দুর্যোগের রাত

দুর্যোগের রাত

গভীর রাত।বাইরে প্রচণ্ড বাতাস বইছে,মনে হয় ঝড় হবে।এখন আমি অফিস থেকে বাড়ি ফেরার জন্য বের হবো।অফিসে আজ প্রচুর কাজের চাপ থাকার কারণে রাত জেগে কাজ করতে হয়েছে।তাই এতো দেড়ি। আমার মোবাইলটা বের করে দেখি রাত দুটো বাজে,মোবাইলে আর মাত্র এক দাগ চার্জ আছে।আমি দ্রুত গিয়ে আমার গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলাম কিন্তু অবাক ব্যাপার আমার গাড়ি স্টার্ট হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার ইঞ্জিনের শব্দ তুলেই থেমে গেলো। আমি কোথায় গণ্ডগোল ঠিক বুঝতে পারলাম না।কারণ গাড়িতে যথেষ্ট পরিমাণে পেট্রোল আছে।তাহলে অন্য কোন সমস্যা নিশ্চয়, কিন্তু কি সমস্যা আমি তা অনেক চেষ্টা করেও বের করতে পারলাম না।এই রাতের বেলা কোন গ্যারেজ খোলা পাবো বলে মনে হয় না।তাই গাড়ি ঠিক করার আশা বাদ দিয়ে গাড়ি অফিসে রেখেই বের হলাম, দারোয়ান অফিসের গেট খুলে দিতে দিতে কেমন অদ্ভুত সুরে বলে উঠলো-স্যার, সাবধানে যাইয়েন, রাতের বেলা কওয়া যায় না রাস্তাঘাটে কি হয়!

কথা গুলো বলার সময় কেন যেন আমার মনে হল দারোয়ানের চোখ গুলো জ্বলজ্বল করছে। তবে আমি বিষয়টাকে তখন তেমন পাত্তা না দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।ইতোমধ্যে বাতাসের গতি বেড়েছে। বৈশাখ মাস।কালবৈশাখী ঝড় হবে বলে মনে হচ্ছে। এই এলাকাটা বড় নির্জন। গ্রাম এলাকার মতো,এখানে সবাই রাত দশটা বাজতে না বাজতেই ঘুমিয়ে পরে,আর এই ঝড়ের রাতে কেইবা শখ করে বাহিরে বের হবে। তাই আমি বাড়ি ফেরার জন্য রাস্তায় কোন যানবাহন পাবো সেই আশাও করছি না।অগত্যা হাটা ধরলাম।হাটার সুবিধার্থে মোবাইল ফোনের টর্চটা জ্বালিয়ে দিলাম,তবে বেশিক্ষণ টিকবে বলে মনে হয় না।খুব জোরে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, আমার গায়ে কাঁপুনি ধরে গেলো।আমি হাটছি,এখন মনে হচ্ছে আজ রাতটা অফিটে কাটিয়ে দিলেই বুঝি ভালো হত,কেন যে বের হতে গেলাম।কিন্তু কি করা করা, বাইরে যখন চলেই এসেছি বাসায় তো ফিরতেই হবে। তাছাড়া বাসার লোক অনেক চিন্তায়

থাকবে,আমি অনেক বার বাড়িতে ফোন করেও কারো ফোন খোলা পাইনি।আমার শীত লাগা বেড়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ হাটার পরেই আমার ফোন বন্ধ হয়ে গেলো। এখন রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের হালকা নিয়ন আলোই আমার একমাত্র ভরসা।প্রায় সবগুলো ল্যাম্পপোস্ট নষ্ট হয়ে গেছে।যে দুই একটা আলো দিচ্ছে তাতে অন্ধকার যেন আরো চেপে বসেছে।মনে মনে নিজেকেই গালি দিতে থাকলাম, কেনো যে ফোনটা চার্জে দিলাম না।এদিকে দুএক ফোটা বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেছে।আমি যে কোথায় আশ্রয় নেবো তার উপায় দেখতে পাচ্ছি না,আশেপাশে কোন ঘরবাড়ি নেই,শুধু ঝোপঝাড়, বড়বড় গাছে,ঘাসপাতায় ভরপুর চারিদিক। আমি বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই হাটছি। খুব জোর বৃষ্টি নয় বলেই রক্ষা। হঠাৎ আমার মনে হলো আমাকে কেউ ডাকছে-

