গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়না বছরখানেক হয়ে গেছে। সেই যে রোজার ঈদে গিয়েছিলাম আর যাওয়া হয়নি। বিদেশীদের সাথে কাজ করার মজা এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। বারোমাসে সাত মাস কাটাতে হয় এদেশ ওদেশ ঘুরে।আয় অবশ্য ভালোই। শুধু ভাল নয়, অনেক ভাল। খরচাপাতি যা লাগে তা করেও মাসে প্রায় দশ লক্ষ টাকার মত থাকে!! তারপর আবার ফ্রি ফ্রি অনেক দেশ ঘুরেছি।
কদিন ধরেই আমার মন আনচান করছে বাড়ি যাওয়ার জন্য। মায়ের বিশখানা চিঠি এসে গেছে। “বাবা তুই কবে আসবি? আমার আর একা ভাললাগেনা এত বড় বাড়িতে। অন্তত একটা বিয়ে করে বৌমাকে দিয়ে যা আমার কাছে। বসের কাছে ছুটি চাওয়ারও যোগাড় নেই।আমি অসহায়! আমি চুক্তিবদ্ধ। সারা দিন খালি ইয়ারফোনে গান শুনি।”কতদিন, দেহিনা মায়ের মুখ, হুনিনা সে কোকিল নামের কালাপাখির গান হায়রে পরান অনাকাঙ্খিতভাবে হঠাত্ অফিসে একটা সমস্যা বেধে গেল। আমার জন্য অবশ্য সেটা সমস্যা নয়। অফিসের লাইসেন্স নিয়ে কি যেন একটা গোলমাল বেধেছে। তো বস আমাকে ডেকে বললেন,”তুমি চাইলে একটু ছুটি কাটিয়ে আসতে পার। অনেকদিন হল ছুটি কাটাও না। ঝামেলাটা শেষ হলে তোমাকে মেইল করব। ok?” আমি মুখে বলি, ok. আর মনে মনে বলি,”হাদারাম একটা। সারাটা বছর খাটিয়ে মারে। এক দিনও ছুটি দেয়না। আর এমন ভাব করছে যেন ছুটি সে ইচ্ছে করেই দিচ্ছে। প্যাঁচে পড়ে নয়।”
স্যার,আমি তাহলে আসি। ঠিক আছে। তুমি যাও। গুডবাই স্যার বলেই লাফাতে লাফাতে বের হয়ে পড়লাম বসের রুম থেকে। ট্রেনে করে রওনা দিয়েছিলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে। ট্রেন এসে পৌছায় রাত ২ টায়। সাথে টাকা পয়সা আছে অনেক। শহর হলে ভয় ছিল। কিন্তু আমাদের এই গ্রামে ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি কমই হয়। গ্রামের যা অবস্থা। ষ্টেশন রোডটা পর্যন্ত পাকা নেই। তাই রিকশাও বেশি একটা দেখা যায় না। আর এখানে সবার পায়ে হেঁটেই বেড়ানোর অভ্যাস। তাই কোন্ রিকশাওয়ালা না খেয়ে থাকবে এখানে? তবে মাঝে মাঝে কিছু ভ্যান দেখা যায়। কিন্তু আজ তাও নেই। রাস্তা দিয়ে হাঁটলে আধা ঘন্টার মত হাঁটতে হবে।
হাঁটতে ইচ্ছে করছে না। উপায় একটা আছে দশ মিনিটেই পৌছে যাব। ঐ পথেই হাঁটা ধরলাম টর্চ নিয়ে।ধান ক্ষেতের ফাকে ফাকে চলছি। গ্রামে এমনিতেই সাতটা বাজলে গভীর রাত হয়ে যায়। তার উপর এখন রাত ২ টা বাজে। তাই এই সুনসান নিরবতার মাঝে হাঁটতে হাঁটতে গা ছমছম করছে। যদিও বিজ্ঞান মনস্ক হওয়ার কারনে ভূত টূতে বিশ্বাস করিনা। কিন্তু আজ কেন যেন একটু ভয় ভয় করছে। হঠাত এমন মনে হয় যেন একটু দূরে একটা মেয়ে বসে বসে কাঁদছে একটু হাঁটতেই কান্নার শব্দটা আরও তীব্র হল। আমি মনে মনে বললাম,”ও কিছুনা। আমার সাবকনসাস মাইন্ডের চিন্তাভাবনা ওগুলো।” কিন্তু হঠাত্ করেই যেন ভয়টা বেড়ে যায়। তাই আকস্মিক চিত্কার করে উঠি,”কে? কে ওখানে?” কান্নার শব্দটা থেমে গেল। আমি আমার মনকে আবার বুঝালাম,”ও কিছু না।তুমি হাটো।” কিছুক্ষন হাটতেই কে যেন পিছন থেকে বলল,”এই যে শুনছেন?” আমি ভয়ে ভয়ে ফিরে তাকালাম। আমার সামনে অপূর্ব সুন্দর একটা মেয়ে দাড়িয়ে। তার পড়নে সাদা নয় কিন্তু সাদার মতই উজ্জল একটা জামা।
এই অন্ধকার রাতেও ওর চারপাশটা ঝলমল করছে আলোতে। আমি ভাবলাম এইটাও আমার সাবকনসাস মাইন্ডের ধোঁকা। তাই আবার ঘুরে হাটা ধরলাম। এই যে শুনছেন? কই যান? আপনার সাথে কথা আছে। আমাকে বিরক্ত করবেন না, প্লিজ। শুনুনই না। আমি একটা পরী! হুম শুনলাম। ওমা আপনি বিস্মিত হচ্ছেন না? না কারন পরীদের ডানা থাকে যা আপনার নেই। (হাঁটছি আর কথা বলছি) পরীদের ডানা থাকে সেইটা আপনাকে কে বলল? এইটা মানুষদের একটা ভূল ধারনা। আমার বিস্মিত না হওয়ার আরেকটা কারন আছে। কী সেটা? কারন আপনি কোন পরী নন। আপনি মানুষও নন। আপনি আমার সাবকনসাস মাইন্ডের নিছক কল্পনা। বাস্তবে আপনার কোন অস্তিত্বই নেই। মেয়েটি কান্না জুড়ে দেয়। আমি একটা অসহায় পরী আর আপনি আমাকে সাহায্য করবেন না? না। কেন?
কারন আমি আমার কল্পনাকে প্রশ্রয় দিতে চায় না। ঐ যে আমার বাড়ি এসে গেছি। এবার উধাও হন। আপনার হাতে ধরে বলি, আমাকে সাহায্য করুন। এই নিন এইটা যে আপনার কল্পনা না সেইটা প্রমান করছি।”-বলেই সে আমার হাতে একটা আঁচড় কাটল। আমি বিস্ময়ে একবার আহ করে ওঠলাম, তারপর বুঝলাম যে সত্যিই কেউ একজন আমার হাতে আঁচড় কাটল, এর ঠিক কয়েক সেকেন্ডেই আমি জ্ঞান হারালাম।
ঘুম থেকে উঠে নিজেকে আমার বিছানায় আবিষ্কার করলাম। মাথার পাশে উদ্বিগ্ন মুখে বসে আছেন মা। তার চোঁখ দুটো লাল এবং একটু যেন ফোলা। মনে হয় সারারাত জেগেই ছিলেন আর কেঁদেছিলেনও। বাবা ঘুম ভাঙছে?”- মা এমন ভাবে বললেন যেন কিছুই হয় নাই। হুম। আমাকে ঘরে আনলে কখন? মা একটু অস্বস্থি ভরা কন্ঠে বললেন, রাতে। তাহা জ্জুদের নামাজ পড়তে উঠছিলাম তিনটা বাজে। ওযু করতে যামু ঐ সময় দেহি তুই পইড়া রইছস মাটিতে। তারপর তোর করিম চাচারে নিয়া তোরে আইনা এই খাটে শুয়াইছি। কি হয়ছিল বাবা? ডরাইছিলি? হুম। কী দেইখা?
মনে নাই। অহন ভাত দাও। ক্ষিধা লাগছে। দাড়া আনতাছি। তুই ওইঠা হাতমুখ ধু। আইচ্ছা। আমি না হয় গোসলডাই সাইরা আয়। তুমি ভাত রেডি কর। গামছা আর ব্রাশ নিয়ে পুকুরের দিকে দৌড় দিলাম। বাড়িতে পানির ট্যাংক, মটর থাকলেও গ্রামে এলে পুকুরেই গোসল করি। ঘুম ভাঙলো এতক্ষনে?”- মিষ্ট গলার স্বরে চমকে উঠলাম। কারন কন্ঠটা আমার পরিচিত। এই মিষ্ট কন্ঠধারিনীর সাথে কাল রাতেই আমার কথা হয়েছে। পুকুর ঘাটে দেখি পা ছড়াইয়া বইসা আছে কালকের মেয়েটা। মানে পরীটা। তুমি কে? সত্যি করে বল। আমি পরী। আপনার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না? এখন কি কামড় দিব?
আমার কাছে কি চায়?
হেল্প। আমার কাছে কী সাহায্য চাও। আমি অসহায়। আপনিই আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। কী করে বুঝলে যে আমিই পারব? অন্য কেউ নয়। কারন আপনিই একমাত্র মানুষ যে আমার কথা শুনতে পারে, আমাকে দেখতে পারে, আমার নিজের ইচ্ছা ছাড়াই মানে? মানে আমরা পরীদের বা জ্বীনদের নিজস্ব ইচ্ছা ছাড়া কোন মানুষ দেখতে পায় না। শুধু কিছু কামিলদার মানুষ ছাড়া। কিন্তু আপনি আমাকে দেখতে পেয়েছেন,আমার কান্না শুনেছেন আমার ইচ্ছা ছাড়াই। তার মানে আপনিই আমাকে সাহায্য করতে পারবেন? আমিই কেন? তুমি কামিলদার কোন লোকের কাছে যাও। কারন কোনো কামিলদার ব্যাক্তি আমার এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারবে না। আমাকে কিভাবে সাহায্য করতে হবে? আমাকে ভালবেসে. . .
– কী?
সত্যিকারের ভালবাসতে হবে না। মিথ্যে ভালবাসলেই হবে। শুধু আমার পরীক্ষা পাশের আগ পর্যন্ত। আচ্ছা জ্বীন- পরীদের মধ্যেও কি পাগল আছে? হুম আছে।
তাহলে মনে হয় তুমি ঐ দলের। বলেই পুকুরে নেমে গেলাম। আমার এখনও মনে হচ্ছে আমার মস্তিষ্ক আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে। আমি হাওয়ার সাথে কথা বলছি কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হবে। পরীটা আমার দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। উফ অসহ্য!! একটু পরেই করিম চাচার বউ ঘাটে আসলেন পানি নেয়ার জন্য। চাচী কেমন আছ গো?
ভালা বাজান। তোমার শইলডা কেমন অহন? হুনলাম কাল রাইতে নাকি ডরাইসলা? ও কিছু না চাচী। আইচ্ছা চাচী আমরা দুইজন ছাড়া ঘাটে কেউ আছে চাচী? ওমা! এইডা কী কথা? তুমি দেখতেছ না আমরা দুইজন ছাড়া এইহানে যে কেউ নাই? হুম। এমনিই জিগাইলাম আরকি। এইযে দেহেন কালকা কত বড় আচড় খাইলাম”- বলেই পরীর দেয়া আচড়ের দাগটা দেখালাম। আমার এখনও ধারনা ও আমায় মস্তিষ্কের কল্পনামাত্র। আর এই কল্পনার একটা অংশ হচ্ছে এই আঁচড় এবং এই আচড়ের দাগ। কিন্তু চাচী আমার ভ্রম দূর করলেন,”ও মা! এত বড় আচড় কেমনে খাইলা?”
এমনেই। চাচী পানি নিয়ে চলে যান। পরী এখনও মুচকি মুচকি হাসছে। কী? এবার বিশ্বাস হল তো? না। কেন?
এই আঁচড় তো আমি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যাবার পরেও খেতে পারি। তোমরা মানুষদের দেখছি কোন বিষয়েই বিশ্বাস নাই। বিশ্বাস করানোর জন্য কী কামড় দিব এখন? প্রয়োজন নেই। যাও বিশ্বাস করলাম। আচ্ছা তোমার নাম কী? আমার নাম হুনলে ডরাইবা। আমারে তুমি পরী বইলা-ই ডাইক। গ্রামের ভাষায় কথা গুলো বলেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে পরী। তুমি অহন যাও। অবসরে আইসো। তোমার সামনে গোসল করতে সংকোচ লাগছে। আইচ্ছা। বলেই হাসতে হাসতে উধাও হয়ে যায় পরী। যে কিনা প্রস্তাব রেখেছে তাকে মিথ্যা ভালবাসা দেয়ার!! কিন্তু কেন?
গোসল সেরে এসে ভাত খেয়ে গ্রামটা একটু ঘুরতে গেলাম। ভেবেছিলাম পরীর দেখা পাব। কিন্তু না। ওর দেখা পাইনি। দুপুর গেল ওর দেখা নেই। বিকাল যায় যায় ওর দেখা নেই। ওর সাথে কথা বলব বলে আমার নিয়মিত দুপুরের ঘুমটা পর্যন্ত ত্যাগ করলাম। কিন্তু পরীর দেখা নেই। আমি মনকে শাসাতে লাগলাম,”ওর জন্য এত প্রতীক্ষা কিসের?
ও তো একটা নিছক কল্পনাও হতে পারে। কিন্তু মন বলে ভিন্ন কথা,”ও যদি কল্পনা হত তবে এতক্ষনে হাজির হয়ে যেত।
মাগরিবের পর আমি পরীকে আবিষ্কার করলাম আমার রুমে।আমার ভীষন রাগ হল ওর ওপর। খানিকটা অভিমানও। আমি ওকে না দেখার ভান করে বিছানায় গিয়ে বসলাম। হাতে মার্কেজের লেখা বই ‘love in the time of cholera’. হেলান দিয়ে বসে পড়তে লাগলাম আনমনে। রাগ করলা? আমি উত্তর দিলাম না। সরি। আমি এখনও নিরুত্তর। আরে বাড়ি থেকে বাহির হতে দিলে তো আসতাম। অনেক বলে কয়ে বাহির হতে হল।প্লিজ মাফ করে দাও। আমি বইটা পাশে রাখলাম।
-আচ্ছা ঠিক আছে।তুমি আমার কাছে এমন আজব আবদার করলে কেন?
-ভর্তি পরীক্ষা পাশের জন্য। মানে?
আমি একটা গাধা ছাত্রি। টেনেটুনে মেট্রিকটা পাশ করছি।এখন আমার ইচ্ছা কলেজে পড়ার। পড়।ক্ষতি কি? -আগে কলেজে ভর্তি হতে হবে তো। কিন্তু কলেজে ভর্তি পরীক্ষার একটা আবশ্যিক বিষয় হচ্ছে প্রেম। এইটা প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয়।আর কলেজে ওঠা মানেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। প্রেম বিষয় আবার কী?
প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত একটা প্রেম করা আবশ্যক কলেজে ভর্তি হতে গেলে। আমি ফরম পূরন করে ফেলেছি। আমার পরীক্ষা কাল সন্ধায়।কাল সন্ধায় কেউ যদি প্রিন্সিপালের সামনে আমাকে প্রপোজ না করে তবে আমি কলেজে ভর্তি হতে পারব না।
তোমার চেহারা তো অনেক সুন্দর।জ্বীনদের সাথে প্রেম করছ না কেন? জ্বীনেরা গাধা ছাত্রী পছন্দ করে না।সে যতই সুন্দর হোক না কেন। আমরা মানুষেরা কিন্তু উল্টো।গাধাদের পিছনে ছোটাই আমাদের কাজ।হা হা হা। আমাকে পছন্দ না করার আরেকটা কারন আছে। কী সেটা?
আমি একটা জারজ পরী।আমার বাবা একটা লম্পট জ্বীন ছিলেন।মার সাথে জোরপূর্বক সম্মানহানির ব্যপারে আমার জন্ম হয়।অনেকে মার গর্ভপাত করাতে চেয়েছিলেন।কিন্তু মা রাজি হননি। কথাটা শুনেই চমকে ওঠলাম। পরীর চোখ দেখি টলমল করছে।
ও কিছু না পরী। তুমি তো চাইলে একটা জ্বীন ভাড়া করতে পার। যে তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করবে। জ্বীনেরা রাজি হবে না।আর যারা রাজি হবে তারা খারাপ জ্বীন।তারা আমার কাছ থেকে বেশি কিছু চাইবে। চাইলে দিবে। তোমাদের তো জাদুই আছে। ভুল কথা।আমার কোন জাদু নেই। যা আছে তা অনেক কম।কেন?কম কেন?
আমাদের সবার জাদুশক্তি একজন সর্দারের কাছে জমা থাকে। যে যত বেশি উচ্চশিক্ষিত হবে,তাকে তত বেশি শক্তি দেয়া হবে। আমি যেহেতু গাধা ছাত্রী। সেহেতু বুঝতেই পারছ আমার শক্তি যে কম। আমি যে জিনিস তাদেরকে দিতে পারব এর চেয়ে ভাল জিনিশ তারা নিজেদের শক্তিতেই অর্জন করতে পারবে।
তাহলে তোমার কি ধারনা? ওরা তোমার কাছে কী চাইবে? আমার কুমারিত্ব। পরীর নির্লিপ্ততায় আমিই লজ্জা পাই। তুমি আমাকে বিশ্বাস করলে কিভাবে? কারন আমি জ্বীন চিনতে ভুল করতে পারি।কিন্তু মানুষ চিনতে কখনোই ভুল করব না। OH.তাই তুমি চাচ্ছ যে আমি তোমার প্রেমিকের অভিনয় করি?
হুম। কিন্তু মানুষের সাথে প্রেম কী তোমার প্রিন্সিপাল মেনে নিবে। মানবে না কেন? মানুষ এবং জ্বীনজাতির বিয়ে তো হালালই। OH.তাহলে কাল আমাকে কী করতে হবে? আমি কাল সন্ধায় প্রিন্সিপালকে নিয়ে আসব। তুমি অবশ্য তাকে দেখতে পাবা না। তুমি আমাকে প্রিন্সিপালের সামনে প্রপোজ করবে।এতেই কাজ হবে। ok তাই হবে। আমি এখন যাই মা বকবে। আচ্ছা যাও। কাল আবার কবে আসবে?
কাল সন্ধায় একেবারে প্রিন্সিপালকে নিয়েই আসব। ok সারাটা দিন অস্থিরতায় কাটে আমার।কখন সন্ধ্যা হবে?কখনপরী আসবে?কাল যখনপরী আসেনি তখনওএমন ছটফটকরছিল বুকটা।এরকারন কী?আমি কি তাকে সত্যি সত্যিইভালবেসে ফেলেছি?কিন্তুপরী কী রাজি হবে?ও আমাকে আবার ঐলোভী জ্বীনদেরদলে ফেলবে নাতো?পরীকে ছাড়া আমারকিসের এতঅস্থীরতা?এতঅসহায়ত্ব?নিজমনেই জছিলামএত প্রশ্নেরউত্তর!মাগরিবেরপরপরইপরী এসে হাজিরহয়।যতটুকু অবগতআছি যে ওরকলেজেরপ্রিন্সিপালও ওরসাথে আছে।
তাই নাটকের অংশহিসেবে বললাম,এতদেরী হল কেনআসতে?আমারতো প্রান যায় যায়অবস্থা!-ও এমনিই একটুদেরী হয়ে গেছে।সরি।আমার জন্যতোমার প্রান যায়যায়?”হুম।আমি যে তোমাকে ভালবাসি।” -বলেই ওরহাতটা ধরে ওকে আমারকাছে টেনে আনলাম।কাছে আরও কাছে।পরী অস্ফুটস্বরে বলল,এতঅভারএকটিং করারপ্রয়োজন নেই।স্যারচলেযাচ্ছেন।আমি তবুও আমারবাহুবন্ধনথেকে ওকে মুক্তি দিলামনা।আমি আবারবললাম,আমি সত্যি সত্যি তোমাকেভালবাসি পরী।
অযথা মিথ্যা বলে পাপবাড়াইও না।নাটকশেষ,প্রিন্সিপালচলে গেছেন।বলেইপরী আমাকে ঠেলে দেয়। প্রিন্সিপালকে দেখানোরজন্যতো তোমাকে ভালবাসারকথা বলিনি। না এ হতে পারে না। কেন হতে পারেনা?তুমিইতো বলেছিলে মানুষএবং জ্বীনজাতিরবিবাহ বৈধ। হুমতা বলেছিলাম।কিন্তু আমারক্ষেত্রে সেটা সম্ভবনয়। কেন সম্ভব নয়পরী?তুমি কি আমাকে ভালবাসনা?
তুমি বুঝতে পারছনা কেন?
আমি বুঝতে পারছি,তুমি বুঝতে চাচ্ছনা। তোমার আমারবিয়ে হতে পারে না।
-কেন?
“কারনআমি বন্ধ্যা।আমি কখনো মা হতে পারবনা।”শেষেরবাক্যগুলো চিত্কারকরে বলে পরী।বলেই কান্নায়ভেঙ্গে পড়ে পরী।আমি ওকে নিজেরবুকে তুলে নিলাম।ওআর বাঁধা দিলনা।শুধু আমারবুকে আলতো করে একটা চুমুদিল সে।আমি বললাম,তুমি জানো কিভাবে যে তুমি বন্ধ্যা?
আমি জারজ জেনেও একজনজ্বীনআমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।জ্বীনের া সচেতনবিধায় তারা বিয়েরপূর্বে হবু স্ত্রীরকোনো গোপন রোগকিংবা সমস্যা আছে কিনা তা টেস্টকরে নেয়।সেইটেস্টেররিপোর্টেইআসে যে আমি আরমা হতে পারব না।তারপর ঐ জ্বীনআর আমাদেরবাড়ির পথও মাড়ায়নি।যাক ওরকোনো দোষ নেই।আমিওতোমাকে ভালবাসি কিন্তুঠকাতে চাইনি।তুমি চাইলে এখনওআমাকে ফেলে চলে যেতে পার।
ফেলে চলে যাওয়ারজন্যেতো ভালবাসিনি।আর আল্লাহচাইলে তোমারবন্ধ্যাত্বও দূরকরতে পারেন।আরতুমি যদি এইভেবে দুঃখকরে থাক যে,আমাদের সন্তানহবেনা।তবে বলছি শোন,তোমারএ অসহায়ত্বআমি দূর করছি।আমি আরতুমি মিলে একটা অনাথ আশ্রম বানাব।যেখানে আমরা অনাথতথা আমাদেরসন্তানদের লালনপালন করব।পৃথিবীরসবচেয়ে বেশি সন্তানথাকবে আমাদের।তুমি দেখো।
হুম।পরী কাঁদছে।পরীরহাসি এবং কান্নারমধ্যে একটা মিলআছে।উভয়টাইদেখতে সুন্দর জেল এত কষ্টদায়ক! এত অসহায় এ জীবন! এত টর্চার আর সহ্য হয়না আমার। একটা বছর পরীকে দেখিনা! যাকে না দেখলে আমার একটা মূহুর্ত কাটতো না। তাকে একটা বছর ধরে দেখিনা! পরীকে প্রপোজ করার পর থেকে ভালোই কাটছিল আমাদের দিনকাল।কিন্তু বেশি সুখ নাকি কপালে সয় না!আমারও সইল না!একদিন কয়েকজন পুলিশ আসল আমাদের বাড়িতে। আমি বললাম,কাকে চান?
– এইটা কী মাহমুদের বাসা?
জ্বী। আমিই মাহমুদ। আপনার নামে ওয়ারেন্ট নোটিশ আছে। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট। আমি তো হতবাক। বললাম,আমার অপরাধ?
আপনি আপনার বসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাকে অফিসের নকল লাইসেন্স এনে দিয়ে আপনি তাকে ফাঁসিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু লাইসেন্স তো আমি তাকে দেয়নি। উনি তো বলেছিলেন উনি ম্যাজিস্ট্রেট অফিস থেকে নিয়ে এসেছেন। – এত কিছু আমরা জানিনা। আপনার নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। আমাদের কাজ আপনাকে গ্রেফতার করা। আপনি নিজেকে আদালতে নির্দোষ প্রমান করতে পারলে করবেন। আমরা দুঃখিত।
“মফিজ হাতকড়া লাগিয়ে জিপে তোল।”- বলে তিনি পুলিশ জিপে গিয়ে বসলেন। ইতিমধ্যে মা চিত্কার চেঁচামেচি শুরু করলেন,”আমার ছেলে নির্দোষ। আমার ছেলে কিছু করতেই পারেনা।” ঐ দিন একটু ভালোও লেগেছিল আমার। কষ্টের ভালো আরকি! গ্রামবাসী সবার মুখে এককথা,”মাহমুদ এমন করতেই পারেনা। কোন পুলিশে ওরে ধইরা নিব? আমরা থাকতে ওরে কেউ ধইরা নিয়া যাইতে পারব না।” আমি তাঁদের থামালাম। তাদেরকে বোঝালাম যে “গোলমালে লাভ হবেনা। উপরওয়ালা সাক্ষী আছেন যে আমি কোন দোষ করি নাই।
আপনারা আমার সাথে আছেন। আপনারা শুধু দোআ করবেন। আমার জেল হতে পারে অনেক বছর। নিষ্ঠুর বস নিশ্চয় অনেক টাকা খাইয়েছেন। এর বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবেন।”কথাগুলো বলার অন্তেই একটা অশ্রুসজল চোখ দেখলাম। পরীর চোখ। আমি অপরাধীর মত মুখটা নিচু করে ফেললাম। মাথাটা তুললাম আবার। মাথাটা নাড়লাম এপাশ-ওপাশ। মানে আমি কিছু করিনি। পরীর চোঁখ দিয়ে অবিরাম ঝরছে অশ্রুধারা।
পরী আমার কাছে আসল।”মাহমুদ আমি অসহায়!!”- বলেই হাওয়াই মিলিয়ে গেল পরী। আর দেখিনা অসহাহিনী সে মুখটি! আজ একটা বছর কেটে গেল। যেখানে টাকা সেখানেই ভুল বিচার! আমার বেলাও ব্যাতিক্রম হলনা। দশ বছরের জেল হয়ে গেল। আমিও যে আজ অসহায় পরী!! চোখের সামনেদিয়ে চলে গেল দুই দুইটি বছর। এখন রাত। এই রাতটা পার হলে আমার জেলে থাকার ব্যাপ্তি আটশো দিন সমান হবে! ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর রাতে হঠাত্ অল্প একটা উজ্জল আলো চোখে পড়ল। ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। চোখটা আস্তে আস্তে খুললাম। হঠাত্ আলোই ধাঁধিয়ে গেল চোখ। ধীরে ধীরে স্পষ্ট দেখতে পেলাম। চোখ দুটি কচলালাম। আমি ভুল দেখছিনা তো! আমার সামনে পরী দাড়িয়ে। একটা অসহায় ভঙ্গিমায় দাড়িয়ে সে। হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। আমি কিছু বলতে চাইলাম। কথা বেরোচ্ছে না মুখ থেকে। ঠোঁট দুইটি কাঁপছে, নড়ছে। পরী সাথে সাথে একটু ঝুকে পরে আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁট লাগিয়ে দিল।
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এত সুখ সয্য হচ্ছিলনা আমার! বুকের একদিকে তুমুল সুখের ঝড়,অন্যদিকে একটা দোমড়ানো চাপা কষ্ট। চোখ বন্ধ অবস্থায়ই দু ফোঁটা পানি ঝরে পড়ল। পরী ওষ্ঠমুক্তি দিল। আমি বললাম,”তুমি না বলেছিলে আসবে না আর?”
– কে বলেছে তোমায়?
তুমিই তো বলেছ যে তুমি অসহায়! এর মানেতো এই নয় যে আমি তোমাকে ভুলে যাব। আমি অসহায় কারন আমার পরীক্ষা পাশের আগে আমি কিছু করতে পারব না এই জন্যে। আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি পরীক্ষা পাশ করে ফেলেছো?
হুম।এ+! আমি এখন অনেক শক্তিশালী পরী। আমি তোমাকে মুক্ত করতে এসেছি। তবে আমার একটা কাজ করবে?
তোমার চিরদাসী হবার জন্যই তো এসেছি। বল কি করতে হবে?
আমি সসম্মানে জেল থেকে বের হতে চাই। তুমি কি উকিল সেজে আমাকে বের করতে পারবে না? পারবে না আসল অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি দিতে?
অবশ্যই আমি সেটাই করব। আমি কালই কাজে লেগে যাব। পরী. . হুম আমি অসহায়! আমি ভীষন অসহায়! আমিও।
– কেন?
তোমার ভালবাসায়। আমি অসহায় তোমাতে প্রাণনাথ।
আমিও পরী। অসহায়ত্বের কিছু দরকার আছে পৃথীবিতে। তোমার অসহায়ত্বের জন্যই তো তোমার সাথে আমার দেখা হল। ভালবাসার অসহায়ত্বে মিলন হল আমাদের। হুম। তুমি না একটু গল্প টল্প লিখতে পার?
হুম। তবে আমাদের এই অসহায়ত্বের একটা গল্প লিখিও। শিরোনাম হবে-“অসহায়ত্ব আমার এবং একটি পরীর!!”