ধর্ষণ (পর্ব -৩)

ধর্ষণ (পর্ব -৩)

পর্ব -৩

পাবন জিনিয়ার কথা শুনে নাক কুচঁকে বলল,”মূল ঘটনাটা আমাকে একটু খুলে বলবেন ?”
জিনিয়া বলল,”আসলে আরিয়ানের সাথে আমার সম্পর্কটা কয়েকমাসের । পরশু দিন সন্ধ্যা ওর সাথে প্রথম দেখা করেছিলাম । কালও ও আমাকে দেখা করতে বলে । আমি সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে ওর সাথে দেখা করতে যাই । গিয়ে দেখি ও তখনও আসে নি । আমি ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি । হঠাৎ কে যেন আমার চোখে টর্চ মারলো । চোখ কচলে ভালো করে তাকানোর আগেই দুই তিনজন লোক আমার উপর ঝাপিঁয়ে পড়ে । তারপর……………” আর কিছু বলতে পারলো না জিনিয়া ; কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ও ।

পাবন ওকে সান্ত্বনা দিল ।
তারপর জিজ্ঞাসা করলো,
– আপনি আরিয়ানকে ফোন দিয়েছিলেন আর ?
– হুম, দিয়েছিলাম । ওর ফোন বন্ধ ।
– ওর ঠিকানা জানেন আপনি ?
– না তা জানি না ।
– ঠিকানা না জেনেই অপরিচিত একজনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লেন !
– আসলে তখনতো আর ভাবি নি এতসব কিছু হয়ে যাবে ।
– ভাবলে হয়তো এত বড় ক্ষতি হত না আপনার ।
– বুঝতেই পারি নি যেই ছেলে আমাকে এত ভালোবাসে সে আমার সাথে এরকম করতে পারবে ?
– আচ্ছা আপনার কাছে কি মনে হয় ও এরকম কেন করলো ?
– সেটা তো জানি না । বুঝতেও পারছি না ।
– আচ্ছা আরিয়ান কোথায় থাকে ? বাড়ি না চিনেন এটা কি বলতে পারবেন ?
– হ্যা, ও আমাকে বলেছিল ও শহরে থাকে ।
– এখান থেকে শহর কতদূর ?
– এইতো ট্রেনে যেতে একঘন্টার মত সময় লাগে । মুশতারী খুব ভালো করেই চিনে ।
– আপনি কোন চিন্তা করবেন না । আমরা কাল সকালেই আরিয়ানের খোঁজে শহরে যাবো । আপনি এখন ঘরে যান । দয়া করে ভেঙ্গে পড়বেন না । আমরা সবাই আপনার সাথে আছি ।

জিনিয়া পাবনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে চলে গেল ।

পাবন আরিয়ানের বিষয়টা ভাবতে ভাবতে উঠান পেরিয়ে মুশতারীদের ঘরে ঢুকলো । জয় অরকিয়া আর মুশতারী তখনও গল্প করছিলো ।
পাবন আসতেই জয় জিজ্ঞাসা করলো,”কিরে কোথায় ছিলি এতক্ষণ ?
– এই তো উঠানে । জিনিয়ার সাথে কথা বললাম ।
– জিনিয়ার সাথে !! থেমে গেল জয় ।
– হুম ।
– কি কথা বললি ? অরকিয়া বলল ।

পাবন জিনিয়ার সাথে যা কথা হয়েছে সবকিছু খুলে বলল ।
মুশতারী পাবনের কথা শুনে আৎকে উঠলো ।
– কি বলছিস ? জিনিয়া আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলো !!
– হ্যা, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ও । আমাদের উচিত ওর পাশে থাকা । কাল আমরা আরিয়ানের খোঁজে শহরে যাবো । কিন্তু সেখানে কি থাকার মতো কোন হোটেল পাবো ?
– মফস্বল শহর তো । হোটেল নেই মনে হয় । তবে আমার এক বান্ধবী স্বপরিবারে ঐখানে থাকে । ওর নাম মীম । বিশাল বড় বাগানবাড়ি আছে ওদের । পরিবারে মানুষও বেশি নেই । আমরা চাইলে ওর বাড়িতে থাকতে পারি,”মুশতারী বলল ।
– ঠিক আছে,তুই ওর সাথে কথা বল । আর জয় তুই শাকিল আঙ্কেলকে ফোন দিবি । এই কেইসে ওনার সাহায্য আমাদের অনেক দরকার ।

পরদিন সকাল । পাবন, জয়, অরকিয়া আর মুশতারী শহরে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়েছে ।
মুশতারীদের বাড়ির উঠানে এসে জমায়েত করেছে সবাই । জিনিয়ার আব্বু আম্মুও এসেছে ।
জিনিয়ার আম্মু পাবনকে বলল,”আমরা তোমাদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ । তোমরা আমাদের এরকম একটা বিপদে আমাদের পাশে দাড়িঁয়েছো ।”
পাবন বলল,”মানুষের বিপদে তো মানুষই দাড়াঁবে । আমরা যেন সফল হতে পারি সেজন্য দোয়া করবেন ।”

পাবন, জয়, অরকিয়া আর মুশতারী ট্রেন স্টেশনের দিকে রওয়ানা দিল । হাটঁতে হাটঁতে পাবন মুশতারীকে জিজ্ঞাসা করলো,
– মীমকে ফোন দিয়েছিলি ?
– হ্যা দিয়েছি ।
– কি বলল ও ?
– আমাদের যাওয়ার কথা শুনে ও তো খুব খুশি । বলল ওর ছুটির দিনগুলো খুব বোরিং কাটছে । আমরা গেলে ওর জন্য খুব ভালো হবে ।
– যাক তাহলে থাকার জায়গার ঝামেলা মিটলো, পাবন বলল ।

ইতিমধ্যেই ওরা স্টেশনে পৌঁছে গেছে । বিশ মিনিট পর ট্রেন ছাড়বে শহরের উদ্দেশ্যে । ট্রেনটা ঠায় দাড়িঁয়ে আছে স্টেশনে । যাত্রীদের ভালোই সমাগম আছে । ওরা যাত্রী ছাউনিতে এসে বসলো ।
পাবন জয়কে জিজ্ঞাসা করলো,”কিরে শাকিল আঙ্কেলকে ফোন দিয়েছিলি ?”
” হ্যা দিয়েছিলাম । বুঝোস ই তো ইন্সপেক্টর মানুষ । কত ঝামেলায় থাকতে হয় । পরশুর আগে উনি আসতে পারবেন না”, জয় বলল ।
” সমস্যা নাই । পরশু ই আসুক । আমরা গিয়ে আগে স্থির হই । আরিয়ান নিশ্চয়ই…………… হঠাৎ থেমে গেল পাবন,”আরে আসল জিনিস ই তো আনতে ভুলে গেছি । আরিয়ানের ছবি তো ভূলে ফেলে এসেছি ।”
“কি বলছিস ? তোরও ভূল হয় !! অরকিয়া বলল ।
“কেন ? আমি তো মানুষই । মানুষের ই তো ভূল হয়”, পাবন বলল ।
” কিন্তু এখন আবার বাড়ি গেলে তো ট্রেনটা মিস করবো । পরের ট্রেন সেই বিকালে”,মুশতারী বলল ।
“কি আর করা ? আরিয়ানের ছবি ছাড়া গিয়ে লাভ হবে কি ? ওকে তো তাহলে খুজেঁই পাবো না”, জয় বলল ।
“তাও ঠিক । চল তাহলে আবার বাড়ি যাই”, মুশতারী বলল ।
” আর যেতে হবে না”,একটা মেয়েকন্ঠ বলে উঠলো পিছন থেকে ।
ওরা পিছন দিকে তাকিঁয়ে দেখলো জিনিয়া দাড়িঁয়ে আছে । উঠে দাড়ালো পাবন । জিনিয়া ওর হাতে শার্ট আর সানগ্লাস পড়া একটা ছেলের ছবি দিল ।
“এটাই আরিয়ানের ছবি । এতদিন পরমযত্নে লুকিয়ে রেখেছিলাম । আজ ইচ্ছে করছে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই”, জিনিয়া বলল ।

পাবন ছবিটা হাতে নিয়ে বলল,”আসলে ছবিটা ভূলে বাড়িতে রেখে এসেছিলাম।”

তখনই ট্রেনের সাইরেন বেজে উঠলো ।
“এই তাড়াতাড়ি চল ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে”,তাগাদা দিল মুশতারী ।

ওরা দ্রুত ট্রেনে উঠে পড়লো । ধীরে ধীরে ট্রেন চলতে শুরু করলো । জিনিয়া ওর মলিন মুখে কোনরকমে হাসি দিয়ে বিদায় জানালো ওদের ।

জানালার পাশের সিটে বসেছে পাবন । দ্রুতগতিতে ট্রেন চলছে । ও বাহিরে তাকিঁয়ে দেখলো সুন্দর প্রকৃতি দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে । আরিয়ানের ছবিটা ব্যাগ থেকে বের করলো ও । দেখে তো মনে হচ্ছে একদম নিষ্পাপ । এরকম একটা ছেলে কি করে এত বড় অন্যায় কাজ করতে পারলো !! আসলেই মানুষের চেহারা দেখে তার সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না । কারণ মানুষের ভিতরে যে মন নামক আরেকটা মানুষ বাস করে । সেটা সুন্দর হলেই মানুষও সুন্দর হয় । ভাবতে ভাবতেই দু’চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসলো পাবনের ।

আর ট্রেনটা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে শহরের দিকে ;
ওদের গন্তব্যের দিকে ।

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

ধর্ষণ (পর্ব -১)
ধর্ষণ (পর্ব -২)
ধর্ষণ (পর্ব -৩)
ধর্ষণ (পর্ব -৪)
ধর্ষণ (পর্ব -৫)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত