গোরস্থানে সাবধান!

গোরস্থানে সাবধান!

রাতে, গোরস্থানে

এবারের কাহিনিটি সনজু ভাট নামের এক ভারতীয় যুবকের। ২০০৯ সালের দিকে পুরানো চাকরি ছেড়ে নতুন একটা চাকরিতে ঢোকে সে। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস হলো ব্যাঙ্গালুরুতে। এমনিতে তার পোস্টিং পুনেতে হলেও ছোট্ট একটা কর্মশালা আর কোম্পানির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য তার ডাক পড়ল। ব্যাঙ্গলুরুতে। মোটমাট পাঁচদিন থাকতে হবে তাকে ওখানে। ব্যাঙ্গালুরুতে পৌঁছে আবিষ্কার করল এখানে তার মত আরো আটজন নবীন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়েছে। অফিসের কাছেই কোম্পানির একটা বাংলোতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে তাদের। সকাল নটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চলে প্রশিক্ষণ আর কর্মশালা। কাজেই নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিয়ে নতুন পরিচয়টা ঝালাই করে নেওয়ার বেশ ভাল সময় পায় তরুণেরা। তবে এই আটজনের মধ্যে বিশেষ করে অজয়, শৈলেশ আর নবীনের সঙ্গে বেশ জমে গেল সনজুর। অজয় একজন পাঞ্জাবি। শৈলেশ মুম্বাইয়ের আর নবীন ব্যাঙ্গালুরুতেই থাকে।

এক রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর কথা-বার্তার মাঝখানেই নবীন জানাল এই বাংলোর কাছেই একটা গোরস্থান আছে। বাংলোর কেয়ারটেকার তাকে জানিয়েছে ওখানে নানান ধরনের অদ্ভুত কাণ্ড-কারখানা হয়। কবরস্থানের দিকে চলে-যাওয়া রাস্তাটা নির্জন। আর রাতে লোকজন সাধারণত ওই রাস্তা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কেয়াটেকার নবীনকে বলেছে, সে যেন রাতের বেলা গোরস্থানের দিকটা, না মাড়ানোর জন্য সাবধান করে দেয় অন্যদের। এদিকে ভূত-প্রেত কিংবা অতিপ্রাকৃত ঘটনায় অজয়ের মোটেই বিশ্বাস নেই। তবে বাকিরা কৌতূহলী হয়ে উঠল বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু নবীন এর চেয়ে বেশি কিছু জানে না। কেয়ারটেকারও আর কিছু বলতে রাজি হলো না। কাজেই তখনকার মত চাপা পড়ে গেল বিষয়টি।

দেখতে-দেখতে ব্যাঙ্গালুরুতে শেষ দিন এসে গেল তাদের। রাতে নতুন কর্মকর্তাদের সম্মানে এক হোটেলে চমৎকার নৈশভোজের আয়োজন ছিল। তবে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করল অজয়। পানটাও বোধহল একটু বেশিই করে ফেলল। বাংলোতে ফিরে গোছগাছ, শুরু করে দিল সবাই। কারণ বেশ সকাল-সকালই ব্যাঙ্গালুরু ছাড়বে তারা।

গোছগাছ শেষে এই কয়েক দিনের স্মৃতিচারণায় মেতে উঠল। এসময়ই আবার পুরানো গোরস্থানটার প্রসঙ্গ টানল নবীন। অজয়কে এটা নিয়েঠাট্টা-মস্করা করতে দেখে বলল, এতই যদি সাহস থাকে তাহলে এই রাতের বেলা এক ঘণ্টা ওখানে থেকে আসতে। অজয়েরও কী হলো! মুহূর্তের মধ্যে চ্যালেঞ্জটা নিয়ে নিল। তারপরই আর কোনো কথা না বলে বাংলো থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরল। এবার অন্যরা তাকে থামানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কাজ হলো না একটুও। এদিকে অ্যালকোহলে কখনওই আসক্তি নেই সনজুর। মাথাটাও ঠাণ্ডা। এই রাতে অজয়কে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না মনে করে, সঙ্গী হলো তার।

সমাধির দিকে চলে-যাওয়া রাস্তাটা আসলেই নির্জন। মোটামুটি এক কিলোমিটারের মত হাঁটার পর সেখানে পৌঁছল তারা। তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে বারোটা। বেশ পুরানো একটা গোরস্থান এটা। এখন লোকেরা খুব কমই লাশ কবর দেয় এখানে।

বেশ শীত পড়েছে। সময়টা শীতকাল, আর ব্যাঙ্গালুরুতে শীতে যে বেশ ঠাণ্ডা পড়ে যারা সেখানে থাকেন কিংবা ঘুরতে গিয়েছেন তারা ভালই বলতে পারবেন। গোরস্থানের গেটে তাদের আটকালেন এক বুড়ো। বললেন তিনি আবু চাচা, কবরস্থানের কেয়ারটেকার। কৌতূহল নিয়ে এত রাতে এখানে আসার কারণ জানতে চাইলেন আবু চাচা। অজয় যেন এমন একটা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুতই ছিল। বলল এখানে তার একজন আত্মীয়কে গোর দেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য ব্যাঙ্গালুরুতে এসেছে সে। কাল সকালেই আবার লণ্ডনে উড়াল দেবে। তাই রাতে আসা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আবু চাচা সমবেদনা জানিয়ে তাড়াতাড়ি দেখা শেষ করে ফিরতে বললেন।

ধীরে-ধীরে সমাধির ভিতর দিয়ে এগিয়ে চলল দুজনে। সাধারণ গোরস্থানের মতই মনে হচ্ছে। সিমেন্ট বাঁধানো পথের দুপাশে সারবেঁধে সমাধি। চারপাশে ভুতুড়ে নীরবতা। অবশ্য কখনও-সখনও নির্ভয়ে ঘুরে বেড়ানো পাখি, শিয়াল কিংবা অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর ডাক শোনা যাচ্ছে। সামনেই বসার একটা আসন। অজয় বলল এখানে কিছুক্ষণ বসে নীরবতাটা উপভোগ করতে চায়।

একটু অস্বস্তিবোধ করলেও অজয়ের পীড়াপীড়িতে না করতে পারল না সনজু। একটু পরেই পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরাল অজয়। জায়গাটার পবিত্রতা নষ্ট হবে এই ভেবে, তাকে বিরত রাখার চেষ্টা করল সনজু। কিন্তু তার কথায় কান না দিয়ে কাজ চালিয়ে গেল অজয়। আরও কয়েকটা মনিট পার হলো। সনজুর কাছে মনে হলো যেন অনন্তকাল ধরে এখানে বসে আছে। তারপরই অজয় বলল আরও সামনে এগিয়ে গোটা জায়গাটা দেখতে চায়। কয়েক কদম এগিয়েই সনজুকে অবাক করে দিয়ে জানাল তার হঠাৎই দারুণ প্রস্রাব চেপেছে। এখানে এ ধরনের কিছু না করার জন্য পইপই করে তাকে নিষেধ করল সনজু। তারপর বলল তাদের দেরি না করে গোরস্থান ছাড়া উচিত। কিন্তু একগুঁয়ে স্বভাবের অজয় কর্ণপাতই করল না তার কথায়। চোখ দিয়ে একটা ইশারা করে, একটু দূরের একটা ঝোপে ঢুকে পড়ল। বেশ ঘন ঝোপটা। যেখানে আছে সেখান থেকে তাই আর অজয়কে এখন দেখতে পাচ্ছে না সনজু। হঠাৎই খুব দুর্বল মনে হতে লাগল নিজেকে তার। শ্বাস নিতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মনে হলো যেন কেউ চেপে ধরে দম বন্ধ করে মারতে চাইছে তাকে। হাঁটুর ওপর ভর দিয়ে রাস্তার ওপর বসে পড়ল সে। পথের সামনে যখন চোখ গেল তখন দেখল একটা ছায়ার মত জিনিস আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। এক মুহূর্তের জন্য দাঁড়াল ওটা। সনজু কেঁপে উঠল, মনে হলো তার দিকে একবার ভুতুড়ে দৃষ্টিতে তাকিয়েছে ওটা। তারপরই অদৃশ্য হয়ে গেল।

সনজুর মাথা ঘুরছে। ভয়ের একটা শীতল স্রোত ছড়িয়ে পড়েছে শরীরে। পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারছে না কিছুই। নিজের ওপর জোর খাটিয়ে একটু সুস্থির হলো। তারপরই মনে পড়ল অজয় এখনও ফেরেনি। নাম ধরে ডাকল। কিন্তু কোনো জবাব পেল না অপর তরফ থেকে। একটু আগে যে ঝোপটার ভিতর অদৃশ্য হয়েছে সে শরীর টেনে-টেনে সেদিকে এগুল। সেখানে পৌঁছেই আঁতকে উঠল। মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে অজয়। কী মনে করে নিচু হয়ে জোরে-জোরে ঝাকাতে লাগল তাকে। ভাগ্য ভাল এটা কাজে লাগল। আস্তে-আস্তে জ্ঞান ফিরে আসতে লাগল অজয়ের।

যখন পুরোপুরি জ্ঞান ফিরল, জানাল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার সময় ঝোপের মধ্যে মৃদু একটা নড়াচড়া টের পায়। তারপরই মনে হলো কে যেন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপর দুর্বলতা আর দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়। সনজুকে চিৎকার করে ডাকবে এমন সময় পিছনে জোরে একটা আঘাত এসে লাগে। তারপরই অজ্ঞান হয়ে যায়। এখনও কাঁধের কাছে ব্যথা পাচ্ছে। পরে অজয়ের শরীরের পিছনে পাঁচ আঙুলের পরিষ্কার ছাপ ফুটে থাকতে দেখে সনজু। রক্ত জমে পুরো জায়গাটা নীল হয়ে ছিল।

এখানে আর অপেক্ষা না করে দ্রুত গেটের দিকে এগুতে লাগল তারা। এসময়ই একজন তরুণের সঙ্গে দেখা হলো। পথ আটকে জানতে চাইল এত রাতে এখানে কী করছে? তারা সঙ্গে সঙ্গে জানাল বুড়ো লোকটা মানে আবু চাচার অনুমতি নিয়েই ভিতরে ঢুকেছে। তারপর কেন এসেছে সেটাও আবার খুলে বলল, আগের মতই। কিন্তু তরুণ জানাল আবু চাচা নামে কাউকে চেনে না। আর গত পাঁচ বছর ধরে সে-ই গোরস্থানটা পাহারা দিয়ে আসছে সে। তবে কিছু লোক তাকে বলেছে গোরস্থানের আশপাশে একজন বুড়ো লোককে দেখা যায় মাঝে-মাঝে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে।

রাতে বাংলোয় ফিরতে-ফিরতে সাড়ে তিনটা বেজে গেল। সেখানে বাংলোর কেয়ারটেকারকে ঘটনাটি খুলে বলতেই এই বোকামির জন্য শাপ-শাপন্ত করল তাদের। বলল ভাগ্য ভাল বড় কোনো ক্ষতি ছাড়া ফিরে আসতে পেরেছে। অজয় পরের কয়েকটা দিন খুব জ্বরে ভুগল, অন্যদের সঙ্গে সেদিন ব্যাঙ্গালুরু ছাড়তেও পারল না। তবে এরপর সনজু মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করে এমন কাজ আর কখনও করবে না। কয়েক মাস পর অজয়ের সঙ্গে আবার দেখা হলে দেখল আগের সেই বেপরোয়া ভাব আর নেই তার মধ্যে। অনেক শান্ত হয়ে গেছে। আর হাতে একটা তাবিজ বাঁধা তার।

গোরস্থানের আগম্ভক

আমাদের ভাঁড়ারে গোরস্থান নিয়ে যেসব ভৌতিক অভিজ্ঞতা জমা আছে তার আরেকটা শোনাব এখন। এটি বলেছেন আয়ারল্যাণ্ডের এডজিওর্থস টাউনের মি. জি. এইচ. মিলার।

১৮৭৫-এর শীতকাল। পাঁচ মাইল দূরের এক জায়গায় সন্ধ্যাকালীন এক গানের আসর সেরে বাড়ি ফিরছেন মিলার। ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে এগারোটা। পথে তাকে যেতে হবে অ্যাবিশরুলের ধ্বংসাবশেষ আর সমাধিক্ষেত্রের ভিতর দিয়ে। পথের দু-পাশেই সমাধি। চাঁদের আলোয় চারপাশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এদিকে ঘঘাড়ার জিন আটকানোর বেল্টটা ভেঙে যাওয়ায় প্রাণীটাকে আস্তে-আস্তে হাঁটিয়ে নিচ্ছেন এখন। ধ্বংসাবশেষটা যখন পেরোচ্ছেন তখন লম্বা ওভারকোট গায়ে চাপানো একজন লোককে দেখলেন। সমাধিগুলোর মাঝখান থেকে কিনারার দিকে হেঁটে আসছেন ভদ্রলোক। মিলার আর কয়েক কদম এগুলেই দুজন মুখোমুখি হয়ে যাবেন। কিন্তু তারপরই লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল। আতিপাতি খুঁজেও তার কোনো নাম-নিশানা পেলেন না মিলার।

একটু পরেই একজন লোককে পাশ কাটালেন, যিনি তাঁর অনেক আগেই সন্ধ্যার অনুষ্ঠান থেকে বের হয়েছেন। ভদ্রলোকের ততা আরও এগিয়ে থাকার কথা, অবাক হয়ে ভাবলেন মিলার। কথাটা জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, পুরানো গোরস্থানটা এড়াতে অনেক ঘুরপথে এসেছেন। কারণ তিনি চাননি সন্ন্যাসীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যাক। তারপর ব্যাখ্যা করে বললেন এই গোরস্থানে মাঝে মাঝেই এক সন্ন্যাসীর ভূতকে দেখা যায়। মিলারের মনে আর সন্দেহ রইল না সন্ন্যাসীর ভূতকেই দেখেছেন তিনি।

শেষ ঠিকানায়

এবারের অভিজ্ঞতাটি রেভারেণ্ড হেনরি মর্টনের। আয়ারল্যাণ্ডের একটি গির্জার যাজক তখন তিনি। গির্জার লাগোয়া একটা পুরানো সমাধিক্ষেত্রও আছে। এক চাঁদনী রাতে একজন অসুস্থ মানুষকে দেখতে যেতে হল রেভারেণ্ড মর্টনকে। সঙ্গে তার ভাইও আছেন, যিনি আবার একজন চিকিৎসক। অসুস্থ লোকটিকে দেখে বাড়ি ফেরার সময় গির্জার সমাধিগুলোর ভিতর দিয়ে যেতে হলো তাঁদের। কথা বলতে-বলতে হাঁটছেন দুজন। এমন সময় তাঁদের বিস্মিত দৃষ্টির সামনে একটি কাঠামো অতিক্রম করে গেল, দুজনেই দেখলেন একে। তারপরই রাস্তা ছেড়ে সমাধি ফলকগুলোর ভিতরে ঢুকে পড়ল লোকটা, আর একটা জায়গায় অদৃশ্য হয়ে গেল।

অদ্ভুত ঘটনাটা রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিল তাদের। আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে যেখানে লোকটি অদৃশ্য হয়েছে। সেদিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ ভালমত খুঁজেও কাউকে পেলেন না। পরের দিন সকালে তারা জানতে পারলেন গত রাতে যে অসুস্থ লোকটিকে দেখতে গিয়েছিলেন তারা চলে আসার পরপরই তিনি মারা যান। তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো লোকটিকে সমাধিস্থ করা হয়েছে ঠিক সে জায়গায়, যেখানে সেই রহস্যময় কাঠামোটিকে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছেন।

ভুতুড়ে নারী

আয়ারল্যাণ্ডের লিমেরিকের একসময়কার আর্চডিকন ভেন, জে.এ. হেইডেন তার এই অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করেন। ১৮৭০ সালে তিনি ছিলেন অজপাড়াগাঁয়ের এক গির্জা চ্যাপেল রাসেলের যাজক। ঘটনাটা তখনকারই।

শরতের এক বৃষ্টিঝরা দিন। লাগামহীনভাবে, বেশ বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়ছে। সকাল কি রাত এটাও বোঝা মুশকিল। দিনটা বিষণ্ণ, মেঘলা। তারপর আবার বেশ কিছু সময় পড়ালেখা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন হেইডেন। ঠিক করলেন এই বৃষ্টির মধ্যেই হেঁটে আধ মাইল টাক দূরের গির্জায় যাবেন। ওখানে আধ ঘণ্টা হারমোনিয়াম বাজিয়ে ফিরে এসে চা খাবেন।

বর্ষাতি গায়ে চাপিয়ে, গির্জার চাবিটা পকেটে ফেলে, হাঁটা শুরু করলেন। গির্জার চৌহদ্দিতে পৌঁছে মূল প্রবেশ পথটা ধরে হাঁটতে লাগলেন। দু-পাশেই সমাধি, পাথরের সমাধি ফলক। এদিকে হালকা বৃষ্টি ট্যাপ ট্যাপ শব্দ তুলছে গাছের পাতায় পড়ে। , একসময় গির্জার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেন। কিন্তু চাবিটা তালায় ঢুকানোর আগেই কী একটা অস্বস্তি পেয়ে বসল তাঁকে। ওখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে কেবলমাত্র অতিক্রম করে আসা পথটার দিকে তাকালেন। বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলেন রাস্তাটার পাশের একটা নিচু সমাধি ফলকের ওপর তার দিকে পিছন ফিরে বসে আছে একজন মহিলা। তার পরনে কালো ভেলভেটের একটা জ্যাকেট। মাথার কালো চুলের বোঝা আংশিক ঢেকে আছে যে জিনিসটা দিয়ে সেটাকে একটা পাগড়ির মতই লাগল তাঁর কাছে। ওটাও কালো ভেলভেটের তৈরি। পাগড়িটার ডান পাশে তুষার-সাদা পালকের গোছা। বেশ কিছুটা সময় গভীর মনোেযোগের সঙ্গে নারীটির অবয়বের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তারপরই মনে হলো মহিলাটির মনোেযোগ আকর্ষণ করা দরকার। আর তা করার জন্য শব্দ করে চাবি ঢুকালেন তালার ভিতর। তারপরই শব্দ করে হঠাৎ খুললেন দরজাটা। তার এই কৌশল কাজ দিয়েছে কিনা দেখার জন্য ঘুরেই দেখলেন মহিলাটি অদৃশ্য হয়েছে। দৌড়ে যেখানটায় বসে ছিল মহিলাটি সেখানে গেলেন, দশ গজের বেশি হবে না গির্জার প্রবেশদ্বার থেকে ওটার দূরত্ব। সমাধিফলক এবং এর আশপাশের জায়গা ভালমত খুঁজলেন। কিন্তু ওখানে একজন মানুষ বসেছিল একটু আগে, এর এমনকী কোনো চিহ্নও পেলেন না। এই ঘটনাটি আজীবন এক রহস্যই থেকে যায় যাজক হেইডেনের কাছে। কারণ পরে এমন কোনো তথ্য পাননি যা দিয়ে এর কূল-কিনারা করতে পারেন।

অবিবাহিতদের কবরস্থান

শরীরের আত্মা পানি করে দেওয়ার মত জায়গার অভাব নেই আমেরিকায়। এদের মধ্যে কোনো কোনোটা এতটাই চমকে দেবে আপনাকে যে মনে হবে ওখানটায় গিয়ে হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেছে। আর এটা হওয়ার কারণ আতংক এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে যে নাড়ীর স্পন্দন টের পাবেন না। এমন জায়গার উদাহরণ হিসাবে ইলিনয়েসের শিকাগোর ব্যাচেলর গ্রোভ গোরস্থানের নাম থাকবে একেবারে উপরের সারিতেই।

এই ভুতুড়ে গোরস্থান কোনো কারণ ছাড়াই পুরু কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে যায় অনেক সময়। নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে এখানে। চোখে পড়ে ভয়াবহ সব দৃশ্য। তাই যারা অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন আর প্রচণ্ড মানসিক শক্তির অধিকারী তাদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে এটি। এখানে সব সময় যে কিছু দেখবেনই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে অনুভব করবেন অশুভ কিছু একটার উপস্থিতি। কখনও কারও মৃদু স্পর্শ পাবেন, কিন্তু আশপাশে কারও চেহারা দেখবেন না। তারপর আবার কোনো কোনো জায়গায় হঠাৎ করেই তাপমাত্রা বিশ ডিগ্রী নেমে হাড়ে কাপ ধরিয়ে দেবে আপনার। এখানকার ভৌতিক কাণ্ডকীর্তির আরও কিছু বর্ণনা দেওয়ার আগে বরং এই সমাধির ইতিহাসটা একটু জেনে নেওয়া যাক। কারণ অনেকেরই ধারণা এখানকার সব অদ্ভুতুড়ে ঘটনার পিছনে এর নাটকীয় ইতিহাসেরও ভূমিকা আছে।

এই গোরস্থানে ১৮২০-২১ সালের সমাধিফলকও খুঁজে পাবেন। যদিও সরকারীভাবে এটি সমাধিস্থলের মর্যাদা পায় ১৮৪৪ সালে। ১৯৬০-এর দশকের পর থেকেই এখানে আর নতুনভাবে কাউকে গোর দেওয়া না হলেও একে ঘিরে অশুভ কাণ্ড-কীর্তি কমেনি একটুও। বরং এতে যেন এখানে আস্তানা গাড়া আত্মাদের সাহস আরও বেড়েছে। এই সমাধিস্থলের নাম ব্যাচেলার গ্রোভ হওয়ার উত্তর খুঁজে পাবেন এর ইতিহাসে। এখানে মূলত কবর দেওয়া হত এই এলাকায় আস্তানা গাড়া অভিবাসীদের। এদের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ছিলেন জার্মানরা, ইলিনয়েস-মিশিগান খাল খননে কাজ করছিলেন যাঁরা। আর এদের মধ্যে অনেকেই কবর দেওয়ার সময়ও ছিলেন অবিবাহিত। আর তাই এই সমাধিস্থলটির নাম হয়ে যায় ব্যাচেলর গ্রোভ বা অবিবাহিতদের গোরস্থান।

কবরস্থানটিকে ঘিরে আছে ছোট্ট একটা লবণাক্ত পানির হ্রদ। আর এই এলাকায় রাজত্ব করা গুণ্ডাপাণ্ডাদের খুব পছন্দের জায়গা ছিল এই হ্রদ। কারণ কারও সঙ্গে গোলমাল বাধলেই মেরে. এই লেকে গুম করে ফেলত তারা। এমন অনেক মৃতদেহই এখানে ভেসে থাকতে দেখেছে লোকেরা। বলা হয় গোরস্থানে যেসব আত্মারা হানা দেয় তাদের মধ্যে হ্রদে মারা যওয়া লোকদের আত্মারাও রয়েছে।

শিকাগোর শহরতলী মিডলথিয়ানের কাছেই গোরস্থানটা। নুড়ি বিছানো একটা পথ চলে গেছে অশুভ এই কবরস্থানটির দিকে। আর এই পথ ধরে হাঁটার সময়ই বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ শুরু হয়ে যায় লোকেদের।

শিকাগোর সাইকিক রহস্যভেদী কেন মেলভয়েন-বার্গ আর শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকার এক রিপোর্টারের নাড়ীর স্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল এখানেই। ২০০৬ সালের এক রাতে হানা দিয়েছিলেন অসম সাহসী এই দুজন গোরস্থানে। ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই শুরু হয় নানা রহস্যময় ঘটনা। তারপরই ছোট্ট একটা ছেলের আত্মার মুখোমুখি হন তারা। ছেলেটার কান্নার শব্দ শুনতে পান পরিষ্কার। তার হারানো রূপার মুদ্রাটি খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্য পই পই করে তাদের অনুরোধ করতে থাকে সে।

রিপোর্টারটি এমনিতেই বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তারপরই দেখলেন সাইকিক রহস্যভেদীটি যেন হঠাৎ একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছেন। সবুজ থকথকে কাদায় ভর্তি একটা পুকুরের দিকে হাঁটতে শুরু করেছেন। তারপরই পনিতে নেমে পড়লেন। পা হাঁটু পর্যন্ত না ডোবা পর্যন্ত এগুলেন। এবার সবুজ শৈবালে ভরা পানির মধ্যে দু-হাত চুবিয়ে দিলেন। একটু পর যখন হাত তুললেন। সেখানে কাদা লেপা ছোট্ট কী একট জিনিস। পরিষ্কার করতেই বেরিয়ে এল এটা ১৯৪২ সালের আধ ডলারের একটি রৌপ্য মুদ্রা। আরও আশ্চর্য ব্যাপার; কণ্ঠটা তাদের এখানেই খুঁজতে বলেছিল মুদ্রাটা।

ব্যাচেলর গ্রোভে হানা দেয়া কৌতূহলী অনেক লোকই গল্প করেন ভুতুড়ে একটা খামার বাড়ির। এই দেখা যায় তো পর মুহূর্তেই আবার অদৃশ্য হয়ে যায় ওটা। তবে সবার বর্ণনাতেই বাড়িটার একই আদল পাওয়া যায়। বিশাল খাম্বাসহ রোয়াকের সাদা একটি বাড়ি ওটা। পাক খেতে-থাকা মৃদু একটা আলো জ্বলতে দেখা যায় জানালায়। তবে বাড়িটাকে কখনও একই জায়গায় দেখা যায় না। কেউ ওটার কাছে যাওয়া শুরু করলেই ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয়ে যায়। রাতে তো বটেই দিনের আলোতেও দেখা গেছে বাড়িটা। কিন্তু পুরানো দিনের দলিলদস্তাবেজ আর ফাইলপত্র ঘেঁটে এই এলাকায় এমন কোনো বাড়ির অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে দৰ্বত্তরা সমাধিফলক উপড়ে ফেলা আর চিত্রকর্ম শাভিত ভাস্কর্য নষ্ট করা আরম্ভ করলে গোরস্থান জুড়ে এক ধরনের লাল আলো দেখতে শুরু করে দর্শনার্থীরা। কখনও কখনও প্রচণ্ড গতিতে লোকেদের অনুসরণ করে, কখনও আবার বাতাস ভেদ করে চলে যায়। অভিজ্ঞ অতিপ্রাকৃত ঘটনা বিশেষজ্ঞ আর ওয়্যার্ড শিকাগোর ( শিকাগোর বিভিন্ন ভৌতিক আর রহস্যময় জায়গা ঘুরিয়ে দেখায় এই প্রতিষ্ঠানটি) লোকেরাসহ আরও অনেকে বার বরই হানা দিয়েছেন রহস্যময় এই জায়গাটিতে। এমনই এক অভিযানের সময় ক্রিঞ্জ নামের ধারাবাহিকটির একটি পর্ব ধারণ করা হয়।

নড়বড়ে, ভেঙে পড়া সব সমাধি ফলকের মাঝখানে ক্যামেরাগুলো স্থাপন করেন প্রযোজক ট্রয় টেইলরসহ অন্যান্য কর্মীরা। আর এই চিত্রগ্রহণের সময় বেশ কিছু ডিজিটাল ফুটেজ কোনো কারণ ছাড়াই নষ্ট হয়ে যায়। আতংকে অবশ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয় কর্মীদের। কারণ এ ধরনের অভিজ্ঞতা ব্যাচেলর গ্রোভে আসার আগে আর কখনও হয়নি তাদের। পরে এর দ্বিতীয় একটা পর্ব তৈরি করতে গিয়ে ক্যামেরাসহ নানান ধরনের যান্ত্রিক গোলমালের কারণে পুরোপুরি ভেস্তে যায় কাজ।

তবে এই কবরস্থানে লোকেদের সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রাখে সাদা পোশাক পরা এক নারী। অনেক মানুষই তাকে দেখেছেন। একটা সমাধি ফলকের উপরে বসে থাকেন, আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন সামনের গাছপালায় ঠাসা জঙ্গুলে জায়গাটির দিকে। শিকাগো সান-টাইমসের জুড়ি ফেলজ ক্যামেরায় বন্দি করেছেন এই রহস্যময় নারীমূর্তিকে। পূর্ণিমার রাতেও মাঝেমাঝে দেখা যায় তাঁকে। সাদা পোশাক পরা নারীটি তখন একটা মৃত নবজাতককে দু-হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে ঘুরে বেড়ান ইতস্তত কবরস্থানের ভিতরে-কেন কেউ জানে না।

১৮৭০-এর দশকে জমিতে লাঙ্গল টানতে থাকা এক লোক কুখ্যাত লেকটার খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। আর এটাই তার কাল হয়। ঘোড়াটা প্রথম পানিতে পড়ে, সেই সঙ্গে টেনে নিয়ে যায় কৃষক আর লাঙ্গলকেও। কিন্তু ঘটনার একশো বছর পর বনবিভাগের দুজন রেঞ্জার আবার দেখেন ওই কৃষককে, হাল চাষ করছেন আগের মতই। কখনও আবার দেখা যায় দুই মাথাওয়ালা একটা ভূতকে।

আবার নুড়ি বিছানো পথটাতে প্রবেশের আগে গাড়ি চালকদের রাস্তায় একটা তীক্ষ্ণ মোড় নিতে হয়। এসময় কখনও কখনও কোনো কোনো চালক আচমকা প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসা একটা পাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে যান। ওটাকে দেখে ১৯৪০ মডেলের গ্যাং স্টারদের গাড়ি বলে মনে হয়। তবে আশ্চর্য ব্যাপার গাড়িটার সঙ্গে সংঘর্ষের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পরই আবিষ্কার করেন কেউ আহত হননি, গাড়ির কোনো ক্ষতি হয়নি। এমনকী তীব্র বেগে হামলে পড়া গাড়িটারও কোনো নাম নিশানা নেই।

আবার কেউ-কেউ এমনও দাবি করেছেন এই গোরস্থানে যাওয়ার পর থেকেই দুর্ভাগ্য পিছু নেয় তাদের। এমনটাই ঘটে আমেরিকার ইলিনয়েসের এইডেন নামের এক যুবক আর তার বান্ধবীর ভাগ্যে। অন্তত এইডেনের দাবি তাই। গোরস্থানটা থেকে বের হয়ে আসার পর থেকেই একটার পর একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের।

তারিখটা ছিল ২০০৪ সালের অক্টোবরের পনেরো তারিখ। এক হপ্তাহ পরেই এইডেনের জন্মদিন। এমনিতেই অদ্ভুতুড়ে ঘটনার প্রতি বেশ আগ্রহ এইডেনের। তার প্রেমিকারও এটা বেশ ভালই জানা আছে। তাই সে প্রস্তাব করল জন্মদিনের একটি উপহার হিসাবে ব্যাচেলর গোরস্থানে বেড়িয়ে আসবে তারা। পরিকল্পনাটা মনে ধরল এইডেনের। দারুণ উত্তেজিত হয়ে উঠল। উৎসাহের চোটে একটা ডিজিটাল ভয়েস রেকর্ডার কিনে ফেলল। সঙ্গে ডিজিটাল ক্যামেরাটাও নিয়ে নিল। ঠিক মধ্যরাতে, বারোটার দিকে বের হলো তারা বাড়ি থেকে। এইডেনের বাড়ি থেকে গোরস্থানটা দেড় ঘণ্টার রাস্তা। কাছাকাছি পৌঁছে গাড়িটা বন বিভাগের জায়গায় রেখে হাঁটতে শুরু করল তারা। গোরস্থানের কাছাকাছি আসতেই অজানা একটা ভয় আঁকড়ে ধরল দুজনকে। বেশ কয়েকটা ছবি তুলল। তারপরই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। যত দ্রুত সম্ভব কিছু ছবি তুলে নিল, পাছে আবার পরে ছবি তোলা না যায়।

গোরস্থানে ঢুকতেই অস্বস্তি বাড়ল। এইডেনের মনে হলো তার ঘাড়ের পিছনে কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে। যদিও পিছন ফিরে কাউকে দেখা গেল না। মিনিট বিশেক থাকার পরই এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দুজনে। ভয়ের হিমশীতল একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ছে শরীরে। এদিকে গোরস্থান আর এর আশপাশের এলাকায় একটা জনপ্রাণীকেও দেখা যাচ্ছে না। গোরস্থান থেকে বের হওয়ার আগ পর্যন্ত রেকর্ডারটা চালুই রাখল। গাড়িতে ঢুকেই রেকর্ডারটা প্রথম থেকে চালু করে দিল এইডেন। আর তখনই প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেল। মনে হলো যেন কেউ ফিসফিস করে বলছে এখান থেকে বিদায় হও। আসল সমস্যা শুরু হলো বাড়িতে পৌঁছার পর। হঠাৎ করেই প্রচণ্ড কাশি হয়ে গেল এইডেনের, সেই সঙ্গে গলায় প্রচণ্ড ব্যথা। তার স্বাস্থ্য এমনিতে বেশ ভাল, আর ঠাণ্ডায় বের হওয়ার মত পোশাকও ছিল পরনে। মাত্র বিশ মিনিট গোরস্থানে থেকে শরীরের এই হাল হলো কেন ভেবে কূলকিনারা পেল না। পরদিন সকালে যখন বান্ধবী এল তখন তার কাহিল অবস্থা। গায়ে জ্বর, সেই সঙ্গে পেট খারাপ। নড়াচড়াও করতে পারছে না ঠিকমত। তার বান্ধবী ল্যাপটপ নিয়ে এলে দুজন দেখতে বসল। কোনো কোনো ছবিতে সাদা ধোয়ার মত দেখা গেল। আবার কয়েকটা ছবিতে অস্পষ্ট মানুষের মুখও দেখা যাচ্ছে।

এক মাস পর একসঙ্গে একটা ফ্ল্যাটে উঠল দুজন। এর দুই মাস পর গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ল তারা। গাড়ি দুর্ঘটনার এক মাস পর কোনো কারণ ছাড়াই চাকরি হারাল এইডেনের বান্ধবী। তারপর চাকরি যাবার পালা এইডেনের। দুজনে কতগুলো ইন্টারভিউ যে দিল তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু চাকরি যেন সোনার হরিণ হয়ে গেল। পুরো বছরটাই খারাপ গেল। জ্বর, সর্দি-কাশি লেগেই থাকল। আর অ্যাপার্টমেন্টেও একটার পর একটা সমস্যা তৈরি হলো। এক বছরের মধ্যে অ্যাপার্টমেন্টে ছাড়তে বাধ্য হলো তারা। আবার এইডেনের বাবা-মার কাছে গিয়ে উঠল। তবে এবার শনির দশা কাটল। কয়েক মাসের মধ্যে চাকরি পেল দুজনেই। এরপর আর বড় কোনো সমস্যায় পড়তে হলো না। এইডেনের নিশ্চিত ধারণা এই গোরস্থানে ব্যাখ্যার অতীত কোনো একটা সমস্যা আছে। কারণ সেখানে যাবার আগে তারা দুজনেই ছিল সুস্থ-সবল। কিন্তু ফেরার সঙ্গে-সঙ্গেই একটার পর একটা সমস্যা শুরু হয়ে গেল। আর তাই এইডেন নিজে পণ করেছে আর কখনও এই অশুভ গোরস্থান না মাড়ানোর। তেমনি বন্ধুবান্ধবদেরও পরামর্শ দেয় ওদিকে যাওয়ার দুঃসাহস না দেখানোর। তবে, পাঠক কখনও যদি শিকাগো চলেই যান, অবিবাহিতদের এই গোরস্থানে যাবেন কিনা তা আপনার সিদ্ধান্ত। তবে গেলে যেতে হবে মনটাকে শক্ত করে, সব ধরনের অঘটনের জন্য প্রস্তুত হয়েই।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত