সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ।
বাগানবাড়ির চারদিকে অন্ধকার নামছে ধীরে ধীরে ।
পাবন ব্যালকনিতে দাড়িঁয়ে ভাবছে,”রহস্য তো ক্রমাগত জটিল হচ্ছে । অথচ ওরা কোন কূলকিনারাই খুজেঁ পাচ্ছে না ।”
মীমের ডাকে ভাবনা ভাঙ্গলো ওর ।
– এখান থেকে অল্প একটু দূরে মেলা বসেছে । চল ঘুরে আসি সবাই মিলে । মীম বলল ।
– ঠিক আছে ,হাসি মুখে বলল পাবন ।
সবাই রেডী হয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ।
মেলার চারপাশে ভালোই আলোকসজ্জা করা হয়েছে । বিশেষ করে প্রবেশ পথটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ।
পাবন, জয়, অরকিয়া, মীম আর মুশতারী মেলার ভিতর ঢুকলো । হরেক রকমের দোকান বসেছে মেলাতে । একপাশে নাগরদোলা ঘুরছে । পুতুলের নাচের স্টল থেকে গানের সুর ভেসে আসছে । মানুষের ভিড় মোটামুটি । যার যার পছন্দ মতো খাবার জিনিস-পত্র কিনে মেলা থেকে বের হল ওরা ।
গাড়ির সামনে এসে দাড়াঁতেই হঠাৎ পাবন চেচিঁয়ে বলল,”জয়, মাথা নামা । জয় পাবনের কথা শুনতেই মাথা নামিয়ে ফেলল । গুলিটা এসে গাড়ির কাচে লাগল । কাচ ভেঙ্গে বুলেট গাড়ির ভিতরে ঢুকে গেল । পাবন ভালো করে তাকানোর আগেই গুলি করা লোকটা গাড়িতে উঠে চলে গেল । পাবন দৌড়ে গিয়ে গাড়ির নাগাল পেল না ।
অগ্যাত গাড়ির কাছে ফিরে আসলো ও ।
জয় দুশ্চিন্তার নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,”গুলি কি আমাদের উদ্দেশ্য করে ছোঁড়া হয়েছে নাকি ভূল করে গুলি আমাদের দিকে আসছে ?
পাবন বলল,”মনে হয় আমাদের লক্ষ্য করেই গুলি ছোঁড়া হয়েছে । কিন্তু কেন ? আমাদের তদন্তের খবর কি জেনে গেছে কেউ ? তাহলে কি আমরা সঠিক পথেই হাটঁছি ?”
পাবন ড্র্রাইভারকে বলল ওদেরকে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যেতে ।
আধঘন্টা পরে ওরা থানায় পৌঁছালো ।
বুলেটটা ইন্সপেক্টরকে দিয়ে বলল,”এটা একটু পরীক্ষা করে দেখবেন । আর মেলাতে পারলে কিছু ফোর্স পাঠিয়ে দেন যদি কোন ক্লু পায় ।”
ইন্সপেক্টর বলল,”ঠিক আছে । কিন্তু দুশ্চিন্তার কারণ হল ওরা তোমাদের হামলা করলো কেন ?
” তা তো জানি না । এই বিষয়টা নিয়ে আমিও ধোঁয়াশায় আছি । যাই হোক আমরা যাই এখন”, পাবন বলল ।
” এক মিনিট । দুইজন পুলিশ তোমাদের সাথে দিয়ে দিচ্ছি । বলা তো যায় না ওরা আবারও হামলা করতে পারে”, ইন্সপেক্টর বললেন ।
পাবন কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে ইন্সপেক্টরের দিকে তাকিঁয়ে ধন্যবাদ দিল ।
গাড়ি এসে থামলো বাগানবাড়ি সামনে । ওদের পৌঁছে দিয়ে পুলিশগুলো চলে গেল ।
গাড়ি থেকে নেমে পাবন বলল,”মীম, আন্টিকে কিছু বলার দরকার নেই । শুধুই দুশ্চিন্তা করবে ।”
মীম মাথা দুলিয়ে হ্যা বলল ।
পরদিন সকাল ।
পাবন, মীম আর জয় হাটঁতে বের হয়েছে । পথে একজন মাঝবয়সী লোকের সাথে দেখা হল ওদের ।
মীম চেচিঁয়ে বলল,”এই যে শিকারী কাকু ।”
লোকটা ফিরে তাকিঁয়ে হেসে বলল,
– আরে মীম । কি খবর তোমার ? ওরা কারা ?
– ওরা আমার বন্ধু । পাবন, এটা হচ্ছে আমার শিকারী কাকু ।উনার নাম কামাল । অনেক কিছু শিকার করেন তিনি ।
– ও আচ্ছা । পাবন হাসিমুখে তাকালো ।
– তো আপনার বন্দুক কি বাড়িতে রেখেই বের হয়েছেন আজকে ?
– নাহ্ , আসলে এক বন্ধু আমার বন্দুকটা ধার নিয়েছিল পরশু । বলেছে আজ দিবে । ওটাই আনতে যাচ্ছি ।
– আমরা কি আপনার সাথে যেতে পারি ? আমরা হাটঁতেই বেরিয়েছিলাম ।
– কোন সমস্যা নেই । হাসিমুখে বললেন কামাল সাহেব ।
কথা বলতে বলতে ওরা কিছুক্ষণ পর একটা বাড়ির সামনে পৌঁছালো ।
বাড়ির গেইটে বড় করে লিখা “চৌধুরী ভিলা” ।
ওরা গেইট পাড় হয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো । সাদা পাঞ্জাবী পড়া একটা লোক ওদের দেখে হাসিমুখে এগিয়ে আসলো ।
কামাল সাহেব বললেন,”ওর নাম রেদওয়ান চৌধুরী । আমরা বন্ধুরা রিদু বলে ডাকি ওকে । আর রিদু,ওরা হচ্ছে মীমের বন্ধু ।”
রেদওয়ান চৌধুরী ওদের সবার সাথে পরিচিত হল । ওদেরকে বসতে বলল । চা খেতে খেতে ওরা কথা বলতে লাগলো ।
একটুপর কামাল সাহেব বললেন,”আমাকে এখনই উঠতে হবে । যা,বন্ধুকটা নিয়ে আয়,রিদু ।
– আসলে তোর বন্ধুকটা আমার ভাইপো নিয়েছে । বিকালে দিয়ে যাবে । আমি বিকালে তোর বন্ধুক তোর বাড়িতে দিয়ে আসবো ।
– ঠিক আছে । তাড়াতাড়ি দিয়ে আসিস ; বুঝোসই তো লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক । আমরা যাই তাহলে , কামাল সাহেব বললেন ।
ওরা বাড়িতে ফিরে আসলো ।
নাস্তা শেষে পাবন আর জয় থানায় গেল । গিয়ে দেখলো শাকিল সাহেব ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলতেছে ।
ওদের দেখে শাকিল সাহেব বললেন,
– তোরা ঠিক আছিস তো ? কারও কোন ক্ষতি হয়নি তো ।
– না কোন ক্ষতি হয় নি, জয় বলল ।
– কাল পুলিশ মেলায় গিয়ে একটা কার্তুজ পেয়েছে । কার্তুজ আর বুলেট পরীক্ষা করে জানা গেছে তোদেরকে কোন এক লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক থেকে গুলি করা হয়েছে শাকিল সাহেব বললেন ।
পাবন হঠাৎ বলে উঠলো,
– এক মিনিট । আচ্ছা ইন্সপেক্টর সাহেব,এই শহরে কতজনকে লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক দেওয়া হয়েছে ?
– তিনজনকে ।
– তাদের মধ্যে নিশ্চয়ই কামাল সাহেবের নাম আছে ।
– হুম আছে । তিনি শিকার করার জন্যই বন্দুক ব্যবহার করেন । বাকি দুইজনের মধ্যে একজন এই শহরে থাকে না । অনেক আগেই শহর ছেড়ে চলে গেছেন । আর একজন শহরের একদম শেষ প্রান্তে থাকেন । কিন্তু একটা বিষয় অবাক লাগছে খুব যে তিনজনের কাছে বন্দুক আছে তারা সবাই খুব নিরীহ আর শান্ত স্বভাবের লোক । তারা এরকম কিছু করবে বলে মনে হয় না ।
– শহরের শেষ প্রান্তে যার কাছে বন্দুক আছে তার ঠিকানাটা দেন । ইন্সপেক্টর সাহেব ওদেরকে ঠিকানাটা দিল ।
শাকিল সাহেব বললেন,”আমি কিছুদিন আসতে পারবো না । ইন্সপেক্টর তদন্ত করবেন সবকিছু । তোরা সাবধানে থাকিস ।”
শাকিল সাহেব বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ।
পাবন আর জয়ও থানা থেকে বের হয়ে বাগানবাড়িতে ফিরে আসলো ।
মীম, মুশতারী আর অরকিয়া একসাথে বসে গল্প করছিলো ।
পাবন আর জয়কে দেখে মীম উঠে এসে বলল,
– “জানিস কি হয়েছে ?”
– কি হয়েছে ?
– শিকারী কাকুর বন্দুক হারিয়ে গেছে ।
– হারিয়ে গেছে মানে !! অবাক হল পাবন,”কিভাবে হারালো ?”
– সেটাতো জানি না । উনার মন খারাপ দেখে কিছু জিজ্ঞাসা করি নি আর ।
পাবন আর কিছু বলল না ।
ওর মাথায় এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, “বন্দুকটা কি আদৌ হারিয়েছে নাকি কেউ চুরি করেছে ?”
আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……
ধর্ষণ (পর্ব -১)
ধর্ষণ (পর্ব -২)
ধর্ষণ (পর্ব -৩)
ধর্ষণ (পর্ব -৪)
ধর্ষণ (পর্ব -৫)