‘শুনছেন?’। হ্যা একটা মেয়ের রিনরিনে কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছি আমি।রাস্তার অপর প্রান্তা চোখ যেতেই দেখতে পেলাম মেয়েটিকে।আমি মেয়েটার মুখ ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছি না,এই জায়গাটায় অন্ধকার বেশি।আমি বেশ অবাক হলাম এতো রাতে একটা মেয়ে বাহিরে কেন? মেয়েটা আবার বললো- দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করবেন? মেয়েটার কন্ঠ শুনে এবার আমার মনে হল সে সত্যি কোনো বিপদে পড়েছে। এবার আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম।জিজ্ঞেস করলাম-‘আপনি কে?আপনি এতো রাতে বাহিরে কেন?আর আপনার কি সাহায্য লাগবে খুলে বলবেন আমাকে?’

মেয়েটা উত্তরে বললো-‘আমি এলিজা গোমেজ।আমি আমার এক আত্মিয়ের বাসায় গিয়ে আটকে পরেছিলাম। রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ার ড্রাইভার আমাকে একা নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।তারপর থেকে হেটেই চলেছি।রাস্তায় কোন গাড়ি পেলাম না,কারণ তখন রাত ১টা, একসময় প্রচণ্ড বাতাসের সাথে ঝড় শুরু হল,একা একা বাসায় যেতে আমার খুব ভয় করছে।হঠাৎ আমি আপনাকে দেখতে পেয়ে যাই।তাই সাহায্যের জন্য ডাকলাম। আমাকে যদি বাড়িতে পৌঁছে দিতেন তাহলে আমি সারাজীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।’ মেয়েটার কথা আমার বিশ্বাস হয়ে

গেলো,ও যেভাবে কথা গুলো বলছিল তাতে বিশ্বাস না করে উপায় নেই।তবে কয়েকটা বিষয়ে আমার খুবই কৌতুহল হচ্ছে।আমি এলিজাকে জিজ্ঞেস করলাম,”এলিজা,আপনার বাসাটা ঠিক কোনদিকে?” এলিজা ওর বাসার ঠিকানা বলল। আমার বাসা থেকে কিছুটা দূরেই এলিজার বাসা।তাই আমি ভাবলাম আমার যখন দেড়ি হয়েই গেছে তাহলে এলিজাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েই আমি বাসায় ফিরবো।এখনো বৃষ্টি থামেনি,আরো দ্বিগুণ জোরে বাতাস বইছে।সাথে যোগ হয়েছে বজ্র বিদ্যুৎ এর চমকানি। প্রবল শব্দে মেঘ ডাকছে। আমি এলিজার সাথে হাটছি।কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম।পরিবেশ হালকা করার জন্য আমিই নীরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলাম-‘আপনার বাড়িতে কে কে আছে?’

এলিজাঃআমি আমার স্বামী জর্জ এর সাথে থাকতাম।আমাদের বিয়ের পরে আমরা এই নির্জন জায়গায় এসে বাড়ি কিনি,বাড়িটা আমাদের খুবই পছন্দ হয়েছিল।বিয়ের দুবছর সুখেই কাটেছিল আমাদের।এটুকু বলে এলিজা থেমে গেলো।

আমি জিজ্ঞেস করলাম-‘তারপর কি হল?’

এলিজাঃহ্যা,সবই জানতে পারবেন।আপনার এসব জানা খুবই জরুরী। আমি তো এতদিন ধরে অপেক্ষা করছি সব জানাতে হবে বলে।

খুবই অদ্ভুত শীতল কন্ঠে এলিজা এই কথা গুলো বলে আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। সেই সাথে বাজ পরার বিকট শব্দ।ওর হাসি বাজ পরার শব্দকেও হার মানাবে। এলিজার হাসি আর বাজ পড়ার শব্দ পরিবেশটাকে কেমন রহস্যময় করে তুললো। আমার কেমন যেন গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো ওর হাসি শুনে।আর বাজ পড়ার সময় ক্ষণিকের আলোতে আমি ওর মুখটা দেখতে পেলাম, কেমন যেন রক্তশূন্য, ফেকাসে,রুক্ষপ্রকৃতির চেহারায় হাসছে ও।ওর চেহারায় কোন প্রাণবন্ত ভাব নেই,নেই কোন কোমলতা।একটা মেয়ের চেহারা এতোটা রুক্ষ হতে পারে?তবে যাইহোক আমি এলিজার এই কথার মানে বুঝতে পারলাম না।ও কেন বললো যে আমার জানা খুবই জরুরী?আর অপেক্ষাটাই বা কিসের জন্য?এসব প্রশ্ন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। নিশ্চয় এসব কথার মধ্যে অন্য কোন রহস্য লুকিয়ে আছে।এই প্রথম বারের জন্য এলিজাকে আমার অস্বাভাবিক এবং উদ্ভট মনে হল।তবে আমি মুখে কিছুই বললাম না।আমার হঠাৎ করে মনে হল আমি এলিজাকে আগেও দেখেছি।কিন্তু ওর নামটা আমি প্রথম শুনেছি,আগে কখনো এই নামের কাউকে চিনতাম বলে তো মনে হয় না।

এলিজার কথায় আমার হুশ ফিরল। এলিজা বললো -‘দুঃখিত এভাবে হাসার জন্য। আপনি কি ভয় পেয়েছেন?’

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম – না মিসেস এলিজা।আপনি যা বলতে চাইছেন বলুন। আচ্ছা কেনই বা অপেক্ষা আপনার?

এলিজাঃবলবো তো অবশ্যই।আর অপেক্ষার বিষয়টা এমনিতেই আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।তবে আপনার অদম্য কৌতুহল দমন করুন।

এসব বলতে বলতে এলিজার কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে গেলো।

এলিজা বলতে লাগলো-শুনুন তাহলে আমার দুর্ভাগ্যের কথা।আজ থেকে সাত বছর আগের কথা।তখন বৈশাখ মাস।দিনটা ছিল ১৩ তারিখ। আমি আর জর্জ ঘুরতে খুব পছন্দ করতাম। আমরা ১৩ তারিখ সকাল বেলা ঘুরতে বের হলাম।সারাদিন ঘুরেবেড়িয়ে, রাতের খাবারটা বাহিরেই সারলাম এবং সবশেষে আমরা একটা সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিলাম।সারাদিন আবহাওয়া ভালো ছিল,কিন্তু হঠাৎ প্রকৃতি বৈরী রূপধারণ করলো।সমস্ত আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেলো।তারপরেই শুরু হল মেঘের গর্জন, বিদ্যুৎ চমকানি। এরপরে বৃষ্টি শুরু হলো। ঠিক আজকের দিনের মত

পরিবেশ ছিলো! তখন আনুমানিক রাত ১টা।যেহেতু এই এলাকা খুবই নির্জন আর ঝড়বৃষ্টি চলছে তাই আমরা গাড়ি না পেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে হেটে হেটেই বাড়ি ফিরছিলাম।এতে অবশ্য আমাদের খারাপ লাগছিল না,আমরা গল্প করতে করতে বাসায় ফিরছিলাম। রাস্তায় আলো বলতে কিছুই ছিল না,আমাদের পরিচিত রাস্তা বলে হাটতে অসুবিধা হচ্ছিল না।হঠাৎ গাড়ির হেডলাইটের তীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেলো আমাদের।আমাদের রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ানোর কোন সুযোগ না দিয়ে গাড়িটি দ্রুত বেগে ছুটে আসে।আসন্ন বিপদ বুঝতে পেরে জর্জ আমাকে অন্যদিকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। আমি বেঁচে গেলাম।কিন্তু আমার জর্জ সেই রাতেই মারা গেল গাড়ির নিচে চাপা পরে।

এটুকু বলে এলিজা কাঁদছে।আমি কি বলে তাকে থামাবো বুঝতে পারছি।আমি বললাম – মিসেস এলিজা শান্ত হন।এলিজা থামলো।

এলিজাঃএখানেই দাঁড়ান। ওই যে আমার বাড়ি দেখা যাচ্ছে।

আমি এলিজার কথা শুনতে শুনতে ভুলেই গেছিলাম যে আমরা আমার বাড়ি ছাড়িয়ে এলিজার বাড়িস সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।এখানে একটা ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে এখনো। বৃষ্টি এখনো থামেনি।আমি এলিজাকে ঠিক আগের মতোই রুক্ষ,ফ্যাকাসে চেহারায় দেখতে পাচ্ছি। এবার আমি এলিজার বাড়ির দিকে দেখছি,এখান দেখে দেখে মনে হচ্ছে বাড়িটা খুবই জরাজীর্ণ। এই বাড়িতে মানুষ বাস করতে পারবে বলে তো মনে হয় না।তাহলে এলিজা কিভাবে এই বাড়িতে থাকে।খুবই অদ্ভুত লাগলো ব্যাপারটা।

আমি এলিজাকে বললাম এবার কি আপনি বাড়িতে একা একা যেতে পারবেন?

এলিজাঃএতটুকু যখন এসেছেন তাহলে আমার বাড়ির সিঁড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসুন। তাহলেই আপনার কাজ শেষ।

আমি কি মনে করে যেন আর আপত্তি না করে এলিজার সাথে তার বাড়ির দিকে রওনা হলাম।দোতলা বাড়ি,বাড়ির গেটটা ধাক্কা দিতেই ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেলো।

এলিজাঃআমি দোতলার একদম শেষ ঘরটায় থাকি। আমার সাথে উপরে উঠে আসুন।
আমি বললামঃআপনি কি ঘরে একটু আলো জ্বালাতে পারবেন?কিছুই তো দেখা যাচ্ছে না।
এলিজাঃআমি দুঃখিত।ঘরের বিদ্যুৎ এর লাইনে সমস্যা হয়েছে পাচ দিন যাবৎ। আমি মোমের আলোতে কাজ চালিয়ে নেই।কিন্তু মোম আবার শোবার ঘরে।তাই কষ্ট করে এই অন্ধকারের মধ্যেই আপনাকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে।
আমরা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকলাম।কাঠের তৈরি সিঁড়ি,প্রত্যেক ধাপেধাপে অন্ধকার ওত পেতে আছে। সিঁড়িতে পা দিয়েই মনে হল ওগুলো ভেঙে পড়বে।সিঁড়ি গুলো বহুদিন ধরে নড়বড়ে হয়ে আছে বলে মনে হল।প্রত্যেকটা ধাপে আমি খুব সময় নিয়ে উঠছি,একটু থেকে একটু হলেই আমি পড়ে যেতে পারি।অথবা এলিজা বেশ সাবলীল ভাবে এই ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে।তবে আমার উঠতে দেড়ি হচ্ছে বলে সে তার গতি শ্লথ করলো।

আমি এলিজাকে জিজ্ঞেস করলামঃ মিসেজ এলিজা আপনার বাড়িটা কত দিনের পুরনো?এরকম বাড়িতে চলাফেরা করতে আপনার সমস্যা হয় না?

এলিজাঃআমরা বহুপুরোনো এই বাড়ি খুব কমদামেই কিনেছিলাম।আমরা যখন বাড়িটা কিনেছিলাম তখন এর বয়স ছিলো ২১বছর, এখন বাড়িটার বর্তমান বয়স ৩০ বছর। আর আমি একা মানুষ, বাড়ি ঘর থেকে তেমন বের হইনা তাই এখানে আমার কোন সমস্যা হয় না।আর আমার কাছে জর্জের শেষ স্মৃতি এই বাড়ি। আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতেও পারবো না।

আমি আর কোনো কথা বললাম না।আমরা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে এসেছি।
এবার এলিজা বললঃআপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার জন্য।এবার আপনি যেতে পারেন।
এই বলে আমার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই এলিজা চলে গেলো।ঠিক যেন হাওয়ায় উবে গেল ওর অবয়ব। আমি আবারো অবাক হলাম। মনকে শান্তনা দিলাম এই বলে যে অন্ধকার বলে আমি এলিজাকে আর দেখতে পাইনি।একটা মানুষ কিভাবে হাওয়ায় মিশে যেতে পারে!

আমি দেড়ি না করে নিকষকালো এই অন্ধকারের ভেতরে হাতড়ে হাতড়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম।এই বাড়ি,এলিজা সব কিছুই কেমন অদ্ভুত। আমি বাড়ির গেট খুলে রাস্তায় নেমে আসলাম। বৃষ্টি আরো বেড়েছে,কিন্তু আমাকে বাড়ি পৌঁছাতে হবে। আমার কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে এলিজার বাড়িতে ফিরে গিয়ে বলি আমাকে আমার বাড়ি পৌঁছে দিতে।নিজের এই চিন্তায় নিজের মনেই কিছুটা হেসে নিলাম। কিন্তু একটা জিনিস আমার মাথা থেকে আমি তাড়াতে পারছি না।আমি এলিজাকে আগেও দেখছি। কিন্তু কোথায়? একবার ভেবেছিলাম এলিজাকেই জিজ্ঞেস করবো কিন্তু করা হয়ে ওঠেনি। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই আমি এগুচ্ছি।হঠাৎ আমি আমার সামনে ল্যাম্পপোস্ট এর হালকা আলোয় একটা কালো গাড়ি দেখতে পেলাম।আরে এতো আমার গাড়ি! এটা এখানে এলো কিভাবে?আমি অসম্ভব বিস্মিত হলাম।এবার নিজে থেকেই আমি সবকিছু মেলাতে পারছি।এখন মনে পড়লো আজ

তো ১৩ তারিখ! আমার পুরনো স্মৃতি ফিরে এলো।আরে জর্জ আর এলিজা এ নাম দুটো তো আমার পরিচিত!এতো দিনের নানা ব্যস্ততায় আমি ভুলে গেছিলাম পুরোটা।গাড়িটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমি যেদিকে যাচ্ছি গাড়িটাও সেদিকেই আমার পেছনে ধাওয়া করে ছুটছে।আমার মনে পড়ে গেছে সাত বছর আগের সেই ঘটনা।আমি বুঝতে পারছি আমার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। আমি ক্ষণিকের জন্য গাড়িব খোলা কাচ দিয়ে দেখতে পেলাম গাড়িতে বসে আছে দুটো ছায়ামূর্তি। আমি তাদের চেহারা বুঝতে পারছি। একজন এর নাম জর্জ, সেগাড়ি চালাচ্ছে।তার পাশে বসে আছে একটা মেয়ে,ওটা আর কেউ নয় এলিজা,ওর মুখে এখনো সেই রক্তশূন্য ফেকাসে ভাবের সাথে যোগ হয়েছে প্রচণ্ড ক্রোধ আর প্রতিশোধ স্পৃহা। আমি আর কিছুই ভাবার সময় পেলাম না। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি গাড়ির দিকে, গাড়িটা আমার দিকে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে আসছে।

*পরিশিষ্টঃপরদিন সকালে রাস্তা থেকে বিকৃত হওয়া একটি লাশ উদ্ধার করলো পুলিশ*

★পাপের ঘড়া পূর্ণ হয়ে গেলে তার শাস্তি পেতেই হবে★

…………………………………………………………………..সমাপ্ত……………………………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত