বর্ণহীন

বর্ণহীন

রাতের অন্ধকারে ভূতের এক অদ্ভুত আর অজানা জগতে পা রাখতে চলেছি। চার দিকের নিস্তব্ধতা যেন গ্রাস করে ফেলেছে আমায়। নিজের নিঃশ্বাসের শব্দেও সন্দেহ হচ্ছে। শব্দটা কি সত্যিই আমি করছি নাকি ?

অমাবস্যাতিথিতেই যে আমায় কাজটা করতে হবে। নইলে যে আমি আমার বন্ধুদের আর ফিরে পাবো না। ঠিক এক সপ্তাহ আগে একটি গাড়িতে আমরা ৬ জন  অনামি,আনিকা,ফারহান,রাজু,কাব্য আর আমি যারিন। এরা সকলেই আমার কলেজের বন্ধু। কিছুদিন আগে সবাই মিলে ঠিক করি পিকনিকে যাব। তাই সব গোছগাছ করে আজ বিকেলে বেরুলাম।

কাব্য তাদের গাড়ি নিয়ে আসায় অন্য গাড়ির প্রয়োজন হলো না। কাব্য গাড়ি চালাচ্ছে। সবাই খুব মজা করছি। এই প্রথম আমরা ৭ দিন বাড়ি থেকে একা অন্য কোন জায়গায় গিয়ে থাকবো। সবার বাবা মা রাজী হলেও আমার বাবা মা রাজী হচ্ছিলো না। কিন্তু বন্ধুরা সবাই জোর করাতে অনেক কষ্টে রাজী হয়েছেন। তবে বার বার আমায় সাবধান করে দিয়েছেন যাতে একা একা কোথাও না যাই। আমি একটু ভিতু টাইপের। এই নিয়ে সবাই আমায় খ্যাপায়। আচ্ছা ভূতে ভয় পাই বলে এভাবে কি খ্যাপানো উচিৎ? এমন সময় অনামি বলে উঠলো।

অনামি:জানিস যারিন আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানে নাকি ভূত আছে। যদি তোর ঘার মটকে দেয়…? বলেই ও হাসতে লাগলো।হিহিহি ওর হাসিটা তখন আমার কাছে ঠিক একটা পেত্নীর হাসির মতো লাগছিল। বিচ্ছিরি! ভয়ে আমি আনিকাকে শক্ত করে ধরে রাখি।

আনিকা:যারিন তুই আমায় মেরে ফেলবি নাকি? এত শক্ত করে ধরেছিস আমার হাত তো ছিরে যাচ্ছে।

আমি:এমন করিস না দোস্ত। তুই তো জানিস আমি কেমন ভয় পাই। একটু ধরতে দে!

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। আর আমার ভয়টা যেন পাহাড় সমান হয়ে গেল। আনিকাকে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়ছি না। এমন সময় গাড়ি থামল। রাত ১০ টা। আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছে গেছি। একে একে সবাই নামছে।তখন কাব্য এসে আমাদের বলছে…

কাব্য:আনিকা যারিন তোরা কি এই গাড়িতেই থাকার প্লেন করেছিস?

আনিকা:দেখ না আমায় কেমন জাপটে ধরে আছে। উঠতেই পারছি না।

আমি চোখ বন্ধ করে সূরা পড়ছি। ওদের কথার কিছুই আমার কানে ঢুকছে না। মনে হচ্ছে চোখ খুললেই দেখবো আমার সামনে একটা ডাইনি বসে আছে। আর আমি একটা কাঁটা হাত ধরে বসে আছি। ওমা গো আমি চোখ খুলব না যাই হোক।

কাব্য:এই যারিন আয় বলছি! নইলে কিন্তু তোকে একা গাড়িতেই রেখেই চলে যাব। আয় ওর কথা শোনে কে। আমি আরো শক্ত করে আনিকা কে ধরলাম। এবার একে একে অনামি, রাজু,ফারহান এসে আমায় ডাকছে। আমি চুপ করে বসে আছি।

ফারহান:আরে একে আনাই ভুল হয়েছে ভিতু কোথাকার। এত ভয় পাস তাহলে এলি কেন?

আমি:আমায় আগে বললি না কেন এখানে ভূত আছে। বলেই কেঁদে দিলাম। অ্যাএএএএএএএএএএএ!

রাজু:আরে তোকে মিথ্যা বলেছে এখানে কোন ভূত নেই।

আমি:না না আমি বিশ্বাস করি না।অ্যাএএএএএএএ!

কাব্য:ফারহান,রাজু আয় আজ ওকে তুলে নিয়ে যাব।

কাব্য এসে এক টানে আনিকার হাতটা আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিল। ফারহান আর রাজুকে নিয়ে আমায় প্রায় ধরে বেঁধে গাড়ি থেকে নামালো। আমি তো চোখ বন্ধ করে চিৎকার করেই যাচ্ছি।

কাব্য:যারিনের চিৎকার থামানোর সাধ্য কারো নেই তার চেয়ে চল একে এভাবেই নিয়ে যাই করতে থাকুক চিৎকার।

আমায় টানছে আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়েই আছি। নড়বো না আজ, এখানেই থাকব। আমায় ভূতের ডেরায় নিয়ে যাওয়ার মতলব এদের। আমি চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আমি মাটি থেকে উপরে উঠে গেলাম। আ..আরে একি আমায় ভূতে তোলে নিয়ে যাচ্ছে যে। কাব্য,রাজু,আনিকা আমায় তোরা বাঁচা কই গেলি তোরা। তোদের যারিনকে আর পাবি না। ভূতে আমায় নিয়ে গেল যে অ্যাএএএএএএএএএ।

কাব্য:চুপ কর।(ধমক দিয়ে) তোকে ভূতে না আমরাই তুলে নিয়ে যাচ্ছি। ভূতের ভয়ে অন্ধ হয়ে গেছিস?

ফারহান:যা শুরু করেছিস। এভাবে চললে সারা রাত এখানেই কাটাতে হতো।

অনামি:চলেন মহারানী। আপনার মতো সৌভাগ্য কয়জনের হয়। এবার চুপ করে চলেন। নইলে ভূতের ঘরেই তোকে পাঠাবো। এই কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। কিন্তু ভুলেও একবারের জন্য চোখ খুলি নি। কিছুক্ষন পর ওরা হাঁটা থামিয়ে দিল। ওওওমা গোওওওওওও।আহহহ মরে গেলাম যে। আমাকে মাটিতে ছুড়ে ফেলেছে ওরা।

কাব্য:এএহহ এত সহজে তুই মরবি না। আমাদের জ্বালিয়ে মরবি। উফফ কতটা রাস্তা মহারানীকে তুলে নিয়ে এলাম। হাত পা ব্যাথা করছে।

আমি:তাই বলে এভাবে ফেলে দিবি?নপা টা বোধয় ভেঙ্গে গেলো রে।

আনিকা:যারিন চল তো এবার। দেখ আমরা হোটেলের সামনে এসে গেছি। আমি সামনে তাকিয়ে দেখি বড় একটা বাংলোর মতো। দেখতে পুরনো। আর কি ভয়ংকর। নিশ্চই এখানে ভূত থাকে। আমি দৌড়ে গিয়ে অনামির পেছনে লুকিয়ে পরি।

রাজু:আবার কি হলো তোর?

আমি:দেখছিস না ভূতের বাড়ি। এখানে ভূত আছে চল পালিয়ে যাই। এখানে আমি যাব না।

কাব্য:আবার কিন্তু তোকে আছাড় মারব। এতো রাতে ভূত ভূত করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিস। চল তো সবাই যারিন এখানে একাই থাক।

আমি:না দোস্ত। যাবি না এখানে ভূ

কাব্য:চুপ কর।

আমি:অ্যাএএএ।

আমি চুপ করে গেলাম। সবাই মিলে হোটেলটায় ঢুকলো। সবার পেছনে আমি। চারদিক ভালো করে দেখছি। ভেতরের পরিবেশ দেখে ততটা ভয় পেলাম না। আমাদের ছাড়াও আরও কিছু লোক রয়েছে। তবে বেশি না খুবই কম। ভেতরে আসার দরজার দিকে চোখ পড়তেই মনেহলো একটা ছায়া সরে গেল। আমি ভয় পেলেও কাউকে কিছু বলি না। আবার যদি ভূতের ঘরে পাঠিয়ে দেয়। না বাবা বলে কাজ নেই। কাব্য দুইটি চাবি নিয়ে এলো। আর বললো..

কাব্য:মেয়েরা একটা ঘরে আর ছেলেরা একটা ঘরে থাকবে।

আমি মনে মনে বললাম, যাক বাঁচা গেলো একা থাকতে হবে না। আমরা পাশাপাশি দুইটা ঘর নিলাম। ঘরে ঢুকতেই কেমন ঠান্ডা হাওয়া বেরিয়ে এল। একটা শিরশিরে অনুভূতি। আমি ফ্রেস হতে বাথরুম এ গেলাম। শাওয়ার টা অন করতেই কেমন যেন একটা পচা গন্ধ আসতে শুরু করল। অত গুরুত্ব না দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা পানিতে গোসল করছি।

হঠাৎ মনেহলো পানিটা একটু বেশিই ঠান্ডা হয়ে গেছে। এমন ঠান্ডা যেন ফ্রিজের পানি কেও আমার শরীরে ঢালছে। প্রচন্ড শীত করছে আমার। শাওয়ার টা বন্ধ করতে যাবো তাই চোখটা খুলে দেখি আমার সারা গায়ে রক্ত। আমি চিৎকার দিয়ে সেখান থেকে বেরোতে চাইছি। দরজা ধাক্কাচ্ছি। কিন্তু দরজার লক না খুলে ধাক্কালে যা হয়। খুলতেই পারছি না। জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছি তখন। এদিকে সারা শরীরে রক্তও সহ্য করতে পারছি না।

আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ের মুখ। সারা মুখে রক্ত লেগে আছে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এসব দেখে আর ঠিক থাকতে পারলাম না। আরও জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছি। কিন্তু না খুলতেই পারছি না। দরজার ওপাশ থেকে অনামি আর আনিকা জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে আমি উত্তর দিতে পারছি না। শুধু চিৎকার করছি। হঠাৎ খেয়াল হলো লক টা তো খুলি নি। লক টা খুলেই দৌড়ে বিছানার উপর পরে অজ্ঞান হয়ে যাই জ্ঞান ফিরলে দেখি সবাই আমার দিকে এক নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

অনামি:যারিন কি হয়েছিল তোর?এভাবে চিৎকার করে বেরোলি কেন? ঠিক তখনি সেই কথাটা মনে পড়ল।

আমি:রক্ত!রক্ত… আমার সারা শরীরে রক্ত লেগে ছিল। জানিস শাওয়ার থেকে রক্ত ঝর ছিল।

আনিকা:রক্ত! কিসের রক্ত?

আমি:আমার সারা শরীরে রক্ত। ওই যে ওই আয়না তে একটা মেয়ে।(বলতে বলতে ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো)

কাব্য:কি বকছিস এসব কোথায় রক্ত? শাওয়ার এ রক্ত আসবে কোথা থেকে? দেখ তোর শরীর পানিতে ভেজা। রক্ত না!

আমি:কি বলছিস এসব এইতো। কই সত্যিই তো কোথাও রক্ত নেই। তোরা বিশ্বাস কর সত্যি রক্ত ছিল। আর..আর ছিল একটা মেয়ে।

ফারহান:মেয়ে?কোথায়?

আমি:অই আয়নাতে। জানিস মেয়ে টার মুখে রক্ত লেগে ছিল। ও আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল।

কাব্য:হুম!বুঝেছি আসলেই মেয়ে ছিল। তবে আয়নায় না তোর মাথায়। সারাক্ষণ ভূত ভূত করে নিজের এমন অবস্থা করেছিস এখন সব উদ্ভট জিনিস দেখছিস।

আমি:আমি সত্যি বলছি বিশ্বাস কর।

রাজু:আর কোন কথা না। চুপ করে ঘুমোতে যা।

অনামি,আনিকা তোরা ওর খেয়াল রাখিস ওর কাপড় টা পাল্টে দে। আর যারিন শোন এসব তোর মনের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমো। কাব্য,ফারহান,রাজু তিন জন চলে গেলো। অনামি আর আনিকা আমার কাপড় পাল্টে দিলো। খুব ঘুম ঘুম লাগছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না। চোখ খুলে দেখি হালকা আলো জ্বলছে। অনামি,আনিকা কাউকেই দেখতে পেলাম না। উঠে দাঁড়ালাম পা বাড়াতেই কিছু একটাতে হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম।

জিনিস টা কি বুঝা যাচ্ছে না। তাই লাইট জ্বালিয়ে দিলাম। মেঝের দিকে তাকাতেই দেখি একটা হাত। আমি চিৎকার দিয়ে দূরে সরে যাই। হাত টা খাটের নিচ থেকে বেরিয়ে আছে। কার হাত দেখার জন্য নিচে ঝুকে যা দেখলাম আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। এ এতো সেই মেয়ে যে আয়নায় ছিলো। মেয়েটা আমায় দেখে বিচ্ছিরি কালো লম্বা লম্বা দাঁত বের করে হাসতে লাগলো। আমি চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। বাংলো টা অনেক বড় হয়ত তাই কেউ আমার চিৎকার শুনতে পারছিল না। আমি দৌড়ে একটা ঘরে এসে দেখি অনামি,আনিকা,রাজু,ফারহান,কাব্য সবাই বসে আছে।

আমি তাদের কাছে যাই। ডাকছি কিন্তু কেউ যেন আমায় দেখতেই পারছে না। চিৎকার করতে থাকি কিন্তু কেউ আমার দিকে তাকাচ্ছেও না। ধাক্কা দিই তাও ওরা আমার দিকে তাকাচ্ছে না। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর দেখলাম একটা লোক এল খাবার পরিবেশন করতে।লোকটার হাতে একটা ট্রে। এসে অনামির সামনে দাঁড়ালো। অনামি লোকটার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। এর পর এক টানে নিজের মাথাটা আলাদা করে লোকটির হাতের ট্রে তে রাখল।

আমি ভয়ে পিছিয়ে এলাম। অনামির সেই আলাদা মাথাটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। আমি ভয়ে কাব্যকে বার বার ডাকতে লাগলাম। এমন সময় সামনের দরজায় সেই মেয়েটিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। লোকটা মেয়েটির কাছে ট্রে টা নিয়ে গেলো। মেয়েটা অনামির চুল ধরে মাথাটা হাতে নিলো।

এবার আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। অনামির মাথাটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। টেবিলে চেয়ে দেখি কাব্য,অানিকা,রাজু,ফারহান সকলের মাথা টেবিলে আর শরীর চেয়ারে। তারা একে একে উঠে দাঁড়ালো আর। নিজের মাথা হাতে নিয়ে মেয়েটার পিছু পিছু সবাই এগিয়ে আসতে লাগলো।

আমি চিৎকার দিয়ে এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগলাম।যেখানেই যাই সেখানেই দেখি সামনে ওরা ওদের মাথা হাতে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি একটা ঘর খুঁজে পাই। পেছনে ওরা থাকায় আমি ঘরে ঢুকে যাই। ঢোকতেই দরজাটা নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায়।চারদিকে অন্ধকার। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে আমার কাধে ধরে আমি ভয় পেয়ে যাই। আস্তে আস্তে সব যেন পাল্টে যাচ্ছে। কানে ভেসে আসছে কারো কন্ঠ। আনিকা…হ্যাঁ আনিকার কন্ঠ।

আনিকা:যারিন..এই যারিন…কি হয়েছে…যারিন। চোখ খুলে দেখি আনিকা ডাকছে। আমি আনিকাকে জরিয়ে ধরি।

আমি:আনিকা তুই ঠিক আছিস তো? বাকি সবাই কোথায়?সবাই ঠিক আছে তো?

আনিকা:আমাদের কি হবে?আমরা সবাই ঠিক আছি।তোর কি হয়েছে সেটা বল। কাল রাতে যা করলি। এখন আবার ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছিস। কি হয়েছে বল তো।

আমি:তেমন কিছু না তোদের নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি তাই।

আনিকা:আচ্ছা চল সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি:কোথায়?

আনিকা:খাবার টেবিলে। কাল রাত থেকে তো কিছুই খাসনি। এবার চল।

আমি অনার সাথে যাই। একটা বড় ঘর। ঘরটা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া, এটা তো সেই ঘর যেটা আমি স্বপ্নে দেখেছি। আর সবাই সেই টেবিলেই বসে আছে যে টেবিল স্বপ্নে ছিলো। তাহলে কি আমি যা দেখেছি তা সত্যি?

আমি কথা না বাড়িয়ে গিয়ে ওদের পাশে চুপ করে বসি। ঠিক সেই সময় একটা লোক এসে আমাদের জিজ্ঞেস করছে কে কি খাব। প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে লোকটার মুখের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকালাম। যদি এ সেই স্বপ্নের লোক হয়। কিন্তু নাহ, এই লোক সেই লোক নয়। যাক তাহলে স্বপ্নটা আসলে সত্যি নয়।

খাওয়া শেষে আমরা বাংলো বাড়িটা ঘুরে দেখতে থাকি বাড়িটা বিশাল বড়। চারদিকে বেশ ঘন গাছপালা অবশ্য এটা স্বাভাবিক। কারন এখানে প্রচুর বন আর পাহাড় রয়েছে। বাংলো টার ঠিক পেছনের দিকে একটা ছোট বাড়ির মতো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেউ থাকে না। অদ্ভুত একটা ব্যাপার লক্ষ করলাম। বাড়ি টার সব দরজা জানলা বন্ধ থাকলেও একটা জানলা খোলা। আর সেই জানলার মধ্যে একটা পুতুল ঝোলানো। পুতুল টাকে দেখে কেমন যেন গাঁ হিম করা অনুভূতি হচ্ছে।

কিছুক্ষণ দেখে আমরা আবার বাংলোতে ফিরে এলাম। সবাই মিলে ঠিক করলাম বিকেলে কাছের একটা জঙ্গলে যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ। বিকেল হতেই বেরিয়ে পরলাম। একটা বড় জঙ্গলের ভেতর গাড়িটা থামল। বিকেল বেলাতেও জঙ্গল টা বেশ অন্ধকার। দেখে মনে হচ্ছে এখানে সূর্যের আলো পৌছায় না। আমরা এগিয়ে ভেতরের দিকে যাচ্ছি। ভেতরে ঢুকতেই কেমন যেন ভয় ভয় করছিল।

কাব্য:জঙ্গল টা খুব গভীর আর অন্ধকার তাই আমাদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। কেউ বেগশি দূর যাবিনা কিন্তুু। কিছুক্ষন পর দেখলাম জঙ্গল টা আরও অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।

আমি:সবাই এবার চল ফিরে যাওয়া যাক। জঙ্গলটা আরও অন্ধকার হয়ে গেছে। মনে হয় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

রাজু:কিন্তুু সবে মাত্র ৫ টা বাজে। এখন কিকরে সন্ধ্যা হয়।

কাব্য:হয়তো পাহাড়ি এলাকা তাই একটু আগেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। আচ্ছা সবাই চল বেশি দেরি হওয়ার আগে আমাদের বাংলো তে ফিরতে হবে। আমরা আবার উল্টো দিকে হাঁটতে থাকলাম। আশ্চর্য আমরা প্রায় আধ ঘন্টা ধরে হাঁটছি কিন্তু রাস্তা শেষ হচ্ছে না। অথচ যাওয়ার সময় বেশি হলেও ২০ মিনিট হেঁটেছি। যেতে যেতে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল রাস্তা শেষ হচ্ছে না।

কাব্য:কি হচ্ছে এসব। রাস্তা তো শেষ হচ্ছে না। তাহলে কি আমরা জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেছি?

আমি:এখন?কি করবো আমরা। এই জঙ্গলে কি করে থাকবো। অন্ধকার হয়ে এসেছে।

কাব্য:এই জঙ্গলে তো মোবাইলে নেটওয়ার্ক ও পাওয়া যাবে না। কি করি এখন। অনেক্ষণ হাঁটার পর এক সময় চারদিক পুরপুরি অন্ধকার হয়ে গেলো। মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে সবাই এগিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর সামনে মনে হলো একটু ফাঁকা জায়গা দেখতে পেলাম।

একটা রাস্তা কিন্তু কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম এটা সেই রাস্তা না যেটা দিয়ে আমরা এসেছি। তাও মনে হলো একটু হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এবার শুধু একটা গাড়ির অপেক্ষা। সবাই একটা গাছের নিচে বসে আছি। চারদিকে শিয়াল আর পেঁচার ডাক। এই অন্ধকারে এমনিতেই ভয়ে আছি তার ওপর আবার এমন বিচ্ছিরি ডাক। আমিতো ভয়ে একেবারে কুকড়ে যাচ্ছি।

সবার মাঝখানে বসেও যেন মনে হচ্ছে এই বুঝি আমায় ভূতে ধরে ফেলল। চোখ বন্ধ করে সূরা পড়া শুরু করলাম। দেখলাম আমার সাথে আনিকাও সূরা পড়ছে। এএএহহহ খুব তো আমায় ভিতু বলে সব সময় খ্যাপায় আর আজ নিজেই ভয় পাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছিল ওর নাকে একটা ঘুষি মারি। কিন্তু অন্ধকার আর ভয়ের জন্য ইচ্ছে টাকে কবর দিয়ে সূরা পড়ায় মনযোগ দিলাম। এমন সময় কিসের একটা আওয়াজ হলো। দেখলাম হুট হুট করে কেউ শব্দ করছে। একটা আলো দেখতে পেলাম। গাড়ি একটা গরুর গাড়ি।গাড়িটা দেখে যেন আশার আলো খুঁজে পেলাম। সবাই ছোট্টে গাড়িটার দিকে গেলাম।গাড়ির চালক আমাদের ওঠতে বলল।

আমি:আশ্চর্য আমরা কিছু বলার আগেই কিভাবে বুঝলেনআমাদের সাহায্য লাগবে?

গাড়িওয়ালা:কিছু জিনিস বলার অপেক্ষায় থাকে না। যা হওয়ার তা হয়।

লোকটার কথায় কেমন একটা রহস্য।আমরা সকলেই উঠে বসলাম। কিছুদূর যেতেই হঠাৎ গাড়ির লোকটার পায়ের দিকে খেয়াল করলাম।একি? লোকটার পা কথা বলতে পারছিলাম না। কাব্য কে ধাক্কা দিই। ও আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। আমি কিছু বলতে না পাড়ায় হাতে লোকটার পায়ের দিকে দেখালাম।

কাব্য:কি দেখাচ্ছিস?

আমি:প…প…পা।

কাব্য:কি হয়েছে পায়ে?

আমি:আস্তে করে বললাম.. দেখতে পারছিস না লোকটার তো পা নেই।

কাব্য:কি বলছিস এসব। পা তো ঠিকই আছে। তুই চুপ করে বসে থাক। এমনি লোকটা গাড়িতে জায়গা না দিলে আমাদের জঙ্গলেই রাত কাটাতে হতো। তার ওপর এসব বললে শেষমেষ গাড়ি থেকেই যদি নামিয়ে দেয়।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। একটু পর হঠাৎ গাড়িটা থেমে গেল। সবাই গাড়ি ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলো থামার কারন। লোকটা কিছু না বলেই আমাদের দিকে ঘুরলো। আমরা ভয় পেয়ে যাই। কারন লোকটার শরীর সামনের দিকে আর মাথাটা পেছন দিকে। সবাই দৌড়ে গাড়ি থেকে নেমে যে যেদিকে পারি দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াচ্ছিলাম এক সময় ক্লান্ত হয়ে বসে পরি। খুব ভয় লাগছিলো। কেউ আমার সাথে নেই। এই ভয়ংকর জঙ্গলে আমি এখন একা। পেছন থেকে একটা হাসির আওয়াজ পেলাম। তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটি। হে খোদা আবার সেই মেয়েটি। মুখে এখনও রক্ত লেগে রয়েছে।

আমি আবার প্রাণপনে দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়েও পারছি না। যেদিকে যাচ্ছি সেদিকেই ওই মেয়ে। কি করবো আমি।রাতের অন্ধকারে দিশেহারা হয়ে ছোটে চলেছি। একটা গাছে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। উঠে বসতেই কারো একটা হাত আমার কাঁধে স্পর্শ করলো। তাহলে কি আজই আমার শেষ দিন। ওই মেয়েটা কি আমায় আজই মেরে ফেলবে। বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল সে সময়। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিলো। মা বাবা তোমাদের মেয়েকে আর পাবে না। আজই আমার শেষ দিন।হঠাৎ হঠাৎ সে আমার সামনে এলো। উপরওয়ালা আমার সহায় ছিলেন। সেটা ছিল কাব্য।

আমি:কাব্য তুই!

কাব্য:হে আমি। কাউকে খুঁজে পেলাম না। চল এখান থেকে চলেযাই।

আমি:আগে সবাই কে খুঁজে বের করি।

কাব্য:এই গভীর জঙ্গলে কোথায় খুঁজব?

আমি:জানি না। তবুও ওদের বিপদে ফেলে এভাবে যাবো না। যা হয় হোক।

আমরা জঙ্গলে হাঁটতে থাকি। অজানা বিপদের মুখামুখি হতে যাচ্ছি, সবাইকে অনেক খুঁজলাম কাউকে পেলাম না। এমন সময় পেছনে একটা শেয়াল ডেকে উঠল। তাকাতেই ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এতো বড় শেয়াল আমি কখনও দেখিনি। চোখ লাল বর্ণ ধারন করে আছে। আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। আমি আর কাব্য পালাতে থাকি। ছোটতে ছোটতে হঠাৎ এক লাফে ওটা আমাদের কাছে চলে আসে। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। ঠিক আমার সামনে এসেই মিলিয়ে যায়। একটু পর চোখ খুলে দেখি কেউ নেই।তখন কারো চিৎকার শুনতে পেলাম। গলাটা অনামির মতো। আমি আর কাব্য সেই দিকে যাই। গিয়ে দেখি একটা গর্তে অনামি পড়ে চিৎকার করছে। আমি ওকে টেনে গর্ত থেকে বের করি। পায়ে সামান্য আঘাত পেয়েছে।

আমরা তিনজন। এখনও রাজু ফারহান আর অানিকাকে খুঁজে পাই নি। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এদিকে সকাল হয়ে গেছে। চারদিকে একটু একটু আলো ফুটে উঠেছে। আমরা তিনজন এগিয়ে যাচ্ছি। জানিনা পথ পাবো কিনা। ঝোপের মধ্য দিয়ে হাটছিলাম। ঠিক সেই সময় কেউ আমার পা ধরে ফেলল। আমি ভয় পেয়ে যাই। তাকিয়ে দেখি ফারহান। ওর অবস্থা খুব খারাপ। সবাই মিলে ওকে তুলি। মাটি দিয়ে সারা শরীর লেপ্টে আছে। ফারহান পানি চাইছিলো। কিন্তু এখানে পানি কোথায় পাবো। খুব কষ্ট হচ্ছিলো ওর। কাব্য বলল ও পানি নিয়ে আসবে। আমাকে আর অনামিকে ফারহানের সাথে থাকতে বলে চলে গেল পানি আনতে। অনেক্ষণ হয়ে গেছে কিন্তু কাব্য এখনও আসছে না। হঠাৎ কাব্য এল। সাথে আনিকা। আনিকা আমাদের দেখে ছোট্টে কাছে চলে এলো । কাঁদতে লাগলো। খুব ভয় পেয়েছে ও। কিন্তু কাব্য কোথাও পানি পেলো না।

আমি:আনিকা কোথায় ছিলি তুই।

আনিকা:সারা রাত দৌড়েছি। কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম মনে নেই। উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে। অনেক খুঁজে কাব্যকে পেয়েছি।

আমি:ফারহানের অবস্থা খুব খারাপ আমাদের তাড়াতাড়ি রাজুকে খুঁজতে হবে। আবার এগিয়ে যাচ্ছি সবাই। ফারহান ঠিক মতো হাঁটতে পারছেনা। তবু রাজুকে আমাদের খুঁজতে হবে। অনেক খুঁজেও রাজুকে পেলাম না। শেষে আশা ছেড়ে দিই। ফারহানকে যে ভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। ওকে নিয়েই আবার এগোচ্ছি। অনেক্ষন পর আমরা সেই রাস্তা টা পেলাম যেটা দিয়ে এসেছিলাম। তাড়াতাড়ি ফারহানকে গাড়িতে তুললাম। কিন্তু এভাবে রাজুকে একা ফেলে যাওয়া ঠিক হবে না।কি করবো? আর ভাবতে পারছি না। ফারহান কে নিয়েই রওনা দিলাম বাংলোর দিকে।

সেখানে গিয়ে বাংলোর ম্যানেজারকে বললাম আশে পাশের কোনো ডাক্তার কে খবর দিতে। তিনি জানালেন এখানে কোনো ডাক্তার নেই। অনেক দূরে যেতে হবে। তাই ডাক্তারের কাছে না নিয়ে আমরাই যতটুকু পারি করলাম। এখন ফারহান অনেকটা সুস্থ। ম্যানেজার কে জঙ্গল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন এই জঙ্গল নাকি অভিসপ্ত। রাত হলেই অসরীরি কিছু দেখা যায়। বিকেল হয়ে গেছে।

আনিকা আর অনামিকে ফারহানের সাথে রেখে আমি আর কাব্য রাজুকে খুঁজতে বেরোলাম বাংলোর ম্যানেজার কেউ সাথে নিলাম। জঙ্গলে আসতে আসতে বেলা অনেকটা বেড়ে গেলো। জঙ্গলে আমি আর কাব্য রাজুকে ডাকছি কিন্তু সারা পাচ্ছি না। কি করি সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এমন সময় দেখলাম একটা কাপড়ের টুকরো। এটা তো রাজুর শার্টের ছেড়া অংশ। কাব্য তুই ঠিক বলছিস তো এটা রাজুর?

কাব্য:আসার সময় রাজু এমন একটা শার্ট পড়েছিল আমার মনে আছে।

আমি:তাহলে চল এখানেই কোথাও রাজুকে পাব।

অনেক্ষণ খুঁজার পর আমরা রাজুকে পেলাম। রাজু অজ্ঞান ছিলো। ম্যানেজার আর কাব্য রাজুকে ধরে গাড়িতে তুলল। জঙ্গল থেকে বেরোতে বেরোতে রাত হয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট করার সাথে সাথে ঠিক গাড়ির পেছনে সেই মেয়ে টা। আমি কাব্যকে তারাতারি গাড়ি চালাতে বললাম। গাড়ি চলা শুরু করতেই মেয়েটিও পেছনে পেছনে দৌড়ে আসতে লাগল। আমি কাব্য কে আরও জোড়ে গাড়ি চালাতে বলছি।

যতই জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছে মেয়েটাও ততই আমাদের কাছে আসছে। এক সময় জঙ্গল টা পেরোতেই মেয়েটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। রাজুর এখনও জ্ঞান ফেরেনি। আমি এখনও ভয়ে কাপছি। আর পেছনের দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা যদি আবার আসে। কিন্তু না মেয়েটা আর এলো না। আমরা বাংলোতে এসে দেখি ফারহান সুস্থ। এবার রাজুকে চোখ মুখে পানি দিই। কিন্তু ওর জ্ঞান ফিরছিল না। সিদ্ধান্ত নিই কালই সবাই বাড়িতে চলে যাব। আজ রাতটা সবাই এক সাথে কাটাবো। এখন সব ঠিক আছে।শুধু রাজুর জ্ঞান ফেরা বাকি।

কাব্য:আমাদের ক্ষমা করিস যারিন। আমরা কেও তোর কথায় বিশ্বাস করি নি।

আমি:যা হয়েছে তা তো হয়েই গেছে এসব নিয়ে আর কথা বলার প্রয়োজন নেই। আর হে এই মেয়েটাই সেই মেয়ে যাকে আমি এই বাংলোতে দেখেছি।

এ ব্যাপারে ম্যানেজার কে অনেক জিজ্ঞেস করলে সে বলে “অনেক দিন আগে এখানে একটা পরিবার থাকতো। জমিদার তার স্ত্রী ও তার ছোট একটা মেয়ে। বন আর এই বাংলো সব তাদের ছিল। মেয়েটার মা কে তার বাবা খুব মারধর করতো আর খুব নির্যাতন করত।

এসব সেই ছোট্ট মেয়েটা সহ্য করতে পারতো না।একদিন মেয়েটির মা গলায় দরি দিয়ে আত্বহত্যা করলে মেয়েটি খুব একা হয়ে যায়। তাই একদিন সেও তাদের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্বহত্যা করে। এর পর তাকে অনেকে দেখেছে। একদিন রহস্যজনক ভাবে জমিদার মারা যায়। জমিদারের সারা শরীরের রক্ত মনে হচ্ছিল কেউ শুষে নিয়েছে। এর পর এই বাংলো টাকে হোটেল বানিয়ে দেয়া হয়।

আমি:হুম কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না ও আমাদের পেছনে কেন পড়ে আছে। অনেক ভেবেও কিছু পেলাম না।

অনেক ভাবার পরেও এই মেয়েটার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলাম না। রাজুর জ্ঞান ফিরলে পরদিন সকালে আমরা সবাই সেই বাংলো থেকে চলে আসি। ভাবি হয়তো আর কখনও ওই মেয়েটার সামনাসামনি আমায় হতে হবে না। কিন্তু আমার ধারনা টা ভুল ছিলো।

নিজেদের সামলে আমরা রওনা দিই। আমরা আমাদের শহর ময়মনসিংহে চলে আসি। সবাই মিলে গাড়িতেই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের সাথে যা ঘটেছে তা কখনও কাউকে বলব না। এই সিদ্ধান্তের কারণ ছিল একটাই। আমরা আমাদের পরিবারের কাউকে শুধুশুধু চিন্তায় ফেলতে চাই না। যা ঘটে গেছে তা বলে আর লাভ নেই। এখন তো আর কিছু হবে না। একে একে সবাইকে বাড়িতে পৌছে দিয়েছে কাব্য। এখন আমাদের বাড়ির সামনে গাড়িটা থামল।

কাব্য:যারিন আর কোনো ভয় নেই। আমরা সুরক্ষিত। তুই আর ভয় পাস না।

আমি:হুম।

কাব্যকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে এলাম। আমায় দেখে মা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগল। আসলে আগে কখনও মাকে ছাড়া থাকিনি তো। তাই এমন করছে মায়ের কান্না দেখে আমিও কেঁদে ফেলি।

মা:কি অবস্থা হয়েছে চোখ মুখের। তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

আমি:আসলে অনেকটা জার্নি করে এলাম তো তাই হয়তো। তুমি চিন্তা করো না একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবো। আমি আমার ঘরে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম।

মা:কিরে!মন খারাপ?

আমি:না মা খুব একা লাগছিল। এতদিন তোমাদের ছেড়ে ছিলাম তো।

মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম। চোখটা লেগে এলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখলাম মা নেই। আমাদের ঘর টা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আছে, সন্ধ্যা হয়েছে। কিন্তু মা লাইট জ্বালায় নি কেন। আমি উঠে লাইট জ্বালাতে গেললে জ্বলল না। হয়তো কোন ভাবে ফিউজ হয়ে গেছে। মাকে ডাকছিলাম। কিন্তু কোন সাড়া শব্দ পেলাম না। রান্না ঘরের দিকে গিয়ে দেখি কেউ একজন শিল(যা দিয়ে মসলা বাঁটে) দিয়ে কিছু একটা বাঁটছে। কিন্তু একে তো আগে কখনও দেখি নি। তাহলে কি মা নতুন কাজের মেয়ে রাখল?

কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কে তুমি? কিছুই বলছে না।মনে হচ্ছে আমায় দেখে আরও জোরে বাঁটা শুরু করলো। গড গড আওয়াজ হচ্ছে আর অনেক জোরে। এভাবে আমার কথা কানে না যাওয়ারই কথা। উপায় না দেখে মেয়েটার গায়ে হাত রাখতেই ঠান্ডা একটা স্পর্শ পেলাম। কেমন যেন লাগল। আমার ছুঁয়াতে মেয়েটা বাঁটা বন্ধ করে দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে তুমি? মেয়েটা আমার দিকে তাকালো। ছিটকে আমি রান্না ঘরের দরজার কাছে চলে যাই। সেই মেয়ে টা। না এ কিভাবে সম্ভব। এখানে কি করে এলো।

মেয়েটা নিজের চোখ দুটো আমার সামনে উপরে ফেলল। রক্ত বেরোতে থাকল চোখ থেকে। দুটো বড় বড় গর্ত তৈরি হলো। চোখ দুটো নিয়ে শিলে বাঁটতে থাকলো। নাহ এই দৃশ্য আর সহ্য করতে পারলাম না। আমি জ্ঞান হারাই। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার পাশে একটা লোক বসে আছেন। আমি তাকে চিনি না। দেখে মনে হচ্ছে ডাক্তার। অন্য পাশে বাবা দাড়িয়ে আছেন। মা আমার মাথায় হাত বোলাচ্ছেন। জ্ঞান ফিরতেই বাবা বলতে লাগলেন।

বাবা:আগেই বলেছিলাম অচেনা আজানা জায়গায় না যেতে। জেদ করে গেলি। এখন নাজানি কি অসুখ বাঁধিয়ে ফেলেছিস। কিন্তু পাশের লোকটা বলে ওঠলো। আপনার মেয়ের কিছু হয়নি। প্রেসার টা একটু বেড়ে গেছে।

মা:কি হয়েছিল তোর। আমি একটু বাইরে যেতেই রান্না ঘরে শব্দ পাই। এসে দেখি তুই অজ্ঞান হয়ে পরে আছিস।

আমি:কিছু না মা।

আমি মা কে জিজ্ঞেস করি নতুন কোন কাজের লোক রেখেছে কিনা। কিন্তু মা বলল রাখেন নি। তাহলে ওটা কে ছিলো? কি সে আবার ফিরে এসেছে আমার জীবনে? কিন্তু কেন কি চায় আমার থেকে?

রাতে ভয়ে মাকে আমার সাথেই ঘুমোতে বলি। প্রায় মাঝরাতে আমার কানে কিছু একটার শব্দ গেলো।শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমার ঘরের বাথরুমের লাইটা অন করা। কিন্তু মা তো ঘুমোচ্ছে। হয়তো নেভাতে ভুলে গেছে। তাই আমিই নেভাতে গেলাম। সুইচ টা ছিল দরজার ঠিক পাশে। সুইচে হাত দিতেই আমার হাতটা দরজার ওপাশ থেকে কেউ ধরে ফেললো। আমি চিৎকার দিতে পারছি না। এক টানে দরজার ভেতর নিয়ে গেলো।

দেখি আমি সেই জঙ্গলে পৌছে গেছি যেখানে সবাই আটকে গেছিলাম। চারদিকে তাকিয়েও কিছু পেলাম না।হঠাৎ দমকা হাওয়া আসতে লাগলো। ঠিক সেই সময় পেছন থেকে কেউ আমার গলা চেপে ধরে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। শুধু ছটফট করছিলাম। একটু পর মায়ের ডাক শুনলাম। যারিন এতক্ষন বাথরুমে কি করছিস? নিজেকে বাথরুমের ভেতর আবিষ্কার করলাম। আমি দেখলাম আমার সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে।

আমি:কিছু না মা গোসল করছি। কাল সারা রাত খুব গরম ছিল তো তাই। আমি তাড়াতাড়ি গোসল সেরে বেরিয়ে এলাম। মা খাবার জন্য তাড়া দিলো। খাবার টেবিলে বাবা বলছিলো।

বাবা:তোমার কলেজ তো খোলা। কাল থেকে কলেজে যাবে। আজ যেতে হবে না। কাল যা হলো। যদি শরীর আবার খারাপ করে।

আমি:জ্বি!আচ্চা।

একা একা রুমে বসে আছি। কি হচ্ছে আমার সাথে আর কেনই বা হচ্ছে। আমায় জানতেই হবে। কাব্য, অনামি,রাজু,ফারহান,আনিকা সবাইকে কাল কলেজে আসতে বললাম। নাহ এভাবে আর থাকা যায় না। পর দিন সকালে কলেজের জন্য বেরোলাম। সবাই এসেছে। একটা ক্লাস করে সোজা কেন্টিনে চলে গেলাম। সেখানে ওদের সব কথা খুলে বললাম।

রাজু:এই মেয়েটা কি চায় আমাদের কাছে। এখনও কেনো পিছু ছাড়ছে না।

আমি:জানি না। কি এমন ক্ষতি করেছি আমরা।

হঠাৎ সেখানের একটা গাছের দিকে চোখ পড়লো। সেই মেয়েটা আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সবাইকে সেদিকে দেখতে বললাম।সাথে সাথে মেয়েটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।

কাব্য:কিছুই কি করার নেই আমাদের?

এই প্রশ্নের কোন উত্তর আমাদের কাছে নেই যদি কিছু থাকে তবে তা হলো অনেক অনেক প্রশ্ন। ওদের সাথে কথা বলে অনেকটা হালকা লাগছিল। সাথে ভয়ও করছিল। নিজের কাছে নিজেই যেন বন্দি লাগছে। যেদিকে তাকাই সেদিকেই ভয়। ভয় আমায় গ্রাস করে ফেলছে। এভাবে কি বাঁচা যায়? এখন আমার জীবন আর সব সবয়ের মতো স্বাভাবিক না। কেন?এমন জীবন কেউ চায় না। আমিও না। কি চাও তুমি?

চিৎকার করে সেই মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলাম।সবাই আমায় সান্তনা দিলো। বাড়ি ফিরে এলাম। একা একা ঘরে বসে আছি। কিছু ভালো লাগছে না। একটা বই নিয়ে টেবিলে পড়তে বসলাম। পেছনে কেউ এলো মনে হলো। মা হাতে কিছু একটা নিয়ে আসছে। আমি আবার পড়ায় মনযোগ দিলাম। একটা গ্লাস টেবিলে রাখার আওয়াজ হলো। ভাবলাম হয়তো মা দুধ নিয়ে এসেছে। মা তোমায় কতবার বলেছি আমার দুধ ভালো লাগে না তবুও কেন থমকে গেলাম। টেবিলে একটা গ্লাস ভর্তি রক্ত। আমি গ্লাস টাকে এক টানে মাটিতে ছুড়ে ফেলে চিৎকার করি। মা দৌড়ে এলো।

মা:কি হয়েছে? দুধটা এভাবে ফেলে দিলি কেন?

আমি:মা এটা দুধ? এটাতো একি এটাতো সত্যিই দুধ। কিন্তু তাহলে আমি যে দেখলাম।

মা:কি হলো বল।

আমি:না মা আসলে মশা…..মশা মারতে গিয়ে গ্লাস টা পড়ে গেছে।

মা:অহ তাই বল। আমি ভাবলাম কি না কি। মা চলে গেলেন।

সেই মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললাম এভাবে কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছ তুমি?বলো জবাব দাও। একটু শন্তি দাও। আমাদের পিছু ছাড়ো। কেন এলে আমাদের জীবনে? কি চাই তোমার কি পরদিন সকালে কলেজে গিয়ে শুনি অনামি নিখোঁজ। কাব্য,আমি,রাজু,আনিকা,ফারহান সবাই মিলে অনামি দের বাড়িতে যাই। অদ্ভুত ভাবে কেউ জানে না কি ভাবে অনামি নিখোঁজ হল। অনামি নাকি তার ঘরেই ছিল।হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেলো।এমন কথা শুনে আমরা পুরোটা অবাক হই নি। কিন্তু ভয় পেয়ে যাই। আমরা বুঝতে পারি এটা সেই মেয়েটির কাজ। যেভাবেই হোক অনামিকে আমাদের বাঁচাতেই হবে। কিন্তু কিভাবে।

ঠিক তখনই ফারহান জানালো এখানে নাকি একটা মহিলা থাকেন। যিনি আত্বাদের সাথে কথা বলতে পারেন। তার কাছে গেলে কিছু হতে পারে। আমরা আর সময় নষ্ট না করে সেই মহিলার কাছে যাই। মহিলার বাড়িটির ভেতর অসম্ভব অন্ধকার। চারদিকে মোমবাতি জ্বলানো। আমরা ভেতরে যেতেই একটা মহিলা এসে আমাদের জানালেন সামনে গিয়ে বাম দিকে একটা ঘরে ওই মহিলাটি আমাদের অপেক্ষা করছেন। একটু অবাক হই আমরা এসেছি এটা উনি কিভাবে বুঝলো? আমরা সেই ঘরে ঢুকতেই মহিলটিকে দেখতে পেলাম। ভয়ানক দেখতে মহিলাটি।আমাদের দেখেই বললেন তাড়াতাড়ি এসো তোমাদের বন্ধু বিপদে আছে। আমরা বুঝতে পারলাম না তিনি কিকরে জানলেন এতো কিছু।

আমরা গিয়ে উনার সামনে বসলাম। তার হাতে একটা গোল বাল্বের মতো কিছু। তিনি বললেন অনামির আত্মাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, আমাদের ভেতর কাউকে গিয়ে সেই আত্মাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আমাদের মধ্য কে সেই আত্বার রাজ্জে যেতে চায়। যেখানে অনামিকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। সবাই ভয় পাচ্ছে। কিন্তু তাও কাব্য বলল ও যাবে। আমি না করলাম। কারন সেই মেয়েটিকে প্রথম থেকেই আমি দেখতে পাচ্ছি আর এখনও আমার সামনেই বেশি আসছে।তাই আমারই যাওয়া ঠিক হবে। হয়তো আমি কিছুএকটা করতে পারবো।

কাব্য:কিন্তু তুই যে ভয় পাস।

আমি:ভয় কি তুই পাচ্ছিস না? হ্যাঁ আমি ভয় পাই কিন্তু যানিনা কেন আমার মনে হচ্ছে আমি পারব। তাই আমিই যাব। তখন মহিলাটি বলে উঠল..

মহিলা:আমার কথা মনযোগ দিয়ে শুনো। তুমি সেখানে গিয়ে একটি দরজা পাবে। এই নাও এই পাথর এটা হাতে রাখবে। তুমি সেখানে গিয়ে যাই দেখনা কেন আত্বা দের সামনে গিয়ে যাই হোক এই পাথর যেন তোমার থেকে আলাদা না হয়। তাহলে অনেক বড় বিপদ হতে পারে। সেখানে গিয়ে তুমি প্রথমে তুৃমার বন্ধু কে খুঁজবে।যদি খুজে পাও তবে তার হাতে এই তাবিজ টা বেঁধে দেবে। আবার সেই দরজা দিয়ে যত তারাতারি সম্ভব সেখান থেকে চলে আসবে।

আমি:কিন্তু আমি ওকে রেখে চলে এলে তো ও সেখানেই আটকে থাকবে।

মহিলা:ভুলে যেও না তোমার আত্বা শুধু তোমার বন্ধুর আত্বার সাথে দেখা করছে। তার শরীর এখনও ওদের কাছে কিন্তু কোথায় তা সে নিজেই জানাবে। তবে যদি তুৃমি এই তাবিজটা তার হাতে বাঁধতে না পারো তাহলে সে তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না। আর তোমরাও তোমাদের বন্ধুকে আর পাবে না। তুমিকি যেতে প্রস্তুত?

আমি:হ্যাঁ আমি প্রস্তুত।

তিনি আমায় একটা খাটে নিয়ে শোয়ালেন আর আমার মাথায় একটা মুকুটের মতো কিছু একটা পড়িয়ে দিলেন। আমায় চোখ বন্ধ করতে বললেন। আমি তার কথা শুনে চোখ বন্ধ করলাম। ঠিক সেই সময় নিজেকে খুব হালকা অনুভব করলাম যেন আমার ওজন ১০০ভাগ এর ১ ভাগ ও নয়। একটু পর একটা আলো যেন আমায় হাওয়ার বেগে নিয়ে যাচ্ছে। আমার চোখে শুধু সাদা ধবধবে আলো। একটু পর একটা দরজা দেখতে পেলাম। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।

এটা কেমন জগৎ?সূর্য সেখানে লাল আলো ছড়াচ্ছে। চারদিকে কোনো মানুষ নেই আছে শুধু ভয়ংকর সব আত্বা। তারা আমায় যাতে দেখতে না পায় তার জন্য আমি লুকিয়ে পড়তে যাই। ঠিক সেই সময় সামনে এক বিসাল বড় আর ভয়ংকর দেখতে কি যেন একটা দাড়িয়ে ছিল না মানুষ না পশু আর না কোনো প্রাণী, অদ্ভুত দেখতে। আমি সোজা তার সামনে গিয়ে পড়লাম। ও টা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি ভাবছি দৌড় দেবো,নাকি আবার সেই দরজা দিয়ে ফিরে আসবো।

কিন্তু সেই। আত্বাটা আমায় কিছু বলল না উল্টো ওটার পেছনে থাকা একটা দরজা খুলে দিলো। বুঝলাম ও বোধয় দারোয়ান। মানুষের মতো ্ভূতেরাও যে দারোয়ান রাখে জানতাম না। হিহিহি আমার ভিষণ হাসি পেল।কিন্তু আত্বাটা বুঝলো না কেন আমি মানুষ? যাক বাবা এতসব ভেবে কাজ নেই। আমি একটু রাগি ভাব নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। চারদিকে এত সব ভূতের ভেতর আমি অনামিকে কোথায় খুঁজব? এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে অনেক গুলো ভূত একসাথে জরো হয়েছে। বিষয় টা দেখতে আমিও উকি দিলাম।

আরে এতো মানুষের থেকে কিছুতেই কম নয়। দেখি সেখানে দুটো ভূত মিলে নাচ গান করছে। হায়রে ভূতের নাচ জীবনে এটাই দেখার বাকি ছিল আজ তাও দেখে নিলাম। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। একটা বিশাল বড় বাড়ির মতো। অই ভূতের বাড়ি যেমন হয় আরকি! সেখানে কোনো আত্বাকেই বেশি যেতে দেখলাম না। আমি যেতে চাইতেই আমায় আটকে দিলো। বলল এখানে প্রবেশ নিষেধ। আত্বা গুলো দেখি আমাদের মতোই কথা বলে। আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম কেন ঢুকতে পারবো না? আত্বা বলল এখানে জীবিত মানুষ দের আত্বা বন্দি করে রাখা হয় তাই যে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। মনে মনে ভাবলাম নিশ্চই অনামির আত্মাকে এখানে বন্দি করে রেখেছে ওরা। কিন্তু কি আর করা ভূতের সাথে কে তর্ক করবে? কিন্তু আমার হাতে সময় নেই। আমাকে যে সেখানে যেতেই হবে।

আমি ওই আত্বার সামনে থেকে চলে আসি। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। এদিকে আত্বাদের মধ্য কয়েকটা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো । আমি তো ভয়ে মরেই যাচ্ছি। মনে মনে ভাবছি বুঝেই ফেলল কিনা আমি মানুষ। সেই সময় ওরা আমায় জিজ্ঞেস করলো কে আমি। কিছুই মাথায়। আসছিল না কি বলবো। বললাম। আমি যারিন।ভূতেরা হাসিতে ফেঁটে পড়লো।

ভূত:এটা কেমন নাম।

বলে হাসিতে ফেটে পড়ছিলো। অনকেক্ষন মজা নিলো। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। যদি এদের কাজে লাগাতে পারি তবে নিশ্চই আমি সেখানে প্রবেশ করতে পারব। আমি ওদের জিজ্ঞেস করি তোমাদের নাম কি?

একজন বললো আঙ্গারচিমুনাকি, আর একজন বলল মুসাকারুগাফরুনি। আমি হেসে বলতে লাগলাম বাহ তুমাদের নাম সুন্দর কিন্তু একজনের নাম বেশি সুন্দর বলতো কার?

আঙ্গারচিমুনাকি বললো তারটা বেশি সুন্দর আর মুসাকারুগাফরুনি বললো তারটা। এই নাম নিয়ে দুই ভূত ঝগড়া করতে লাগলো। এ বলে আমার টা ও বলে আমার টা। গন্ডগোল দেখে সেই দরজার ভূত টা এগিয়ে এলো। এটাই তো চাইছিলাম এতক্ষণ। এই ফাঁকে আমি গিয়ে সেই ঘরে ঢুকে পরি।

চারদিকে অনেক আত্বা বন্দি হয়ে আছে। সব জীবন্ত মানুষের কিন্তু অনামির আত্বা কোথায়। অনেক্ষন খুঁজার পর এক দিকে দেখি একটা মুখ চেনা চেনা লাগছে। হ্যাৃ এটাই তো অনামি। আমি দৌড়ে অনামির কাছে যাই ওকে ডাকি কিন্তু কেনো সারা না পেয়ে তাবিজ টা বাঁধি। হঠাৎ একটা আওয়াজ পাই।

হঠাৎ পেছন থেকে আওয়াজ পাই। দেখি সেই দারোয়ান ভূতটা আমায় দেখে ফেলেছে। ওটা আমায় ধরতে এলে আমি দৌড় দিই। সেই ঘর থেকে বেরনোর সময় আমার হাত থেকে পাথর টা পড়ে যায়। সাথে সাথে দেখি সব আত্বা আমার দিকে তেড়ে আসছে। আমি পাথর টা আবার হাতে নিতে চাই কিন্তু পারি না আমায় সেসব আত্বারা ঘিরে ধরেছে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় এই জগৎ থেকে বেরোতে হবে। আমি দৌড়াচ্ছি। যেদিকেই যাই সেদিকেই আত্বা। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। উপরওয়ালার নাম নিয়ে আবার ছুটতে লাগলাম। সব আত্বা আমার পেছনে আসতে থাকে। আমি প্রথম গেইট এর সামনে আসতেই আগের সেই ভয়ানক আত্বাটি আমায় ধরে ফেলে।

আত্বা:তোর এত বড় সাহস আত্বার জগৎ এ প্রবেশ করেছিস। তোকে আজ মরতে হবে।বলেই ধারালো নখ দিয়ে আমার হাতে একটা ক্ষত করে দেয়। হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে। কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমাকে যেভাবেই হোক এখান থেকে বেরোতে হবে। পৃথিবীতে যাওয়ার দরজাটির দিকে খেয়াল করতেই দেখলাম সেটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যাই হোক আমায় যেতেই হবে। সব শক্তি এক করে আমি আত্বা টাকে ধাক্কা দিই। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

আত্বা কে আমি ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিই। বিশ্বাস থাকলে সব হয়। মানুষ সব পারে তাই হয়ত এইটাও আমি পারলাম। হয়ত এজন্যই মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আমি দৌড়ে দরজার এপাশে চলে আসি। সাথে সাথে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আমি জেগে উঠি। দেখি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন সেই মহিলাটি আমার হাত ধরে আছে। হাতের দিকে চেয়ে দেখি রক্ত ঝড়ছে। তিনি বললেন এবার অনামি কে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। তবে আজ না কারন তোমার হাতের ক্ষতটা অনেকটাই গভীর। তাই পরের দিন আসতে বললেন।নসবাই মিলে আমায় হাসপাতালে নিয়ে বেন্ডেজ করে বাড়িতে পৌছে দেয়।

আমি শুধু চিন্তা করছি বাড়িতে ঢুকলেই তো মা জিজ্ঞেস করবেন হাত কিভাবে কাটলাম।কি বলব তখন? এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢুকি। ঠিক তখনই মা এসে কান্নাকাটি শুরু করল। বার বার জিজ্ঞেস করছে কিভাবে এমন হল। আমি বললাম একটা ছোট এক্সিডেন্ট হয়েছে আর কিছুই নয়। মা আমাকে ঔষধ খাইয়ে দিলেন। আর একটা ঘুমের টেবলেট যাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারি। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।

হঠাৎ কেন জানিনা মনে হলো অনামি আমায় ডাকছে।আমি চোখমমেলে দেখলাম অনামি আমার ঘরের এক পাশে দাড়িয়ে বলছে যারিন খুব বিপদ খুব বিপদ যাস না সেখানে খুব বিপদ। একটু পরেই ঘরের অন্য পাশে কাব্য,আনিকা,রাজু,ফারহান সবাইকে দেখতে পেলাম।সবাই যেন মৃত কারো দেহে যেন প্রাণ নেই। এবার আমার খাটের ঠিক পাশেই আমি সেই মহিলাকে দেখতে পেলাম যিনি আমায় আত্বাদের দুনিয়ায় যেতে সাহায্য করেছিলেন।

দেখতে যেন আজ আরও ভয়য়ংকর লাগছে। তার ঠিক পেছনেই সেই মেয়েটা আমায় দেখে হাসছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ স্বপ্ন টা ভেঙ্গে গেল। এসব কি দেখেছি আমি? এসবের মানে কি।নভাবতে ভাবতে রাত কেটে গেলো। ঘুমোতে পারলাম না। পরদিন আমি বাইরে বেরোবার জন্য তৈরি হতেই বাবা বললেন আজ কোথাও যেতে দেবেন না।আমার হাতের ক্ষতটার কারনে। আমি অনেকবার বোঝা বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয় নি। বাবার কথায় সেদিন আর কোথাও গেলাম না। সারা দিন আমি শুধু অনামির কথা ভেবেছি। ঠিক তখনই কারো হাসির আওয়াজ পাই। আমি জানি এটা সেই মেয়ের। আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমি ওর দিকে ফুলদানি ছুড়ে মারি কিন্তু সেটা দেয়ালে লেগে ভেঙ্গে যায়।

মেয়েটি আবার হেসে বলতে থাকে যারিন তোকে মরতে হবে। মরতেই হবে হাহাহাহা।মএর পর উধাও হয়ে যায়।আমি ভয় পেয়ে মায়ের কাছে চলে যাই। একটু পর ভাবছি মেয়েটি এই কথা কেন বলল? আমাকে মেরে কি পাবে সে?। পরদিন সকালে আমি সবাইকে ফোন দিই। সবাই কলেজ থেকে একসাথে সেই মহিলার কাছে যাই। গিয়ে দেখি মহিলাটি ১ টা পুতুল নিয়ে আসন করে বসে আছে। যার চারদিকে মোমবাতি আর একটা মেয়ের আকৃতি আঁকা। আমাদেরমদেখেই বলল…

মহিলা:আজ তোমরা তোমাদের বন্ধু কে ফিরে পাবে। তার সাথে সেই মেয়ের। আত্বা থেকে মুক্তি পাবে। আমি খুব খুশি হই।মহিলাটি আবার বললেন। যারিন তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।

আমি:কি কাজ?

মহিলা:যেহেতু তুমি সেই আত্বাদের জগৎ এ গেছ তাই তোমাকেই এই কাজ করতে হবে। কাজটা খুব কঠিন।।তুমি কি পারবে?

আমি:হ্যাঁ,সেই মেয়ের থেকে মুক্তি পেতে আর আমার বন্ধু কে বাঁচাতে আমি সব পারব।

মহিলা:তাহলে শোনো। তোমাকে কাল রাত আমাবস্যাতিথীতে সেই জঙ্গলে আবার গিয়ে একটা বড় গাছ দেখতে পাবে সেই গাছে এই পুতুল ঝুলিয়ে এর শরীরে ছুড়ি ঢুকাতে হবে। পারবে?

আমি:আমাকে পারতেই হবে কিন্তু ১ টা পুতুল কেন? মহিলা:কারন এই পুতুল সেই মেয়েটার প্রতিক। একে শেষ করলে সেই মেয়েটির কু প্রভাব দূর হয়ে যাবে। এতে তোমরাও মুক্তি পাবে আর তোমাদের বন্ধু কেউ ফিরে পাবে।

আমি:তাহলে কালই আমি সেখানে যাবো।

মহিলা:কিন্তু সেখানে তোমায় একা যেতে হবে।

আমি:হ্যাঁ আমি যাব। সেই মেয়ের থেকে মুক্তির এটাই শেষ পথ। আমি বাড়িতে চলে আসি। রাতে মাকে আমার সাথে শুতে বলি। মা ঘুমিয়ে গেলে পায়ে হাত রেখে মায়ের থেকে দোয়া চেয়ে নিই।

আমি:মা কাল আমি এক এমন জায়গায় যাচ্ছি যেখানে অনেক বিপদ মা। আমায় তুমি দোয়া করো যেন আমি সফল হই। আমার বন্ধুদের যেন এই মেয়ের হাত থেকে বাঁচাতে পারি। আমি ঘুমাতে যাই। কিছুক্ষন পর মনে হলো অনামি আমায় ডাকছে।

আবার বলছে যাস না যারিন ওই জঙ্গলে যাস না খুব বিপদ। যাস না। ঠিক সেই সময় সেই মহিলাটা অনামির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আবার কেন সেই স্বপ্ন দেখলাম। তবে কি আমার জন্য বড় কোন বিপদ লুকিয়ে আছে?

জানিনা কেন এমন মনে হচ্ছে। খুব অস্থির লাগছে। সকাল হতেই কাব্য,আনিকা,রাজু, ফারহান আমায় নিতে বাসায় এলো। আমি মা বাবা কে বললাম আমরা ঘুরতে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে মা বাবার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে বেরিয়ে এলাম সেই অভিসপ্ত জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। পুতুলটা সেই মহিলার থেকে আগেই কাব্য নিয়ে এসেছে। যেতে যেতে কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। পুতুলটার দিকে ভালোভাবে তাকাই। কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। বিকেলে আমরা সেই জায়গায় পৌছলাম আমায় জঙ্গলে রাতে যেতে হবে তাই আমরা আবার সেই বাংলোতেই ততক্ষন অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে

আমরা সবাই গাড়িতে করে সেই জঙ্গলের সামনে নামলাম। এবার বাকি রাস্তা আমায় একাই যেতে হবে। কিন্তু একা যেতে আমার প্রচন্ড ভয় করছে। কিন্তু অনামিকে বাঁচাতে আর সেই মেয়ের থেকে আমাকে মুক্ত হতে হলে যেতেই হবে। আমি এগিয়ে যাচ্ছি। আমাবস্যার রাত। চারদিকে গভীর অন্ধকার। এর মধ্যে একটা টর্চ নিয়ে আমি এগোচ্ছি। চারদিক থেকে বিভিন্ন রকম শব্দ আসছে। ভয় হচ্ছে খুব। সেই শব্দ গুলোকেও সন্দেহ হচ্ছে আদৌকি আমি শব্দ করছি নাকি সেই মেয়ের আত্মা নাকি অন্য কেউ। কিছু দূর আসার পর মনে হচ্ছে কেউ আমার পিছু নিয়েছে। কিন্তু এখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। কারো আসার কথাও নয়।

এমন জঙ্গলে কে আসবে? প্রায় আধ ঘন্টা হাঁটার পর একটা বড় গাছ দেখতে পেলাম। আগের বার যখন এসেছিলাম তখনও এত বড় কোন গাছ দেখিনি। আমি বুঝতে পারলাম এই সেই গাছ যেখানে আমায় পুতুলটা বেঁধে ছুড়ি দিয়ে শেষ করতে হবে। আমি সেই মহিলার কথা মতো পুতুলটা গাছে ঝুলিয়ে দিলাম। এবার যেই ছুড়িটা হাতে নিয়েছি অমনি পেছন থেকে কারো ডাক শুনলাম।পেছনে তাকিয়ে দেখি অনামি। ভাবলাম হয়ত আমার চোখের ভুল। কিন্তু না এ যে সত্যিই অনামির আত্মা।আমায় বলছে..

অনামি:যারিন পুতুল টা ফেলে দে পালিয়ে যা তোর অনেক বিপদ। পালা তাড়াতাড়ি। পালিয়ে যা তুই ওই পুতুল টা ফেলে দে ।এটা তোর প্রতিরুপ। একে শেষ করলে তুইও শেষ হয়ে যাবি। ওরা তোকে ফাঁদে ফেলছে।

আমি:কে ফাঁদে ফেলেছে?

অনামি:তাহলে শোন। আমরা যেদিন বনে এসেছিলাম সেদিন সবাই মারা গেছে। সেই মেয়েটি আমাদের সবাইকে মেরে ফেলেছে। আর তুই যাদের নিয়ে এসেছিলি তারা আত্মা। তাদের সবাইকে সেই মেয়ে টি বস করে ফেলেছে। এখন ওরা তোকে মারতে চাইছে। আমার কথা শোন। পালা এখান থেকে। পালিয়ে যা।

এসব কি বলছে অনামি। হঠাৎ অন্য দিক থেকে আবার অনামির আওয়াজ। চেয়ে দেখি আর একটা অনামির আত্মা।এ কি করে সম্ভব। একজন মানুষের দুটো আত্মা কিভাবে হয়?

২য় আত্বা টি বলছে যারিন এমন করিস না। ছুড়ি দিয়ে ছিন্ন করে দে এই পুতুল। শেষ করে দে সেই মেয়ে কে। ও আমার আত্মা কে বন্দি করে রেখেছিল। তোর তাবিজের জন্য আমি এখানে আসতে পেরেছি। আমি এখন কি করবো। কার কথা শোনা উচিৎ? না ভাবতে পারছি না। কি করবো এখন। বিষয়টা একটু ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।

যদি ওই মেয়ে অনামির আত্মা বন্দি করে রাখে তবে অনামির আত্মা এখানে কি করে আসবে। আসতে পারবে তখনই যখন আমি তাবিজ টা বেঁধে দেব। যদি আমার বন্ধুরা সবাই ওই মেয়ের বস হবে তাহলে ওই মহিলার কাছে কিছুতেই নিয়ে যাবে না। কারন তারা চাইবে না আমি ওই মেয়ে কে শেষ করি। এর মানে হে তার মানে একটাই এই পুতুল কে যেভাবেই হোক আমায় শেষ করতে হবে আমি ছুড়ি চালাতে চাইতেই অনামির প্রথম আত্মা আমার হাত টা ধরে ফেলে।চোখের পলকেই ওর রুপ বদলাতে থাকে। একি এ তো সেই মেয়ে। ও চাইছিল যাতে আমি পুতুল টাকে শেষ না করি। তাহলে ওই অনামির রুপ ধরে আমায় ভুল বুঝাচ্ছিল। ঠিক তখনই অনামি সেই মেয়েকে আমার থেকে দূরে ঠেলে দেয়। মেয়েটা অনামির আত্বার ওপর ঝাপিয়ে পরে।

অনামি:যারিন যা করার তাড়াতাড়ি কর।

আমি আবার যেই ছুড়ি দিয়ে নিয়ে পুতুলটা কে শেষ করতে গেলাম সেই আত্বাটা বলল পুতুলকে কিছু করলে ওর সাথে সাথে অনামি ও মারা যাবে। এখন আমি কি করি। আমি কিছুতেই এটা হতে দিতে পারি না।

অনামি:যারিন আমার যাই হোক তুই পুতুল টাকে শেষ কর। অন্তত আমার আত্মা এতে শান্তি পাবে। তোরাও মুক্তি পাবি। শেষ কর যারিন আমার জন্য!

আমি:না এভাবে তোকে মরতে দিতে আমি পারি না।

অনামি:তুই কি ভেবেছিস পুতুলকে কিছু না করলে ও আমায় ছেড়ে দেবে? কখনই না। আমার সাথে সাথে তোরাও শেষ হয়ে যাবি। একটু ভাব আমার জন্য সবাইকে কি করে তুই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবি বল। তুই পুতুল কে শেষ কর।

আমি:কিন্তু।

অনামি:কোন কিন্তু না যা বলছি কর। এতে আমিও শান্তি পাব। শুধু আমার বাবা মা কে বলিস আমি ওদের খুব ভালোবাসি।

আমি:হ্যাঁ বলবো অনামি।

আমি পুতুল টার সরিল ছুড়ি দিয়ে ছিন্ন করে দিলাম। সাথে সাথে মেয়েটারর আত্ম চিৎকারে সারা বন জেগে উঠলো। মেয়ের শরীর ফেঁটে যাচ্ছে চামড়া খসে পড়ছে। আস্তে আস্তে মেয়েটা মাটিতে মিশে গেল। সাথে সাথে অনামিও মিলিয়ে গেল। যাওয়ার আগে দেখতে পেলাম অনামির মুখে এক অদ্ভুত সুন্দর হাসি। তোর এই ঋন আমরা কখনও শোধ করতে পারবো না রে। ভালো থাকিস। কখনও ভুলব না তোকে। আমি জঙ্গল থেকে ফিরে এলাম। যা ঘটল সবাইকে বললাম। সেদিন রাতেই আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। আমরা আজ মুক্ত কিন্তু এই মুক্তির বদলে অনামিকে হারাতে হলো। তুই সত্যিই আমাদের প্রকৃত বন্ধু অনামি।

আমরা অনামির পরিবারকে সবটা জানালাম সাথে আমাদের পরিবার কেউ। তারা অবাক হলেও সেদিন আর কিছুই বলে নি। এক নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেছিল সবার মাঝে।আজ প্রায় ১ বছর পাড় হয়ে গেছে। আমরা সবাই এখনও একসাথে শুধু যদি কেউ না থাকে সে হলো অনামি। এখনও আকাশের দিকে তাকিয়ে অনামিকে ডাকি।

অনামি,শুনতে পাচ্ছিস! আজও তোকে খুব মিস করি।তোর জায়গাটা আজও খালি পড়ে আছে। আসবি কি আবার ফিরে এই বন্ধুদের মাঝে?

প্রশ্নটা রয়েই গেল। আজও হয়ত ওই আকাশ থেকে অনামি আমাদের দেখছে আর হয়ত হাসছে।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত