গল্প–জ্বীনের সাথে যুদ্ধ
লেখক– রিয়াজ হোসেন ইমরান {জ্বীনরাজা}
রাত তখন প্রায় ১১টা, আমি হেঁটে যাচ্ছিলাম জঙ্গলে আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে।এক ফ্রেন্ডের জন্মদিন পার্টিতে।
পাশেই যেন কিছু শব্দ শুনতে পেলাম হঠাৎ করে,
আমাকে সবাই জ্বীনরাজা বলে ডাকলেও, ভিতরে আমার অনেকটা ভয় কাজ করে,
হ্যাঁ অবশ্য আমি ভূত প্রেত খুব বেশি ভয় পাই না, তাদের নিয়ে গল্প লিখি, কিন্তু সেদিন রাতে আমার কি হয়েছিল আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না।
যাইহোক মনের মধ্যে অনেকটা সাহস নিয়ে সামনে এগুচ্ছি। হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে মনের ভয় কাটানোর চেষ্টা করছি। তখনই মনে হলো একটা ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে কথা বলি।
কথা বলতে বলতে গেলে হয়তো অনেকটা পথ যাওয়া হয়ে যাবে।
তারপর হঠাৎ করে আমার সব চিন্তাশক্তি ধুর করে পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল,
বাচাও……….. বাচও. ………. বাচাও………….
আমি অবাক হয়ে তাকালাম, কিন্তু না,
পাশে কেউ নেই তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলাম একটু দ্রুত।
আবার আমার পিছন থেকে কেউ বলে উঠল
বাঁচাও……. বাঁচাও…….. বাঁচাও…….
এবার আমি সত্যিই খুব ভয় পেয়ে গেলাম। তারপর পিছনে তাকালাম। দেখলাম একটা সুন্দরী মেয়ে,
অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে।
চাঁদের আলোয় তার মুখটা স্পষ্ট অনেক সুন্দর দেখা যাচ্ছে। বাতাসে তার এলোমেলো চুলগুলো ঢেউ খাচ্ছে। যেন আমি প্রকৃতির মধ্যে একটা পরীর সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
আমি কিছু না ভেবে জিজ্ঞাসা করলাম,
-আরে আপনি চিৎকার করছেন কেন, কি হয়েছে…..?দেখে তো আপনার কোনো বিপদ দেখতে পাচ্ছি না।
তখন মেয়েটি বলল
–ভাই আমাকে কিছু গুন্ডারা তুলে নিয়ে এসেছে জঙ্গলে, এখন আমি তাদের থেকে দূরে পালাচ্ছিলাম, আর আপনাকেও দেখে আমার গুন্ডা মনে হয়েছিল এজন্য আপনার সামনে আসেনি কিন্তু বাঁচার জন্য এখন আমি কি করব। তাই সাতপাচ না ভেবে আপনার সামনে হাজির হলাম।
( বুঝতে পারলাম আম্মু কেন আমাকে গুন্ডা বলে। আয় হায় আমার চেহারা এতই খারাপ, আমাকে গুন্ডার সাথে তুলনা করেছে। মন চাইছে এক্ষুনি এক গ্লাস পানি খেয়ে মরে যেতে)
–কি আমাকে দেখে গুন্ডা মনে হচ্ছে….?
(আবার মনে মনে ভাবছি এক দিকে আমি ভয়ে শেষ, আর উনি আমাকে গুন্ডা নামে উপাধি দিচ্ছেন।নোবেল দেওয়া দরকার আমাকে।গোন্ডা দ্যা টেরোরিস্ট হিসেবে)
আবার আমি বললাম,
— যাইহোক, তো এখন আমি কি করতে পারি।
–কিছু না, প্লিজ আপনি আমাকে জঙ্গলের বাহির একটু দিয়ে আসবেন..? আমি পথঘাট কিছুই চিনি না.. প্লিজ আমাকে ফেলে যাবেন না.. প্লিজ আমাকে জঙ্গলটা থেকে বাহির করে দিন প্লিজ।
( মনে মনে ভাবলাম ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছি পার্টি দেওয়ার জন্য এখন যদি উনাকে বাহির করে দিয়ে আসি, তাহলে আমার টাইম লস হয়ে যাবে।মানে ওখানে গিয়ে সকিনা,জরিনা,কুলসুমদের সাথে আড্ডা জমাতে পারবো না। তারচেয়ে বরং উনাকে আমার সাথে নিয়ে যাই়। পার্টি শেষ হবে, তারপর ওনাকে রাস্তায় দিয়ে আসব)
–আমি এখন বাইরে যাচ্ছি না, এইযে সামনেই আমার এক ফ্রেন্ডের বাসা সেখানে আজ পার্টি আছে। আমার ফ্রেন্ডের জন্মদিন। আপনি যদি চান তাহলে আমার সাথে গিয়ে পার্টিতে ইনজয় করুন। তারপর আমি নিজে আপনাকে রাস্তায় দিয়ে আসব।
মেয়েটিও আমার এক কথায় রাজি হয়ে গেল। আমি একটু অবাক হলাম আমার মত একজন অপরিচিত অজানা ছেলেকে বিশ্বাস করাটা একটু অবাক মনে হল।
তারপর বললাম
–চলুন
দুজনেই আবার একসাথে হাঁটতে লাগলাম। খুব নীরবতা পালন হচ্ছে আমাদের ভিতর। আমিও চুপ, উনিও চুপ। হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে আমি নিজেই বলে উঠলাম।
— আচ্ছা আপনার নামটা তো জানা হলো না বলবেন..?
–আমার নাম মায়া পরি আপনি আমাকে মায়া বলে ডাকতে পারেন।
— বাহ সুন্দর নাম তো যেমন চেহারা তেমন নাম
–কিছু বললেন..?
–ইয়ে মানে,কই নাতো…?
–আচ্ছা আপনার নাম কি..?
— আমার নাম রিয়াজ, ফেসবুকে ভূতের গল্প লিখি … তাই সবাই আমাকে জ্বীনরাজা বলেই ডাকে।
— ও আপনি ভূতের গল্প লিখেন..? আচ্ছা তাহলে কখনো কি ভূত প্রেত দেখেছেন।।
—না এখন পর্যন্ত আমার সামনে ওগুলো আসেনি, হ্যাঁ আমি ভূতের গল্প লিখি, কিন্তু বিশ্বাস করি না।
(দেড় কেজি চাপা মারলাম😁😁)
আবার বলে উঠলাম,
জ্বীন হয়, তাদের মধ্যে হয়তো কেউ খারাপ কেউ ভালো।
ভালোদেরকে সবাই জ্বীন বলে, আর খারাপদেরকে হয়তো ভূত প্রেত আত্মা এসব বলা হয়।
–আচ্ছা.. তো কখনো কি খারাপ জ্বীন দের সামনে পড়েছিলেন…?
— না আমার হতভাগা কপালে আজ পর্যন্ত একটা খারাপ মেয়েই জুটলো না, আর খারাপ জ্বীন আমার সামনে ভুলেও আসবে না।
–কেন?
— আমার যে নূরানী মার্কা তেলের ড্রাম চেহারা, এটা দেখলে কোন মেয়ে কেন, ভূত তো আমাকে দেখলে পালাবে।
তখনি মেয়েটি অদ্ভুত রকমের একটা হাসি দিচ্ছিল, হাসি দেখে একদিকে ভালই লাগছিল, অন্যদিকে আবার কেমন একটা ভয় কাজ করতেছিল। তার হাসির মধ্যে যেন আমি কোন রহস্য এর গন্ধ পাচ্ছি। কেমন যেনো মনে হতে লাগলো, নিজের মনে নিজেই প্রশ্ন করতে লাগলাম,এত রাতে এই মেয়েটিকে কারা বা জঙ্গলে নিয়ে আসতে পারে। আর যদি নিয়ে এনেও থাকে, তাহলে এই মেয়েটির গায়ে একটুও কাদা নেই কেন, মেয়েটির জামা কাপড়ের কোন অংশ ছেঁড়া পাঠাও নেই।
হঠাৎ করে মেয়েটি আমায়, এই যে মিস্টার বলে ডাকাতেই আমি কল্পনার জগত থেকে ফিরে এলাম।
একি…..? এইআমি আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে…?এই জায়গা তো আমার অচেনা… আমি কি করে এলাম এখানে….!
তারপর আমি মেয়েটির দিকে তাকাতেই আমার পায়ের নিচে যেন মাটি সরে গিয়েছিল।
আমি যা দেখলাম, তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।
আমি দেখলাম…….
চলবে………!
[পরের পর্ব কাল রাত ১০ টায় দেওয়া হবে।]
গল্প– জ্বীনের সাথে যুদ্ধ ( পর্ব–১)
লেখক–রিয়াজ হোসেন ইমরান ( জ্বীনরাজা)