লাশের খাটিয়া

লাশের খাটিয়া

আজ থেকে প্রায় তিন চার বছর আগের কথা। আমার এক বন্ধু ছিল নাম রাকিব। ও আর আমি সবসময় একসাথে থাকতাম। যাকে বলে একেবারে বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি যেখানেই যেতাম রাকিব আমার সাথেই যেত। ও যেখানে যেত আমিও তার সাথে যেতাম। ও আমাকে ছারা কিছুই বুঝতনা। আমিও রাকিবকে ছারা কিছুই বুঝতাম না। আমাদের বন্ধুত্য গভীর থেকে গভীরে চলে যায়। একজনকে ছারা আরেকজন কিছুই বুজতাম না। খেলার মাঠে এক সাথে খেলা করতাম। কলেজে গেলেও আমরা এক সাথে যেতাম।

একদিন ওর কাছে একটা মোবাইল দেখলাম। ওর মামা বিদেশ থেকে নিয়া আসছে। এখন রাকিব আমার সাথে কোন কথা বলেনা। আগের মতো খেলতেও আসেনা। আমার সাথে কলেজেও যায়না। হঠাৎ করে কেমন যানি মোবাইল পেয়ে আস্তে আস্তে বদলে গেল। আমার সাথে রাকিবের প্রায় দেখাই হয় না। যদিও দেখা হয়, তা আবার সালাম পর্যন্তই শেষ। এর বেশি আমার সাথে কথাই বলেনা। মনের ভিতরে আমি খুব কস্ট পেলাম। সারাটা দিন মোবাইল নিয়েই পরে থাকে। লেখাপড়ায় ও অমনোযোগী হয়ে গেছে। রাকিব খাবার সময়, পড়ার সময়, কলেজে যাবার পথে, ঘুমানোর সময় এমনকি বাথরুমেও বসে মোবাইল চালায়। একদিন ওর বাবা জোর করে মোবাইল কেরে নেয়। এতে রাকিব খাওয়া নাওয়া সব কিছু ছেরে দেয়। ছেলের এমন কান্ড দেখে মোবাইল আবার ফেরত দিয়ে দেয়। অনেক দিন যাবত রাকিবের সাথে কোন দেকা সাক্ষাত হয়না, তাই ওর বারিতে গেলাম দেখা করার জন্য। গিয়ে দেখি রাকিব মোবাইলে ক্লাশ অব ক্লেন খেলতেছে।

আমি গিয়ে প্রথমে সালাম দিলাম। ও সালামের জওয়াব নিল। তারপর ও বলল, কিরে আব্রাহাম অনেকদিন পর আসলি? খবর কি তোর? আমি বললাম হ্যা ভাল। তর খবর কী? সে বলল ভাল। আমি ওকে শুধু এইটুকু বলে আসলাম, মোবাইল পেয়ে নামাজ কালাম তো সব বাত দিয়ে দিলি। কালকে শুক্রবার , আমার সাথে কালকে জুমায়ার নামাজ পরতে যাবি। সে আমাকে কিছুই বললনা। শুধু বসে বসে মোবাইলে এট্যাক দিল। তারপর ওদের বাসা থেকে চলে আসি। পরের দিন জুমায়ার নামাজের সময় ওদের বাসায় যাই , গিয়ে দেখি ও মোবাইলে ফেসবুক চালাচ্ছে। আমি একরকম জোর করেই মসজিদে নিয়ে আসি নামাজ পড়ার জন্য। হুজুর তখন খুতবা পড়তেছিল, খুতবা পড়া শেষ হলে হুজুর সবাইকে দারিয়ে কাতার সোজা করতে বলল। তখন রাকিব আমাকে বলল, আজ মনে হয় অয়ারএট্যাক দিতে পারবোনারে!! আমি বললাম চুপ কর, জানিসনা নামাজে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলতে হয়না!!!

পরের সপ্তাহের সোমবারে রাকিব মোবাইলেই coc ঘেমটা খেলতে খেলতে রস্তা পার হচ্ছিল। তখন আমরা কলেজে যাচ্ছিলাম। এমন সময় একটা গারি এসে রাকিবকে ধাক্কা দেয়। ঘটনা স্থলেই তার মৃত্যু হয়। রাকিবের নিথর দেহ পরে থাকে রাস্তার মাজখানে, আর মোবাইলটি ছিটকে পরে থাকে রাস্তার কিনারে। তখনো মোবাইলে খেলা চলতেছিল। অলসের মতো জায়েন্ট গুলো ডিফেন্স ভাংতেছিল। আরচার গুলিও তির ছুরছিল, আরচার টাওয়ারের দিকে। আমার বন্ধুর রক্তে পিচ ঢালা রাস্তা লাল হয়ে গেছিল। এলাকার লোকজনদের সাহায্যে তাকে বারিতে নিয়ে আসা হয়। রাকিবের লাশ দেখে তার মা, বাবা কান্নায় ভেংগে পরেন। তাদের কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে।

রাকিবের লাশকে গোসল করিয়ে জানাযা দেয়া হয়। তারপর তাকে কবর দেয়ার উদ্দেশে খাটকি উঠিয়ে কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কবরে লাশ রাখার জন্য খাটকি থেকে লাশ উঠাতে যায়, কিন্তু লাশ উঠেনা। কেউ যেন লাশকে নিচের দিকে টেনে ধরে রেখেছে। আমরা সবাই উপস্তিত ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম এখানে এসব কি ঘটছে। ভুতে টেনে ধরলনাতো।  আমরা সবাই চিন্তায় পরে গেলাম। লাশকি তাহলে ধাফন দেয়া হবেনা??? হুজুর পরে বলে উঠল, আমি একটা ঘটনা বলি সবাই শুনেন।

অনেকদিন আগে কোন এক গ্রামে একজন মহিলা সারাদিন খালি টিভি দেখতো। কাজের সময় , খাওয়ার সময় , ঘুমানোর সময়, সবসময় খালি ভারতীয় সিরিয়াল গুলাই দেখতো। একদিন মহিলার মৃত্যু হয়। রাকিবের লাশের মতো লাশ নামতে চাইছিলনা। তারপর তার লাশের পাশে টিভি আনার পর লাশ নামে এবং টিভি সহই তাকে কবর দেয়া হয়। রাকিব এমন কি ব্যাবহার করত? ইমাম সাব প্রশ্ন করলো। রাকিবের বাবা কেঁদে কেঁদে বলল, রাকিব বেশি মোবাইল ব্যাবহার করত। রাকিবের লাশের পাশে মোবাইল রাখার পর লাশ উঠে এবং রাকিবকেও মোবাইল সহ কবর দেয়া হয়।
তাই ভাই সাবধান। আমরা রাকিবের মতো মোবাইল ব্যাবহার করছি নাতো?  মা ও আপুরা সাবধান, অই মহিলার মতো টিভির ভিতরে ভারতীয় সিরিয়ালের নেশায় আছি নাতো?

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত