পেশা হিসাবে যদি দেখা হয় তবে সুপারন্যাচারাল এক্সপেরিয়েন্সের দিক দিয়ে ডাক্তাররা বেশ এগিয়ে আছেন। চিকিৎসাশাস্ত্র সবসময়ই বিজ্ঞানের একটি অতি শক্তিশালী শাখা। তবে এই অতি শক্ত শাখার ধারক ও বাহকেরা মাঝে মাঝে এমন কিছু দেখে ফেলেন যা বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
১৬২২ সাল, ইংল্যান্ড। তখনকার দিনে ডাক্তারী পড়ার কোন কলেজ ছিলনা। ডাক্তারী পড়ার নিয়ম ছিল কোন ডাক্তারের কাছে থাকতে হবে এবং তাঁর কাজ দেখে তাঁর কাছ থেকে পাঠ নিতে হবে। এই সময়ে গ্লস্টাশায়ারের ডা. প্যাট্রিকের কাছে পাঠ নিচ্ছিল এরিক নামে একজন ছাত্র। ডাক্তার হিসাবে খুবই ভালো ছিলেন প্যাট্রিক তবে তাঁর কিছু আচরণ রহস্যময় ছিল! তাঁর সবচেয়ে অদ্ভুত কাজটা ছিল রাত ১০ টার পর নিজের রোগী দেখার চেম্বারে একা দরজা লাগিয়ে তিনি বসে থাকতেন এবং সেখানেই রাত কাটাতেন। কাউকে তিনি সেখানে অ্যালাউ করতেন না। তবে যারাই ঘরের দরজার পাশ দিয়ে যেতেন তারাই শুনতে পেতেন যে ডা. প্যাট্রিক কাদের সাথে যেন কথা বলতেন, আর ঘরের ভিতর একাধিক মানুষের গলা পাওয়া যেত। এরিক অনেক বুদ্ধি করে সেই ঘরের দরজাতে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ
করে একটা ফুটো বানিয়ে ফেলল, ফুটোটা বেশী বড় ছিলোনা ফলে সেটা ডাক্তারের চোখে পড়ল না কিন্তু সেটা দিয়ে ভেতরের দৃশ্য বেশ আরামেই দেখা যেত। তো একদিন রাতে এরিক চোখ রাখলো সেই দরজাতে এবং কিছুক্ষণ পরেই সে অজ্ঞান হয়ে গেল! সকালে ঘুম ভেঙ্গে সে দেখতে পেলো ডা. প্যাট্রিক তাঁর সেবা করছেন আর ডাক্তারের বউ বাচ্চারা তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই হটলে ডাক্তার তাকে জানান ওই রাতে সে যা দেখেছে সে যেন সেটা কাউকে না বলে। এরিক ডাক্তার প্যাট্রিকের কাছেই ডাক্তারির পাঠ শেষ করেছিল এবং ডাক্তার মারা যাওয়ার পর তাঁর প্রাকটিস সেই চালিয়ে গেছিল। বহু বছর পর সেই রাতের ঘটনা এরিক শেয়ার করেছিল একজন প্রেততত্ববিদের কাছে। সেই রাতে ফুটো দিয়ে তাকানো পর এরিক দেখেছিল, এক আবছা আলোতে ডাক্তারকে ঘিরে অনেক মানুষ বসে আছে এবং তারা সবাই এরিকের দিকে তাকিয়ে আছে! সবাইকে এরিক চিনতে পারেনি তবে তিনজনকে সে চিনেছিল! এরা সবাই ডাক্তারের রোগী ছিল এবং তারা বহু আগেই মারা গেছেন!
১৮৮২ সাল ফ্রেড্রিক সিৎস নামের এক জার্মান ডাক্তারের গল্প। ডাক্তার সাহেব নতুন যে হাসপাতালে বদলি হয়ে এলেন সেখানকার মর্গের কর্মচারী থেকে শুরু করে ডাক্তাররাও বার বার মানা করে দিলেন যেন তিনি রাতের বেলা মর্গে না যান! কিন্তু সদ্য পাশ করে বেরুনো ডা. শিৎস সবার মানা অগ্রাহ্য করে সেই রাতে মর্গে যান আর পরের দিনই সেই হাসপাতাল থেকে বদলির আবেদন করেন। সেই রাতে তিনি মর্গে কি দেখেছিলেন? তিনি কোন ভূত বা দানব দেখেননি! তিনি দেখেন মর্গের চারটি লাশই তাঁর নিজের লাশ!
মনে আছে চার্লস ডারউইন কেন ডাক্তারি পড়া ছেলেছিলেন? কারণ তখন চেতনানাশক ইনজেকশন ছিলনা ফলে অপারেশনের সময় অ্যাসিটট্যান্টরা রোগীকে চেপে ধরে রাখত আর সার্জনের কাজ ছিল যত্ত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনটা করে ফেলা! ১৮৯৬ সালের দিকে আমেরিকাতে ডা. ব্রাউন নামে একজন সার্জন থাকতেন। তিনি প্রতিটি অপারেশন করার আগে রোগীকে একবার করে দেখতে যেতেন। এবং রোগীর ঘরে ঢুকেই তিনি বলে দিতেন যে তিনি অপারেশন করবেন কি করবেন না! অবাক করার মত ব্যাপার হলো, ডাক্তার ব্রাউন যে রোগীর অপারেশন করতেন না তাকে আর কোনভাবেই বাচানো যেতনা! যত্ত ভাল সার্জন দিয়েই অপারেশন করানো হোকনা কেন তারা আর বাঁচতো না! মারা যাওয়ার আগে ডাক্তার ব্রাউন তাঁর মেয়েকে বলে যান সেই রহস্য। তিনি নাকি রোগীর ঘরের ভিতরে ঢুকেই আগে খেয়াল করতেন রোগীর মাথার কাছে তাঁর মৃত স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছেন কিনা! যেসব ক্ষেত্রে তিনি মহিলাকে দেখতে পেতেন না সেইসব অপারেশনই তিনি করতেন। কারন তাঁর স্ত্রী যে রোগীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে সে আর বাঁচবে না!
১৯১৭ সাল আমেরিকার পেনসিলভেনিয়াতে ডা. থমাস নামক এক পল্লী ডাক্তারকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান এক বৃদ্ধ লোক। লোকটি জানিয়েছিল যে তাঁর স্ত্রীর অনেক অসুখ! ডাক্তার সাহেব নির্জন এলাকাতে লোকটির বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে পরীক্ষা করে দেখেন যে মহিলা বহু আগেই মারা গেছেন! আর তখনই ডাক্তারকে অবাক করে দিয়ে মহিলা উঠে বলেন, “ডাক্তার সাহেব! সময় মত আসলেন না কেন? আমি তো আর বেঁচে নেই!” ডাক্তার সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচেন! ধারনা করা হয় কণা বসুমিত্রের বিখ্যাত “হাতুড়ে ডাক্তারের ভূতুড়ে রোগী” গল্পটি এই কাহিনী অবলম্বনেই লেখা!
এরকমই হাজার হাজার কাহিনী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ডাক্তারদের নিয়ে।