মৃত্যুফাঁদ

মৃত্যুফাঁদ

“কীভাবে শুরু করবো? বুঝতে পারছি না,আসলে কিছু ঘটনার কারনে আমার মাথা একেবারেই কাজ করছে না। আয়ায়ায়ায়া,ডিটেইলসেই বলি আপনাদের। আমি এই বাসায় নতুন,বলা চলে শহরেই একদম নতুন।মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে আমর এখানে।আর এই বাসায় আমি আজ দিয়ে তিনদিন।গত পরশুই এসেছি।তার আগে আমি একটা হোটেলে ছিলাম। আচ্ছা আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগবেই যে আমি এখানে কেনো।আসলে আমি আমার শহর থেকে পালিয়েছি।আমি এতিম,এতিম খানায় বড় হয়েছি।আর সেখান থেকে আমাকে এক ভদ্রলোক দত্তক নিয়েছিল।আমার মতো বয়সী ছেলেদের সাধারনত কেও দত্তক নেয় না কিন্তু আমাকে নিয়েছিল সে।আর তার উদ্দেশ্য যে খুব

ভালো ছিল না সেটা আমি প্রথম রাতেই বুঝেছি। আর এর পরের রাতে যখনই সে আমার কাছে এলো তখনই আমি তাকে মেরে পালিয়েছি।হ্যা ঠিকই শুনছেন,আমি খুন করে পালিয়েছি। আর কেনো মারলাম সেটা বুঝতেই পারছেন।পুলিশ আমাকে খুজছে।এই অপরিচিত শহরে অন্তত কিছুদিন হলেও আমি বাঁচতে পারবো। কিন্তু এখন সে আশাটাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এই বাসায় আসার পর থেকেই কি সব উল্টাপাল্টা হচ্ছে আমার সাথে।মাঝ রাতে ভয়ঙ্কর হাসির শব্দ শুনছি,চোখ বন্ধ করলেই মনে হচ্ছে কেও আমার আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।এগুলো তাও মেনে নেওয়া যায়।কিন্তু কাল রাতে আমি যা দেখলাম তা একেবারেই হজম করা যায় না।লোকটা বেশ লম্বা,মুখটা পোড়া,পেটের কাছটা

একেবারে ফাড়া,চুল গুলো সাদা,বাম চোখটা নেই,ফাকা কুঠুরিটা থেকে একটা সাদা পোকা বেড়িয়ে আসছে। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু আমি এর আগে দেখিনি। আমি মাদ্রাসার ছাত্র,জ্বীন দেখেছি,পিচাশ দাবড়েছি কিন্তু এরকম কিছু আমার জীবনে দেখিনি। আমি এ বাসা ছেড়ে যেতেও পারছি না। আমার ছবি পত্রিকায় ছেপে গেছে,আমার চেহারা টিভিতে দেখাচ্ছে। শহর থেকে দূরে এই বাড়িটা আমার জন্য একমাত্র নিরাপদ জায়গা। ভাববেন আমি এই ভিডিও কেনো করছি? যাতে করে আমার মৃত্যুর কারনটা অন্তত কেও জানতে পারেন। আমি আজ সকালেই এরকম একটা ভিডিও খুজে পেয়েছি এখানে। আমার আগেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে।তারাও আমারই মতো ভিডিও করেছে,আমি যার ভিডিও দেখেছি সে বলেছে তার আগেও এখানে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এটা একটা মৃত্যু ফাঁদ।এখানে যেই আসবে তাকে মরতে হবে। আপাতত দিন,দিনের বেলায় ওটা আমাকে কিছু করবে না আশাকরি। দিনে ওদের ক্ষমতা থাকে না। তাই ভিডিওটা এখনই করে রাখছি। রাতে হয়তো কাজটা যাবার সুযোগ হবে না।আমার পরকালীন হেদায়াতের জন্য দোয়া করবেন।”

“আবার ওটাকে দেখলাম। ভয় করছে খুব।আমার সময় ফুরিয়েছে। আজ রাতই বোধহয় আমার শেষ রাত হবে। ওটাকে এখন আরো ভয়ঙ্কর লাগছে। ঘরটা কেমন যেনো ঠান্ডা হচ্ছে ধীরে ধীরে,ভীষন ঠান্ডা। আমার হাত পা কাঁপছে। আমার সময় বোধহয় শেষ।ওটা দরজা দিয়ে ঢুকছে। যে এই ভিডিওটা দেখছেন যদি এই বাসাটায় থাকেন তবে চলে যান।পারলে সবাইকে বলবেন আমি কেনো খুন করেছি।আর পারলে……….
..আয়ায়ায়ায়ায়ায়া……..আয়ায়ায়া য়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া…….ঝাংং……”

ভিডিওটা শেষ হলো। সিফাতের হাত-পা কাঁপছে। এখনই বাসাটা থেকে বের হতে হবে। বাসাটা ভাড়া নেওয়ার আগে দেখতে এসেছিল সে।কিন্তু যা দেখলো তার পরে আর এ বাসায় থাকা হবে না তার। তাছাড়া মনে মনে ভিডিওর ছেলেটার জন্য কষ্টও হচ্ছে। তার ব্যাপারটা সবাইকে জানানো দরকার।কিছুদিন আগে সে পেপারে ছেলেটার ছবি দেখেছে,এর নাম আলি।তখন তাকে বেশ গালি দিয়েছিল,আশ্রয়দা

তাকে খুন করেছে জন্য।কিন্তু এখন সত্যটা জানার পরে তার প্রতি একটা দায়বদ্ধতা তৈরী হয়েছে। বাসাটা থেকে বের হবার জন্য ঘুরে দাড়ালো সিফাত।কিন্তু হঠাতই ঘরটা কেমন ঠান্ডা হতে লাগলো, সিফাতের শিরা উপশিরা গুলো যেনো জমে যাচ্ছে।দরজাটা দিয়ে কে যেনো ঢুকছে।মুখটা পোড়া,বাম চোখের কুঠুরিটা ফাকা,একটা সাদা পোকা বেড়িয়ে আসছে ওখান থেকে!

…………………………………………………………………..(সমাপ্ত)……………………………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত