অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

অসীম দাবদাহ শেষে বর্ষণের অবকাশ।

শেষমেষ বৃষ্টিটা শুরু হলো। দুদিন ধরে শুধু মিথ্যে আশা জাগিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছিল মেঘগুলো। তবে ভালোই হয়েছে আজ বৃষ্টিটা হয়ে। অফিসের এ.সি.-র আবহাওয়ার ভিতরে থাকলে বৃষ্টির আমেজটা কি আর নেয়া যেত! সন্ধ্যে আগত প্রায়, যদিও মেঘের ঘনঘটায় ইতিমধ্যে দিনের আলো নিভিয়ে ফেলেছে। ছুটির দিন, আলস্য ভরা বৃষ্টিমাখা সন্ধ্যে, আর কি চাই। বহুদিন বাদে এরকম একটা সন্ধ্যে পাওয়া গেছে। তার উপর আজ আমি ফ্লাটে একা। আজ অন্তত মাথায় একটা গল্পের প্লট নিয়ে আসতেই হবে যেকোরেই হোক। অনেক দিন শত চেষ্টা করেও কিছুতেই কিঞ্চিত একটা ভাবনাও আসছিল না মাথায়। এদিকে ম্যাগাজিনের লেখাটাও দিন কয়েকের মধ্যে দিতে হবে। তাই

এক কাপ কফি সহযোগে ডায়েরিটা নিয়ে বসে পড়লাম জমিয়ে। সমস্যা টা সেই একজায়গায় গিয়েই দাঁড়ালো, ঠিক কি নিয়ে লিখবো! এই পরিবেশটা যদিও একটা ভুতুড়ে আবেসের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে ভাবনাচিন্তাগুলোকে। তাছাড়া লিখতে বসলে আমার ওই ভুতেই বেশি পায়, প্রেম ট্রেম পায়না ঠিক। ভুতের প্রতি টান আমার ছোট থেকেই, যদিও ভুতে ভয়ও পাই প্রচন্ড। রাতে একা থাকতে হলে তো আজও বাইরের ঘরে আলো জ্বালিয়ে শুতে হয়। নইলেই মনে হয় কেও যেন আমার পাশেই শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ খুললেই বুঝি দেখতে পাবো, বা খাটের বাইরে পা চলে গেলেই মনে হয় কেউ বুঝি খাটের তল থেকে হাত বাইরে বের করে টেনে ধরলো পাটা, এরকম নানা ভাবনা। কোনোরকমে যদি ঘুমিয়েও পড়ি তবু প্রচন্ড এক ভয়ের স্বপ্ন দেখে ধরফরিয়ে ওঠাটা অবসম্ভাবি। সে যাই হোক, ভুতুড়ে অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ অনেক ব্যক্তির সাক্ষ্যই আছে আমার আছে। কারণ সুযোগ পেলেই মা বাবা পাসি দাদা দিদি আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধব নির্বিশেষে আমি ভুতের গল্প শুনতে চাই। আর প্রায় সকলের ঝুলিতেই একটা না একটা ভৌতিক অভিজ্ঞতার কাহিনী থেকেই থাকে, সে নিজের হোক বা আর কারো কাছে শোনাই হোক। তার মধ্যে কিছু মানুষ যে গালগল্প দেয়না তা নয়, তবে বেশির ভাগই সত্যি ঘটনা। ভুতটা সত্যি কিনা সন্দেহ থাকলেও, ভয়টা নিঃসন্দেহে সত্যি।

যেমন আমার এক দাদা, বিল্টু দা, সে যে কি ডানপিটে, ভয়ডরহীন সে না দেখলে বোঝানো সম্ভব না। মানে শুধু ভুতের বিষয়ে নয়, লৌকিক অলৌকিক সব বিষয়েই। সেদিন মামার বাড়ি গিয়ে এরকমই এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যেতে আড্ডা শুরু হলে আমি অভ্যেস বসত টুক করে ভুতের ব্যাপারটা একটু তুলে দিলাম আলতো করে। তা বিল্টুদা তো প্রথমেই বলে দিল, ওসব ভুতের গল্প টল্প আমি জানি না ভাই, বিশ্বাস ও করিনা। যত রাজ্যের বুজরুকী। শোন, মাঝরাতে ধু ধু মাঠের পাশে এক শ্মশানে একা রাত কাটিয়েছি বেট ধরে,আমাদের গ্রামের ওই পুরোনো বিশাল বাড়িতেও একা রাত থেকেছি, প্রায় একসপ্তাহ। কোনোদিন গাটা শিউরেও ওঠেনি। আমি বললাম সে তুমি না-ই ভয় পেতে পারো, তারা তোমাকে দেখা দেয়নি তাই ভয় পাও নি, দেখা দিলে বুঝতাম যে তুমি কতটা সাহস দেখাতে। যেই না বলা সে লাফিয়ে উঠলো। তাই যদি হয় তবে আমার একটা ঘটনা শোন। তখন H.S. দেব, সেই সময় প্রায় আমরা এই বারাসাত থেকে জগুলির দিকে চার পাঁচজন বন্ধুরা মিলে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম বিকেল হলে। এই তো পিকলু ও যেত। কি রে পিকলু বল। পিকলুদাও ছিল সেদিন আড্ডায়। সে সম্মতি দিলো, বললো, ‘আরে ভাই সেদিনকার কথা বলছিস, সে এক কান্ড বটে। আজও কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারি না।‘ বিল্টুদা আবার শুরু করলো, “তা

ওই রাস্তায় ময়নার রাস্তাটার আগে একটা কাঁচা রাস্তা মাঠের দিকে ঢুকে গেছে। তা 4 কিলোমিটারের বা তার বেশি হবে রাস্তাটা। NH 34 এরই একপ্রান্ত থেকে শুরু হয়ে আরেক প্রান্ততে গিয়ে ওঠে। মনে শর্টকাট আরকি। এই রাস্তাটা নিয়ে আমাদের সকলেরই অনেক কৌতূহল ছিল সারাজীবন। কারণ সারাদিন ওই রাস্তাটা সকালে ব্যবহার করলেও সন্ধ্যের পর ওদিকে কেউ ভীড়ত না। সবাই বলতো ওই রাস্তায় যে যায় তারই নাকি সে রাতে আর বাড়ি ফেরা হয় না। পরদিন তাদের পাওয়া যেত অচৈতন্য বা দুয়েকবার তো মৃত অবস্থাতেও। বিশ্বাস করতাম কিনা জানিনা, কিন্তু ওই রাস্তায় যেতামও না, কারণ সন্ধ্যের আগেই ফিরে যেতাম সাধারণত লোকালয়ের দিকে, নয়তো বাড়িতে ঠেঙাবে। কিন্তু সেদিন কি হলো, আমরা জাতীয় সড়ক ধরে কতটা যে চলে গেছি গল্প করতে করতে খেয়াল নেই। আলো প্রায় নিভু নিভু তখন খেয়াল হলো এইরে অনেকটা চলে এসেছি তো। এখন মেন রোড ধরে খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে গেলেও রাত 8টা তো কম করে বাজবে বাড়ি ঢুকতে। তার উপর শীতের সময়, অন্ধকার হতে আর হয়তো মিনিট দশেক। বাড়িতে আজ খুন হয়ে যেতে হবে অত রাতে ঢুকলে। খুব জোরে পা চালাতে থাকলাম, মাথায় প্রচন্ড ভয়মিশ্রিত উদ্বেগ নিয়ে। আজ আর রক্ষে নেই। হঠাৎ ওই কাঁচা রাস্তাটা চোখে পড়লো। আমি বললাম, ভাই শর্তকাটটা নে, অন্তত সাড়ে ছয়টার মধ্যে ঢুকতে পারবো। একজন আঁতকে উঠে বললো, ‘পাগল নাকি, ওই রাস্তার গল্প ভালো না। ওসব ভুত টুতের নিয়ে ছেলেখেলা একদম ঠিক নয়।‘ কে শোনে কার কথা, আমি ইতিমধ্যে সাইকেল নামিয়ে দিয়েছি কাঁচারাস্তায়। বাকিরাও নিরুপায় হয়ে চললো আমার পিছন পিছন। আমরা চারজন ছিলাম সেদিন তিনটে সাইকেলে, সুজয় বসেছিল সন্তুর পিছনে। প্রথমে বাকিরা একটু ভয় ভয় পেলেও আমরা আবার এতটাই গল্পে মত্ত হয়েগেলাম যে ওসব মাথা থেকে চলে গেল। এভাবে কতটা গেছি জানিনা, হটাৎ খেয়াল হলো আমাকে প্যাডেলিং করতে প্রচন্ড শক্তি

দিতে হচ্ছে, রীতিমতো ঘেমে গিয়েছি আমি। আমার স্বাস্থ্য এখন যতটা ফিট দেখছিস তখন আরও বেশি ছিল। নিয়মিত ফুটবল খেলার, ছটাছুটি করার অভ্যেস ছিল। তাই যত পথই সাইকেলিং করি না কেন এরকম কষ্ট হওয়ার কথা নয়। তবে হলো কি! মনে হচ্ছে যেন তিন চারজন একসাথে আমার সাইকেলের পিছনে বসে আছে। কিন্তু আমি তো কাওকেই পিছনে বসাইনি আজ। কেমন যেন একটা অস্বস্তি হতে শুরু করলো। আমি পিকলুকে কথাটা বলতেই ওর চোখ মুখ কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়েগেল। শুধু বললো ভাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পা চালা, কোনোদিকে তাকাসনা। আমি মিথ্যে বলবো না, তবে একটা অজানা ভয় আমাকে পেয়ে বসলো, গা হাত পা কেমন একটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। তবু যত শক্তি আছে সবটা দিয়ে প্রাণপনে সাইকেল চালাতে শুরু করলাম। এমন সময় পিকটু বললো, ‘ও কি, তোর সাইকেলের সামনের চাকা অমন উঠে আসছে কেন!’ আমি ওকে কিভাবে তখন বোঝাই, আমার যেন মনে হচ্ছে কেও আমার সাইকেলটাকে পিছন দিকে টেনে ধরে রাখতে চাইছে। এমন সময় একঝলক আলো এসে পড়ল আমাদের মুখে। সামনের রাস্তায় একটা গাড়ির হেডলাইটের আলো। আমরা প্রায় পৌঁছে গিয়েছি মেন রোডে। সাথেসাথে সেই অসম ভার আমার সাইকেলের ক্যারিয়ার থেকে যেন হটাৎ চলে গেল। খুব জোরে চালাচ্ছিলাম তাই সাইকেলটা লাফিয়ে উঠলো। কোনো রকমে পাকা রাস্তায় উঠে তীরবেগে বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি এসে যা দেখলাম তা আজও তোকে দেখাতে পারবো আমার বাড়িতে গেলে। আমার সাইকেলের ক্যারিয়ারের উপর দুদিকের লোহার রড দুটো কারো দুহাতের বুড়ো আঙুলের চাপে গর্তের মতো ঢুকে গেছে।“

বড্ড খিদে পেয়ে গেল লিখতে লিখতে। যা বৃষ্টি, বাইরে বেরিয়ে কিছু কিনে আনাও মুশকিল। আর এরকম বর্ষার দিনে একটু মুখরোচক না হলে কি আর চলে। আমার আবার বৃষ্টির দিনে মাঝে মাঝে পিজ্জার খিদে পায়। আর কি ওর্ডার করেই দিই, খুব জোড় আধঘন্টা নেবে আসতে। যাইহোক, এরকম একটা ঝড়জলের দিনে ভুতের কথা হচ্ছে আর আমার জামাইবাবুর কথা আসবে না তা কি আর হতে পারে। তার অভিজ্ঞতাগুলো আবার অদ্ভুত। জামাইবাবু বলে

সে নাকি কোনো জায়গায় কোনো অশুভ কিছু ঘটে থাকলে, বা কোনো অশরীরী থেকে থাকলে সেই অশরীরী নাকি ওকে দেখতে পায় বা কখনো অনুভব করতে পারে। বিশ্বাস হচ্ছে না তো। মনে হচ্ছে ছোট বলে আমাকে যা পারে টুপি পড়ায়। আমার ভুত সম্পর্কে আকর্ষণটা তার জানা তাই বানিয়ে মুখরোচক গল্প বলে। এই যেমন আমাদের বাড়ির ছাদে একদিন আমি দিদি আর জামাইবাবু উঠছিলাম। আমাদের দুতলাটা ফাঁকাই থাকে সাধারণত। আত্মীয় স্বজন আসলে তখন তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়। তাই একতলা থেকে তিন তোলার সিঁড়ি তা একদম শুনশান। সিঁড়ি দিয়ে জামাইবাবুই আগে উঠছিল। হঠাৎ তিন তলায় ওঠার আগের চাতালে দাঁড়িয়ে পড়লো কেমন যেন থতমত খেয়ে। বললো তোরা উঠে যা তারপর উঠছি। ছাদে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হলো তো বলে যে এখন বললে ভয় পেয়ে পাবি। পরে বলবো। জোর করতে বললো তোদের আসে পাশে কোনো মসজিদ আছে! বললাম হ্যাঁ দুটো বাড়ি পরেই তো, কেন? না তখন যখন উঠছিলি ওই চাতালে একজন টুপি পড়া দাড়িওয়ালা লোক দাঁড়িয়েছিল। বাকিটা জিজ্ঞেস করিসনা। ভয় সত্যি যে পাইনি তা নয়, তাই আর কিছু জিজ্ঞেসও করলাম না। পরে ভেবেছিলাম পাশের মসজিদটা ও নিজেই বোধয় দেখেছিল, সেই নিয়ে একটা গল্প ফেঁদে ভয় দেখালো বুঝি। কিন্তু একবার এমন একটা ঘটনা ঘটলো যে তার কোনো ব্যাখ্যা সত্যিই পেলামনা।

ফোন চলে এসেছে ডোমিনজ থেকে। আবার নীচে যেতে হবে। এটা আমাদের নিয়ম, ফ্লাট এ অপরিচিত কাওকে উঠতে দেয়া যাবে না। সিঁড়ির লইটটার যে কি হয়। মাঝে মধ্যেই কেটে যায়। অন্ধকারেই নামতে হবে। যাইহোক যেটা বলছিলাম। একবার আমার মামার বাড়ির সকলে দিদি জামাইবাবু সহযোগে পিসির বাড়ি গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদের আউরাঙ্গাবাদে। সারাদিন পদ্মার ধারে, নিমতিতার রাজবাড়ী ইত্যাদি দেখার পর আমরা ফিরলাম বাড়িতে। পিসির রান্নার হাত অসামান্য। রাতে সেই মহাভোজ কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া চলছে এমন সময় হঠাৎ জামাইবাবু পিসিকে ডেকে বলে আচ্ছা তোমাদের বাড়ির আসে পাশে কোনো বিধবা মহিলা একটা ছোট্ট বাচ্ছা কে নিয়ে থাকে বা থাকতো কি? পিসি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে কেন বলোতো! সে বলে না এমনি, বলে আবার খেতে শুরু করে। পিসি আর সেই মুহূর্তে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারেনা। তবে খটকা থেকেই যায়। না জানি রাস্তায় ধরে কেও কোনো কিছু বলেছে কিনা গ্রামের লোকজন। শত্রুর তো অভাব নেই। কে কি উদ্দেশ্যে কি বলে থাকবে। আর নতুন জামাই কি ভাববে সেসব শুনে। এই নিয়ে পিসি তো প্রচন্ড চিন্তিত হয়ে পরে। পিসমসাই কেও জানায়। শেষে আমার ডাক পরে, যে কেউ কি

এমডির রাস্তায় কিছু বলেছে বা জামাইবাবুর সাথে কি কেউ আলাদা ভাবে কথা বলছিল? আমি যথারীতি বললাম, না তো। এরকম তো কিছুই ঘটেনি। পিসি তখন বললো, আসলে একটা বিধবা মহিলা তো সত্যিই এমডির বাড়িতে কাজ করতো। পাড়াতেই বাড়ি। কিন্তু সে তো বহুদিন হলো, হটাৎ একদিন কাজে আসে বন্ড করে দেয়। পরে শুনেছিল গায়ে আগুন দেয় বাচ্ছা তা কে নিয়েই। সেই নিয়ে গ্রামের লোকের তো অযথা কুকথা বলতে বাধে না। কে জানি তোর জামাইবাবু কে কে কি বললো। চিন্তার বিষয়। একদিন জিজ্ঞেস করে তো তোর জামাইবাবুকে আলাদা করে। আমি এহেন একটা বিশাল কাজ পেয়ে লাফাতে লাফাতে চললাম রহস্য উধাতন করতে। জামাইবাবুকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল ব্যাপারটা। খাবার টেবিলের থেকে পিসীদের বাড়ির সদর দরজাটা দেখা যায়। আমরা যখন খাচ্ছিলাম জামাইবাবু নাকি দেখে ওই সদর দরজার সামনে একটি সাদা শাড়ি পরা মাঝবয়সী মহিলা একটা বাচ্চা হাত ধরে দাঁড়িয়ে। যেন ঢুকতে চাইছে বাড়িতে। কিছুটা এগিয়েও এল। কিন্তু তুলসী মণ্ডপটা আর পেরোতে পারলো না। জামাইবাবুর চোখাচোখি হতেই আবার ফিরে গেল। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা সদর দরজাটা সন্ধ্যের পর থেকেই খিল দেয়া হয়েছিল, আর খোলা হয়নি কোনো কারণে।

অদ্ভুত লেগেছিল কথাটা শুনে। আমার বাড়ির পাশের মসজিদটি একদিনে এসে লক্ষ করা যায় তবে এই ব্যাপারটা জানা সত্যিই অস্বাভাবিক। কিন্তু এসব ভাবতে ভাবতে তো সেই অনেকক্ষন হলো আমি সিঁড়ি দিয়ে নামা শুরু করেছিলাম। খেয়ালই নেই। এখনো নীচে পৌঁছলাম না কেন। সিড়িটা যেন শেষেই হচ্ছে না। আমি আরো তাড়াতাড়ি নামতে লাগলাম। কি আশ্চর্য! থাকি তো তিনতলায়, এটুকু নামতে এত সময় লাগে নাকি! রেলিং দিয়ে একবার নিচের দিকে তাকালাম। হ্যাঁ, একতলার গ্রীলটা চোখে পড়ছে আবছা আলোয়। মানে আমি দোতলায়। এতক্ষণে একটা তোলা নামলাম। আরো তাড়াহুড়ো করে নামতে শুরু করলাম। এই বাঁকটা ঘুরলেই মেন গেটটা পাবো। কিন্তু কৈ দরজাটা। আমি আবার রেলিং দিয়ে ঝুকে নীচটা দেখলাম। এ কি আমি তো এখনো দোতলাতেই। এবার কেমন একটা অজানা ভয় আমাকে পেয়ে বসলো। কিছু মাথায় আসছে না, কোনো হিসেব যেন মিলছেনা। আমি এবার উপরে উঠতে থাকলাম। এর উপর তলাতেই তো আমার ফ্ল্যাটটা। কিন্তু কৈ, ওটা খুঁজে পাচ্ছি না তো! দোতলার ফ্লাটটা আজীবন বন্ধ

থাকে। জানিনা কি কারণে কোনোদিন কোনো ভাড়া আসেনা। তাই সেই ফ্ল্যাটে যে কাউকে ডাকবো তার ও উপায় নেই। আমি দিক বিদিক শূন্য হয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করতে লাগলাম। না উপরে উঠতে পারছি, না নীচে নামতে। ঠিক এই সময় হঠাৎ নীচে গেট খোলার আওয়াজ পেলাম। কেও একটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। যাক বাঁচা গেল। কাওকে তো পাওয়া গেলো। রেলিং এ ঝুকে দেখলাম আবছা আলোয় ক্যাপ পড়া একটা ছেলে উঠে আসছে হাতে মনে হলো পিজ্জার বাক্স। কিন্তু আমি ডেলিভারি এর ছেলে টিকে তো আমার ফ্লাট নম্বরটা বলিনি। সে কিভাবে জানলো! আর নীচে তো তালা মারা থাকে সর্বক্ষণ। সে খুললই বা কেমন করে। আমি আরো আড়ষ্ট হয়ে পড়লাম। আর যেন হাত পা নড়ছে না। এদিকে পায়ের আওয়াজ টা ক্রমশ উপরে উঠে আসছে। আমি খুব জোরে চিৎকার করতে চাইলাম। কিন্তু গলার স্বর বেরোচ্ছে না কেন, এ কি? ছেলেটা আমার দুহাত নীচে এসে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে উপর দিকে তাকাছে সে, চোখগুলো যেন ধিক ধিক করে জ্বলছে। হটাৎ আমার কানের পাশে কেউ যেন বলে উঠলো, “madam, your pizza is here.”

ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ধরফরিয়ে উঠলাম। উফ! তবে স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষন! আমি নিজের ঘরেই, ডায়েরিটা খোলা সামনেই। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম লিখতে লিখতে কে জানে। এই হচ্ছে সমস্যা। ভুতের কথা লেখাও চাই আবার সেই নিয়ে ভাবতে গিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ফোনটা ধরলাম। ওপার থেকে আওয়াজ এলো, “ম্যাডাম আপনার অর্ডারটা ডেলিভারি করতে না পারায় খুব দুঃখিত। আসলে বৃষ্টিতে কোনো ওয়ার্কার বেরোতে পারছে না। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আপনার অর্ডারটা ক্যান্সেল করা হলো। আমরা এখনই আপনার আয়াকাউন্টে টাকাটা রিফান্ড করে দিচ্ছি।“ সত্যিই তো এই যা বৃষ্টি আর বাজ পড়ছে, বাইরে করো পক্ষেই বেরোনো সম্ভব না। ইটস ওকে বলে ফোনেটা রাখতে গিয়ে আমার ফ্ল্যাটের দরজার দিকে চোখ পড়ল। হটাৎ বুকটা ছ্যাত করে উঠলো। দরজাটা খোলা। দরজার ঠিক বাইরে একটা বাক্স পরে। উপরে লেখা ডোমিনজ পিজ্জা।

**************************************(সমাপ্ত)***********************************

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত