ঘরে বসে থাকতে থাকতে একদম বোর হয়ে যাচ্ছি।অনেক দিন বাইরে কোথাও বেড়াতে যাই না।কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাক।সবার সাথে কথা বলা দরকার ফয়সাল কে ফোন দেই।
হ্যালো..ফয়সাল কেমন আছিস?(আমি)
হুম ভালো তুই?(ফয়সাল)
আমিও ভালো চল কোথাও দেখা করি।(আমি)
কেন?(ফয়সাল)
কাজ আছে দেখা করি বলবো।(আমি)
তুই বললি কোথাও দেখা করবি কেন? তোর বাসায় আসি আমি?আন্টির হাতের রান্নাও খাওয়া যাবে।(শয়তানি হাসি দিয়ে বললো ফয়সাল)
পেটুক…..জান্নাত কে নিয়ে আসিস।(আমি)
কোথায়?(ফয়সাল)
পার্কে….. আমি যারিন কেও নিয়ে আসবো।(আমি)
সবাই কেন?(ফয়সাল)
আর কোন কথা না দেখে হলে বুঝবি।৪ টায় চলে আসিস।(আমি)
ঠিক আছে।(ফয়সাল)
বাই।(আমি)
বাই।(ফয়সাল)
ফয়সাল আর জান্নাত তো চলে আসবে।এখন আমাকে যেতে হবে যারিনকে আনতে।তার আগে খালিদ ভাই আর দোলা আপুকে ফোন দিয়ে নেই।আগের কেসের পর থেকে এখন খালিদ ভাই আর দোলা আপুই ডাকি।খালিদ ভাইকে ফোন দিলাম।
হ্যালো খালিদ ভাই?(আমি)
হুম কে?লিমন?(খালিদ ভাই)
হুম কেমন আছেন?(আমি)
ভালো তোমার কি খবর?(খালিদ ভাই)
ভালো আজ একটু দেখা করতে পারবেন?(আমি)
পারবো কিন্তু কেন?(খালিদ ভাই)
একটু দরকার ছিলো দেখা হলে বলবো।(আমি)
আচ্ছা কোথায় দেখা করবে?(খালিদ ভাই)
পার্কে…সাথে দোলা আপুকেও নিয়ে আসিয়েন।(আমি)
আচ্ছা।(খালিদ ভাই)
৪ টার সময় আসিয়েন।এখন রাখি বাই।(আমি)
আচ্ছা বাই।(খালিদ ভাই)
ফয়সাল আর জান্নাত তো আসবে।খালিদ ভাই আর দোলা আপুও আসবে বাকি রইলো যারিন।এখন ওকে আনতে যেতে হবে।বেরিয়ে পড়ি না হলে পরে আবার দেরি হয়ে যাবে তখন ফয়সাল আবার ঝাড়ি দিবে।আম্মুকে বলে বেরিয়ে পড়লাম।ভাগ্য ভালো বের হতেই গাড়ি পেয়ে গেলাম।উটে গেলাম গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে।আমি বাইরের পরিবেশ টা দেখতে লাগলাম।মানুষ তাদের প্রয়েজনের কারণে কি অবস্তা করেছে এই পরিবেশ টার।কোন গাছ নেই শুধু বড় বড় দালান।গ্রাম ছাড়া গাছ এখন দেখাই যায় না।এসব আজব চিন্তা করতে করতে কখন পৌছে গেছি খেয়ালই নেই।ড্রাইবারের ডাকে ঘোর ভাঙলো।তাড়াতাড়ি নেমে গেলাম গাড়ি থেকে।বাড়া মিটিয়ে দিলাম।হাটতে শুরু করলাম যারিনের বাসার দিকে।২ মিনিট হাটতেই পৌছে গেলাম।কলিংবেল চাপ দিলাম।
–টিং টং–
আন্টি এসে দরজা খুললেন।
কেমন আছেন আন্টি?(আমি)
আরে লিমন তুমি।আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?(আন্টি)
আমিও ভালো আছি।দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবো?(আমি)
আরে না না ভিতরে এসো।(আন্টি)
যারিন বাসায় নেই?(আমি)
আছে তুমি বসো আমি ডেকে দিচ্ছি।(আন্টি)
আপনাকে ডাকতে হবে না আমি যাচ্ছি কোথায় যারিন?(আমি)
উপরে।(আন্টি)
ঠিক আছে।(আমি)
আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে উপরে উটছি ভাবতেছি কেমন চমক দিবো ওকে।ওর রুমের কাছে পৌছে গেলাম দরজায় নক করলাম।
আসছি।(যারিন)
দরকা খুলে দিলো যারিন।
সারপ্রাইজ।(আমি)
ওই বাদর এভাবে কেউ চিল্লায়?(যারিন একটু রেগে বললো)
আমি বাদর হলে তুই গাধা।(আমি)
তা হটাৎ কোথা থেকে উদয় হলি।(যারিন)
তোর মাথা থেকে।(আমি)
তুই তো কোন কাজ ছাড়া আসিস না বলে ফেল কি কাজ?কোন নতুন কেস?(যারিন)
আরে না কেস পাবো কই?(আমি)
তাহলে?(যারিন)
সবাই মিলে দেখা করবো তারপর বলবো কি কাজ।(আমি)
সবাই মানে?(যারিন)
সবাই মানে ফয়সাল,জান্নাত,খালিদ ভাই আর দোলা আপু সবাই দেখা করবো।একটা কথা আছে তাই সবাই কে ডেকেছি।আর আমি এখন তোকে নিতে এলাম।(আমি)
আচ্ছা ঠিক আছে।কোথায়? কখন সবাই আসবে?(যারিন)
এই তো ৪ টায় পার্কে দেখা করবো।(আমি)
এখন তো ৩ টা বেজে গেছে।আমি রেডি হয়ে নেই।(যারিন)
গেলে তো আর আধ ঘন্টার আগে আসবি না মেকাপ করতে করতে তাড়াতাড়ি করিস।(আমি)
আমি মেকাপ করি?(রেগে বললো যারিন)
আরে না মজা করলাম যা রেডি হয়ে নে।(আমি)
কথা শেষ হতেই আন্টি খাবার নিয়ে এলো খেয়ে বসে রইলাম।কিছুক্ষন পরই যারিন চলে এলো।বেরিয়ে পড়লাম পার্কের উদ্দেশ্যে।গাড়ি পেতে একটু সমস্যা হলো।তাই গিয়ে পৌছালাম একটু দেরি তে।দেখলাম জান্নাত আর ফয়সাল চলে এসেছে।
কিরে এখন নিজেই দেরি করলি?(ফয়সাল)
আরে এই পেন্তির জন্য দেরি হলো.. মেকাপ করতে গিয়ে দেরি করেছে।(যারিনের দিকে দেখিয়ে বললাম)
ওই বান্দর থাপ্পড় খাবি।(যারিন)
আরে মজা করছিলাম।(আমি)
কেমন আছো জান্নাত?(যারিন)
এই তো ভালো তুমি?(জান্নাত)
আমিও ভালো।(যারিন)
কি কাজ এখন বল?(ফয়সাল)
দাড়া খালিদ ভাই আর দোলা আপু আসুক বলবো।(আমি)
কথা শেষ হতেই দেখা গেল খালিদ ভাই আর দোলা আপুকে দুজন আমাদের দেখে এগিয়ে বলো।
কেমন আছো সবাই?(খালিদ ভাই ও দোলা আপু)
আমরা সবাই ভালো আপনারা?(সবাই)
আমরাও ভালো।(খালিদ ভাই ও দোলা আপু)
লিমন কি জন্য সবাইকে একসাথে ডাকলে?(দোলা আপু)
হুম আমারও একই প্রশ্ন।(যারিন)
হুম এবার বল তো।(ফয়সাল)
আরে আস্তে আস্তে বলতেছি।(আমি)
আস্তে আস্তে না তাড়াতাড়ি বল।(ফয়সাল)
আগের কেসটা শেষ করে তো এখন আমরা ফ্রি।কোন কাজ নেই।এক্সাম শেষ তাই আমরা তো বলতে গেলে একেবারে ফ্রি।সবাই তো বসে বসে বোর হচ্ছি।তাই আমার একটা প্লান আছে।(আমি)
কি প্লান?(ফয়সাল)
হুম কি প্লান?(জান্নাত)
তাড়াতাড়ি বল।(যারিন)
সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়?(আমি)
ওয়াও।(যারিন)
খুব ভালো প্লান।(খালিদ ভাই)
হুম।(দোলা আপু)
আচ্ছা কোথায় যাবি লিমন?(ফয়সাল)
সেটা জানি না সবাই মিলে ঠিক করতে হবে।(আমি)
কক্সবাজার?(ফয়সাল)
বান্দরবন?(জান্নাত)
ওই গুলা তো টিভি তে দেখেছি তার চেয়ে বরং আশে পাশে কোথাও সুন্দর যায়গায় যাওয়া যাক।কি বলো সবাই?(খালিদ ভাই)
হুম রাইট।(দোলা আপু)
একটা যায়গা আছে খুব সুন্দর যায়গা।(যারিন)
কোথায়?(আমি)
আমার নানু বাড়ি।(যারিন)
কি রকম যায়গা ওটা?(আমি)
খুব সুন্দর একটা গ্রাম গ্রামের একদিকে ঘন বন আর পাহাড়।ঝর্ণা,নদীও আছে।সব মিলিয়ে পারফেক্ট যায়গা বেড়ানোর জন্য।(যারিন)
তাই নাকি।(আমি)
হুম।সবাই কি বলেন?(যারিন)
আমাদের কোন সমস্যা নেই।(খালিদ ভাই ও দোলা আপু)
আমরাও রাজি।(ফয়সাল ও জান্নাত)
তাহলে আমিও রাজি।এবার কথা হলো কিভাবে যাবো?(আমি)
ট্রেনে গেলে কেমন হয়।সবার ফার্স্ট ট্রেন জার্নিও হয়ে যাবে।আমি নানু বাড়িতে ফোন দিয়ে বলে দিবো আমাদের স্টেশন থেকে নিয়ে যাবে।(যারিন)
ঠিক আছে কোন দিন যাবো?(ফয়সাল)
হুম সবাই কোন দিন যেতে পারবে?(আমি)
তারপর ঠিক হলো ২ দিন পর সবাই যাবো।সবাই খুব খুশি।সবাই যার যার জিনিস রেডি করতে শুরু করলো।টিকিট বুক করে রাখলাম।যাওয়ার আগের দিন রাত্রে খালিদ ভাই ফোন দিয়ে বললেন উনি আর দোলা আপু এখন আসতে পারবেন না হটাৎ নতুন কেস এসেছে।আমারা যেন চলে যাই উনারা পরে আসবেন।শুনে একটু মন খারাপ টিকিট কিনে ফেলেছি বলে আমরা সবাই রওয়ানা দেব ঠিক করলাম।পরের দিনই রওয়ানা দিলাম আমাদের গন্তব্যের দিকে।
ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে এই প্রথম সবার ট্রেন জার্নি তাই সবাই খুব এক্সাইটেড।কথা বলছি একজন আরেকজন এর সাথে।
খালিদ ভাই আর দোলা আপু আসলে আরও মজা হতো।(জান্নাত)
আচ্ছা যারিন আজ কতক্ষন ধরে মেকাপ করলি?(আমি)
আবার শুরু করলি এইবার কিন্তু ট্রেন থেকে ফেলে দিমু।(যারিন)
আরে তোরা থামে।এই মহারানি তো ২ ঘন্টা মেকাপ করলো।(ফয়সাল জান্নাতের দিকে দেখালো)
তাই নাকি জান্নাত।(আমি)
কিইই আমি ২ ঘন্টা মেকাপ করেছি তোমাকে এখনি মেরে ফেলবো।(জান্নাত রেগে বললো)
এই ভাবেই ঝগড়া ঝাটি আর খুনশুটি করতে করতেই পৌছে গেলাম।দুপুর হয়ে গেছে।স্টেশনে পৌছে দেখা গেল যারিনের নানু বাড়ির কেউ আসেনি। তাই আমরা চারপাশ দেখতে লাগলাম।স্টেশন টা বেশ বড় না।টিকেট কাউন্টার,স্টেশন মাস্টার আর দুটো যাত্রি দের জন্য বসার রুম আর বাথরুম এই শেষ।স্টেশনের পাশে বড় বড় গাছ।সব মিলিয়ে যায়গাটা মোটামুটি সুন্দর।
এখানে কি নতুন?
পিছন থেকে কণ্ঠ টা ভেসে এলো।সবাই পিছনে ঘুরলাম।একজন ভদ্র লোক দাঁড়িয়ে আছেন কোট টাই পড়া।হুম।আপনি কে?(আমি)
আমি এখানকার স্টেশন মাস্টার নাম সুমন।(সুমন)
ওহ আমি লিমন।(আমি)
এখানে কি ঘুরতে এসেছেন?(সুমন)
হুম।(আমি)
যায়গাটা বেশি ভালো না সাবধানে থাকবেন।(সুমন)
কেন কি হয়েছে?(আমি)
যাই হোক একটা কথা বলি “যা চোখের সামনে ঘটে তা সবসময় সত্যি নাও হতে পারে।তাই আগেই পরখ করে নিবেন”।(সুমন)
আর কিছু বলবো তার আগেই পাশ থেকে একটা কণ্ঠ ভেসে এলো……
যারিন।(আগন্তুক)
যারিন এগিয়ে গেল আগন্তুকও এগিয়ে এলো।একটা ছেলে দেখতে মোটামুটি সুন্দর।নিশ্চই যারিনের নানু বাড়ির কেউ।
আরে কাব্য কেমন আছিস?(যারিন)
খুব ভালো তুই।(আগন্তুক)
আমিও ভালো। পরিচয় করিয়ে দেই এরা হলো : লিমন,ফয়সাল আর জান্নাত আমার বন্ধু।আর ও হলো কাব্য আমার মামাতো ভাই।(যারিন)
সবাই কাব্যের সাথে পরিচিত হলাম।
আসতে এতো দেরি করলি কেন?(যারিন)
ভ্যান পাচ্ছিলাম না আগে যেটা ঠিক করেছিলাম ওইটার চালক অসুস্থ।(কাব্য)
ওহ তাহলে ঠিক আছে চল।তোরা আয়।(যারিন)
দাড়া উনাকে বিদায় দেই।(আমি)
বলেই পাশে সুমন এর দিকে ফিরলাম।আশ্চর্য আশে পাশে কেউ নেই সব খালি।।
এখানে তো কেউ নেই।(কাব্য)
এখানেই ছিলেন গেলেন কোথায়।(আমি)
মনে হয় চলে গেছেন এখন চল যাই।(ফয়সাল)
হুম চল।(আমি)
কেমন খটকা লাগলো আমার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো লোকটি চলে গেলে নিশ্চই টের পেতাম কিন্তু আমি তো দেখলাম না।তাহলে কিভাবে গেলেন।আর চিন্তা না করে বেরিয়ে এলাম।বাইরে বেরিয়ে গিয়ে ভ্যানে উটলাম।একে পাহাড়ি এলাকা দুইয়ে গ্রাম তিনে গাড়ি/রিকশা নেই তাই ভ্যান এখান কার জনপ্রিয় জানবাহন মনে হলো।যারিন যেরকম বলেছিল যায়গাটা তার চেয়ে সুন্দর মনে হচ্ছে। চারপাশে অনেক পাহাড়।সবাই অবাক হয়ে আশে পাশের পরিবেশ দেখতেছি।
ওয়াও এতো সুন্দর যায়গা।(জান্নাত)
বলেছিলাম না।(যারিন)
হুম ঠিকই বলেছিলি।(আমি)
এখানে দেখার মতো অনেক কিছু আছে সব দেখাবো ঘুরিয়ে।(কাব্য)
তাই নাকি খুব ভালো।(আমি)
একটা রাজবাড়ি আছে আর একটা পুরনো মন্দির আছে।(কাব্য)
আচ্ছা।(আমি)
ভ্যান চলছে গ্রামের আকাবাকা রাস্তা দিয়ে।যারাই পাশ দিয়ে যাচ্ছে আমাদের দিকে অবাক হয়ে থাকাচ্ছে।ফয়সাল এসব দেখে বললো।
দেখ লিমন সবাই কেমন আমাদের দিকে থাকাচ্ছে নিজেকে রাজা মনে হচ্ছে।(ফয়সাল)
হা হা তুই তো বান্দর দের রাজা।(যারিন)
এই কথা শুনে ফয়সাল আর কিছু বললো না।হটাৎ দেখতে পেলাম আমাদের ভ্যান এর পাশ কাঠিয়ে সুমন চলে গেল।পিছনে ফিরে থাকাতে দেখলাম আবার কেউ নেই।মাথা ব্যাথা শুরু হলো আমি কি গ্রামে এসে ভূলভাল দেখছি।নাকি সুমনের অদৃশ্য হওয়ার ক্ষমতা আছে।আবার আবোল-তাবোল ভাবনা শুরু করলাম মানুষ কি করে অদৃশ্য হবে।কিছুক্ষন পরেই পৌছে গেলাম।যারিনের নানু বাড়ির লোকেরা খুব ভালো।যাওয়ার আমাদের দেখে খুশি হলেও তাদের মুখে আমি চিন্তার ছাপ স্পষ্ট দেখতে পেলাম।যাওয়ার পর খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম।তারপর রেষ্ট নিলাম সবাই।বিকেলের দিকে সবাই বের হলাম।
আজ কি দেখাবে কাব্য?(আমি)
আপনারাই বলেন?(কাব্য)
আমাদের তুমি করবি বলো।(ফয়সাল)
আমরা তো একই বয়সি।(আমি)
আচ্ছা ঠিক আছে।আজ পাহাড় ঘুরে দেখি?(কাব্য)
হুম অব্যশই।(আমি)
কাব্যকে ফলো করে চলতে লাগলাম।গ্রামটা খুবই সুন্দর।চারিদিকে সবুজ আর সবুজ।হটাৎ রাস্তায় সুমন কে দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম এগিয়ে গেলাম সুমন এর দিকে।আমার দাড়িয়ে যাওয়া দেখে সবাই দাড়ালো।
কি হলো দাড়ালি কেন চল।(ফয়সাল)
দাড়া।(আমি)
কেন রে?(যারিন)
ওই দিকে দেখ সুমন ওর সাথে কথা বলে আসি।(আমি)
সবাই আমার সাথে এগিয়ে গেল।
আপনি হটাৎ কোথায় চলে গিয়েছিলেন স্টেশন থেকে।(আমি)
আমাকে বলছেন? (সুমন)
হুম আপনাকেই।(আমি)
আমি তো আজ স্টেশন যাই নি।(সুমন)
কি বলছেন আপনার সাথে তো আমাদের সবার আজ দেখা হয়েছিল স্টেশন।(ফয়সাল)
না আমি তো আজ স্টেশনে যাই নি।আর আপনি কে?(সুমন)
আমাকে চিনতে পারছেন না? আজ সকালেই তো আপনার সাথে কথা হলো।(আমি)
সেটা কি করে সম্ভব?আমি আজ সকালে কোথাও বের হই নি আপনি আমার বাড়িতে খোজ নিয়ে দেখতে পারেন।তাছাড়া আমি ছুটি তে আছি।(সুমন)
আমি একা হলে মানতাম হয়তো আমার মনের ভূল কিন্তু চার জন মানুষের একসাথে ভূল কি করে হবে।(আমি)
হুম আপনার সাথেই তো সকালে আমাদের দেখা হলো।(ফয়সাল)
হুম।(জান্নাত)
তারপর হটাৎ কোথায় উধাও হলেন?(যারিন)
স্ট্রেঞ্জ সকালে তো আমি বাসা থেকেই বের হইনি।(সুমন)
সুমন এর সাথে কথা বলে সবাই অবাক হলাম ছেলেটা কি আমাদের সাথে মজা করছে না সত্যি বলছে।কাব্যের মুখ দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায়।আমি জিজ্ঞেস করলাম….
কিছু বলবে কাব্য?(আমি)
না ইয়ে…মানে…না কিছু না।(কাব্য)
তোমাদের কেও ধরেছে।(কাব্য আবার বললো)
কি? কে ধরেছে?(আমি)
না কিছু না এমনি।(কাব্য)
কাব্য নিশ্চই কিছু একটা লুকাচ্ছে।কিছু একটা সমস্যা আছে।বেড়ানো আর হলো না সবাই ফিরে গেলাম।সুমন যদি না হয় তাহলে ওটা কে ছিলো?আর কাব্য। কি লুকাচ্ছে? মাথায় এখন এই প্রশ্ন গুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে।বাড়ি ফিরেই কাব্য সবাই কে গিয়ে কিছু একটা বললো।সবার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সবাই খুব চিন্তিত কাব্যের কথা শুনে।কাব্য কি এমন বললো যাতে সবাই ভয় পাচ্ছে।কাব্য কে ডাকলাম…
তুমি সবাইকে কি বললে যাতে সবাই ভয় পাচ্ছে?(আমি)
আ..মি না আমি আবার কি বলবো।(কাব্য)
তুমি আমতা আমতা করছো কেন?(আমি)
না এমনি।আমার মাঝে মাঝেই এমন হয়।(কাব্য)
কথাটা বলে আর দাড়ালো না দ্রুত চলে গেল কাব্য।কাব্যের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে ওতো সুন্দর করেই কথা বলতেছিল।সুমনের কথা শোনার পর আর এখন দুইবার আমতা আমতা করলো ভয়ের কারণে এটা হবে। কিসের কারণে সবাই এতো ভয় পাচ্ছে।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে নিকশ কালো অন্ধকারে চারদিকে ঝেকে বসলো।যারিনের নানু বাড়ি আসার পর ওদের তিনজনের আর দেখা পেলাম না কোথায় আছে কে জানে।ওদের ডাক দিলাম কিছুক্ষন পরই চলে এলো।
এতক্ষন কোথায় ছিলি সবাই?(আমি)
এইতো ছিলাম বাইরে চাঁদ দেখছিলাম।(ফয়সাল)
আমাকে এখানে একা রেখে চাঁদ দেখতে গিয়েছিলি কেন?(আমি)
ফাজলামি করিস?(যারিন)
ফাজলামি করবো কেন?(আমি)
আমাদের সাথেই তো ছিলি এতক্ষন একটু আগেই তো চলে এলি।(যারিন)
কি?আমি আবার তোদের সাথে কখন গেলাম?(আমি)
সত্যি আপনি তো আমাদের সাথেই ছিলেন।(জান্নাত)
আমি বাইরে থেকে আসার পর থেকে কোথাও বের হইনি।(আমি)
তাহলে কি এতক্ষন আমাদের সাথে তোর ভূত ছিলো।(ফয়সাল)
সবাই রাগ দেখিয়ে চলে গেল।কিন্তু আমি তো এতক্ষন ঘরে বসেই ছিলাম।তাহলে ওদের সাথে কে ছিলো।মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল।প্রথমে সুমন কে দেখলাম স্টেশনে তারপর আবার তার সাথে পাহাড়ে দেখা তখন সে বললো সে স্টেশনে যায়নি।এখন আমি ঘরে বসে আছি অনেক্ষন ধরে আর ওরা বললো আমি ওদের সাথে এতক্ষন বাইরে চাঁদ দেখছিলাম।গ্রামে আসার পর থেকেই এসব কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।নিশ্চই কিছু একটা সমস্যা আছে এখানে।যারিন এসে ডেকে গেলো নাস্তা করার জন্য। নাস্তা করে বেরিয়ে এলাম ঘর থেকে।গ্রামের মানুষের এখন চলাচল কমে যাচ্ছে রাত আট টা বাজার আগেই সবাই ঘুমিয়ে পড়ে এখন তার প্রস্তুতি চলছে।বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে হাটছি আর চিন্তা করছি কি রহস্য হতে পারে।চারদিক চাদের আলোয় ঝলমল করছে।হাটতে হাটতে বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে চলে এসেছি।তাই ঘুরে আবার বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি।হটাৎ পিছন থেকে কারো দৌড়ানোর আওয়াজ পেলাম।সাথে কাউকে ডাকছে।
এই যে শুনছেন? একটু দাড়ান প্লিয।(আগন্তুক)
পিছনে ফিরে থাকালাম আমাকেই ডাকছে একটু দূরে থাকায় বোঝা যাচ্ছে না ছেলে না মেয়ে।চারদিকের পরিবেশ নিরব থাকায় ডাক শুনতে পেয়েছি।এইবার দেখতে পেলাম একটা মেয়ে দৌড়ে দৌড়ে আমার দিকে আসছে।দুই হাতে দুটি ব্যাগ থাকায় সহজে দৌড়াতে পারছেনা।আমি এগিয়ে গেলাম একটু।মেয়েটি আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো।
খুব বাচা বেচে গেছি।(আগন্তুক)
কেন কি হয়েছে?(আমি)
না এই রাতে গ্রামে তো কেউ বের হয় না ভূতের ভয় হচ্ছিলো।আপনাকে দেখে একটু ভয় কমলো।(আগন্তুক)
বুঝলাম গ্রামে মানুষ রাতে বের হয় না তাহলে আপনি কোথা থেকে উদয় হলেন?(আমি)
আমি শহর থেকে আসছি।(আগন্তুক)
শহর থেকে আসছেন ভালো কথা এই রাতে আসলেন কেন আপনার যখন ভূতে ভয়।(আমি)
আমি দিনেই রওয়ানা দিয়েছিলা।(আগন্তুক)
তাহলে রাতে আসলেন কেন?(আমি)
মাঝখানে এসে ট্রেন টার কি সমস্যা হয়েছিল তার জন্য আটকে গিয়েছিলাম।(আগন্তুক)
তা এখানে যার বাড়িতে এসেছেন তাদের কাউকে বললেই তো পারতেন স্টেশনে থাকতে।(আমি)
আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।(আগন্তুক)
ওহ।(আমি)
বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি এখানে থাকেন?(আগন্তুক)
না।(আমি)
আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।(আগন্তুক)
তাহলে আর জিজ্ঞেস করলেন কেন?আর আমাকে মাঝ রাস্তা ডেকে দাড় করানোর কারণ কী?(আমি)
আমাকে একটু এগিয়ে দিন না আমি তো এখানে নতুন।(আগন্তুক)
আমিও নতুন এখানে বেড়াতে এসেছি।এখন চাঁদ দেখার জন্য বেরিয়ে ছিলাম।(আমি)
ও তাহলে ঠিক আছে আমি দেখি খুজে পাই কিনা।(আগন্তুক)
ইচ্ছা থাকলে আমার সাথে আসতে পারেন আমি যেখানে এসেছি তারা এই গ্রামের লোক চিনতে পারবে আপনি যেখানে যাবেন সেই যায়গা।(আমি)
আচ্ছা তাহলে চলুন সেখানেই যাই।একা একা রাতে খুজেও পাবো না।(আগন্তুক)
আচ্ছা আমাকে একটি ব্যাগ দিতে পারেন।(আমি)
ধন্যবাদ এই নিন আমি লাবিবা আপনি?(লাবিবা)
আমি লিমন।(আমি)
লাবিবা মেয়েটাকে নিয়ে হাটা দিলাম যারিনের নানু বাড়ির দিকে।শহরের ব্যস্ত জীবন এর চেয়ে এখান কার এই শান্ত জীবনের কোন তুলনা হয় না।যারিনের নানু বাড়িতে কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেলাম।বাড়ির সামনেই ফয়সালদের দেখতে পেলাম।এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে।
কি রে কোথায় ছিলি?(ফয়সাল)
চাঁদ দেখতে বাইরে ছিলাম।(আমি)
তোর সাথে এটা কেরে প্রেম টেম করে আবার পালিয়ে নিয়ে এসেছিস নাকি?(যারিন)
কি যে বলিস পরিচয় করিয়ে দেই ইনি হলেন লাবিবা।আর এরা হলো আমার বন্ধু।(আমি)
সবাই লাবিবার সাথে পরিচিত হয়ে নিল।কিভাবে লাবিবার সাথে দেখা হলো সেটা তাদের খুলে বললাম।
কাব্য উনি কারো বাড়ি যেতে চান তুমি দেখো তাকে চিনো কি না।আপনি নাম বলুন লাবিবা।(আমি)
আমার ভাইয়া সুমন এখানকার স্টেশন মাস্টার।(লাবিবা)
হুম চিনি তো।(কাব্য)
হুম তাহলে তুমি উনাকে একটু কষ্ট করে সুমন দের বাড়িতে পৌছে দেবে আমি তো চিনিনা।(আমি)
আচ্ছা।(কাব্য)
আমি আর জান্নাত ও সাথে যাচ্ছি।(ফয়সাল)
ঠিক আছে যা তাহলে।(আমি)
ফয়সাল,জান্নাত আর কাব্য লাবিবা কে পৌছে দিতে চলে গেল। আমি আর যারিন বাইরেই বসে রইলাম।বেশিক্ষন লাগলো না ওদের ফিরতে।সুমন এর বাসা পাশেই মনে হলো।কিছুক্ষন পর বাড়ির ভিতর থেকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাক এলো।সবাই ভিতরে চলে গেলাম।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমের দেশে বেড়াতে চলে গেলাম
সকালের স্নিগ্ধ আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেল।সকাল সকাল উটে পড়াই ভালো না হলে সকালের পরিবেশটা মিস করবো বেড়ানোর জন্যই তো এখানে আসা।সবাই উটে গেলাম একে একে সবাই ফ্রেশ হয়ে নিলাম।সবাই মিলে নাস্তাটা সেরে নিলাম।
চলো সবাই বেরিয়ে পড়ি।(কাব্য)
হুম চলো সবাই।(যারিন)
গ্রামের পরিবেশটা খুব সুন্দর হবে এই সকাল সকাল।(ফয়সাল)
হুম সবাই মিলে পরিবেশের সৌন্দর্য টা দেখে আসি।(জান্নাত)
এতো কথা না বলে চলো তো।(আমি)
সবাইকে তাড়া দিলাম বের হওয়ার জন্য সবাই বেরিয়ে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে হাটতে লাগলাম।সকালের পরিবেশটা খুবই সুন্দর।চারিদিকের প্রকৃতি দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে।
এই রকম পরিবেশ শহরে এখন পাওয়াই যায় না।(আমি)
শহরের যান্ত্রিক জীবন আর ভালো লাগে না।(ফয়সাল)
বিভিন্ন কথা বলতে বলতে সবাই হাটছি।রাস্তার পাশের বাড়ি গুলোর মধ্যে মাঝে মধ্যে দুই একটা পাকা বাড়ি দেখা যাচ্ছে।বাকি গুলো মাটির না হলে টিনের তৈরি।হটাৎ রাস্তার পাশের একটা বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ কানে আসলো।সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।
আশে পাশের কোথাও কিছু গোলমাল হয়েছে মনে হয়।(আমি)
হুম কান্নার আওয়াজ আসছে চলতো দেখে আসি।(যারিন)
আরে এটা তো সুমনের বাড়ি।(কাব্য)
তাই নাকি চলো দেখি কি হলো।(আমি)
সবাই মিলে বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম।বাড়ির সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।তাদের মধ্যেই একজন কান্না করতেছে বাকিদের মুখ দেখে মনে হলো সবাই খুব চিন্তিত।হটাৎ দেখলাম পাশে লাবিবা দাঁড়িয়ে আছে।লাবিবার দিকে এগিয়ে গেলাম সবাই।লাবিবার মুখে চিন্তার ছাপ দেখা যাচ্ছে।
লাবিবা এই দিকে আসুন।(আমি)
আরে আপনি এখানে?(লাবিবা)
এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম কান্নার শব্দ শুনে আসলাম এখানে কি হয়েছে?(আমি)
ভাইয়াকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।(লাবিবা)
ভাইয়া মানে সুমন?(যারিন)
হুম।(লাবিবা)
কখন থেকে?(আমি)
কাল রাত থেকে।(লাবিবা)
একটু খুলে বলুন তো ব্যাপারটা।(আমি)
কালকে রাত ১০ টার দিকে তো আমি আসলাম আমি আসার পর ভাইয়া কোন একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলো তারপর আর ফিরে আসেনি।(লাবিবা)
পুলিশে খবর দিয়েছেন?(কাব্য)
হুম পুলিশ এখনো আসেনি।(লাবিবা)
কথা শেষ হওয়ার পর বাড়ির বাইরে গাড়ির শব্দ শোনা গেল।কয়েকজন পুলিশ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলেন।একজন কে দেখে তাদের বস মনে হলো।সবাইকে জিজ্ঞাসা বাদ শুরু করলেন।জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হওয়ার পর আমি এগিয়ে গেলাম।
এক্সকিউজ মি?(আমি)
হুম বলুন কিছু বলবেন?(পুলিশ)
আমি লিমন এই হারিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানতে চাই।(আমি)
আমি ইমন আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না?(ইমন)
আমি এখানে বেড়াতে এসেছি।আপনার কি মনে হয় সুমন কি ভাবে হারিয়ে গেছেন বা কেউ কিডন্যাপ করেছে?(আমি)
ওহ আপনি মনে হয় জানেন না এই নিয়ে এখানে ১৫ জন মানুষ নিখোজ।(ইমন)
কি?সত্যি?(আমি)
হুম আর সবাই একই ভাবে হারিয়ে গেছে কাউকে এখন পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায়নি।(ইমন)
সবাই একই ভাবে স্ট্রেঞ্জ। কোন কিডন্যাপার দল কি এসব করছে বলে আপনারা সন্দেহ করেন?(আমি)
না এখানে কিডন্যাপার কোন দলের হাত আছে বলে মনে হচ্ছে না তবে…..(ইমন)
তবে কি?(আমি)
নিখোজ হওয়ার আগের দিন বা তার ২ দিন আগে তাদের একই সময় দুই যায়গায় দেখা গিয়েছে।তবে সুমন সাহেবের এরকম কোন খবর পাইনি।(ইমন)
সুমনকেও একই সাথে দুই যায়গায় দেখা গিয়েছে।(আমি)
কি বলেন?(ইমন)
গতকাল যখন আসলাম তখন স্টেশনে সুমনের সাথে দেখা হয় কাব্য সেখানে যাওয়ার পর তার সাথে কথা বলে দেখি সুমন উদাও। বিকেলে আবার তার সাথে একটা পাহাড়ে দেখা হয় তখন সে বললো সে নাকি স্টেশনে যায়নি।(আমি)
ওহ আচ্ছা তাহলে আসি এখন বাই।(ইমন)
বাই।(আমি)
পুলিশের সাথে কথা বলে সবার কাছে ফিরে এলাম।
কি বললো পুলিশ?(লাবিবা)
পুলিশ বললো তারা খুজছে।তাছাড়া কাব্য তুমি তো বললে না এখানে এই নিয়ে ১৫ জন নিখোজ?(আমি)
ইয়ে মানে…দরকার পড়েনি তাই বলিনি।(কাব্য)
কি বলিস তুই ১৫ জন নিখোজ?(যারিন)
হুম সত্যি কথা।(আমি)
রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি লিমন।(ফয়সাল)
হুম এখানে কিছু একটা সমস্যা আছে।(আমি)
এখন তাহলে আমরা যাই লাবিবা।(আমি)
হুম বাই।(লাবিবা)
বাই।(সবাই)
লাবিবা কে বিদায় দিয়ে সবাই যারিনের নানু বাড়ির দিকে হাটা দিলাম।১৫ জন নিখোজ আর সবাই একই ভাবে।আবার সবাই নিখোজ হওয়ার আগে সবাইকে দুই যায়গায় একই সময় কিভাবে দেখা যেতে পারে?গতকাল রাতে আমাকেও দুইবার দেখেছে ওরা আমাকেও কি তাহলে নিখোজ হবো? অনেক বড় রহস্য আছে এই গ্রামে।এই রহস্য ভেদ আমাকে করতেই হবে।সবাই আগে আগে হাটছে ফয়সাল কে ইশারা করে ডাকলাম সবার পিছনে।
কাব্য আর যারিনের নানু বাড়ির সবাই আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছে।আমাদের বলতে চাচ্ছে না সেই কথা গুলো।আমাদের সেই কথা গুলো জানতে হবে।(আমি)
তা কিভাবে কি করবি?(ফয়সাল)
দেখি কি করা যায়।(আমি)
অনেকদিন পর আবার রহস্য পেলাম।(ফয়সাল)
হুম। (আমি)
যারিনের নানা গ্রামের বেশি প্রবীন লোকদের একজন।সবাই সমস্যা হলে যখন মিটিং করে তখন তিনি নিশ্চই ছিলেন।থাকলে নিশ্চই তিনি সব জানেন থাকেই জিজ্ঞাস করতে হবে।বেড়ানোর সাথে সাথে এডবেঞ্চারও হয়ে যাবে।কিছুক্ষন পরই যারিনের নানু বাড়িতে পৌছে গেলাম।সবাইকে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যেতে বললেন যারিনের নানু।নাস্তা করে বের হওয়ায় সবাই খুব ক্ষুদার্ত।খাবার টেবিলে কথা টা বলা যেতে পারে।ফ্রেশ হয়ে সবাই খাবার খেতে চলে গেলাম।কথাটি তখন বললাম না।ভাবলাম খাওয়া শেষ করে কথাটি বলবো।সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রুমে এলাম।
চলো সবাই যারিনের নানার সাথে কিছু কথা আছে।(আমি)
নানার সাথে তোর আবার কিসের কথা?(যারিন)
আচ্ছা চলো সবাই গেলে তো দেখতে পাবো।(ফয়সাল)
হুম চলো আগে।(আমি)
সবাইকে নিয়ে নানার ঘরে গেলাম।
ভিতরে আসবো নানা।(যারিন)
আরে যারিন তোরা সব একসাথে আয় আয়।(নানা)
সব কিছু ঘুরে দেখা হচ্ছে তো? কাব্য ওদের সব কিছু দেখাচ্ছিস তো?(নানা)
হুম দাদু সব দেখাচ্ছি।(কাব্য)
ওই সব নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না কাব্য ঠিক আমাদের সব দেখাবে।আচ্ছা নানা গ্রাম থেকে নাকি ১৫ জন মানুষ নিখোজ?(আমি)
হুম কিন্তু ১৫ নয় ১৪।(নানা)
আজ সকালে স্টেশন মাস্টার সুমন ও হারিয়ে গেছে।(আমি)
তাই নাকি?(নানা)
হুম আপনার কি মনে হয় এসব কারা করছে?(আমি)
কি জানি পুলিশ ও খুজে পাচ্ছে না।(নানা)
হুম আজ কথা হয়েছিল পুলিশের সাথে।(আমি)
ওহ আচ্ছা,,তোমরা কথা বলো আমার এখন একটু কাজ আছে আমি বাইরে যাচ্ছি।(নানা)
নানা কথা গুলো বলতে চাচ্ছেন না তাই বেরিয়ে গেলেন কি এমন কথা যা আমাদের বলতে পারছেন না? নাকি কেউ ভয় দেখিয়ে বলতে দিচ্ছে না? আমাকে সাবধান হতে হবে আমাকে এরপর টার্গেট করা হচ্ছে মনে হয়।সবার মতো আমাকেও দুইবার দেখা গেছে।
খাবার খেয়ে সবাই ভাত ঘুম দিচ্ছে।আমার এই সময় ঘুম আসবে না তাই বাড়ি থেকে একা একাই বেরিয়ে পড়লাম।গ্রামে প্রথম আসার দিন একটা নদী দেখেছিলাম।সেটার উদ্দেশ্যে হাটা দিলাম।বেশি সময় লাগলো না আসতে।বেশি বড় নদী না,,,কোন উপনদী হবে হয়তো।নদীতে নৌকা নেই বললেই চলে।দু একটা জেলেদের নৌকা দেখা যাচ্ছে।নদীর এদিকটায় লোকজনের চলাচল কম।নদীর পাশ দিয়ে একটা রাস্তা বয়ে গেছে।সেটা দিয়ে হাটতে শুরু করলাম।একটু এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো পড়লো রাস্তার পাশে বড় একটা মন্দির।এটার কথাই মনে হয় কাব্য বলেছিলো।আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম মন্দির টার দিকে।অনেক পুরনো মন্দির দেখেই বোঝা যাচ্ছে।মন্দিরে ঢুকার পথে একটা বড় গেট। গেটে তালা ঝুলে আছে।এখন এই মন্দিরটা আর ব্যবহার হয় না দেখে বোঝা যাচ্ছে।তালাটা খোলার চেষ্টা করলাম পারলাম না।পুরনো হলেও খুব শক্ত তাই আর চেষ্টা না করে ফিরে আসার জন্য ঘুরে দাড়ালাম।ফিরতেই পিছনে একটা শব্দ শুনলাম।কিছু খুলে যাওয়ার মতো।আবার ঘুরে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম একি! গেট টা খুলে গেছে আপনা আপনি।তালা টা গেটেই আছে তাহলে কি করে খুললো? আমি তো এতক্ষন চেষ্টা করলাম খুলতে পারলাম না।তাহলে এটা কে খুললো? আস্তে আস্তে মন্দিরের ভিতর পা রাখলাম।পা টা রাখতেই একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল।মন্দিরের ভিতরের দিকটা জংগলের মতো হয়ে আছে অনেক দিন হয়তো কেউ পরিষ্কার করে না।মন্দিরের বাইরে কিছু মূর্তি রাখা সেগুলো লতা পাতায় ভরে আছে।মন্দিরে ঢুকার পর থেকে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ আমাকে আড়াল থেকে দেখছে।মন্দিরের ভিতরে কি আছে দেখার জন্য এগিয়ে গেলাম।মন্দিরের দরজায় দাড়াতেই আপনা আপনি দরজা খুলে গেল।কি সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।ভিতরে বেশি কিছুই নেই মূর্তি আর কিছু পুরনো ফুলদানি ছাড়া।মূর্তি গুলো তে ধূলোর স্তূপ পড়ে গেছে।হটাৎ একটা শব্দ এলো পিছন থেকে।তাড়াতাড়ি পিছনে ফিরলাম কিছুই নেই।আমি মেঝের দিকে তাকালাম চমকে গেলাম।ধূলোর উপর আমার পায়ের ছাপ ছাড়াও রক্তাত কিছু পায়ের ছাপ দেখতে পেলাম।পায়ের ছাপ গুলো পুরনো নয় একটু আগেই মনে হলো কেউ হেটে গেছে এদিক দিয়ে।কিন্তু আমি তো কাউকে দেখলাম না।পিছনে কেউ হেসে উটলো আমি জিজ্ঞেস করলাম…..
,
কে সামনে এসো পিছন থেকে ভয় দেখাচ্ছো কেন?(আমি)
,
আবারো হাসির শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে পেলাম না।আমি মন্দিরের আরেক টু ভিতরে গেলাম।মন্দিরের ভিতরের দিকটা অন্ধকার।হটাৎ একটা ছায়া চোখের সামনে ভেসে উটলো।
কে তুমি?(আমি)
আমি কে সেটা জানার দরকার নেই।(ছায়া)
হটাৎ মনে হলো আমি বিপদে নেই তো? এভাবে একা একা আসাটা কি ঠিক হয়েছে? ১৫ নিখোজ সংখ্যা এবার কি ১৬ জন হয়ে যাবে।
ঠিক ধরেছ।(ছায়া)
কথাটি বললো ছায়াটি। আমি থাকালাম ছায়াটার দিকে ছায়াটি ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে আমার দিকে আমি সরে গেলাম।ছায়াটি এবার পাশে থাকা একটা মাটির ফুলদানি আমার দিকে ছুড়ে মারলো লাফ দিয়ে সরে গেলাম।এবার হাতের ইশারায় শূন্যে তুলে ফেললো দেয়ালে ছুড়ে মারলো পায়ে খুব আঘাত পেলাম।আবার শূন্যে তুলে ছেড়ে দিল এবার মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেলাম।প্রচন্ড আঘাতের কারণে জ্ঞান হারালাম।
,
,
কতক্ষন অজ্ঞান ছিলাম জানিনা।জ্ঞান ফিরেছে মাত্র।কোথায় আছি কিছুই জানি না।ঘুটঘুটে অন্ধাকার চারিদিকে।কি করে এখানে আসলাম।মাথার পিছনে হাত দিলাম মাথাটা ফুলে আছে।চিন্তা করতে গিয়েও পারছি না ব্যাথার কারণে।একটু শান্ত হয়ে বসলাম আস্তে আস্তে মনে পড়লো আমি তো মন্দিরে ছিলাম।একটা ছায়া আমাকে আক্রমন করে তারপর অজ্ঞান হই।কোথায় আছি কে জানে।উটে দাড়ানোর চেষ্টা করলাম।পারলাম না পায়ের ব্যাথার কারণে।বসে পড়লাম আবার।তাহলে কি এই ছায়াটা সবাইকে নিখোজ করে দিচ্ছে? এই ছায়াটা কি ভূত? নাকি আত্মা? নাকি অশরিরী? অনেক প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।পাশে কোথাও কারো গোঙনোর আওয়াজ পেলাম।আস্তে আস্তে উটে দাড়ালাম পায়ে ব্যাথা নিয়ে।হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।জিজ্ঞাস করলাম
কে? (আমি)
আমার কথা শোনে গোঙানির আওয়াজ বেড়ে গেল।অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছি না ভালো মতো।আস্তে আস্তে গোঙানোর আওয়াজ কমে গেল।এখান থেকে কিভাবে বের হবো কিছুই বুঝতে পারছি না।হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে দেয়াল এর কাছে পৌছালাম।দেয়াল ধরে ধরে এগিয়ে যাচ্ছি হটাৎ হাতে কাঠের কিছুর স্পর্শ পেলাম।আবার ফিরে এলাম সেই যায়গায়।হাত দিয়ে দেখলাম কোন দরজা মনে হচ্ছে।হুম দরজাই তো।এটা দিয়ে বের হওয়া যাবে। ধাক্কাতে শুরু করলাম বাইরে থেকে বন্ধ মনে হয়।শক্তি ক্রমশ কমে যাচ্ছে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে শরীর।আমাকে থেমে গেলে চলবে না।তাহলে এখানেই মরতে হবে।একটু জোরে ধাক্কা দিতেই ঝনঝন করে আওয়াজ হলো বাইতে থেকে।মনে হলো তালা খুলে পড়েছে।একটু খুশি হলাম আবার ধাক্কা দিলাম খুলে গেল দরজা।দরজা দিয়ে বের হয়ে আরেকটা রুমে চলে আসলাম।পিছনে ঘুরে আগের রুম,দরজা কিছুরই উপস্থিতি পেলাম না।পিছনে একটা দেয়াল কি হচ্ছে এসব আবার আরেকটা রুমের ভিতর তবে এখানে একটু আলো আসছে জানালা দিয়ে।দরজা দেখা যাচ্ছে সেদিকে এগিয়ে গেলাম।এই দরজা খুলতে কোন সমস্যা হলো না।এই দরজা খুলে কিছুটা আশার আলো দেখতে পেলাম।একটা লম্বা রাস্তার মতো চলে গেছে সামনে তার চারিদিকে অনেক গুলো রুম।আমি কোন বড় বাড়ির ভিতরে নিশ্চই না হলে এতোগুলো রুম থাকার কথা নয়।একে এই অচেনা বড় বাড়িতে একা তারপর আবার পায়ের ব্যাথা।পায়ের ব্যাথা নিয়ে হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে এই লম্বা বারান্দা দিয়ে হাটা দিলাম। খুব সাবধান থাকতে হবে কোথায় কি বিপদ আছে কে জানে।সব রুমের দরজার পাশে একটা করে মশাল জ্বালিয়ে রাখা।একটা হাতে তুলে নিলাম। এগিয়ে যাচ্ছি একটা রুমের পাশে যেতেই কারো শব্দ শুনলাম।কান খাড়া হয়ে গেল রুমের পাশে গিয়ে দাড়ালাম ভিতর থেকে কিছু অদ্ভুত ভাষার শব্দ শুনলাম।রুমের দরজা টা হাল্কা খুলে চোখ রাখলাম।ভিতরের দৃশ্য দেখেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল।কালো কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে।তার পাশেই একজন মানুষ কুরবানির পশুর মতো পড়ে আছে।গলায় ছুরির দাগ স্পষ্ট।একটু আগেই হয়তো শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।বুঝলাম এখানে থাকলে আমার বিপদ আসন্ন তাড়াতাড়ি পা চালালাম পায়ের ব্যাথার কারণে দ্রুত হাটতেও পারছি না।বারান্দা টা একটা সিড়িতে গিয়ে শেষ হলো।সিড়ি দিয়ে নেমে গেলাম তাড়াতাড়ি।হাতের মশাল টা বেশ কাজে দিচ্ছে বাড়ির সদর দরজায় পৌছে গেছি।অনেক বড় দরজা তবে ভাগ্য ভালো খুলতে বেশি বেগ পেতে হলো না।খুলে বাইরে বের হলাম সন্ধ্যার কাছাকাছি মনে হয়।বেশি আলো নেই বাইরে।নিজেকে জংগলের ভিতর আবিষ্কার করলাম।কোনদিকে গেলে রাস্তা পাবো চিন্তা করে পাচ্ছি না।এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও হবে না তাই সোজা সামনের দিকে চলতে লাগলাম।সামনের দিকে একটু জংগল কম মনে হলো তাহলে কি ঠিক দিকেই যাচ্ছি? পায়ের ব্যাথা আর সারাদিন কিছু না খাওয়ায় শরীর টা একেবারে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।দিনের আলো ক্রমশ কমে আসছে।তার আগেই বের হতে হবে এখান থেকে না হলে অন্ধকারে আর বের হতে পারবো না।পায়ের আর মাথার ব্যাথা আরও বাড়ছে তাড়াতাড়ি এই জংগল থেকে বের হতে হবে।জংগলের লতা-পাতা আর ঝোপ-ঝাড়ে হাতে আচড় লেগে কেটেও যাচ্ছে।এসবের মধ্যে পায়ে ব্যাথা নিয়ে চলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।কিছু একটার গরগর আওয়াজে পিছনে ফিরে তাকালাম।কালো কুচকুচে একটা লোমশ জন্তু দাঁড়িয়ে আছে।আমার দিকে থাকিয়ে গরগর আওয়াজ করছে।এটা কোন সাধারণ জন্তু নয় তাহলে এটা কি।জন্তু টা কাছে এসেও যেন আসতে পারছে না।হটাৎ খেয়াল হলো আমার হাতে তো মশাল আছে।মশাল টার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে জন্তুটা।মশালের কারণে হয়তো কাছে আসতে ভয় পাচ্ছে।হটাৎ জন্তুটা মন্দিরের সেই ছায়া রূপান্তরিত হলো।
পালিয়ে যাবে কোথায়?কাউকে ছাড়বো না আমি কাউকে না।তোমাকে ছেড়ে দিলাম দেখি কিভাবে আটকাতে পারো আমাকে।হা হা হা(ছায়া)
কথাট বলেই মিলিয়ে গেল।দিনের আলো আর বেশিক্ষন থাকবে না।শরীর আর শক্তি অবশিষ্ট নেই হাটতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলাম।মাথায় আবার আঘাত লাগলো।চোখের সামনে সব ঝাপসা দেখছি।জ্ঞান হারালাম।অজ্ঞান হবার আগে একটা ছায়া মূর্তি চোখের সামনে ভেসে উটলো।
জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে একটা ঘরের ভিতর আবিষ্কার করলাম।বিছানায় শুয়ে আছি অন্ধকারের জন্য ভালো ভাবে বোঝা যাচ্ছে না কিছু আমার মাথা আর পায়ে ব্যান্ডেজ করা দেখলাম।জ্ঞান হারানোর আগে চোখের সামনে একটা ছায়া মূর্তি দেখেছিলাম।সেটা কি ওই ছায়াটা।সেটা হলে তো এই ভাবে বিছানায় শুইয়ে রাখতো না আর ক্ষত স্থানে ব্যান্ডেজও দিতো না। তাহলে কোথায় আছি এখন? নিরাপদে আছি তো?নাকি এখানেও কোন বিপদ বসে আছে আমার জন্য।এসব ভাবছি তখনি ঘরে কেউ একজন প্রবেশ করলো।হাতে একটা হারিকেন।
আপনার জ্ঞান এসে গেছে?(আগন্তুক)
হুম আমি কোথায়?আপনি কে?(আমি)
আপনি আমার বাড়িতে আছেন আমি রাকিব।(রাকিব)
ওহ আপনি আমাকে পেলেন কোথায়?(আমি)
আমি জংগলে কাঠ কাটতে যাই প্রতিদিন।আজ আসার পথে আপনাকে দূর থেকে দেখতে পেলাম তারপর কাছে যাওয়ার পর আপনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন।খেয়াল করলাম আপনি অসুস্থ তাই আপনাকে এখানে নিয়ে এলাম।গরিবের ঘর থাকতে কষ্ট হবে।(রাকিব)
এভাবে বলবেন না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।(আমি)
ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। তবে আপনি ওই পুরনো রাজবাড়ির দিকে গিয়েছিলেন কেন?(রাকিব)
আমি কোথায় গিয়েছিলাম সেটাই জানি না।(আমি)
কি! আপনি গেছেন আপনি জানেন না? (রাকিব)
অনেক বড় গল্প পরে বলবো আমাকে এখন যেতে হবে।(আমি)
আপনি কোথায় যাবেন?(রাকিব)
কাব্য কে চিনেন আপনি?আমি ওখানেই এসেছি।(আমি)
ওহ চিনবো না কেন।তবে এখন আপনি অসুস্থ এই অবস্থায় যাওয়া ঠিক হবে না।তাছাড়া রাত অনেক হয়ে গেছে।(রাকিব)
ভেবে দেখলাম ঠিকই বলছে এখানে বিশ্রাম নিয়ে কাল গেলেই তো হবে।তাই থাকবো বলেই ঠিক করলাম……
আছা তাহলে সকালেই যাবো এখন সময় কতো?(আমি)
এখান রাত ১২ টা হয়ে গেছে।(রাকিব)
ওহ আচ্ছা।(আমি)
সেই সকালে খেয়েছি আর এখনো পেটে কিছুই পড়েনি খিদে পাচ্ছা খুব।কিন্তু কি করে যে বলবো।
আপনার মনে হয় খিদে পেয়েছে দাড়ান আমি খাবার আনতেছি।(রাকিব)
আচ্ছা।(আমি)
কিছুক্ষন পরই রাকিব খাবার নিয়ে এলো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।(আমি)
ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই।(রাকিব)
রাকিবকে কাছ থেকে দেখলাম।গায়ের রঙ শ্যামলা।দেখে আমার সমবয়সী মনে হলো। খাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম।রাকিব পাশেই একটা বিছানায় শুয়ে পড়লো।সামনে আরো অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।পায়ের আর মাথার ব্যাথা অনেক টা কমে গেছে।রাকিব কি ঔষধ দিলো কে জানে।ভালোই কাজ করছে।যত তাড়াতাড়ি ভালো হয় ক্ষত তত লাভ।তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি সারাদিন অনেক ধকল গেছে শরীরের উপর দিয়ে তাই ঘুমিয়ে পড়াই আমার জন্য ভালো।ঘুমিয়ে পড়লাম………..।
সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙলো।রাকিব কে পাশের বিছানায় দেখতে পেলাম না।আস্তে আস্তে উটে বসলাম।পায়ে ব্যাথা টা কমে গেছে অনেক কমে গেছে হাল্কা ব্যাথা অনুভব করছি।মাথা ব্যাথা টা একটু আছে।বিছানা থেকে নেমে আসলাম।দরজা দিয়ে বাইরে বের হলাম।রাকিবকে দেখলাম দূরে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখ এগিয়ে আসলো।
ঘুম কেমন হলো আপনার?(রাকিব)
হুম ভালোই হলো আমি তাহলে এখন যাই।কোনদিক দিয়ে যাবো?(আমি)
চলুন আমি পৌছে দিচ্ছি।(রাকিব)
আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না।(আমি)
আরে কোন কষ্ট না আপনি চলুন তো।(রাকিব)
রাকিবের পিছু পিছু হাটা দিলাম।রাকিব হাটছে আর নানা কথা বলছে এই গ্রাম সম্পর্কে,গ্রামের মানুষ সম্পর্কে ইত্যাদি ইত্যাদি।কথা বলছি আর হাটছি পায়ের ব্যাথা টা কমে যাওয়ায় হাটতে সুবিধা হচ্ছে।
এই গ্রামের মানুষ গুলো খুবই ভালো।সবাই কত মিলে মিশে থাকে।কিন্তু …… (রাকিব)
কিন্তু কি?(আমি)
এই যে কোন শয়তানের নজর পড়েছে এই গ্রামের দিকে একে একে ১৫ টা জ্বল জ্যান্ত মানুষ উদাও হয়ে গেল। আমার ভাইটাও হারিয়ে গেছে।(রাকিব)
মন খারাপ করো না কপাল ভালো থাকলে সবাই বেচেই ফিরে আসবে।(আমি)
তাই যেন হয়।(রাকিব)
আর কতক্ষন লাগবে? (আমি)
আর বেশি সময় লাগবে না এইতো এসে গেছি প্রায়।(আমি)
আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
রাকিব কে ফলো করে আবার হাটতে শুরু করলাম।৫ মিনিটের ভিতরেই পৌছে গেলাম।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই সবাইকে বাড়ির সামনেই দেখতে পেলাম।আমাকে দেখেই দৌড়ে এলো যারিনরা।
লিমন তুই ঠিক আছিস তো?কোথায় গিয়েছিলি।(যারিন)
একি তোর মাথায় ব্যান্ডেজ কেন কি হয়েছে?(ফয়সাল)
আরে এতো ব্যস্ত হস না আমি ঠিক আছি এই একটু কেটে গেছিলো তাই ব্যান্ডেজ করেছি।(আমি)
কোথায় ছিলি?কাল হটাৎ কোথায় চলে গেলি? সারাদিন কই ছিলি?(যারিন)
কোথায় গিয়েছিলেন।(কাব্য)
তুমি ঠিক আছো তো?(নানা)
আমি ঠিক আছি তবে এখানে অনেক কিছুই ঠিক নেই।(আমি)
কি ঠিক নেই? চল ঘরে চল পরে সব শুনবো।(ফয়সাল)
আরে দাড়া রাকিব কে বিদায় দেই।(আমি)
আরে রাকিব তুই এখানে?(কাব্য)
আরে উনাকে আমিই নিয়ে এলাম।(রাকিব)
ওহ খেয়াল করি নি তুই কোথায় পেলি লিমন কে?(কাব্য)
কাঠ নিয়ে ফিরার সময় জংগলে পেয়েছি।দেখে মনে হলো পুরনো রাজবাড়ির দিক থেকে আসছিলেন।(রাকিব)
কি! পুরনো রাজবাড়িতে তুমি গিয়েছিলে?(নানা)
সে অনেক কথা আগে ভিতরে চলুন সব বলবো।(আমি)
আচ্ছা তাহলে চল।(নানা)
রাকিবকে বিদায় দিয়ে সবাই ভিতরে ঢুকে পড়লাম।সবাই একের পর এক প্রশ্ন শুরু করলো।
এবার বল কি করে জংগলে গেলি? (যারিন)
আর সারাদিন কি ওখানেই ছিলি?(যারিন)
হুম বলো এবার লিমন।(নানা)
গতকাল সকালে যখন খাবার খাবার পর সবাই ঘুমাচ্ছিলেন।তখন আমার ঘুম আসছিলো না তাই আমি ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।প্রথম দিন আসার সময় একটা নদী দেখেছিলাম ওইটা দেখতে যাই।নদীর পাশের রাস্তা দিয়ে হাটার সময় পাশে থাকা পুরনো মন্দিরটা দেখতে পাই।ভাবলাম ওটা থেকে ঘুরে আসি তাই ভিতরে গেলাম।(আমি)
তারপর?(কাব্য)
পরের ঘটনা সবাইকে সংক্ষেপে খুলে বললাম সবাই একটু অবাক হলো।
নানা এবার আপনাকে সব কিছু বলতে হবে।না হলে কয়েকজন নিরীহ মানুষ হারিয়ে যাবে আবার আর হয়তো ফিরে আসবে না।(আমি)
কি বলবো?(নানা)
আপনি কিছু একটা জানেন কাব্য আপনি আমাদের কাছ থেকে লুকাচ্ছিলেন এখন বলুন।(আমি)
আমি নিশ্চিত ছিলাম না এতোদিন তবে আজ তোমার কথা শোনে নিশ্চিত হলাম।এটা আত্মার কাজ আগে সন্দেহ হয়েছিল তবে কে সেটা এখন নিশ্চিত হলাম।(নানা)
হুম নানা বলেন।(যারিন)
তাহলে আর সময় নষ্ট করবেন না প্লিয বলুন।(আমি)
নানা বলতে শুরু করলেন আজ থেকে ৫ বছর আগের কথা…
৫ বছর আগের কথা এখানে সিফাত নামে একটা ছেলে ছিলো।বাবা মার একমাত্র সন্তান বাবা মা খুব ভালোবাসতো ছেলেকে।গ্রামের সবাইও তাকে ভালোবাসতো।তোমাদের সমবয়সী ছিল খুব ভালো ছেলে ছিলো।হটাৎ একদিন মতিভ্রম হলো যাদু শিখার জন্য উটে পড়ে লাগলো।সবাই অনেক বুঝালাম কোন কাজ হলো না শেষে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল যাদুকর হওয়ার জন্য।(নানা)
তারপর কি হলো?(আমি)
বলুন নানা।(ফয়সাল)
নানা আবার বলতে শুরু করলেন..
ঘর ছেড়ে যাওয়ার ২ বছর পর আবার ফিরে আসে এই গ্রামে।সিফাত ফিরে আসার পর থেকেই শুরু হলো নতুন সমস্যা এখন যেভাবে মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেভাবেই মানুষ হারিয়ে যেতে লাগলো।তবে সেটা শুধু পূর্ণিমার রাতের আগে।আমরা ভেবেছিলা সিফাত যাদু শিখার ভূত মনে হয় মাথা থেকে গেছে।কিন্তু তা সম্পূর্ন ভূল।একদিন কয়েকজন লোক রাত করে বাজার থেকে ফিরছিলো।তাদের সাথে আমিও ছিলাম সেদিন।সেদিন পূর্ণিমার রাত ছিলো।রাস্তা দিয়ে ফিরার সময় ছিলো আমরা কারো চিৎকার শুনতে পায়। প্রথমে সবাই ভয় পেয়ে যাই পরে সাহস করে শব্দের উৎসের দিকে যাই।আমরা সেই যায়গায় গিয়ে দেখতে পায় সিফাত দাঁড়িয়ে আছে চাদের দিকে মুখ করে তার হাতে একটা ছুরি। পাশেই পড়ে আছে একটা লোক।লোকটার গলায় ছুরির দাগ স্পষ্ট দেখতে পেলাম।মনে হলো সিফাত লোকটার গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করেছে।লোকটা আমাদের গ্রামেরই।সিফাত চাদের দিকে থাকিয়ে বলতে লাগলো নিয়ে যাও একে।আমরা খেয়াল করলাম চাদের দিক থেকে পাখির মতো কিছু একটা এসে সিফাতে পাশে থাকা লোকটার দেহ নিয়ে গেলো।সাথে সাথে সিফাতের শরীরে একটা আলোর ঝলকানি দেখতে পেলাম।সেদিন আমরা বুঝতে পারলাম মানুষ হারিয়ে যায় কিভাবে।সিফাত কালো যাদু করে এটাও বুঝলাম।পরের দিন সকালে গ্রামের সব বড়রা মিলে বুঝালাম থাকে।সিফাতের বাবা-মা সবাই বুঝালাম।কিছুই বুঝলো না।সে বললো সে তার লক্ষ্যে খুব কাছে পৌছে গেছে।আমরা বুঝলাম না কিসের রহস্য।পরের পূর্ণিমার আগের দিন সিফাত আবার একটা লোককে ধরতে গেলো গ্রামের সবাই প্রস্তুত ছিলাম।থাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেও পারলাম না গায়ে যেন অশুরের শক্তি এসে গেছে।বাধ্য হয়ে গুলি করতে হলো আমাদের সিফাত ওখানেই মারা গেল।মরার আগে একটা কথা বলে গেছিলো সে আবার ফিরবে তার লক্ষ্য পূরন করতে।(নানা)
তাহলে লিমন যে ছায়া মানে আত্মার কথা বলেছিলো ওটা সিফাতের আত্মা?(যারিন)
আমার তাই মনে হচ্ছে।কিন্তু এভাবে ৫ বছর পর আবার ফিরবে বুঝতে পারিনি।(নানা)
হুম এটাই হলো মেইন কথা এতো দিন ফিরলো না কেন?(আমি)
তোমাকে ও ছেড়েই বা দিলো কেন?(নানা)
আমাকে ছেড়ে দেওয়ার আগে বলেছে কাউকে ছাড়বে না সে এবং আমি চেষ্টা করেও তাকে আটকাতে পারবো না।(আমি)
এখন ওকে থামাবো কি করে?(নানা)
সবাই মিলে খুব তাড়াতাড়ি ওকে থামাতে হবে না হলে আরও নিরঅপরাধ মানুষের প্রাণ যাবে।(আমি)
কি করবো আমরা?(ফয়সাল)
আচ্ছা নানা এখানে কোন কবিরাজ বা বড় মৌলানা নেই?(আমি)
আছে একজন কবিরাজ কিন্তু কেন?(নানা)
আগে তার কাছে যেতে হবে জানতে হবে কিভাবে আটকানো যাবে সিফাত কে।(আমি)
তাহলে এখনি যাবো আমরা?(জান্নাত)
হুম।(আমি)
তার আগে লিমন কিছু খেয়ে নিও কাল থেকে তো ঠিকমতো খাওনি।কাব্য তোমাদের নিয়ে যাবে।(নানা)
আচ্ছা নানা।(আমি)
সবাই নানার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।সকাল থেকে কিছু খাইনি তাই খেয়ে নিলাম আমি।তারপর কাব্যকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সবাই।
হেটে যেতে সময় লাগবে একটু দাড়াও সবাই একটা ভ্যান নিয়ে আসি।(কাব্য)
বেশি দূরে?(আমি)
না তবে গ্রামের শেষের দিকে।(কাব্য)
ওহ আচ্ছা তাহলে ভ্যান নিয়ে এসো।(আমি)
কাব্য ভ্যান আনতে চলে গেলো।ফয়সাল জিজ্ঞাস করলো..
কাল একা একা গেলি কেন বাইরে আমাদের বললেই পারতি।(ফয়সাল)
হুম একা একা অপরিচিত যায়গায় বের হলি কেন? আর জানতি যখন সবার মতো তোকেও দুইবার দেখা গেছে।(যারিন)
আরে এতো কিছু চিন্তা করে বের হয়েছিলাম নাকি।আর ফয়সাল তুই তো উলটে পালটে ঘুমাচ্ছিলি।(আমি)
তখন খুব ঘুম পাচ্ছিল।(ফয়সাল)
বাঙালিদের অভ্যাস তো খাবার খেয়ে ভাত ঘুম দেওয়া বিশেষ করে বাঙালি পেটুক দের।তুই তো তাদেরই একজন।(আমি)
আমি পেটুক?(ফয়সাল)
কিছু বলতে যাবো তার আগেই কাব্য ভ্যান নিয়ে চলে এলো..
সবাই উটে পড়ো।(কাব্য)
সবাই উটে বসলাম চালক চালাতে শুরু করলো।আমার মাথায় ৫ বছর আগের মানুষ হারিয়ে যাওয়া আর এখনকার মানুষ হারিয়ে যাওয়া এর কোন মিল আছে কিনা খোজে চললাম।হটাৎ একটা মনে হলো তাড়াতাড়ি সবাইকে জিজ্ঞাস করলাম।
কেউ কি জানো কাল পূর্ণিমা ছিলো নাকি?(আমি)
পূর্ণিমা দিয়ে কি করবি তুই?(ফয়সাল)
আগে বল জানিস কি না?(আমি)
হুম কাল পূর্ণিমা ছিলো।(কাব্য)
কি করবি এটা দিয়ে?(যারিন)
২+২=৪ মিলিয়েছি।(আমি)
কি?(ফয়সাল)
সিফাত তার আগের লক্ষ্য পূরন করার জন্যই ফিরে এসেছে।(আমি)
ওহ তাই বল।(ফয়সাল)
কথা বলতে বলতে পৌছে গেলাম।কবিরাজ গ্রামের একদম শেষের দিকে থাকেন।কাব্য গিয়ে একটা লোকের সাথে কথা বললো সে আমাদের বসতে বলে ভিতরে গেল। বাড়ির বাইরে বসার যায়গা ছিলো আমরা সেখানে বসে পড়লাম।কিছুক্ষন পর লোকটি এসে বললো যে কোন একজন ভিতরে যেতে পারবো।সবার সাথে কথা বলে আমি যাবো ঠিক করলাম।লোকটা আমাকে ভিতরে দিয়ে চলে গেলো।ছোট খাট একটা ঘর।ঘরের চারিদিকে কি সব হাবিজাবি জিনিস রাখা।সোজা গিয়ে কবিরাজের সামনে দাড়ালাম।চোখ বন্ধ করে বসে আছেন একবার চোখ খুলে ইশারায় বসতে বলে আবার চোখ বন্ধ করে ফেললেন।আমি চুপচাপ বসে রইলাম।একটু পর কবিরাজ চোখ খুললেন।
তোমার সমস্যার সমাধান একটাই আছে।(কবিরাজ)
আপনি আমার সমস্যার কথা জানেন?(আমি)
হুম।(কবিরাজ)
কি উপায় বলুন?(আমি)
তোমাকে সিফাতের লাশটাকে কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে তবে এই কাজে সিফাতের আত্মা তোমাকে অনেক বাধা দিবে।এই কাজে অনেক কষ্ট পেতে পারো।(কবিরাজ)
আমার একটু কষ্ট পাওয়ার ফলে যদি কতগুলো নিরীহ মানুষ বেচে যায় থাতেই আমি খুশি।(আমি)
তুমি সিফাতের লাশটা যদি তুলে পুড়িয়ে ফেলতে পারো তাহলেই সে চিরদিনের জন্য এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে।(কবিরাজ)
আমাকে কিছু দিন যাতে সিফাতের আত্মা সহজে আমাদের কাছে আসতে পারে না।(আমি)হুম তবে একটা কথা মনে রেখো সিফাত তার লক্ষ্যের খুব কাছে পৌছে গেছে।আগামীকাল পূর্ণিমা তার আগেই যা করার করতে হবে।(কবিরাজ)
আচ্ছা এখন আসি তাহলে।(আমি)
হুম।মনে রেখো।কালকের মধ্যে কাজ শেষ না করলে সিফাতের আত্মাকে আর আটকানো যাবে না।(কবিরাজ)
কবিরাজের বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে এলাম।আসার সময় কিছু কড়ি নিয়ে এসেছি সিফাতে আত্মার হাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য।
কিরে সমাধান পেলি?(ফয়সাল)
হুম পেয়েছি চল এবার।(আমি)
সবাইকে নিয়ে কবিরাজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম ভ্যান উটে সবাইকে সংক্ষেপে সব বলে দিলাম।যারিনের নানা বাড়ি পৌছেই কাজ শুরু করে দিতে হবে।সবাইকে একটা করে কড়ি দিলাম।
এগুলো যত্ন করে সাথে রাখিস হারিয়ে ফেলিস না আবার সাবধান।(আমি)
এগুলো কি রে।(যারিন)
এগুলো হলো সিফাতের আত্মা থেকে আত্মরক্ষার জন্য।(আমি)
বেশিক্ষন লাগলো না পৌছাতে।ভ্যান থেকে নেমে আমি নেমে সোজা নানার ঘরে গেলাম।সব কিছু খুলে বললাম নানাকে।
নানা সিফাতের কবর কোথায়?(আমি)
গ্রামের কবরস্থানে।(নানা)
আমাদের এখনি গিয়ে কাজটা শেষ করতে হবে।কাল পূর্ণিমা তার আগে কাজ শেষ না করলে আর সিফাতের আত্মাকে আটকানো যাবে না।(আমি)
আচ্ছা চলো আমার সাথে।(নানা)
সবাইকে নিয়ে কবরস্থানের দিকে রওয়ানা দিলাম।বাড়ি থেকে বেশি দূরে না বললেন নানা।তাই সবাই হেটেই রওয়ানা দিলাম।দিনের বেলা আত্মারা দৃশ্যমান হতে পারে না তবুও অদৃশ্য হয়ে সিফাতের বাধা দেওয়ার কথা।কোন রকম বাধা ছাড়াই আমরা কবরস্থানে পৌছালাম সাথে লোক ছিলো সে কোদাল দিয়ে খুড়তে শুরু করলো আমরাও সাথে হাত লাগালাম।কবর খুড়ে সবাই অবাক হয়ে গেলাম।সেখানে সিফাতের লাশ কেন কোন লাশই নেই পুরো খালি।এখন কোথায় খুজবো সিফাতের লাশ? তাহলে কি কাউকে বাচাতে পারবো না আর?
সবাই চিন্তিত হয়ে আছে। কোথায় খুজবো এখন সিফাতের লাশ কোথায় থাকবে।কানের কাছে অদৃশ্য কারো হাসির শব্দ শুনলাম
লাশ কোথায় গেলো?(যারিন)
এই কবর টা তো নানা?(ফয়সাল)
আমি নিশ্চিত এটাই।(নানা)
এখানে কি লাশ চুরি হয়?(আমি)
না কোনদিন লাশ চুরি হয়ে নি।(নানা)
তাহলে কোথায় গেলো সিফাতের লাশ।(কাব্য)
আত্মারা নিজের লাশ নিয়ে যেতে পারবে না। এটা নিশ্চই কোন মানুষের কাজ।(আমি)
কিন্তু এখানে আজ পর্যন্ত কোন লাশ চুরি হয় নি।তাহলে আজ কোথায় গেল?(নানা)
আর এখানে তো তেমন কোন চোর নেই যে লাশ চুরি করতে পারে।(কাব্য)
এতোদিন পর সিফাতের আত্মার ফিরে আসা।এখন আবার তার লাশ উধাও।এই কাজ গুলোতে কোন না কোন মানুষ নিশ্চিত জড়িত।(আমি)
কে জড়িত থাকতে পারে?(নানা)
এখানে আর কোন কবিরাজ নেই?(আমি)
ছিলো তবে কয়েক মাস থেকে সে উদাও।(নানা)
কবিরাজের উদাও এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই তো।(আমি)
এর সাথে কবিরাজের উদাও এর কি সম্পর্ক থাকতে পারে?(কাব্য)
কবিরাজ উদাও এর পর এই গ্রামে নতু কেউ এসেছে?(আমি)
জানি না নিশ্চিত ভাবে।(নানা)
আচ্ছা দেখি কি করা যায় চলুন এখান থেকে যাওয়া যাক।(আমি)
কবরস্থান থেকে বেরিয়ে এলাম।কোথায় খুজবো এবার।কবরস্থানের বাইরে তিনটা রাস্তা একটা দিয়ে আমরা এলাম অন্যটা সোজা চলে গেছে।আর আরেকটা রাস্তা দেখা যাচ্ছে ওটা কোথায় গেছে।
নানা এই তিন নাম্বার রাস্তাটা কোনদিকে গেছে?(আমি)
জংলের দিকে।(নানা)
আপনারা বাড়ি চলে যান আমি একটু পরে আসছি।(আমি)
তুই কোথায় যাবি?(যারিন)
কোথাও না।(আমি)
নানা সবাইকে নিয়ে চলে গেলেন।আমি আবার কবরস্থানে ঢুকলাম দেখি কোন সূত্র পাই কিনা।কবরের আশেপাশে কিছুই পেলাম না।কবরস্থানের দেয়াল দিয়ে কেউ লাশ নিয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয়।যতেষ্ট উচু দেয়াল টপকানো সহজ নয়।কোন সুত্র পেলাম না বেরিয়ে এলাম কবরস্থান থেকে।তিন নাম্বার রাস্তাটা কেন জানি না আমাকে টানছে মনে হচ্ছে। হাটা দিলাম ওই রাস্তা দিয়ে।কিছুদূর যেতেই মাটির উপর কিছু টেনে নিয়ে যাওয়ার চিহ্ন পেলাম।তাহলে কি এইদিক দিয়ে কেউ নিয়ে গেছে লাশ টা।লাশটা যতেষ্ট ভারী হবে সেটা কেউ একা কাধে করে নিয়ে যেতে পারবে না।কেউ হয়তো দেয়াল টপকে এতটুকু যায়গা পর্যন্ত লাশ কাধে করে নিয়ে এসে তারপর টেনে নিয়ে গেছে।দাগ টা লক্ষ্য করে হাটা দিলাম।যত এগুচ্ছি তত জংলটা কাছে আসছে।জংলের পাশে এসে থামলাম।চিহ্নটা জংলের পাশে এসেই থেমেছে।চিহ্নটা জংলের ভিতরে চলে গেছে।এভাবে একা ঢুকা কি ঠিক হবে? বেশি চিন্তা না করে ঢুকে পড়লাম।চিহ্নটা জংলের ঝোপ-ঝাড় মাড়িয়ে চলে গেছে।আমিও সেটাকে ফলো করে দ্রুত পা চালালাম।দূপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে এলো জংলের ভিতরে আলো বেশি নেই।ঝোপ-ঝাড়ের কারণে হাটতেও কষ্ট হচ্ছে।দ্রুত পা চালিয়ে হাটতে লাগলাম।বেশিক্ষন হাটতে হলো না কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌছে গেলাম চিহ্ন টার শেষ পর্যন্ত।চিহ্নটা সেখানেই থেমে গেছে যেখানে আমি নিজেকে জ্ঞান ফিরার পর আবিষ্কার করেছিলাম।কি নাম বলেছিল সবাই মনে পড়েছে পুরনো রাজবাড়ি।এই বাড়ির সাথে এই রহস্যের কোন যোগাযোগ আছে।না হলে আগের দিন আমাকে এখানে বন্ধী করা হলো।এখন আবার এই চিহ্ন টা এখানে এসে থেমে গেছে।এখন শুধু নিশ্চিত হতে হবে এই চিহ্নটা কি সিফাতের লাশ টেনে আনার চিহ্ন।আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি পুরনো রাজবাড়ির দিকে।রাজবাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছি।এই খানেও সেই চিহ্নটা আছে।আস্তে আস্তে ধাক্কা দিলাম দরজায়।ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে খুলে গেল।আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকলাম।আজ ভিতরে যতেষ্ট আলো আছে।চিহ্নটা সোজা উপরের তলায় উটে গেছে।সেটা ফলো করে আমিও উটতে লাগলাম সিড়ি দিয়ে।উপর তলায় পৌছেই কারো কথা শুনতে গেলাম।তাড়াতাড়ি লুকিয়ে পড়লাম।একটু অপেক্ষা করলাম এদিকে কেউ এলনা।তবে কথা শুনে যাচ্ছে এখনো।সেটা লক্ষ্য করে এগিয়ে গেলাম পাশের একটা রুম থেকে কথা বলার আওয়াজ আসছে। দরজায় কান লাগালাম ভিতরে একাধিক ব্যাক্তির কথার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।দুজনের কন্ঠই খুব পরিচিত মনে হলো।একজনের হাসির কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলাম ওটা সিফাতের কন্ঠ।অন্যজনের কন্ঠ খুব পরিচিত মনে হলো কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না।আর চিন্তা না করে এবার ভিতরে কি কথা শুনতে চেষ্টা করলাম।
কাজটা ঠিক মতো করেছো?(সিফাতের আত্মা)
হুম আমার পাওনাটা?(অপরিচিত)
আরে পাবে পাবে। এবার আমাকে কেউ আটকাতে পারবে না।(সিফাতের আত্মা)
আমার পাওনাটা যেন পেয়ে যাই।(অপরিচিত)
তুমি অনেক হেল্প করেছে তোমার পাওনাটা অবশ্যই দিয়ে দিবো।(সিফাতের আত্মা)
আচ্ছা মনে থাকে যেন।(অপরিচিত)
কোথায় রেখেছো লাশ টা?(সিফাতের আত্মা)
কথাটা শুনেই খুশিতে লাফিয়ে উটতে ইচ্ছে হলো।কিন্তু এই সময়ে লাফ দিলে বাশ খাবো।
এই খানেই রেখেছি।(অপরিচিত)
এই খানে কোথায়?(সিফাতের আত্মা)
ভালো ভাবে কথা শোনার জন্য আমি দরজায় আরেকটু কান লাগাতে গেলাম।ঠিক তখনি অঘটন টা ঘটলো।নিজের উপর ভারসাম্য হারিয়ে দরজায় ধাক্কা লেগে গেলো।ক্যাচ করে শব্দ করে দরজা টা ফাক হয়ে গেলো।আমি তাড়াতাড়ি সরে এলাম।
কে ওখানে? (অপরিচিত)
দাড়াও আমি দেখছি কে।(সিফাতের আত্মা)
আমি পাশের একটা মশাল রাখার জন্য একটা দেয়াল একটু বের করে দেওয়া তার আড়ালে চলে গেলাম।তখনি দরজা দিয়ে বাইরে এলো সিফাতের আত্মা।একটু খোজা খোজি করে আমি যেখানে লুকিয়েছি তার দিকে আসতে লাগলো।আমি চোঝ বন্ধ করে ধরা খাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম।সিফাতের আত্মা আমার খুব কাছে চলে এসেছে তখনি অপরিচিত ব্যাক্তিটি ডাক দিলো।
সিফাত এদিকে এসো।(অপরিচিত)
সিফাত আর এদিকে না এগিয়ে ফিরে গেলো।আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম।
কি হয়েছে।(সিফাতের আত্মা)
এখানে কেউ ছিলো হয়তো চলে গেছে।এখন তুমি চলে যাও আমিও চলে যাচ্ছি রাতে এসো সব বলবো।(অপরিচিত)
আচ্ছা।(সিফাতের আত্মা)
আমি আবার লুকিয়ে পড়লাম আবার আগের যায়গায়।কেউ দরজা বের হয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে দ্রুত চলে গেল।একটুর জন্য মুখ দেখতে পেলাম না।সিফাতের আত্মা উপস্থিতি টের পেলাম না।কিছুক্ষন ওখানে থেকে বেরিয়ে এলাম।ফোন দিলাম ফয়সালকে…
হ্যালো ফয়সাল..তাড়াতাড়ি সবাই পুরনো রাজবাড়িতে চলে আয় আর হ্যা স্টেশনে কাউকে পাঠিয়ে দেয় খালিদ ভাই আনতে।(আমি)
রাজবাড়িতে কি করবো।আর খালিদ ভাই আসবে?(ফয়সাল)
কথা বাড়িয়ে লাভ নেই তাড়াতাড়ি চলে আয়।(আমি)
আচ্ছা।(ফয়সাল)
ফয়সালের সাথে কথা বলে খালিদ ভাই কে ফোন দিলাম।সব বুঝিয়ে বললাম কি কি আনতে হবে।আর কি করতে হবে।লাশটা রাতের আগে খুজে না পেলে এই প্লানটা কাজে লাগাতে হবে।কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই চলে এলো।সবাইকে বললাম এখানেই কোথাও সিফাতের লাশ আছে সবাই কে খুজে বের করতে হবে সবাই মাথা নাড়িয়ে খোজা শুরু করলো।প্রথমে উপরের তলা ভালো ভাবে খুজলাম সবাই কোন রুমেই নেই লাশটা।সবাই নিচের তলা খোজা শুরু করলাম এবার এখানেও কিছু পেলাম না।সবাই হতাশ হয়ে গেলাম।
কিরে এখানে তো পেলাম না।(ফয়সাল)
এদিকে সন্ধ্যাও হয়ে যাচ্ছে ওরা চলে আসবে।(আমি)
এখন কি করবি?(যারিন)
বুঝতে পারছি না।(আমি)
কিছুক্ষনের মধ্যে খালিদ ভাই চলে এলো।সন্ধাও হয়ে গেছে ততক্ষনে।
লিমন খুজে পেলে?(খালিদ ভাই)
না।(আমি)
খালিদ ভাই হাতের ব্যাগটা মেঝেতে নামিয়ে রাখলো।সেটা থেকে পানি বের করে খেতে লাগলো।হটাৎ একটু পানি পড়ে গেলো মেঝেতে।আমি একবার সেদিকে চেয়ে চোখ ঘুরিয়ে নিলাম পরক্ষনেই আবার চোখ ফিরে গেলো সেখানে।একি পানি গুলো কথায় গেলো।মেঝেতে থাকা পানির হাল্কা চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন নেই বাকি পানি গুলো কোথায় গেলো।সন্দেহ হলো আমার।তাড়াতাড়ি খালিদ ভাইয়ের হাত থেকে বোতল এনে মেঝেতে ঢেলে দিলাম।
এই কি করিস এগুলো?(ফয়সাল)
পানি গুলো সব গড়িয়ে গিয়ে মোজাইকের নিচে অর্থাৎ মেঝের নিচে চলে গেলো।মুখে একটু হাসি ফুটে উটলো।তাড়াতাড়ি সেই যায়গার মোজাইক টা চেক করতে লাগলাম।নিচে কিছু ফাকা যায়গা মনে হচ্ছে।আমি হাত দিয়ে মেঝেতে হাতড়াতে লাগলাম।
কি করছিস এসব?(যারিন)
কি করো লিমন?(খালিদ ভাই)
দেখে যাও শুধু।(আমি)
হাতড়াতে হাতড়াতে কিছু একটায় হাত লাগলো।একটা ছোট রড একে বারে মেঝের সাথে মিশানো।মেঝের মতো রংও করা তাই সহজে কেউ সেটা দেখতে পারবে না।সেটা ধরে হাল্কা টান দিলাম যেই যায়গার নিচে পানি গিয়েছিলো সেই যায়গার উপর থেকে মোজাইক সরে গেলো।বেরিয়ে এলো একটা বাক্সের মতো যায়গা।সেখানে একটা লাশ রাখা আমার মুখে হাসি ফুটে উটলো।
আরে এই তো লাশ।(জান্নাত)
এটা এখানে কি করে এলো।(কাব্য)
বাইরের শুকনো পাতায় পা দিলে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দ শুনে হাতের ইশারায় সবাইকে চুপ থাকতে বললাম।খালিদ ভাইকে ইশারায় রেডি থাকতে বললাম।সবাইকে বললাম লুকিয়ে পড়তে।দরজা দিয়ে সিফাতের আত্মা আর রাকিব প্রবেশ করলো।রাকিব দেখেই মনে পড়লো সেই কন্ঠ টা তো রাকিবের ছিলো।রাকিব কেন সিফাতের সাথে হাত মিলালো।রাকিব মেঝের মোজাইক সরানো দেখেই চিৎকার দিলো।
কি হয়েছে?(সিফাতের আত্মা)
ওই দেখো মেঝের উপরের মোজাইক সরানো।(রাকিব)
থাতে কি হয়েছে?(সিফাতের আত্মা)
ওখানেই তোমার লাশ টা ছিলো।(রাকিব)
কি?(সিফাতের আত্মা)
হুম।(রাকিব)
রাকিব আর সিফাতের আত্মা তাড়াতাড়ি মেঝের ওই খানে গেলো।গিয়ে ভিতরে লাশটা দেখে নিশ্চিন্ত হলো।
লাশটা যায়গায়ই আছে।(সিফাতের আত্মা)
বাচা গেলো যদি ওরা পেয়ে যেতো তাহলে কি হতো বুঝতে পারছো।(রাকিব)
হুম ভালো করেই বুঝতে পারছি।(রাকিব)
এখনো বেচে যাওনি।(আমি)
রাকিব আর সিফাত দুজনে আমার দিকে ঘুরলো।আমাকে দেখে চমকে উটলো দুজনে।
আরে গোয়েন্দা সাহেব যে এতো দূর অবধি পৌছে গেছেন।ভালো ভালো।(সিফাতের আত্মা)
হাহা ওকে এখনই শেষ করে দাও।সাবধানের মার নেই।(রাকিব)
রাকিবের কথা শোনার পর সিফাত আমাকে চোখের ইশারায় শূণ্যে তুলতে চেষ্ট করলো।কিন্তু সে ব্যার্থ হলো।
কি হলো দাঁড়িয়ে রইলে কেন?(রাকিব)
ওকে আঘাত করতে পারছি না।(সিফাতের আত্মা)
ওর হাতের কড়ির জন্য মনে হয়।(রাকিব)
এই কড়ি দিয়ে আমার কিছুই হবে না।(সিফাতের আত্মা)
,
সিফাত এবার আমার কাছে এসে দাড়ালো ওর হাতের নখ মূহুর্তেই বড় হয়ে গেলো।সেটা আমার পেটে ঢুকিয়ে দিলো।
,
ওর হাতের নখ আমার শরিরের কোন আঘাত না করে অন্য দিকে দিয়ে গিয়ে বের হলো।
কি সিফাত কিছু হচ্ছে না? (রাকিবের পিছন থেকে বললাম আমি)
সিফাত আর রাকিব দুজনে আবার পিছনে ফিরলো।সিফাত একবার সামনে একাবার পিছনে থাকালো আমাকে দুই যায়গায় দেখে অবাক হয়ে থাকাচ্ছে দুজনেই।
শুধু তোমরাই ডুপ্লিকেট তৈরি করতে পারো না আমিও পারি।(আমি)
এটা কি করে সম্ভব?(সিফাতের আত্মা)
সেটা না জানলেও চলবে আপাতত টা টা বাই বাই।(আমি)
বলেই আমার হাতে থাকা মশাল টা লাশের উপর ছেড়ে দিলাম।দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উটলো।সিফাত চিৎকার দিয়ে ছাই হয়ে গেল।
,
,
পরিশিষ্ট:: রাকিব কে পাকড়াও করতেই সব এক এক করে জানতে পারলাম।ওই হলো সেই কবিরাজ যে উদাও হয়েছিল।ও কালোযাদু করতো।সে অনেক শক্তি পাওয়ার জন্য সিফাত কে আবার অন্যজগত থেকে টেনে আনে।আর দুজন মিলে শয়তান কে একটা করে মানুষ দিতে থাকে যাতে তারা শক্তি পায়।রাকিব কালোযাদু করে একটা দেয়াল দিয়ে যাদের কিডন্যাপ করতো তাদের আটকে রাখতো।সেখান থেকে ৬ জন মানুষকে উদ্ধার করা হয়।তার মধ্যে সুমন ও ছিলো।রাকিব কে পুলিশের হাতে তুলে দিলাম।মুক্ত হলো এই গ্রাম।পরের দিন গ্রামের সবাইকে সব জানিয়ে দিলাম।গ্রামের সবাই অনেক ধন্যবাদ দিলো।লাবিবার কাছে ফিরে গেলো তার ভাই।এর পরেই ফয়সালরা সবাই চেপে ধরলো।
এবার বল কি করে তুই তখন দুই পার্ট হলি?(সবাই)
আরে এটা তেমন কিছু না।আগে থেকে জানতাম ওরা সন্ধ্যার পর আসবে ওখানে।তার আগে লাশ পেলে তো পেয়ে গেলাম আর না পেলে কি করবো যদি ওরা আসার একটু আগে বা পরে পাই তখন কি হবে।সেটা ভেবেই খালিদ ভাইকে ফোন দিয়ে বলে এই রকম একটা ভিডিও তৈরি করতে।তোরা তো জানিস এখন প্রজেক্টরের সাহায্যে বাতাসে ভিডিও ইত্যাদি চালানো যায়।এটা তারই একটা নমুনা মাত্র।(আমি)
এর পরের কয়েক দিন গ্রামটাকে ভালো ভাবে ঘুরে দেখালাম।শুয়ে বসে কাটালাম।তারপর গ্রামের মায়া ছেড়ে রওয়ানা দিলাম শহরের যান্ত্রিক জীবনের দিকে।
……………………………………………………………..[সমাপ্ত]………………………………………………………..