জ্বীন দেখতে কেমন

জ্বীন দেখতে কেমন

আজ কদিন ধরে আমরা বন্ধুর ব্লগ বন্ধুরা জ্বীনের গল্পের জন্য তাড়া দিচ্ছে। সেদিন বেড়াতে যেয়ে আমি তাদের সাথে একটা জ্বীনের গল্প শেয়ার করেছিলাম। আমি জ্বীনে বিশ্বাস করি কিনা জানি না কিন্ত ছোটবেলা থেকেই আমার জ্বীনের গল্প শোনার বিশেষ আগ্রহ ছিল। আমরা গ্রামে বেড়াতে গেলে মা বলতেন বাঁশ বাগানে চুল ছেড়ে যাবে না, জ্বীনে ধরবে। আমি গ্রামের আত্নীয়দের জিজ্ঞেস করতাম কাকে জ্বীন ধরে, তারা বলতেন সুন্দরী মেয়েদের আর সুন্দর ছেলেদের ধরে পরী। আমার জীন দেখার খুব শখ ছিল, ভাবতাম কেন তারা শুধু সুন্দরী মেয়েদের উপর ভর করে? ঊঠতি বয়সে ভাবতাম আমি কি সুন্দর না? তাহলে চুল খোলা রেখে এত বাঁশ বাগানে হাঁটলাম কেন জ্বীন আমার উপর ভর করল না?

ছোটবেলায় আমার এক দুঃসর্ম্পকের খালু ছিলেন প্রায় আসতেন ঢাকায় ব্যবসায়িক কাজে, থাকতেন আমাদের বাড়িতে, ওনার কাজ ছিল প্রতি সন্ধ্যায় আমাদের তিন ভাইবোনকে জ্বীনের গল্প শুনানো। খালু থাকতেন সাতক্ষীরায়, ওনার বাবা সেই সাতচল্লিশ সালে একটা হিন্দু জমিদার বাড়ি কিনেছিলেন, খালু এখন তার পরিবারের সাথে সেই বাড়িতেই থাকেন।

খালু বলেছিলেন ওনাদের বাড়িতে নাকি একটা ঘর আছে যেটা তালা বন্ধ থাকে কেউ কোন দিন সে ঘর খোলেও নাই ভয়ে, সেই ঘরে নাকি জীন আছে, অনেক রাতে সেখানে কেউ কেউ নুপুরের ঝম ঝম আওয়াজ শুনতে পান। আমার খুব শখ ছিল খালুর বাড়িতে যেয়ে সেই ঘরটা দেখার, কিন্ত যাওয়া হয় নাই। একদিন নাকি ওনাদের বাড়ীর উঠানে হঠাৎ মাঝরাতে একটি মেয়েকে পাওয়া যায়, মেয়েটির জ্ঞান ছিল না। বাড়ির লোকজন দেখেতে পেয়ে প্রথমে ভয় পায় পরে আল্লাহর নাম নিতে নিতে মেয়েটির কাছে গিয়ে পানির ছিটা দেয় চোখে মুখে, মেয়েটির জ্ঞান ফিরলে মেয়েটি জানায় সে ঘুমিয়ে ছিল তার ঘরে এবং এখানে কি ভাবে আসলো সে নিজেই সেটা বুঝতে পারছেনা। মেয়েটির ভাষ্য অনুযায়ী তার বাড়ি ছিল পাশের গ্রামে।

একবার নানা বাড়ী গিয়ে আরও মজার একটা কাহিনী শুনলাম, এক ছেলে নাকি ছোটবেলায় হারিয়ে গিয়েছিল, খুব খোঁজাখুজির পরও কোথাও তাকে পাওয়া যায় নাই। হঠাত সেই ছেলেকে খুঁজে পাওয়া গেল ১০ বছর পর। ছেলেটি যখন হারালো তখন ছেলেটির বয়স ছিল আট, আঠেরো বছর বয়সে ছেলেটি ফিরে এসেছে। ছেলেটি বলছে সে নাকি পরীদের দেশে ছিল। ছোটবেলায় তাকে নাকি কোন পরী উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তাদের দেশে, তারপর তাকে নাকি পরীটা বিয়েও করেছিল, তাদের একটি দুই বছরের বাচ্চাও আছে।

কিন্ত ছেলেটির নাকি ওখানে থাকতে ইচ্ছে করেনা, পরীটি দেখতে এত সুন্দর তা নাকি বর্ণনা করা যায় না, কিন্ত সমস্যা হচ্ছে এত সুন্দর পরীর দিকে বেশীক্ষণ তাকালে নাকি শরীর খারাপ হয়ে যায় আর ওই পরীর মাথায় এত চুল যে সেই চুল তার বুকে পড়লে সে নিঃশ্বাস নিতে পারে না, কষ্ট হয়। তাই সে পরীর কাছে অনেক অনুনয় করে চলে এসেছে। পরী নাকি মাঝে মাঝে ওর কাছে আসবে, শুনেছিলাম যেদিন পরী আসে সেদিন সে সন্ধ্যা হতেই দরজ়া জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। আমার খুব শখ ছিল দেখার কি ভাবে পরী বউ তার মানুষ স্বামীর কাছে আসে।

আমার এক ভাবী আছেন যিনি ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় খুব আধুনিক একটি ফ্লাটে থাকেন। ভাবী মাঝে মাঝে জ্ঞান হারান এবং অসুস্হ থাকেন। ভাবী একদিন আমাকে বলেন যে তার উপর আর তার ছোট বোনের উপর জ্বীনের আসর আছে। ভাবী বলেন ঊনি ছোটবেলায় খুব সুন্দরী ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই নাকি তার উপর জীনের আসর। এসব গল্প শুনে আমি মাঝে মাঝে ভাবতাম জীন মানুষের উপর ভর করে কি করে? শুধুই কি ভয় দেখায় নাকি অন্য কোন রহস্য আছে !!

আমার ননদের শাশুড়ি নাকি একদিন তাদের গ্রামে খুব ভোরে নামাজ পড়তে যেয়ে সাদা আলখেল্লা পড়া কাকে দেখেন এবং তিনি কে এটা জিজ্ঞেস করা মাত্রই সেই আলখেল্লা পড়া মানুষটি মিলিয়ে যায়। আমাদের সবার এ রকম হাজার জ্বীনের গল্প শোনা আছে। জ্বীনের গল্পে আমার আগ্রহ আছে বলে যে এমন একটি জ্বীনের গল্প আমি জীবনে শুনব আমি তা কখনো ভাবি নাই।

এই অভিনব জীনের গল্পটি শুনালেন আমার স্বামী। ঊনি পেশায় চিকিৎসক , খুব সাদামাটা মানুষ। নিজের পেশায় একটু বেশী ডেডিকেটেড। উনি বছর সাতেক আগে শ্রীপুরে একটি গ্রামে ফ্রি চিকিসা করতে যেতেন। একদিন কালো বোরখা পড়া একটা মেয়ে তার কাছে আসল, আপাদমস্তক বোরখা ঢাকা মেয়েটি আলট্রাসনো করতে এসেছে। ডাক্তার সাহেব আলট্রাসনোর প্রবটি তার পেটে দিয়ে দেখলো তিন মাসের একটি ফিটাস।

ডাক্তার সাহেব স্বভাবত জিজ্ঞেস করলেন “কার সাথে এসেছেন”? মেয়েটি বলল “ননদের সাথে” ডাক্তার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন “আপনার স্বামী আসেন নি?”

মেয়েটি বলল ঊনি বিদেশে থাকেন ডাক্তার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন “কবে বিদেশ গেলেন। মেয়েটি বলল “পাঁচ বছর আগে। ডাক্তার সাহেবের মাথা ঘুরে গেল, উনি আবার পরীক্ষা করলেন এবং দেখলেন যে মেয়েটা সত্যিই তিন মাসের প্রেগন্যান্ট।

ডাক্তার সাহেব আবার বল্লেন “আপনি কি জানেন যে আপনি সন্তান সম্ভবা? তিন্মাস চলছে আপনার, আপনি এখন কি করবেন?” ডাক্তার সাহেব ভেবেছিল মেয়েটি কেঁদে কেটে একাকার হবে এবং সাহায্যের জন্য অনুরোধ করবে।

কিন্ত মেয়েটি বেশ নির্লিপ্ত ভাবে বলল “স্যার আমার সাথে জ্বীনের আসর আছেতো জ্বীনেই কাজটা করছে। ডাক্তার সাহেব তো হতবাক ! এই কথা বলার সময় মেয়েটির গলা বা চোখের পাতা কিচ্ছু কাঁপলো না। এরপর মেয়েটি খুব ঠান্ডা গলায় বলল, “ স্যার আমি এখন কি করব?

জ্বীনের কথা শুনে আর মেয়েটির শঠতা দেখে ডাক্তার সাহেবের ভীষণ রাগ হল, সে রেগে গিয়ে বলল “কেন আপনার জ্বীনকেই জ়িজ্ঞেস করুন এখন আপনি কি করবেন”

বাসায় ফিরে ডাক্তার সাহেব আমাকে বলল চিন্তা কর প্রত্যেকটা মেয়ের যদি এরকম জ্বীনের আসর থাকে তবে আমাদের মানে পুরুষদের কি হবে !!!

আমারো খুব ইচ্ছে হল জ্বীন দেখতে পারলাম না অন্তত জ্বীনের বাচ্চাটা কেমন হয় দেখার কিন্ত বরাবরের মত এবারো আমার দেখা হল না।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত