সান এন্ড হাইসফেল

সান এন্ড হাইসফেল

প্রতিদিনেই ছাদে উঠে সেই ছেলেটি।ছেলেটির নাম সান।যখন পাখিরা জাগে তখন তার ঘুম ভাঙে।সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ছাদে গিয়ে গাছে পানি দেয় এবং কিচ্ছুক্ষণ ব্যায়াম করে।তারপর কারাতে অনুশীলন করে।সেই ছাদে মাঝে মধ্যে একটি ভূত আসে এবং সান এর দুষ্টুমি ও প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো দেখে।ভূতটা নিজ সম্পকে যা জানে তা হলো সে এতোটা ভালো না আবার খুব বেশি খারাপ না।অনেকটা সান এর মতো ভাবে।সান ভূতদের প্রতি খুব আগ্রহ। মানুষ বন্ধু তার ভালো লাগে না।সে চায় তার যেন একটা ভালো ভূ্ত বন্ধু হোক।আর ভূতটি ও চায় তার যেন একজন মানুষ বন্ধু হোক,যে তাকে খুব ভালবাসবে।ভূতটি প্রতিদিনেই চেষ্টা করে কিভাবে সান এর সাথে কথা বলা যায়,আর যদি সান এর সাথে কথা বলে সান যদি তাকে দেখে ভয় পায় এবং যদি তার কোন ক্ষতি করে।আর এদিকে সান ও অনেক সময় সন্ধ্যায় ছাদে উঠে এই আশায় যদি কোন ভূত তার সাথে এসে দেখা করে।

SSC পরীক্ষা শেষ সানের। মা,শিক্ষক ও তার দুই বোন কথা দিয়েছিল পরীক্ষা শেষ হলে পৃথিবী মাথায় নিয়ে ঘুরলে ও কেউ বাঁধা দিবে না।কিন্তু ক্লাস টেন টা যেন সে ভালো করে লেখা পড়া করুক সবাই সেটা চায়।তার বড়বোন সানকে বলেছিল পরীক্ষা শেষ হলে টেলিভিশন তার চোখের সাথে বেঁধে দিবে।

কিন্তু পরীক্ষার সময় সে যেন টেলিভিশন না দেখে।কিন্তু সান এর একটাই কথা তাকে পরীক্ষার পর একটা ফোন কিনে দিতে হবে।মা কথা দিল ছেলেকে কিনে দিবে।কিন্তু পরীক্ষা শেষ সেসকল কথা সবাই ভুলে গেছে।এখন আর সান এর টেলিভিশন দেখতে ভালোলাগেনা যেমনটা পরীক্ষার সময় লেগেছিল। তাই সান রাগ করে একাকী মনে ছাদে বসেছিল। তখন ছিল দুপুর বেলা। সবাই ঘুম গিয়েছিল।সান বসে বসে মানুষ সম্পর্কে অনেককিছুই ভাবছিল, মানুষ কথা দিয়ে কথা রাখে না ধোঁকা দেয়,সে এসব ভাবছিল।এমন সময় ভূতটি তাকে দেখেছিল এবং মনে মনে ভাবলো এখন ছেলেটির সাথে বন্ধুত্ত্ব করা উচিৎ,মনে হয় ছেলেটির মন খারাপ।হটাৎ ভূতটি সান এর সামনে এসে বলে, হাই! আইএম হাইসফেল। সান চমকে না উঠে বলে, হেলো আমি সান।ভূ্ত হাইসফেল সানকে বললো আসলে আমি ভূত।সান বললো তোমায় দেখেই বুঝতে পেরেছি। তারপর হাইসফেল বললো ও তাই, তুমি তো খুব সাহসী ছেলে।

সান হাইসফেলকে বললো, আসলে আমি এ মুহুত্মের জন্য প্রস্তুত ছিলাম।এরপর সান হাইসফেলকে বলে তোমার নামটা খুবেই সুন্দর।হাইসফেল বলে তোমার নামটা আসলে খুবেই ছোট, কিন্তু আমার ভালো লেগেছে।সান হাইসফেলকে বললো,তোমার কথার ধরণ অনেকটা মানুষর মতো। হাইসফেল হেসে বললো,আর আমার থেকে মনে হয় তোমার কথার ধরণ অনেকটা ভূতদের মতো। দুজনেই হেসে উঠলো। হঠাৎ করে সান বলে আমরা কি বন্ধু হতে পারি। হাইসফেল বলল,অবশ্যই তাইতো আমি তোমার সাথে দেখা করলাম।সান হাইসফেলকে তার মনের সকল কথা বলে এবং হাইসফেল ও নিজ সম্পকে অনেককিছু বলে।সান হাইসফেলকে আগ্রহের বসতে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা হাইসফেল তুমি কি ছেলে ভূত না মেয়ে ভূত?হাইসফেল বলল, আমি তোমার মতো ছেলে এবং তোমারেই বয়সের।কিন্তু পার্থক্য হল তুমি মানুষ আর আমি ভূত। সান বলল,কিন্তু আমরা বন্ধু। সান হাইসফেলকে বলে তুমি খুবেই সুন্দর। তোমার মুখটা অনেকটা হলুদ রঙ ও সাদা রঙ এর মিশ্রনের মতো আর তোমার চুল গুলো নীল। আমি ছেলেদের সম্পকে এ জিনিস বুজি না, যে তারা সুন্দর নাকি অসুন্দর। অথ্যাৎ কোন ছেলে সুন্দর নাকি অসুন্দর এ জিনিসটা বুজি না।

যখন আমার ক্লাসমিটরা আমায় জিজ্ঞাসা করে হেই,সান এ ছেলেটা আমার থেকে সুন্দর নাকি বলতো?যদি আমার থেকে সন্দুর হয়, আমি ওর সাথে প্রাইভেট পড়বো না। সান বলে,দোস্ত আমি বুঝি না।কিন্তু এই প্রথম আমার সুন্দর লেগেছে হয়তো তুমি ভূত বলে।অনেকক্ষণ পর হাইসফেল কথা বলল কারণ সানের একটানা কথা বলার কারনে তার বলার সুযোগ হয় নি।কিন্তু সে সানের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছে।হাইসফেল বললো,সান তুমি খুব ভালো ছেলে।হাইসফেল বলল, আচ্ছা তোমার প্রিয় বস্তু কি?সান সাথে সাথেই বললো একটি অ্যান্ডয়েড মোবাইল ফোন।যাতে ফেইসবুক,ইন্টারনেট সবেই আছে।কিন্তু তা আর আমার প্রিয় নয়।হাইসফেল জিজ্ঞাসা করলো, কেন?সান বললো কারণ আমার মোবাইল থাকলে আমি ফেইসবুক এ শুধু ভূত ফ্রেন্ডসেই খুঁজতাম। এখনতো তোমাকে পেয়ে গেলাম। আর এভাবেই সান এন্ড হাইসফেল এর মধ্যে অনেক কথা হয়। এমনকি সান যখন রাতে ঘুমুতে যায় তখন ও হাইসফেল তার সাথে এসে ঘুমায় ও দুষ্টুমি করে। হাইসফেল সানকে অনেককিছুই শেখালো কিভাবে পাখির ডাক বা কথা বুজা যায়।তারপর কোন অদৃশ্য জিনিশ কিংবা ভুত তার আসে পাশে আছে কিনা সান এখন এসব সব বুজতে পারে।আর সান হাইসফেলকে শেখালো কারাতে।প্রতিদিন সকালে এখন সান হাইসফেল এর সাথে কারাতে অনুশীলন করে।কিন্তু এখন আর ছাদে করে না,হাইসফেল সানকে নিয়ে যায় বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পাহাড়ে সেখানে সান ও হাইসফেল অনুশীলন করে এবং অনেক মজা করে।

মাগরিবের সময় সান হাইসফেলকে নিয়ে নামাজ পড়তে যায়।কিন্তু তার একেবারে শেষ কাতারে নামাজ আদায় করে।কেননা সান যদি মানুষের সাথে একসাথে নামাজ পড়ে হাইসফেল সানের সাথে দাঁড়িয়ে এক সাথে নামাজ পড়তে পারবে না।হাইসফেল শুধু সানের সাথেই নামাজ পড়ে আর মানুষের মধ্যে সানেই শুধু হাইসফেলকে দেখতে পায়।তারা সন্ধ্যায় নামাজ শেষ করে রেললাইনের পাথ ধরে হাঁটতে থাকে। আর বসন্তের হাওয়ায় কথা বলে।সন্ধ্যাববেলা রেললাইনের রাস্তাটা অনেকটা নিস্তব্ধ ও নিরিবিলি থাকে।মাঝে মধ্যে এক- দুজন মানুষ যাতায়াত করে যখন কোন মানুষ আসে সান চুপ করে আর তখন হাইসফেল কথা বলে। একদিন হাঁটতে হাঁটতে সান হাইসফেলকে জিজ্ঞাসা করলো,তুমি আমার সাথে দিনে কতক্ষন থাক? হাইসফেল বললো বার ঘন্টা উনিশ মিনিট তের সেকেন্ড। সান বললো আর বাকি সময় তুমি কোথায় থাক? হাইসফেল বললো সুষিমার সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকি।সান জিজ্ঞাসা করলো সুষিমা!সেটি আবার কোথায়? হাইসফেল বললো সুষিমা এটি কোরিয়া ও জাপানের সীমানার মধ্যবতী অঞ্চল। সান অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে হাইসফেলকে বললো তোমরা ভূতেরা কয়বছর বাঁচো? হাইসফেল বললো ঠিক নেই।তবে সাধারণত এখন ২৫০-৩৫০ যথেষ্ট। আমার দাদা হুয়াসফেল সাড়ে তিন হাজার বছর বেঁচে ছিল।তখন ভূতেরা অনেক দিন বাঁচতো। এখন আমার সময় এসে খুব কম হয়ে গেছে। সান হা করে তাকিয়ে আছে হাইসফেলের কথা শুনে। হাইসফেল কিছু বলছো না যে সান। সান বললো এর মানে তুমি আমার মরার পর ও অনেকদিন বেঁচে থাকবে। হাইসফেল বললো সেটি পরে দেখা যাবে, চলো তোমাকে আমাদের ভূতদের দেশে নিয়ে যায়।সান বলে উঠলো তোমাদের আলাদা দেশ আছে?

হাইসফেল বললো আছে। কিন্তু আমি সেখানে খুব কম যাই। কিছু না বলে উঠার আগেই হাইসফেল সানকে তার পিঠে বসিয়ে উড়াল দিল। সান ভূতদের দেশে তিনদিন থাকলো। এই তিনদিন যেন তার জীবনের সেরা মূহুত্ত ও দিন। তারপর সান বললো আমি বাড়ি যাবো হাইসফেল। হাইসফেল সানকে পিঠে বসিয়ে আবার উড়াল দিল এবং নিজ দেশে আসলো সান। কিন্তু সান দেখলো তার সবকিছুই যেন অচেনা। সান বললো আমরা কোথায় আসলাম হাইসফেল। হাইসফেল বললো তোমার দেশে আর ঐ বাড়িটা তোমাদের। সান ভালো করে দেখলো কিছুটা মিল আছে তাদের বাড়ির সাথে। কিন্তু তাদের বাড়ি ছিল দোতলা আর এটা পাঁচতলা। হাইসফেল সবকিছু বুজিয়ে বললো, হাইসফেল বললো আমাদের দেশে ১দিন তোমাদের দেশে ৫০ বছর আর আমাদের দেশে তিনদিন তোমাদের দেশে ১৫০ বছর। সান অবাক হয়ে গেল এবং কিছুক্ষণ ধরে কাঁদলো তার পরিবারের জন্য। হাইসফেল সানকে সান্ত্বনা দিল এবং বললো আসলে আমি দুঃখিত, আমি বুঝিনি তুমি যে এতো কষ্ট পাবে। সান হাইসফেলের সাথে কিছু না বলে লক্ষ করলো এখানের আগের মানুষের থেকে অনেক বৈচিএ্য। কেউ কারো সাথে তেমন কথা বলে না এবং সবাই অনেক ব্যস্ত আর তার সেই বসে থাকা স্থান ছাদটি ও আর নেই। সান কিছু সময় চুপ করে থেকে সেই রেললাইনের পথ ধরে হাঁটতে থাকলো। হাইসফেল তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকলো। সান হাঁটতে হাঁটতে লক্ষ করলো প্রায় সবকিছুই বদলে গেছে।

সান কিছুক্ষণ পর হাইসফেলকে জিজ্ঞাসা করলো তাহলে আমি কেন মারা যায় নি হাইসফেল। হাইসফেল বললো তুমি আমাদের ভূতদের দেশে ছিলে, আমাদের দেশে সময় অনুসারে তুমি বেচেঁ ছিলে। কিন্তু এখন তুমি আবার মানুষের দেশে আর তাই এখন আবার তুমি মানুষের সময়নুসারে বেচেঁ আছো। কিন্তু আমরা ভূত যেখানেই অবস্তান করি না কেন, ভুতদের সময়নুসারেই বাঁঁচবো। হাইসফেল সানকে জড়িয়ে ধরে বললো আমি দুঃখিত সান। আসলে আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই আমি তোমাকে আমার আগে হারাতে চাই না। হাইসফেল সানকে বললো,মনে হয় তোমার এখানে ভালো লাগছে না চলো আমার দেশে। সান হাইসফেলকে জড়িয়ে ধরে। হাইসফেল সানকে নিয়ে যায় নিজ দেশে এবং সান সেখানে ভূতদের সাথে দিন কাটাতে শুরু করে।

আশ্চর্য কথা হলো ভূতেরা ভূতদের সময়সূচী অনুযায়ী বেচেঁ থাকে। ভূতেরা ২৫০-৩৫০ বছর বাচেঁ তা মানুষদের সময়সূচী অনুযায়ী হলো ১২,৫০০- ১৭,৫০০ বছর।
…….সমাপ্ত…..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত