পুুরোনো ব্রীজটা ধরে মূল রাস্তার পেট চিড়ে বের হওয়া সরু রাস্তাটার একদম শেষ প্রান্তে মতির হোটেল। ছোটখাটো চায়ের দোকান বললেও নিতান্তই ভুল হবে না। শত মন খারাপ নিয়ে এখানে ঢুকলেও, ফেরার পথে মুখে দু দন্ড হাসি নিয়ে ফিরতে পারি। সাপ্তাহিক ছুটি সমেত দিন তিনেকের ঘন্টাখানেক এখানটায় বরাদ্দ থাকলেও বেঞ্চিতে বসতে না বসতেই মিনিট ও ঘন্টার কাটা টা দ্রুতবেগে ছুটতে শুরু করে দেয় যেন এখানকার ঘড়িটায় রেসের ঘোড়ার তীব্র গতি বসানো। সময় কোনদিকে পেরিয়ে যায় বোঝা মুশকিল। আড্ডা বলে কথা। আমি(সালমান), অর্নব, শ্যামল, রাব্বি। ফোর ইডিয়টস।
আড্ডার বিষয়বস্তুগুলোও আজকাল অতি বিচিত্র কখনো জঘন্য। প্রেম, ভালোবাসা, ব্রেক আপ, সমাধান, ডেটিং, খরচাপাতি, বাজেট, ধার, খেলাধূলা, রাজনীতি, টেকনোলজি, ভ্রমণবিলাস মোটামুটি সবকিছুরই আধিপত্য থাকে আমাদের নিজস্ব টক শো জুড়ে। যে শো আমরাই করি, আমরাই দেখি এবং আমরাই মজা নেই। মাঝেমধ্যে আলোচনায় একটা বিশাল জায়গা জুড়ে উঠে আসে নারী ও প্রেম। চা, সিঙ্গারা ধ্বংস হয় আর একটার পর একটা সিগারেট পুড়তে থাকে। চরম দুঃখ বেদনাগুলোও হাসি ঠাট্টার তালিকায় ঠাই করে নেয় নির্দিধায়। দোকানের সাড়ে ১৬ ইঞ্চি টিভি পর্দাটায় চলে বলিউডি কন্যাদের মোহনীয় নৃত্য। তবে টুপি পরিহিত মুরুব্বীর অনাকাঙ্ক্ষিত অনুপ্রবেশে কিংবা বাংলাদেশের খেলায় সৃষ্ট পরিস্থিতি কখনো বদলে দেয় প্রেক্ষাপট। এই পরিস্থিতি মতি মিয়া কে বাধ্য করে চ্যানেল পাল্টাতে, আর আমাদের বাধ্য করে সৌজন্যসূচক আদাব/সালাম দিয়ে নিজেদের কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডে খানিকটা সংযত হতে। posologie prednisolone 20mg zentiva
কিন্তু সেদিন আচমকাই একটা খবরে নিজেদের আর মোটেই সংযত রাখা গেলো না। ম়ৃদু আড্ডাবাজির মাঝেই হঠাৎ বেজে ওঠা শ্যামলের ফোন আর অপর প্রান্ত হতে পাওয়া অঘটনের দুঃসংবাদে, একরকম হুড়মুড়িয়েই বেরিয়ে পড়লাম ৪ জন। শ্যামলের রুমমেট, আমাদের ক্লাসমেট জাহিদ মোটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করে যা তা অবস্থা। হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। খবর পেয়ে, বিন্দুমাত্র দেরী না করে ৪জনে হাসপাতাল অভিমুখে ছুটলাম। রিক্সা করে গেলে আধ ঘন্টার বেশী লাগার কথা না। রাস্তায় খানিকটা জ্যাম থাকায়, পৌছাতে আরো ৫/৬ মিনিট বেশিই লেগে গেলো। বাহিরের এশার আজান কানে পড়তেই হাত ঘড়িটায় একবার চোখ বুলাতেই বুঝলাম সাড়ে ৮টা বাজে। রিক্সাওয়ালার ভাড়া চুকিয়ে মুকিয়ে, ভেতরে ঢুকে পড়লাম ৪জন।
ফোন করে জেনে নেয়ায়, ওয়ার্ড খুঁজে পেতে তেমন একটা অসুবিধে হলো না, তবে ভেতরে প্রবেশ করতেই খানিকটা চমকে গেলাম আমরা। কিছুক্ষণ আগে এক্সিডেন্ট হওয়া ছেলেটা দিব্যি হাসিমুখে গল্প করে চলেছে পরিবারের সদস্যবর্গের সাথে। তবে পরিবারের সদস্যদের বিমর্ষ বদনে চিন্তার মেঘমালা খানিকটা জমে আছে বোঝা যায় এখনো। মূল ক্ষতির মধ্যে বা হাতটাই ভেঙেছে যা, পায়ে খানিকটা জখম আর সমস্ত শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ছোটখাটো ব্যান্ডেজ দেখে আন্দাজ করা যায় ভাগ্যটা বেশ ভালো মাথায় কিংবা অন্য কোথাও গুরুতর তেমন কোনো ক্ষতিসাধন হয় নি। খোশগল্পে আমাদের যোগদানে, জাহিদের পরিবারের উতকন্ঠা ও চিন্তার ভাবখানা খানিকক্ষণের জন্য মিলিয়ে গেলো। আমরাও মোটামুটি নিশ্চিত হলাম যে বিপদ হয়তো কেটে গেছে।
কিন্তু হাসপাতালে আসা সদ্য চিকিৎসা গ্রহণ করা রোগীটির সাথে এমন গল্পগুজব হাসপাতাল কিংবা ডাক্তার নার্সদের নিয়মের পরিপন্থী জানলেও গল্পগুজবে ক্ষান্ত দিতে মন চাইছিলো না। আর, তাই হয়তোবা ঘন্টাখানেকর গল্পগুজব হয়েছে কি হয়নি, খানিক বাদেই ডাক্তার এসে ইঞ্জেকশন পুশ করে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে গেলো জাহিদকে।
তীব্র ঠান্ডায় একরকম হুট করেই চলে এসেছিলাম আমরা। আসার পথে অর্নব ব্যাতিত কারুরই কোনো শীতের পোশাক গায়ে চড়ানো ছিলোনা, আমার পড়নে থাকা উপরে শার্ট নিচে টি শার্ট ও জিন্স হাড় কাপানো ঠান্ডা বিবেচনায় মোটেই যথেষ্ট নয়। রাত বাড়ছে, সেইসঙ্গে বাড়ছে শীত। পৌনে ১০টার দিকে বিদায় নিয়ে চলে গেল শ্যামল-রাব্বি। আমি ও অর্ণব খানিকক্ষণের জন্য রয়েই গেলাম। রুমের বাইরে বেরিয়ে এসে আংকেল আন্টিকে টেনশন না করতে অনুরোধ করলাম। মায়ের মন সে কথায় কতখানি কর্ণপাত করলো কিংবা আদৌ কর্ণপাত করলো কিনা বোঝা গেলো না।
বিদায় নিয়ে বাইরে চলে এলাম দুজনে।
এদিকে ১১টা ছুই ছুই ঘড়ির কাটা আমাদের বুঝিয়ে দিলো, ক্ষুধা পেয়েছে। রাতের খাবার টা এখনো খাওয়া হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে, আশেপাশের স্থানীয় সস্তা হোটেল গুলোর একটায় ঢুঁ মারলাম আমি আর অর্ণব। এমন জমে যাওয়া ঠান্ডায় গরম খাবার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার বটে, অবশ্য পয়সা হলে দ্রুতই দেখা মেলে ভাগ্যদেবীর। আমাদের ভাগ্যও সত্যিই মন্দ ছিলো না, অল্প পয়সায় সদ্য চুলো থেকে নামানো ধোয়া ওঠা ভাত ও ডিমের তরকারি তখন অমৃত। তৃপ্তি সহকারে ভোজন পর্ব সম্পন্ন করা গেলো। শেষে এক কাপ চা শীত নিবারণের জন্য।
কিছুক্ষন ধরেই কেমন একটা ভোঁ ভোঁ শব্দ কানে বাজছে। কয়েক সেকেন্ড লেগে গেলো শব্দের উৎসটা ধরতে। ফোনের ভাইব্রেশন? ঠিক, তাই। নিশ্চিত কারো ফোন আসছে। সম্ভবত খালু, নয়তো মা। ফোন ভাইব্রেশন মোডে ছিলো। তুলে চমকালাম!! ৬টা মিসড কল। টেনশন করছে হয়তো। আমার বাকী বন্ধুদ্বয় মেসে থাকলেও আমার এখানে খালার বাসায় থেকেই পড়াশোনার ঠেলাগাড়িটা টেনে নিতে হচ্ছে। নিজের বাড়ি হতে দূরে থাকলেও খালা-খালু সেটা মোটেই অনূভব করতে দেন নি আমায়।
খাবারের দাম পরিষোধ করে বের হতেই, বাসা থেকে খালুর ফোন,
“কি রে? কোথায় তুই”
“আমার ক্লাসমেট এক্সিডেন্ট করে হসপিটালে, ওখানেই আটকে গেছি, তাই একটু দেরী হচ্ছে, টেনশন কোরোনা, আমি বাইরে খেয়ে নিয়েছি, তোমরাও খেয়ে নিও, ঘুমিয়ে পড়ো”, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললাম আমি।
“আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে, কিন্তু রাত পৌনে ১২টা বাজে আর কত দেরি করবি??”
“এইতো আমরা একটু পরেই বেরুচ্ছি, রিক্সা পেতেই হয়তো খানিকটা দেরি হবে।”
ফোন কেটে খানিকটা ধাতস্থ হয়ে, গরু খোঁজার মতো রিক্সা খুজতে শুরু করলাম। কুয়াশায় মোড়ানো চারপাশ, ৬/৭ ফিট দুরত্বেই তেমন কিছু চোখে পড়েনা সেখানে রিকশাটা এই মূহুর্তে সোনার হরিণ। যা দু একটা পাওয়া যায়, তারা নবাবী ভঙ্গিতে না সূচক মাথা নেড়ে চলে যায়। প্রবল ঠান্ডায় হাত পা রীতিমতো অসাড় হবার যোগার। ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে এবার অনেকটা কষ্টেই এক রিকশাওয়ালা কে দ্বিগুণ ভাড়ার প্রস্তাব করে বসলাম। রাজি হলো কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর মতো কন্ডিশন এপ্লাই করে বসলো। অর্ধেক পথ যাবে, এই শীতে পুরোটা যেতে পারবে না। কারণ জিজ্ঞাসায় জানালো, ফেরার সময় ওপাশ থেকে ভাড়া মোটেই পাওয়া যায় না। অর্নবের বাড়ি কাছাকাছি হওয়ায় আগেই নেমে যাবে কিন্তু অনেকটা পথ হেঁটেই পাড়ি দিতে হবে আমায়। অগত্যা, কিছু করার নেই দেখে রিক্সায় চড়ে বসলাম।
এত রাত্তিরে ভয়াল ঠান্ডায়, চলতি পথে তেমন একটা যানবাহনের দেখা মিলছে না। মাঝেমধ্যে দু একটা মালবাহী ট্রাক সাঁই করে চলে যাচ্ছে। রাতের জোৎস্নাটা ঘন কুয়াশা ভেদ করতে ব্যার্থ হচ্ছে বারবার। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে হলুদ কিংবা সাদা আলোগুলোও দাড়িয়ে আছে ব্যার্থ ভঙ্গিমায়। পাশের সিটে ঘনঘন হাই তুলছে অর্নব। মাঝে মাঝে হিমেল হাওয়ার তীব্র ঝাপটা লাগছে গায়ে। আর সমস্ত শরীরে বয়ে যাচ্ছে শীতলতার ভয়াল স্রোত।
মিনিট দশেক পড়েই নেমে গেল অর্নব। রিক্সাওয়ালাকে আরেকবার কাকুতি মিনতি করেও পুরো পথ নিয়ে যেতে রাজী করানো গেলো না। একাকী রিক্সায় বসে চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া এই মূহুর্তে তেমন বিশেষ উপায়ও নেই। ঠান্ডাটা বোধহয় বাড়ছে ধীরে ধীরে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘনীভূত হচ্ছে চারপাশের কুয়াশা। এই মূহুর্তে ছিনতাইকারীর ভয়টাই মনে আসছে সবার আগে। ছিনতাই সম্পাদনের জন্য এর চেয়ে মোক্ষম পরিবেশ তারা আর পাবে না। সাথে একটা চায়না মোবাইল আর রিক্সা ভাড়ার টাকাটা ছাড়া, মানিব্যাগের চিপায় পড়ে থাকা আধছেড়া বিশ টাকার নোট খোঁয়া গেলেও তেমন বিশেষ ক্ষতি হবে বলে আমার মনে হয় না।
কাছের প্রাইমারী স্কুল টা পেরুতেই, থেমে গেলো রিক্সার ৩ চাকা। দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে নেমে পড়লাম। বড় রাস্তাটা দিয়ে যেতে দেরি হবে ভেবে, পাশের আধাপাকা ছোট রাস্তাটা দিয়ে হাঁটা ধরলাম। যদিও দুরত্ব নেহাতই কম নয়।
ঠান্ডায় জমে যাওয়া শরীর আর আড়ষ্ট পা জোড়া নিয়ে চলতে শুরু করলাম একাকী আমি। চারপাশের অশরীরি নির্জনতা রীতিমতো ভয় ঢুকিয়ে দেয় সমস্ত শরীরে। রাস্তায় চারপাশের ঠায় দাড়িয়ে থাকা উচু আধ শহুরে বৃক্ষগুলো যেন একদৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে, অকস্মাৎ বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়ায় মাঝে মাঝে পাতার ঘর্ষণের শোঁ শোঁ শব্দ কানে পড়ে। যানবাহনবিহীন, জনমানবশূণ্য এ আধা পাকা রাস্তাটায় এ মূহুর্তে আমিই সম্ভবত একমাত্র প্রাণী।
কিন্তু মিনিট কয়েক হাঁটার পর, আমি ব্যাতিত এ রাস্তায় আর কোন প্রাণীর অস্তিত্ব না থাকার আমার সম্ভাব্য ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমানিত হলো। ৩/৪ গজ দূরে পথিমধ্যে তিনটে কালো কুকুর আমার দৃষ্টি কেড়ে নিলো। এ ভয়াল ঠান্ডায় ওরাও কাঁপছে। অজানা আগন্তুক কে দেখে এদের স্বভাবসুলভ ঘেউ ঘেউ করতেও যেন ভুলে গেছে। আমি কোনরুপ অস্বাভাবিক আচরণ না করেই ওগুলোকে ছাড়িয়ে সামনে এগুনোর ভঙ্গিমায় পা চালাতে লাগলাম। অনবরত চলতে লাগলাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
রাস্তার আশেপাশে এদিকদায় ল্যাম্পপোস্টের সংখ্যা অতি নগণ্য। আনুমানিক ১৫/২০ মিটারে হয়তোবা একটার দেখা মেলে। তারপরও কোনো কোনোটা নিভু নিভু করছে আর কোনোটা আলো প্রদানে পুরোপুরিই অক্ষম। নিরব, নির্জন জনমানবশূন্য রাস্তায় হেটে চলেছি একা। চলতে চলতে হঠাৎই কিছুদূর এগিয়েছি কি মনে হলো কেউ আমার পিছু পিছু আসছে। কেউ পিছু নেয়নি তো? হঠাৎই ফিরে তাকালাম। আরে, কিছুই তো নেই। কি ভাবছি আমি। ধ্যাত! আবারো চলতে শুরু করলাম আমি।
আবারো কিছুদূর হেঁটেছি কি.. এবারও একই রকম শব্দে থমকে গেলাম আমি। অনেকটা কোনোকিছুর হাঁটার মতো শব্দ আসছে পেছন থেকে! কেউ ফলো করছে নাতো? পেছন ফিরে তাকাতেই চমকে গেলাম আমি। একটা কুচকুচে কালো রঙের কুকুর, অপলক তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আরে, এতো সেই ৩টে কুকুরের ১টা, যেগুলো কে কিছুক্ষণ আগেই ছাড়িয়ে এসেছি আমি। এটা এতদূর কি করে এলো?
আর সাত পাঁচ কিছু না ভেবে আবারো হাঁটা শুরু করলাম আমি। আশেপাশের পরিবেশটা কেমন যেন আরো নির্জন ও নিস্তব্ধ হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। চারদিকে বিরাজ করছে এক শুনশান নিরবতা, যেন চরম অভিমানী প্রকৃতি শান্ত প্রতিষোধ নিচ্ছে কারো উপরে। এমন সময় আচমকাই সেই কুকুরটা দ্রুতপায়ে দৌড়ে আমাকে ছাড়িয়ে সামনে এগিয়ে গেল, কয়েক মিটার দূরে গিয়ে দাড়ালো। আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে হেঁটেই চলেছি। পা চলতে চাইছে না, জোর করে অসাড় পাগুলো কে চালাচ্ছি।
একসময় কুকুরটাকেও ছাড়িয়ে গেলাম আমি, কিন্তু কয়েক কদম চলার পর ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা। হঠাৎই পেছন থেকে কেমন অস্ফুট স্বরে শুনতে পেলাম কান্নার শব্দ, কেমন মিহি আওয়াজটা একবার উঠছে তো আরেকবার নামছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভীষণই চমকে ওঠার মতো ব্যাপার যখন পেছন ফিরে দেখি কেউই নেই এমনকি কোনো শব্দও নেই, বাধ্য হয়ে, আবারো চলতে শুরু করলাম আমি। viagra vs viagra plus
আরেকটু এগোতেই শুনশান নীরব রাস্তায় ধুপধাপ পেছনে কারো দৌড়ে চলে যাওয়ার শব্দ পেলাম, আবার একইভাবে কৌতুহলী হয়ে পেছনে তাকাতেই আবিষ্কার করলাম কোনো কিছুরই অস্তিত্ব নেই সেখানে। খামোখাই বারবার পেছনে ফিরছি। নিজেকে এবার খানিকটা গালমন্দই করলাম আমি।
এরপর আন্দাজমতো বড়জোর দু কি তিন মিটার পথ পেরিয়েছি, মূহর্তেই রীতিমতো ভয়ংকর রকমের শক লাগার মতো একটা ঘটনা ঘটে গেল। আচমকাই পেছন থেকে একটা ভারী কন্ঠের চিৎকারঃ “ও পাশে যাবি না”। সমস্ত শরীরে বিদ্যুৎ ঝলকের ন্যায় কেমন এক অদ্ভুত শিহরন খেলে গেলো। এমন শুনশান নীরব রাস্তায় আচমকা ভারী গলায় এমন আওয়াজ শুনলে ভয় পাওয়াটা খুব স্বাভাবিকই বটে। কিন্তু আমি সচরাচর এতো সহজে ভীত হই না। তারপরেও আবারো খানিকটা ভয়ে ভয়েই পেছনে ফিরলাম, ফিরে দেখি সেই কুকুর টা। আশ্চর্য! স্পষ্ট মানুষের কন্ঠস্বর শুনলাম অথচ কোনো মানুষই নেই! ভুল কিছু শুনলাম না তো। এমন ভয়ানক ঠান্ডায় হ্যালুসিনেশন হওয়াটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তারপরও মনের ভেতরে অদ্ভুত খচখচানি টা থেকেই যাচ্ছে।
এবার কুকুরটা দেখলাম দাড়ানো থেকে বসে পড়েছে, রাস্তার পাশের ছোট মতো মেহগনি গাছটার পাশে। আমার দিকে একদৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে, কুকুরের চোখ জ্বলজ্বল না করলেও এর চোখে কেমন যেন একটা অদ্ভুত আলোর আভা স্পষ্ট টের পাওয়া যায়, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো নয়তো আবার। তবে এবার মনে কিছু টা ভয় ঢুকতে শুরু করেছে। ভাবলাম দৌড় দিবো কিনা, কিন্তু কোথাও শুনেছিলাম, কুকুর দেখে দৌড় দিলে ওরাও চোর ভেবে পেছনে দৌড়াতে শুরু করে দেয়, তাই এই পরিকল্পনা তৎক্ষনাৎ ই বাতিল করতে হলো। আমি আর না দাড়িয়ে আবার চলতে শুরু করলাম, দু চার কদম হেঁটেছি কি, এবার আরো বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। সেই একই রকম কন্ঠে শুনলাম, “ওপাশে যাবি না” .. এবার সাথে খানিকটা গোঙানির শব্দও ছিলো।
এবার আমি সত্যিই ভীষণই ভয় পেয়ে গেলাম। about cialis tablets
একটা ঢোক গিলে আস্তে আস্তে পেছন ফিরে তাকালাম, এবার তৃতীয় ধাক্কা টা খেলাম। পেছনে কেউ নেই, এমনকি সেই কুকুর টিও অদৃশ্য হয়ে গেছে। এই তীব্র শীতে আমার হাত পা থরথর করে কাঁপতে শুরু করলো। মনে পড়লো শ্যামলদের মেসের হীরক ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম এই রাস্তা টা খুব একটা সুবিধের নয়। যত দ্রুত সম্ভব এই স্থান পরিত্যাগ করা উচিৎ। ভয় দমানোর জন্য আমার মাল্টিমিডিয়া ফোনের লাউডস্পীকারে ফুল ভল্যুমে গান ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তখন, কাপা কাপা হাতে হাচড়ে পাচড়ে পকেট থেকে মোবাইল টা বের করলাম।ফোনের স্ক্রিনে ছিটিয়ে থাকা যৎসামান্য কুয়াশা আলতোভাবে প্যান্টে ঘষে মুছে নিলাম।
অতিরিক্ত ভড়কে গেলে কিংবা মসিবতে পড়লে কাজের জিনিস খুঁজে পেতে নাকি বেশ দেরি হয়, সম্ভবত আমার সাথেও তখন তেমনটাই ঘটছে। আমারো মিউজিক ফোল্ডার খুজে পেতে দেরি হচ্ছে। ইদানিং হ্যান্ডসেট টা মাঝে মাঝেই হ্যাং করে, এই শংকাটাও এখন তুঙ্গে। মাঝে মাঝে তুলে আছাড় মারতে ইচ্ছা করে। এখনো খানিকটা আটকাচ্ছে, কিন্তু সৌভাগ্যবশত মিউজিক প্লেয়ারে একটা গান চালু করতে পারলাম, কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত, সেটা একটা সলো ও ধীর লয়ের গান, যা এই পরিস্থিতি কে আরো ঘনীভূত করবে। এবং আমার ভয় দ্বিগুণ হতে তিনগুন বাড়িয়ে দেবে। আমার দরকার হেভী রক টাইপের গান। আমি কাঁপতে কাঁপতে খুঁজছি এবং খুঁজছি। হ্যাঁ! পেয়েছি! শাকিরার কান্ট রিমেম্বার টু ফরগেট ইয়্যু..! চালু করে দিলাম। কেমন ঘড়ঘড় করছে। মোবাইলে চার্জ তেমন একটা নেই, বেশ ওয়ার্নিংও দিচ্ছে, কখন শাট ডাউন দেবে কে জানে!
গান চলতে থাকলেও মনোযোগ কোনোক্রমেই সেদিকে ফেরাতে পারছি না, মনের ভয় টা মোটেই দূর হচ্ছে না। বরং বাড়ছে। গলাটাও কেমন শুকিয়ে আসছে। বারবার মনে পড়ছে সেই অদ্ভুত ভারী কন্ঠস্বর আর সেই কথাটা “ওপাশে যাবি না”। ভয়ে এখনো আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে আছে। ভাবছি, এতো অল্প রাস্তা ফুরোচ্ছে না কেন? সিদ্ধান্ত নিলাম, পেছনে যা কিছু হউক, যতই শব্দ হোক আর একটি বারও ফিরে তাকাবো না। এদিকে ফুল ভল্যুমে গান বেজেঁই চলছে। সেদিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলেও পারা যাচ্ছেনা। এরই মাঝে পেছনে মৃদু কান্নার শব্দও শুনেছি। শরীরের সমস্ত শক্তি একত্রিত করে দ্রুতপদে হেটেই চলেছি আমি। ঐ তো ব্রীজ টা, কুয়াশা ছাপিয়ে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। ওটার ধারে কাছে একবার যেতে পারলেই হয়। ব্রীজের এপাশে মতির চায়ের দোকানটার আলো এখনো জ্বলছে দেখে খানিকটা স্বস্তি পাওয়া গেলো। ওটার কাছাকাছি যেতে পারলেই বাঁচি। আমি হাটা থামালাম না। এগিয়েই চলছি। এদিকে ক্রমাগত বাজছে ভুতুড়ে গান।
চায়ের দোকান টা থেকে মাত্র মিটার কয়েক দূরে আমি, এমন সময় ঘটলো আরেক অদ্ভুত ঘটনা। চারপাশে কেমন মৃদু ভূকম্পনের মতো অনূভুত হল। সম্ভবত ভূমিকম্পই হচ্ছে। আশপাশের ঘোলাটে ল্যাম্পপোস্ট ও গাছগুলোও কেমন দুলছে.. কয়েক সেকেন্ড পরেই একটা বিকট শব্দে আশেপাশের কিছু ফাটালো সম্ভবত, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি ঘটছিলো এবং কি ঘটতে চলেছে। শব্দ শুনেই দেখলাম চায়ের দোকান থেকে ৬/৭ জন লোক কৌতুহলী হয়ে বেরিয়ে এলো। আমিও প্রায় কাছাকাছিই চলে এসেছি। মিনিট দশেক আগেই মিউজিক বন্ধ হওয়া, চার্জবিহীন মোবাইলটাকে পকেটে পুরে দিলাম। এবার আরো খানিকটা উৎসুক ভঙ্গিতে দ্রুত পা চালাতে লাগলাম। একসময় সেখানে পৌছে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও তাদেরকে ঠেলে কৌতুহল নিয়ে আরো খানিকটা সামনে এগিয়ে গেলাম।
এবারে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমার চোখ রীতিমতো ছানাবড়া হয়ে গেলো। একটা ব্রীজ পুরোপুরি ধ্বসে পড়েছে। মতি মিয়ার চায়ের দোকানের কয়েক গজ পাশের ব্রীজটাই এটা। যার এতক্ষনে প্রায় পুরোটাই ধ্বসে পড়েছে। ঘটনা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগলো না, অর্থাৎ যে বিকট শব্দ টা কিছুক্ষণ আগে আমি শুনেছিলাম ওটা এটারই ভেঙে পড়ার শব্দ ছিলো। এ ঘটনা দেখে আমি বিস্ময়ে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই এটার উপর দিয়ে আমার পার হওয়ার কথা ছিলো। আর ৪/৫ মিনিট আগে আসলে হয়তো ব্রীজ পার হতে গিয়ে প্রাণটাই যেতো, ভাবতেই বিস্ময়ে আমি হা হয়ে গেলাম। নিজেকে একটু সামলে আচমকা এবার পেছন ফিরতেই দেখি, কয়েক মিটার দূরে আবার সেই কুকুর টা, ওটার চেহারায় কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম, মনে হলো এক রহস্যময় তৃপ্তির হাসি ছিলো ওখানে! কোনো কারণে আবার সামনে তাকিয়ে পেছনে ফিরতেই দেখি সেটা নেই, পুরোপুরি অদৃশ্য। হাতঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম, রাত দেড়টা। শীতের রাত দেড়টা মানে বিশাল ব্যাপার।
বসে যাওয়া গলায় একজনকে বললাম, পুলিশে বা ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিতে। লোকটা কানে শোনেনা, দ্বিতীয়বার বলায় শুনলো.. লোকটা ফোন দেয়ার মিনিট বিশেক পরেই চোখ কচলাতে কচলাতে ঘুম ঢুলুঢুলু চোখে দুজন পুলিশ আসলো। তাদের ধারণা তেমন কিছু হয়নি, পরে ঘটনা স্বচক্ষে দেখে তারাও খানিকটা বিস্মিত মনে হলো। উপরের অফিসার কে ফোন লাগালো। all possible side effects of prednisone
চায়ের দোকানে থাকা দু একজন লোকের কাছে শুনে জানলাম, একটা ট্রাক ওখানেই দাড় করানো ছিলো। আর ব্রীজ পার হতে যাওয়া এক পথচারীর ভাষ্যমতে, ভূমিকম্পের সময়, একটা ট্রাক আগে হতেই দাড় করানো ছিলো, আর রাতের এক লোকাল যাত্রী বোঝাই মিনিবাস পার হচ্ছিলো, দুজনের মতো পথচারীও ছিলো ব্রীজে, সে পা দিতে যাবে ব্রীজে এমন সময় বাসের ঝাকুনি তে খুলে পড়ে সামনের পাটাতন, কাঁপতে থাকে ব্রীজ। একপর্যায়ে পুরো ব্রীজের দুই তৃতীয়াংশই খসে পরে। বাসে কি পরিমাণ যাত্রী ছিলো জানা গেলো না। “সম্ভবত, লোকাল বাস। রাতের বেলা যাত্রী কমই ছিলো”, বললো লোকটা। half a viagra didnt work
এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে দেখলাম আরো কিছু পুলিশ আসলো। পুলিশ সাব ইন্সপেক্টর কে দেখলাম দ্রুতই আরো কয়েকজায়গায় ফোন দিতে। যতদূর জানাগেল, উদ্ধার কর্মী ও ডুবুরি দলকে খবর পাঠানো হয়েছে। এই তীব্র শীতে যত দ্রুত সম্ভব পানিতে পড়ে থাকা লোকজন উদ্ধার করা জরুরী, তারপরেও এসব কাজে কেমন একটা আলসেমির ভাব চোখে পড়লো, যা হয়তো প্রাণহানীর সংখ্যাটা আরো খানিকটা বাড়িয়েই দেবে। ধীরে ধীরে ব্রীজের দু পাশে উত্সুক লোকের ভীড় জমতে শুরু করেছে। সবার চোখে মুখে কৌতুহল। ইতিমধ্যে দু একটা টিভি চ্যানেলের গাড়িকেও বোধহয় দেখলাম। সাংবাদিককে দেখলাম দ্রুত নেমে ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসছে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে।
আজকে বাড়ি ফেরাটা বোধ হয় আর হবে না, সকাল বেলা অন্য রাস্তায় ঘুরে যেতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম রাতটা মতির দোকানেই পার করে দেব। মতি মিয়াকেও দেখলাম আজ নাচগান ছেড়ে খবর দেখছে। চ্যানেলের স্ক্রিনের তলায় ব্রেকিং নিউজ যাচ্ছে, “শ্যামপুরে ব্রীজ ভেঙে নদীতে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক এখন পর্যন্ত আহত ৪, নিহত ৩।”
চুলোর পাশে খানিকটা বসে নিজের গা টা একটু গরম হতেই একটা চেয়ারে বসে পড়লাম। টেবিলে খানিকটা মাথা ঠেকিয়ে মৃদু তন্দ্রা মতো এসেছিলো বোধহয় .. তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ভেসে উঠলো সেই কুকুর টা, আর এক অজানা ভারী কন্ঠস্বর “ওপাশে যাবি না”। আচমকাই কেমন ধরমড়িয়ে উঠে পড়লাম। ঘড়িতে চোখ পড়তেই বুঝলাম রাত সাড়ে ৩টা। বাহিরে তখন প্রচন্ড হট্টগোল, মনে পড়লো ব্রীজ ধ্বসে গেছে আর আমি মতির চায়ের দোকানে। গা শিউরে উঠলো।
মাথায় সবকিছু কেমন ছন্নছাড়া লাগতে শুরু করলো, ঘুমে টলে টলে পড়ছি। মাথাটাও ঠিকঠাক কাজ করছে না। ঘন্টা কয়েক আগে ঘটে যাওয়া ব্যাপারগুলো কেমন ঘোলাটেভাবে এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সমস্ত ঘটনার একটা সমীকরণ দাড় করানোর চেষ্টা করছি, পারছিনা। রাস্তায় আমার একাকীত্ব, জ্বলজ্বলে চোখ মেলে কালো কুচকুচে কুকুর, পেছনে ধুপধাপ শব্দ, মিহি কান্নাার আওয়াজ, ভারী কন্ঠের নিষেধাজ্ঞার ভঙ্গিতে ওপাশে না যাওয়ার নির্দেশ, এবং পরিশেষে, আমি পৌছনোর পূর্বেই ব্রীজের অাকস্মিক ধ্বসে পড়া। তাহলে কি?? তাহলে কি আড়ালে কেউ না কেউ বা কোনো শক্তি চাইছিলোই আমায় বাঁচাতে, যাতে ব্রীজের পথে পা না বাড়াই। জটগুলো খুলতে গিয়েও কেমন দলা পাকিয়ে যায়, খুলেও কেমন খুলতে চাচ্ছে না। আমি আর জট খোলার চেষ্টা করলাম না। কিছু ধোঁয়া সত্যিই রহস্যময়, ওগুলোকে ওরকমই থাকতে দেওয়া উচিৎ।
এ ঘটনার ৩ মাস পর, একদিন রাতে ঐ কুকুরটিকে আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম, মনে হচ্ছিলো ওটা আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু বলতে পারছে না।
অদ্ভুত সুবিশাল রহস্যময় এই পৃথিবীতে কখনো কখনো আমরা এমন সব ঘটনার সম্মুখীন হই, যার সত্যিকারের রহস্যের জট খোলা কিংবা কারণ ব্যাখ্যা করা আমাদের মতো নিপাট সাধারণ মানুষের পক্ষে সত্যিই অসম্ভব। আমার গোটা জীবনেও এ ঘটনার অদ্ভুত কিছু প্রশ্নের কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা কখনোই দাড় করাতে পারিনি আমি। পৃথিবীর অন্য সব রহস্যের মতো, হয়তোবা এঘটনাটিওও আমার কাছে এক অতি আশ্চর্য ও দীর্ঘ রহস্যই হয়ে থাকবে আজীবন।
******************************************(সমাপ্ত)*************************************