মৃণাল মফশলের ছেলে, কলকাতায় কোনো এক নামী কলেজে ইলেকট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে। মৃণাল কথা বার্তা ভালোই বলে সেই সুবাদে মেয়ে বন্ধুর সংখ্যা স্বাভাবিক বেশিই।
এরকমই এক রাতে সময় ওই রাত্রি এক টা দুটো
হবে মৃণালের ফোনে তার এক বান্ধবী রুবিনার ফোন আসে, ফোনের ওই পার থেকে বলে যে তাড়াতাড়ি আমাদের ফ্ল্যাট এ আই, আমরা একটা সমস্যাই পড়েছি, তারপরেই ফোন টা কেটে দেই। মৃণাল স্বাভাবিক চিন্তায় ভাবে যে রাত্রি বেলা হয় তো কারোর শরীর খারাপ হয়েছে কিংবা চোর এর বিষয় তাই আর কিছু না ভেবেই তার আর এক বন্ধুকে নিয়ে তাদের ফ্ল্যাটে ওই দমদম স্টেশনের কাছে গিয়ে উপস্থিত হয়। ওখানে গিয়ে ওদের সাথে দেখা ওই ফ্ল্যাটে থাকা আর এক মেয়ে চন্দ্রিমার বন্ধুর সাথে, তাকেও ফোন করে ডাকা হয়েছে, তার পরে ফ্ল্যাট এর সামনে গিয়ে দেখে অদ্ভূত ভাবে চারিদিকে
কারেন্ট আছে কিন্তু রুবিনা দের ফ্ল্যাটে কারেন্ট নেই
আর ফ্ল্যাটের সামনের গেটে তালা ঝুলছে, উপরের বারান্দায় রুবিনা, চন্দ্রিমা, আর একটি মেয়ে তৃপ্তি রয়েছে, ওদের কে চাবি চাইলে ওরা রুমে ঢুকে চাবি দিতে সাহস করে না,
পুরো ঘটনা টাই কেমন জটিল হচ্ছিলো মৃণাল দের কাছে, তার পরে তারা গেটের তালা ভেঙে দেয়, আর দেখে অদ্ভূত বিষয়, ইলেকট্রিক মিটারে লাইন তো ইন হচ্ছে কিন্তু কোনো আউটপুট হচ্ছে না।
ফ্ল্যাটের মধ্যে থাকা লিফট কেমন করেই দুটি তলার মাঝে আটকে রয়েছে।
ওরা বেশি না ভেবে, মোবাইল এর ফ্ল্যাশ জেলে শিরি দিয়ে উপরের দিকে উঠে যেতে থাকে।
তারপরে রুবিনাদের রুমের সামনে এসে উপস্থিত হলে দেখে, এখানেও একই অবস্থা, দরজা লাগানো। ওদের কে চিৎকার করে দরজা খুলতে বলা হলে ওরা বলে তোমরা দরজা ভেঙে দাও আমরা এগিয়ে গিয়ে দরজা খোলার অবস্থায় নেই।
মৃণাল এবং তার সঙ্গে থাকা দুই ছেলে, খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে, বিষয়বস্তু কোনো ভাবেই বুঝে উঠতে পারছে না ওরা, অবশেষে দরজা ভেঙে ফেলা হয়।
তারপরে তারা দেখে রুবিনা, চন্দ্রিমা, তৃপ্তি ভয়ে ভয়ে বসে আছে, আর জীর্ণ অবস্থায় রেহেনা নামে আর এক টি মেয়ে, হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে, চোখে মুখে আঁচোরের দাগ, পোশাক ছেঁড়া, মুখের মধ্যে একটা ছিন্নছারা বিক্ষোভ।
মৃণাল তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, মৃণালের সাথে থাকা হুমায়ুন দা দেখে পাশের একটা রুম লাগানো।
কৌতুহল পূর্বক হুমায়ুন সেই দরজা খুলে ফেলে, আর দরজা খোলা মাত্রই, চক্ষু মাথায় উঠলো সবার
রুম এর ভেতরটা সম্পূর্ন তচনচ হয়ে রয়েছে,
সব জিনিস পত্র ভাঙা, দেওয়াল আলমারিটা অদ্ভূত ভাবে এক দিকে ভেঙে পরে রয়েছে, বই খাতা সব ছেঁড়া, খাট উল্টে গিয়েছে এরকম অবস্থাতেই মৃণালের চোখ গিয়ে পরে দেয়ালের দিকে
ওই দৃশ্য দেখে সবার মন তখন চরম পরিমাণে ভিত,
দেয়ালে মোটা নখের দাগ কাটা। আর এক মিনিট সময় নষ্ট না করে সেই দরজা তারা লাগিয়ে দেয়।
এবং আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ওরা সেই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে পরে আর সোজা দমদম স্টেশনে গিয়ে ওঠে।
তারা যখন দমদম স্টেশনে উপস্থিত তখন মৃণালরা স্বাভাবিক কৌতুক এবং ভিত দুই, তবে পুরো ঘটনাটা যেনো গোলমাল হয়ে যাচ্ছিলো মৃণাল, হুমায়ুন এদের কাছে। বেশি চিন্তা না করে রুবিনা কে মৃণাল জিজ্ঞাসা করে: এগুলো কি হচ্ছে? আসোল ঘটনা কি? ওই রুমের ওরকম অবস্থা কে করলো, এই মেয়েটি এরকম অবস্থায় কেনো রয়েছে!!
রুবিনা একটু জল খেয়ে নিজকে সবার কাছে উপস্থিত পেয়ে একটু সাহস সঞ্চয় করে, মৃণাল কে জড়িয়ে ধরে শান্তির নিশ্বাস নেই, তার পরে বলে এক অদ্ভূত ঘটনা।
দিন টা ছিল সোমবার এই ফ্ল্যাটে থাকা চার বান্ধবী কে তাদের আর এক বান্ধবী তনিমা চাকরি পাওয়ার আনন্দে খাওয়াতে এসেছিল, সেদিন তারা রাতে খাওয়া দাওয়া করে, একটা মুভি দেখে তার পরে রাত্রি বারোটা নাগাদ ঘুমিয়ে পরে সকলে।
হঠাৎ তখন সময় ওই রাত্রি দুটো রুবিনার ঘুম ভেঙে যায় এক বিকট শব্দে, উঠে দেখে তনিমা নিজের মনেই মুখ থেকে কেমন আওয়াজ বের করছে, রুবিনা বাকি দের কে ডাকে, সবাই ভাবে ঘুমের ঘোরে হয়তো সে এরকম করছে, স্বাভাবিক বিষয় তাই তারা তাকে ডাকলো, ডাকা মাত্রই রুবিনাকে কি যেনো একটা অদৃশ্য কিছু পেছন থেকে টেনে ফেলে দিলো, তার পরেই শুরু হয়ে গেলো তনিমার অস্বাভাবিক আচরণ, সবাই তো দেখে অবাক, আজান হনুমান চল্লিশা চালানো হলে তনিমা যেনো ক্রমশই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে এবং আসতে আসতে পুনরায় ঘুমিয়ে পরে।
পরিস্থিতি কিছু টা হলেও নিয়ন্ত্রিত হয় সেই সময়ে।
সেই রাতে কারোর আর ঘুম নেই, পরের দিন সকালে উঠে রুবিনাকে তনিমা বলে, আমি এই ফ্ল্যাট ছেড়ে যাবো না, রুবিনা বলে যে কি সব ভুল কথা বলছিস!
তনিমা :না আমি যাবো না! এখানেই থাকবো আমি কোনো মতেই এখান থেকে যাচ্ছি না।
রুবিনা বলে তুই যে চাকরি পেয়েছিস এখানে থাকলে করবি কি করে?
তনিমা বলছে আমি করবো না চাকরি এখানেই থাকবো।
আগের দিন রাতের পরে এরকম কথা শুনে সবাই ভিত এবং সবাই তো অবাক, এই মেয়েটা কেনো এরকম বলছে, ওকে কোনো ভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না, তখন কোনো দিশা না পেয়ে ওরা দেখলো সবাই মিলে এখান থেকে আগে বেরোনো যাক, তাই রুবিনা তনিমা কে নিয়ে ট্যাক্সি ডাকতে গেলে, হঠাৎ দেখে তনিমা তার পাশে নেই, মুখ ঘুরিয়ে দেখে তনিমা মাঝ রাস্তায় উল্টো দিকে মুখ করে হাঁটছে, সেই দেখে রুবিনা ভয়ে আতঙ্কে কোনো কিছু না ভেবে ফ্ল্যাট এ চলে আসে আর এসে একদম চমকে যায়, কারণ তনিমা সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত, সেই মুহূর্তে হাত পা পুরো ঠান্ডা হয়ে আসে রুবিনার, সে ফোন করে তনিমার ফ্যামিলি কে, তারা আসে এবং তনিমা কে জোর করে সেখান থেকে নিয়ে যায়, যাওয়ার সময় তনিমা একটাই কথা বলে যাই, যে আমি নেই তো কেউ থাকবে না!
রুবিনা আর তার বান্ধবী রা কিছু বুঝতে পারে না
একদিকে কৌতুহল, একদিকে ভয় কিছুই যেনো ঠিক করতে পারছে না তারা, শুধু একটা চোখ দেখা অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা আতঙ্কিত আর ভিত।
এরকম করে তনিমা যাওয়ার পরে, অনেক উত্তর না পাওয়া প্রশ্ন নিয়ে তারা থাকে। কিন্তু তারা তখন এটা জানতো না যে সময় আর ওই ফ্ল্যাট পুনরায় উত্তর দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বুধবার সকালে রেহেনা বারান্দায় বসে, হঠাৎ খুব ফরমাল ভাবে রুবিনা কে নাম ধরে ডাকে, প্রথমে বিষয় টা গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছু ছিল না।
সবাই দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত তখন চন্দ্রিমা দেখলো রেহেনা নিজেই নিজের মাথা দেয়ালে ঠুকছে, চন্দ্রিমা সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটকাতে গেলে দেখে সেই বিকট একই জীর্ণ চেহারা যেমন তনিমার হয়েছিল।
স্বাভাবিক আতঙ্কিত চন্দ্রিমা তাড়াতাড়ি রুবিনা আর তৃপ্তি কে ডাকলো, তারা দেখেও আতঙ্কিত।
তারা বুঝে উঠতে পারছে না হচ্ছে কি?
এদিকে রেহেনা ক্রমাগত অস্বাভাবিক কাজকর্ম করেই চলেছে, নিজেই নিজকে আঘাত করছে, নিজেই নিজের মুখে ক্ষত সৃষ্টি করছে, এরকম চলতে চলতে পাশের রুম থেকে বিকট শব্দ বেরোতে থাকে শব্দটা এত টাই তীব্র যে সবার মাথা ধরে আসছিল তাই তৃপ্তি দরজা টা সঙ্গে সঙ্গে লাগিয়ে দেই, রুম এর মধ্যে কেউ নেই তবুও ক্রমাগত জিনিসপত্র সরানো আর ফেলার আওয়াজ রুমের মধ্যে থেকে বেরোতে থাকে।
এদিকে রেহেনা চরম ভাবে পাগলামি যখন করছে তখন রুবিনা বুদ্ধি করে জলের মধ্যে ঘুমের ওষুধ দিয়ে সেটা খাইয়ে দেই আর রেহেনা ঘুমিয়ে পরে।
সেই সুযোগে রেহেনার হাত পা ওরা বেঁধে রাখে।
এই চলতে চলতে তখন রাত 12 টা, হঠাৎ লাইন চলে যায়, আর পাশের রুমের শব্দ ক্রমাগত বাড়তে থাকে সেই মুহূর্তে ফোনের নেটওয়ার্ক ও কাজ করছে না, ভিত সবাই ছুটে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ফোনে একবার নেটওয়ার্ক আসার সঙ্গে সঙ্গে রুবিনা মৃণাল কে ফোন করে আর তৃপ্তি ফোন করে তার আর এক বন্ধু কে।
তার পরে তারা এসে এদের উদ্ধার করে দমদম স্টেশনে নিয়ে আসে।
সবার মনের মধ্যে গভীর চিন্তা, বিশ্বাস যুক্তি অভিজ্ঞতা সব যেনো কি রকম জটিল হয়ে পড়ছে, কোনো কিছুই যুক্তি দিয়ে বোঝানো যাচ্ছে না
সবাই নিজের মস্তিষ্ক ঘুরিয়ে নিজেদের মতোন করে ঘটে যাওয়া ঘটনা ভেবে চলেছে আর খুঁজে চলেছে উত্তর!
উত্তর কেনো এর! এরকম কেনো হল!
এগুলো তো বাস্তব হতে পারে না, এরকম গল্পে হয়, কিন্তু নিজেদের চোখে দেখা অভিজ্ঞতা কি করে এক যুক্তি দিয়ে ভুল প্রণাম করবে মৃণাল, রুবিনা এরা?
এরকম কেনো হল? কি কারণ!
এই সব উত্তর খুঁজতে ওরা আর কেউ ওখানে ফিরে যায় নি কিন্তু একটা বিশাল প্রশ্ন রয়ে গেলো ওই ফ্ল্যাট ঘিরে।