ধর্ষণ (পর্ব -২)

ধর্ষণ (পর্ব -২)

(পর্ব -২)

পরদিন সকাল ।

জিনিয়া এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ ।
হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে ওকে । পাবন, জয়, অরকিয়া, মুশতারী সবাই জিনিয়ার পাশে দাড়িঁয়ে আছে ।
জিনিয়ার আম্মু জিনিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো,” জঙ্গলে কেন গিয়েছিলি ? আর তোর এই অবস্থা কি করে হল ?”
কাদঁতে কাদঁতে জিনিয়া বলল,”আম্মু, আমি মুশতারীদের বাড়িতে যাচ্ছিলাম । হঠাৎ কয়েকজন লোক আমাকে জোর করে উঠান থেকে তুলে নিয়ে যায় । আমি চিৎকার করতে গেলে ওরা আমার মুখ চেপে ধরে ; তারপর টেনে হিচঁড়ে জঙ্গলে নিয়ে যায় ; তারপর …………”
আর কিছু না বলে জিনিয়া মুখ ঢেকে কাদঁতে লাগলো ।

জিনিয়ার বাবা থানায় গেল মামলা করতে ।
সব শুনে ইন্সপেক্টর বললেন,”আপনার কি লজ্জা নেই , নিজের মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে সেটা আবার বড় মুখ করে বলতেছেন ।”
– আমি বলতে আসলাম কোথায় ? আমি তো শুধু মামলা করতে আসছি ।
– মামলা করবেন ? আচ্ছা ঠিক আছে এক লাখ টাকা দিয়ে যান । আমরা দেখি কি করতে পারি ?
– এক লাখ টাকা !! চোখ কপালে উঠে গেল জিনিয়ার বাবা ।
– হুম, কেন আপনি কি ভেবেছেন ফ্রিতে মামলা করবেন ? টাকা থাকলে দিয়ে যান ; না হলে কেটে পড়ুন ।

জিনিয়ার বাবা আর কিছু বলল না । চুপচাপ থানা থেকে বের হয়ে বাড়ি চলে আসলো ।

গ্রামের লোকজন জিনিয়ার নামে নানান কথা বলতে লাগলো । সারাদিন জিনিয়া একবার ঘর থেকে বের হল না ।
পাবন মুশতারীর বাড়ির উঠানে বসে ভাবছে কিছু ?
একটুপর জয়, অরকিয়া আর মুশতারী আসলো ।
জয় বলল,”পুলিশ এক লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছে জিনিয়ার আব্বুর কাছে ।”
পাবন ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে মুশতারীকে বলল,” জিনিয়ার সাথে কি কথা বলা যাবে এখন ?
মুশতারী বলল,”না , ও কারো সাথে কথা বলতে চায় না । মেয়েটা খুবই ভালো । এভাবে ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে ভাবতেই পারি নি ।”
পাবন বলল,”ওর সাথে কথা বললে হয়তো কোন ক্লু পাওয়া যেত । থাক , আগে ও নিজে সামলে উঠুক তারপর কথা বলবো । এখন চল তো জঙ্গলের ঐ জায়গাটাতে যাই যেখানে জিনিয়াকে পেয়েছিলাম । দেখি সেখানে কোন ক্লু পাই কিনা , চল ।”
পাবনের কথায় ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিল সবাই ।

ওরা উঠানটা পার হয়ে জঙ্গলের দিকে হাটঁতে লাগলো । কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা জঙ্গলে পৌঁছালো । জিনিয়াকে যেখানে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিলো সেখানে গিয়ে দাড়াঁলো ওরা । ঝোপেঁর ছোট ছোট গাছ গুলো দুমড়ে মুচড়ে আছে । পাবন ভাবলো সেই সময়ের কথা যখন জিনিয়ার উপর পাশবিক নির্যাতন চলছিল । মেয়েটা নিশ্চয়ই বাচাঁর জন্য অনেক চেষ্টা করছিল । ঐসময় জিনিয়ার অসহায় মুখটা কল্পনা করতেই পাবনের চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ।

বাকিরা হয়তো পাবনের ভাবনাটা বুঝতে পারলো । তাই ওরা আর কিছু বলল না ।

চারজন মিলে অনেক খুজেঁও কোন ক্লু পেল না জঙ্গলে । অগ্যাত বাড়ি ফিরে আসলো ওরা ।

বিষাদময় সন্ধ্যা নেমে এসেছে গ্রামে ।
অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারদিকে ।

জয়, মুশতারী আর অরকিয়া ঘরে বসে গল্প করছে ।
পাবন খোলা উঠানে বসে বসে ভাবছে,”এই সন্ধ্যায় উঠান থেকে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গেল অথচ কেউ দেখলো না । ব্যাপারটা কেমন যেন ঘোলাটে । তাহলে জিনিয়া কি সব মিথ্যা বলল ?”
হঠাৎ পাবন দেখলো অন্ধকারে সাদা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কে যেন দৌড়ে উঠানের এক কোণ দিয়ে চলে গেল । পাবনও ওর পিছনে দৌড় দিল । ও গাছের আড়াল থেকে চাঁদের আলোয় দেখতে পেল জিনিয়া একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে কাদঁছে । এক হাতে সাদা ওড়না ; অন্য হাতে বেশ কিশু কাগজপত্র আর উপহার সামগ্রী । ছুড়ে ফেলে দিল হাতের কাগজ আর উপহারগুলো । তারপর গাছের নিচু একটা ডালে ওড়নাটা বেধেঁ ও গলায় ফাঁস দিতে লাগলো ।

পাবন দ্রুত গাছটার কাছে গেল । জিনিয়া ওকে দেখে গলা থেকে ফাঁসটা খুলে দাড়াঁলো ।
পাবন ওর দিকে তাকিঁয়ে শান্তকন্ঠে বলল,
– “আত্মহত্যা করতে চান ; করেন । আমি বাধা দিবো না । কিন্তু আপনি মারা গেলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ? আপনি মারা গেলে হয়তো আজ রাতেই আপনাকে কবর দিয়ে দিবে । আপনার আত্মীয় স্বজন আপনার জন্য কিছুদিন কাদঁবে । তারপর ধীরে ধীরে ভূলে যাবে সবাই আপনাকে । অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে হাটঁবে ; আরও অপরাধ করবে ওরা আর গ্রামের সব মানুষ আপনার কবরের দিকে আঙ্গুল তুলে বলবে এটা একটা নষ্টা মেয়ের কবর । আর যদি অপরাধীরা শাস্তি পায় ; সমাজে যদি ওদের মুখোশ খুলে দেওয়া যায় তাহলে কেউ আর আপনার দিকে তাকিঁয়ে আপনাকে নষ্টা বলতে পারবে না , দোষী বলতে পারবে না । অপরাধীদেরই দোষী বলবে । আর জীবনে অনেক দুর্ঘটনাই ঘটে । তাই বলে কি জীবন থেমে থাকে ? মানছি আপনার দুর্ঘটনাটা অনেক বড় । কিন্তু সবকিছু যে সামলে সামনে এগোতে পারে সে-ই তো প্রকৃত সাহসী ।”

– মানছি আপনার কথা । কিন্তু আমার সাথে তো কেউ-ই নেই । পুলিশও মামলা নেয় নি আর আমার বাবা-মা, গ্রামের লোকজন আমাকেই বাজে বলছে । আমি একা একা কি করবো ? জিনিয়া বলল ।
– কে বলেছে আপনি একা ? হাসিমুখে বলল পাবন । আমি, আমরা সবাই আছি তো আপনার পাশে । আমাদেরকে আপনার বন্ধু ভাবতে পারেন ।
– সত্যি তোমরা আমাকে সাহায্য করবে ? জিনিয়া বলল ।
পাবন হাসিমুখে বলল,” হ্যাঁ , সবসময় আপনার পাশেই আছি আমরা । কিন্তু এই কাগজ আর উপহারগুলো কিসের ?
পাবন কাগজ আর উপহার গুলো মাটি থেকে তুলল ।
একটা ছেলের কয়েকটা ছবি আর দুইটা পুতুল ।
– এই ছবিগুলো কার ? পাবন জিজ্ঞাসা করলো ।
– “ওর নাম আরিয়ান । যাকে খুব ভালোবাসতাম আমি । ও-ই আমার সর্বনাশ করেছে । আমার বিশ্বাসের ভালো প্রতিদান দিয়েছে”, চোখের পানি মুছলো জিনিয়া ।

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

ধর্ষণ (পর্ব -১)
ধর্ষণ (পর্ব -২)
ধর্ষণ (পর্ব -৩)
ধর্ষণ (পর্ব -৪)
ধর্ষণ (পর্ব -৫)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত