জীবনে প্রথম গল্প লিখতে বসলাম,তাও আবার সত্য ঘটনা অবলম্বনে- যে ঘটনাটি বলতে যাচ্ছি,তা ঘটেছিলো আমার এক বান্ধবীর বাবার সাথে,বান্ধবীর মুখ থেকে শুনার পর তার বাবা থেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে,তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন- ঘটনাটি হচ্ছে ১৯৮০ সালের দিকের,তখনো আজকের এত সুন্দর রাঙামাটি এত উন্নত হয় নি,জঙ্গলে ঘেরা রাস্ত, আলোর সল্পতা,লোকজনের অভাব সবকিছু মিলে রাঙামাটির কিছু কিছু এলাকায় সন্ধ্যার পর থমথমে ও ভৌতিক পরিবেশের সৃষ্টি হতো। যে এলাকাটির ঘটনা নিয়ে এই গল্প সেই
এলাকাটির নাম হলো পুরাতন হাসপাতাল রোড,রাঙামাটিতে ২ টি হাসপাতাল আছে, একটি স্টেডিয়াম এলাকায় নতুন হাসপাতাল অন্যটি আব্দুল ফকির মাজারের পাশে পুরাতন হাসপাতাল।পুরাতন হাসপাতালটি নতুন হাসপাতাল হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল,আমার বান্ধবীর বাবা প্রচুর পরিমাণে মদ খেতেন,একদিন রাতে তিনি তার বন্ধুর বাসায় মদের আড্ডা দিতে দিতে রাত ১ টা বাজিয়ে ফেলেন, ততক্ষনে তখনকার সময় রাঙ্গামাটিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যেত।তিনি তার বন্ধুদের নিষেধ সত্ত্বেও হেঁটে হেঁটে তার বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং মাতাল অবস্থায় বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বন্ধুর বাসা থেকে বেড়িয়ে পরেন,আংকেলের তখনকার বাসা ছিল পুলিশ লাইন এলাকা, আংকেল মাতাল অবস্থায় যখন মাজারের সামনে আসলেন তখন তিনি চিন্তা করলেন মেইন রোড দিয়ে হেঁটে গেলে ১ ঘন্টা
হাঁটতে হবে, যদি তিনি মাজারের পাশ দিয়ে যান তাহলে তিনি নৌকা পার হয়ে ১০ মিনিটে বাসায় চলে যেতে পারবেন, উল্লেখ্য যে মাজারের পিছনে একটি বড় কবরস্থান আছে,তার পাশেই ছোট একটি মাটির রাস্তা দিয়ে খালে যাওয়া যায়,ঐ খালের এক কোণায় পুরাতন হাসপাতালের লাশকাটা ঘর ছি। আংকেল যখন মাজারের পাশ দিয়ে খালের রাস্তার দিকে যাচ্ছিলেন,তখন তিনি খেয়াল করলেন মাজারের কবরস্থানের উঁচু দেওয়ালের উপর থেকে একজন সাদা কাপড় পরিহিত বৃদ্ধলোক তাকে খালের ঐদিকে যেতে নিষেধ করলেন কিন্তু আংকেল সে কথার পাত্তা দিলেন না, তিনি খালের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন এবং হাঁটা শুরু করলেন,বৃদ্ধ লোকটি তখন বলে উঠলো পরে কোন ক্ষতি হলে আমাকে দোষারোপ করতে পারবি না,এই রাস্তা ভাল না,তুই অন্য রাস্তা দিয়ে যা,তোর ক্ষতি হবে,তোর ক্ষতি হবে। এই বলে তিনি হঠাৎ মাজারের কবরস্থানের মধ্য উধাও হয়ে গেলেন। আংকেল মাতাল অবস্থায়
এতকিছুর তোয়াক্কা না করে ঘাটে যখন পৌছালেন তখন তিনি খেয়াল করলেন পুরো ঘাটে কেউ নেই, ঘাট সম্পুর্ণ জনমানবশূন্য। ঐ ঘাটে সরকারী একটি নৌকা ছিল, যা রশি টেনে টেনে এপার ওপার হওয়া যেত,আংকেল যখন একা একা নৌকায় উঠলেন তখন তিনি খেয়াল করলেন খালের পাড়ের পুরানো লাশকাটা ঘরের দরজাটি আপনা-আপনি খুলে যাচ্ছে আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এসব দেখে আংকেল প্রচন্ড ভয় পায়, এবং ভয় পাওয়ার ফলে তার নেশা কেটে যায়,তিনি তখন জোরে জোরে নৌকার রশি টানতে লাগলেন কিন্তু তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন খালের ঐ পাড়ে ঘাটে কালো কাপড় পরিহিত বিভৎস এক মহিলা তার দিকে দেখে দেখে হাসছেন,আংকেল সাথে সাথে মধ্য খালে নৌকা থামিয়ে ফেললেন এবং তার পকেট থেকে সিগারেট বাহির করে টানতে লাগলেন,ঐনি নাকি শুনেছিলেন আগুন সাথে থাকলে নাকি খারাপ কোন কিছু পাশে আসতে পারে না,তখনও ঐ মহিলাটি ঘাটে দাড়িয়ে দাড়িয়ে
আংকেলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছ,এদিকে আংকেল একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাইতে আছে, কিছুক্ষন পর হঠাৎ মেয়েটি গরম হয়ে বলতে লাগলো এই সামান্য আগুন আমার থেকে তোকে কতক্ষন রক্ষা করবে?? তোকে তো পাড়ে আসতেই হবে,আংকেল এই কথা শুনার পর চিৎকার করে কান্না শুরু করে দেন এবং বাঁচার জন্য চিৎকার করেন কিন্তু কোন লাভ হয় না কারণ আশে পাশের এলাকা তখন সম্পুর্ণ নিরব। আংকেলের কান্না দেখে বীভৎস সেই নারী আরো জোরে হাসতে শুরু করে,এগুলো করতে করতে ফজরের অাযান দেওয়ার সময় হয়ে যায়। আংকেল তখন দেখলেন বীভৎস সেই মেয়েটি আস্তে আস্তে হেঁটে হেঁটে লাশ কাটা ঘরের দিকে চলে যাচ্ছে,যেতে যেতে হঠাৎ পিছনে ফিরে আংকেলকে বললো, তোর মার বুকের দুধের অনেক শক্তি, তুই আমার হাত থেকে বেঁচে গেলি,আগামীতে হাতে পেলে আর ছাড়বো না।এই বলে মেয়েটি লাশকাটা ঘরের দিকে আবার হাঁটা শুরু
করলো,আংকেল তখন আস্তে আস্তে নৌকার রশি টানতে টানতে অপর পারে পৌছালো, কিন্তু আংকেলের দুর্ভাগ্য ছিল,ততক্ষণে আংকেলের শেষ সিগারেটটি শেষ হয়ে নিভে যায় এবং ফজরের অাযান দিতে তখনো ০৫ মিনিট বাকি ছিল,তিনি বিপদ কেটে গেছে মনে করে নৌকা থেকে নেমে যায়, কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন নি বিপদ এখনো তার জন্য অপেক্ষা করছে, নৌকা থেকে নেমে একটু সামনে যাওয়ার সাথে সাথে সেই কালো কাপড় পরিহিত বীভৎস সেই মেয়েটিকে তার পাশে দেখতে পায়,তিনি তখন দৌড়ে নৌকায় উঠতে যাওয়ার আগেই মেয়েটি আংকেলের গলায় কামড় বসাই এবং জোরে একটা থাপ্পড় দেই,কিন্তু আংকেলের ভাগ্য ভাল তখন ফজরের আযান দেওয়ার ফলে খারাপ জিনিসটা তাকে ছেড়ে দেয়।পরে সকালে আংকেলকে অজ্ঞান ও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘাটে পরে থাকতে দেখে এলাকার লোকজন তাকে মেডিকেল নিয়ে যায়,ঐ যাত্রায় আংকেল বেঁচে গেলেও চিরদিনের জন্য তার ডান কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলে,সেই দিনের পর থেকে আংকেল আজ পর্যন্ত আর মদ স্পর্শ করেন নি।