কালো বিড়াল নিয়ে পশ্চিমা জগতের অবাস্তব কু-সুংস্কারের গল্প প্রায় সবারই জানা আছে। কিন্তু ব্ল্যাক ডগ? শুনে চমকে যাবেন না। জানা মতে ষোড়শ শতক থেকে চলে আসছে কালো কুকুর সংক্রান্ত এসব ঘটনা।তবে এই রহস্য অন্য কালো কুকুর নিয়ে নয়। একটি বিশেষ কালো রঙের কুকুরকে ঘরে আবর্তিত রহস্য।
সম্ভবত লন্ডনে সর্বপ্রথম এই কুকুরটিকে একজন পোপ চিঠি লিখতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করেন। এক বিশালাকার কারো কুকুর, জ্বলন্ত চোখ নিয়ে তার ঘরে উপস্থিত। তিনি আতঙ্কিত হয়ে ঘরে থাকা অন্য লোকদের ডাকেন। কিন্তু ঘরের লোকেরা ঢুকে দেখে কিছুই কোথাও নেই। এর অল্পদিনের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও কিছুদিন পর মারা যান। মৃত্যুশয্যায় তিনি বারবার ‘কালো কুকুরটাকে বের করে দাও’ বলে আর্তনাদ করে উঠতেন। এর পরের ঘটনা আরো প্রায় দুই দশক পরে, সাফাকের বাঙ্গে শহরের এক বৃষ্টিমুখর রাত। হঠাৎ করেই ঝড় শুরু হয়। তখন বাজে ৯-১০টা। ঝড়ের বেগে সব বাতি নিভে অন্ধকার নেমে আসে। শুধু মাঝেমধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানিতে চোখে পড়তে থাকে প্রার্থনা কক্ষের অভ্যন্তরে। এমন সময় বিশালাকৃতির এক কালো কুকুর সেখানে দৃশ্যমান হয়। প্রার্থনাকারী দুই জন ব্যক্তির মাঝখান দিয়ে চলে যায় কুকুরটি। সঙ্গে সঙ্গে দুই ব্যক্তিরই মৃত্যু হয়। শেষে দেখা যায় দুই ব্যক্তিরই ঘাড় মটকে গিয়েছে। কুকুরটি এক ব্যক্তিকে কামড়ও দেয়। কিন্তু লোকটি বেঁচে। একই দিনে কুকুরটিকে অন্য একটি গির্জাতেও দেখা যায়। সেখানে দুই ব্যক্তি ও একটি বালকের মৃত্যু হয়। একজনের হাত পড়ে যায়। সে দাবি করে রহস্যময় কালো কুকুরটির লালা তার হাতে লাগার কারণে এটি হয়।
এর প্রায় তিন শতক পরে, এক দুধ ব্যবসায়ী তার গোচারণ ক্ষেত্রের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান অনেক বড় একটি কালো কুকুর তার পথ রোধ করে দাঁড়ানো। তার জ্বলন্ত চোখ দেখে তিনি ভয় পান এবং অন্য রাস্তা ধরেন। পরে রাত্রিবেলায় তিনি আবার কুকুরটিকে দেখতে পান। এরপর বেশ কয়েকবার তিনি এটি দেখতে পেয়েছিলেন। একটা সময় তার বাকরোধ হয়ে যায় এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে মারা যান।
ব্রিটেনের একটি দ্বীপের বাসিন্দারা একটি দুর্গে কালো কুকুর থাকার অস্তিত্ব মিলে এমন একটি জায়গার সন্ধান দিয়েছিলেন। সেখানকার অধিবাসী দাবি করেন যে, এই কুকুরটি কালো রঙের। বিশালায়, চোখ লাল, কান খাড়া, জিহ্বা দিয়ে অবিরত লালা পড়ে এবং এই লালা গায়ে লাগলে ঝলসে যায় সেই স্থান। এটি নাকি আগুনের উপরেও ঘুমাতে পারে। কুকুরটিকে ধরতে গিয়ে বেশ কিছু সাহসী মানুষ প্রাণ হারায়। উনিশ শতকে এসে বারবার উত্থিত হয়েছে এই কালো কুকুর প্রসঙ্গ। যা এখনো ঘোর রহস্যময়…….
ব্ল্যাক ম্যাজিকের জন্য সদ্য প্রয়াত শিশুর মাথার খুলি প্রয়োজন ছিল। তাই আমি গোরস্থানে এলাম মাথার খুলির জন্য। কিন্তু আমার মাটি খোঁড়া প্রায় শেষের দিকে তখন হাত দশেক দূরে হঠাৎ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে একটি কুপি দেখতে পাই। আমি হাতের কোদাল ফেলে দিয়ে কোমড়ে বাঁধা গামছা থেকে বোতল বের করে কয়েক ঢোক পানি পান করলাম। উঠে এসে কুপিটি হাতে নিতেই আমি চলে গেলাম অতীতে, প্রায় ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি অবস্থানে। তার পরেই জানতে পারলাম রহস্যময় এই বিশালাকার ব্ল্যাক ডগ সম্পর্কে। ঘটনাটি সমাপ্ত হবার পরেই আমার হাত থেকে কুপিটি উধাও হয়ে যায়। এবং আমার হাতে অবশিষ্ট একটি চিরকুট দেখতে পেলাম। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। আমি কাঁপা হাতে চিরকুটের ভাঁজ খুললাম। দেখতে পেলাম ওখানে কালো রঙের কালিতে লেখা, যে কবরটি খুঁড়ছি সেখানে শিশুর মাথার খুলির ডান পাশে একটি কালো রঙের লাঠি পাওয়া যাবে। সেটি সাথে করে নিতে হবে। আমি চিরকুট রেখে আবার কবর খুঁড়তে নেমে গেলাম। শিশুর মাথার খুলি নিলাম, ডান পাশে তাকাতেই অনেক পুরোনো একটি লাঠি দেখতে পেলাম। অতঃপর সেটি নিয়ে আমি সেই স্থান ত্যাগ করলাম। আমার ব্ল্যাক ম্যাজিকের কাজ শেষ করে আমি ব্ল্যাক ডগ রহস্য উদ্ধার করার কাজে হাত দিলাম।
ও হ্যাঁ, আমি ড্যানিয়েল তন্ময়। সারাদিন এই দু পয়সার কাজ করে বেড়াই আমার শখের বশে। এই কাজের জন্যে বহুদিন পর আমার গুরুকে ডাকতে হবে। অনেক কষ্টের একটি যজ্ঞ। আমি তেইশটি মৃত মানুষের বাঁ পাঁজরের হাঁড় আর পিরিয়ড চলছে এমন তিন মহিলার মাথার চুল এবং কাপড়ের আঁচল সংগ্রহ করে রাত শেষ হবার দুই প্রহর আগে গুরুকে আমন্ত্রণ জানানোর যজ্ঞ আহ্বান করলাম। সাথে ছিল ঐ কালো লাঠি। গুরু এসেই আমার কৃতকাজের সুনাম করলেন এবং কী জন্যে ডেকেছি তা জানতে চাইলেন। আমি সেদিনের পুরো ঘটনা গুরুকে জানালাম। গুরু গম্ভীর ভাবে বেশ কিছুক্ষণ ভেবে আমাকে তিন বছর আগের জীবনে ফিরে যেতে বললেন, ঠিক বললেন বললে ভুল হবে। তিনি আমাকে তিন বছর আগের জীবনে দিয়ে আসলেন এবং রহস্যময় ব্ল্যাক ডগের রহস্য বের করে বর্তমান জীবনে ফিরে আসতে হবে।
আমি আবার হয়ে গেলাম সাইকো, রোজ তেইশ মি.লি. করে রক্ত আমার পান করা লাগে। তার উপর প্রতি তেইশ দিন পর পর সমাজে কঠোর ভাবে ঘৃণিত এক ব্যক্তিকে খুন করে তার মাথার খুলি দিয়ে যজ্ঞ করতে হয়। সময় এভাবেই যাচ্ছিল। তেইশ দিনের মাথায় এবার এমন একজনকে খুন করলাম যে কিনা গত এক সপ্তাহ ধরে টানা ব্ল্যাক ডগ দেখে আসছে। ঘটনাটি আমি জানলাম তাকে খুন করার পর। আমি ঐ ব্যক্তির খুলি দিয়ে যজ্ঞ শেষ করে মাথাকাটা দেহটি আর ফেলে দিইনি। রেখে দিয়েছিলাম ব্ল্যাক ডগ রহস্য উদ্ধারের জন্যে। তিন দিন ঐ লাশের সাথে থাকার পর আমার কাছে থাকা চিরকুটের আগের লেখা মুছে গিয়ে আবার নতুন করে কালো রঙের লেখা এলো। ওখানে লেখা ছিল, লাঠি যেদিক যেতে ইশারা করবে সেদিকে যেতে। লাঠির ইশারায় যেতে যেতে আমি একটি শ্মশানে এসে পৌঁছলাম। ঘড়ি ছিল না, তবে চাঁদের অবস্থান দেখে বুঝলাম রাতের শেষভাগ। এখানে এসে আবার খেয়াল করলাম চিরকুটের লেখা মুছে যাচ্ছে এবং নতুন লেখা উঠছে আপনা-আপনি। এবার লেখা উঠলো এই শ্মশানে গত কিছুদিন আগে যে বিধবা মহিলার শবদাহ হয়েছে সেখান থেকে ছাই নিয়ে , সেগুলো উত্তর দিকের পুকুরটায় কোমড় সমান পানিতে নেমে ফেললে পুকুর থেকে একটি পাখি উঠে আসবে। তারপরে পাখির দেখানো জায়গায় যেতে হবে।
আমি পাখির দেখানো পথে যেতে লাগলাম। পৌঁছলাম এক প্রাচীন গুহায়। অদৃশ্য একটি শক্তি বললো, গুহায় রাক্ষসের বন্ধি তেইশ জন মহিলা আছে তাদের সূর্যাস্তের আগে উদ্ধার করে সবার গোসলের এক বোতল করে পানি নিয়ে পাখিটিকে খাওয়াতে। আমি নির্দেশ মতো সব করতে লাগলাম। এবার আমাকে আবার ব্ল্যাক ম্যাজিকের সাহায্য নিতে হয়েছিল। মহিলাদের উদ্ধার করার মাঝখানে রাক্ষসটি এসে গিয়েছিলো। ওকে বশ করতেই ব্ল্যাক ম্যাজিক। আমি মহিলাদের উদ্ধার করে সূর্যাস্তের আগেই গোসল করতে বললাম এবং কথামতো সবাই আমাকে এক বোতল করে গোসলের পানি দিলো। ঐ পানি পাখিটিকে খাওয়াতেই সেটি একজন বৃদ্ধের আকার ধারণ করলেন। বৃদ্ধ আমাকে সাথে করে অজানা এক জায়গায় নিয়ে গেলেন। মনে হয় অন্য একটি জগৎ!
এখানে আসতেই বৃদ্ধটি বললো, আমার সাথে থাকা কালো লাঠি দিয়ে আঘাত করে তেইশটি একদম কুচ কালো কুকুর মারতে হবে সাত দিনের মাঝে। এবং কুকুর গুলো মারতে হবে দিনের একদম মধ্যভাগে অথবা রাতের মধ্যভাগে। এরপরেই কোন একদিন আমি রহস্যময় ব্ল্যাক ডগের সন্ধান পাবো যেকোন ভাবেই।
এই তেইশটি কুকুর লাঠি দিয়ে মারতে গিয়ে আমাকে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। শেষ কুকুরটি মারার ঠিক তিনদিন পরে রাতের শেষ প্রহরে আমি রাস্তায় হাঁটছি। একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার। হঠাৎ এই আঁধারের মাঝে কয়েক মিটার সামনেই দুটি বাতি জ্বলজ্বল জ্বলছে। আমি থমকে দাঁড়ালাম। খুব ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম বহুল প্রতীক্ষিত রহস্যময় ব্ল্যাক ডগ আমার সামনে হাজির হয়েছে। কিন্তু তার পেছনে রয়েছে সাদা আলখাল্লা পড়া বিরাটাকার এক লোক, চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাইনি। তিনি আমাকে হুঁশিয়ার করলেন, এর পরিণাম ভালোও হবে না (পৃথিবীতে ব্ল্যাক ডগ কে আসতে বাধ্য করা)। বিশালাকার কুকুরটি আমার বাঁ পাশ দিয়ে গ্রামের ভিতরের দিকে চলে গেলো। পরেরদিন সকালে ঐ গ্রামে বেশকিছু মানুষ মারা যাবার এবং হাত পা হারানোর খবর পেয়েছিলাম। হতাহতের ঘটনা মোট তেইশ জনের। ব্যাপারটি শুনে আমি বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুললো, কোন ভাবে আবার পৃথিবীর ক্ষতি হবে না তো…!
এর প্রায় পনেরো দিন পর আবার ব্ল্যাক ডগের দেখা পেলাম। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পরে কুকুরটি আমার দিকে ধেয়ে আসছে ভয়ে আমি পিছু হটতে লাগলাম। বিশালাকার কুকুরটি চোখে মুখে হিংস্রতার ভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যতই আমার দিকে এগুচ্ছে আরো বড় থেকে বড় হচ্ছে ধীরেধীরে। হঠাৎ চিরকুটের কথা মনে পড়তেই হাতে পেলাম, এবং আগের লেখা গুলো মুছে চিরকুটের রঙ বদলাতে লাগলো। এবার কালো চিরকুটে সাদা কালিতে লেখা উঠলো, আমার সাথে থাকা কালো লাঠি দিয়ে ডান হাত দ্বারা কুকুরটির ঘাড়ে তিনটি আঘাত করতে। আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গেই কুকুরের সাথে থাকা লোকটি একটি আগুনের বলয় দ্বারা আবৃত হয়ে উল্কাপিণ্ড এর মতো দ্রুতগতিতে আকাশের দিকে উৎক্ষেপিত হলো। এবং বিশালাকার কুকুরটি ধীরেধীরে স্বাভাবিক আকার ধারণ করলো আর গ্রামের ভিতরের দিকে প্রবেশ করলো। পরদিন সকালে আর কোন হতাহতের খবর পাইনি।
অতঃপর ব্ল্যাক ডগ রহস্য উদ্ধার করে আমি বর্তমানে ফেরত এলাম।