অতৃপ্ত

অতৃপ্ত

পর্ব-১

ধীরেধীরে চোখ মেলে তাকালাম। কিন্তু চোখে রোদ এসে লাগায় পরক্ষণেই বন্ধ করে ফেললাম চোখ।ঠোঁট শুকিয়ে গেছে।জিভ দিয়ে চেটে নিলাম কিছুনা।সাথে রক্তের নোনাস্বাদ।উঠতে গিয়েও টলে পড়ে গেলাম।মাথায় চিনচিনে ব্যাথা।হাত দিয়ে দেখলাম ফেটে গেছে অনেকটা জায়গা।
চারিদিকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা। তবে বেলা কিছুটা বেশি হওয়ায় কুয়াশার চাদর ঠেলে রোদ এসে পড়েছে ভেজা ঘাসে।শিশিরবিন্দুগুলো ঝকঝক করছে।পেছনেই শুকনোপ্রায় নদী।সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।দুপাশে পাইন গাছের সারি আর মাঝখান দিয়ে ঝকঝকে কালো পিচের রাস্তাতে শুকনো পাইনপাতা পড়েছে।কিন্তু শিশিরে ভেজা থাকায় মচমচ আওয়াজ হচ্ছেনা। এলোমেলোভাবে হেঁটে চলছি।
গতকালই পেছনের অই নদীর ধারে আমার বয়ফ্রেন্ডের হাতে মৃত্যু হয়েছিলো আমার।

পর্ব-২

এই মেঘ শোনো….
ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলো মেঘ।আমার ডাকে পিছু ফিরে তাকিয়েই এক টুকরো হাসি উপহার দিলো ও।ওর এই হাসিটা আমার খুব পছন্দ।কিছুটা অপ্রকৃতস্থ ভাব থাকে।ছেলেটাকে অনেক ভালবাসি আমি আর ও আমাকে।আর দুজনেই একই ভার্সিটিতে পড়ি।ভার্সিটিতে এসেই আমাদের পরিচয় আর রিলেশনের শুরু।গতমাসেই আমাদের রিলেশনের দুবছর পূর্ণ হলো।
মেঘ এগিয়ে এলো আমার দিকে।কিছুটা কুশল বিনিময়ের পর ভাবলাম কথাটা বলেই ফেলি।কিন্তু কিভাবে বলবো ভেবে পাচ্ছিনা।কোনোমতে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে বললাম,”মেঘ,আমি অন্তঃসত্ত্বা। ”
চমকে উঠলো ও….
বলল,কি বলছো তুমি! এখনোতো আমাদের ক্যারিয়ারের শুরুই হলোনা।
বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে যা হবার হয়ে গেছে। আর আমাকে কিছুদিনের মাঝেই বিয়ে করতে।
কিন্তু ও বলল এখন বিয়ে করলে নাকি ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।এবং ও যা বলল তাতে আমার অবাক হবার পালা! আমার প্রথম বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেলতে বলছে ও।আমি তা কখনওই করবোনা।কখনওই না।দৌঁড়ে চলে আসলাম ওখান থেকে।প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে….
রাতে মেঘের ফোন।রিসিভ করতেই স্যরি বলল।বলল আগামীকাল আমাকে নিয়ে লংড্রাইভে যাবে এবং সামনের সপ্তাহেই আমরা বিয়ে করে ফেলবো।
পরেরদিন লংড্রাইভে বের হলাম আমরা।দূরে নির্জন কোথাও ঘুরে আসার প্ল্যান।মনটা ফূর্তিরে ভরে আছে।আমি মা হতে চলেছি….
বনে ঘেরা সুন্দর একটা নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামালো ও।রাস্তা দেখে মনে হচ্ছে বহুদিন কারো যাতায়াত নেই।চারিদিকে পাখির কলরব।হাঁটতে লাগলাম দুজন আর পাশাপাশি গল্প।আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।একসময় একটা নদীতীরে পৌঁছালাম।শীতের বিকেল।ঠাণ্ডা হাওয়া যেন গায়ে হিম ধরিয়ে দিচ্ছে।কেন জানিনা এই শীতকাল আমার খুব পছন্দ। দুহাত মেলে নদীর দিকে তাকিয়ে আছি।আচমকা….গলায় ধারালো কিছুর আঘাত।চোখ বন্ধ করার আগ মুহুর্তে দেখতে পেলাম মেঘকে।চোখে মায়া মিশ্রিত পৈচাশিক হাসি।

পর্ব-৩

হাঁটতে হাঁটতে মেঘদের বাড়ি চলে এসেছি।গিয়ে দেখলাম মেঘ ওয়াশরুমে।আর টেবিলে একটা ডাইরি। হাতে নিয়ে পড়তে লাগলাম।লেখা আছে,” আমার কিছুই করার ছিলোনা ।রিয়া বেঁচে থাকলে ওকে আমার বিয়ে করতে হতো আর এতে আমার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যেতো।আর আমি তা কখনওই চাইনা।তাছাড়া আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলেছি।মানুষের মন বোঝা দায়।একসময় ওকেও খুব ভালবাসতাম। কিন্তু কি করবো! নতুন কাউকে ভালবেসে ফেলেছি যে….।”
দরজায় খুট করে আওয়াজ…পেছনে তাকিয়ে দেখি,মেঘ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে।হাহাহা,বেচারা আমাকে দেখে বাকহীন হয়ে গেছে।একটা অশরীরীকে দেখে এর চেয়ে ভাল রিয়েক্ট আশা করা যায়না।দৌঁড়ে পালাতে চাইলো কিন্তু সব দরজা বন্ধ একটা বাদে।ছাদের দিকে দৌড়াতে লাগলো ও।একসময় টাল সামলাতে না পেরে সোজা নিচে…
স্যরি মেঘ…..বলেছিলাম বেঁচে থাকলে দুজনে একসাথে থাকবো আর মরে গেলেও একসাথে।
আমাকেতো মেরে ফেললে আর তুমিও।কিন্তু, আমাদের মনোবাসনাগুলো রয়ে গেলো অতৃপ্ত….

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত