অ্যাঞ্জেলিস মাইকেল

অ্যাঞ্জেলিস মাইকেল

অ্যানিলিস মিশেল, যার জন্ম হয় ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ সালে জার্মানিতে। এই মেয়েটি খুব হাসিখুশি এবং ধার্মিক প্রবৃত্তির ছিলো। খুব সাধারণ জীবনযাপনকারী এই মেয়েটি কখনও ভাবে নি যে তার জীবনের কি ভয়াবহ পরিনতি আসতে চলেছে। ১৯৬৮ সালে তার জীবন পুরো পাল্টে গেলো যখন সে রাতে হঠাৎ তার শরীরে এক কম্পন অনুভব করলো এবং ধীরে ধীরে তার শরীরের উপর সব নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করলো। এই মেয়েটি তার ৩ বোন ও বাবা মা জোসেফ এবং আনা’র সঙ্গে থাকতো। কিন্তু সেদিন সে কাউকেও ডাকতে পারে নি।সে বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় উপনীত হয়। মিসেল সারাক্ষণ তার আশেপাশে বিভিন্ন ভয়ঙ্কর প্রতিধ্বনি শুনতে পেত। কিন্তুু তার এই সমস্যা গুলো সে কারো সাথে বলতে পারছিল না।থেকে থেকেই সে তার শরীরে কম্পন অনুভূত করতো এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতো। যখন মিশেল প্রথম শরীরে কম্পন অনুভব করেছিল আসলে তখন ও শয়তান দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিল। আর এটা প্রায় ওর সাথে হত।

যখন তার মা বাবা তাকে এই অবস্থায় দেখতে পায় তখন তারা ভাবেন যে তার হয়তো আবার মৃগী রোগ শুরু হয়েছে, তাই তারা Wurzburg এ একটা মনোরোগ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তান্ত্রিক বিজ্ঞানী গ্র্যান্ড মল তার চিকিৎসা শুরু করেন। আস্তে আস্তে Anniliese এর চেহারা শয়তানের মতো ভয়ঙ্কর হতে শুরু করে। সে ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকতো। ১৯৭০ সালের দিকে সে পুরোপুরি possessed হয়ে পড়ে। তার কথাগুলো ও শুনে মনে হতো যে তার শরীরে অপশক্তির প্রভাব শুরু হয়েছে, কারণ সে একসঙ্গে ৬ টি গলার আওয়াজ এ কথা বলতো। কারন এটি বলা হয় যে তার শরীরে ৬ টি আত্মার প্রবেশ হয়েছিলো। বলা হয়ে থাকে তার শরীরে স্বয়ং লুসিফার প্রবেশ করেছিল। নিরো, হিটলার, লুসিফার সহ মোট ছয়টি আত্মা তার শরীরে প্রভাব বিস্তার করেছিল। তার আওয়াজ শুনে যে কেউ ভয় পেয়ে যেতো। সে বলতো সে সবসময় একটা আওয়াজ শুনতে পায় যেটা হলো, “সে নরকে আছে”।শয়তান তাকে বলতো এই কথাটা।

১৯৭৩ সালে যখন অবস্থা আরও বিগড়ে গেলো তখন তার মা বাবা পাদ্রীদের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন কিন্তু কেউ তাদের সাহায্য করলেন না। ২০ বছরের Anneliese খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে শুরু করলেন। শেষে ১৯৭৪ সালে Ernst নামে এক পাদ্রী Wurzburg এর বিশপ কে তার সাহায্য করতে বলেন। এই কদিন সে খাবার না খেয়েই ছিলো কারণ তার ভিতরের রাক্ষস সেটা করতে বাধা দিতো, এটা তার নিজের স্বীকারোক্তি।
মেয়েটি একটি পাথরের মেঝে তে শুয়ে থাকতো আর পোকামাকড়,মাকড়শা, পাখি, কয়লা এসব খেতো। আর এমনও হয়েছিলো যে সে নিজে তার মূত্র পান করতো।সে তার দাঁত দিয়ে ঘরের দেওয়াল কামড়াতো, ফলে তার সামনে দিয়ে কয়েকটি দাঁত ভেঙে গিয়েছিল। নখ দিয়ে দেওয়ালে আচড় দিত। সে পুরো পুরি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। পানি ও খেত না। ফলে তার শরীরের ওজন ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। সে ডিহাইড্রেশনে ভুগছিলো।

১৯৭৫ সালে যখন পাদ্রীরা জানতে পারলেন যে সে পুরোপুরি ভাবে আত্মার বশে চলে এসেছে তখন পাদ্রী Arnold Renz এবং Pastor Ernst Alt একসঙ্গে তাকে মুক্ত করার জন্য আরো বেশি চেষ্টা শুরু করেন। পাদ্রীদের কঠোর প্রচেষ্টায় তাকে একটু সুস্থ করা গিয়েছিলো কিন্তু ততদিন সে না খেয়েই ছিলো।

১৯৭৬ সালের ৩০ জুন সে নিউমোনিয়া তে আক্রান্ত হয় এবং দিন দিন তার জ্বর বাড়তেই থাকে। তার মা বাবা কান্নাকাটি শুরু করেন। Anneliese শুধু একটাই ভিক্ষা চাইতো যে তাকে যেমন করেই হোক মুক্তি পেতে হবে। সে তার মাকে একটা কথা বলেছিলো “মা আমার খুব ভয় করছে”। এটাই তার শেষ কথা ছিলো তার মায়ের সাথে। এরপর

১৯৭৬ সালের ১ জুলাই তার করুণ মৃত্যু হয়। ওর মৃত্যুর পর ওর পরিবার সেই বাড়ি ত্যাগ করে। বাড়িটি পরিত্যক্ত এবং পরবর্তীতে সেটা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। যে দুই জন পাদ্রী মিশেলের চিকিৎসা করেছিল তাদের ওর মৃত্যুর জন্য জেল হয়। পরে একজন পাদ্রী দুর্ঘটনাবশত এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।

তার জীবনী নিয়ে Hollywood এ একটা বিখ্যাত সিনেমা যার নাম :: Exorcism of Emely Rose.

এই Emely Rose আর কেউ নন, ইনি হলেন Anneliese Michel.

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত