সত্য ঘটনা

সত্য ঘটনা

প্রায় বছর সাতেক আগের কথা। আমাদের এলাকার এক হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী সিদ্ধান্ত নিলো এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টার করবে। তাই তিনি বাজার থেকে অল্প দূরে একটি বড় দেখে জায়গা ক্রয় করলেন। জায়গা ক্রয়ের সাথে সাথে তিনি এর চারপাশে সাইড ওয়াল করে ফেলেন। কিন্তু জমি ক্রয় করতে অনেক অর্থ ব্যয় হওয়ার কারনে সিদ্ধান্ত নিলেন কমিউনিটি সেন্টার তৈরির কাজ আরো পরে শুরু করবেন। আপাততো পাহারা দেয়ার জন্য এক মহিলাকে তার পরিবার সহ সেখানে আশ্রয় দিলেন।

পরিবারটি এসেছিলো ময়মনসিংহ থেকে আমাদের এলাকায় কাজের সন্ধানে। মহিলাটির স্বামী সহ দুটি কন্যা সন্তান ছিল।একটির বয়স সাত বছর আর অন্যটির বয়স পাঁচ বছরের মত হবে। মহিলাটির স্বামী রিক্সা চালাতো আর সে বাসা বাড়িতে কাজ করতো। সেখানে তাদের থাকার জন্য টিন সেটের একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হয়। আর পাশে ছোট্ট করে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুর খননের পরে আশে পাশের বাড়ির অনেক মহিলা তখন ঐ পুকুরে গোসল করতে আসতো। কারন চারদিকে সাইড ওয়াল থাকার কারনে জায়গাটি লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতো আর ওখানে পুরুষের চলা চল কম ছিলো।

ঘটনা:- মহিলাটির পরিবার সেখানে বসবাস শুরুর পর থেকে নানা রকম সমস্যার সম্মূখিন হতে লাগলো। তার স্বামী রাত্রি বেলায় রিক্সাটি ঘরের সামনে রেখে গেলেও পরদিন সকালে সেটা অন্যস্থানে পাওয়া যেত। তাছাড়া প্রায় সময় তাদের ঘরের চালে কে যেন ঢিল ছুড়তো। প্রথম দিকে এটাকে তারা এলাকার কিছু বখাটে শ্রেণীর লোকের কাজ মনে করতো। কিন্তু একদিন রাত্রি বেলায় তাদের সেই ভুল ভেঙ্গে গেলো। সেদিন গভীর রাতে একটি শব্দ শুনে তাদের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তারা খেয়াল করলো তাদের ঘরের চালের উপর কে যেন হাটাচলা করছে। বুঝা যাচ্ছিলো চালের উপর কেউ একজন অবস্থান করছে। মহিলাটির স্বামী সাহস করে বাহিরে যেতে চাইলো। কিন্তু তিনি নিষেধ করলেন। একটু পরে বাহির থেকে রিক্সার বেলের আওয়াজ শোনা গেলো। তারা স্বামী- স্ত্রী দুজনি তখন জানালা একটু ফাঁক করে দেখতে চাইলো বাহিরে কি হচ্ছে। দেখে বাহিরে তাদের রিক্সার উপর দুটি ছোট্ট শিশু বসে আছে আর রিক্সাটি আপনা আপনি চলছে।

এই দৃশ্য দেখে তারা ভয় পেয়ে গেলেন এবং তারাতারি জানালাটা বন্ধ করে দিলেন। একটু পরেই ফজরের আযান কানে ভেসে আসতে লাগলো আর সাথে সাথে সব কিন্তু শান্ত হয়ে গেলো। পরদিন সকালে এই ঘটনা তারা এলাকার এক বুজুর্গ আলেম সাহেব কে জানালো। আলেম সাহেব তাদেরকে তাড়াতাড়ি হুজুর দিয়ে বাড়ি বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আর তেমন একটা সমস্যা না হওয়ার কারনে তারা বাড়ি বন্ধ করার কথা ভুলে গেলেন। এবাবে কয়েকটা সপ্তাহ পার হওয়ার পরে একদিন গভীর রাতে ঐ মহিলা স্বপ্ন দেখে তিনি ঘরের সামনে থাকা পুকুরটির পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আর ঠিক সে সময় হঠাৎ করে পুকুরের মাঝখান হতে পানি বুটবুট করে ফুলে উঠতে লাগে। এর কিছুক্ষন পরে পুকুরের তলদেশ থেকে দুটি ছোট্ট শিশুর লাশ ভেসে উঠে। এই ভয়ঙ্কর দুস্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং পুরো রাত তিনি জেগে থেকে কাটিয়ে দিলেন। কিন্তু পরে এগুলো কে নিছকি একটি দু:স্বপ্ন মনে করে তেমন একটা গুরুত্ব দিলেন না। এর কিছুদিন পরে তিনি আবার স্বপ্ন দেখলেন তার ঘরের সামনে দুটি লাশ পড়ে আছে আর তিনি বিলাপ করতে করতে কান্নাকাটি করছে। কিন্তু এবারো এটিকে তেমন গুরুত্ব দিলেনা। একদিন সকালে মহিলাটি ও তার স্বামী কাজ করতে বাহিরে চলে গেলেন। তাদের মেয়ে দুটি তখন বাড়িতে ছিল।

সেদিন দুপুরে গ্রামের অন্যান মহিলাদের সাথে তারা দুই বোন ও গোসল করতে পুকুরে নামলো। সবাই গোসল সেরে উঠে গেলে ও তারা দুই বোন তখনো ও পুকুরে সাঁতার কাটছিলো। এক সময় গ্রামের মহিলারা সবাই যে যার বাড়িতে চলে গেলো। বিকেলের দিকে মহিলাটি বাড়িতে ফিরে এসে দেখে তার মেয়ে দুটি ঘরে নাই। রান্নাঘরে গিয়ে দেখে রান্না করা ভাত পাতিলে পড়ে আছে। এক সময় চারদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। অথচ তার মেয়ে দুটি এখনো ফিরে আসেনি। এবার তিনি আশপাশের বাড়ি গুলোতে খুঁজতে বের হলেন। কিন্তু কোথাও তাদের খুঁজ পেলেন না।

এই ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে এলাকায় তখন মাইকিং করে তাদের সন্ধান চাওয়া হয়। কিন্তু কোথাও তাদের হদিস পাওয়া গেলোনা। পরদিন সকালে গ্রামের মহিলাদের পরামর্শে পুকুরে খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু সবার মাঝে কেমন একটা ভয় কাজ করছে তাই কেউ পুকুরে নামতে রাজি হয়নি। পরে জাল ফেলে খুঁজার সিদ্ধান্ত হলো। বিভিন্ন পাড় থেকে একের পর এক জাল ফেলতে লাগলো পুকুরে। ঘন্টাখানিক চেষ্টার পরে এক সময় মেয়ে দুটির লাশ জালের সাথে ভেসে উঠে। পরে কিছু লোক গিয়ে লাশ দুটিকে জল থেকে উপরে তুলে আনে।

এই ঘটনার পরে সর্বহারা সেই মহিলাটি এলাকা ছেড়ে চলে যায়। এরপর আর কোথাও এই মহিলাকে দেখা যায় নি। এরপর থেকে ওই জায়গাটা পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। মালিক এখানে আর কমিনিউটি সেন্টার করার সাহস পাননি।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত