আজ দশ বারো দিন হল বাঘাযতীনে বাড়ী কিনে এসেছি । খুবই সস্তায় পেয়ে গেলাম বাড়ীটা তাই আর হাতছাড়া করলাম না। তবে কেন জানিনা সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে । কাজের লোক তো কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনেক কষ্টে একটা বউকে পেয়েছি তাও সে একটি শর্তে কাজের জন্যে রাজি হয়েছে, সকালবেলাতেই শুধু কাজে আসবে । দিনে ওই একবার , আমি তাতেই রাজি হয়ে গেলাম । একই তো মায়ের বয়স হয়েছে , একা সামলাতে পারে না। তার উপরে আমি ও বাড়ী থাকি না সারাদিন। অফিস থেকে আসতে আসতে সেই সন্ধ্যা হয়ে যায় ।
যাইহোক কাজের বউটা প্রথমদিন এসেই জানতে চাইল, -” তোমরা কিছু টের পাওনি?”
আমরা অবাক হয়ে জানতে চাইলাম -” কি টের পাবো গো ?”
সে বলে উঠল, -” না না কিছু না , বলেই সে নিজের কাজে মন দিয়ে দিল এবং ঝড়ের বেগে কাজগুলো সেরেই সে যেন পালাতে পারলে বাঁচে ।
প্রথম দিন পনেরো , কুড়ি খুব ভালোই কাটলো । তারপর থেকেই শুরু হলো বিপত্তি , ঘর থেকে জিনিসপত্র উধাও , খাবার করে টেবিলে রেখেছে খাবার উধাও। অদ্ভুত ব্যাপার বাড়ীতে তো অন্য কেউ নেই যে এইরকম দুষ্টুমি করবে ।
একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে দেখছি আমার ঘরটা পুরো তছনছ হয়ে আছে ।
সমস্ত জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাকার অবস্থা , সাথে সাথে আমি মাকে ডেকে দেখাই। মা তো দেখে পুরো অবাক হয়ে যায় , বলে – ” দ্যাখ মিলি বিকেলবেলায় এসেই কি সুন্দর করে তোর ঘর আজ গুছিয়ে দিয়ে গেছি পরিপাটি করে। কিন্তু এসব কি হচ্ছে বলতো ! আমার তো ভালো মনে হচ্ছে না একদম । তাহলে কি কেউ আছে এই বাড়ীতে , যাকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না।”
আমি মাকে থামিয়ে দিয়ে বলি,-” কি যে বলো না তুমি , তা কখনও হয়।”
মা খুব ঘাবড়ে যায় , মুখ -চোখ কেমন শুকিয়ে যায় ।
সেদিন রাতের বেলায় হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় । মনে হলো কে যেন করুন সুরে কাঁদছে। মনের ভুল ধারণা ভেবে আবার শুয়ে পড়লাম । ওই নিয়ে মাকে কিছু আর বললাম না। তবে রাজীব কে ফোন করে সব জানালাম,যা যা ঘটছে আমাদের সাথে । ও তো শুনে ফোনের মধ্যেই হাসতে থাকলো । আমার খুব রাগ হয়ে গেল ৷বললাম -” তোমাকে জানানোই আমার ভুল হয়েছে , সমাধান তো করলেই না , উল্টে বিদ্রুপ করছো, চলো বাই” বলেই আমি রাগের চোটে ফোনটা কেটে দিলাম ।
রাজীবটা চিরকালই ওইরকম ,তাছাড়া ওর এইসব ভূত- প্রেতে বিশ্বাস নেই । রাজীবের সাথে আমার বিয়ে হবার কথা এই সামনের বছরে মাঘ মাসে । আমাদের সম্পর্ক আজ নয় বছরের । ওর সাথে আমার আলাপ হয়েছিল আমারই বান্ধবীর দাদার বিয়েতে। ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার , চাকরি সুত্রে থাকে আগ্রা। আমি এখানে একটি প্রাইভেট ফার্মে জব করি । এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি তা নিজেও জানি না।
এরপরে খেয়াল করে দেখেছি ঠিক রোজ আড়াইটে বাজলেই আমার ঘুম টা ভেঙে যাচ্ছে ।
ওই একই ঘটনা ঘটে চলেছে আজ বেশ কদিন হল। না আজ আর শুলাম না। দেখতেই হবে, কি ঘটছে ঘটনাটা। আস্তে আস্তে সেই কান্নার করুন আওয়াজের শব্দ কে অনুসরণ করে গেলাম। গিয়ে যা দেখলাম তা নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি ভুতে বা অশরীরী কখনও বিশ্বাস করিনা কিন্তু দেখলাম একজন মহিলা পরনে সাদা শাড়ি লাল পাড়। কেঁদেই যাচ্ছে আর বাড়ির এদিক থেকে ওদিক খালি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার ওই কান্নার আওয়াজ শুনলে যেকোনো লোকের গায়ের রক্ত হিম হয়ে যাবে। আমার ভুত-প্রেতে বিশ্বাস নেই কোনো কালেই। কিন্তু যা দেখেছি তা অস্বীকার করি কি করে? আমার গলাটা যেন কে চেপে ধরে রেখেছে। অনেক কষ্টে গায়ে বল এনে জিজ্ঞেস করলাম,” কে তুমি? এইভাবে কাঁদছ কেন?”
আমার প্রশ্নে সে আমার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।তাকে দেখে আমার বাকরুদ্ধ হয়ে গেল , সারা শরীর শীতল হয়ে গেল , পাগুলো যেন ভারী হয়ে গেল । সারা শরীরে যেন ভয়ের এক শীতল অনুভূতি খেলে গেল । দেখলাম সে যেন আমার দিকে এগিয়ে আসছে , চোখ দুটো কোটরে ঢোকানো, লালচে রঙের । মুখের চামড়া ঝুলে আছে , মনে হচ্ছে এখনই খসে পড়বে । ওই দেখে আমার হার্টবিট আরও বেড়ে গেল । শরীর অচল হয়ে উঠল , এক ফোঁটা ও শক্তি নেই , নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে , মনে হচ্ছে এই বুঝি জ্ঞান হারাবো।
আর তখনই সে বলে উঠল, -” তোমার কোনও ক্ষতি আমি করবো না। তুমি ভয় পেও না আমায়।”
একটু নিশ্চিন্ত হয়ে পুনরায় জানতে চাইলাম-” তুমি এইভাবে রোজ রাতে কাঁদো কেন ? কে তুমি ?”
আমার কথা শুনে সে বলতে থাকে -” আজ থেকে বারো বছর আগে আমি বিয়ে হয়ে এই বাড়ীতে আসি। বেশ সুখেই ঘর করছিলাম । দুটি সন্তানের জননী ও হই। প্রথমে একটি ছেলে পরে একটি মেয়ে । বাড়ীতে শাশুড়ি ও বিধবা জা ও ছিল । স্বামী একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করতো। একদিন রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় , দেখি বিছানায় স্বামী নেই । ভাবি হয়তো সে বাথরুমে গেছে । তাই আর কিছু না ভেবে আবার ঘুমিয়ে পড়ি । এরপর হঠাৎ কি মনে হওয়াতে তারপরের কদিন ও খেয়াল রাখি স্বামী ওঠে কিনা । এবং দেখি সত্যিই তাই সে রোজ রাতেই কোথায় যেন যায় । একদিন স্বামীকে অনুসরণ করে দেখতে পাই সে তার বৌদির ঘরে যায় ও তার সাথে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত । লজ্জায় , ঘেন্নায় গা শিরশির করে উঠল । তার মানে স্বামীর সাথে এই বড় জায়ের অবৈধ সম্পর্ক ছিলো তা কখনও বুঝতে পারি নি। জা খুবই চালাক ছিলেন,তাই কখনও টের পায়নি । পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল কি করবো বুঝে উঠতে পারলাম না বাধ্য হয়ে শাশুড়িকে কথাটা জানালাম। উনি শাসন করা তো দুরে থাক উল্টে আমায় বললেন -‘ তোমার কি দরকার বাপু এসব ব্যাপারে মাথা ঘামিয়ে । তোমার কি কোনো কমতি রেখেছে আমার বাবু ? বড় বৌমা অল্প বয়সে বিধবা হয়েছে , শরীরের কি ক্ষিদে তাতো কেউ না বুঝুক আমি তো বুঝি । তার ও তো সখ আহ্লাদ থাকতে পারে নাকি । সুতরাং যা হচ্ছে ভালো চাও তো মেনে নাও, এতে সংসার সুখের হবে বুঝলে ।’
অগত্যা স্বামীকেই বললাম -‘ তুমি যেকোন একজনকে বেছে নাও , নয় আমায় , নয় তোমার বৌদিকে। এইভাবে দুজনকেই ভোগ করবে তা আমি কিছুতেই মেনে নেব না।’
এরপর স্বামী আমার কাছে ক্ষমা চায় বলে সে ভুল করে ফেলেছে । আর এরকম হবে না। জায়ের সাথে কথা বন্ধ করলাম । স্বামী ও যাতে তার সাথে কথা না বলে সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখলাম । এইভাবে বেশ কিছু মাস কেটে গেল । ছেলের বয়স তখন সাত বছর আর মেয়ের বয়স চার বছর । ওরা ছোটো তো ওদের তো আর সবসময় আটকাতে পারি না। যতটা পারি আগলে রাখার চেষ্টা করি । তবে মেয়েটা যে ওর জ্যাঠির খুব নেওটা। তাই একদিন ঠিক করি এই বাড়ীতেই আর থাকব না। তাই স্বামী অফিস থেকে ফিরতেই তাকে বলি -‘ আমাদের নিয়ে তুমি অন্য জায়গায় বাড়ী ভাড়া করে নিয়ে চলো। আমি স্বামী সন্তান নিয়ে সুন্দর ভাবে একটা সংসার করতে চাই । শুধু আমরা চারজন থাকব সেখানে । স্বামী রাজি ও হয়ে গেল । আমি তো একটু অবাকই হয়ে গেলাম , ভেবেছিলাম অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে আমায় রাজি করাতে হবে ।
আমি এটাও বলেছিলাম যে -‘ আমরা আলাদা থাকলে কি হবে , তুমি তোমার মাকে যেমন টাকা দিয়ে যাচ্ছো সংসার খরচার জন্যে তাই দিয়ে যাবে ।’ সে শুনে বলেছিল -‘ সত্যি দীপ্তি তুমি কত চিন্তা করো সবার জন্যে । তুমি যা যা চাও তাই আমি করবো , তোমার কোনো চিন্তা নেই ।’
এরপর সে আমায় বলে লোক লাগিয়েছি বাড়ী খোঁজার জন্যে , পছন্দ হয়ে গেলেই ,আমি তোমাকে নিয়ে গিয়ে বাড়ী দেখিয়ে আনবো। আমি ও সেই আশায় ছিলাম । এইভাবে আরও সপ্তাহ দুয়েক পরে একদিন আমার স্বামী অফিস থেকে ফিরেই বলে -‘ দীপ্তি বাড়ী পেয়ে গেছি , তোমায় কাল নিয়ে যাবো দেখাতে কেমন ।’
আমি ও শুনে খুব খুশি হই ।
হঠাৎ সে বলে -‘ আজ বাচ্চাদের মায়ের কাছে পাঠিয়ে দাও শুতে।
আমি চমকে বলি সেকি কেন ?
সে বলে-‘ আজ তোমায় খুব আদর করবো দীপ্তি ।
আমি বলি-‘ কি ব্যাপার এতো সোহাগ কেন ?’
শুনে সে বলে -‘ কেন বউকে কি একটু সোহাগ করা যায় না? আজ যে ভীষন ইচ্ছে করছে তোমায় সোহাগ করতে।’
আমি ওর নাকটা টিপে আদর করে চুলগুলো ঘেটে দিই।
তারপরে বলল-‘ দীপ্তি আজ সুন্দর করে সাজো তুমি একদম নতুন বউয়ের মতন , ঠিক যেদিন আমাদের ফুলশয্যার দিন যেমন করে সেজেছিলে তুমি , সেই সাজে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আজ।’
শুনে আমার যে কি আনন্দ হচ্ছিল তা কি বলবো , ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলাম না। ছেলে মেয়ে দুটো কে শাশুড়ির কাছে শুতে পাঠিয়ে দিলাম । ছেলেটা কিছুতেই আমায় ছাড়া যাবে না, কি কান্না তার মায়ের কাছেই শোবে। আমি ওকে আদর করে বললাম তুমি লক্ষ্মী ছেলের মতো ঠাম্মার কাছে একটু শোও ।
আমি কিছুক্ষণ পরই তোমায় এসে নিয়ে যাবো সোনা আমার কাছে , বলে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে ওকে দিয়ে আসলাম শাশুড়ির কাছে ।
ঘরে এসে খুব সুন্দর করে সাজি আমি । আমার স্বামী ও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে সাজালো, আবার জুঁই ফুলের মালা ও এনেছিল মাথায় দেওয়ার জন্যে ,নিজের হাতে ফুলের মালা লাগিয়ে দিলো ও। এতো ভালবাসা মনে হয় আগে কখনও আমায় দেয় নি। আমি আবেগে ভেসে গেলাম । ও আমাকে সোহাগে সোহাগে ভরিয়ে দিল। আমিও ভেসে গেলাম ওর সোহাগের স্রোতে ।
তারপরে ও আমায় একটা গ্লাসে করে সরবত খাওয়ালো , নিজেও খেল। আমি অবাক হয়ে বললাম এই রাতে আবার সরবত ! ও বলল আরে স্পেশাল সরবত খাও না, দেখবে কেমন এনার্জী আরও বেড়ে যাবে । আমি ও খেয়ে নিলাম । এরপরে আস্তে আস্তে আমার চোখ দুটো কখন যে জুড়ে গেল আমি বুঝতে পারিনি । টের পেলাম যখন দেখছি আমার সারাটা শরীর আগুনে ঝলসে পুড়ে যাচ্ছে , উঃ কি জ্বালা সে। এখনও সেই ক্ষত শরীর নিয়ে আমি দগ্ধে দগ্ধে মরছি। কোনরকমে চোখ খুলে দেখলাম ওরা তিনজন আমায় দেখে হাসছে শাশুড়ি , স্বামী আর জা। এইভাবে আমায় এই পৃথিবী থেকেই বার করে দেবে বুঝতে পারিনি । ‘
আমি শুনে তো অবাক হয়ে গেলাম । মানুষ ও এত নির্মম হতে পারে ? আবার জানতে চাইলাম তারপর কি হলো ?
দীপ্তি বলতে থাকলো-‘ তারপর আর কি , সবার কাছে ওরা প্রমান করল সেদিন আমাদের বাড়ীতে ফিউজ উড়ে গিয়েছিল আর তাই আমি হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রেখেছিলাম আর সেটাই নাকি আমারই অসর্তকে কখন হাত লেগে বিছানায় উল্টে গিয়ে মশারিতে আগুন লেগে আমার মৃত্যু ঘটে । অথচ আমার ভালোই মনে আছে জানো সেদিন কিন্তু আমি মশারি টাঙাইনি।
রাতারাতি স্বামীকে ও ওরা সরিয়ে দিয়েছিল । প্রমান করেছিল ও নাকি অফিসের কাজে বাইরে গিয়েছিল তখন । এতো অধর্ম কি সয় বলো । উপরে ভগবান বলেও একজন আছেন । তিনি সবার বিচার করেন । একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই আমার স্বামীর মৃত্যু হয় অ্যাক্সিডেন্টে। ছেলে মেয়ে দুটো একেবারেই অনাথ হয়ে গেল । এরপর আমার শাশুড়ি আর জা বাচ্চা দুটো কে নিয়ে অন্যত্র চলে গেল এই বাড়ী টা বেঁচে দিয়ে । বড় জায়ের তো কোনো সন্তান ছিল না , সে আগাগোড়া আমার মেয়েকেই নিজের মেয়ের মতো ভালবাসে। তাই মেয়েটার তেমন কোন কষ্ট হলো না আমাদের জন্যে । কষ্ট হলো ছেলেটার সে যে মা ছাড়া কিছুই বুঝতো না , খালি কেঁদে কেঁদে আকুল হতো আমার জন্যে ।
আমার একটা উপকার করে দেবে , আমি কথা দিচ্ছি এই কাজ টা করে দিলে আর এখানে থাকবো না আমি । আমার আত্মার শান্তি হবে ।
বলো কি করতে হবে ?
আজ আমার ছেলেটা হাসপাতালে ভর্তি , ওর ব্রেন টিউমার হয়েছে , অনেক টাকার প্রয়োজন। ওরা ওকে হাসপাতালে ফেলে রেখে দিয়েছে , ঠিকভাবে চিকিৎসা ও হয়না ওর। আমার কাছে কিছু টাকা আছে , এখনও আগলে রেখে দিয়েছি । তুমি আমার ছেলের কাছে পৌঁছে দেবে ওই টাকাগুলো , তাহলে ছেলেটা আমার প্রাণে বাঁচে ।
বলেই দেখলাম সে দুহাত জুড়ে আমার কাছে কেঁদে যাচ্ছে । অশরীরী হলেও সে যে মায়ের প্রাণ । আমার ও চোখে জল এসে গেল । আমি রাজি হলাম , বললাম -‘ বলো কোথায় রাখা আছে টাকা ?
আমি কাল সকালেই গিয়ে দিয়ে আসবো। ‘
সে বলল -‘নিচের যেই ঘরটা তোমরা এখনও খুলতে পারোনি কত চেষ্টা করেছিলে মনে আছে । তুমি ঠিক করেছিলে লোক নিয়ে এসে দরজা ভেঙে ভেতর থেকে সব জিনিসপত্র ফেলে দেবে কিন্তু আমিই তা হতে দিইনি এতদিন । ওই ঘর আমি খুলে দিচ্ছি , যাও ওখানে একটা ছোট্ট খেলনার বাক্স পাবে তার মধ্যেই আমি টাকাগুলো কাপড়ে মুড়ে লুকিয়ে রেখেছি ।
আমি বললাম -‘বেশ , সে নয় আমি দিয়ে আসলাম কিন্তু কি করে বুঝবো তুমি এ বাড়ী থেকে চিরকালের মতো চলে গেছো।
সে বলল-‘ যখন আমি দেখবো আমার ছেলে এ টাকাগুলো পেয়েছে তখনই দেখতে পাবে এ বাড়ীর সামনে যে বেল গাছটা আছে তা ভেঙে পড়ে যাবে ।
এই বলে সে মিলিয়ে গেল ।
সেইরাতে আর আমার ঘুম হলো না। ছটফট করতে থাকলাম কখন ভোর হবে আর আমি ও টাকা নিয়ে হাসপাতালে যাবো আর এই অশরীরীর হাত থেকে চিরতরে নিষ্কৃতি পাবো।
এরপর যথাক্রমে ভোর হলো , আমি ও ওর কথানুযায়ী নিচের সেই বন্ধ ঘরে যাই আর কি অদ্ভুত ব্যাপার যা আমরা হাজার চেষ্টা করেও খুলতে পারিনি সেই দরজাটা একটু ঠেলা দিতেই খুলে গেল আর ঘরটা খুলতেই একটা ভ্যাঁপসা গন্ধ নাকে লাগলো । কোনরকমে টাকাগুলো খুঁজে বার করেই আমার একটা ব্যাগে ভরে ছুটলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে , দেখেই মা বলল -‘ কিরে কোথায় যাচ্ছিস এতো ভোরে ?
আমি যেতে যেতেই বললাম -‘ ফিরে এসে তোমায় সব বলবো মা । এখন হাতে আমার একদম সময় নেই , বলেই ছুট দিলাম ।
সোজা চলে গেলাম ওর বলে দেওয়া হাসপাতালে । এবং ওর ছেলের নামে খোঁজ করতেই পেয়ে গেলাম । হাসপাতালের কতৃপক্ষের সাথে দেখা করে ওর ছেলের সাথে দেখা করার অনুমতি নিয়ে গেলাম ছেলেটার কাছে । দেখে খুব মায়া হলো , ওকে বললাম -‘ আমি তোমার মায়েরই পরিচিত একজন । তোমার মা তোমাকে দেওয়ার জন্যে বেশ কিছু টাকা রেখেছিল জমিয়ে কিন্তু তোমাদের বাড়ী বিক্রি হয়ে গেছে বলে আর খুঁজে পাইনি তোমাদের । অনেক কষ্টে জানতে পেরেছি কাল তাই আজই আমি তোমার কাছে ছুটে এসেছি বলেই তার হাতে সেই টাকাগুলো তুলে দিয়ে বলি আজ তোমার এই বিপদের দিনে এই টাকাগুলোর খুবই দরকার । তুমি চিন্তা করো না এবারে তোমার সুচিকিৎসা হবে ।আমি পরম নিশ্চিন্ত হই, দেখতে পাই দীপ্তি তার ছেলের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে । আমি আর ছেলেটাকে বলতে পারলাম না এ কথা । শুধু চুপচাপ বাড়ী ফিরে এলাম । বাড়ীতে ঢুকতে গিয়ে দেখি সত্যিই বেলগাছ টা আপনা-আপনি মাটি থেকে উপরে পড়ে আছে । অথচ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ ছাড়াই । সেই দেখে আমার মা ও কাজের দিদিটি চেঁচামেচি করছে । আমাকে দেখতে পেয়ে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়লো । আমি মা কে শান্ত করে ঘরে নিয়ে এলাম ও গতকালের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা খুলে বললাম । মা শুনে তো ভয় পেয়ে গেল । আমি তাকে বললাম ভয় পাওয়ার আর কোনো কারণ নেই । মা বলল বেশ তাহলে বাড়ীতে পূজো দিতে হবে সাথে হোম-যঞ্জ করতে হবে তবেই আমার শান্তি । এরপর আর কোনদিন ও অশরীরীর আত্মা টের পাইনি আমরা । বাড়ীটাকে রিমডেলিং করিয়ে শান্তিতে রয়েছি আমরা ।
*****************************************(সমাপ্ত)***************************************