কথা অন্তত
বলতেন তাহলে অন্তত শিয়াল কুকুর
একটা মুসলিম, অসহায়
এবং পরিস্থিতির
শিকার মেয়ের লাশ
চিড়ে চিড়ে খেতোনা।
আপনিইতো আংটির
লোভে লাশটার একটা আঙুল পর্যন্ত
কেটে ফেলেছেন। এখন আমায় ঐ
আঙুলটা দিন। মধ্যমার আঙুল
না থাকলে কত
যে অশুবিধা সেটা বলে বোঝানো যাবেনা।
তখনই লোকটার দশ বছর
আগে দেখা লাশের চেহারাটার
কথা মনে পড়ে গেল। এই মেয়েটার
লাশ
থেকেইতো সে ঐ
আংটিটা পেয়েছে। তাহলে এ
এখানে এলো কোথ্যেকে? আর কিছু
ভাবতেই
পারলোনা তার আগেই জ্ঞান
হারালো।
সকালে বাড়ির লোকজন
ফিরে এসে অনেক
ডাকাডাকি করেও দেখলো যখন
কেউ
দরজা খুলছেনা তখন
দরজা ভেঙে বাসায়
ডুকে দেখে লোকটার নিস্তেজ দেহ।
যেনো প্রবল
আতঙ্কে হা হয়ে আছে।
ডাক্তাররা পরীক্ষা করে বলে অতিরিক্ত
মানষিক চাপের ফলে স্ট্রোক
করে মারা গেছে। আর
লোকটা যেখানে ঐ
আঙুলটি পুঁতে রেখেছিলো সেখানে কেউ
যেনো মাটি খুড়ে রেখে গেছে।
আসল
ঘটনাটা কেউ বুঝতেই
পারলোনা এটা যে লোকটার
পাপের
শাস্তি।
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক