মিমি চলে যাওয়ার পর থেকে সিডেটিভ দিয়ে রাখা হয়েছে বাসবীকে! সারাক্ষণ ঘরটাকে মাতিয়ে রাখত সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট পুতুলের মতো মিমি! রিৎজ পার্কের আবাসনের তিনতলায় থাকত বাবা-মায়ের সাথে। সে ছিল ওদের ফ্ল্যাটের সবার আদরের! লোয়ার নার্সারিতে পড়া মিমি স্কুল, পার্কে খেলা, আর নাচ নিয়ে মেতে থাকত সারাদিন। টিভিতে দেখা নাচগুলো একবার দেখলেই মুখস্থ হয়ে যেত তার! সবাই ওর নাচ দেখে মুগ্ধ!
বাবা দীপন ব্যস্ত মানুষ। মিমিকে পার্কে নিয়ে যাওয়া, স্কুল বাসে তুলে দেওয়া, সব করেন মামা-দাদু। বাসবীর মামা অনীশ বাবু বিবাহ করেননি। বাপ-মা মরা বাসবী ছোট থেকেই তাঁর কাছে মানুষ। তাই একমাত্র ভাগ্নীর বিয়ের পরেও ভাগ্নীর সংসারেই রয়ে গেছেন। বাসবীর মতই বাসবীর মেয়ের দায়িত্বও স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন মামা।
বয়স এমন কিছু বেশি নয়। সবে পঞ্চান্ন! মামার ভরসাতেই বাসবীও চাকরিটা করতে পারছিল। কিন্তু এখন আর কার জন্য টাকা রোজগার করবে দুজনে? কে যে ওই একরত্তি মেয়েটার এমন সর্বনাশ করল?
পুলিশ কোনো কিনারা করতে পারেনি। কি করে এমন অঘটন ঘটল? আবাসনের অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে বিকেলে সেদিন খেলতেও যায়নি মিমি! তবু ও পার্কের শেষ প্রান্তে ভাঙা দোলনাটায় কি করছিল?
।। বাসবী ।।
আমার মিমিকে যে আমি দেখতে পাই, কেউ বিশ্বাস করে না। ও আসে। মামমাম-কে কিছু বলতে চায়। কেউ মানতে চায় না। এমনকি দীপনও! ওরা কি করে বুঝবে আমার মিমির কষ্ট! ও আমার কাছে আসতে চায়। দু’হাত বাড়িয়ে কোলে উঠতে চায়! আমাকে কি যেন বলতে চায়! কিন্তু এরা আমায় ঘুম পাড়িয়ে রাখে। রাতে কড়া ডোজের ওষুধ দু’দিন খাইনি! লুকিয়ে ফেলে দিয়েছি। তাই রাতে মিমি আমায় ডাকলে শুনতে পেয়েছি আমি! ও সেই ভাঙা দোলনায় বসে বসে দোলে! ওর কান্না আর দোলনার জংধরা শিকলের ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজ আমি পেয়েছি। কিন্তু আমি পার্কে যেতে পারিনি। ওরা দরজা লক করে রাখে। আমি বাইরে বেরোতে পারছি না। কিন্তু ওর কাছে যে আমায় যেতেই হবে। মিমি ডাকছে আমায়…
“মামমাম! তুমি কোথায়?
আমায় নিয়ে যাও!”
।। দীপন ।।
জানি। দোষ আমারও কম ছিল না। হয়ত আরও একটু বেশি সময় দিলে, মিমি সোনাকে এভাবে চলে যেতে হত না। বাসবীকে কতবার বলেছিলাম, চাকরী করার দরকার নেই। কিন্তু কবেই বা বাসবী কারও কথা শুনেছে?
এখন ও ঘুমোচ্ছে।
উঠলেই “আমাকে মিমির কাছে যেতে দাও” বলে চিৎকার করে। ডাক্তার বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে হয়ত অ্যাসাইলামে পাঠাতেই হবে ওকে! রাত হলেই ছুটে যেতে চায় সেই ভাঙা দোলনাটায়, যেখানে পাওয়া গিয়েছিল মিমিকে! একদিন তো তিনতলার বারান্দা থেকে নীচে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিল! মামাবাবু সেদিন মধ্যরাতে প্রায় পাঁজাকোলা করে রেলিং থেকে ওকে না নামালে, আরও একটা অঘটন ঘটে যেত। নেহাৎ মামাবাবু আছেন তাই। নাহলে কি যে হত! জানি না এভাবে কতদিন চলবে? তাহলে কি আর কখনও সুস্থ হবে না বাসবী?
।। বাসবী ।।
আমি জানি মিমি সোনা।
আমি সব বুঝতে পেরেছি।
আবছা মনে পড়ে আজও আমার!
কী বীভৎস ওই অনুভূতি!
গাঢ় অন্ধকারে ঠাণ্ডা একটা হাত! সর্পিল গতিতে ঘুরে বেড়াত শরীর জুড়ে! অপুষ্ট স্তনবৃন্ত ব্যথায় মুচড়ে উঠত। যোনির ভিতর স্যাঁতস্যাঁতে কয়েকটি আঙুলের নড়াচড়া। যন্ত্রণায় জল পড়ত দু’চোখ বেয়ে! কিন্তু চিৎকার করার উপায় থাকত না! আঁশটে গন্ধওয়ালা অন্য হাতটা মুখ চেপে ধরে থাকত! দমবন্ধ হয়ে আসত! মামা বলত, আমায় নাকি রাত হলেই ভূতে পায়! অনেক ছোটবেলার কথা! ভুলেই গিয়েছিলাম! কিন্তু তুই আমায় মনে করিয়ে দিলি! আমায় ক্ষমা করে দে মা! মিমি! ফিরে আয় আমার কাছে! আর কখনও তোকে ছেড়ে কোথাও যাবো না আমি!
পরশু রাতে দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজে রেখেছিলাম। তাই তোর কাছে ছুটে যেতে পেরেছিলাম! তুই দেখালি কি ঘটেছিল তোর সাথে! যেন টাঙানো পর্দায় চলন্ত ছবির মতো ওই সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ফুটে উঠল চোখের সামনে! অসহায়ভাবে শুধু দেখে গেলাম! বাঁচাতে পারলাম না তোকে!!
ওই ভাঙা দোলনার গগনফাটানো ক্যাঁচকোঁচ আওয়াজে সবাই কি করে ঘুমোয়? কেন কেউ শুনতে পায় না প্রতিরাতে তোর মামমাম ডাকটা! আমি সহ্য করতে পারছিলাম না আর!
তাই তো কাল রাতে আমার ঘুমের ওষুধগুলোর বেশ কয়েকটা মিশিয়ে দিয়েছিলাম রাতের দুধে! এছাড়া আমার আর উপায় ছিল না মিমি! তোর বাকি রাখা কাজটা তো আমাকেই করতে হত রে মা! আর কেউ ছিল না বাড়িতে! কাজটাও সহজ হয়েছিল তাই! আয়া দিদি আর নাইটগার্ডটা তো তোর নাচ দেখেই ভিরমি খেল! বাকিটা তো তুই নিজেই করলি! আমার আর তোর দু’জনের অপমান আর যন্ত্রণার প্রতিশোধ একাই নিলি তুই! মা হয়েও যা করতে পারিনি, মেয়ে হয়ে তুই সেই কাজটাই করে দিলি! আমায় ক্ষমা করে দে মিমি! আরও একবার আমার কোলে ফিরে আয় মা! তোর অপদার্থ মাকে আর একটা সুযোগ দে সোনা!
।। অনীশ ।।
বিয়ে করিনি!
কী করে করতাম?
নারী শরীরের প্রতি কোনওদিনই কোনও আকর্ষণ অনুভব করিনি! কি আছে ওই চর্বিমাংস সর্বস্ব মেয়েগুলোর মধ্যে? সারাক্ষণ খালি খাইখাই ভাব! কেউ অবুঝ সবুজ থাকে না! আমার চাই নতুন কচি শরীর! যার গা থেকে মায়ের দুধের গন্ধ যায়নি এখনও! যার সরু কাঁচা যোনিপথ স্পর্শ করেনি কেউ! দুটি ছোট্ট বৃন্ত জাগেনি কোনও পুরুষের কামস্পর্শে! সেই পুতুলের মতো শরীরগুলোই আমায় টানে! বাসবী যখন দুধের শিশু, তখন ওর বাবা অ্যাকসিডেন্ট-এ মরল! আমার বোন আধপাগল হয়ে গিয়েছিল সেই শোকে! ওকে একপ্রকার জোর করেই পাগলা গারদে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম! নাহলে বাসবীর ওই কচি শরীরটা রাতের পর রাত আমায় সুখ দিত কী করে? বোন ভালো হয়ে বাড়ি ফেরার পর, এক রাতে ছাদের ঘরে বাসীর সাথে দেখে ফেলে আমায়! ওই ছাদ থেকে খানিকটা বাধ্য হয়েই ওকে ফেলে দিই আমি! একেবারে যে খারাপ লাগেনি তা নয়! আমার যখন সতের বছর বয়স, তখন তিন বছরের বোনটাকেও তো রাতের পর রাত ভোগ করেছি! কত সুখের ছিল সেইসব স্বপ্নের রাতগুলো! যন্ত্রণায় দুটো নিটোল পা ছটফটায় যখন, আরও উত্তেজনা বাড়ে! বাসবীর মেয়েটাও ছিল এক্কেবারে মনের মতো। ওর মাখন শরীর, কোমর দোলানো নাচ, স্থির থাকতে দিতে না আমায়। বেশ কয়েকবার ফাঁকা ঘরে চেষ্টা করেছি। চকলেট, খেলনা, পুতুল সব কিনে দিয়ে ওর সাথে ‘বড়দের খেলা’ খেলতাম! বেশি কিছু করা যেত না! মাকে বলে দিলে, আমার খেলা বন্ধ হয়ে যেত! যখনই বলত, “কী করছ দাদু? আমার ব্যথা লাগছে তো!”
ছেড়ে দিতাম! কিন্তু কতদিন এভাবে ছেড়ে দেওয়া চলে? সেদিন দুপুর থেকে ওরা কেউ ছিল না! অনেক রাতে পার্টি সেরে ফেরার কথা! তাই পার্কে নিয়েই যাইনি সেদিন। কেউ ওকে যেন দেখে না ফেলে! অন্ধকার হয়ে যেতেই গার্ডের নজর এড়িয়ে ওকে নিয়ে পার্কের শেষপ্রান্তে চলে যাই! এখানে একটা ভাঙা দোলনা আছে! কেউ আসেনা এদিকটায়! গঙ্গার ধারে পার্কটা! এখানেই ঘাসের ওপর শুইয়ে ওর মুখটা চেপে ধরে সব সুখ মিটিয়ে নিয়েছি! মুখটা ছাড়ার পর ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “মামমাম-কে এলে আজ সব বলে দেবো! তোমাকে মারবে মামমাম!”
তারপর আর আমার কিছুই করার ছিল না! মারতে তো হতই! তাই ওই জংধরা দোলনার শিকলটায় গলা জড়িয়ে ঝুলিয়ে দিলাম!
কিছুক্ষণ পর তাস পিটে জুয়ায় ব্যস্ত গার্ডদের গিয়ে বললাম, মিমিকে কোথাও দেখেছে কিনা? ওরা একসাথে মাথা নাড়ল! তারপর আরও কিছু সময় পর দেহ উদ্ধার হল! পুলিশ এল! আমায় সন্দেহ করার কারণ ছিল না কোনও!
এসব ঘটনা মাসদুয়েক আগের! এখন বাসবী মনে হয় কিছু আন্দাজ করেছে! আজকাল কেমন যেন সন্দেহের চোখে তাকায়। যদিও ওর অবস্থা ভালো নয়! অ্যাসাইলামে যেতেও দেরী নেই!
রাতের দুধটা আজ কেমন যেন খেতে লাগল! কি যে আজকাল দুধের স্বাদ হয়েছে। বড় ঘুম পাচ্ছে আজ!
কিসের যেন আওয়াজ হচ্ছে ঘরে! একটা গুনগুন আওয়াজ! সঙ্গে তালে তালে ঝুমঝুম বাজছে! উফ্! এত অন্ধকার কেন? কত রাত এখন? মাথাটা এখনও খুব ভারী হয়ে আছে! চোখ খুলতে পারছি না! কিন্তু একি!
“কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা! মনে মনে….!”
এই “মনে মনে” বলেই তো বাকিটা বারবার ভুলে যেত মিমি! আমিই তো মনে করিয়ে দিতাম পরের লাইনটা! এখনও গান আর নূপুরের আওয়াজ থেমে গেছে! একটা অস্পষ্ট অবয়ব বিছানার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। যেন অপেক্ষা করছে গানের পরের লাইনটা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য! একটা ছোট্ট ছায়া! চোখ দু’টো মরা মাছের মতো ভাবলেশহীন! গলাটা শুকনো লাগছে! জলের গ্লাসটা খালি কেন? শোওয়ার আগে তো ভর্তিই দেখলাম।
কোনও রকমে বেডসাইড ল্যাম্পের স্যুইচটা জ্বাললাম! কই? কেউ তো নেই ঘরে! স্বপ্ন দেখলাম নাকি? জেগেই তো ছিলাম! উল্টোপাল্টা চিন্তা আসছে মাথায়! ডাইনিং হল থেকে জল খেয়ে আবার এসে শুলাম! লাইটটা নেভাতে কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার ঘুম এল!
আবার ঘুম ভাঙল।
কেমন এক অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছে! উঠে বসতে গিয়েও পারলাম না। হাত দিয়ে বুঝলাম, আমার নীচে কিছু নেই! আতঙ্কে হিম হয়ে গেল শরীর! বিছানা কোথায় গেল? আমি শূন্যে ভাসছি! এও কি সম্ভব? শূন্যে রয়েছি বলেই ভর দিয়ে উঠে বসতে পারছি না! নূপুরের ঝুমঝুম তীব্রভাবে কানে আসছে!
গুনগুন করে চলেছে মিমি ওই লাইনটাই! “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা!” তবে সুরটাই শোনা যাচ্ছে শুধু। কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না! আওয়াজটাও ফ্যাঁসফ্যাঁসে! যেন অতি কষ্টে বেরিয়ে আসছে একটানা ঘ্যানঘ্যানে সুরটা!
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ে গেল….মিমি গলায় শিকল জড়িয়ে মারা গিয়েছিল! ওর কি আর কথা বলতে পারার কথা? ঘুরে ঘুরে নাচছে মিমির প্রেত! ঘরে এক অদ্ভুত আলো! মুখ ফেরাতেই চমকে উঠলাম! দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ক্রূর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাসবী! হিংস্র একটা হাসি লেগে আছে ঠোঁটের কোণে! কিন্তু আমি শূন্যে ভাসছি কি করে?
“মিমি! শেষ করে দে শয়তানটা কে!” এমন ঘড়ঘড়ে গলায় নিষ্ঠুরের মতো করে কখনও আগে বলেনি বাসবী! মায়ের কথায় নাচ থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ঘাড় ঘোরালো মিমি! ওর চোখ দুটো রক্তে ভরা! চোখের সাদা অংশ আর মণি বলে কিছু নেই! ভয়ের শীতল অনুভূতি আমার সারা শরীরের রক্ত শুষে নিল যেন! নিঃশব্দেই হি হি হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে মিমি! ওইটুকু মেয়ের এমন বীভৎস রূপ?! একটা শনশন বাতাসের মতো আওয়াজ আসছিল কোথাও থেকে! ক্রমশঃ বাড়ছিল সেই শব্দটা! তারপর সোজা বারান্দা দিয়ে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চলল একটা ঘূর্ণিঝড়! হেসেই চলেছে মিমি! কী নিষ্ঠুর আর ভয়ঙ্কর সেই হাসি! দু’হাতে কান চেপে আছি! ওই ঝড়ের আওয়াজে আমার কান ফেটে যাচ্ছে! শূন্যে উড়তে উড়তে আমি ভয়ে চিৎকার করছি! অথচ এত বড় আবাসনের বাসিন্দা বা গার্ডরা কেউ কিছু শুনতে পাচ্ছে না কেন? ঝড়টা আমাকে টেনে এনে ফেলল সেই ভাঙা দোলনার সামনে! কোমরে ছোট লেগেছে! আমার নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। এত কষ্ট হচ্ছে এখনও চোখ মেলে তাকাতে, মাথা ভারি হয়ে আছে এখনও! মনে হচ্ছে এই পার্কের ঘাসের ওপরেই ঘুমিয়ে পড়ি! চোখের সামনেই দুটো নূপুর পরা ছোট ছোট পা! কোনরকমে তাকিয়ে দেখি, মিমির সেই ভয়ঙ্কর রূপ! তার গলার জায়গাটা অস্বাভাবিক রকম সরু হয়ে গেছে। কালশিটের দাগ সেখানে এই আঁধারেও স্পষ্ট! পিছন থেকে আমার চুল টেনে ধরল কেউ!
“চল্! একদিন আমায় চরম কষ্ট দিয়েছিস! যেমন করে আমার মেয়েটাকে নির্মমভাবে মেরেছিস, সেইভাবেই তোকেও মরতে হবে! শিকলটা এর গলায় বাঁধ মিমি!” বাসবীর গলাটা মৃত্যুদূতের মতোই ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে!
একটা জং ধরা শিকলের ক্যাঁচকোঁচ শব্দ আর গলায় অসম্ভব চাপ টের পাচ্ছি! আমি কিছু করতে পারছি না! হাত পা বশে নেই আমার!
শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে! জিভ বেরিয়ে আসছে! গলাটা যেন শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে!
শেষবার নিঃশ্বাসটা বেরিয়ে আসার আগে….
গলায় শেকলের চেপে বসার ফলে হাড়টা ভেঙে যাওয়ার আগে শুনলাম জংধরা দোলনায় দোলার শব্দ!
আর সেই গান, “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা, মনে মনে!”
সঙ্গে এক নারী কণ্ঠের অট্টহাসি! বাসবীর ভয়ানক হাসি! গলা দিয়ে প্রবল যন্ত্রণায় শেষবারের মত মরণ চিৎকার বেরিয়ে আসতে চাইল! কিন্তু একটা ঘড়ঘড়ানি ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না! খট করে একটা আওয়াজে গলার হাড়টা ভেঙে গেল!
হাসি থামিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতেই বসে পড়ল বাসবী! সামনেই দোলনায় বসে দুলছিল মিমি! মামমাম-কে কাঁদতে দেখে দোলনা থেকে নেমে এসে হাত বুলিয়ে দিল মাথায়! বাসবী মেয়েকে কোলে বসিয়ে সরু হয়ে যাওয়া গলার কালশিটেয় হাত বুলিয়ে নিষ্ফল কান্নায় ভেঙে পড়ল। দুটো ছোট ছোট হাতে মামমাম-কে জড়িয়ে রইল মিমি!
পরদিন সকালে বাসবীকে তিনতলার বারান্দায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেল। ভোরে বাড়ি ফিরে দীপন হতবাক! মামাবাবুর দেহ শিকল গলায় জড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেল সেখানেই, যেখানে মাত্র মাস দুই আগে একইভাবে পাওয়া গিয়েছিল মিমির দেহ! পুলিশ যখন বডি নামিয়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তখন আবাসনের বাসিন্দাদের চোখের সামনে দুলেই চলেছে ভাঙা দোলনাটা! যেন তাতে বসে দুলছে কোনও শিশু!
বাসবীর জ্ঞান ফেরাতে ডাক্তার-কে বেশ বেগ পেতে হল! দীপন-কে সুখবর দিলেন তিনি, আবারও মা হতে চলেছে বাসবী! আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা সে! আশ্চর্য হয়ে দীপন দেখল, বাসবীর মধ্যে কোনও পাগলামির লক্ষণ নেই। বরং তার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক! হেসে দীপনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার মিমিই আসছে!”
(সমাপ্ত)