ভৌতিক রাত

ভৌতিক রাত

ঘড়িতে সময় কাটায় কাটায় রাত ৩টা । মকবুল  সাহেব দ্বিতীয় স্লিপিং পিলটা খেয়ে বাতি নিভিয়ে কিছুক্ষণ হল  শুয়েছেন । চোখে ঘুম আসি আসি একটা ভাব হয়েছে ।  ঠিক সে সময় বিকট শব্দ করে ডোর বেলটা বেজে উঠল । বেশ কয়েকবার ডোর বেলটা বেজে উঠার পরেও তিনি বিছানা থেকে নামলেন না । কানে বালিশ রেখে শব্দটা না শুনার চেস্ঠা করলেন । কিন্তু যে ডোর বেলটা বাজাচ্ছে সেও যেন  নাছোড়বান্ধা । একটানা বাজিয়েই যাচ্ছে । বাজিয়েই যাচ্ছে ।

পুরো বাড়িতে মখবুল সাহেব আর তার কাজের ছেলে রমিজ । স্ত্রী রাগ করে ছেলে মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি গেছেন সপ্তা খানেক হল । স্ত্রী,ছেলে মেয়ে না থাকার ফলে অন্য রকমের এক স্বাধীনতা ভোগ করছেন তিনি  ।

স্ত্রীকে সাধা সাদি করে ফিরিয়ে না এনে উল্টো  অফিস থেকে পনোরো দিনের ছুটি নিয়ে নিয়েছেন । নিজেকে মনে মনে বলেছেন, “ব্যাটা মকবুল তোমার জীবনের এই ১৫ দিনের স্বাধীনতা তুমি প্রাণ খুলে উপভোগ করো ।”

কাজের ছেলে কাম দারোয়ান রমিজের রান্নার হাত দারুন । ও যাই রান্না করে মকবুল সাহেব চেটেপুটে খান। সারাদিন টিভি , বাড়ির গাছপালা পরিষ্কার করা এটা সেটা করে কেটে গেলেও রাত্রিটা তার অসহ্য লাগে। কিছুতেই ঘুমাতে পারেন না । ইনসোমোনিয়ায় প্রকট আকার ধারন করেছে । কিছুতেই ঘুম আসে না । বিছানায় শুয়ে এপাশ এপাশ করে ঘড়ির কাটার টিকটিক শব্দ শুনেন । কখন ছাগল গুনেন,ভেড়া গুনেন । কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসে না । এরকম ফজরের আযান পর্যন্ত চলে। ফরজের আযানের পরপর ঘুমিয়ে পরেন এবং দুপুর ২টা পর্যন্ত একটানা ঘুমান ।

মকবুল সাহেব থাকেন বনানী কবরস্থানের খুব কাজের বি ব্লকের একটি দোতালা বাড়িতে । পৈত্তিক সূত্রে বাড়িটির মালিক তিনি । ডুপ্লেক্স  বাড়িটার  চারপাশ প্রচুর গাছ পালায় পরিপূর্ণ । দিনের বেলাতেও শরীর কেমন ছমছম করে উঠে । বিয়ের প্রথম প্রথম এ বাড়িতে থাকতে মকবুল সাহেবের স্ত্রী তমা বেশ ভয় পেত । কিন্তু ছেলে মেয়ে হবার পর আস্তে আস্তে  ভয় চলে গেছে ।

ডোর বেলের শব্দটা ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠছে । কানের উপর রাখা বালিশ ভেদ মস্তিকে পৌঁছে যাচ্ছে সে শব্দ । মকবুল সাহেবের রাগ গিয়ে পরছে, রমিজের উপর । ব্যাটা নিশ্চয় মরার মতো ঘুমাচ্ছে । উঠে গিয়ে দেখতে পারেনা কে এমন অভদ্রের মতো বেল বাজাচ্ছে । রমিজ শোবার জায়গা বাহির সাভেন্ট কোয়াটারে । ডোর বেলের শব্দ রমিজেরই জোড়ে শোনার কথা । এমনিতেই রাতের বেলা সব কিছুর শব্দ বেড়ে যায় । সামান্য শব্দও বেশ জোড়ে জোড়ে শোনা যায় ।

টিকতে না পেরে এক সময় মকবুল সাহেব বিছানায় উঠে বসলেন । বিছানার পাশে রাখা ঘড়িটার দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলেন সাড়ে তিনটা বাজে । তিনি বিছানা থেকে নামতে নামতে ডাক দিলেন, রমিজ , এই রমিজ ।

দোতালার বেলকুনির দরজা খুলে তিনি বাহিরে এসে দাঁড়ালেন । এখান থেকে বাহিরের দরজার ভেতরের অংশের পুরোটা দেখা যায় । বাম পাশেই রমিজের রুমে যাবার রাস্তা । তিনি বেলকুনিতে দাড়িয়ে হাঁক দিলেন , “এই ব্যাটা রমিজ মরার ঘুম ঘুমিয়েছিস নাকি ? দেখনা কে বেল বাজাচ্ছে । ” তিনি দরজার দিকে তাকিয়ে , একই স্বরে জিজ্ঞাসা করে উঠলেন, “কে ? কে ওখানে ? । ” কিন্তু কেউ উত্তর দিন না । বেল বাজাও বন্ধ হলো না । ঠিক এমন সময় রমিজকে দেখা গেল । সে হন্তদন্ত হয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলো , “ফুপা কি হয়েছে ? ফুপা কি হয়েছে ?”

রমিজের একটু তোতলামো সমস্যা আছে । যে কোন কথাই দু’বার করে বলে । ভয় বা উত্তেজনার সময় ব্যাপারটা বেশি করে হয় ।

“ব্যাটা দেখোস না কতক্ষণ যাবত বেল বাজছে ? দেখ কে এতো রাতে এসেছে ।”
মকবুল সাহেব এবং রমিজ এর মধ্যে  চলা কথোপকথন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তকের স্পষ্ট শুনতে পাওয়ার কথা । কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে কোন উত্তর আসছে না । রমিজ দৌড়ে দরজার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কে, কে ? কাকে চাই , কাকে চাই ? । ”

দরজার ওপাশ থেকে কোন উত্তর এলো না । বেল বাজানোও বন্ধ করলো  না ।
“আর কে ওখানে উত্তর দিচ্ছেন না কেন ?” মকবুল সাহেব উপর থেকে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ।”
“কথা বলেন , কথা বলেন , তা না হলে দরজা খুলবো না , খুলবো না ।” রমিজ দরজার গা ঘেষে দাড়িয়ে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাইছে ।

ঠিক সেময় খুব আস্তে কিন্তু অত্যন্ত দৃঢ় ভাবে কেউ একজন বলে উঠল, “আমি । দরজার খুল ।
“আমি কে ? আমি ? নাম বলেন তা না হলে দরজা খুলবো না । খুলবো না । ” আর কোন জবাব এলো না ঢোর বেল বেজে উঠল ।

“আরে পাগল নাকি ? পরিচয় দিচ্ছেন না কেন ? নাম বলুন । পরিচয় না দিলে দরজা খোলা হবে না ।” মকবুল সাহেব উপর থেকে বলে উঠলেন । সঙ্গে সঙ্গে ডোর বেল বন্ধ হলে গেল । মকবুল সাহেব দরজার ওপাশে কে আছে দেখার চেষ্টা করছেন । কিন্তু কিছু দেখতে পারছেন না । তবে আবছা ভাবে বুঝা যাচ্ছে দরজার ওপাশে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে ।

বেশ কিছুক্ষণ ডোর বেল বাজা বন্ধ থাকার পর । মকবুল সাহেব যখন ঘরে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করছেন , ঠিক সে সময় আবার ডোর বেল বেজে উঠল । এবার তিনি আর রাগ সংবরণ করতে পারলেন না । দরজা খোলা রেখেই ওয়ার ড্রপ থেকে বাবার লাইসেন্স করা রিবোল বারটা বের করে দৌড়ে নিজে নেমে গিয়ে একটানে ভেতরের দরজা খুলে ফেললেন । রমিজ তখনও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
মকবুল সাহেবকে রিভোল ভার হাতে বের হয়ে আসতে দেখে রমিজ বেশ ভয় পেয়ে গেল । দ্রুত দরজার কাছ থেকে এক পাশে সড়ে যেতে যেত বলল, “ফুপা কথা বলে না , কথা বলে না । ”
“দাড়া মশকরা ছুটচ্ছি বলে মকবুল সাহেব দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন । তারপর রি-ভোলবার ধরা হাতটি উঁচিয়ে বললেন, পরিচয় না দিলে এক্কেবারে গুলি করে দেবো । ফাজলামো করার আর জায়গা পাস না ।” দরজার ওপাশ থেকে এবার গোৎ গোৎ জাতিয় শব্দ হল ।

“কে ওখানে, এতো রাতে ফাজলামো করছ কেন ? ” আবারও গোৎ গোৎ শব্দ হল । অনেকটা ঠিক শুকরের নাক ঝাড়ার সময় যেরকম শব্দ হয় ঠিক সেরকম ।

“যে ই থাক না কেন নাম বলো, তা না হলে সত্যি সত্যি গুলি করে দেব”।  মকবুল সাহেব একটানে দরজা খুলে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে একটা হালকা গরম বাতাসের ঝাটকা এসে মকবুল সাহেবের নাকে মুখে লাগল । কয়েক মিনিটের জন্য মনে হলো কে যেন সরে গেল । পুরো শরীর অজানা এক ভয়ে শিরশির করে উঠল । তিনি চোখ মুখ কুচকে ফেললেন । আবার চোখ খুলতেই দেখলেন কেউ নেই । বাসার সামনের পুরো রাস্তাটা খা খা করছে । বেশে অবাক হয়ে তিনি গেট থেকে দু.কদম বের হয়ে রাস্তাটা দেখলেন । না কেউ নেই । এতো দ্রুত কারে পক্ষে সরে যাওয়াও সম্ভব না ।  মকবুল সাহেব মনে হলো চোখের ভুল । আরো কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে থেকে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন । মাথাটা হঠাৎ কেমন ভার ভার মনে হচ্ছে । তিনি রমিজের দিকে তাকিয়ে বললেন,রমিজ ভাল করে দরজাটা লাগিয়ে দে কথাটা বলে তিনি আর দাঁড়ালেন না । হাটতে লাগলেন । হাটতে গিয়ে বুঝতে পারলেন পা ঠিক মতো ফেলতে পারছেন না কেমন যেন টলছে । ব্যাপারটাকে গুরুত্ব না দিয়ে বাসার ঢুকে  দরজা বন্ধ করে সোজা উপরে এসে বিছানায় শুয়ে পরলেন ।

মনে হচ্ছে পেশার বেড়ে গেছে নয়তো  স্লিপিং পিল তার কাজ শুরু করেছে । বিছানার পাশে রাখা বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিলেন । মাথার উপর ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে তবুও বেশ গরম লাগছে । কপালে হাত দিয়ে দেখলেন ঘামে ভিজে উঠেছে । বোতলটা বিছানার পাশে রেখে চিত হয়ে শুয়ে পরলেন । মন মনে বললেন, এর কোন মানে হয় । লোকটা গেল কোথায় । চোখের পলকে তো কেউ হাওয়া হয়ে যেতে পারে না । তিনি স্পষ্ট শুনেছেন , পুরুষ কন্ঠের কেউ রমিজকে বলেছে, আমি , দরজা খল । কিন্তু চোখের পলকে মিশে গেল কিভাবে । ঠিক এমন সময়-আবারও ডোর বেলটা বেজে উঠল । হঠাৎ শব্দে মকবুল সাহেব, চমকে উঠলেন । নিজেকে শামলে নিয়ে এক দৌড়ে  নিচে নেমে গেলেন । সোফার পাশে রাখা ফোনটা তুলে বনানী থানায় ফোন করলেন । সাধারণত গভীর রাতের  ফোন কলগুলো থানার কেউ রিসিভ করে না । কিন্তু আজ ব্যতিক্রম হল । দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন রিসিভার তুলে বলল, হ্যালো ।

মকবুল সাহেব অত্যন্ত শান্ত ভাবে নিজের নাম পরিচয় দিয়ে  পুরো ঘটনাটি খুলে বললেন । ওপাশ থেকে বলা হল , স্যার চিন্তা করবেন না । আমাদের একটা টহল গাড়ি আছে আপনার এলাকাতেই আছে ।  আমি আপনার  নাম এবং বাড়ি নম্বর বলে দিচ্ছে । কিছুক্ষণের মধ্যে টহল গাড়িটি আপনার ওখানে পৌঁছে যাবে ।

ফোন রেখে মকবুল সাহেব সোফাতে বসে পরলেন । ব্যাপারটা বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেলে কিনা ভাবতে লাগলেন । হুট হাট থানা পুলিশ করা হয়তো ঠিক হলো না । টিভি অন করতে করতে ভাবলেন, যা হবার হবে । পুলিশকে জানিয়ে তিনি ভালই করেছেন । এই চ্যানেল ঐ চ্যানেল ঘুরতে ঘুরতে চোখ লেগে এসছিল এমন সময় আবারও ডোর বেলটা বেজে উঠল । তবে এবার আগের মতো একটানা বাজছে না । থেমে থেমে বাজছে । দরজা খুলে বাইরে আসতেই তিনি দেখতে পেলেন রজিম দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে । মকবুল সাহেবের দরজা খুলার শব্দে রমিজ পেছনে ফিরে তাকিয়ে তাকে দেখে বলল, ফুপা  মনে হয় থানা থেকে আইছে । দরজা খুলতে বলছে । মকবুল সাহেব দরজার কাছে এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কে ? সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো , গেট খুলুন আমি এসআই জামান থানা থেকে এসেছি । মকবুল সাহেব গেট খুলে দিলেন । একজন এসআই দুজন কনস্টবল সঙ্গে নিয়ে গেটে দাড়িয়ে আছে । মকবুল সাহেব গেট খুলে দিয়ে  বললেন, আসুন ভেতরে আসুন ।

এইআই জামান ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, কি হয়েছে একটু খুলে বলবেন । মকবুল সাহেব গেটে দাড়িয়েই সব খুলে বললেন । সব শুনে এসআই জামান বললে, আশ্চর্য তো । এতো রাতে কার এতো দায় পরেছে যে আপনার কলিং বেল টিপে ঘুমের বেগাত ঘটাবে ? কারো সাথে আপনার কোন শক্রুতা টক্রুতা নেই তো। মকবুল সাহেব বললেন,দেখুন ভাই আমি সাপোছা মানুষ সকালে ব্যাংকে যাই রাতে ফিরে আসি । কারো সঙ্গে কোন বিষয়েই আমার কোন ঝালেলা নাই ।

এ বাড়িতে কে কে থাকেন ? এসআই তার ইনভেস্টিগেশন শুরু করে দিয়েছেন ।
আমি, আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে আর আমার স্ত্রীর দু:সর্ম্পকের বোনের এর ছেলে এই রমিজ । মকবুল সাহেব রমিজকে দেখিয়ে কথা শেষ করলেন ।
আপনার স্ত্রীও কি কলিং বেল এর শব্দ শুনেছেন ?
আমার স্ত্রী বাসায় নেই । উনি ছেলে মেয়ে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি গিয়েছেন ।
ও আচ্ছা । বাসায় তাহলে আপনারা দু’জন ।
জি ।

এইবারই কি প্রথম এমনটি ঘটেছে নাকি এমন ঘটনা আরো ঘটেছে ।
না আগে কখন ও এমন হয়নি । এবারই প্রথম । মকবুল সাহেব কোন চিন্তা না করেই বললেন ।
এ্যই তুই ও কি কলিং বেল এর শব্দ শুনেছিস ? এসআই জামান রমিজ এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ।
জ্বি স্যার শুনছি । গেটের কাছে এসে কে কে জিজ্ঞাসা করতে নাম বলে নাই শুধু বলেছে , আমি, দরজা খল ।
নাম বলে নাই ? আই সি । ব্যাপারটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে । এক সঙ্গে আপনার এবং ওর দুজনেরই ভুল হতে পারে না । নিশ্চই যেনে বুঝে কেউ আপনাদের সঙ্গে ফাজলামো করছে । আপনি এককাজ করুণ থানায় এসে একটা জিডি করুণ । আমি এখন একটা রিপোট লিখে নিয়ে যাচ্ছি । মুকবুল সাহেব মাথা নেড়ে বললেন জি ঠিক আছে ।
এসআই জামান তার পেছনে দাড়িয়ে থাকা একজন কনস্টবলের দিকে তাকিয়ে বললেন, গাড়ি থেকে আমার ব্যাগটা নিয়ে আসুন । জি স্যার বলে কনস্টবলটি চলে গেল ।
মকবুল সাহেব বললেন আসুন ভেতরে এসে বসুন ।

মাথা নেড়ে সন্মতি জানিয়ে এসআই জামান পুরো বাড়িটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে দেখতে মকবুল সাহেবের পেছন পেছন হাটতে লাগলেন । ছিমছাম পরিচ্ছন্ন বাড়ি যে কারোই ভাল লাগার কথা । ভেতরে ঢুকে সোফায় বসতে বসতে এসআই জামান চারিদিকে তাকাতে তাকাতেই বললেন, এ বাড়ির মালিক কি আপনি ।
জি । বাড়িটা আমি পৈতিক সুত্রে পেয়েছি ।
বেশ সুন্দর আপনার বাড়িটা ।
ধন্যবাদ । ‘

আপনি কোন চিন্তা করবেন না । এটা কোন সমস্যা ই না । কাল থানাতে এসে জিডি করুন । সব ঠিক করে দেবো ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।

কনস্টবল একটা কালো রং এর ব্যাগ এনে এসআই এর হাতে দিল । এসআই ব্যাগটা খুলে তার ভেতর থেকে একটা খাতা বের করে মকবুল সাহেবের নাম, বাবার নাম , বাড়ির ঠিকানা । আজ রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ লিখতে লাগলেন । মুকবুল সাহেব অন্য একটা সোফায় বসে আছেন । আর সবাই দাড়িয়ে আছে । ঠিক এমন সময় বিকট শব্দ করে ডোর বেলটা একবার বেজে উঠে আবার বন্ধ হয়ে গেল । সবাই বেশ চমকে উঠল । তারপরই ডোর বেলটা একটানে বেজে চলল । মকবুল সাহেব বললেন, দেখেছেন দেখেছেন । এভাবেই আগেও বেজে উঠেছিল ।

এসআই জামান চটকরে উঠে দাড়িয়ে বললেন , দাঁড়ান আমি দেখছি কে ? বলে তিনি এক দৌরে গেটের কাছে চলে এলেন । ডোর বেলটা তখনও বেজে চলেছে । একটা গেটটা খুলে ফেলতেই ডোর বেলেটা বন্ধ হয়ে গেল । গেটের বাহিরে কেউ নেই । চাদের আলোয় বাসার সামনের রাস্তাটা ভেসে যাচ্ছে । এসআই জামান কাউকে দেখতে না পেয়ে অবাক হলেন । বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে এদিক ওদিক বেশ ভাল করে দেখলেন । তার পেছন পেছন অন্য সবাই । বাসার কাছেই পুলিশের জিপ গাড়িটা থেমে আছে আছে । চালকের আসনে বসে আছে আর একজন কনস্টবল । এসআই গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতেই গাড়ির দরজা খুলে কনস্টবল বের হয়ে এলো । এই রফিক তুমি কাউকে এই গেটে দেখেছো ?
না তো স্যার আমি তো গেটের দিকেই তাকিয়ে বসেছিলাম । কেউ আসলে আমি দেখতামই । কেউ আসেনি স্যার ।
কলিং বেলের শব্দ শুনেছ  ?
জী না স্যার কোন শব্দ শুনি নাই ।
আশ্চর্য ! ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না । বলে এসআই জামান ডোর বেলটা টিপে দেখলেন । কোন সমস্যা নেই । টিপতেই বেজে উঠছে আবার হাত সরিয়ে নিতেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । এসআই জামান এবার ডোর বেলটার কাছে মুখ নিয়ে জোরে ফু দিয়ে দেখলেন, না বাজছে না । এতো দেখছি রিতিমত ভৌতিক কাণ্ড । বাসায় ঢুকে মকবুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি আমার সারা জীবনে এমন আজব ঘটনা ঘটতে দেখিনি । মনে হচ্ছে ডোর বেলটায় সমস্যা আছে আপনি ওটা কাল বদলে ফেলুন । এখানে একটা সই করে দিন । বলে খাতাটা মকবুল সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন ।

মকবুল সাহেব হাতে খাতাটা নিয়ে সই করতেই রান্না ঘরের থালা বাসন পরার প্রচন্ত শব্দ হলো । সবাই দৌড়ে রান্না ঘরের দিকে গেলেন । রান্না ঘরটা নিচের তলাতে । দোতালায় উঠার সিড়িতে তাকালে রান্না ঘরটা দেখা যায় । মকবুল সাহেব এগিয়ে গিয়ে বাতি জ্বালাতেই দেখতে পেলেন, রান্না ঘরের পুরো মেঝে কাচের থালা বাসন ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে । মাঝারি সাইজের থালাবাসন রাখার রেকটা ও কাত হয়ে পরে আছে ।  কারো মুখে কোন কথা নেই । সবাই বড় বড় চোখ করে দেখছে । সবাই বেশ ঘাবরে গেছে ।

এইটা ভুতের কাজ স্যার । এই বাসায় ভুত আছে । চলেন স্যার তারাতারি বাগি । একজন কনস্টবল  পেছন থেকে বলে উঠল । আহা বাজে বোক না । হয়তো কোন কারনে পরে গেছে ।

স্যার এতো বড় রেকটা এমনি এমনি পরতে পারে না । নিশ্চই কিছু  একটা আছে । চলেন স্যার চলে যাই ।
তুমি গাড়িতে গিয়ে বস । যতো সব । যাও, ভাগ এখান থেকে ।

কনস্টবল আর কোন কথা বলার সাহস পেল না । এসআই জামান মকবুল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন , যা ঘটছে তাতে অবাক না হয়ে পারছি । আপনি অবশ্যই আগামী কাল একটু থানায় আসবেন ।

ঠিক আছে । মকবুল সাহেব মাথা নাড়লেন । তাহলে আজ চলে যাই । মকবুল সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না । ঘটনাটি তিনি এখনও হজম করতে পারছেন না । রমিজকে রান্না ঘরটা পরিস্কার করতে বলে তিনি গেলেন এসআইকে বিদায় দিতে । রান্না ঘর থেকে হেটে দোতালার সিড়ির কাছে আসতেই দোতালা থেকে কিছু ভেঙে পরার বিকট শব্দ হলো ।

মকবুল সাহেব দৌড়ে উপরে উঠে গেলেন । পেছন পেছন ছুটলো সবা্‌ই ।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত