বাড়িটা বড্ড নির্জন!

বাড়িটা বড্ড নির্জন!

হোক নির্জন , ভাড়া কম আর চাপ কল আছে, পানির সমস্যা হবেনা। ঢাকা শহরের যে পানির সমস্যা তাতে এটাই উত্তম।

রায়হান, তুমি এমন বাসা কি করে পছন্দ করছো মাথায় আসছেনা। চলো ঢাকায় ফিরে যাই।
ফিরে যাই বললেই তো হবেনা। এখানে বদলি করা হয়েছে আমাকে, ইচ্ছে করে আসিনি। আসলে সৎ পুলিশ অফিসারদের দেশে কোন মূল্য নেই বরং সততার উপহার হলো বদলি।

তাই বলে এমন নির্জন জায়গা বেছে নিতে হবে? কাছেপিঠে তেমন ঘরবাড়িও নেই যে, বিপদে পড়লে কেউ এগিয়ে আসবে।

আমার বেতনের কথাও তো চিন্তা করবে নাকি ?
এক কাজ করো, একটু লোকালয়ে বাসা খোঁজো, দরকার পড়লে টিনসেড ঘরে থাকবো তবুও এমন বাসায় না।
নিরু তুমি বুঝতে পারছোনা কেন, এক মাসের এডভান্স দিয়ে দিয়েছি, আর সব গুছিয়ে আনতে পকেট ফাকা। এখন নতুন বাসায় ওঠা সম্ভব নয় অন্তত এই মাসটা। তোমার ভালো না লাগলে সামনের মাসেই নতুন বাসা খুঁজে নেবো, ঠিক আছে?

রায়হানের কথায় নিরু আর কিছুই বলেনা চুপচাপ ঘর গুছানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাড়িটা অনেকটা বাগানবাড়ির মতো তবে বেশ ছোট আর নিরিবিলি। দুইটা রুম, রান্নাঘর আর একটি বাথরুম। সাপ্লাই পানির ব্যবস্থা নেই সব কাজ চাপ কল থেকে পানি টেনেই করতে হবে এসব ভেবে আরো কিছুটা বিরক্ত হলো তবুও আর কিছুই বললোনা। রান্নাঘরটা নিরুর বেশ পছন্দ হলো, জানালা খুলেই পুকুরের শীতল হাওয়া চোখেমুখে লাগতেই সারাদিনের খারাপলাগাটা ভালোলাগায় পরিণত হলো। বাড়ির পেছনেই এতো সুন্দর পুকুর দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলো ওর। বেশ নির্জলা টলটলে পানি। হালকা নীলাভ। দেখে মনে হয় আকাশ এসে ছুঁয়ে দিয়ে তার নীলিমায় পুকুরের পানিকে ভরিয়ে তুলেছে।

রায়হান আর নিরু সারাদিন কষ্ট করে নতুন করে সংসার সাজালো, সেদিন আর অফিসে গেলোনা রায়হান।

পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে রায়হান অফিসে চলে যেতেই , নিরু দুপুরের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে গেলো। নির্জন বাড়িতে ও ছাড়া আর কোন প্রাণী নেই। এমন নির্জন জায়গায় বাড়িটি যে বানিয়েছে সে কেন থাকতে পারলো না কে জানে! হয়তো নির্জনতা তার আর পছন্দ হয়নি। একটি কুকুর বিড়ালও ওর নজরে আসেনি কাল থেকে।
কাটাকুটি করতে করতে ভাবলো রায়হান এলে একজন ছুটো কাজের বুয়া খুঁজতে বলবে, অন্তত একা একা দিন কাটাতে হবেনা। আনমনে রান্না চাপিয়ে দিলো। রান্না করতে করতে হঠাৎ মনে হলো পেছনে কে যেন দাঁড়িয়ে। ঝট করে মাথা ঘুরাতেই দেখলো কেউ নেই তবে কেন জানি মনে হলো কেউ একজন ছিলো। গ্যাসের চুলা বন্ধ করে সমস্ত বাড়ি ঘুরে এলো, কোথাও কেউ নেই। মনের মধ্যে খচখচানি নিয়েই রান্নাঘরে ফিরে এলো। সেদিন সারাদিন মনে হলো কেউ ওকে দেখছে। কেউ ওর আশেপাশেই আছে অথচ ও দেখতে পাচ্ছেনা। সন্ধ্যায় রায়হান ফিরে এলে ওকে কিছুই বললনা, বললে হয়তো হাসবে। রাতে খাবার সময় শুধু বলল, আমার একা একা কেমন যেন অসস্থি লাগে, তুমি একজন ছুটো বুয়ার খোজ করবে?

রায়হানের কেন জানি মনে হলো কথাটি বলতে গিয়ে নিরুর গলা খানিকটা কেঁপে উঠলো কিন্তু নিরুর চেহারা বেশ স্বাভাবিক তাই আর গুরুত্ব দিলোনা, শুধু বলল, হুম কাল খোঁজ করবো।

পরদিন রায়হান চলে যেতে আবারো নিরু একাকী হয়ে পড়লো। আজ মোটেই কাজে মন বসাতে পারছেনা। কালকের অনুভূতি টা ফিরে এসেছে। শুধু মনে হচ্ছে কেউ আছে, কেউ একজন খুব কাছেই আছে কিন্তু সে ধরা দিচ্ছেনা। এসব ভাবতেই নিজে নিজেই শিউরে উঠলো। নিরুর মনে হচ্ছে একাকীত্ব ওকে চেপে ধরছে, নিশ্বাস নিতেও যেন কষ্ট হচ্ছে। জোর করে মন থেকে ওসব ভাবনা দূরে ঠেলে কাজে মন দিলো। কারো উপস্থিতি আর তেমন পাত্তা দিতে ইচ্ছে হলোনা ওর। পাত্তা দিলেই ভয় মনে চেপে বসছে যেন। হঠাৎ কেমন অসস্থি গরম অনুভূত হলো। খেয়াল করলো আজ রান্নাঘরের জানালাটি খুলা হয়নি। এজন্যই হয়তো গরম লাগছে ভেবে জানাটি খুলতে গেলো। জানালাটি খুলেই বেশ অবাক হলো নিরু। ওর দিক পেছন ফিরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাঢ় নীল সাথে চিকণ কালো পেড়ে শাড়ি পড়া। আঁচলটি মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। মাথায় একরাশ কালো কেশ পিঠ বেয়ে মাজায় এসে ঠেকেছে। দু’হাত ভর্তি নীল রেশমি কাঁচের চুড়ি। রেশমি চুড়ি পড়া হাতটি দেখে দিব্বি বলে দেওয়া যায় এ মেয়েটি বেশ রুপবতী। তবে নিরুর কেন জানি মনে হচ্ছে পেছন থেকে যেন ও নিজেকেই দেখছে।
এই প্রথম এ বাড়ির আশেপাশে মানুষের দেখা পেয়ে নিরুর বেশ আনন্দ হলো।

এই যে শুনছেন, আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন? নিরু কয়েকবার ডাকলো অথচ এতো কাছে দাঁড়িয়েও মেয়েটি যেন কিছুই শুনতে পেলো না। নিশ্চল দাঁড়িয়ে। নিরু সাত পাঁচ না ভেবে পুকুরপাড়ে যাবে বলে পা বাড়ালো। বাড়ির পেছনে এসে দাঁড়াতেই অবাক হয়ে গেলো, কেউ নেই। আশপাশ ভালোভাবে তাকিয়ে কারো ছায়া পর্যন্ত দেখতে পেলোনা। এতো দ্রুত কারো পক্ষে এভাবে দৃষ্টির আড়াল হওয়া খানিকটা অসম্ভব। কারন পুকুরের

একপাশে খোলা বিস্তৃত মাঠ আর অন্যপাশে জংলা। আর জংলাটাও বেশ কিছুটা খোলা জায়গা পার হয়ে যেতে হয়। নিরুর আসতে বড়জোর মিনিট দুই তিন লেগেছে আর এই সময়ের মধ্যে এভাবে হাওয়া হয়ে যাওয়া কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। তবে কি..

নিরু আর ভাবতে পারলো না গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। ফিরে আসতে উদ্যত হতেই চোখের কোনে চিকচিক করে উঠা কোন জিনিষের অস্তিত্ব অনুভূত হলো। ঘুরে দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলো। স্বচ্ছ পানিতে রোদ পড়ায় পানির নিচে কিছু একটা ঝিলিক দিচ্ছে, বসে হাত বাড়িয়ে পানির নীচ থেকে তুলে আনলো, অবাক হয়ে দেখলো একগুচ্ছ নীল রেশমি চুড়ি, ঠিক যেমনটি মেয়েটির হাতে ভর্তি ছিলো। আবারো এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে চেষ্টা করলো মেয়েটিকে কিন্তু না, কোথাও তার ছায়াটি পর্যন্ত নেই।

একবার ভাবলো চুড়ির গুচ্ছ পানিতে যেখানে ছিলো সেখানেই রেখে দেবে কিন্তু কি এক আকর্ষণে নিরু রাখতে পারলোনা। সাথে করে নিয়ে এসে সযত্নে তুলে রাখলো।

রাত দুইটা, রায়হানের হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো, পাশে হাত দিতেই বুঝতে পারলো নিরু পাশে নেই। ভাবলো হয়তো বাথরুমে গেছে, কিন্তু হঠাৎ মনে হলো বাথরুমে থাকলে তো দরজার নিচ দিয়ে আলো দেখতে পাওয়ার কথা কিন্তু বাথরুমে আলো জ্বলছেনা তার মানে নিরু বাথরুম এ নেই। উঠে বসতেই দেখলো বেডরুম এর দরজা খোলা। এগিয়ে গিয়ে পাশের রুমে, বারান্দায় সবখানে খুঁজে এলো কিন্তু নিরুকে দেখতে পেলোনা। হঠাৎ মনে হলো রান্নাঘরে খুঁজা হয়নি। ছুটে গেলো রান্নাঘরে, ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। লাইট জ্বালাতেই দেখতে পেলো রান্নাঘর ফাকা নিরু নেই। কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। লাইট অফ করতে যেতেই মনে হলো রান্নাঘরের জানালাটি খুলা। এগিয়ে গিয়ে জানালার পাল্লায় হাত দিতেই চমকে উঠলো। নিরু দাঁড়িয়ে আছে পুকুর পাড়ে। চাঁদের আলোয় বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

এই নিরু….. নিরু….. এতো রাতে ওখানে কি? ফিরে এসো।
রায়হানের মনে হলো নিরু একবার পেছন ফিরে চেয়ে আস্তে আস্তে পুকুরের পানিতে নেমে যাচ্ছে। রায়হান চমকে উঠলো, নিরু সাঁতার জানেনা। নিরুর ধীরে ধীরে ডুবে যাওয়া দেখে রায়হান চিৎকার দিয়ে উঠলো।

হঠাৎ কারো ঝাঁকুনিতে সম্বিৎ ফিরে পেলো, তাকিয়ে দেখলো নিরু ওর সামনে বসে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রায়হান আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ও ওর বেডরুমেই আছে, আর প্রচন্ড ঘামছে।

— তুমি কি স্বপ্ন দেখেছো?
— হুম, হয়তো, তবে প্রচন্ড ভয়ংকর।
— ও কিছুনা, পানি খেয়ে শুয়ে পড়ো, রাত দুইটা বাজে, সকালে উঠতে হবে।
নিরুর কথা শুনে রায়হান কিছুটা চমকে উঠলো, ওর স্বপ্নের শুরুও যে রাত দুইটা!

আজ দুপুর থেকেই প্রকৃতি বেশ থমথমে, আকাশে মেঘ জমা হচ্ছে, মনে হচ্ছে সন্ধ্যা নেমে আসছে। বারান্দায় বসে সকালের কথা মনে করছে নিরু, আজ সকালে রায়হান চলে যেতেই দরজায় এক বুড়ি এসে দাঁড়ায়, বুড়ির চুলগুলি জট ধরা, দেখেই নিরুর বুক কেঁপে উঠেছিলো। তবুও এগিয়ে গিয়ে জানতে চেয়েছিলো কি চায়। বুড়ি একদৃষ্টে কিছুক্ষণ নিরুর দিক তাকিয়ে হঠাৎ হেসে উঠে বলেছিলো, তোকে চাইরে তোকে… আজই চাই..

নিরু আবারো কেঁপে উঠেছিলো, দ্রুত ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু বাহিরে বেশ কিছুক্ষণ বুড়ি দাঁড়িয়ে হেসেছিলো, সেই হাসি নিরুর সমস্ত শরীরে কাটা তুলে দিচ্ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো, বৃষ্টি নিরুর খুব প্রিয়। বৃষ্টি এলেই কেন জানি নীল শাড়ি পড়ে ভিজতে ইচ্ছে করে। নিরু উঠে গিয়ে খুব যত্ন করে একটি নীল শাড়ি পড়লো, চোখে গাঢ় করে কাজল নিলো। হঠাৎ পুকুর থেকে তুলে আনা চুড়ির কথা মনে হতেই চুড়ি গুলি বের করে হাত ভর্তি করে পড়ে নিলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ খুটে খুটে কিছুক্ষণ দেখলো। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে আজ নিরুকে, আজ রায়হান থাকলে নির্ঘাত নতুন করে প্রেমে পড়তো, কথাটি ভাবতেই নিরুর ঠোটের কোনে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো।

নিরু ভিজছে, বৃষ্টির বড় বড় ফোটা সাথে ঝড়ো হাওয়া সে এক অন্য রকম অনুভূতি। ভিজতে ভিজতে কখন যে পুকুরপাড়ে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনি। আজও মেয়েটি দাঁড়িয়ে, সেই একই শাড়ি পড়ে একই সাজে। নির্বাক হয়ে পুকুর দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটি। নিরু কিছুটা এগিয়ে যেতেই মেয়েটি নিরুর দিকে ফিরে চাইলো। নিরু অবাক হয়ে চেয়ে রইলো, এ যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোন এক নীল অপ্সরী। নিরুর তাকিয়ে থাকা দেখে মেয়েটি হেসে উঠে বললো, বৃষ্টিতে কখনো পুকুরে স্নান করেছো?
নিরু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো, না।

মেয়েটি বেশ উৎফুল্ল হয়ে বললো, পুকুরের জলে বৃষ্টিস্নান, দারুণ লাগে, এসো আজ আমরা পুকুরের নীল জলে নেমে বৃষ্টিস্নান করি।

নিরু দু পা পিছিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে বললো, আমি সাঁতার জানিনা।
মেয়েটি আবারো হাসলো, এবার তার হাসির ভেতর বেশ আশ্বাস খুঁজে পেলো, সেই হাসি যেন নিরুকে বলছে, ভয় নেই আমি আছি। মেয়েটির বাড়িয়ে দেওয়া হাতের দিকে চেয়ে কি যেন ভেবে এগিয়ে গেলো। মেয়েটির হাতে হাত রাখতেই নিরুর সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো, ওর মনে হলো একখণ্ড বরফ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি আবারো হেসে উঠলো, তবে এ হাসির অর্থ নিরু খুঁজে পেলো না। শুধু মনে হলো আজ ও পুকুরের নীল জলে করবে বৃষ্টিস্নান।
উত্তাল প্রকৃতি অবাক হয়ে দেখছে নীল শাড়ি পড়া দুটি রমণী ধীরে ধীরে পুকুরের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আর তাদের আঁচল যেনো বিছিয়ে আছে সমস্ত পুকুর জুড়ে । তাদের এই বৃষ্টিস্নানের সাক্ষী আজ ঝড়ো হাওয়া, ঝড়ো হাওয়ায় দোদুল্যমান গাছপালা আর মেঘে ঢাকা আকাশ।

রায়হান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তিনটা চল্লিশ। মেঘের ঘনঘটায় বাহিরে বেশ অন্ধকার অন্ধকার ভাব। বোঝা যাচ্ছে আজ প্রচণ্ড বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি নিরুর খুব পছন্দ। বৃষ্টি দেখলেই নিরু নীল শাড়ি পড়ে বৃষ্টিতে ভেজে। নিরুর বৃষ্টিতে ভেজা দেখতে রায়হানের বড্ড ভালো লাগে, মনে হয় একটি নীল পরী বৃষ্টির পানিতে নেচে বেড়াচ্ছে। নিরুর বৃষ্টিতে ভেজা দেখে প্রতিবারই যেন নতুন করে প্রেমে পড়ে রায়হান তবে নিরু এটা হয়তো জানেনা আর জানার কথাও না কারন কখনওই নিরুকে বলা হয়নি সে কথা।

এসব ভাবতে ভাবতেই শাড়ির দোকানে ঢুকে পড়লো রায়হান, আধ ভেজা হয়ে । ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। বেছে বেছে গাঢ় নীল আর কালো পেড়ে একটি শাড়ি রায়হানের বেশ মনে ধরলো। দোকান থেকে বেরিয়ে মনে হলো নীল রেমশি চুড়ি নিতে পারলে দারুণ হতো, বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দের সাথে চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ মিলে এক মোহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি হবে, ভাবতেই ভালো লাগছে। চুড়ির দোকান খুঁজে পেতে বেশ কিছুটা সময় চলে গেলো। নিজের জন্য একটা নীল শার্ট ও নিয়ে নিলো। আজ নিজেও ভিজবে নিরুর সাথে । নিরু কখনো পুকুরের পানিতে নেমে বৃষ্টিতে ভেজার স্বাদ নিতে পারেনি। অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় যখন পুকুরে অর্ধেক শরীর ডুবে থাকে আর বাকি অর্ধেক ভেজে বৃষ্টিধারায়। ডুব দিয়ে থাকলেও বৃষ্টির যে ফোটা গুলি পানিতে পড়ে সেও এক অন্যরকম অনুভূতি। এসব অনুভূতি আজ অনুভব করাবে নিরুকে সাথে আজ বলবে প্রতিটি বৃষ্টি ভেজা দিনে রায়হান নতুন করে নিরুর প্রেমে পড়ে। আজ নিরুকে নিয়ে রায়হান সমস্ত পুকুর সাঁতরে বেড়াবে। নীল শাড়ি পড়া এক অপূর্ণ সুন্দরি রমণী সাথে নীল শার্ট পড়া তার প্রেমিক পুরুষ, মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নীচে নীলাভ পানিতে হাত ধরে ভাসছে। কি অপরূপ দৃশ্য, ভাবতেই মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো । সাথে কিছুটা ভয় , কেনাকাটা করতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে, যেতে যেতে বৃষ্টি না থেমে যায়! তবে যে সকল আয়োজন ব্যর্থ। আকাশ পানে তাকিয়ে দেখলো সমস্ত আকাশ জুড়ে এখনো কালো মেঘেরঘটা, খুব শীঘ্রই এই বর্ষণ থামবে বলে মনে হচ্ছেনা। হঠাৎ মন কুহু ডেকে উঠলো, কেন জানি মনে হচ্ছে এ বর্ষণ সর্বনাশা!

জীপ থেকে নেমেই এক দৌড়ে বারান্দায় উঠলো, যেন নিরু পড়ার আগে শাড়িটি ভিজে না যায়। দরজা হালকা টেনে দেওয়া, দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে নিরু নিরু বলে বার কয়েক ডেকে খুঁজতে লাগলো কিন্তু নিরুর কোন সাড়াশব্দ নেই। রান্নাঘরে উকি দিতেই দেখে জানালাটি হাট হয়ে খোলা আর বৃষ্টির ঝাপ্টা এসে গ্যাসের চুলা ভিজিয়ে দিচ্ছে। দ্রুত এগিয় গেলো জানালা বন্ধ করবে বলে। জানালার সামনে এসে অবাক হয়ে দেখলো, পুকুরের পানি আজ বড্ড বেশি নীল লাগছে। ঠিক ওর কিনে আনা গাঢ় নীল শাড়ির ন্যায়। মনে হচ্ছে নিরু নীল শাড়ি পড়ে মাঝ পুকুরে ভাসছে আর ওর আঁচল বিছিয়ে আছে সমস্ত পুকুর জুড়ে। কি অপরূপ লাগছে আজ পুকুরের নীল জল! রায়হান অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে…

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত