বগা লেক

বগা লেক

একদিন আকাশ থেকে নেমে আসে এক আজব প্রাণী। ড্রাগনের মতো দেখতে। নানা অলৌকিক কাণ্ড ঘটানো আজব জীবকে মানুষ ডাকতে শুরু করে বগা।

রুমা এলাকার একটা পাহাড়ের গুহায় আস্তানা বানিয়ে নেয় বগা। বগাকে খুশি করতে নিয়মিত নানা ধরনের জীবজন্তু উপহার দিতে থাকে মানুষ। হঠাৎ গ্রাম থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করল শিশুরা। সম্প্রদায়ের নেতাদের সন্দেহ, কাজটা বগার। সব সম্প্রদায় থেকে বেছে বেছে সাহসী জওয়ানদের নিয়ে গঠন করা হলো একটা দল। তীর, ধনুক, বল্লম, লাঠি আর মশাল নিয়ে রাতের অন্ধকারে দলটি হানা দিল বগার গুহায়। গুহার মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মানুষের রক্ত আর হাড়গোড় দেখল। বুঝতে বাকি রইল না কারো, কী ঘটেছে। ওই বগাই যত সর্বনাশের মূল। একসঙ্গে বগার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল যুবকরা। কোনো জাদুবিদ্যা দেখানোর আগেই বগা হলো কুপোকাত। কুলিয়ে উঠতে না পেরে পালানোর জন্য রথে উঠে বসল বগা।

রথে আগুন ধরিয়ে দিল যুবকরা। সেই আগুনে পুড়ে মরল বগা। আর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে থর থর করে কেঁপে ওঠল গুহা। ভেঙে পড়ল পাহাড়। তৈরি হলো বিশাল এক গর্ত। ওই গর্তটাই বগা হ্রদ। বগা লেকের অন্য নাম ড্রাগনের হ্রদ। বগা লেকের পুরো নাম বগাকাইন হ্রদ। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে কেওক্র্যাডং পর্বতের গা ঘেঁষে হ্রদটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় দুই হাজার ফুট। চোঙা আকারের আরেকটি পাহাড়ের চূড়ায় বগা লেকের অদ্ভুত গঠন দেখতে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো। লোককথার বিস্ফোরণের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মিল পাওয়া যায়।

দেশের ভূতাত্তি্বকরা মনে করেন, বগাকাইন হ্রদটি হয় মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ নয়তো মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের কারণে এর সৃষ্টি। এর পানি অম্লধর্মী। কোনো জলজ প্রাণী এখানে বাঁচতে পারে না। বাইরের কোনো পানি এখানে ঢুকতেও পারে না, আবার আশপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎসও নেই। এপ্রিল থেকে মে মাসের মধ্যে হ্রদের পানি যখন ঘোলাটে হয়, আশপাশের ছোট ছোট জলাশয়ের পানিও ঘোলাটে হয়ে যায়। এর তলদেশে একটি গরম পানির প্রবাহ আছে। গরম পানি বেরোনোর সময় হ্রদের পানির রং বদলে যায়। স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর জিরকুম সাহু, সিং ইয়ং ম্রো ও লালা বমের কাছ থেকে জানা যায়, হ্রদের গভীরতা আর পানি বদলটাই রহস্য।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত