ভূতে ধরা মানুষ অথবা ভূতুড়ে বাড়ির ব্যাপারে জানা আছে আমাদের। কিন্তু কোন বস্তু কি করে ভূতুড়ে হয়? যখন কোনো অতৃপ্ত আত্মা মৃত্যুর পরেও পৃথিবীতে থাকে যাবার চেষ্টা করে, তখন জীবিত মানুষ, বাড়ি থেকে শুরু করে অলংকার, পুতুল এমনকি আঁকা ছবির ওপরেও ভর করতে পারে। তেমনই কিছু ভূতুড়ে বস্তু আছে যারা একেবারে বিশ্ববিখ্যাত।
১) প্রাচীন, অশুভ প্রেতাত্মা ধরে রাখা ডিবুক বক্স ইহুদী লোককথা অনুসারে, ডিবুক বক্স হলো এমন একটি বাক্স যাতে থাক এক অশুভ প্রেতাত্মা। এই প্রেতাত্মা আবার ভর করতে পারে জীবন্ত মানুষের ওপরেও। এমনই এক ডিবুক বক্স ইবে তে বিক্রয়ের জন্য উঠে আসে এবং এর ব্যাপারে বিভিন্ন ভয়ংকর তথ্য জানা যায়। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ঘটনার সুত্রপাত। একজন অ্যান্টিক বিক্রেতা পুরনো কিছু জিনিসপত্র কিনতে আসেন ওরিগনের পোর্টল্যান্ডে।
এসব জিনিস ছিলো একজন ১০৩ বছর বয়সী মহিলার পুরনো ব্যবহার্য আসবাব। বিক্রেতা যখন একটি পুরনো কাঠের বাক্স কিনতে যান, তখন সেই মহিলার নাতনি তাকে এর ব্যাপারে সব খুলে বলেন। সেই মহিলা ছিলেন ইহুদী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পুরো পরিবার হারান তিনি। আমেরিকায় চলে আসার সময়ে খুব কম জিনিস সাথে আনেন তিনি, তার মাঝে একটি হলো এই বাক্স। নাতনির ভাষ্যমতে, সেই মহিলা সব সময়েই এই বাক্স লুকিয়ে রাখতে এবং বলতেন এটি কখনোই খোলা যাবে না, এর মাঝে রয়েছে ডিবুক নামের একটি অশুভ আত্মা। তিনি নিজের সাথে এই বাক্সটিও কবর দিয়ে দিতে বলেছিলেন, কিন্তু তা করা হয়নি।
অ্যান্টিক বিক্রেতা যখন এই বাক্স কিনে নিয়ে বেসমেন্টে নিজের ওয়ার্কশপে রাখেন, তার পর থেকেই ঘটতে থাকে অদ্ভুত সব ঘটনা। তার সহকারি জানান, হঠাৎ করে সব আলো নিভে যায়, সব দরজা বন্ধ হয়ে যায়, বেসমেন্ট থেকে আসতে থাকে ভয়াবহ সব শব্দ। তিনি দেখতে এলে বিকট এক দুর্গন্ধ পান বাতাসে, আর দেখেন সেখানের সব বাতি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই অ্যান্টিক বিক্রেতা নিজের মা’কে এই বাক্স উপহার দেন। এর পর তার মা স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ক্রমাগত কাঁদতে থাকেন তিনি এবং “H-A-T-E G-I- F-T” কথাটি উচ্চারণ করতে থাকেন।
এরপর পরিবারের আরও কয়েকজনকে উপহার হিসেবে এই বাক্সটি দেবার চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা সবাই কিছুদিনের মাঝে তা ফিরিয়ে দেয়। হয় তারা কোনো কারণে বাক্সটি পছন্দ করছিলো না অথবা তাদের মনে হচ্ছিলো বাক্সটি অশুভ। কিছুদিন পর তিনি ঘনঘন একই দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। পড়ে জানতে পারেন, এই বাক্স যাদের কাছে ছিলো তারা সবাই একই দুঃস্বপ্ন দেখছেন। জেগে থাকা অবস্থাতেও চোখের কোণ দিয়ে তিনি অশরীরী ছায়ার উপস্থিতি পেতেন।
একটা সময়ে তিনি স্বীকার করে নেন যে এসব কোনো প্রেতাত্মার কাজ এবং ইন্টারনেটে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে কম্পিউটারের ওপর ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর মনে হয় তার ঘাড়ের ওপর কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে। পেছনে ফিরে দেখেন এক ছায়ামানব দৌড়ে চলে যাচ্ছে। এসব ঘটনার পর তিনি ইবে-তে বিক্রির জন্য ওঠান এই বাক্সটিকে এবং এর ব্যাপারে সব ঘটনা প্রকাশ করেন। পড়ে মিসৌরির একটি মেডিক্যাল মিউজিয়ামের কিউরেটর জেসন হ্যাক্সটন এটি কিনে নেন। তিনি এ নিয়ে একটি বই লেখেন, যার ওপরে ভিত্তি করে তৈরি হয় The Possession নামের সিনেমাটি।
২) মিথ্যেবাদী পুতুল অ্যানাবেল ১৯৭০ সালে এক মহিলা নিজের মেয়ের জন্য একটা পুতুল কেনেন। সেই মেয়ে তখন কলেজে পড়তো। পুতুলটি বেশ পছন্দ হয়ে যায় তার। সে এটা নিজের অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যায়। কিন্তু শীঘ্রই সে এবং তার রুমমেট এই পুতুলকে ঘিরে অদ্ভুত সব ঘটনা লক্ষ্য করতে থাকে। নিজে নিজে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে যায় পুতুলটি। বাচ্চাদের হাতে লেখা কাগজের ছেঁড়া টুকরো পড়ে থাকে ঘরময়। এমনকি কাপড়ে তৈরি নড়বড়ে পায়ে একদিন দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায় একে। মেয়ে দুটি এসব ঘটনায় ভয় পেয়ে এক সাইকিক মিডিয়ামের শরণাপন্ন হয়।
সে বলে, এই পুতুলের ওপর ভর করেছে একটি বাচ্চা মেয়ের আত্মা, যে কিনা মারা গিয়েছিল এই অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিঙে। “অ্যানাবেল” বলে, সে ওই দুই কলেজ ছাত্রীকে পছন্দ করে এবং তাদের সাথেই থাকতে চায়। কিন্তু এই পুতুল রেখে দেবার পর থেকে আরও ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটতে থাকে। এমনকি একদিন একটি ছেলে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে এসে এই পুতুলের আক্রমণের শিকার হয়। তার শরীরে থেকে যায় মারাত্মক সব আঁচড়ের দাগ।
ভীষণ আতঙ্কিত হয়ে এরপর এসব প্রেতাত্মার গোয়েন্দা এড এবং লোরেইন ওয়ারেন এর সাহায্য নেয় মেয়ে দুটি। তারা জানায়, এই পুতুলের ওপরে মোটেই কোনো বাচ্চার আত্মা ভর করে নেই বরং রয়েছে এক শয়তান। মেয়ে দুটির আস্থা অর্জন করার জন্যই সে বলেছিলো সে একটি বাচ্চামেয়ের আত্মা। সে আসলে ওই দুটি মেয়ের কোনো একজনের ওপর ভর করারপাঁয়তারা করছিলো। মেয়ে দুটি এরপর সেই পুতুল ওয়ারেনদেরকে দিয়ে দেয়। তারা একটি কাঁচের বাক্সের আটকে রাখে এই পুতুল এবং কানেকটিকাটে নিজেদের অকাল্ট মিউজিয়ামে রেখে দেয়।
৩) ভৌতিক ইবে পেইন্টিং ২০০০ সালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা শিল্পী বিল স্টোনহ্যামের আঁকা এই পেইন্টিং ইবে তে তোলেন যার নাম হলো “The Hands Resist Him”। এখন ছবিটি পৃথিবীর সবচাইতে ভৌতিক পেইন্টিং এর মাঝে অন্যতম। ছবিতে দেখা যায় কাঁচের দরজার সামনে একটি বাচ্চা ছেলে এবং একটি ভূতুড়ে পুতুল।
১৯৭২ সালে এই ছবিটি আঁকা হয় এবং হলিউড অভিনেতা জন মার্লি এটি কিনে নেন। পড়ে ক্যালিফোর্নিয়ার এক দম্পতি এটি কেনে। এরপর ইবে তে নিলামে ওঠানো হয় একে। সেই সাথে এর ব্যাপারে ভূতুড়ে সব তথ্য দেওয়া হয়। ওই দম্পতির কথা অনুযায়ী, এই পেইন্টিং এর ভেতরে থাকা বাচ্চা ছেলে এবং পুতুল রাত্রে বেলা নড়াচড়া করে, এমনকি কখনো একেবারে ফ্রেম থেকে বের হয়ে যায়।
এমনকি যে ঘরে পেইন্টিং ছিলো সেই ঘরে ঢুকে যায় ছেলেটি, এবং ওই ঘরে থাকা সবাই অসুস্থ বোধ করতে থাকে। ছোট বাচ্চারা এই ছবি একবার দেখেই ভয়ে পালিয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্করা মাঝে মাঝে অনুভব করেন অদৃশ্য কোনো হাত তাদেরকে চেপে ধরছে, অথবা গরম দমকা হাওয়া এসে আঘাত করছে তাদেকে। যারা অনলাইনে এই ছবি দেখে তাদেরও অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। একজনের ভাষ্যমতে, তার একেবারে নতুন প্রিন্টার এর ছবি প্রিন্ট করতে পারেনি, যদিও অন্য সব ছবির ক্ষেত্রে তা ঠিকই কাজ করছিলো।
৪) আয়নার ভেতরে লুকিয়ে থাকা প্রেতাত্মা পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ভূতুড়ে বাড়ির মাঝে একটি হল মার্টলস প্ল্যান্টেশন। নেটিভ আমেরিকানদের সমাধিস্থলের ওপর একে তৈরি করা হয় ১৭৯৬ সালে। এ ছাড়াও গুজব আছে এ জায়গাটি কমপক্ষে দশটি খুনের সাক্ষী। এখানে দৈনিক ভৌতিক ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
১৯৮০ সালে এখানে একটা আয়না নিয়ে আসা হয়। এখানে বেড়াতে আসা মানুষেরা বলেন তারা এই আয়নার ভিতরে অশরীরী উপস্থিতি দেখতে পান। অনেক সময়ে বাচ্চাদের হাতের ছাপ দেখা যায় আয়নার কাঁচে।
অনেকে ধারণা করে থাকেন, সারা উডড়াফ নামের এক নারী এবং তার সন্তানদের আত্মা আটকা পড়ে আছে এই আয়নায়। এই পরিবারের সবাইকে বিষ প্রয়োগে খুন করা হয়। এখানকার প্রথা হলো, মৃত্যুর পর পরই সে বাড়ির সব আয়না ঢেকে রাখতে হবে যাতে কোনও প্রেতাত্মা তার মাঝে আটকে না যায়। কিন্তু এই আয়না ঢাকা হয়নি। ফলে তার মাঝে আটকা পড়ে গেছে সেই পরিবারের সব প্রেতাত্মা।
৫) একা একা নেচে বেড়ানো ভূতুড়ে বিয়ের পোশাক ১৮৪৯ সালে অ্যানা বেকার নামের এক ধনী পরিবারের মেয়ে প্রেমে পড়ে যায় এক নিম্নবিত্ত কামারের সাথে। অ্যানার বাবা এলিস বেকার কিছুতেই মেয়েকে তার প্রেমিকের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হন না। পেনসিলভেনিয়ার সেই শহর থেকে বিতাড়িত করা হয় সেই কামারকে আর মেয়েকে সারাজীবন কুমারি করে রেখে দেন। রাগে-দুঃখে আর কখনোই কাউকে ভালোবাসেনি অ্যানা, কখনো বিয়ে করেনি।
সে মারা যায় ১৯১৪সালে। প্রেমিককে শহর থেকে তাড়িয়ে দেবার আগে অ্যানা একটি পোশাক পছন্দ করে এবং নিজের বিয়েতে তা পরবে ঠিক করে। কিন্তু বিয়েটা শেষ পর্যন্ত হয় না।
এই পোশাক কিনে নেয় স্থানীয় আরেকটি মেয়ে, ধনী পরিবারের এলিজাবেথ ডিসার্ট। এই পোশাক পরে খুব জাঁক করতে থাকে। অনেক বছর পর বেকার পরিবারের বাড়িটি মিউজিয়ামে রূপান্তরিত করা হয়।
সেই পোশাকটি রাখা হয় অ্যানা বেকারের শোবার ঘরে। এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, এই পোশাকটি নাকি নিজে নিজেই নড়েচড়ে বেড়ায়, বিশেষ করে পূর্ণিমা রাতে।
দেখে মনে হয় কেউ এই পোশাকটি পরে আছে আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরেফিরে নিজেকে দেখছে।