পাহাড়ি গ্রামটি অতীতে একটি রাজ্যর রাজধানী ছিল! গ্রামটির অধিবাসীদের মুখে মুখে তাদের গ্রামের সোনালি অতীতের অতিরঞ্জিত কল্পকাহিনী!!!
যদিও বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ব নেয়! বর্তমান উন্নত সভ্যতার আলোর ছোয়া এখনও এই গ্রামে পরেনি! যদিও গ্রামের সোনালি অতীতের সামান্যতম
নিদর্শন সরূপ একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে সম্প্রতি! সময়কে পিছনে ফেলে বছরের পর বছর টিকে আছে মন্দিরের দেবী মূর্তিটি!
রহস্যাদি শুরু দেবী মূর্তির আবিষ্কারের পর থেকে! গ্রামের চারিদিকে দুর্গের মত পাহাড়! অতি গহীন অরণ্য গ্রামটির অবস্থান! যাতায়াত ব্যবস্থা বলতে পায়ে হেটে যাওয়া! একটি ছোট্ট পাহাড়ি নদী বেয়ে উজানের দিকে দুইদিন হেটে গ্রামে যাওয়ার একমাত্র পথ! চট্টগ্রাম শহর থেকে একটি দল রওনা হল সেই চিয়াংগু গ্রামের উদ্দেশ্য!
স্থানীয় উপজাতি বাসিন্দারা এই নামে ডাকে গ্রামটিকে! দলের সদস্য সংখ্যা ছয়।।।
পাচঁ জন সরকারি লোক আর একজন গ্রামের অধিবাসী যে দেবী মূর্তি সম্পর্কে গুরুতর অভিযোগ নিয়ে এসেছে! যদিও তার একটি কথাও প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের লোকজন বিশ্বাস করে নি। তবু তারা যাচ্ছে শুধু মাত্র রত্নখচিত দেবী মূর্তিটি সংগ্রহ করতে! গাড়ির পথ শেষ! হাটা পথ শুরু হবে তার আগে দলের সবাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছে।
দলের নেতা প্রত্নতত্ত্ববিদ আবিদ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে স্থানীয় পুলিশের ওসি রহমান সাহেব বলছেন স্যার ঘটনা যদি সত্যি হয়? আমাদেরে আত্নরক্ষার জন্য আরো কয়েকটি রাইফেল নিলে ভালো হত? আবিদ সাহেব বললেন যদি ঘটনাটি সত্যিই হয় তবে রাইফেল দিয়ে কী করবেন? প্রকৃতির শক্তির সাথে রাইফেল কী ফেরে উঠবে?
তিনি টাট্টা করে বললেন পারমাণবিক বোমা নিতে পারলে আর ভয় থাকতো না। চিয়াংগু গ্রামের লোকটি ছাড়া দলের সবাই কথাটি শুনে হেসে উঠলো!
বিরতি শেষে হাটা পথ শুরু করল পুরো দল। নদীটি ধীরেধীরে ছোট হচ্ছে পথ ও ধীরেধীরে আরো দুর্গম হচ্ছে!!!
দলের দুই প্রত্নতত্ত্ববিদের পথ চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে!
তারা এরকম পথে অভস্ত্য নয়! দলের সাথে বাকি তিনজন স্থানীয় পুলিশ সদস্য ও গ্রামটির অধিবাসী ব্যক্তি দুই প্রত্নতত্ত্ববিদের ধীরগতির হাটা নিয়ে বিরক্তিপ্রকাশ করছেন! দলের সাথে থাকা উপজাতি স্থানীয় ব্যক্তি ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় তাদের চিয়াংগু গ্রামের ভয়ার্ত সব কাহিনীর বর্ণনা দিতে লাগলো!
পাহাড়ি অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে রাত্রির আসন্ন তাই তারা একটি ক্যাম্প করল! নদী থেকে একটু উপরে! সারাদিনের বিরতিহীন পথচলার কারণে দলের সবাই ক্লান্ত।।।
রাতের খাবারদাবার সেরে সবাই নিজ নিজ তাবুতে ঘুমাতে চলে গেল। রাতে আবিদ সাহেব প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তাবুর বাইরে আসলেন।।।
তাবুর বাইরে আসার পরই তিনি বিকট চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন! সাথে-সাথে দলের সবাই তাবুর বাইরে ছুটে এল।।।
হটাৎ পরিস্কার পূর্ণিমার চাঁদ ওঠা আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল মূহুর্তের মধ্যা ঝড়বৃষ্টিতে তাদের ক্যাম্প লন্ডভন্ড হয়ে গেল।
বৃষ্টির পানির ছোয়াই আবিদ সাহেব এর চেতনা ফিরল! সবাই থাকে প্রশ্ন করছে স্যার কী হয়ছিল? তিনি বললেন গত রাতে আমার হ্যালোসিনেইশন হয়েছিল।।।।
তাই ভয়ে চিৎকার দিয়েছিলাম।।। রহমান সাহেব বললেন স্যার কী ভূতপ্রেত কিছু দেখছেন নাকি?
আবিদ সাহেব বললের বাদ দেন ত ব্যাপারটি! সারারাত্রির বৃষ্টিজলে ভিজে ভোরে সবাই ক্লান্ত!
তাদের সব জিনিসপত্র ভিজেছে বৃষ্টির জলে।।। সবাই ঠান্ডায় থরথর করে কাপছে। ভেজা কাপড়ে হাইপোথারমিয়া হওয়ার আশাঙ্ক আছে!
তাই সবাই তাদের কাপড় পরিবর্তন করে শুকনা কাপড় পরে নিল। রহমান সাহেব বললেন আমাদের চিয়াংগু গ্রামে যেতে প্রকৃতি বাধা দিচ্ছে!
তাহলে কী অশুভ কিছু ঘটবে সেখানে! প্রত্নতত্ত্ববিদ আবিদ সাহেব রহমান সাহেব ওসির কথার কোন উত্তর দিলেন না। তিনি গতকাল রাতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে
অদ্ভুতুড়ে কিছু একটা ত দেখেছেন! যদিও তিনি ভূতে বিশ্বাসী নয়! তবু কেন যেন তার কাছে গতকাল দেখা ছায়ামূর্তিটি বাস্তবিক বলে মনে হচ্ছে!
সূর্যোদয় হওয়ার পর তারা যাত্র শুরু করল।।। সূর্যটি ঘন ঘন মেঘের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে!!! একঘন্টার মত হাটার পর সাদা মেঘগুলি মূহুর্তের মধ্যা কালো রঙ ধারণ
করল তীব্রতর মেঘগর্জনের সাথে তীব্রভাবে বাতাস বয়তে শুরু করল!!! পাহাড়ি ছোট্ট রাস্তাটিতে ঝড়ের কারণে গাছের ঢাল ভেঙ্গে দলটির গতিপথ থমকে
দিচ্ছে ক্ষণেক্ষণে! তাদের চলার গতি ধীরে করে দিল ঝড়বৃষ্টি! ঝড়বৃষ্টি যেন থামার কোন লক্ষণ নাই! এদিকে তারা নদী কূল ধরে হাটতে পাচ্ছে না!
বৃষ্টির কারণে নদীতে পানির পরিমাণ বেড়ে নদীর দুকূল ছাপিয়ে গেছে তাই দলটিকে আরো দুর্গম পথ দিয়ে চিয়াংগুর পথে এগিয়ে যেতে হচ্ছে!
অবশেষে ঝড়বৃষ্টি সামান্য কমল।। কিন্তু পাহাড়ি এলাকাটিকে মেঘেরা কুয়াশার মত অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলল।।। প্রকৃতি যেন ছোট্ট দলটির সাথে রীতিমত যুদ্ধ
শুরু করেছে! তাদের গন্তব্যস্থানে যেন প্রকৃতি যেন তাদের পৌছাতে দিবে না! তারা একটি পাহাড়ি ঢাল বেয়ে একটি বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিল।
চিয়াংগু গ্রামের লোকটি ভয়ে কাপছে লোকটি চট্টগ্রামের ভাষায় বলল (বেগ্গুনেরে মারি পালায়বু-সবাইকে মেরে ফেলবে) বার বার করে বলতে লাগল কথাটি!
দলের সবারও ভয় করছিল। কারণ লোকটি দেবীমূর্তি সম্পর্কে যেসব তথ্যাদি দিয়াছিল তা খুবই ভয়ানক! মূর্তিটি উদ্ধারের অভিযানে আশার আগে আবিদ সাহেব চিয়াংগুর লোকটির বর্ণনা অনুযায়ী কিছু বইপত্র পড়ে পেয়েছেন যে দেবীটির পূজা তৎকালীর আরকান রাজারা করতেন দেবীটির নাম ত্রিবলী দেবী ধ্বংসের
দেবী হিসাবে এই দেবীর পূজা করত আরকান রাজারা যুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য! দেবীর উদ্দেশ্য আরকান রাজারা নরবলি দিতেন দেবীর উদ্দেশ্য! এতকাল পর যখন চিয়াংগুর অধিবাসীরা জুম চাষ করার জন্য পাহারটি পরিস্কার করছিল তখনি দেবী মূর্তিটি এবং মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ তারা দেখতে পাই।
যে পরিবারটি পাহাড়টি পরিস্কার করেছিল। তার পরদিন ঐ পুরো পরিবারের মস্তকহীন রক্তহীন দেহ সে দেবীমূর্তির চরণে পাওয়া যায়! তারপর থেকে চিয়াংগু গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে!
এরপর থেকে প্রতিদিনই গ্রামটিতে ভূতুড়ে অশরীরি কান্ড শুরু হয়।।। তাই গ্রামটি কিছু লোক দলবেধে স্থানীয় পুলিশের অফিসে যায়।।। পুলিশ তাদেরকে চট্টগ্রাম শহরে প্রত্নতত্ত্ব অফিসে পাঠায়। তার কয়েকদিন পর তারা চিয়াংগু অভিযানে বের হয়। তারা প্রথমে ভেবেছিল চিয়াংগু গ্রামের অধিবাসীদের বলা কথাগুলো কাল্পনিক অতিরঞ্জিত! কিন্তু তাদের বর্তমানে পরিস্থিতিতে কথাগুলো সত্যিই বলে মনে হচ্ছে! অবশেষে ঝড়বৃষ্টি শেষ হল।।। তারা এখন পথ ছিনতে পারছে না!
ঝড়বৃষ্টির কারণে পথ হারিয়ে ফেলেছে তারা! রহমান সাহেব বললেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে পথ দেখা যেতে পারে! তাই তিনি এবং চিয়াংগুর লোকটি দুইজনে
পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন। চিয়াংগুর অধিবাসী লোকটি ঐ ত দেখা যায় আমাদের গ্রাম রহমান সাহেব বললেন কোথায় দেখা যায়? ঐত সাদা মেঘের দল যখন সরে গেল তখন ঝাপসা ঝাপসা ড়দেখা গেল কিছু মাচাঘর। অবশেষে দলটি গ্রামে পৌছাল ৷ কিন্তু তারা গ্রামে পৌঁছানোর পর দেখল গ্রামটি জনশূন্য! শুধু গ্রামটির মানুষের পালিত পোষা শুয়োর গুলো চিয়াংগু গ্রামে চরে বেড়াচ্ছে। গ্রামটির অধিবাসীরা গেল কয়? এত্তগুলো মানুষ কী হাওয়া হয়ে গেল! নাকি ভয়ে অন্য কোথাও পালিয়ে গেল!
কালো মেঘের কারণে চিয়াংগু গ্রামে চারিদিকে অন্ধাকার নেমে এসেছে।।। দলটি সিদ্ধান্ত নিল রাতে অভিযানে যাবে! এই দেবী রহস্যর সমাধান তারা করবে।
রাতে হাত মুখ ধুয়ে খাওয়া দাওয়া করে তারা অভিযানে নেমে পরল। যদিও সবার মনে একটি অশরীরী আতঙ্ক কাজ করছিল! তারা সবাই তাদের সঙ্গে থাকা রাইফেল গুলো নিল!
মন্দিরে কী হবে তা তারা জানে না তবে অজানা কোনও শক্তির প্রভাবে সবাই চেতনা হারাতে চাই না। তারা দেবী মূর্তিটি থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে!
দেবী মূর্তির মাথায় লাগানো রত্নটির উজ্জলতায় আবিদ সাহেব বুঝতে পারলেন রত্নটি অতি দুর্লভ এবং মূল্যবান সপ্তর্ষির রত্ন! মূর্তিটির কাছে গিয়ে মূর্তিটির সপ্তর্ষির
রত্নটি বের করে নিয়ে এসেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদ আবিদ সাহেব । রত্নটি হাতের নীচে রাখবার সময় ওটা ঝলমল করতে থাকল। দৃশ্যটা অভিনব, অভিজ্ঞতাটাও। চারজন পুরুষ ধরাধরি করে এমন একটা মূর্তি নিয়ে যাচ্ছে। যার সম্পর্কে ভয়ে তাদের হৃদপিন্ড এতক্ষণ ছটপট করছিল! তাদের মন থেকে সমস্ত ভয় উদাও হয়ে গেল!
তারা মন্দির থেকে কিছুটা দূরে সরে আশার পর হটাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত হল! বজ্রপাতটি সোজা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ গিয়ে পরেছে।।। মন্দিরের ধ্বংসাবশেষে আগুল জ্বলছে! বিকট শব্দের কারণে দলের দুই পুলিশ সদস্য অজ্ঞান হয়ে গেল! তবে দলের বাকি সদস্যদের সে দিকে খেয়াল নাই তাদের চোখ ওসি রহমান সাহেবর মস্তকহীন দেহের দিকে! দেহটি কাটা মুরগির মত ছটপট করছে!!! মন্দিরের দিক থেকে আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে! একটি ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে তাদের দিকে আবিদ সাহেব দেখতে ফেল সপ্তর্ষির রত্নটি ছায়ামূর্তির মাথায় আলোর বিচ্ছুরণ করছে রত্নটি!
তারা পালাতে চাই কিন্তু পালাতে পারছে না! পা যেন আটকে রেখেছে অদৃশ্য কোন বস্তু! ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে ধীরেধীরে কাছে আসছে আর দলটির একজন একজন করে মস্তকহীন দেহ নিয়ে লুটিয়ে পরছে মাটিতে ছটপট করতে করতে তাদের দেহ থেকে প্রাণ ত্যাগ করছে! দেবীর ছায়ামূর্তি যেন অনেক কাল পরে নরবলির উৎসবে মেতে উঠেছে! কয়েক শতাব্দীকালের তৃষ্ণার্ত দেবী যেন আজ রক্তে জন্য মত্ত হয়ে ওঠেছেন! ছায়ামূর্তি দলের সবার মস্তকহীন দেহ থেকে রক্তপান করে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এর ফিরে যাচ্ছে!