মেরিন

মেরিন

রেলপথ দরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।আমি,সায়মা,দিপু,অনিমা, রাফি আর ইয়ামিন। আমরা স্কুল ফ্রেন্ড এখন ভাসিটিতে পাড়ি তবু বন্ধুত্বের কমতি নেই।যেইখানে যায় সকলে এক সাথে যায়।প্রায় সব জাইগা আমাদের ঘুরা হয়েছে।শুধু আমাদের দেশের দিনাজপুরে যাওয়া হয়নি।দিপুকে পটিয়ে রাজি করালাম।সবার বাসা থেকে পারমিশন নিয়ে বেরিয়ে পরলাম এডভেঞ্চারে ।ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করে আমরা ট্রেনে উঠে পরলাম।সায়মা জানালা পাশ বসে বাহিরে দেখছে তখন ইয়ামিন গিটার বের করে গান শুরু করে দিল।ইয়ামিনের গলাটা যে দারুণ কেউ না শুনলে বিশ্বাস করতে পারবে না।রাফির মন খারাপ করে বসে আছে।

আমি:দোস কি হয়েছে?মন খারাপ নাকি?

রাফি: তোরা তো আমার সাথে কথা বলছিস না।

আমরা হাঁসছি রাফির কান্ড দেখে ছেলেটা সরল দুষ্টুমি করেনা বললে চলে। তোমাদের বলা হয়নি যাচ্ছি দিপুর নানুর বাড়ীতে ফ্রেন্ড নিয়ে কখনো যাওয়া হয়নি।আমি ও আগে কখনো যায়নি আর কত দূর? রাফি জিজ্ঞাস করল।

দিপু: রাতের মধ্যে আমরা পৌছে যাব।

আমি:ভাল। রাতে টাকা গুলো বাঁচলে হল।তোরা যা পেটুক.?

সায়মা:কি বলছ এসব এসে মনে হয় ভূল হয়েছে।

আমি:রাগ করলে নাকি?(মেয়েটা আমার কলেজে পরে। কলেজের শুরু থেকে তার সাথে আমার বন্ধুত্ব। অনেক জোর করে নিয়ে এসেছি আসতে রাজি ছিলনা।)

ইয়ামিন :ভাই আমি আছি না।

অনিমা:হ্যা । ইনি থাকতে চিন্তা কিসের।

আমার ইচ্ছা ছিল দিনাজপুর অঞ্চলটা দেখব।দিপুর নানুর বাড়ী দিনাজপুরে। অনেক জেলাই গিয়েছি কিন্তু দিনাজপুর যাওয়া হয়নি তাই বুদ্ধি করে একদিন দিপুকেকে বললাম।ওতো যাওয়ার জন্য রাজি। শুধু ও রাজিনা সবাই রাজি ছিল।দিপুর নানুর বাড়ি দিনাজপুরে শিবরাম গ্রামে।দিপুর গ্রামের সম্পকে অনেক কথা শুনেছি কথা গুলি সত্য নাকি মিথ্যা আমি জানিনা।সত্য মিথ্যার রহস্য ভেদ করতে আমার এখানে আসা।

দুপুরের খাবারটা রেলে খেয়ে নিলাম।দিনাজপুর যেতে যেতে রাত হয়ে এসেছে। প্লাটফর্মে নামলাম রাত প্রায় ৯ টা।রাজনৈতির ধর্মঘটের কারণে ট্রেন আর আগে যাবেনা এখানে নামতে হবে এটা তেমন গভীর রাত ও না যে আমরা ভয় পাব।রেল থেকে নেমে গাড়ির উদ্দেশ্য হাটা দিলাম এ কি একটা গাড়ি ও নেই। আমরা হতবাক হলাম। গ্রামে এই সময় মানে অনেক রাত কি আর করার হাইওয়ে দরে শিবরাম গ্রামের দিকে হাটা দিলাম।রাস্তা যে অন্ধকার হাটা মুশকিল আমরা ছেলেরা যেমন তেমন কিন্তু সায়মা আর অনিমার অবস্তা কাহিল হয়ে যাচ্ছে।আশেপাশে কোন ও হোটেল নেই। আর মনে হয় একটা গ্রাম আছে যা প্রায় ২-৩ মাইলে.এক মাইল হেটে ক্লান্ত আর পারছিনা।

দিপু:ভাই এই দিকের পথটা দিয়ে গেলে খুব তাড়াতাড়ি পৌছাতে পারব।

ইয়ামিন: তার জন্য এই জঙ্গল দিয়ে যাব।

সায়মা:না আমি যাব না।

আমি: আরে আমরা সবাই তো আছি।আর ভূত-প্রেত বলতে কিছু নেই।

রাফি:চল আমি আর হাটতে পারছিনা সটকাট নিতে হবে।

ওদের না চাইতে ও যেতে হল।মোবাইলের ফ্লাশ দিয়ে ভাল এগোচ্ছি। হঠাৎ পাশ দিয়ে কিছু একটা দোরে গেল। কি এটা ভাবলাম মনের ভুল।হেটে আর কিছুদূর সামনে এগত ভয়ংকর শব্দ আমরা তেমন বিচলিত হলাম না শহরে মানুষ হওয়ায় ভয় তেমন কাবু করতে পারলনা আমরা কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে গেলান। মোবাইলের দিকে তাকালাম সময় ১০ টার কাছাকাছি।১০ টা ভেজে গেছে অনিমা বলল।আর কত সময় লাগবে এই জঙ্গল থেকে বের হতে ঠিক সেই সময় হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগতে শীতের কম্পন আরম্ভ হল আমি চিন্তা করেছি আমার শুধু আমার না সবার দেখি একই অবস্তা হঠাৎ এমন হওয়ার কারন আমরা যে পথে যাচ্ছি সেই পথে কে একজন দাঁড়িয়ে আছে।সামনে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না আমি মোবাইলের ফ্ল্যাশ তার দিকে দিতে কে ইনি এত রাতে এখানে কি?

এমন প্রশ্ন মনের কোনাই উকি দিচ্ছিল।তাই তার চেহারা দেখার জন্য মোবাইলের ফ্ল্যাশের আলো তার দিকে দিতে সায়মা আর অনিমা ভয়ে চিৎকার দিল।দেখলাম দিপু,রাফি,ইয়ামিন ও ভয়ে কাঁপছে। কাঁপছে কেন এর কারণ কি আমি ও মানুষটির দিকে দেখলাম।আমার তো অজ্ঞান হওয়ার অবস্তা এটা মানুষ হ্যা একটা মানুষ কিন্তু মাথা নেই।পাঞ্জাবীর মত কাপড় পরেছে। সমস্ত শরীল সাদা আমরা সবাই দৌড়াতে লাগলাম গন্তব্য একটাই যে করে হয় দিপুর নানুর বাড়ী পৌছানোর আগে থামা যাবেনা। ঐ তো ঘর দেখা যাচ্ছে। থামলাম সবাই এসেছে তো ভূতটার হাত থেকে এই যাত্রায় বেচে গেলাম।সবাই এসেছে কিন্তু এ কি সায়মা নেই কয় ও মোবাইলে কল আসল মনে হয় সায়মাই করেছে।

সায়মা:হ্যাল…

আমি:কয় তুমি?

সায়মা:আমি আছি একটা বড় গাছের নিচে।

আমি:ওখানে কি করছ?আমরা অপেক্ষা করছি চলে এসো

সায়মা:না আমার ভয় করছে।তোমরা আসনা প্লিজ।

আমি :আচ্ছা আসতেছি। (চল সায়মাকে আনতে হবে?)

দিপু:ভাই আর হাটতে পারছি না।

অনিমা:আমি তো আর হাটলে মরেই যাব।

ইয়ামিন:আমি পারবো না অন্য কাউকে নিয়ে যা।

শেষে রাফির দিকে থাকালাম।ভয়ে এখনো কাঁপছে। বোঝলাম দিপুর নানুর বাড়ী আজ যাওয়া হবেনা। আমার ও যেতে ইচ্ছা করছেনা যেনে শুনে কেউ মরতে যাবে আমি না গিয়ে উপায় ও নেই কারণ ওকে এখানে আমি নিয়ে এনেছি তাই দায়িত্ব ও আমার।জঙ্গলের দিকে হাটা দিলাম হাতে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জঙ্গলের অনেক ভিতরে প্রবেশ করে গেছি।আর কিছুদূর গেলে বড় বট গাছটা দেখা যাবে।প্রায় চলে এসেছি একটা শব্দ শুনা গেল। মনে হয় সায়মার।তাড়াহুড়ো করে সামনে গেলাম দেখতেছি ও চিৎকার করতে করতে সামনে এগিয়ে আসছে। আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরল। মনে হয় কিছুটা ভরসা পেল। কিন্তু চিৎকার করছ কেন?

সায়মা:আমি ঐ ভূতটাকে দেখেছি।

আমি:এই দিকে আসছে নাকি? সায়মা:হ্যা।

আমি:এখানে দাঁড়িয়ে লাভ নেই ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।ভূতটা আসার আগে কেটে পরা ভাল।হাটাদিলাম তাড়াতাড়ি। চলে এসেছি এসে দেখি কেউ নেই।শালার কেউ অপেক্ষা করল না।

আমি আগে কখনো এখানে আর এত রাতে এই জঙ্গলে আর ঘরটাতে পৌছাতে পারব না সন্ধেহ হচ্ছে। তাই তখনের দেখা বাংলো ঘরটা খুজছিলাম তখন দেখলাম সামনে বিরাট একটা বাড়ি। বাড়ি না অবশ্য রাজপ্রসাদ বলা যায় দেখলাম এক বৃদ্ধ লোক ওনাকে বিষয়টা বলতে বিনা সংকোচে আমাদের বাড়ীর ভিতরে নিয়ে গেলেন।বাড়ীটা দুতালা এই বাড়ীর পাশে অন্য কোন বাড়ী এই গ্রামে নেই।বৃদ্ধ আমাদের অতিথি আপ্যায়ন করল ঘরের ভিতরে প্রবেশের সাথে সাথে দিপু, রাফি,ইয়ামিন, অনিমা খাবার টেবিলে বসে গেছে আর ২-৩ মিনিট লেট করলে খাবার শুরু করে দিত।ইয়ামিন আমাকে দেখে বলে দোস তোর জন্য wait করছিলাম।আমি মনে করেছি তোরা এতক্ষনে ঘুমিয়ে পরেছিস।

যাক কথা না বারিয়ে খেয়ে নিলাম।খাবারটা যে দারুণ হয়েছেনা আমি প্রশংসা না করে পারলাম না। দিপুর প্রশংসা শুনে মহিলাটা খুশি হয়েছে মনে হয় খাবার শেষ করে ঘুমাতে গেলাম আমি আর রাফি এক রুমে -দিপু আর ইয়ামিন অন্য রুমে-সায়মা আর অনিমা আমাদের পাশের রুমে। অবশ্য আমাদের থাকার ব্যবস্তা হল দুই তালাতে।আমি জানালা খুলে দিয়েছি বাতাস আসার জন্য।বেশি দেরি না করে ঘুমিয়ে পরলাম। হঠাৎ ঠাণ্ডা বাতাসে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাই জানালা বন্ধ করতে উঠলাম জানালা পাশে যেতে বাহির থেকে একটা আওয়াজ মানুষের আওয়াজ মনে হয়না।জানালা দিয়ে বাহিরে দেখে অবাক একি?

বাতাসের তীব্রতা বেড়ে গেল জানলার উপরের পর্দা সেই বাতাসে উড়তে লাগল।আস্তে-আস্তে জানলার পাশে এসে দেখলাম হিন্দুদের সৎকার করার জাইগা। এই তু শ্মশান? মনের ভিতরে এক অজানা ভয় উকি দিল শ্মশান বাসার এত কাছে তার পরে বোঝলাম বাড়ীটাই শ্মশানের মধ্যে। এটা কি করে সম্ভব ঘরটা এখানে কি করেছে।ঘরটার কিছুতো রহস্য রয়েছে। একটা প্রশ্ন শ্মশানের মধ্যে ঘর নাকি ঘরের মধ্যে শ্মশান?

এই প্রশ্নের উত্তর এক জন দিতে পারবে।শুধু সকাল হবার অপেক্ষা। সকালে ঘুম থেকে উঠে বৃদ্ধর সাথে কথা হল। প্রথমে তিনি আমার কাছ থেকে এমন কথা শুনে কিছুটা চমৎকে গেলেন। পরবতীতে নিজেকে সামলিয়ে বলতে শুরু করলেন:- এই জাইগাই একটা পরিবারকে জ্বালিয়ে পুড়ানো হয়? এই ঘটনা নাকি অনেক আগের হয়েছিল।এই গ্রামের মানুষ কোন এক অজানা কারণে এই পরিবারের মানুষকে হত্যা করে।এই রহস্যটা কেউ জানেনা আচ্ছা বোঝলাম কিন্তু সকাল কখন হয়েছে দিপু ইয়ামন কয়?মনে হয় রুমে আছে তাই উপরে গিয়ে দেখি ইয়ামিন দিপুর গায়ের উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে। শহরের অভ্যাস ছাড়তে পারেনি।দেরি না করে জাগিয়ে দিলাম। সায়মা-অনিমা ও চলে এসেছে।

“নাস্তা শেষ করে গ্রামটা দেখতে বের হলাম।যেমন কল্পনা করেছি তার চাইতে অনেক সুন্দর গ্রামটা।গ্রামের মানুষগুলা খুব চঞ্চল আলাপ করে দেখলাম মিশুক।তাদের কাছে জিজ্ঞাস করলাম আপনারা কি এই শ্মশান সম্পর্কে কিছু জানেনা। তাদের কথা শুনে যা বোঝলাম তাড়াও এই সম্পকে অবগত নয়।

“আরো বেশ খানিকটা পথ এগুতে সামনে প্রচীন মন্দির। মন্দিরটা দেওয়াল গুলি এখনো মজবুত আছে।মন্দিরের ভিতরে আমরা গেলাম না শুধু দিপু গেল। রোদে পুরে যাচ্ছি দিপু তু ফিরছে না।আমি দিপুকে ঢাকতে যাব এমন সময় লম্বা দাঁড়ি ওলা মানুষ আমার সামনে এসে বলল :-“তোমাদের সামনে অনেক বিপদ।”আমি তার কথায় কান না দিয়ে দিপুকে মন্দির থেকে বাহিরে নিয়ে আসলাম।

রাফি:ভাই চল ফিরে যায় খিদা লাগছে..

আমি:আচ্ছা চল এই কাট ফাটা রোদে আমাদের অবস্তা আর ও খারাপ হয়ে যাবে।

দুপুর হয়ে এসেছে খিদা ও লেগেছে তাই খাবারটা শেরে নিলাম। খাবার টেবিলে খাওয়ার কোন কমতি নেই দেরি না করে সবাই যার যার ভাগ সাবাড় করাই ব্যাস্ত।আমি ও আরর দেরি কররলাম না। দুপুরের খাবার সেরে সবাই গল্পে মেতে উঠলাম। এক এক করে সায়মা,অনিমা,রাফি,,ইয়ামিন,দিপু সবাই উপস্তিত এসে ভাল হয়েছে।আসর শুরু

ইয়ামিন:বাড়ীটা কিন্তু দারুন।

রাফি:আমার ও ভাল লেগেছ।

অনিমা:এই গ্রামটা অসাধারণ!

আমি:রাখতো এসব। সায়মা:তোমার আবার কি হল?

দিপু:ভাই গ্রামটা পছন্দ হয়নি?

আমি:না গ্রাম ভাল কিন্তু এই গ্রামের মানুষগুলার ব্যবহার বেশ অদ্ভুত!

দিপু:তারা আবার তোকে কি করেছে?

আমি:এই গ্রামটা রহস্যে ভরা..

বিকালটা গল্প করতে করতে কেটে গেল।রাত হয়ে আসছে চারদিকে অন্ধকার কালো ছায়া গ্রামটা আর ও অদ্ভুত করে তুলছে।বাড়ীটা ঠিকই আছে যেমন দিপু বলেছে আর এই বাড়িটা অন্য বাড়ি থেকে বেশ পুরানো কিন্তু মজবুদ আছে বেশ। আমার চিন্তা একটাই এই গ্রামটা রহস্য ঘেরা।গ্রামে আসার আগে জঙ্গলে যা হয়েছে তা ভুলার মতনা।আমি গ্রামটা ঘুরতে ঘুরতে অনেক ট্রায়াড হয়েছি তাই বিছানায় চলে গেলাম।ঘুম ভাঙ্গল মাগরিবের পরে কিছু একটার শব্দ শুনা যাচ্ছে। দোরে গিয়ে দেখি ইয়ামিন ভয়ে কাঁপছে। কিরে কি হল…

#ইয়ামিন:-তুই নিজে দেখ? আমি ঐ দিকে দেখলাম।আমি প্রায় চমৎকে উঠলাম বিছানার নিচে মাথার কুলি এইটা এখানে কেন। আমাদের বাগানোর জন্য এই সব করা বুঝতে আর বাকি নেই কথাটা ইয়ামিনকে বললাম না।সবাই এসে হাজির হল ইয়ামিনের মত সবার কাপাকাপা অবস্তা। অনিমা আর সায়মার কথা কি বলব।

সায়মা:চল আমরা এখান থেকে চলে যায়।

অনিমা:-হ্যা আমার অনেক ভয় করছে।

ইয়ামিন:-হ্যা দোস্ত চল অনেক বেরিয়েছি।

আমি চুপ করে আছি রাফি আর দিপু এখনো আসেনি।ব্যাপারটা ওদের না জানাই ভাল সবাইকে বললাম ঘটনাটা গোপন রাকতে।রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে আমি ইয়ামিনকে নিয়ে রাতে পাহারায় আছি। দেখলাম কে যেন সিঁড়ি বেয়ে উপরে আসছে আমরা সরে গেলাম।সারা গায়ে চাঁদর বেড়ানো এক এক পা করে সায়মাদের রুমের দিকে যাচ্ছে কে ও আর এই রুমে বা কি কাজ আমরা পিছু নিলাম।চাঁদর বেড়ানো লোকটা থলি থেকে কি যেন বের করছে। আমরা গিয়ে ধরলাম ওকে চাঁদর সরিয়ে মুখটা দেখে অবাক যা মারার চাদরের উপরে মারা হল চাদর সারিয়ে দেখি বাসার চাকর ।আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?আর এসব কি? দেখলাম আমরা যে মাইরটাই না দিলাম উনার কথা বলতে ও সময় লাগছে।যাক কথা না বাড়িয়ে পকেট থেকে টাকা দিয়ে বিদায় করলাম। চল ঘুমাতে যায় ইয়ামিন পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে “কিরকম শব্দ শুনতে পাস?” জিজ্ঞেস করেলাম।

খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছিল ইয়ামিনকে। ইয়ামিন জবাবে সে বেশ ইতস্তত করে বলেছিল, “এই এই যেমন কেমন কড়কড় মরমর চটাপট শব্দ শুনি আবার কখনো শোনা যায় কেমন খসখস শব্দ যেন কেউ ভারী মোট জাতীয় কিছু বয়ে নিয়ে যাচ্ছে এইরকম আর কি! আবার আজ শেষ রাতে কোথা থেকে একটা বাচ্চার কান্নাও কানে আসছিল!”ইয়ামিন’য়ের কথায় বেশ দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তা হলে কি ওর বান্ধবীদের ? এই ধরনের শব্দ যদি সত্যিই সে শুনে থাকে, তবে কিসের শব্দ হতে পারে তা? একসময় এ’ও মনে হলো, ইয়ামিন তাকে ভয় দেখাতে এসব বলছে না তো? নিজে তো ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে ববেড়াবে। শহরে ফিরে যাতে বেশ কয়েকদিন লাগবে , ওখানে সমস্যা আর চিন্তা তু রয়েছে? সায়মাদের দেখে আশা উচিত কিন্তু এখানে একা পড়ে থাকতে হবে এরকম একটা নিঃসঙ্গ রুমে, যেখানে রাতে কিসব অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাওয়া যায়।

কিন্তু ইয়ামিয়ের চোখমুখের ভাব দেখে তো ও নিছক মজা করতে বা ভয় দেখাতে এসব বলছে, তা মনে হলো না । এসব বিষয় নিয়ে এখন চিন্তা করে লাভ নেই। কিন্তু সায়মাদের কথাটা জানে উচিত , তারা এসব কথায় ঘাবড়ালে চলবে না। তাদের শক্ত হতে হবে। সে যে ইয়ামিনেরয়ের কথাগুলোকে সিরিয়াসলি নিচ্ছে, এমন ভাব দেখালে চলবে না। তাই সে জোর করে হেসে বলেছিল, “ও তুমি ভুল শুনেছ, হয়তো বাচ্চা শেয়ালের ডাক। শেয়ালের ডাক মাঝেমাঝে মানুষের বাচ্চার কান্নার মতো শুনতে লাগে। আশপাশের জঙ্গলে প্রচুর শেয়াল আছে ইয়ামিনকে একা রেখে যাওয়া উচিত হবেনা।তাই সাথে নিয়ে রাফি,দিপু আর মেয়েগুলোদের দেখে আসা উচিত। চল ভাই?

ইয়ামিন:-কোথায় যাবি?- এত বাজে না বকে চল ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছি পাশের রুমে। দেখলাম ফিসফিস শব্দ আসছে রুমের ভিতর থেকে তার মানে জেগে আছে।কিরে এখনো ঘুমাসনি?আমার এমন হঠাৎ প্রশ্নে তারা চমকে গেল।

দিপু:-না না এর তাড়াতাড়ি ঘুমাইনি-

ইয়ামিন-ভাল ভাই এমনে একা ভয় লাগছে

দিপু:-ভয় কেন? আমি কথার মাঝে থামিয়ে দিলাম আরে কিসের ভয়।মজা করছে।তোদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো।

রাফি:-না ভাই অসুবিধার কি আছে। আচ্ছা ঠিক আছে কাল সকালে এখান থেকে বের হতে হবে।এই বাসায় কেমন যেন সব অদ্ভুত কান্ড হচ্ছে যেমন ধর মাঝে-মাঝে কান্না শব্দ আবার মাঝেমাঝে হাসির শব্দ আমার মাঝেমাঝে এক অন্য রকম অস্তিত্ব অনুভব করি।

রাফি:-কি বলিস আমার ও এই কয়েক দিন এমন লাগছে। ভয়ে কাওকে বলিনি।

ইয়ামিন:-চল তা হলে কাল এইখান থেকে বেরিয়ে পরি।

দিপু:-ভূত বলতে কিছু নেই?তোরা শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস?

আমি:-আমি বেশ কয়েকবার এমন অদ্ভুত শব্দ শুনেছি। শুধু আমি না ইয়ামিন,রাফিরা ও শুনেছে?আর এমন এক খবর আছে যা তুই শুনলে বিশ্বাস করতে পারবিনা।আমরা এখন শ্মশানের উপর।

দিপু:-শ্মশানননন।

রাফি:-আমাদের আগে কেন বলিসনি।

কথা বলতে বলতে রাত গভীর হয়ে আসল। রাত প্রায় ২ টা হঠাৎ পাশের রুম থেকে আওয়াজ আসল শব্দটা অনিমার। দেরি না করে সোজা রুমে চলে গেলাম দরজা ভিতর থেকে বন্ধ রাফি বা ইয়ামিন রোগা ছেলে দিপুকে ইশারা করলাম দরজা ভাঙ্গতে হবে একা পারবেনা আমি ও সাহায্য করলাম।দরজায় দুই থেকে তিনটা ধাক্কা দিতে দরজা খুলে গেল। দরজার দেওয়ালের এক পশে সায়মা আর অনিমা বসে আছে।তাদের চেহারায় ভয়ের চাপ তাদেরকে অনেক্ষন ধরে ঢাকছি ইয়ামিন টেবিলের উপর থেকে পানি এনে মূখের উপর মেরে দিল।সায়মা আমাকে দেখে কিছুটা সাহস পেয়েছে অনিমা ভয়ে ভয়ে বলতে শুরু করল ভূততত।

কিসের ভূত জিজ্ঞাস করলাম”কাঁদকাঁদ গলায় বলল আমরা যখন ঘুমাই দেখি ঐ পুতুলটা সাড়া রুমে হাটছে” আরে কি বল একটা পুতুল কিভাবে হাটবে? আর এটার তু প্রাণ নেই যে এখান থেকে ওখানে হেটে বাহিরে কোথাও চলে যাবে বলে পুতুলটাকে হাতে নিলাম তখন বুঝতে পারলাম এটা সাবাভিক পুতুলের মত হাল্কা না এটার ওজন অন্য পুতুল থেকে বেশি। হাতে তুলতে না পেরে পুতুলটা মাটিতে রেখে দিলাম।পুতুলের চোখ দুইটি অনিমার দিকে চেয়ে আছে দিপু অনিমাকে নিচ থেকে যখন খাটে উঠাল দেখলাম পুতুল ও তার দৃষ্টি সরিয়ে নিল।আমি তু ভিতরে ভিতরে ভয়ে জমে আছি আগে ভাবতাম ভূত বলে কিছু নেই কিন্তু আজ তার প্রমাণ নিজের হাতে পেলাম। চল সবাই আমাদের কামরায় যায়(“ইয়ামিন”) রুমে এসে দরজার লকটা লাগিয়ে দিলাম।সবাই খাটের উপর জড় হয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে বসেছি।শুন ভাই আমরা অনেক ভর বিপদে আছি।

রাফি:এসব কি বলিস তুই?

দিপু:-কিসের বিপদ?

ইয়ামিন:-আমার তু এখনই ভয় করছে।

আমি:ভয়ের কারণ অবশ্য!এই বাড়িটাই অদ্ভুত টাইপের?আমরা এখন চাইলে ও এখন থেকে বের হতে পারবেনা।

সায়মা:-কি বলল এসব?

আমি:-হ্যা প্রথম দিনই আমার সন্দেহ হয়েছিল ওই দিন তোরা ঘুমিয়েছিলা আমি ঘরটা ঘুরে দেখেছিলাম।

অনিমা:-তা কি দেখলি?

আমি:-আমি যা দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না।

রাফি:-কেন কি দেখেছিস?

আমি:-আমি ঘুরতে-ঘুরতে রান্না ঘরে চলে গিয়েছি।

ইয়ামিন:-রান্না ঘরে!

দিপু:-তা রান্না ঘরে এমন কি দেখলি?

আমি:-দেখলাম রান্নাঘর। রান্নাঘর নেই।

সায়মা:-এর মানে কি?

আমি:-রান্নাঘরটা মাকড়শা বাসা বেধেছে মনে হয় কয়েক যুগ এই ঘরটা কেউ পরিষ্কার করেনি।

অনিমা:-তা হলে রান্না কোথায় থেকে করে?আমরা বা খেলাম কি করে?

আমি:-আমি কারো কারো থেকে শুনেছি এটা একটা অভিশাপ্ত বাড়ি এই বাড়িতে যারা প্রবেশ করে তারা নাকি আর জীবন নিয়ে বের হতে পারেনা।

ইয়ামিন:-কি বলিস এসব?তা হলে ঐ দিন কি করে আমরা বের হলাম।

আমি:-সেই দিন আমরা ঘুরার জন্য বের হয়েছি আর এত সহজে আমাদের এখান থেকে যেতে দিবেনা।

সায়মা:-তা হলে আমরা!

দিপু:-এখান থেকে বের হবার কোন পথ রয়েছে নিশ্চয়?

আমি:-হ্যা আছে কিন্তু বিষয়টা এত সহজ না।

রাফি:-কেন কি করতে হবে?

আমি:-ওই দিন আসার সময় প্রচীন মন্দিরে দেখতে গিয়েছিলাম মনে আছে?ওটার পন্ডিত আমাদের ব্যাপারটা সাবধান করেছিল ইশারা-ইঙ্গিতে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারিনি।

সায়মা:-সোজাসুজি বলতে পারত?

অনিমা:-এর কোন কারণ তু রয়েছে। এখন যে করে হোক আমাদের এইখান থেকে বের হতে হবে?

আমি:-এটা ভূতের বাড়ি তাই বেশি চিন্তাভাবনা না করে জারজার জিনিশ পত্র ঘুছিয়ে নেও আজ রাতে বেরতে হবে।

রাত গভীর সবাই নিজ-নিজ রুম থেকে তাদের বেগ নিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে এখানে চলে আসো। কথা মত সবাই বেগ নিয়ে হাজির আমরা দুতালায় তাই সিঁড়ি ছাড়া নামার অন্য কোন পথ নেই।ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে ডাইনিং রুমে অবস্তান নিলাম।এই রুম থেকে সব রুমে যাওয়া যাবে রাফিকে ইশারা করলাম যেন দরজা খুলে অনেক চেষ্টা করে ও দরজাটা খুলতে পারলাম না।

হঠাৎ রুমের অন্ধকারের মাত্রা বেড়ে গেল একে অপরকে দেখতে পারছিনা।বাহিরের কুকুরগুলার চিৎকারের মাত্রা বেড়ে গেল চারিদিকটা কেমন ভয়ংকর রুপ নিল।সবাই কাঁপছে চোখে না দেখলে ও বুঝাতে পারছি অশরীরী কিছুর অস্তিত্ব। অন্ধকারের মধ্যে আলোর রশ্নি দেখা যাচ্ছে। আলোর এই উজ্জ্বল রশ্মিগুলো এক হচ্ছে আর সেই রশ্নি থেকে কারো শরীলের অস্তিত্ব প্রকাশ পাচ্ছে যেন মানুষের মত কারো শরীল তৈরি হচ্ছে। আলো সব এক হয়ে একটি অাকৃতি সৃষ্টি হল।

ইয়ামিন:-ভূততত!

আমি:-মে,মে,মেরিন

সায়মা:-মেরিন?

দিপু:-মেরিন কে?

অনিমা:-এটাই কি মেরিন?

“আমি কথা না বাড়িয়ে দরজা খুলার চেষ্টা করলাম কিন্তু দরজা এমন করে আটকানো বাহির থেকে ছাড়া ভিতর থেকে কেউ খুলতে পারবেনা।” বাহিরের স্বল্প আলোয় দেহটার চেহারা দেখা যাচ্ছে। তার চেহারা অনেকটা ঝলসানো মনে হয় আগুনে তার চেহারারর অনেক অংশ পুরে গিয়েছে। তার আধগলা দেহটা সামনে এগিয়ে আসছে।সেই একা না দেখলাম কতগুলা নিষ্পান দেহ আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে আসছে। অনিমাকে চুরে মারতে সোজা মেইন দরজায় লাগল।

আমি নিজের সব শক্তি এক করে দিয়েছি তবু যেন পারছিনা।দেখলাম আমার পিছনে কেউ নেই এরা কোথায় গেল?এদিক ওদিক থাকাতে মেরিন সামনে এসে গেল।মাথার উপরর থেকে ভয়ে ঘাম টপটপ করে পরছে।মেরিন ধারালো হাতের নক দিয়ে আমাকে আঘাত করল প্রথম ধপায় নিজেকে সামলাতে পারলে দ্বিতীয়টা পারিনি সোজা জানলার কাছ ভেঙ্গে দেওয়ালের ওপাশে পরলাম। হাত-পা অনেকটা কেটে গেছে নিজেকে সামলি সেই বাড়ি থেকে জান নিয়ে পালালাম।

বেশ খানিকটা পথ চলে এসেছি এখন ভয় নেই।নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে কিন্তু সায়মা, অনিমা,রাফি,দিপু,ইয়ামিনের কি হবে ভূতগুলা ওদের সাথে কি করবে? নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে এসবের জন্য কেন বা বেড়ানোর আইডিয়াটা মাথায় এল।আর ওদের বাসায় আমি কি জবাব দিব? আচ্ছা বাঁচাবার কোন পথ কি আছে?কে এই মেরিন? কি বা চাই আমাদের থেকে?এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একজনের কাছে আছে।দেরি করা যাবেনা মন্দিরের দিকে দূরাতে লাগলাম।মন্দিরটা মাঠের শেষ প্রান্তে অই তু দেখা যাচ্ছে মন্দির খুলাই রয়েছে। একি ভিতরে কেউ নেই সেই লাম্বা দাড়িলা মানুষটা কোথায়।দেখলাম মন্দিরের পিছনের পাহাড়ে বসে লোকটা আমাকে দেখছে বিনা সংকোচে তার কাছে গিয়ে সব কথা বলাম।

তোকে আগে ও বলেছি তোদের অনেক বিপদ কিন্তু কথাটা তোরা কানে নিসনি”(পন্ডিত) “আমাদের ভূল হয়ে গেছে আমার বন্ধুদের বাঁচান কিছু একটা করুন?””যা করার তোকে করতে হবে?”(পন্ডিত)”আচ্ছা করব আমাকে শুধু এইটা বলেন কে এই মেরিন যার থেকে আপনি অই দিন আমাদের সাবধান থাকতে বলেছিলেন?”মেরিন ও কোন ভূত নয় বা ভূত হয়ে ও সেই এই পৃথিবীতে আসেনি।”(পন্ডিত) “তা হলে এমন কি হয়েছিল তার সাথে যার জন্য আজকে তার এই অবস্তা?”মেরিনের পরিবার ছিল অনেক ধনী”সব কিছু ছিল তাদের মেরিনের বয়স যখন ১৬ বছর তখন এক দূঘটনা হয়।”(পন্ডিত) “কি সেই ঘটনা?”মেরিনের বাবা-মা তাকে রেখে এক আত্নীয় এর বাসায় যায়। কিন্তু কেউ জানত না রাতটি কাল রাত হবে।”(পন্ডিত) “এমন কি হয়েছিল সেই রাতে?”

“রাত প্রায় গভীর। বাসার চাকর-বাকরা ঘুমিয়ে ছিল হঠাৎ সাড়া বাড়িতে আগুনের আত্ন-চিৎকার শুনা যায়। মেরিন সহ বাসায় যারা ছিল তারা জ্যান্ত আগুনে পুড়ে মরে। আবার কারো-কারো কাছে শুনা যায় মেরিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু তার প্রিয় পুতুলটা আনতে গিয়ে তার ও মৃত্যু হয়।(পন্ডিত)”তা হলে কি সেই কেন আমার বন্ধুদের সাথে এমন করছে””তার মৃত্যু অমাবস্যাতিথিতে হয়েছে তার আত্না এখনো পরিপূর্ণ জীবন লাভ করতে পারেনি।তাই সেই যদি ১০০ মানুষের প্রাণ উৎসর্গ দিতে পারে তা হলে সেই পুনরায় এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবে।”(পন্ডিত) তা হলে এখন উপায়?”

উপায় একটা আছে সব আত্না পৃথিবীতে পুনরায় আসতে পারেনা কিন্তু মেরিনের ক্ষেত্রে তা সম্ভব কারণ তার প্রাণ একটা পুতুলের মধ্যে।আর কেউ যদি সেই পুতুলকে আগুতে জ্বালাতে পরে তা হলে মেরিনকে থামানো সম্ভব হবেবে।”(পন্ডিত) “এটা তু অনেক সহজ কাজ?” এতটা সহজ ও না। কেননা মেরিন জানে তার প্রাণ সেই পুতুলে তাই কেউ এত সহজে পুতুলের কাছে পৌঁছাতে পারবেনা।”(পন্ডিত) আমি না গিয়ে উপায় নেই আমাকে যেতে হবে।পন্ডিত যাওয়ার সময় তার ব্যাগ থেকে ৩টা ছুরি এনে আমাকে দিল।আর যাওয়ার সময় বলে দিল পুতুলকে মারার সাথে-সাথে ৩টা ছুরি থেকে যে কোন একটা দিয়ে মেরিনের বুকের ঠিক মামাঝ বরাবর আঘাত করতে হবে।তা হলে মেরিন সহ এই পিশাচ গুলোর বিনাশ হবে।

আজ হল পূর্ণিমারাত আর চাঁদ ডুবতে বেশি সময় নেই। দ্রুত পায়ে মহলটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মহলের সামনেরর দরজা বন্ধ আর দরজা দিয়ে মনে হয় ভিতরে প্রবেশ করা যাবে তার চেয়ে আমি যেই জানলা ভেঙ্গে বের হয়েছি ওঠা দিয়ে কাজ হবে।ভিতরে তু কাউকে দেখা যাচ্ছেনা দেখলাম উপর থেকে কার চিৎকার ভেসে আসছে উপরে গিয়ে দেখি একটা মাথা বিহীন লাশ সায়মার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমি আশার সময়য় যেই গাছটা এনেছিলাম সেইটা দিয়ে তার হাটুতে বারি দিলাম।আর দেখতে দেখতে সেই নিষ্পান দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পরল।সায়মা আমাকে দেখে হাওমাও করে কেঁদে পেলে। দিপু,ইয়ামিন,রাফি, অনিমা তারা কোথায়?

সায়মা:-ভূতটাকে দেখে আমরা সবাই উপরে চলে আসি।আমি আসার আগে ওরা রুমে ঢুকে পরে।তাই আমি টেবিলের নিচে লুকাই।সবাইকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে অনেক খুঁজাখুঁজি কিন্তু ভাগ্যিস আমি বেঁচে যায়।ওদের কোথায় নিয়ে গেছে? ”

সায়মা:-আমার মনে হয় জঙ্গলের পিছনে একটা মাঠ রয়েছে সেইখানে হতে পারে” তুমি আমার সাথে যেতে পারবেনা। এইখানে থেকে একটা কাজ করতে হবে?”

সায়মা:-কি কাজ? মেরিন নামের সেই রাক্ষসীটার প্রাণ একটা পুতুলে আর সেই পুতুলকে তোমার মারতে হবে?”

সায়মা:-আমি এসব পারবনা।”এখন আমাদের বন্ধুদের প্রাণ তোমার হাতে। পুতুলটা জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করতে হবে।”এই একটা ছুরি তুমি রাক।”কেন?এই ছুড়িতে এমন কি আছে?”(সায়মা)” “এই ছুরিগুলো নাকি মানুষের হাড়ের তৈরি আর এইটা তোমাকে কাজটা করতে সাহায্য করবে”(আমি)” সায়মাকে রেখে আমি জঙ্গলের দিকে এগুতে লাগলাম।জঙ্গলের বেশ ভিতরে আগুনের আলো দেখা যাচ্ছে আরেকটু এগিয়ে দেখি রাফি,দিপু,ইয়ামিন আর রুপাকে গাছের সাথে বেধে রাখা হয়েছে।মাঝে আগুনের কুণ্ডলী পাকিয়া কি সব যেন বলছে।এতগুলা পিশাচের সাথে আমি কি করে পারব বুঝতে পারছি না।।।

[অপর দিকে] রুম বেশ অন্ধকার এক-এক পা বাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। হাতে একটা লাইটার আর একটা মিনি সাইজের চাকু যা রান্নাঘর থেকে কুড়িয়ে নিয়েছি।পুতুলটা আমাদের রুমে আছে আস্তে-আস্তে রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।

বাহিরের হাল্কা আলোয় ঘরের ভিতরের অনেক অংশ আলোকিত হয়ে আছে।সিঁড়ি এক-এক করে উপরের দিকে উঠছি।যত উপরে উঠছি ভয়ের মাত্রাটা বেড়ে চলেছে। পায়ে জুতা নেই যা অনেক আগে খুলে রেখে আসা হয়েছে।চাকুটা সামনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি রুমের দরজা খুলা আছে অল্প করে। আমি দরজাটা খুলে রুমে ঢুকেছি।রুমের আলোর মাত্রাটা কম কেননা বাহিরের চাঁদের আলো ভিতরে প্রবেশ পথ হল জানলা যা চাদর দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে।দরজাটা আস্তে করে টেলে দিলাম হাতের গ্যাস লাইটটা জ্বালাতে অদ্ভুত চেহারার পুতুলটার দেখা মিলে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারদিক ঘোলাটে। পথভ্রষ্ট এক নেশাগ্রস্থ চোখ।কেমন যেন নিষ্ঠুর এক পৃথিবী। মৃত ছায়া, জীবন্ত কিছু স্মৃতি পুতুলের চেহারা ভয়াবহ রুপ নিল।শরীলের কাঁপার মাত্রাটা বেড়ে গেল।গ্যাস লাইটের হাল্কা আলোয় এক-এক পা এগিয়ে গিয়ে দেখি পুতুল নেই।জানলাটা আচমকা খুলে গেল বাতাসের বেগ প্রচণ্ড মাত্রায় বেড়ে গেল। বাহিরের বাতাসে গ্যাস লাইট নিবে গেল।পরপর কয়েকবার চেষ্টার পরেও লাইটটার টা জ্বালাতে ব্যর্ত হলাম। গ্যাস লাইটটা রেখে হাতে ছুরিটা সামনে নিয়ে পুতুলটা খুঁজতে লাগলাম।

ওদের বাঁচাতে হবে পিশাচ গুলো ধ্যানে মগ্ন। মূখে কিসব চু, চু,চিচি অদ্ভুত তন্ত্র-মন্ত্র পড়ছে তারা আগুনের কুণ্ডলী থেকে সরে মেরিনের চার পাশে ঘুরে সেই মন্ত্র গুলো আবার পড়তে লাগল। পিশাচ গুলোর চোখে মনি গুলা লাল বর্ণ ধারণ করল।এদের চেহারার অংশ ছাড়া শরীলের বাকি অংশ কাপড় দিয়ে ডাকা তার মানে আমাদের জঙ্গলে যেই পিশাচটি আক্রমণ করেছি সেই কি?হ্যা এখন সব বুঝা যাচ্ছে।মেরিন তার সেই মৃত শরীল পুনরায় জীবিত করার জন্য আমাদের জীবন নিবে?

পিশাচ গুলো ব্যস্ত আছে এটাই সুযোগ ওদের মুক্তি করার।আমি হাতের সেই ছুরি নিয়ে এগিয়ে গেলাম উপরের রুমগুলোয় আংশিক আলো থাকলে ও বাড়িটার ভিতরের দিক গুলো অন্ধকার। উপরের দুই কামড়া খুঁজে ও পুতুলটার নাম গন্ধ নেই।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় উপরের বাম পাশের কামড়াটার উপর নজর গেল।এইখানে থাকা অবস্তায় অনেকভাবে যেতে ইচ্ছা পোষণ করলেও রুমটাই যাওয়ার সাহস হয়নি। রুমের ভিতর কেমন যেন শব্দ হচ্ছে। গ্যাস লাইট অনেক আগে পড়ে গেছে বা কোথায় রেখেছি মনে নেই।ধীর পায়ে এগিয়ে রুমের পাশে গিয়ে কি হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করলাম। রুমের দরজাটা হাতের হাল্কা স্পর্শ পেয়ে খুলে গেল।

রাফি, ইয়ামিন,অনিমার হাত পা বাঁধা ছুরি দিয়ে দড়ি খেটে মুক্ত করলাম।পিশাচগুলোর খেয়েল নেই তারা সেই চু,চু,চি মন্ত্র উচ্চারণে ব্যস্ত এক,এক করে যাওয়ার সময় অনিমার পা কাটাই লাগে আর সেই শব্দ করে বসে।পিশাচ তাদের ধ্যান ছেড়ে আমাদের দিকে তেরে আসে সহজ কাজটা এখন কঠিন করে দিল তার মধ্যে এক অদ্ভুত বিষয় হল মেরিন সেই এখনো তার ধ্যানে ব্যস্ত চোখ বন্ধ হাওয়ার মধ্যে বসে সেই তিন শব্দের মন্ত্র উচ্চারণ করছে।আজ সেই তিতি যেই পূর্ণিমার রাতে আকাশে চাঁদ দেখা যায়।আর এই তিতি দীঘ পঞ্চাশ বছর পরে একবারি আসে।তাই এই সময়টাই অশারীরি পিশাচ, ভূত-প্রেত,আত্নারা নিজের শক্তিশালী করতে এই সময়টা ব্যবহার করে।ভয়ংকর পিশাচগুলো আমাদের তাড়া করে।নিজের প্রাণ বাঁচাতে রাফি,ইয়ামিন আর অনিমা প্রাণপণ দিয়ে দৌড়াচ্ছে।আর ভয়ংকর পিশাচগুলি তাদের পিছু নিয়েছে।

দরজা খুলার পর দেখলাম পুতুলটা এক আস্তা মুরগি চিবিয়ে খেয়ে নিল।মুরগি এইখানে কি করছে বা কিভাবে এল এমন অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। মনের কৌতূহল মিটিয়ে চোখ দু টি পুতুলে দিকে দিলাম। মুরগির রক্তে পুতুলের শরীল লাল বর্ণের হয়ে গেল।মুরগি তার প্রাণ বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করল কিন্তু পুতুল রুপি সেই হায়নাটা তার শরীলের বেশ কয়েক টুকরো করে সারা রুমে বিলিয়ে দিল। ইয়ামিন, রাফি,অনিমা জঙ্গলের ভিতর চলে গেল আর আর পিশাচ গুলো তাদের পিছু নিল।মেরিন এখনো হাওয়ায় ভাসছে আর তার মূখ দিয়ে সেই মন্ত্র।

আমি হাতে ছুরিটা ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম।হাল্কা বাতাসে মেরিনের চুল ভাসছে ভেবেছি মেরিন তার ধ্যান সাধনা থেকে উঠার আগে ছুরিটা বসিয়ে দিয়ে কাজটা শেষ করে দিব কিন্তু মেরিনকে যেই মাত্র ছুরির আঘাত করতে গেলাম মেরিনের চোখ খুলে গেল। পুতুলটা এবার তার মাথা ঘুরালো। তার চোখে যেন লাল অশ্রু ঝরছে আমি এক পা পিছিয়ে গেলাম।পুতুলটা আমার দিকে দৌড়াতে লাগল আমি সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে নেমে রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট একটা আলমিরা আছে তার পেছনটা বেশ অন্ধকার তাই ওইখানে লুকিয়ে পরলাম।

মেরিন তার ধ্যান সাধনা বন্ধ করে দিল।আমি ছুরিটা নিয়ে আবার পুনরায় চেষ্টা করলাম কিন্তু ছুরিটা মেরিনের দেহ চুয়ে বেরিয়ে গেলেও তার সামান্য ক্ষতি হচ্ছে না।আমি জানি মেরিনের শক্তি এত বেশি যে অন্য পিশাচগুলো তার নিয়ন্ত্রণে তাই যদি সায়মা তার কাজ ঠিকঠাক মত করে তা হলে এই যাত্রায় রক্ষা পাব কিন্তু মেরিন থেকে এত সহজে বাঁচা সম্ভব নয় আমার বুকের মাঝে এমন ভাবে আঘাত করল আমি সোজা গাছের নিচে গিয়ে পরলাম। দেখলাম পিশাচগুলো রাফি,ইয়ামিন, অনিমাদের পিছু নিয়েছে। বেশ কয়েক হাত দূরত্বে আর কিছুক্ষণ হলে ধরে নিবে। ওদের চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে ওদের না ধরা পর্যন্ত এরা শান্ত হবেনা।

পুতুল সিঁড়ি দিয়ে নামা শব্দ শুনা যাচ্ছে প্রতি ধাপে আমার হৃদপিন্ড উঠানামা করছে।সিঁড়ির উপর থেকে এক অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছে শব্দ গুলো অস্পষ্ট। পুতুল যখন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসল তখন বুঝলাম শব্দটা পুতুলে করছে আর তার চাইতে ভয়াবহ ব্যাপার হল পুতুলটা অন্য কিছুনা আমার নাম ধ রে ডাকছে। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সমস্ত অন্ধকার এই ঘরে এসে জমা হয়েছে।পুতুলের কোন সাড়াশব্দ নেই আমি হাপ ছেড়ে বাঁচলাম কিন্তু মোটেও তা না পুতুলটা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।পুতুলটার চেহারা দেখে ভয়ে এক পা পিছিয়ে গেলাম।পুতুলের মূখে এখনো সেই বিকৃতি সূচক হাসি।হাউমাউ করে দ রজা খুলে বের হয়ে আসলাম।জঙ্গলের দিকে দৌড়াতে লাগলাম ।

বাঁচবার বিন্দুমাত্র কোন আশা দেখছি না।আমি যদি মেরিনের বুকে চাকু টা বসিয়ে ও দি তবু কোন কাজ হবেনা।এক সাথে পুতুল, পিশাচ আর মেরিনকে মারতে হবে চাঁদের আলো হাল্কা হয়ে আসছে মনে হয় অল্প কিছু সময়ের মাঝে চাঁদ ডুবে যাবে উধাও হবে এক নতুন সূর্যের। আমরা দেখব না সেই আলো।

কিন্তু না আশার কিরণ এখনো জেগে আছে আমি ছুরিটা নিয়ে মেরিনের বুকে বসিয়ে দিলাম। মেরিন এর দেহ থেকে বিষাক্ত পানি বেরিয়ে আসছে আর তার শরীল মাটিতে লুটিয়ে পরল।পুতুলকে মারিনি তা হলে মেরিন? নিজের সন্দেহ দূর করে সায়মা আসছে হাতে তার তাজা রক্তে মাখা সেই ছুরি। রাফি,ইয়ামিন,দিপু আর অনিমা ঠিক আছে। পিশাচ গুলো আর নেই,নেই মেরিন, নেই সেই পুতুল আর জঙ্গল পেরিয়ে দেখি ঘরটা ও নেই।

জঙ্গল পেরিয়ে মেইন রোড থেকে বাস ধরে ট্রেন স্টেশন আর ওখান থেকে চট্টগ্রামে চলে আসলাম। আসার সময় সবার চোখে ভয়ের ছাপ।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত