জল ভূত

জল ভূত

রিফাত, বয়স দশ। ক্লাস ফোরে পড়ে। একটা প্রিয় নেশা আছে ওর। আর সেটা হলো বই পড়া। হাসির গল্প, ভূতের গল্প, রহস্য গল্প ইত্যাদি বইগুলো তার পছন্দ তালিকার শীর্ষে। তবে ভূতের প্রতি তার আগ্রহ প্রবল। সেদিন সকালে রিফাত প্রতিদিনের মতো স্কুলের দিকে পা বাড়ালো। ওদের স্কুল ১টায় ছুটি হয়। বাবার সাথে বাসায় আসে সে। বাসার সামনে এসে কলিং বেল বাজালেন রিফাতের বাবা। দরজা খুলে গেল। প্রতিদিন রিফাতের মা এসে দরজা খুলে দেন কিন্তু আজ দরজা খুলে যাকে দেখল তাতে সে আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠল। কারণ রিফাতের দাদু দরজা খুলেছেন। রিফাত জড়িয়ে ধরল দাদুকে।

রিফাতের দাদু গ্রামে থাকেন। আজ সকালেই এসেছেন। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ। এরই মধ্যে রিফাত দাদুকে আবদার করে বসল গল্প বলতে। তবে তা ভূতের হতে হবে। দাদু হাসতে হাসতে বললেন: ‘আচ্ছা হবে। রাতে খাওয়া- দাওয়া শেষ করে, তবে হোমওয়ার্কটাও কিন্তু শেষ করে।’ রিফাত হঁ্যা সূচক মাথা নাড়ল। রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ, হোমওয়ার্ক ও শেষ। রিফাত দাদুকে বলল এবার গল্প বলতেই হবে।

দাদু গল্প শুরম্ন করলেন- ‘অনেক দিন আগে ছিল এক জল ভূত। তার অস্ত্মিত্ব ছিল জলের মধ্যে। সে গ্রামে থাকত। একদিন সে গ্রামের এক ছোট ছেলেকে ভয় দেখানোর জন্য তার ঘরে ঢুকল। যেহেতু জলেই আর অস্ত্মিত্ব তাই সে টিনের চাল বেয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরতে লাগল। একসময় জলের ফোঁটা জমে গিয়ে একটি বিশালাকার ভূতে পরিণত হলো। ছেলেটি তখন মায়ের কাছেই ছিল। ভূতটির ছায়া তার মুখে পড়তেই হঠাৎ থেমে গেলেন দাদু। দেখলেন রিফাত গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছে। রিফাতের মা তাকে বিছানায় রেখে এলেন। রিফাতদের রান্নাঘরটা তাদের শোবার ঘরের কাছেই। মধ্যরাত, ঘরের সব বাতি অফ। রিফাতের ঘুম ভাঙে টপটপ শব্দে। শব্দটা রান্নাঘর থেকে আসছে। হঠাৎ সে চমকে উঠল, রান্নাঘর থেকে মানুষের মাথার মতো একটা কিছুর ছায়া মেঝেতে পড়েছে। পুরো ব্যাপারটাই ভৌতিক লাগছে।

রিফাতের ইচ্ছে হলো জোরে একটা চিৎকার দেবে কিন্তু একি ভয়ে তার মুখ থেকে কোনো শব্দ পর্যন্ত্ম বের হচ্ছে না। তার পিঠে কে যেন হাত দিল। ভয় আরও বেড়ে গেল তার। জ্ঞান হারাবার মতো অবস্থা। হঠাৎ সে চিৎকার করে উঠল ‘ভূত, ভূত, জলভূত।’ তখনই ঘরের বাতি জ্বলে উঠল। রিফাত ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকাতেই দেখল দাদু তার পিঠে হাত রেখেছেন। দাদু বললেন- ‘কি হয়েছে রিফাত, ভূত বলে চিৎকার করছিলে কেন, কোথায় ভূত?’ – ‘ঐ তো টপটপ আওয়াজ করছে, ছায়াটা দেখ না’। রিফাতের দাদু এগিয়ে গেলেন। তিনিও একই দৃশ্য দেখতে পেলেন। ধীরে ধীরে রান্নাঘরে ডাকলেন। বাতি অন করে দেখলেন রান্নাঘরের পানির কল থেকে পানি ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরছে আর বাইরে থেকে আসা আলো রান্নাঘরে রাখা হাঁড়ির ওপর পড়ছে। আর তার ছায়া মানুষের মাথার মতো দেখাচ্ছে।
রিফাতকে কোলে নিয়ে দাদু বললেন, ‘দাদুভাই বাস্ত্মবে ভূত বলতে কিছু নেই। ভূত শুধু গল্প আর কল্পনায়। এখানে রান্নাঘরের পানির কল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছিল আর মাথার মতো দেখতে ওটা হাঁড়ির ছায়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত