গল্প হলেও সত্যি

গল্প হলেও সত্যি

এটা কোন গল্প নয় একটি বাস্তব সত্য ঘটনা। আজ থেকে প্রায় ৫বছর আগের ঘটনা।আমার এক ফুফির ইন্তেকালের কথা শুনে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি।

এসে দেখি আমাদের সবার মায়া কাটিয়ে উনি চলে গেছেন কবর দেশে। যাইহোক,তার মৃত্যুর সংবাদ মাইকে প্রচার করার পর কবর খুড়তে কিছু লোক ব্যস্ত হয়ে পড়ে।কবরের বাশের বন্দোবস্ত করা হলো আমাদের বাশবাগান থেকে। আমাদের এক সম্পর্কিত দাদার হাতে ন্যাস্ত হলো কবরের বাশের চাঙি,বেড়া ইত্যাদি।

তিনি বাশগুলো কাটার পর দেখলেন একটা বাশের অর্ধেকটা কোন কাজের লাগছেনা তাই তিনি সেই অর্ধেক বাশের বাতি দিয়ে বসার জন্য উচু টঙ (রংপুর এলাকায় বাশনির্মিত উচু বসার স্থান) বানালেন। মূল কথায় আসা যাক,লাশকে গোসল থেকে শুরু করে কাফন এবং জানাযা পড়ানো হলো।জানাযা শেষে লাশটিকে খাটিয়াতে করে কবর পর্যন্ত আনা হলো।

কবরে মাটি দেয়া শেষ হলে মোনাজাত করার পর বাড়ির মুরব্বিরা আমাদের চার ভাইকে দায়িত্ব দিলেন খাটিয়াটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পানি দিয়ে পরিস্কার করতে। কথামতো আমরা চার ভাই খাটিয়াটি ঘাড়ে করে নিয়ে যাচ্ছি।পথিমধ্যে মনে হচ্ছে কে যেন খাটিয়াতে খুব জোড়ে ভর দিচ্ছে।তো আমি পিছনে ছিলাম, মনে করলাম সামনের দু’জন হয়তো ফাজলামো করছে।

তাই কিছু না বলে বাড়িতে গেলাম।বাড়িতে যাওয়ার পর ওদের বললাম, তোরা এরকম ফাজলামি করলি ক্যান ঘাড়তো ব্যাথা ধরে গেছে,এভাবে কেউ খাটিয়া ধরে সব ভর টুকু আমাদের দিকে দিয়েছিলি।আমার বড় ভাই রেগে গিয়ে বললো,তোরাইতো সামনের দিকে ভর দিয়েছিস আর উল্টা কথা বলতেছিস।একথা শুনে আমরা ৪ভাই হতভম্ব হয়ে গেলাম।

যাইহোক, গল্প এখানে শেষ হলেই পারতো।এই ঘটনার পর থেকে নতুন করে আবার ঘটনা ঘটতে লাগলো। আমার বড়আব্বা আর ছোট চাচা মোটরসাইকেলে করে মৃতের আত্মার মাগফেরাতের জন্য খতম ও ফকির মিসকিন দের খাওয়ানোর ব্যাপারে দাওয়াত দিতে গেছেন।

সন্ধ্যে নামবে ভাব এমন সময় বাড়িতে হৈহৈ রৈরৈ পড়ে গেলো যে আমাদের বাড়ির সামনের পুকুরে চাচারা অ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে গেছেন।বাড়ির সবাই তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কিছুই নেই। সবাই অবাক। যে খবর দিয়েছে সেই বড়আম্মাকে জিজ্ঞাসা করলাম কই, কিছুইতো হয়নি।উনি অবাক হয়ে বললেন, আমি যে এখনি দেখলাম সেটা কিভাবে ভুল হতে পারে।

এটা শুনে সবাই একটু চিন্তায় পড়ে গেল।রাতে চাচারা বাড়ি ফিরতেই তাদের এ বিষয়ে বলা হলে তারা বলেন,আমরা তো এইমাত্র বাড়ি ফিরলাম।তোমাদের মনে হয় মাথা খারাপ হয়েছে।এমন সময় ছোট চাচি চিৎকার শুরু করলেন।সবাই তার কাছে গেলে তিনি ভয়ে বলতে লাগলেন,যখন আমি বাইরে বারান্দায় দাড়িয়েছি তখন মনে হলো বাথরুমের চালা টিতে কে যেন মচমচ করে জোটে যাচ্ছে আর একটা টিন চালা থেকে বাথরুমের ভিতরে বিকট শব্দ করে পড়ে গেল।আমি কাছে গিয়ে দেখি, না কিছুই হয়নি সব আগের জায়গায় ঠিকমত আছে। এত কাহিনী ঘটার পর সবাই ঘুমাতে গেলাম।সকালে জোড়ে জোড়ে কথার শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।

ফ্রেশ হয়ে শুনতে গেলাম আবার কি ঘটলো?যা শুনলাম তাতে শিহরে উঠলাম।শুনলাম,যে দাদা কবরের অর্ধেক বাশ দিয়ে টঙ বানিয়েছিলেন তিনি রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারেন নি। রাতে যখন তিনি ঘুমাতে গেছেন পাশে তার স্ত্রী শুয়ে ছিলো।

মাঝরাতে হঠাৎ তার স্ত্রী চিৎকার করে ওঠে। দাদা বলেন, কি হয়েছে? উনি বলেন, কে যেন আমার হাত টেনে ধরেছিলো।বাহিরে আর থাকবোনা চলো ঘরে যাই। দাদা তার কথায় সম্মতি দিয়ে ঘরে গেলেন।ঘরের দরজা দিতেই তিনি দেখেন,তার ছেলের রিক্সাটি গাছের ফাক দিয়ে একবার সামনে যাচ্ছে একবার পিছনে যাচ্ছে।

কিন্তু মজার বিষয় হলো রিক্সায় কোন চালক ছিলোনা আর রিক্সাটি ছিলো তালা বদ্ধ এবং গাছগুলো ছিলো এলোমেলো। কিন্তু আজব বিষয় হচ্ছে তার ফাক দিয়ে কিভাবে একে বেবে রিক্সা চলে যাচ্ছে। আর অদ্ভুত ব্যাপারটা ঘটলো তখন যখন দরজা খোলা হলো,দেখা গেলো সব হের জায়গায় আছে।

এভাবে কয়েকদিন যাওয়ার পর খতমের আগের রাতে এক চাচা খতম খরচ বাবদ কিছু টাকা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার মোটরসাইকেলটি হঠাৎ করেই জঙ্গলের দিকে চলে যাচ্ছে যেখানে ফুফিকে কবর দেয়া হয়েছে।বলে রাখা ভালো আমাদের বাড়ির পিছনে পারিবারিক কবরস্থান তারপর রাস্তা তারপর আবার কবরস্থান। যাই হোক ফুফিকে মাটি দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় কবরস্থানে।

তো,সে ই চাচারা মোটরসাইকেলটি ফুফির কবরের দিকে চলে যাচ্ছে। তিনি অনেক চেষ্টা করার পরেও কন্ট্রোল করতে পারছেন না। তিনি ভয়ে মোটরসাইকেল মাপিতে ফেলে দিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে এসে হাপাতে হাপাতে সবাইকে ঘটনা খুলে বললেন।সবাই লাঠি নিয়ে কবরের কাছে গিয়ে অবাক হয়ে গেলো।

সবাই দেখলো,মোটরসাইকেলটি ডাবলস্ট্যান্ডে কবরের দিকে মুখ করে দাড়ানো,লাইট জ্বলছে এবং মোটরসাইকেল স্টার্ট হয়ে আছে।চাচা এটা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,আমিতো মোটরসাইকেল মাটিতে ফেলে দিয়েছিলাম এবং তাতে স্টার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো বলেই তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।

সকালবেলা ভালো একজন হুজুর ডেকে খতম শরীফ করার পর সব কিছু শান্ত হয়ে গেল…..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত