কবিরাজ ও দানব

কবিরাজ ও দানব

অনেক বছর হয়ে গেছে যার কথা বলছি তার মৃত্যুরও অনেক বছর হয়ে গেছে। উনি হিসেবে আমার দাদু হয়।তো যাই হোক উনি কবিরাজি করতেন। যখন উনি কবিরাজি শিখতে যান ঘটনা টা তখনকার।

ওনারা ৪ জন শিখতেন ওই গুরুর কাছে শিখছেন করছেন অনেক শিরকি।লোকটির নাম ছিল মনাই। তিনি আমার দাদু অর্থাৎ অন্যান্য শিক্ষার্থী দের অনেক বড়। সবাই তাকে মনাই কবিরাজ বলেই জানে। ভূত প্রেত বিশ্বাস করলেও নিজেকে অনেক সাহসী মনে করতেন তিনি। অনেকবার নাকি ভূত নামিয়েছেন মানুষের ঘার থেকে।

তো একদিন শিক্ষা গ্রহনের ফাঁকে বাড়ি এসেছিলেন। আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে। সেই কত দূর থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে। রাত হবে না?

হেঁটে হেঁটে নদীর কাছাকাছি আসতেই কে যেন তার নাম বলে ডাক দিল নাহ! শোনার ভুল হবে হয়ত আবার কেউ ডাক দিল। নাহ এবার স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে মনাই কবিরাজ। হ্যাঁ এত তার বন্ধু সুবল এর গলা। মনাই শোনায় দিল, “কিরে, কি হইছে?”

কিন্তু কোন উত্তর নেই মনাই মনে করল মাছ ধরছে বলে হয়ত এত রাতে নদীর পাড়ে। আর তাই হয়ত ডাক শুনতে পাচ্ছে না। রাস্তা থেকে নেমে নদীর দিকেই গেল মনাই কবিরাজ। নিজেকে খুব সাহসী ভাবে বলে রাতের বেলা ভুতের ভয় তাকে কাবু করে না।

নদীর পাড়ে গিয়ে কয়েক বার ডাকার পর ও সুবল এর কোনরকম সাড়াশব্দ পেল না মনাই। মনে করল হয়ত তার ডাক শুনতে না পেয়ে নৌকা নিয়ে ওই পাড়ে গেছে মাছ ধরতে তার পর মনাই কবিরাজ ও কনকিছু না ভেবে বাড়ি চলেগেল।ততক্ষণে ফজরের আজান দেয় দেয় অবস্থা।

বাড়ি এসে বউকে বলল, আজ রাতে আসার সময় সুবল নদীর পাড় থেকে ডাক দিয়েছিল। আমি শোনায় দিয়া……নদীর পাড়ে গিয়া দেখি ও নাই।বেটা আমার সাথে কথা না বইলাই ওই পাড়ে গেছে……সকালে সুবল ওর বাড়ি আইলে আমারে একটু ডাইকা দিও তো। আমি একটু ঘুমাইলাম।

এসব কথা সুনে মনাই কবিরাজ এর বউ হা করে আছে মনাই বউ এর এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করল “ কি বউ কি হইছে?” “আপনি সুবল রে দেখছেন?”

“না। খালি ডাক দিছিল” “ আরে ও আপনারে ডাক দিব ক্যামনে ?ও তো গত পরসু দিন মারা গেছে। আর ওরে তো ওই নদীর পাড়েই পুরাইছে।“”কিহ!”নাহ! তাহলে আমার শোনার ই ভুল হবে হয়ত। তবে যে আমি স্পষ্ট শুনলাম।যাক গা বেছে তো গেছি। কথা গুলো মনে মনে বলল মনাই কবিরাজ।পরের দিন ফিরে গেলেন কবিরাজি শিখতে।

এর পর কেটে গেছে প্রায় একবছর মনাই ওসব ভুলে গেছে পরশু সবার কবিরাজি শিক্ষা শেষ হবে কিন্তু তাদের একটা পরিক্ষা দিতে হবে।বল্লেন গুরু।

কাল ঠিক মধ্যরাতে, পশ্চিম ধনী রাম এলাকার মহাশ্মশানের পাশের সেই বট গাছটার গোঁড়ায় সকল কে বসে থাকতে হবে। ভোর না হওয়া অবধি।

এবং সবার হাতে একটি করে কুরাল থাকবে। জীবন চলে গেলেও সেটা হাত ছাড়া করা যাবে না। যাই হয়ে যাক না কেন কুরাল শক্ত করে ধরে রাখতে হবে। আর তা না হলে জীবন ও চলে যেতে পারে। যেই কথা সেই কাজ পরের দিন রাতে সবাই চলে গেল সেই জায়গায়।

যার যার আসনে বসে পরল সবাই। সবাই ই গভীর ধ্যান এ মগ্ন। হঠাত ই কারো বাজখাই গলার আওয়াজ শুনে ধ্যান ভাঙল সবার। আসমান জমিন এক করে দারিয়ে আছে এক ইয়া লম্বা মানুষের মতো। মাথা দেখা যাচ্ছে না। শুধু পা টা দেখা যাচ্ছে। কি মোটা আর পশমে ভর্তি।

দানব টি বলছে,”তোরা কুরাল ফেলে দে তার বিনিময়ে যা চাস আমি তাই দেব। কলসি ভর্তি শোনা দেব। টাকার পাতিল দেব” এই কথাটি প্রথম জন অর্থাৎ আমার ওই দাদু কে বলল কিন্তু উনি কিছুতেই কুরাল ছাড়তে রাজি হননি। দানব টি প্রথম জনের কাছ থেকে এসে দ্বিতীয় জনকে একই কথা বলল, তিনিও এক ই উত্তর দিলেন। তৃতীয় জনও কুরাল টি ছাড়লেন না।

কিন্তু তার পরের জন অর্থাৎ মনাই কবিরাজ এর সামনে যেতেই সে ওই দানব টা কে দেখে এতটাই ভয় পেয়ে যায় যে সে তাকে দেখে সব কিছু ছেড়ে দৌড় দিল এমনকি কুরাল তাও নিয়ে যায়নি।

ভয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সে দিক্বিদিক শূন্য হয়ে পরে ফলে সে সরাসরি শ্মশানের মাঝা মাঝি চলে আসে তারপর পরের দিন সকালে সবাই তার মৃত দেহ টা শ্মশানের মাঝে পিষ্ট অবস্থায় পায়।মনে যেন কেউ অনেক ভারি কিছু দিয়ে তাকে চাপ দিয়ে মেরে ফেলেছে।

কিন্তু তার মাথা টা পাওয়া যায় তার দেহ থেকে বেশ কিছু টা দূরে তখনও জিব্বা টা এমন ভাবে বেরিয়ে আছে মনে হয় কেউ ওটা ধরে মাথা টা প্রচণ্ড জোরে ঘুরিয়েছে এসব দেখে ওদের গুরু বলল,”আমি ওকে আগেই সাবধান করে ছিলাম যে যদি ওই দানব সামনে আসার পর ভুলক্রমেও ওই কুরাল হাত থেকে পরে যায়। তাও তার নিস্তার নেই। ও এই কুরাল ফেলার জন্য নানা রকম লোভ দেখাতে থাকবে” এসব বলেই একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত