অশরীরীর রাত

অশরীরীর রাত

ভাইয়া এই ভাইয়া… উঠোনা,,,আর কতক্ষণ ঘুমাবে?? তুমি ভুলে গেছো? আজ সবাই মার্কেটে যাবো? তোমার বিয়ের কেনাকাটা কতো বাকি!!

-এতোক্ষণ যে কথা বলছিল সে হচ্ছে পূর্বি।
অনুরাগের ছোট বোন।অনুরাগ বেশ হ্যান্ডসাম বটে।একদম সুদর্শন পুরুষ। কোন মেয়ের প্রতি ওর কখনো আকর্ষণ ছিল না।বিয়ের প্রতি একদম অনীহা বললেই চলে।কিন্তু মায়ের কথা রাখতে গিয়ে এবার তো বিয়ের চক্করে পড়তেই হলো।পূর্বি অনুরাগের বিয়ের কেনাকাটার জন্যেই ওকে ঘুম থেকে ডাকছিল।

পূর্বি-কি হলো?
অনুরাগ-আহা!তোরা যা নাহ..আমায় কেন জালাচ্ছিস?
পূর্বি-হাহা।এখন তো আমি জ্বালাচ্ছি।এরপর তো ভাবি জ্বালাবে
অনুরাগ-কিহ?এই তুই যাবি?
পূর্বি-ওকে ওকে যাচ্ছি।কিন্তু তুমি ১০ মিনিটের মধ্যে তৈরী হয়ে নিচে আসো।

(পূর্বি চলে গেল)
অনুরাগ চটপট উঠে ওয়াশরুমে গেল।কিছুক্ষণ পর নিচে গেল।দেখলো সবাই ওয়েট করছে ওর জন্য।

অনুরাগ-অযথাই আমাকে এসবে জড়াচ্ছো।
মা-তুই চুপ থাক আর চল।
অনুরাগ -হুম।

গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সবাই।মার্কেটে পৌঁছালো। অনেক কেনাকাটা করল সবাই। কেনাকাটা শেষে যখন সবাই পড়ছিল তখন ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা।হঠাৎ করেই এক বৃদ্ধ অনুরাগের সামনে এসে অট্টহাসি হাসতে লাগলো।

অনুরাগ -কি ব্যাপার?আপনি এমন করছেন কেন?
বৃদ্ধ -হাহাহা৷ দেবেনা… ও তোকে বিয়ে করতে দেবেনা।হাহা।।।ভেঙে দে এ বিয়ে।ভাল হবেনা। করতে দেবেনা ও তোকে এ বিয়ে। (এই বলেই সে চলে গেল)

অনুরাগের মা একটু ভয় পেয়ে গেল।কি জানি কি হয়?কিন্তু সে তার দুশ্চিন্তা প্রকাশ করলনা।

মা-ছাড় তো এই পাগলের কথা।কিচ্ছু হবেনা। চল তো।
পূর্বি-হুম মা চলো।

-কিন্তু অনুরাগ যেনো ভুলতে পারছেনা ঘটনা।ও ভাবছে কেনই হঠাৎ ওনি ওকে কথাটা বলতে গেলেন।কই আরতো কাউকে বললনা।এই ভাবতে ভাবতেই বাসার সামনে এসে থামল গাড়িটা। সবাই নামল গাড়ি থেকে। সবাই খুব ক্লান্ত। তাই যে যার রূমে চলে গেল।অনুরাগও চলে গেলে।।ও ফ্রেশ হয়ে সোজা বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুইয়ে পড়ল।

-বেশ কিছুক্ষণ পড় ও অনুভব করল কেউ একজন ওর পাশে শুয়ে আছে।ধীরে ধীরে ওর আরো কাছে আসছে। ওর বুকের ওপর ও ঠান্ডা স্পর্শ অনুভব করল। এতোটাই ঠান্ডা যেন ও তুষারের মাঝে শুয়ে আছে।ও চোখ খুলতে চাচ্ছে পারছেনা। কোন এক শক্তি ওকে বাধা দিচ্ছে। ও কথা বলতে চেয়েও পারছেনাহ।ও আশেপাশে হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করল কিন্তু কোন অস্তিত্ব পেলোনা।কিন্তু সেই শীতল স্পর্শ তখনও ওর বুকের ওপর ছিল।ও মনে মনে ভাবতে থাকল-
(তবে কি এ কোন অশরীরী? না না এ কি করে হয়? এ হতে পারেনা। কি করে সম্ভব?তবে কি বৃদ্ধার কথা সত্যি ছিল?)
অনুরাগ ভয় পেয়ে গেল।ও ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে উঠতে লাগল।আ নিজেকে আবিষ্কার করতে লাগল এক ঘন জঙ্গলে। চারিদিকে অন্ধকার। ও ভয়ে ভয়ে তবুও এগিয়ে চলছে কোন শব্দও করতে পারছেনা।হঠাৎ ও হোচট খেয়ে পড়ে গেল।প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছে বেচারা। ওঠতে পারছেনা।তবুও ওঠলো। ওর ভয় বাড়তে লাগল।এরপর যা দেখলো ভয়ে তার গা হিম হতে থাকলো।

দেখলো যে এক সুন্দরী রমণীর মুখ হাওয়ায় ভাসছে।তার নেই কোন শরীর।।সে হাওয়ায় ভাসছে আর ওকে কিছু বলছে?ও শুনতে পাচ্ছেনা।

-কি বলছে এই অশরীরী? তবে কি ও আমাকে মেরে ফেলবে?এই ভেবেই অনুরাগ ছুটে চলল। কোন দিকে যাচ্ছে সে জানেনা।ব্যাথায় ছুটতে পারছেনা।তবুও বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টে।।সে সামনে বেশ কিছু সিড়ির অস্তিত্ব পেল। সে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠতে লাগল।কিন্তু একটা সময় সিঁড়ি শেষ হয়ে গেল। অনুরাগ দেখলো নিচে গভীর খাদ।আর পিছন থেকে ভসে আসছে চিকন সুর।

-দাড়াও।দাড়াও।তুমি এমন করতে পারোনা।

অনুরাগ ভাবতে লাগলো-নাহ কিছুতেই না।এই অশরীরীর হাতে মরার চেয়ে খাদেই মরা ভাল।সে ঝাপ দিতে গেল।কিন্ত তৎক্ষনাৎ তাকে যেন কেউ টান দিয়ে সরিয়ে নিল!সে চোখ খুলেই দেখলো তার মা আর বোন পূর্বি।সে অবাক হলো।

অনুরাগ-একি তোমরা এখানে?একি আমি ছাদে কেন?

মা-কিরে তুই কবে সুস্থ হবি বলতো?সেই ছোট বেলা থেকেই তোর এই এক সমস্যা। ঘুমের মধ্যে হাঁটা।আর কতো চোখে চোখে রাখব?

অনুরাগ-তার মানে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম?

পূর্বি-স্বপ্ন?কিসের স্বপ্ন?আর তোমাকে যে বললাম দাঁড়াও দাঁড়াও।তুমি শুননি?সেইযে হেঁটেই চলেছিলে।এবার থেকে তোমাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে।আর একটু হলে তো ছাদ থেকে পড়েই যেতে।

মা-একিরে তোর পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। কিসের সাথে হোঁচট খেয়েছিলি?

অনুরাগ-বলছি পরে।ঘরে চলো।আমার ভালোলাগছেনা।

পূর্বি-হে চলো।

তারপর ওকে নিয়ে সবাই ঘরে গেলো।পরে অবশ্য ওর এই সমস্যার জন্য ওর ট্রিটমেন্ট করানো হয়।ঠিক হয়েছিল কিনা জানা যায়নি।।

*******************************************সমাপ্ত***************************************

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত