ধর্ষণ (পর্ব -৪)

ধর্ষণ (পর্ব -৪)

পর্ব -৪

শহরের স্টেশনটা আসতেই হুইসেল বাজিয়ে থামলো ট্রেনটা । পাবন, জয়, অরকিয়া আর মুশতারী ট্রেন থেকে নামলো । ওরা ট্রেন থেকে নামতেই দেখলো ভিড়ের মাঝে একটা মেয়ে ওদের লক্ষ্য করে হাত নাড়ছে ।
মুশতারী হেসে বলল,”ওর নামই মীম ।”
তারপর মুশতারীও হাত দিয়ে ইশারা করলো । মীম ওদের কাছে আসলো । সবাই এক এক করে পরিচিত হল ওর সাথে ।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়িতে করে মীমদের বাংলো বাড়িতে আসলো ওরা । বিশাল জায়গা জুড়ে বাড়িটা বানানো হয়েছে । বাড়ির চারপাশে হরেক রকমের গাছে ভরপুর । মীম আর ওর আম্মু ছাড়া আপাতত বাড়িতে আর কেউ নেই । মীমের আব্বু ব্যবসার কাজে সুইজারল্যান্ড গেছেন । মাসখানেক পর ফিরবেন ।

ফ্রেশ হয়ে ওরা সবাই একসাথে নাস্তার টেবিলে বসলো ।
মীম জিজ্ঞাসা করলো,” তোমরা কি এমনিতে ঘুরতে আসছো নাকি কোন কাজে আসছো ?”
মুশতারী কিছু বলতে যাচ্ছিল পাবন ওকে থামিয়ে বলল,”আমরা এমনিতে ঘুরতে এসেছি ।”
মীমের আম্মু হাসিমুখে বলল,”তোমাদের যতদিন খুশি এখানে থাকো । বাড়িটা সবসময় ই ফাকাঁ থাকে । তোমরা থাকলে আমার অনেক ভালো লাগবে ।:
পাবন হাসিমুখে উনাকে ধন্যবাদ জানালো ।

নাস্তা শেষে ওরা ঘুরতে বের হল । খুব সুন্দর একটা পাহাড় আছে এই শহরে । ওরা সবাই ঐ পাহাড়ে ঘুরতে গেল ।
মীম বলল,”পাহাড়ের এই দিকটাতে সবাই ঘুরাফেরা করে ; ছবি তোলে । কিন্তু ঐ দিকটাতে মানুষ তেমন একটা যায় না ।”
– কেন ? জয় জিজ্ঞাসা করলো ।
– ঐদিকটাতে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীদের উপদ্রব বেশি ।
– পুলিশ এই ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয় না ?
– ওরা খুব হিংস্র প্রকৃতির । মানুষ মারতে ওদের একটুও হাত কাপেঁ না । পুলিশের তোয়াক্কা ওরা করে না । আর পুলিশও ওদের নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না ।
জয় আর কিছু বলল না ।

সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে গেল ওরা ।
রাতে শাকিল সাহেব ফোন দিল জয়কে ।
বললেন,”কাল উনি এই শহরে আসবেন । এখানকার ইন্সপেক্টর এর সাথে কথা বলবেন । তারপর তদন্ত শুরু করবেন ।”
পাবন বলল,”জয়,কাল থেকে আরিয়ানকে খোঁজার মিশনে নামবো আমরা ।”
জয় ঘাড় দুলিয়ে সম্মতি জানালো ।

পরদিন সকাল ।
সূর্য সবেমাত্র পূর্বাকাশে উঁকি দিয়েছে ।
পাবন ফ্রেশ হয়ে বাড়ির বাহিরে হাটঁতে বের হল । মীম ওর ফুল গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলো । পাবন মীমকে জিজ্ঞাসা করলো,
– মুশতারী কোথায় ?
– ও তো ঘুমাচ্ছে ।
– আচ্ছা তুমি আরিয়ান নামের কোন ছেলেকে চিনো ? এই শহরেই থাকে ?পাবন একটু হেসে মীমকে জিজ্ঞাসা করলো ।
– না তো । এই নামের কাউকে চিনি না”,একটু ভেবে বলল মীম ।
– ও আচ্ছা ।
– কেন ?
– না এমনিতেই । আরিয়ান আমার পরিচিততো তাই । তোমার ফুলগাছ গুলো অনেক সুন্দর তো ।
– ধন্যবাদ ; আমি এগুলো নিজ হাতে লাগিয়েছি”, হাসিমুখে বলল মীম ।
তখন মীমকে ওর আম্মু ডাক দিল । মীম চলে গেল ।

সকালের নাস্তা শেষ করে ওরা আবারও ঘুরতে বের হল । মীম ওদেরকে একটা পার্কে নিয়ে আসলো । একটুপর শাকিল সাহেব ফোন দিলেন । উনি এসেছেন ।
পাবন বলল,”মুশতারী আর অরকিয়া তোরা মীমের সাথেই থাক । আমি আর জয় একটু আসছি ।”
ওরা ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিল ।

শাকিল সাহেব পুলিশ স্টেশনে আছেন । পাবন আর জয় একটা গাড়ি নিয়ে ওখানে চলে গেল । শাকিল সাহেব ওদেরকে ইন্সপেক্টরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন । আর বললেন,”ওরা যে তদন্ত করতে এখানে এসেছে সে বিষয়ে ওদেরকে যেন সাহায্য করেন । আর তিনিও নজর রাখবেন ।”

এদিকে মুশতারী, মীম আর অরকিয়া পার্কে হাটঁছে । হঠাৎ ওরা দেখলো একটা মেয়েকে তিনটা ছেলে ঘিরে দাড়িঁয়ে আছে । আর মেয়েটা ভয়ে চুপচাপ দাড়িঁয়ে আছে । ওরা এগিয়ে গেল মেয়েটার কাছে । ছেলেগুলো মেয়েটাকে বাজে বাজে কথা বলছে ।
অরকিয়া কাছে গিয়ে বলল,”ভাইয়া কি হয়েছে ?”
একটা ছেলে ওর দিকে তাকিঁয়ে বলল,”সবাইকে ভাইয়া বললে বিয়ে করবেন কাকে ?
অরকিয়া বলল,”ও আচ্ছা । এই কথাটা তো ভেবে দেখি নি । কাছে আসেন তো । আপনাকে একটু দেখি ।”
ছেলেটা ওর কাছে আসতেই ঠাস করে ওর গালে একটা চড় দিয়ে বলল,”শালা, মেয়ে দেখলেই খালি বিয়ে করার শখ জাগে । আজ তোদের বিয়ে করার শখ মিটাবো”, এই বলে শার্টের হাতাটা গুটিয়ে নিয়ে অরকিয়া ওর পাশে থাকা ছোট একটা গাছের চারা ভেঙ্গে হাতে নিল । ভড়কে গেল ছেলেগুলো । এদিকে অরকিয়ার চেচাঁমিচিতে বেশ কিছু লোকজনও এগিয়ে আসলো । ছেলেগুলো ভয়ে পালিয়ে গেল ।

মেয়েটা এসে অরকিয়াকে ধন্যবাদ দিল । রাগে অরকিয়ার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে । মেয়েটাকে ও বলল,”ধন্যবাদের কিছু নেই । কেউ কিছু বললে চুপ করে দাড়িঁয়ে না থেকে প্রতিবাদ করবেন । চুপ করে থাকলে ওদের সাহস আরও বাড়বে । আপনি মেয়ে ; আপনি মানুষ ; দুর্বল ভাববেন না কখনও নিজেকে ।” মেয়েটা বলল,”আমি সোমা । এই শহরেই থাকি ।”
মীম এগিয়ে এসে বলল,”আমি মীম । আমিও এখানেই থাকি । ওরা আমার বন্ধু । ওর নাম অরকিয়া আর ওর নাম মুশতারী ।”
মেয়েটা আবারও ওদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল ।

একটুপর পাবন আর জয় ফিরে আসলো । অরকিয়াকে দেখে পাবন বলল,”কিরে, চোখ মুখ লাল কেন তোর ? শার্টের হাতাও গুটানো !! ঝগড়া করেছিস কারো সাথে ?”
মুশতারী ওদেরকে খুলে বলল ঘটনাটা ।
সব শুনে পাবন অরকিয়াকে বাহবা দিয়ে বলল,”চল তোকে আইসক্রীম খাওয়াবো ; তাহলে রাগ কমে যাবে ।”
তারপর সবাই মিলে আইসক্রীম খেল ওরা ।

পড়ন্ত বিকাল ।
সূর্যটা হেলে পড়েছে পাহাড়ের গায়ে । পাহাড়ের গায়ে সূর্য আলো পড়তেই সবুজ দুত্যি ছিটকে পড়ছে । পাহাড়ের ঢালে বসে আছে ওরা ।
পাবন বলল,”মীম্ একটা কথা তোমার কাছে আমরা লুকিয়েছি । আমরা আসলে গোয়েন্দা । এখানে একটা তদন্তে এসেছি আমরা । মুশতারীর কাজিন জিনিয়া কিছুদিন আগে ধর্ষিত হয়েছে । অপরাধীরা এই শহরে এসে গা ঢাকা দিয়েছে । তদন্ত শুরু করার আগে তোমাকে কিছু জানাই নি । এখন থেকে আমাদের তদন্ত শুরু । আশা করি তুমিও বিষয়টা গোপন রাখবে ।”
মীম অবাক হয়ে ঘাড় দুলিয়ে হ্যা বলল শুধু ।
তুমি কিছু মনে করো নি তো ? অরকিয়া বলল ।
মীম হেসে বলল,” আরে না । কিছু মনে করবো কেন ? গোয়ন্দাদের কাজে গোপনীয়তা থাকা ভালো । আর আমার তো এখন গর্ব হচ্ছে তোমাদের মত বন্ধু পেয়ে ।”
চল আমরা একটু সামনের দিকে হেটেঁ আসি,”মুশতারী হেসে বলল ।
অরকিয়া বলল,” হুম চল ।”

ওরা সবাই একসাথে হাটঁতে লাগলো ।
হাটঁতে হাটঁতে হঠাৎ রাস্তার একপাশে ছেড়াঁ কাপড়ে একটা পাগলকে শুয়ে থাকতে দেখে থমকে দাড়ালো অরকিয়া ।
– কিরে দাড়ালি কেন ? জয় জিজ্ঞাসা করলো ।
-এই পাগলটাকে আগেও কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে ।
– তো কি হয়েছে ? এক পাগলকে তো কতবারই দেখা যেতে পারে,” পাবন বলল।
– সেটা ঠিক আছে । কিন্তু আগেরবার যখন দেখেছি তখন পাগল ছিল না । দিব্যি ভালো মানুষ ছিল । আর দেখ এই পাগলটার হাতে কাটা একটা দাগ আছে ; এই একই দাগ ঐ লোকটার হাতে দেখেছি । কিন্তু এই পাগলটার মুখে দাড়িঁ গোঁফ আছে ; ঐ লোকটার মুখে ছিল না ।
– কোন লোকটার কথা বলছিস ?
– সেটাই তো মনে করতে পারছি না ।
– আচ্ছা এখন বাড়ি চল । কিছু না জেনে তো কাউকে কিছু বলা যাবে না ,”জয় বলল ।

অগ্যাত ওরা বাড়ির পথে রওয়ানা দিল ।
পাবন পাগলটার দিকে আবার ফিরে তাকালো ।

মনে একটাই প্রশ্ন খচখচ করতে লাগলো ওর,” লোকটা সত্যিই পাগল তো নাকি সত্যিই পাগল সেজে আছে ? আর কেন-ই বা পাগল সেজে থাকবে ?

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

ধর্ষণ (পর্ব -১)
ধর্ষণ (পর্ব -২)
ধর্ষণ (পর্ব -৩)
ধর্ষণ (পর্ব -৪)
ধর্ষণ (পর্ব -৫)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত