রাতে ঘরে বসে বই পড়ছি। ভুতের বই।আমার আবার ভুতের ওপর ব্যাপক নেশা।কোথাও ভুতের সন্ধান পেলে সেখানে চলে যাই ভুতের সাক্ষাত পেতে।কিন্তু ভাগ্য আমার এমন যে কোন দিন সাক্ষাত করতে পারিনি এটাই আফসোস।বইটার আকর্ষনীয় জায়গায় চলে এসেছি আর একটু হলেই রক্তখেকোটা মানুষকে ধরে ফেলবে এমন সময় বিরক্তিকর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো।একবার মনে হলো ফোনটা ধরবোনা।তাও কি মনে করে ফোনটা ধরলাম।
–কিরে রিদয় এতো রাতে ফোন দিয়েছিস কেন??
–দোস্ত একটা ঝাক্কাস খবর আছে।
–আচ্ছা বল দেখি কি এমন ঝাক্কাস খবর।
–না আগে বল কি খাওয়াবি??
–ভনিতা বাদ দিয়ে সজাসজি উত্তর দে।
–না বলবোনা।
–রাগাইসনা কইলাম।মনের ভিতর খুতখুতি ধরাই দিয়ে এখন বলছে বলবেনা।
–রাগিস কেন। দারা বলছি।
–আচ্ছা বল।
–আমি আগামি মাসে বান্দরবান যাচ্ছি।
–তো এতে আমি কি করবো??
–তুইও যাবি আমার সাথে।
–আমি কি জন্য যাব??
–এটাই তো আসল বিষয়।
–তাহলে ওটাই আগে বল।
–তোর তো ভুতের সাক্ষাত পাবার খুব ইচ্ছা। তো ওখানে নাকি একটা পুরাতন ভুতুড়ে বাড়ি আছে।তাও পাহাড়ের ওপর।
–ভুত আছে কি??
–এটাই তো কথা মামু। ওখানে নাকি ভুত আছে। বেশি কিছু যানিনা।যাবার পরেই সব কিছু দেখতে পাবি।
–আচ্ছা আমি রাজি।
–আচ্ছা।সময় মতো টাইম বলে দিবনি।এখন রাখছি।
–ওকে বাই।
–ওকে
আমি জিবনেও রিদয়ের কথায় বান্দরবান যেতাম না। শুধু ভুতের কথা শুনে যাচ্ছি।রিদয় অনেক ভিতু।ভুত বলতে বেহুশ।যাই হোক এবার তাহলে ভুতের সাক্ষাত পাব।তাই মনের ভিতর কেমন খুশি খুশি ভাব লাগছে। রাতের বাসে বান্দরবান যাচ্ছি।আমার আবার রাতে ট্রাভেল করতে অনেক ভালো লাগে।শালা বাসে চড়ে এমন বিপদে পড়ছি।পাশে একটা মেয়ে পড়ছে।দেখতে লম্বা চওড়াই হবে। মুখ চোখ এমন ভাবে হিজাব দিছে চেহারার কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা।তাই মনের ভিতর কেমন খুতখুত করছে।তারপর মেয়েটা পাশে বসার জন্য কেমন আন ইজি ফিল করছি। রিদয় পড়ছে আমার পিছনের ছিটে।আমি মেয়েটাকে বললাম আপনি ভুতে ভয় করেন?? মেয়েটা এমন ভাবে তাকালো যেন ও নিজেই ভুত।তাই আমি আর কিছু বললাম না। রাতে ঘুমের মাঝে মনে হচ্ছে কে যেন আমাকে ধাক্কা দিচ্ছে।চোখ মেলে দেখি রিদয়।
–কিরে এত রাতে দাকছিস কেন?
–দোস্ত একটু বাইরে আয়।
–কেন কি হয়েছে??
–আমার প্রসাব লাগছে।
–তো আমি কি করবো??
–বাসের লাইট আফ তাই ভয় লাগছে।
–যা হট আমি এখন উঠতে পারবোনা।
–আরে যান যান বাস নোংরা করার আগে ওনাকে নিয়ে যান। মেয়েটার কথা শুনে আমারি কেন জানি লজ্জা লাগলো। শালা ভুতের ভয়ে মনে হয় মরবে এমন করছে।রিদয়কে নিয়ে গিয়ে তার কাজ শারালাম। ছিটে এসে বসে আবার ঘুমানোর চেস্টা করছি। তখন মেয়েটা বললো
–আপনার বন্ধু তো ভুতে খুব ভয় পায়।
–হ্যা বলবেননা শালা এমন ভাব করে যেন ভুতের ভয়ে মরবে।
–হিহিহিহিহিহি।আপনি ভয় করেন না??
–না আমি ভুতকে ভয় করিনা।ভুতের সাক্ষাত পাবার আসায় আছি।
–তাই নাকি??
–হ্যা।
–তা আপনারা কোথায় যাচ্ছেন??
–বান্দরবান ভুত দেখতে??
–বান্দরবান??তাও ভুত দেখতে??
–হ্যা।অখানে নাকি পাহাড়ের ওপর ভুতের বাড়ি আছে।
–আপনার মাথা ঠিক আছে??
–কেন??
–ওই বাড়িতে কালা পাড়ারের রানী থাকে।ওখানে কেও গেলে সে আর ফেরত আসেনা।
–আপনি যানলেন কি করে??
–আমার বান্ধবীর বাসা ওখানেই।
–আপনিও ওখানেই যাচ্ছেন??
–হ্যা।আমিও অখানেই যাচ্ছি।
–আপনার নাম কি??
–আমার নাম সাফা।আপনার??
–আমি সাগর আর ও আমার বন্ধু রিদয়।
সাফার সাথে অনেক কথা বললাম।নাম্বার আদান প্রদান করলাম। বাস আমাদের গন্তব্য স্থলে এসে পৌছলো। আমরা একটা হোটলে উঠলাম আর সাফা তার বান্ধবীর বাসায় গেল। এখন অপেক্ষা শুধু ভুতের বাড়িতে যাবার।
হোটেলে উঠে সব গোছগাছ করে নিলাম।বেশ কয়দিন থাকবো।ভুতের সাক্ষাত না করে এবার এখান থেকে যাবনা।হোটেলটাও অনেক পছন্দ হয়েছে।পাহাড়ের ওপর নিড়িবিলি পরিবেশে একটা হোটেল।আরামে বইটাও পড়তে পারবো।রুমটার জ্বানালা দিয়ে তাকালে শুধু বিসতৃণ পাহাড়।
সবকিছু ঠিকঠাক করে নিতে নিতে রাত হয়ে গেছে।রাতের বেলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে এক অপরুপ সৌনদর্য দেখা যায়।
শালা রিদয়ের জন্য রাতে জানালাটাও খোলা রাখতে পারলাম না।শালার জানে এত ভয়।ভুতে মনে হয় ওকে খেয়ে ফেলবে।
পরের দিন সকালে খেয়েদেয়ে একটু কালা পাড়ারের সম্পর্কে জানতে ঘুরতে বের হলাম।রিদয় ওর কাজে গেল।আমি একাই ঘুরতে বের হলাম।আমাদের হোটেল থেকে মিনিট ১০ এর পথ পার হলেই কালা পাহাড়।
আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি এমন সময় দেখি একটা কালো কুচকুচে কুকুর আমার পিছে পিছে আসছে।আমি যেখানেই যাচ্ছি কুকুরটাও সেখানে যাচ্ছে।আমার তখন কেন যানি ভয় লাগছিল।তাই একটা দৌড় দিলাম।কুকুরটাও পিছে পিছে দিল দৌড়।
দৌড়াতে গিয়ে একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম।দেখি একটা চুল বড় বড় দাড়ি ওয়ালা নোংরা পোশাক এ একটা লোক।
আমি তো আরো ভয় পেয়ে গেলাম।এখানে মনে হয় কেউ দেখতে আমাদের মতো না।সবাই দেখতে আলাদা।হঠ্যাৎ বুড়োটা তার ঝাঝালো কন্ঠে বললো
–তুই কে রে?
–আপনাকে বলবো কেনো??
–কি তুই আমাকে বলবিনা। জানিস আমি কে?
–কে আপনি?
–আমি খান বাহাদুর।এখানকার রাজা।কালা পাহাড়ের রাজা আমি।
–আপনি রাজা সত্যি তো?
–হ্যা।
–তাহলে তো ভালোই হলো।ওখানে নাকি ভুত থাকে?আমি ওখানেই যাব।
–কি।তুই কালা পাহাড়ে যাবি?
–হ্যা।
–তুই ও বাচবিনা।সবার মতো তুই ও তার গোলাম হয়ে যাবি।পালা বাচতে চাইলে এখান থেকে পালা।
–কিন্তু আমি তার গোলাম হবো কেন?
বুড়োটা আর কিছছু না বলেলে পালালো।
আমিও আর সাহস করে আগাইনি।হোটেলের দিকে ফিরছিলাম।এমন সময় পিছন থেকে কে যেনন আমার নাম ধরে ডাকছে মেয়েলি কন্ঠে।এখানে তো কেউ আমার নাম যানেনা। তাহহলে কে ডাকছে?ভুত নয়তো?
এটা ভেবে দৌড় দিব ভাবছি।এমন সমময় মেয়েটা সামনে হাজির
–আপনি পালাচ্ছেন কেনন?
–কে আপনি?আপনি নির্ঘাত ভুত।মানুষ এতো সুন্দর হয়না।
–আরে কি আবল তাবল বোকছেন।আমি ভুত হতে যাব কেন
–তাহলে কে আপনি?
–আমি সাফা।কাল বাসে কথা হলোনা।চিন্ন্তে পারেননি?
–হ্যা।এবার পরছি।আসলে তখন আপনার মুখ দেখিনি তো তাই চিন্তে পারিনি।
–তা এখানে কি করছেন?
–এইতো ঘুরতে বের হইছিলাম।আপনি এখানে কি করছেন?
–পাশেই আমার বান্ধবীর বাসা।
–ও।আচ্ছা তাহলে কাছেই আছেন।
–হ্যা।চলেন এলাকাটা ঘুরে আসি?
–আচ্ছা চলেন।
–এলাকাটা দারুন না?
–হ্যা।আসলেও সুন্দর মনোরম পরিবেশ।
–তা আপনার বন্ধু কোথায়?
–ও কাজে গেছে।তাই আমি একাই ঘুরতে বের হয়েছি।
–ও ভালো।
কথা বলার মাঝেই একটা চাকমা সাইজের মেয়ে হাজির।মনে হয় চাকমাই হবে।দেখতে ভালোই। একটু নাক বোচা।
–এ হলো মুই।আমার বান্ধবী।আমি এদের এখানেই এসেছি।
মুইয়ের সাথে পরিচিত হলাম।অনেক মিসুক প্রকৃতির মেয়ে।কথায় কথায় কালা পাহাড়ের কথা চলে আসলো
–আচ্ছা কালা পাহাড়ের রাণী সম্পর্কে কিছু জানেন??
–কেন আপনি কি করবেন?
–আমি এটার জন্যই এখানে এসেছি।
–ফিরে যান এখান থেকে।
–কেন??
–কালা পাহাড়ের রানী কতটা ভয়ংকর তা আপনি যানেননা।
–এটাই তো দেখতে এসেছি।
–পাগলামি বাদ দিন।হাতে সময় কম।বাচতে চাইলে ফিরে যান।
–কিন্তু কেন??
–প্রতি বছর অমাবস্যার রাতে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে গিয়ে বলি দেয়।আর যাকে ভালো লাগে তার রক্ত খেয়ে পিশাচ প্রবেশ করায়।আর তাকে ওর গোলাম বানীয়ে নেয়।
এই কথা শুনে মনে হচ্ছে বুকের ভিতর থেকে জানটা লাফ দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসবে।কোন মতে ভয়টা প্রকাশ না করে মুই কে বললাম
–এসব করে কেন??
–এটা কেউ যানেনা।শুধু একজন ই যানে।
–কে??
–এখানেই এক বুড়ো থাকে।ও ছাড়া কেউ যানেনা এটার রহস্য কি।
–যে নিজেকে কালা পাহাড়ের রাজা বলে মনে করে ঐ বুড়ো?
–হ্যা।আপনি চিনলেন কি করে।
–আমি তাকে দেখেছি।
–এটার রহস্য জানতে হলে ঐ বুড়োকে আপনার নিজের বসে আনতে হবে।কারন ও ছাড়া কেউ যানেনা।
এদের সাথে কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।তাই তাদের বিদায় দিয়ে হোস্টেলে ফিরে আসলাম।
মনের ভিতর শুধু বলি দেয়ার কথাটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।শরীর ঘেমে গেছে।অমাবস্যা আসতে মাত্র পাচ দিন বাকি।মনে হচ্ছে সাগর তুই ভুতের সাক্ষাত করা বাদ দিয়ে নিজের জান নিয়ে ফিরে যা।
আবার ভাবছি যদি ফিরে যাই রিদয় আমাকে ক্ষেপিয়ে মেরে ফেলবে।হোস্টেলে ফিরার পর রুমে গিয়ে আরামে বসেছি।এমন সময় কে যেন পিঠে হাত দিল।
আমি তো ভয়ে চিৎকার দিছি।
–কিরে চিল্লাস কেনন?আমি রিদয়।
–কিছুনা।এমনি।এভাবে কেউ ঘাড়ে হাত দেয়?
–আগে তো দিতাম তখন তো এমন করতিনা।কি হয়েছে?
–কিছুনা। তুই এখন যা
রিদয় চলে গেল।কি করে বলি কালা পাহারের রানী খুব খারাপ।বলি দিয়ে দিবে ধরতে পারলে।আমার তো এখন ভয়ে বাথরুমে যেতেই ভয় লাগছে।ওখানেই হয়তো রানীর পিশাচ দাড়িয়ে আছে।
অনেক ভয় পেয়েছিলাম মুই এর কথা শুনে।আসলে এমন ভাবার বাইরে ছিল যে কাওকে ধরে নিয়ে গিয়ে বলি দিয়ে দেয়।কি সাংঘাতিক ব্যাপার।এসব কথা বার বার মনে পড়ছিল।রাতে ঘুম আসছিলনা।মনে হচ্ছে ঘুম উঠে গেছে চোখ থেকে।
অনেক কষ্টে ঘুমালাম।
–আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি রিজিওন।
–আমিও।তোমাকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারিনা মাহিরা।
–সত্যি তো?
–হ্যা।
–তোমার বাবা মা মেনে নিবে আমাদের?
–কেন নিবেনা।আমি তো আছি।
–তুমি রাজ পরিবারের ছেলে।আর আমি সাধারন কৃষকের মেয়ে।
–ভালোবাসা কিছু মানেনা মাহিরা।
–যতই হোক।
–আচ্ছা ঠিক আছে।আমি আজই আমার বাবা মা কে তোমার কথা বলবো।
–সত্যি তো?
–সত্যি।এবার খুশি?
–হ্যা। অনেক খুশি।
আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই।দেরি হলে আবার সবাই খুজবে।
রিজিওনেরর থেকে বিদায় নিয়ে বাড়িতে আসলাম।আমি গরিবের মেয়ে। আর রিজিওন রাজার ছেলে।তাও কেন যে ও আমাকে ভালোবাসলো কে যানে।
পরের দিন রিজিওনেরর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আজকে আমি যানতে পারবো আমি রিজিওনকে পাব কি না।তাই অনেক সেজেছি।চোখে কাজল দিয়েছি।কাজল দেয়া চোখ রিজিওন অনেক পছন্দ করে।ও বলে আমার কাজল কালো চোখের দিকে তাকালে নাকি নেশা ধরে যায়।আমার তখন অনেক লজ্জা লাগে।
আমি ঠিক সময় মতো আমাদের দেখা করার যায়গায় চলে এসেছি।একটু পরে আসলো।
–কি আজ এত সেজেছো যে আমার মায়া পরি।
–তোমার জন্যই তো সাজি।তুমি বোঝনা।
–বুঝি তো।তোমার চোখ দুটো আজ আরো অনেক বেশি সুন্দর লাগছে।
–যা দুষ্ট।
–সত্যি বলছি।তোমার চোখের প্রেমে পড়ে গেলাম আজ আবার নতুন করে।
–আচ্ছা হয়েছে।এবার বলো তোমার বাবা মা কি বলেছে আমাদের ব্যাপারে।
–আমার বাবা মা রাজি।
–সত্যি বলছো?
–হ্যা।সত্যি।
–যানো আমার এখন কত আনন্দ লাগছে।
–যানি তো।চলো আমার সাথে চলো।
–কোথায়?
–রাজবাড়ীতে।
–কেন?
–তোমার শ্বাশুড়ি মা তোমাকে দেখতে চেয়েছে।
–সত্যি?
–হ্যা।সত্যি এখন আমার সাথে চলো।
–আচ্ছা চলো।
সন্ধা হয়ে এসেছে মাহিরা এখনো বাসায় আসছেনা।তার বাবা মা।
–মাহিরার মা মাহিরা কোথায় গেছে?বাড়িতে নেই কেন?
–কোথাও তো যাবার কথা নয়।বিকালে সেজেগুজে বের হয়েছে।
–সেজেগুজে মানে?
–ও তো প্রতিদিন ই সাজগোছ করে।
–কোথায় গেছে একটু খোজ নাও তো।
–বাবা দেখতো মাহিরা কোথায় গেছে?
–আচ্ছা মা দেখছি।
অনেক খোজার পরের মাহিরাকে পাওয়া গেলনা।মাহিরার বাবা মা রাজার কাছে গেল এ ব্যাপারে বলতে।আর ভাই ফারুক অন্য এক আত্বীয়র বাড়িতে।
কোথাও পাওয়া গেলনা মাহিরাকে।ফারুক মন খারাপ করে বাড়িতে যাচ্ছে।তার সাথে সাথে তিনটা কুকুর ও।
বাড়িতে আসে ফারুক।বাড়িতে তার বাবা মা নেই এখনো আসেনি মনে হয়।ফারুকের সাথে সাথে কুকুর তিনটাও তার বাড়ি পর্যন্ত আসে।ফারুক কিছুই বুঝতে পারেনা।কুককুর তিনটা কেন তার সাথে সাথে আসছে।
মারুফ বাড়ি এসে শুয়ে পড়ে।কিছুখন পরে কুকুর তিনটা অঝর ধারায় কান্না করতে লাগে।আর চেচামেচি করছে।
ফারুক কিছুই বুঝতে পারেনা।ঘুমিয়ে যায় ফারুক।ঘুমের মধ্যে দেখে দুইটা হাত তাকে ডাকছে।অস্পষ্ট চেহারা।কান্নার আওয়াজ।
বারবার ডাকছে ইসারাতে এদিকে এসো।এমন সময় কুকুর তিনটা তার সামনে। তাকে সামনে যেতে দিচ্ছেনা।
দুইটা হাত থেকে ছয়টা হাত। কুকুরের কান্না।ফারুক অনেক চেষ্টা করছে হাতের কাছে যাবার কিন্তু পাররছেনা।কুকুর তিনটা বারবার বাধা দিচ্ছে।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল।এ কি দেখলাম আমি স্বপ্নে?এটার অর্থ কি?ছয়টা হাত তিনটা কুকুর এটার মানে কি?
মাহিরার কি হলো?তার বাবা মা কোথায়?
মাথার মধ্যে বারবার শুধু এই কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
–কিরে এত কি ভাবছিস?কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিসনা?
–আচ্ছা আমি দেখলাম ১ কুকুর ফারুক ৩ আমি কমম দেখলাম কেন?
–কি যাতা বলছিস।কিছুই বুঝতে পারছিনা।
–তুই বুঝবিনা।
ফোনটা নিয়ে সাফাকে ফোন দিলাম।দিয়ে মুইকে নিয়ে দেখা করতে বললাম।আমি এই ফাকে কিছু খেয়ে নিলাম।তারপর রিদয়কে নিয়ে সাফার সাথথে দেখা করতরতে গেলাম।
মাথার মধ্যে একটাই প্রশ্ন মাহিরা রিজিওন ছয় হাত তিন কুকুর। আমি একটা দেখছি।আর আমিই স্বপ্ন টা দদেখলাম কেন?এটার মানে কি?এটার সমাধান ঐ বুড়ো ছাড়া কেউ দিতে পাররবেনা।
আমি সাফা রিদয় আর মুই মিলে অনেক খুজলাম।খুজার পর বুড়ো টাকে পেলাম।অনেক বলার পরে বলত রাজি হলো।
–সেদিন ছিল অমাবস্যার রাত।রিজিওয়ান মাহিরাকে সত্যিকারের ভালোবাসেনি।
–তারা তো ঠিকি ভালোবাসতো?
–আমার কথা শুনে বুড়ো কেমন করে তাকালো।তারপর আবার বলতে লাগলো।
–রিজিওয়ানের খারাপ উদ্যেশ ছিল।রিজিওয়ান এর আগেও দুইটা মেয়ে তার প্রেমের জালে ফাসিয়েছে।রিজিওয়ানের উদ্যেশ হলো মাহিরাকে বলি দেয়া আর তার পিশাচ শক্তি বৃদ্ধি করা।এর আগে দুইজনকে দিয়েছে।মাহিরাকে দিলে তার শক্তি অমর হয়ে যাবে।যাদের বলি দিবে তাদের জন্ম অমাবস্যার রাতে হতে হবে।আবার ১৮ বছরের পূর্ন যুবতি হতে হবে।তার পর বুড়ো থামলো।
–তারপর কি হলো?আমরা তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি।
–মাহিরাকে নিয়ে যাবার পর।তাকে বলি দেয়ার জন্য ঐ কালা পাহাড়ের রাজবাড়িতে নিয়ে যায় ছলনা করে।যখন চাদ পূর্ন ভাবে মেঘে ধেকে যায়।চারিদিকে আত্মারা জেগে ওঠে।রিজিওয়ানেরর আসল কুৎসিত মনোভাব বুঝতে পারে মাহিরা।কিন্তু সেদিন রিজিওয়ান মাহিরাকে বলি দিতে পারেনি।মাহিরার বাবা মা উপস্থিত হয়।রিজিওয়ান তাদের কে মেরে ফেলে।সেদিন মাহিরা রিজিওয়ান কে বলি দিয়ে দেয় অমাবস্যার পুর্ন গ্রহনের সময়ে।তখন সকল শিশাচ তার শরিরে প্রবেশ করে।মাহিরা তখন থেকে ঐ কালা পাহাড়ের রানী হয়ে যায়।
–আপনি কি করে জানলেন?
–আমি হাহাহাহাহাহাহাহ।আমার মুক্তি আজ থেকে।রানীর শেষ সময় চলে এসেছে।মনে রেখ মরতে হতে পারে।রানী অনেক ভয়ানক।তার চোখ হিরার মতো ঝকঝকে।তার চোখের মায়াতে পড়লে তখন তোমরা তার বসে চলে আসবে।
বুড়োটা আর কিছু না বলেই অখান থেকে দৌড়ে চলে গেল।
আমার তো ভয়ে শরীর দিয়ে ঘাম বেয়ে টুপটুপ করে পড়ছে।অমাবস্যা আসতে ১ দিন বাকি। হাত পা কাপতে শুরু করেছে।
সাফাকে ভয় পেতে দেখিনি আগে আর এখন ও নিজেও ঘামছে।
–মাহিরাকে মারা উপায় নেই?
–আছে।তাকে মারার উপায় আছে বাট আমরা জানিনা।বলে মুই কি জেন ভাবছে।
–যদি তাকে না মারা যায় তাহলে এখানকার কেউ বাচবেনা।
–ঠিক।আমরা আজ ঐ কালা পাহাড়ে যাব।
আমার কথায় সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে।
–ভয় পাশনা আমি যেখানে যাই সেখানে ভুত থাকেনা।
–আমাদের মরার সখ হয়নি।আমি আজি বাসায় যাব।রিদয় বলে কাপছে।
হঠাৎ চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেল।সূর্য মেঘে ধেকে গেল।চারিদিকে কেমন অন্ধকার হঠাৎ আমাদের সামনে একটা বিশাল দেহি কি জেন মানুষের মতো দেখতে দাড়ালো পিঠে পাখা আছে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঐ অদ্ভুত প্রানিটা রিদয় আর সাফাকে নিয়ে উড়ে চলে গেল।চারিদিক আবার আগের মতো হয়ে গেল।
ঘোরের মধ্যে আছি এমন মনে হচ্ছে।কি ছিল কি হয়ে গেল।
–এর নাম মিসাই।রানীর বিশ্বস্ত অনুচর।মুই বলল
–এদের কে নিয়ে গেল কেন?
–আমি জানিনা।এর আগেও এমন ভাবে মিসাই অনেক কে নিয়ে গেছে।
–তিহলে এখন কি হবে?
–কিছুই করার নেই যারা ঐ খানে গেছে তারা কোনদিন ফেরত আসেনি।
–আমাকে ওদের বাচাতেই হবে।বলে পাহাড়ের দিকে যেতে লাগলাম।
–লাভ নেই প্রবেশ পথ বন্ধ।
–কেন?
–অমাবস্যার রাত ছাড়া ওখানে যাওয়া যায়না।
মুইয়ের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল।কাছের বন্ধুটা এখন বিপদে।কিন্ন্তু তাকে সাহায্য করতে পারছিনা।
–আমার সাথে চলো।
–কোথায়?
–বাড়িতে।কাল সকাল থেকে প্রবেশ পথ খুলে দেয়া হবে।রানীর অনুচর যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে যাবে।কেও থাকবেনা এখানে।তখনি সময় ভিতরে প্রবেশ করার।
মুই ঠিক বলেছে।আমাকে বাচাতেই হবে রিদয় সাফাকে।আর মুক্তি দিতে হবে এই এলাকা বাসিকে এই অভিশাপ থেকে।
আমি হোটেলে চলে আসলাম।মুই তার বাড়িতে গেল।বারবার রিদয় আর সাফার কথা মনে পড়ছে।কেমন আছে তারা আদো কি বেচে আছে নাকি মরে গেছে।ভাবতেই মনের মধ্যে কেমন কষ্ট অনুভুত হচ্ছে।পরের দিন সকালে বের হলাম।রাস্তা কেমন শুনশান নিরবতা।কোন লোকজন নেই।হঠ্যাৎ লোকজন কই গেল কিছুই বুঝতে পারছিনা।হঠাৎ মনে হচ্ছে আকাশ মেঘে ধেকে যাচ্ছে।চিৎকার আর্তনাদের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সুর্য মেঘে ঢেকে গেল।অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার।অনেক গুলো পায়ের শব্দ।হঠাৎ দেখি মুই দৌড়াতে দৌড়াতে আমার দিকে আসছে।
–কি হয়েছে তোমার এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন?
–এখন কথা বলার সময় নেই।আমার সাথে চলুন।
–কোথায়??
–গেলেই দেখতে পাবেন।
তারপর মুইয়ের সাথে গেলাম।কোন এক পাহাড়ের কাছে নিয়ে গেল।অন্ধাকারে ভালো বুঝতে পারছিনা।
–এটা কোন জায়গা?
–এটাই কালা পাহাড়
–কালা পাহাড় এটা??
–হ্যা।এটাই সুযোগ প্রবেশ করার।
–তাহলে চলো।
–হুম চলেন।
তারপর কিছুখন হাটার পর একটা গেট দেখতে পেলাম।প্রবেশ করার সময় শরীরে কেমন একটা অনুভুতি হলো।
চারিদিকে মানুষের মাথা হাড় পড়ে আছে।কেমন ছমছমে পরিবেশ।রাজবাড়ির কাছে আশার সাথে সাথে চিৎকার শুনতে পেলাম।শব্দগুলো এমন ছিল আমাদের ছেড়ে দাও আমরা কি ক্ষতি করেছি।
–কিসের শব্দ এগুলো?
–এগুলো মানুষের শব্দ
এদের ধরে আনা হয়েছে।
–এদের ধরার কি প,য়োজন?
–এদের ভিতর যুবক ছেলেদের বলি দেবে।আর যুবতি মেয়েদের তার বশে নিয়ে নিবে।আর তাদের নিয়ন্ত্রন করতে হাতে গোনা কয়েকটা পুরুষ তাও বয়স্ক তাদের বাচিয়ে রাখে তাও তার বশে।
–ও।কিন্তু ওকে মারব কি করে?
–এটা তো আমিও যানিনা।
–এখন তাহলে কি হবে?
–ভাগ্য সাথে থাকলে ঠিকি পথ পাব।
তারপর আমরা মহহলে প্রবেশ করলাম।চারিদিকে আলো। আর বাইরে কেমন অন্ধকার।হঠাৎ দেখি সাফা হেটে চলে যাচ্ছে।ডাকার পরেও শুনছেনা।চলেই যাচ্ছে।সাফার পিছেে আমরাও দোড় দিলাম।
সাফা একটা বড় দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপর দরজাটা খুললো।আর তখন সেই আগের শব্দটা পেলাম আমাদের মাফ করে দাও। আমরা তোমার কি ক্ষতি করেছি।সাফা ভিতরে প্রবেশ করলো।আমি আর মুই দরজার কাছে গেলাম।গিয়ে দেখি ভিতরে অনেক বড় একটা ঘর।মনে হচ্ছে এটা রাজার রাজ দরবার।ভালো করে খেয়াল করে দেখি রাজার আসনে একটা অপরুপ নারী বসে আছে।সবাই তার অনুগত করছে।তার পাশেই সাফা গিয়ে দাড়ালো।
তার রুপ দেখে যে কোন পুরুষ তার ওপর দুরবল হয়ে যাবে।রানীর পাশে যারা আছে তারা সবাই মেয়ে একটাও ছেলে নাই।হঠ্যাৎ রানী আদেশ দেয় তার অনুগতদের যে যাদের বলি দেয়া হবে তাদের নিয়ে এসো।তার কথা মতো অনেক লোককে আনা হলো।যাদের নিয়ে আশা হলো তারা সবাই ছেলে।তার ভিতর রিদয় ও আছে।।
হঠ্যাৎ রানি মুচকি হাসি দিয়ে তার অনুগতদের বললো তোমাদের রাজা চলে এসেছে তোমরা তাকে সম্মান জানাও। বলে আমাদের দিকে দেখিয়ে দিল।আমরা তো ভিমড়ি খেয়েছি।আমাদের দেখে ফেলেছে আর রক্ষা নেই।যখন দৌড় দিতে যাব তখন রানী বলল পালাতে পারবেনা।এই প্রাসাদে নিজের ইচ্ছাতে আশা যায় কিন্তু যাওয়া যায় না।এখানে যা হয় সব আমার ইচ্ছাতে।
আমরাও বুঝতে পারলাম পালানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই।তাই চুপচাপ দাড়িয়ে পড়লাম।
–ভিতরে এসো।তোমার জন্য কতো দিনের আশা।জানি তুমি একদিন আসবেই।
–কি বকছেন এসব।
–যা বলছি তাই।৩০০শত বছর ধরে তোমার অপেক্ষা করছি।তুমি ছাড়া যে আমার পুর্নতা নেই।
–আপনার মাথা ঠিক নেই।কি যাতা বলছেন।
–ঠিকি বলছি।তোমাকে ছাড়া আমার শক্তি কখনো পুর্নতা পায়না।
–আমার সাথে শক্তির কি সম্পর্ক?
–তোমার অত কিছু যেনে লাভ নেই।চুপচাপ চলে এসো।
আমিও আর কথা বললাম না রানির সামনে দাড়ালাম।সাফা রানির পাশে নিসপ্রান দেহের মতো দাড়িয়ে আছে।রানির মুখটা এখনো দেখতে পেলাম না।তার শরিরের রুপেই সকল পুরুষ বসিকরন হয়ে যাবে।
রানি হঠাৎ আমাদের দিকে তাকালো তার চোখ গুলো পুরা নিল।মনে হচ্ছে নিল রংয়ে চারিদিকে মাখা মাখি হয়ে আছে।
বুড়ো লোকটা রানির চোখের দিকে তাকাতে নিষেধ করেছিল।তাও ভুল করে তার চোখের দিকে তাকালাম আর তার চোখের ভিতর থেকে আলো বের হয়ে এলো এসে আমার চোখে লাগলো। কিন্তু লাগার সাথে সাথে আলোটা আমার চোখ থেকে গিয়ে সাফার শরীরে লাগলো।সাফা মাটিতে পড়ে গেল।
তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।মাথাটা ঝিমঝিম করছিল।রানী মাহিরার চোখের আলোটা এতো প্রক্ষর ছিল।সাফার কিছু হয়নি তো?আলোটা তো প্রতিফলিত হয়ে সাফার শরীরে লাগে।মাথাতে হাজার চিন্তা হচ্ছে।ভালো করে খেয়াল করে দেখি আমি একটা বেডে শুয়ে আছি।
রুমটা অনেক বড়।সুন্দর করে সাজানো।মহলটাকে ভিতর থেকে দেখে কেউ বুঝতে পারবেনা যে এটা ভুতুড়ে মহল।কত সুন্দর করে সাজানো মহলটা।
মাথাটা এখন ও হালকা ঝিম ধরে আছে।তাও বিছানা থেকে উঠলাম।বাইরে বের হয়ে দেখি চারিদিক শুনশান নিরবতা।হাটতে হাটতে একটা জায়গায় গিয়ে থামলাম।জাগাটা অনেক বড়।আর তার দেয়ালে রানী মাহিরার একটা বড় একটা ছবি। ছবিটা অনেক যত্ন করে রাখা হয়েছে।চকচক করছে।মনে হচ্ছে সোনার ফেমে বাধানো আছে ছবিটা।
ছবিটার কাছে যেতেই।ছবির ওপর থেকে একটা বই আমার মাথার ওপর পড়লো।মনে হয় অনেক আগের কিতাব হবে।মাটি পড়ে আছে।মাটি মুছে কিতাব টা খুললাম।পুরো কিতাব টা ফাকা।কিতাবের লাস্ট পাতায় রক্ত দিয়ে লেখা একটা সুত্র।
যেখানেই দেখিবে বড় কিছু
ঘুরে ফিরে দেখ তার পিছু
পাইলেও পাইতে পারো
অমুল্য সমাধান।
এই সুত্র দারা কি বুঝাতে চেয়েছে?কিছুই বুঝলাম না।ভালো করে খেয়াল করে দেখি লেখা আছে ১৭১৮। মানে পুরা ৩০০ বছর আগে লেখা।
এতো দিন আগে লেখা বই ভাবতেই পারছিনা।হঠ্যাৎ ঢং করে ৫ টা বারি পড়লো।
ঘর থেকে বের হয়ে শব্দটার দিকে গেলাম।দেখি রাজ দরবার এ সবাই কে বেধে রাখা হয়েছে। মুই রিদয় সবাইকে।সাফা মাহিরার পাশেই দাড়িয়ে আছে।কিন্তু পারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।রানি মাহিরা আমাকে স্বাগত জানালো।
–এদের সবাই কে বেধে রেখেছো কেন?
–এরাই তো আমার শক্তি।
–সবাইকে ছেড়ে দাও।
–না।এদের ছেড়ে দিলে আমার রুপ যৌবন শক্তি কিছুই থাকবেনা।
–তুমি ছেড়ে দেবে না আমি তোমাকে মেরে ফেলবো?
–আমাকে মারবে।। হাহাহাহাহাহাহ্হ
াহা।বিকট শব্দে হাসতে লাগলো রানি মাহিরা।
আমার আর সহ্য হলোনা।পাশেই তরবারি ছিল।ওটা নিয়ে মাহিরার পেটে ধুকিয়ে দিলাম।কিন্তু মাহিরার কিছু হলোনা।
আমাকে ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিল।
–তোমাদের সবাইকে আর সাত ঘন্টা পর বলি দিব।তোমাদের রক্ত পান করে আমি পিশাচ রানি হবো।আমার পুর্ন শক্তি পাব।
–তোমার আশা কোন দিন ই পুর্ন হবেনা।
–আটকানোর চেষ্টা করো.
আমাকে আবার আগের রুমে রেখে গেল।আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম।অমাবস্যা হতে সাত ঘন্টা বাকি।মাহিরা যদি তার শিশাচ শক্তি পেয়ে যায় তাহলে সে সব কিছু শেষ করে দিবে।
হঠ্যাৎ দেখি সাফা আমার রুমে প্রবেশ করছে।
–মাহিরাকে এভাবে মারতে পারবেনা।
–তুমু ঠিক হয়ে গেলে কি করে?
–তোমার চোখ থেকে যে আলো আমা শরীরে লেগেছিল।ওটার কারনে আমি মাহিরার বস থেকে বের হয়ে গেছি।কিন্তু তার বসে আছি এমন ভাবে চলছি।
–ও।তাহলো মাহিরাকে মারবো কি করে?
–আমি তার সাথে থেকে যা জেনেছি।তাকে আমার গোপন কোন কিছু আছে।সেটা গোপন কোন জায়গায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে।সেটা তোমাকে খুজে বের করতে হবে।
–কিন্তু কোথায় সেই গোপন জায়হা।
–ভাবো মন দিয়ে ভাবো।অন্তরের চোখ দিয়ে খোজো ঠিকি পাবে।
–হ্যা।ঠিক বলেছো।গোপন কোন জিনিস গোপন কোন জায়গায় তাইনা?
–হ্যা।
–পেয়েছি এটির সমাধান।
–কোথায় সেই জায়গা।
–চলো আমার সাথে চলো।
আমরা দুজনে চুপিচুপি ঘর থেকে বের হয়ে। আগের ঐ বড় হল রুমটাতে গেলাম।সেখানে গিয়ে সাফাকে কিতাবটা দেখালাম।সুত্রটা দুজনে বারবার বুঝার চেষ্টা করছি।
হঠ্যাৎ মাথার মধ্যে একটা চিন্তা এলো।
সুত্রটা হলো
যেখানেই দেখিবে বড় কিছু
ঘুরে ফিরে খুজে দেখ তার পিছু
পাইলেও পাইতে পার
অমুল্য সমাধান।
তিনটা কথা দ্বারা একটা জিনিস কেই ইঙ্গিত করছে আর সেটা হলো?
সুত্রটা পড়ার পর হঠাৎ রানি মাহিরার বড় ছবিটার দিকে চোখ গেল।সুত্রটা যা বলছে তার সব বৈশিষ্ট্যই আছে এই ছবিটাতে।আমি সাফাকা বললাম
–সুত্রটা কিন্তু এই ছবিটাকে ইঙ্গিত করছে।
–কিভাবে করছে?আমি তো এটার কোনো মানে বুঝতে পারছিনা।
–সুত্রটার প্রথম অংশ যেখানেই দেখিবে বড় কিছু।রানি মাহিরার ছবিটা কিন্তু বড়।
–তারপর কি করে মিলাবে?
–দ্বিতিয় অংশ ঘুরে ফিরে দেখ তার পিছু।তাহলে এটার পিছে কিছু আছে।
–মাথা ঠিক আছে তোমার?
–কেন থিকবেনা?
–ছবিটা দেয়ালে প্রিন্ট করা।এর পিছনে আরেকটা দেয়াল ছাড়া কি থাকবে?
–ভালো করে ভাবো।মনে করো ছবিটার পিছনে এমন কিছু আছে যেটা আমরা যানিনা।আর তারপর ছবিটাকে লাগানো হয়েছে দেয়ালে?
–হুম।তাও হতে পারে তাহলে এখন কি করবে?
–ছবিটা সরিয়ে ফেলি।
তারপর ছবিটাকে সরাতে গেলাম।কিন্তু পারলামনা।মনে হয় দেয়ালের সাথে এটাসমেন্ট করা।তাহলে কি আমার ধারনা ভুল?কিন্তু এটা কি করে ভুল হয়।
–সাগর এদিকে এসো।
–কি হয়েছে??
–ছবিটার দিকে ভালো করে তাকাও।রানি মাহিরার ছবিতে মাথার চুল গুলো কেমন জিবন্ত মনে হচ্ছেনা?
–হ্যা।তাই তো।এমন দেখাচ্ছে কি করে?৩০০ বছর আগের পেন্টিং এটা।
–আমি করে যানি এটা কেন এমন দেখাচ্ছে।
আমি আগ্রহ বসতো ছবিটার চুলে হাত দিলাম।একেবারে অরিজিনাল চুলের মতো মনে হচ্ছে।আমার কেমন ভয় ভয় লাগছিল।তাই হাতটা সরাতে যাব।আর চুলটাতে টান লেগে যায়।আর তখনি কেমন করে ঘরটা কেপে উঠলো।রানি মাহিরার পেন্টিংটা সরে গেল।একটা দরজা বের হলো
–দেখেছো সাফা সব কিছুরই সহজ সমাধান আছে কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারিনা।
–হ্যা। ঠিক বলেছো।এখন কি করবে?
ঢ়ং ঢ়ং ঢ়ং ঢ়ং ঢ়ং ঢ়ং
–ছয়টা ঘন্টা পড়ে গেল।আমাদের হাতে আর সময় নেই।আর ছয় ঘন্টা বাকি।দেরি করলে আমরা কেউ বাচবনা।
–হ্যা।আমার না খুব ভয় করছে।
–ভয় করার কি আছে আমি তো আছি।
–মুইয়ের জন্য অনেক চিন্তা হচ্ছে আমার অনেক ভালো বান্ধবী ও।
–এখন এসব চিন্তা করার সময় নয়।আমার সাথে চলো।
–আচ্ছা চলো।
তারপর আমরা দুজন গুপ্ত দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।কিছুদুর যাবার পর এটা ঘর দেখতে পেলাম।চারিদিকে মাকড়সা তার জাল বুনে রেখেছে।দুর্গন্ধ বের হচ্ছে।কত দিন থেকে যে এটা বন্ধ আছে তার ঠিক নেই।
আমরা রুমটার ভিতর প্রবেশ করলাম।
–আচ্ছা সাগর এই রুমে তো কেউ নেই।আমরা তাহলে এটান সমাধান পাবো কি করে?
–আমার এমনিও মনে হয় এর ভিতর কিছু নেই।অনেক দিন থেকে বন্ধ আছে মনে হয়।আর কেউ থাকলেও বেচে
থাকার সম্ভাবনা নেই।তাই আমাদের ভালো করে খুজে দেখতে হবে।
হঠাৎ সাফার দম ফাটানো চিৎকার।আমি সাফার কাছে দোড় দিয়ে গেলাম।
–কি হয়েছে চিৎকার করছো কেন?
–ঐ দেখ।
–ওটা তো একটা ইদুর।
–ইদুরে ওপরে দেখ
–এটা একটা মাথার খুলি।এখানে এসব দেখে ভয় পাবার কিছু নেই।
–আমি মাথার খুলি দেখে ভয় পাইনি
–তাহলে?
–ওটার ভিতর তেলাপোকা।
–এই মাইয়ার কথা শোনো।তেলাপোকা দেখে যে চিৎকার দিছে মনে হচ্ছে তেলাপোকা একে ধরে খেয়ে ফেলবে।
–একদম মসকরা করবেনা।তেলাপোকাকে আমার এমনিই ভয় লাগে।
–তাই?আচ্ছা দাড়াও।
মাথার খুলিটা এনে সাফার গায়ের ওপর ফেলেছি।আর কি চিৎকার শুরু করছে।মাথাটা ঝিনঝিনি করছে চিৎকারের জন্য।সাফার কাছ থেকে মাথার খুলিটা নিয়ে ফেলে দিলাম।সাফা ভয়ে কান্না জুরে দিছে।তার কাছে যেতেই আমাকে তাড়া শুরু করলো।
দৌড়াতে গিয়ে আমি সাফা দুজনেই ঘরের মেঝে ভেঙ্গে নিচে পড়ে গেলাম।
তারপর সেখানে দেখি এক ইয়া বড় দাড়িওয়ালা লোক সামনে আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে।
আমাদের দিকে তাকিয়ে লোকটা বললো
–তোরা ঠিক সময় মতই চলে এসেছিস।
–আপনি আমাদের চিনেন?
–হ্যা।তোকে চিনি।
–আমাকে চিনেন কি করে?আমি তো আপনাকে চিনিনা।
–তুই ও আমাকে চিনিস।আগের জন্মে আমি তোর গুরু ছিলাম।(মানুষ পৃথিবীতে একবারই আসে।কিন্তু গল্পের জন্য দুই জনম ব্যবহার করা হয়েছে।)
–আগেন জন্মে?এটা কি করে সম্ভব?
–সবি সম্ভব।
আমার মাথায় তখন কিছু কাজ করছেনা।আগেন জন্ম।
–তোর মাথায় নানা রকম চিন্তা আসছে তাইনা?
–হ্যা।
–বলছি সব।আজ থেকে ৩০০ বছর আগে তুই ছিলি এখানকান রাজকুমার রিজিওয়ান।তুই পূর্ব জন্মে মোটেও ভালো ছিলিনা।তখন তোর ছিল মেয়ের নেশা।আর তুই তোর যৌবনকে ধরে রাখতে মাহিরাকে প্রেমেন জালে ফাসাস।মাহিরার আগেও তুই ৩ টা মেয়েকে এভাবে বলি দিয়েছিস।এই পাহাড়ের আশেপাশে তিনটা কুকুর দেখিসনি?
–হ্যা। দেখেছি।
–ঐ তিনটা মেয়ের আত্মা কুকুর হয়ে ঘুরে বেড়ায়।তোর হাতে ছিল ক্ষমতা।তুই আমাকে এসব করাতে বাধ্য করতি তোর পাপের ফল আমি ৩০০ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি।আমার মুক্তি দেয়নি মাহিরা।বন্দি করে রেখেছে এখান এ।তুই সেদিন মাহিরাকে বলি দিতে পারিসনি।মাহিরা তোবে বলি দিয়ে দেয়।তখন থেকে মাহিরা তার বলির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।তোর পূর্ব জন্ম হবে।এটা মাহিরাও যানে তার পিশাচ শক্তি দিয়ে।আজ সবাইকে বলি দিয়ে তাদের তাদের রক্ত পান করে তার যৌবন আবার ষোড়শী নারিতে নিয়ে আসবে।তারপর তোর সাথে মাহিরা যৌন খেলাতে লিপ্ত হবে।আর ঠিক তখনি মাহিরার একটা বাচ্চা হবে।আর তোকে তারপর বলি দিয়ে তার বাচ্চাকে তোর রক্ত খাওয়াবে।ার সেই বাচ্চা হয়ে উঠবে পিশাচ শক্তির সব চেয়ে বেশি শক্তিশালী।
–মাহিরার হাত থেকে বাচবো কি করে?
–এটা অনেক কঠিন।তারপরের উপায় আছে।মাহিরাকে মারতে পারলেই আমার মুক্তি।
–তাহলে আমাকে উপায় বলে দিন।
তারপর আমাকে একটা তরবারি দিল।
–এটা ৩০০ বছর ধরে তৈরি করা তরবারি।এই তরবারি কোন লোহার তৈরি নয়।এটা পিশাচ সিদ্ধ মানুষের বলি দেয়া
হাড়ের তৈরি।আমি আগেই যানতাম তুই যদি পিশাচ সিদ্ধ হয়ে যাস তখন তোকে কেউ মারতে পারবেনা।তাই আমি এই অস্ত্র তৈরি করে রেখেছিলাম।আর এটা এখন মাহিরার জন্য কাজে লাগছে।
–আমি মাহিরাকে মারবো কি করে?
–তাকে মারার সময়। যখন আমাবশ্যা কেটে গিয়ে আকাশে পূর্নিমার চাদ উঠবে তখন।তরবারি দিয়ে তাকে মেরে দিবি।
–অমাবস্যা শেষে পূর্নিমার চাদ উঠে?
–এটা পিশাচদের চাদ।বলি দেয়ার সময় মহলের ওপরের অংশ ফাকা হয়ে যাবে।সবার শরিরে চাদের আলো পড়বে।তবে আফসোস তোরা কাওকে বাচাতে পারবিনা।
–কেন পারবোনা?
–কারন তখন তোরা মাহিরাকে মারতে গেলে তার অনুচর রা তোদের বাধা দিবে।
–তাহলে উপায়?
–সময় হয়ে এসেছে।যা সময় মতো সব বুঝতে পারবি।
তারপর আমি আর সাফা সেখান থেকে চলে আসলাম।রাজদরবারে এসে দেখি অপরের অংশ ফাকা সবার শরীরে চাদের আলো লাগছে।মাহিরা চোখ বুজে কি কি বিরবির করছে।সবাই চোখ বুজে একি কাজ করছে।
আমিও ঐ সুযোগ কাজে লাগাতে লাগলাম।মাহিরাকে তরবারি দিয়ে মারতে গেলাম।কিন্তু মাহিরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল।
–আমার রাজা তুমি আমাকে মারতে চাও কেন?
–তোর কি আশা আমি যেনে গেছি ডাইনি।তোর মৃত্যু আজ আমার হাতে।
–হাহাহাহেহেহেহাহেহেহেহ।।।যেনো গেছো??তো কি হয়েছে।এখন আমি এদের বলি দিয়ে আরো রুপবতি হবো।যাতে তোমার চোখে আমি ছাড়া কেউ না থাকে।আমার রাজা।
–আমি বেচে থাকতে এটা কোন দিন ই হতে দিবনা।
–সবাই কে বলি দেয়ার জন্য তৈরি করো।
মাহিরার আদেশে সবাইকে তৈরি করলো তার অনুচররা।তখন সবার মুখে একটাই কথা আমাদের ছেড়ে দাও।আমরা বাচতে চাই।এদের ভিতর আমার বন্ধু রিদয় ও ছিল।মাহিরার খাস গোলাম মাখরিক যখন বলি দিতে যাবে আমি তখন তাকে তরবারি দিয়ে তার মাথা কেটে ফেললাম।
–তোর আশা আমি কোন দিন সফল হতে দিবনা ডাইনি।
–হাহাহাহাহাহাহ্হাহা বুঝেছি।আগে তোমাকে বলি দেয়া লাহবে।
আমি মাহিরাকে মারতে গেলাম।আমাকে ছিটকে ফেলে দিল।মাহিরার শক্তির কাছে আমি কিছুই না।
মাহিরার চোখ দিয়ে তখন নীল আলো বের হচ্ছে।তার রুপ ফুটে উটছে।আমারর ব্রেনে তখন বলছে মাহিরাকে মার।কিন্তু শরীরের কোষ কাজ করছেনা।মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বস করছে।আমার শরীর আমার কথা শুনছেনা।
মাহিরা আমাকে তার যাদুতে বস করার চেষ্টা করছে।সাফা মাহিরাকে মারতে গেলে তার গলা ধরে যাগিয়ে তুলে।তার পর দুরে ছুড়ে মারে। আমি বুঝতে পারলাম মাহিরাকে এভাবে মারা যাবেনা।
আমার মাথায় তখন একটা বুদ্ধি এলো।মাহিরা আমাকে এখন মারবেনা।যদি মারে তাহলে তার আশা পুরন হবেনা।তাকে মারতে ছলণার সাহায্য নিতে হবে। তাছাড়া কোন ভাবেই তাকে মারা যাবেনা।মাহিরার অনুচররা তখন ও মন্ত্র পাট করছে চোখ বুজে।
আমিও মাহিরার দুর্বলতার সুযোগ নিলাম।মাহিরাকে ধরে তার ঠোটে ঠোট বসিয়ে দিলাম।মাহিরা যৌন তারনায় উত্যেজিত হয়ে উঠলো। আমার চাইতে মাহিরা বেশি আগ্রহি।(১৮+ হবার জন্য আন্তরিক দুঃখিত)
মাহিরার কামনার সুযোগ নিয়ে তার পেটের ভিতর তারবারি টা ধুকিয়ে দিলাম।মাহিরার চিৎকারে মহল নড়ে উঠলো।আমি মাহিরার কাছ থেকে দুরে চলে এলাম।মাহিরান শরীরের ভিতর যত পিশাচ শক্তি ছিল সব ঐ চাদের আলোর সাথে মিশে গেল।মাহিরার নিথর দেহ মাটিতে ঢ়ুলে পড়লো।
চারিদিকে তখন একটাই শব্দ আজ থেকে আমাদের মুক্তি।যাদের মাহিরা বস করে রেখেছিল তারাও আগের মতো হয়েছিল।ঠিক তখন মাহিরার শরীর গলে চাদের আলোর সাথে মিশে গেল।আর এটা হবার সাথে সাথে মহলটা ভাঙতে শুরু করলো।
সবাই দোড় দিলাম।মহলের বাইরে এসে মহলের দিকে তাকালাম।মহলটা আস্তে আস্তে ধ্বংস হয়ে গেল।মুক্ত হয়েগেল অশুভ শক্তির হাত থেকে।এখন থেকে আর কাওকে মরতে হবেনা।।
*******************************************(সমাপ্ত)******************************************