পিশাচ

পিশাচ

কপালের ঘাম গুলো নাক বেয়ে ঝড়ছে রিমনের। কেউ দেখলে ভাববে সে হাপুস্ হাপুস্ নয়নে কাঁদছে আর তার চোখের পানি নাক বেয়ে নেমে আসছে। সেই কখন থেকে ঘাঁড়টা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্তির ভাবটা আরও স্পষ্ট ফুটেউঠেছে তার চোখেমুখে। লোকাল বাসের ছাদগুলো কেন যে এত নিচু হয়।

চাকরিটা পাওয়ার পর প্রথম দিকে বেশ অসুবিধা হলেও এই ৪-৫মাসে অনেকটা মানিয়ে নিয়েছে রিমন।
পুরো নাম,কাউসার আহমেদ রিমন। পৈতৃক বাড়ি চান্দিনা। বর্তমা ন বাসস্থান স্বামীবাগ,ঢাকা। অফিস কাওরান বাজার। পরিবারে দুটি বোনের একমাএ ছোট ভাই। ব্যাস্ বলতে গেলেএইটুকুই হচ্ছে রিমনের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত।
প্রতিদিন ৯টা -৫টা ডিউটি শেষে এভাবেই বাদুরঝোলা হয়ে ৮ অথবা ১২নম্বর বাসে করে বাসায় ফেরে রিমন। লোকাল বাসে চড়লে নিজেকে অনেকটা গরুর মত মনে হয়। এত ঠেলেঠেলিতে নিজের হাত দিয়ে পকেটথেকে বাসের ভাড়া দেওয়াও অনেক সময় মুশকিল হয়ে পড়ে।

তবে এত কষ্টের মধ্যেও চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা ধরনের ঘটনাগুলো দেখতে দেখতে সময় কেটে যায় তার । যেমন এই মুহূর্তে সে দেখতে পাচ্ছে কলেজে পড়ুয়া ২-৩জন ছাএ,যারা খোশগল্পের পাশাপাশি মাঝে মাঝে আড়চোখে লেডিস সিটের দিকে তাকাচ্ছে। বামপাশ ে থানিকটাদূরে ভীরের মধ্যে দুটো বিচ্ছু মার্কা স্কুল ছাএ একটা অপকর্ম করছে,তারা চক দিয়ে এক লোকের প্যান্টের মানিব্যাগ রাখা পকেটটার উপর একটা হার্ট আঁকছে। সেই হার্টটা আবার তীর চিহ্ন দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় করা।

হাসি পেল রিমনের,ওদের দিকে অনেকক্ষন যাবত তাকিয়ে রইল সে। হঠাত্‍ সেই লেজ ছাড়া বাঁদর দুটোর একটির নজর পড়ল তার দিকে,একজন অন্যজনকে সাবধান করল;চিত্রাংকন কর্মসুচী স্থগিত করে দু’জনেই ভীরের মাঝে হারিয়ে গেল।

আরও একটি অসস্তিকর ব্যাপার রিমনের নজরে পড়েছে। ওর সামনের সিটে জানালার পাশে বসা লোকটি সেই কখন থেকে ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছে।

ছিপছিপে গড়নের লোকটি,গায়ের রং কালো,চুলগুলো বেঁটে করে ছাঁটা গ্রামে অনেকেই এটাকে কদম ছাঁট বলে। চোখগুলো একটু লালচে আর সারামুখে থোঁচা খোঁচা দাড়ি। পরনের পোশাকও অতি সাধারণ।

হ্যাঁ,এরপর বলেন হাসেম সাহেব।
আমি আর কি কমু আপনেই বলেন প্রথম এই বদগুলিরে কেমনে দেখলেন?
ছোট একটা কাশি দিয়ে বলতে শুরু করল রিমন,

ভালই কাটছিল আমার দিনকাল। নতুন নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি। বাসে চড়তে পারতাম না তাই সি.এন.জি তে অফিসে যাওয়া আসা করতাম। একদিন বাসায় ফেরার সময় আরামবাগ মোড়ে জ্যামে আমার সিএনজি টা আটকে ছিল।

হঠাত্‍ আমার নাকে একটা উটকো পচা গন্ধ এসে ধাক্কা খেল। আসেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কোন ডাস্টবিনও নেই। ধীরে ধীরে গন্ধটা আরও তীব্র হয়ে উঠছিল। আমি পাগলের মত আশেপাশে ওই গন্ধের উত্‍স খুঁজচ্ছিলাম। ঠিক তখনি আমার সিএনজির দু’দিক থেকে দু’জন বীভত্‍স চেহারার লোক উঠে বসল।

কেমন কুতকুতে চেহারা,রক্তশূন্ যচামড়া ফ্যাকাসে হয়ে আছে; এতটাই ফ্যাকাসে যে ভেতরে শিরাগুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। চোখে কোন সাদা অংশ নেই পুরোটাই কালো,ভ্রু তো ছিলই না। হাতের নখগুলো কালো কালো এবং বেশ বড়।

ওরা দু’জন বেশ শক্ত করে আমার হাতদুটো চেপে ধরল। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ওরা খিক্ খিক্ করে হেসে উঠল। আর হাসির সাথে সাথেই বেড়িয়ে এল ওদের একদম হলদেটে সূঁচালো ছোট ছোট দাঁতগুলি।

ঘটনাটা বলতে গিয়েও একবারে ঘেমে যাচ্ছে রিমন। এর মধ্যেই হোটেলর বয় দু কাপ চা দিয়ে গেছে। চা টা খেতে থেতে আবার বলতে শুরু করল সে।

ওই জীবগুলো আমার দিকে তাকিয়ে বিশ্রি ভাবে হাসছিল। আর তাদের মুথ থেকে দূর্গন্ধ বেরিয়ে আসছিল। আমি আর সহ্য করতে পারি নি,চিত্‍কার করে সেন্সলেস্ হয়ে গেলাম।

সেন্স ফেরার পরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বেডে। পরে ডাক্তারের মুখে শুনলাম,আমি নাকি চিত্‍কার করে সি.এন.জি-এর ভেতর মাথা ঘুড়ে পড়ে গিয়েছিলাম আর আমার মুখ থেকে গোঁ -গোঁ আওয়াজ বের হচ্ছিল। তারপর ড্রাইভার আমাকে স্হানীয় ওই হাসপাতালটিতে ভর্তি করিয়েছিল।

কথাগুলো একটানা বলে দম নেওয়ার জন্য একটু থামল রিমন।

তারপর কি হল রিমন সাহেব?আর দেখেছিলেন ওদের?

হ্যাঁ,এরপর থেকে প্রায়ই দেথি। ওইদিনের পর থেকে আমি আর কখনো একা সিএনজিতে উঠি না। শত কষ্ট হলেও বাসেই যাতায়াত করি।

এরপর আরেকদিন বন্ধুবান্ধবসহ বেইলীরোডের ওই দিকটায় আড্ডা মারছি। হঠাত্‍ খেয়াল করলাম বড় ডাষ্টবিনটার সামনে ওইগুলো ৪-৫টামিলে ময়লা খাচ্ছে। ওদের মধ্য থেতে একটা আমার দিকে তাকিয়ে নোংরা মাখা লাল লকলকে জিহবাটা বের করে ভেংচি কাটল। দেখেই গা টা গুলিয়ে উঠল। মাথা ব্যাথার অজুহাত দিয়ে কোন মতে পালিয়ে গেলাম।

এরা আসলে কি?আর আমিই কেন এসব দেখি আপনি কি কিছু বলতে পারবেন হাসেম সাহেব?
মৃদু হাসলেন হাসেম মিয়া।

ওরাই হইল পিশাচ। এরা যওসব ময়লা-ছয়লা খায়। আর নোংরামি কইরা বেড়ায়। বদের হাড্ডি এক একটা। মানুষ একটু ভালা থাকুক তা এই হালারা চায় না।

ওরা হগলের লগেই দেখা দিতে চায়,কিন্তু পারে না।

আপনে,আমি আর আমাগো মত বিশেষ কয়েকজনই ওগোরে দেখতে পারি। ক্যান যে পারি এর কোন বিশেষ ব্যাখা আমার কাছে নাই। মনেহয় উপরওয়ালার ইচ্ছা। উনার ইচ্ছা ছাড়া তো গাছেরপাতাও নড়ে না।

আপনি কবে থেকে ওদের দেখেন?আপনারভয় লাগে না?

দেখি তো অনেক আগ থেইক্কা,অত দিনক্ষন তো আর লেইখা রাখি নাই।

একদিন দেখলাম,এক ২৫-২৬বত্‍সরের মাইয়া খিঁলগাও এর ওই দিকে রাস্তা পার হইতাছিল। ভালা কথা,হঠাত্‍ বলা নাই;কওয়া নাই কইথেক্কা একটা পিশাচ আইয়া মাইয়াডারে একটা ল্যাং মারল। মাইয়াডা উপুর হইয়া পইরা এক্কেরে গাড়ির তলে। আহ্হারে. . .!

আমার তো রাগে শরীলডা বিষাইতাছিল। ও মা চাইয়া দেখি পিশাচটা খল-খলাইয়া হাসে। আবার কয়েকটা জুটছেও ওইডার লগে।

আরেক দিনের ঘটনা আপনেরে কই রিমন সাব।

আমি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের রাস্তাটা দিয়া যাইতাছিলাম। দেখল াম এক মহিলার কোলে তার ছোট্ট

পোলা,পোলাডার হাতে একটা চকবার আইসক্রিম। কি খুশি মনে পোলাডা আইসক্রিমডা খাইতাছিল। হঠাত্‍ ২-৩ডা পিশাচ আইল আর পোলাডার হাত থেইক্কা আইসক্রিমডা ফালাইয়া দিল। এরপর ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ কইরা হাসতে থাকল। পোলার মায়তো ভাবছে পোলায় এই কারবার করছে।

দিল পোলারে কইস্সা এক থাবড়া। পোলা আরও জোরে কান্দে আর ওই বজ্জাত পিশাচগুলি আরও জোরে হাসে।
এই রকম আরও কত আকাম যে করে ওই গুলা। কত ভাবে যে ভয় দেখাইয়া মজা পায় তা উপরওয়ালাই জানেন। কিছু তোকইতেও পারি না কেউ বিশ্বাস করব না,মাইনষে ভাববো পাগল। তয় আপনের কোন ভয় নাই। পাক পবিএ থাকলে এইগুলি কাছে আসে না। ভয় পাইবেন না,ভয় পাইলেই মরছেন।

আজকে আমার পিছনে ওরা হঠাত্‍ তারা করল কেন?ভয় মেশান কন্ঠে বললো রিমন।
মনে কইরা দেখেন তো আজকে আপনি পাকপবিএতা নষ্ট হয় এমন কোনো কাম করছেন কিনা?

হ্যাঁ ….না,মানে অফিস থেকে বেড়ুবার সময় টয়লেটে গিয়েছিলাম ছোট কাজ সারার জন্য। কিন্তু তাড়াহুড়া করে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম। ইয়ে মানে পানি…..!

থাক আর বলতে হইবো না। আমি বুঝতে পারছি। সবসময় পাক থাকার চেষ্টা করবেন। যাক্ অনেক কথা হইলো। আজ তবে উঠি। এই নেন আমার বাসার ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বার,যোগাযোগ রাইখেন চলি।
একগাল হেসে বিদায় নিল লোকটা।

রিমন ঠিক করল একদিন সময় করে লোকটার বাসায় যাবেই। আরও অনেক কিছু জানার আছে ওর। বড় ভয়ংকর জিনিস এই পিশাচ।

রিমন আগে ভাবত সে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে ধৈর্যশীল মানুষগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু তার এই ধারনাটিকে মিথ্যে প্রমানিত করলো এক রিকসাওয়ালা। স্ব া মীবাগ থেকে হাসেম সাহেবের বাসায় আসা পর্যন্ত মোট তিন বার তার রিকসার চেইন পরে গিয়েছে এবং একবার রিকসাওয়ালা রাস্তার পাশে ইয়ে করবার জন্য বিরতি নিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে হাসেম সাহেবের বাসা পর্যন্ত না গিয়ে গলির মুখে নেমে পড়ল রিমন।

নেমে কিছুদূর এগুতেই এক মধ্যবয়সী লোক পান চিবুতে চিবুতেএগিয়ে এলেন।

আপনে কে ভাই ,আগে তো কথনো দেখি নাই এখানে?কার খোঁজে আইছেন। এই কথা বলেই লোকটি ফচ্ করে পানের পিক ফেলল।

হাসেম সাহেবের বাসাটা চিনিয়ে দেওয়া কথা বলতেই এক হাজার ধরনে আজাইরা প্রশ্নের পর অবশেষে বাসাটা দেখিয়ে দিয়ে বিদায় নিল সেই পানবিলাসী লোকটি। সব ধরনের পান খাওয়া লোকই মনে হয় আজাইরা প্যাঁচাল পারে। যেমন তারবাড়ির মালিক। আর সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে তারা সবসময় এদিক সেদিক পানের পিক ছুড়ে মারতেই মনে হয় ভালবাসে।

যাক্ অবশেষে বাসাটাতো খুঁজে পাওয়া গেল।
সেদিন হাসেম সাহেবের সাথে অনেকক্ষন কথা হল।

এর থেকে রিমন যা যা জানতে পারল তার সার সংক্ষেপ হল,পিশাচ খুবই বদ কিসিমের হয়। যারা তাদের ভয় পায় তাদের তারা আরও বেশি করে ভয় দেখায়। আর বিশেষ করে যারা তাদের দেখতে পায় তাদেরকে কিভাবে কোন রূপে বিপদে ফেলা যাবে এই চিন্তাতেই তাদের দিন কাটে। শত মানুষের ভিড়ে লুকিয়ে থাকে এই পিশাচ কখন কার ক্ষতি করবে এই ভাবনায়।

অতিথি আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখলেন না হাসেম সাহেব। শুধু চা নয়,নিজ হাতে হাসের মাংস রান্না করে খাইয়ে তবেই ছাড়লেন রিমনকে।

এই সপ্তাহটা বেশ ভালই কাটছে রিমনের। ও যেই কোম্পানিতে চাকরি করে তারা একটা নতুন টেন্ডার পেয়েছে। আজকে রিমনের অফ ডে। কি যেন একটা সরকারি ছুটি আজ।

এদিকে বিকেল থেকেই টিপ টিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। এই ধরনের আবহাওয়া বেশ ভাল লাগে ওর।

মনের ভেতর অন্য এক ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি হয় যেন। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায়পাতলা কম্বলটা পা পর্যন্ত টেনে সমরেশ মজুমদারে কালবেলা পড়ছে রিমন। ঘরের কোনায় রাখা প্লেয়ারটাতে সফট ভলিওমে চলছে রবি ঠাকুরের

গান-
“নীল নভ ঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই নাহিরে…..
ওরে তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে…..। ”

ঠিক এমন সময়ে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল এল তার ফোনে।

একটু বিরক্ত হলো রিমন। ঘড়ির দিকেতাকিয়ে দেখল ৯টা বাজে। এত রাতে আবার কে কল করল তাও আবার প্রাইভেট নাম্বার থেকে।

হঠাত্‍ রিমনের মনে হল বাড়ি থেকে নয়তো?তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করল সে।
প্রথমে ওপাশ থেকে কিছুক্ষন খ্যাঁসখ্যাঁসে আওয়াজ ভেসে এল তারপর সব নিরব।
হ্যালো….,রিমন আমি তোমার অফিসেরবস্ বলছি। এইসময়ে তোমাকে অহেতুক ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত। তোমাকে এখনি একটু আমার বাসায় আসতে হবে, জরুরি কথা আছে।
কিন্তু স্যার এত রাতে?

রাত কোথায়;সবে তো ৯টা বাজে। জলদি চলে এস।

কুট করে একটা শব্দ হয়ে লাইনটা কেটে গেল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও রিমনকে বেড়ুতে হল। বসের তলব বলে কথা।

ঢাকার রিকসাওয়ালাগুলো কি বৃষ্টি দেখে সব পালিয়ে গেল নাকি?একটা রিকসাও নেই।

ওইতো বড় ডাস্টবিনটার কাছে একটা রিকসা দেখা যাচ্ছে। রিমন ডাক দেওয়ার আগেই রিকসা নিয়ে এগিয়ে এল রিকসাওয়ালা। যেন ওর অপেক্ষাতেই ছিল।

ওয়ারি যাবে?

হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল রিকসাওয়ালা। রিমন আর কিছু না ভেবেই উঠে পড়ল রিকসায়। তাড়াতাড়ি বসের বাসায় যাওয়া দরকার।

সেই কথন থেকে মনের ভেতরে খচ্ খচ্করছে রিমনের। বস মোবাইল থেকে ফোনকরলেন না কেন?
টিএনটি থেকে ফোন করলে কি প্রাইভেট নাম্বার শো করে?
রিকসাওয়ালার মুখটা রেইনকোটের হুডের আড়ালে দেখা গেল না কেন?

রিকসা ইতিমধ্যে খ্রিস্টান কবরস্থানে পাশে চলে এসেছে। ল্যাম্বপো ষ্টের আলোতে রিমন হঠাত্‍ লক্ষ্য করল যে রিকসাওয়ালার পা প্যাডেলের সাথে লাগছেই না কিন্তু রিকসা চলছে। শীতল একটা স্রোত রিমনে শিকদারা বেয়ে নেমে গেল।

ঠিক সেই মুহূর্তে রিকসাওয়ালা ব্রেক কষল।
ধীরে ধীরে রিমনের দিকে ঘুড়ে তাকাল।
সেই সূঁচাল হলদেটে দাঁত,কোঠরের কালো চোখ দুটো যেন জ্বলজ্বল করছে।

ভয়ে জড়সড় হয়ে গেছে রিমন,নড়বার ক্ষমতাও নেই যেন। ওর এই অবস্থা দেখে ফ্যাঁচ করে হাসি দিল পিশাচটা। এর মধ্যেই আরও ৫-৬টা এসে হাজির হয়ে পুরো রিকসাটা ঘিরে ফেলেছে। সাদা চামড়ার হাড় জিরজিরে হাতগুলো খুব ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে।

সব কিছু অন্ধকার হয়ে আসছে। সেন্সহারাব ার আগ মুহূর্তেকোন মতে একবার উপরওয়ালার নাম নিল রিমন।

সকাল ১০টা। নিজেকে বাসার বিছানায় আবিষ্কার করল রিমন। তার বড় মামাকেও বিছানা পাশের চেয়ারেবসা অবস্থায় দেখতে পেল। পরে বাড়িওয়ালা ও মামার মুখ থেকে শুনল তাকে নাকি বাসার গেটের সামনে সেন্সলেস অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে।

সবাই জানতে চাইলেও নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা কারো সাথে শেয়ার করল না রিমন। কেউ তো আর বিশ্বাস করবে না। চেপে গেল। সবাইকে মিথ্যা কথা বললো যে তার প্রসারটা মনে হয় বেড়ে গিয়েছিল তাই হয়তো এমন. . . .।
তবে এখন সে অনেকটা সুস্থ।
আমি তাহলে যাই রে রিমন। তোর মাকে কল করে দিয়েছি। সে আসছে। একদম টেনশন করবি না আর প্রয়োজন হলে কলদিস। দরজাটা লাগিয়ে দে।

রিমন দরজা লাগতে গেল। সে এখন একটু অন্যমনস্ক,কারন এই মূহুর্তে একজনকে ভিষন মিস করছে। যাকে সব কিছু বলা দরকার। তিনি আর কেউ নন,হাসেম সাহেব। মাকেও বলবে সব কথা।

রিমনের ফোন বাজছে। দরজাটা লাগাতে লাগাতে পকেট থেকে বের করে ফোনটা রিসিভ করল সে। কানে দিতেই অবাক হল ,অপ্রতাশিতভাবে হাসেম সাহেব ফোন করেছে। তবে হাসেম সাহেবের কন্ঠটা একটু খুশিখুশি লাগল।
রিমন সাহেব আজ সন্ধ্যার পর আমার বাসায় একটু আসবেন দয়া করে ওদের ব্যাপারে কথা আছে।
লাইনটা কেটে গেল। রিমন ফোনটা টেবিলের উপর রেখে গোসল করতে গেল।

কিন্তু রিমন অন্যমনস্ক থাকায় একটা ব্যাপার খেয়াল করে নি। হাসেম সাহেব ব্যবহার করেন মোবাইল কিন্তু কলটা এসেছে একটা প্রাইভেট নাম্বার থেকে. . .

……………………………………………………………(সমাপ্ত)…………………………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত