কয়েকদিন ছুটি কাটাচ্ছিলো সুরঞ্জন বাবু..আর তার করা নির্দেশ এই কয়েকদিন তাকে কিছুতেই বিব্রত করা যাবেনা। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ছাদে বসে ফেসবুকের তার এক প্রিয় গল্পের পেজ খুলেছে সুরঞ্জন বাবু ওই পেজের একটা গল্প সবে পড়া শুরু করবে এমন সময় তার চোখ পড়লো পাশের বাড়ির রাহুলের দিকে। কয়েকদিন ধরেই দেখছে সুরঞ্জন বাবু রাহুল ছেলেটা এই কুলগাছের দিকে বারবার যাচ্ছে..কি যেন সে খোঁজার চেষ্টা করছে ও।
আসলে সুরঞ্জন বাবু কয়েকদিন আগেই এই পাঁচিল ঘেরা বাগান-টা কিনেছে। প্রথম প্রথম রাহুল-কে দেখে সে ভাবতো ও বোধহয় কুলচুরি করতে এসেছে। কিন্তু না ও কি যেন খোঁজার চেষ্টা করছে। রাহুল-কে পারলে সে ডেকে কথা বলতে পারেই কিন্তু রাহুলের মায়ের সাথে সুরঞ্জন বাবুর একটু ঝগড়া আছে। তাই সুরঞ্জন বাবু ঠিক করলেন ওকে ডেকে কথা বলবে পরে।
রাহুল সন্ধ্যা ৭.০০ টা নাগাদ পড়তে যায়। সুরঞ্জন বাবু ঠিক করলেন ওকে সন্ধ্যা বেলায় ধরতে হবে।
দিন-টা ছিলো বুধবার সুরঞ্জন বাবু রাহুলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দূর থেকে তিনি দেখলেন রাহুল আসছে। একসময় রাহুল তার কাছে এসে যায়। তারপর
সুরঞ্জন বাবু – এই তুই ওই বাগানের ধারে কি করতে যাস কুল চুড়ি করতে?
রাহুল একটু ভয় পেয়ে বলে – না, দাদা বিশ্বাস করো আমি কুল চুরি করতে যাইনা।
সুরঞ্জন বাবু – আবার মিথ্যা কথা, থানায় খবর দেবো নাকি? সুরঞ্জন বাবু ওকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো।
রাহুল এইবার কেঁদে ফেললো কাঁদোকাঁদো গলায় বললো – আমি সত্যি কুল চুরি করতে যাইনা।
সুরঞ্জন বাবু – আরে কাঁদছিস কেন? ইয়ার্কি করছিলাম। আচ্ছা তুই যখন কুল চুরি নাইবা করবি তাহলে কুল তলায় যাস কেন? কি ব্যাপার। পাঁচিলের ওপাশের কল্পনা বউদি-কে দেখতে যাস? এই বয়সে বৌদি প্রেম। ব্যাপার-টা কি বাড়িতে জানে নাকি সানাই বাজিয়ে, ঢোল পিটিয়ে সারা পাড়ামাথায় করে বাড়িতে জানাবো?
এবার তো রাহুল আরও কেঁদে ফেলে….
সুরঞ্জন বাবু – এই বয়সে সুড়সুড়ি….আরও তো বয়স পড়েই আছে। মা..বাবার মান সম্মান রাখলি নারে..হাই হাই রে..ক্লাসের প্রথম হওয়া ছেলের একি অবনতি হলো রে.?
রাহুল এবার সত্যিকারেই কেঁদে ফেললো….কাঁদতে কাঁদতে বললো – আমি কুলতলায় ওসব কিছুই করতে যাইনা দাদা….বিশ্বাস করো আমি ওইরকম ছেলেই না।
সুরঞ্জন বাবু – আরে জানিতো ইয়ার্কি করছিলাম। আসল ব্যাপার-টা খুলে বলতো?
রাহুল – আসলে একজন ভিক্ষুক।
সুরঞ্জন বাবু – হুম..তারপর বল।
রাহুল – ওই ভিক্ষুক – টা মাসে একবার আসে। ভিক্ষুক-টা এসেই আমার দিকে কেমন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আমার মা কত বলে মাপ করো, মাপ করো তারপরেও আমাদের বাড়ি থেকে যায়না।
তো সেদিন আমি ভাবলাম ওই ভিক্ষুক – কে ভিক্ষা দিই। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেখি ওই ভিক্ষুক -টা নিমেষে ভ্যানিস। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে কেউ একটা মাঠ পেড়িয়ে চলে যেতে পারে। আমি আশেপাশের সবার বাড়িতে খোঁজখবর নিয়েছি কিন্তু তাদের বাড়িতে ওইরকম ভিক্ষুক সেদিন কেন গত এক বছরেও যাইনি। তো আমি যখনি বাড়ি আসতাম ওই কুল গাছের দিকে তাকালে কেমন একটা টান অনুভব করতাম। যেই সামনে যেতাম….
সুরঞ্জন বাবু – কুঁচো ক্রিমি কামড়াচ্ছে নাকি? থামলি কেন? বাকিটা বল।
রাহুল – আমার লজ্জা করছে?
সুরঞ্জন বাবু – আহহহহ….সেই কি কল্পনা বৌদি।
রাহুল – তোমার মাথায় বিশাল বুদ্ধি। তুমি আমার গুরুদেব তুমি ডাক্তারের ও বাবা।
সুরঞ্জন বাবু – তেল না দিয়ে আসল কথা-টা বল?
রাহুল – আসলে আমি ওদিকে সত্যি কল্পনা বৌদি-কে দেখতে যেতাম না কিন্তু বিশ্বাস করো কোনো মেয়ে যেকিনা সদ্য বিয়ে করেছে তার গা দিয়ে যেমন হলুদ হলুদ গন্ধ বেড়োই ঠিক সেইরকম একটা গন্ধ পেতাম। যেটা আমার ভালো লাগতো। ওই গন্ধ-টা আমাকে নিজের কাছে ডাকতো।
সুরঞ্জন বাবু – কি ঢ্যামনা ছেলে মাইরি? তোর বাবা জানে এসব?
রাহুল – আসল কথাটাই তো শুনলেনা।
সুরঞ্জন বাবু – এতোক্ষন ধরে কি ঘাস কাটছিলিস নাকি? বল তাড়াতাড়ি সেটাই তো শুনতে চাই।
রাহুল – সেইদিন কের রাতের বেলা থেকেই আমি প্রত্যেকদিন একটা মেয়েকে স্বপ্নে দেখতাম যেকিনা বিয়ে করে সদ্য এসেছে তাকে বিয়ের পরেরদিন-ই পুড়িয়ে মাড়া হয়। তার দেহ-টা নাকি ওই কুলগাছের তলায় চাপা পড়ে আছে।
সুরঞ্জন বাবু – বলছি কি গাঁজা টানাও শুরু করেছিস নাকি? যা পড়তে যা। সুরঞ্জন বাবু রাহুল-কে ভাগিয়ে দিয়ে একটু গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। ছেলেটা-কি সত্যিকথা বললো নাকি আমাকে মুরগি বানালো। উনি এইভাবা মাত্র সোজা বাগানের দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু বাগানে গিয়ে কোনো অদ্ভুতুড়ে কিছু দেখতে পেলোনা। এরপর সুরঞ্জন বাবু রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত তখন ১.০০ টা। তার চোখে ঘুম নেই। সিগারেট-টা জ্বালিয়ে তিনি ছাদে গেলেন। তখম শীত আর গরম মাঝামাঝি। তিনি এদিকওদিক তাকিয়ে সোজা বাগানের দিকে তাকালেন আর তাতে তিনি যা দেখলেন তার সাড়া দেহ ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। সুরঞ্জন বাবু দেখতে পেলো পুরো বাগানে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। সুরঞ্জন বাবু এক দৌঁড়ে ছাদ থেকে নীচে নেমে এসে বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখে বাগান যেমন ছিলো সেমন-ই আছে। এইটা কি হলো। সুরঞ্জন বাবু ঘরে চলে গেলেন। সারারাত এই ব্যাপার – টা নিয়ে ভাবার পর সুরঞ্জন বাবু কয়েকজন মাটি কাটার লোকদের খবর দিলেন তাদের নির্দেশ দিলেন ওই কুলগাছ টার আশেপাশের জায়গা-টা ভালোভাবে খুঁড়তে। ওরাও নির্দেশ পালন করলো। ওরা প্রায় সারাদিন কাজ করলো কিন্তু এতো কিছুর পরেও সুরঞ্জন বাবু ও ওই মাটি কাটার লোকেরা কিছুই পেলোনা।
এতক্ষন ধরে মাটি খুঁড়ে কিছু না পেতে হতাশ হলো সুরঞ্জন বাবু। অত্যন্ত কষ্টের সাথে তিনি বাড়ি ফিরে গেলেন। বাড়ি গিয়েই সিগারেট ধরালেন। আর ভাবলেন কি হচ্ছে এটা?
প্রথমে রাহুলের ওইরকম কুলগাছের দিকে তাকানো, তারপর আমি বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাগান দাও দাও করে জ্বলছে। তারপর রাহুলের স্বপ্ন। এসব কি? কোথায় না কোথাও তো একটা রহস্য চাপা পড়ে আছে ওই রহস্য-টাই খুঁজে বের করতে হবে। সন্ধ্যা নেমে এসেছে চেয়ার-টা নিয়ে এসে ছাদের ধারে রাখলেন সুরঞ্জন বাবু। তারপর ওই বাগানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে? তারপর তিনি ফোন-টা বের করলেন।
সুরঞ্জন বাবু – হ্যালো, এটাকি মি.রায়।
আজ্ঞে হ্যাঁ….আপনি কে?
সুরঞ্জন বাবু – হাই, হেলো করবার মতন সময় আমার হাতে নেই আর এসবে কিছুই যায় আসেনা কিন্তু আগামী আধাঘন্টার মধ্যে যদি তুমি আমার দেওয়া ঠিকানায় না পৌঁছাও তাহলে তোমার অনেক কিছু যাবে আসবে।
মি.রায় – কে বে তুই।
সুরঞ্জন বাবু – তোর বাপ। ফোন-টা রেখে ইনবক্স-টা খোল শালা।
মি.রায় – অহ আপনি স্যার….আমার অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে সরি স্যার।
সুরঞ্জন বাবু ফোন-টা কেটে দিলেন।
আধাঘণ্টা পর..
সুরঞ্জন বাবুর বাড়ির সামনে এসে..মি.রায় – ফোন করলেন সুরঞ্জন বাবু-কে
মি.রায় – স্যার আমি পঁচিশ মিনিটের মধ্যে এসে গেছি।
সুরঞ্জন বাবু – উদ্ধার করেছো। এবার তোমার পেছন দিকের বাগান-টার দিকে তাকাও।
মি.রায় – হ্যাঁ স্যার, দেখলাম ওই বাগানে কি করতে হবে স্যার।
সুরঞ্জন বাবু – তোমার বিয়ে দেবো আজ..যা বলছি মন দিয়ে শোনো আজ সারারাত তুমি ওই বাগানের পাহারায় থাকবে। তারপর সারারাত যা দেখবে না দেখবে কাল আমাকে জানাবে। এই বলে সুরঞ্জন বাবু ফোন-টা কেটে দিলেন।
মি.রায় – এই একটা লোক যেদিন থেকে আমার লাইফে এসেছে আমার জীবন তাকে পুরো বরবাদ করে দিয়েছে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে আচ্ছা করে দি চারপাঁচেক।
তারপরেই সুরঞ্জন বাবু একটা এসএমএস পাঠালেন। মি.রায় ওই এসএমএস-টা খুলে দেখলেন সুরঞ্জন বাবু লিখেছে – আমাকে মনে মনে খিস্তি না দিয়ে যাও গিয়ে পাহারাই যাও। আমি এখন ঘুমাতে চললাম সকালে দেখা হবে….
মি.রায় আর কি করবে নিরুপায় হয়ে বাগানের দিকে চলে গেলেন।
সকালবেলায়।
সুরঞ্জন বাবু ছাদে উঠে দাঁত মাজতে মাজতে বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখেন তার সহকর্মী মি.রায় বাগানের সামনে পড়ে আছে। সুরঞ্জন বাবু এক দৌঁড়ে বাগানের দিকে গেলেন। তিনি দেখলেন মি.রায় অজ্ঞাব হয়ে পড়ে আছেন..কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করার পর ও যখন তার জ্ঞান ফিরলো না। তখন সুরঞ্জন বাবু জল ছিটিয়ে দিলেন মি.রায় এর মুখে….মি.রায় এর জ্ঞান ফিরেছে এবার।
সুরঞ্জন বাবু – কি হয়েছে এইভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে কেনো?
মি.রায় – স্যার কাল রাতে যা দেখেছি তারপরেও আমি বেঁচে আছি এটাই আমার বাবার ভাগ্যে ভালো।
সুরঞ্জন বাবু – কি হয়েছিলো।
মি.রায় – স্যার এই বাগানে এক ভয়ানক পেতনী আছে। আমি কাল পাহারা দিচ্ছিলাম বাগানে একটু চোখ লেগে এসেছিলো..মশার কামড় খাচ্ছিলাম। তো আমার প্রচণ্ড জল পিপাসা পেয়ে যায় তাইজন্য আমি আপনাকে ডাকতে আসি কিন্তু এতো রাতে আপনাকে ডিস্টার্ব করবো এইভেবে আমি আবারো বাগানের কাছে চলে যায়। সেটাই আমার কাল হলো। আমি বাগানের ভেতর থেকে চাপকলের আওয়াজ পেলাম। মনেমনে ভাবলাম বাগানে চাপকল আছে তাহলে তো ভালোই হলো যাই গিয়ে জল খেয়েনি। বাগানের মাঝ বরাবর গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে যার সদ্য বিয়ে হয়েছে সে কল পাম করছে। আমি তার সামনে গেলাম। এক মিনিট, দুই মিনিট, পাঁচ মিনিট, পনেরো মিনিট আধাঘণ্টা এক নাগাড়ে মেয়েটা কল পাম দিয়ে যাচ্ছে একটা ছোটো বালতি ভরছিলো মেয়েটা কিন্তু একি এতক্ষণেও বালতি-টা ভরলো না। এদিকে আমার পিপাসা পেয়েছিলো প্রচণ্ড। শেষে আর না পেরে আমি তাকে বললাম – আপনি একটু সরবেন আমি জল খাবো..কিন্তু মেয়েটা কোনো কথার উত্তর দিচ্ছিলোনা। সে পাম করেই যাচ্ছিলো। শেষে বাধ্য হয়ে আমি মেয়েটা যে বালতি-টে জল ভরছিলো সেই বালতি-টাই সড়িয়ে নিই। কিন্তু মেয়েটার বোধহয় সেটা পছন্দ হয়নি। মেয়েটা আমার জামার কলার ধরে ওই কুঁয়োর দিকে নিয়ে যায়। আমাকে ওই কুঁয়োর মধ্যে ফেলে মেরেই ফেলতো। আমার জামার কলার-টা এতোটাই শক্ত করে ধরেছিলো যে আমার দম আটকে আসছিলো একসময় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তারপর যখন চোখ খুললো তখন দেখি আপনি আমার সামনে। স্যার আমি আর এই কাজ-টা করতে পারবোনা। আমার জীবন আগে।
সুরঞ্জন বাবু – এই নাকে কেঁদো না তো? এই বাগানে না আছে কোনো কুঁয়ো না আছে কোনো চাপকল যদি বিশ্বাস নাহয় দেখে এসো।
মি.রায় – তাহলে কাল রাতে আমি তাহলে যে চাপকল দেখলাম, কুঁয়ো দেখলাম সেগুলো কি ছিলো তাহলে?
মি.রায় এর অবস্থা এইরকম দেখে সুরঞ্জন বাবু উনাকে বাড়ি চলে যেতে বললেন। এইবার উনি ঠিক করলেন আজ রাতে উনি বাগানে যাবেন। যা হবে আজ রাতে বাগানে গিয়ে হবে। উনি একটা চেয়ার নিয়ে রাত ৮.০০ টার দিকে খেয়ে-টেয়ে বাগানে চলে গেলেন। এইবার ভূতের অপেক্ষা।
দেখতে দেখতে রাত ৯.০০ টা, ১০.০০ টা, ১১.০০ টা, ১২.০০ টা পার হয়ে গেলো। কিন্তু ভূতের আর দেখা নেই। সুরঞ্জন বাবু ওইদিন সারারাত বাগানে থেকেও ভূতের সন্ধান পাননি। সকালে বাড়ি যাবে বলে যেই চেয়ার নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেবেন তখন তিনি দেখলেন ওই দূরে একটা কি যেন রোদের আলোয় চকচক করছে। তিনি ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে ওইখানে গেলেন। তারপর ওই চকচকে জিনিস-টাকে ভালো করে দেখলেন তিনি..এটাতো একটা পায়ের নূপুর।
তিনি ওই নূপুর-টাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ না করে নূপুর-টা যেখানে ছিলো সেখানে রেখে যেই ওখান থেকে বেড়িয়ে যাবেন তখন তার চোখ পড়লো বাগানের কুল গাছটার দিকে যার উপর একটা সি.সি ক্যামেরা লাগানো আছে।
সুরঞ্জন বাবু সাথে সাথে নিজের দৃষ্টি ওখান থেকে ফিরিয়ে নিলেন তারপর বাড়িরর দিকে এগোতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পর..
নূপুর, সি.সি ক্যামেরা এসব ব্যাপার-টা আরও জটিল করে তুলছে। আমার বাগানে সি.সি ক্যামেরা এলোই বা কি করে। আর ওই ভূত কাল আমাকে দেখে এলো নাই বা কেন?
এইবার তার কাছে রহস্যভেদ হলো। সুরঞ্জন বাবু ভাবলেন। যে ভূত সে বোধহয় আমাকে ভালোভাবে জানে এইজন্যই কাল আমার সামনে আসেনি। আর আমি কাল বাগানে ছিলাম ওই ভূত এইজন্য কাল বাগানে আসেনি। আর আমি কাল বাগানে গিয়েছিলাম সেটা জানলো ওই ভূত-টা ওই বাগানের সি.সি ক্যামেরা দ্বারা। তারমানে ভূত সুরঞ্জন বাবু-কে ভয় পায়। তারমানে যে ভূত, তার ভয়ের কারণ সুরঞ্জন বাবু, মানে ভূত মানুষ-কে ভয়, মানে মানুষ-ই ভূত। আজকেই এইরহস্য সমাধান করবো। সুরঞ্জন বাবু ফোন-টা নিয়ে উনার এক বন্ধুকে ফোন করতে গেলেন? কিন্তু কি মনে করে ফোন করলেন না। কারণ তার ফোন কেউ Track করতে পারে। এইজন্য সুরঞ্জন বাবু নিজের সেই একদম ছোটো ফোন – টা বের করলেন দীর্ঘ ছ-মাস পর। এই ফোনের কেউ নম্বর জানেনা। সুরঞ্জন বাবু মোবাইল-টা চার্জ-এ দিয়ে তার এক প্রিয় গোয়েন্দা বন্ধু সোম-কে একটা মেসেজ লিখলেন। ওই মেসেজে লিখলেন তিনি ” আজ রাতে ছদ্মবেশে আমাদের বাড়ির সামনের বাগানে চলে এসো, অনেক দিন সেই মাপের মজা হয়না। আজ একটু মজা করবো ”
– সুরঞ্জন।
সুরঞ্জন বাবু এসএমএস এর মাধ্যমে সব-টা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এবার শুধু খেলার পালা। ঘড়িতে রাত ৮.০০ টা। সুরঞ্জন বাবু তার বাড়ির সব লাইট নিভিয়ে দিয়েছিলেন। কারণ ঘরের কোনো জায়গাই যদি ক্যামেরা থাকে। সুরঞ্জন বাবু এবার ছাদে গেলেন চারিদিকে ভালো ভাবে চোখ পাকিয়ে দেখলেন না পরিস্থিতি ঠিক আছে। সোম ও এদিকে এসে গেছে। সুরঞ্জন বাবু আরও একটা এসএমএস করলেন বললেন আমার বাড়িতে না ঢুকে সোজা বাগানে চলে যাও….আর মজার জন্য তৈরি হও। সোম তাই করলো সোজা বাগানে চলে গেলো। এবার ভূতের অপেক্ষা। দেখতে দেখতে রাত প্রায় ১২.০০ টার কাছাকাছি সুরঞ্জন বাবু বাড়ির পেছন দিয়ে দৌঁড় দিলেন। অন্য পাড়ার দিকে। তিনি বাগানের পেছন দিক থেকে পাঁচিল টপকে বাগানে প্রবেশ করলেন ওদিকে সোম ও তৈরি এবার শুধু ভূতের অপেক্ষা।
না ভূত বাবাজি দেরী করেনি। সুরঞ্জন বাবুর চোখ গেলো একেবারে পাঁচিলের শেষ প্রান্তে তিনি দেখলেন একজন পাঁচিল টপকে বাগানে প্রবেশ করলেন। এইতো ভূত এসে গেছে। সুরঞ্জন বাবু ভাবলেন এ কেমন ভূত? ভূত বাগানে প্রবেশ করে এদিকওদিক তাকিয়ে সোজা সোমের দিকে এগোতে লাগলো। ভূত যেভাবে হাঁটছিলো তাতে তো মনে হচ্ছিলো না। এটা কোনো মেয়ে ভূত। ভূতের পায়ে আবার নূপুর পড়ানো। এমন ভাবে ভূত পা ফেলছিলো যে নূপুরের বেশ জোরে জোরে আওয়াজ হচ্ছিলো। যেন ভূত চাইছিলো যে সোম ভয় পাক। ধীরেধীরে সোমের কাছে ভূত এগিয়ে গেলো। ভূত বাবাজি ভেবেছিলো সোম বোধহয় ভয় পাবে। কিন্তু সোম ভূত-কে দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রহিলো। তারপর।
ধীরেধীরে ভূত সোমের দিকে এগিয়ে আসছে এবং একসময় অনেক কাছে চলে আসে। এখন ভূত ও সোম পরস্পর মুখোমুখি। এখন তো সোমের ভয় পাবার কথা তা না সোম ভূত-কে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রহিলো।
এদিকে তো ভূত বোধহয় রেগে যাচ্ছিলো কারণ সোম তো ভয় পাচ্ছিলোনা।
শেষে বাধ্যহয়ে ভূত সোম-কে বললো – এদিকে এসেছিস কেন? চলে যা আমার বাগান দিয়ে নাহলে শেষ করে দেবো।
সোম তো অবাক।
সোম ভাবছে এই সাদা কাপড় পড়া মেয়েটা কে?
সোম – হ্যাঁ সে নয় যাবো কিন্তু আপনি কে?
ওই ভূত-টা বললো – আমার বাগানে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছিস আমি কে? আমি এই বাগানের মালকিন ভালোই ভালোই চলে যা। নাহলে তোকে এখানেই শেষ করে দেবো।
সোম – কিভাবে করবেন শেষ? এইবলে এক টান দিলো ওই ভূতের শাড়ি-টা। তারপর তো সোম নিজেই অবাক।
সোম বললো – একি এতো ছদ্মবেশী পুরুষ। কি খিল্লি, কি খিল্লি। তুমি তাহলে ভূত।
ভূত-টা এবার ক্ষেপে গিয়ে নিজের বন্ধুক-টা বের করে সোমের দিকে তাক করলো।
তখনি সুরঞ্জন বাবুর প্রবেশ।
সুরঞ্জন বাবু – ব্যস….
আর একটাও পেয়াজি চলবেনা। চল বন্দুক-টা নামা, সেই ফাঁকে সোম ওই ভূত বাবাজীর থেকে বন্দুক-টা নিয়ে এক থাপ্পড় দিলো।
সুরঞ্জন বাবু – ভালোই ভালোই এই ভূত, নূপুর, সিসি ক্যামেরা এসবের রহস্য গুলো বলবি নাকি এখানেই ঠুকে দেবো।
ভূত বাবাজির ভয়ে অবস্থা কাহিল। তিনি বললেন – আমাকে মারবেন না স্যার, আমাকে মারবেন না। ভূল হয়ে গেছে স্যার। আসলে আমি এই বাগান-টা কাউকে দিতে চাইছিলাম না। যখন এই বাগানের মালকিন আপনাকে বাগান-টা বিক্রি করে দেয় তার আগে বেশ কয়েকবার আমি ওই বাগানের মালিক-কে বলেছিলাম বাগান-টা না দিতে। কিন্তু কে শোনে কার কথা উনি সেই আপনাকেই বিক্রি করে দিলেন পুরো বাগান-টা।
সুরঞ্জন বাবু – তো কি হয়েছে বাগান বিক্রি করেছে তো? কিসের অসুবিধা এতো তোর। আর তোর নাম কি? এইখানে লোক-কে ভয় দেখানোর কারণ কি?
ওই ভূত বাবাজি বললেন – আমার নাম হরি স্যার। আমি এই বাগান ছাড়তে চাইছিলাম না কারণ এই বাগান-টা আমার খুব ভালো লাগে এখানকার হাওয়া, বাতাস।
সুরঞ্জন বাবু দিলেন কয়েক-টা চর কষিয়ে। এবার বল সত্যি করে কেন বাগান-টা ছাড়তে চাইছিলিস না।
হরি – স্যার এইখানে আমরা আগ্নেয় অস্ত্র বানাই স্যার। এই বাগানের থেকে ভালো কোনো জায়গা আমরা পাইনি। এইজন্য আমরা এই বাগান-টা হাতছাড়া করত্র চাইছিলাম না। কিন্তু ওই বুড়ো ব্যাটা আপনাকে দিয়ে দিলো বাগান-টা।
সুরঞ্জন বাবু – এই কেস, সোম একে থানায় নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করো বাকিটা থানায় গিয়ে দেখছি। চলো ধরো বেটাকে। এইবলে ওরা দুই গোয়েন্দা মিলে হরি-কে ধরে বাগান থেকে বের হওয়ার জন্য যেই পা বাড়ালো ওমনি তাদের পেছন থেকে একজন বলে উঠলো – দাঁড়ান স্যার।
সুরঞ্জন বাবু তাকিয়ে দেখলেন পেছন দিকে যে একটা অদ্ভুত, মায়াবিনী তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়েটার গা-থেকে কাঁচা হলুদের গন্ধ বেড়োচ্ছিলো। মেয়েটাকে সদ্য বিবাহিত মনে হচ্ছিলো।
কে ছিলো সেই মেয়েটি????
সুরঞ্জন বাবু ভালো করে ওই মেয়েটার দিকে তাকালেন। ওপর-নীচ ভালো করে দেখে বললো সুরঞ্জন বাবু – ওহে..এ কোথাকার কার্টুন। মা..তুমি আবার কোথা থেকে উদয় হলে। এই জমি-জমা নিয়ে হরি-র সাথে তোমারো কি হাত আছে নাকি?
ওই মেয়েটা বললো – ওকে আমার কাছে ছেড়ে দিন।
সুরঞ্জন বাবু – আহা..মেয়ের সখ কতো? ওলে বাবালে..ওকে নিয়ে করবে মা..
ওই মেয়েটা বললো – ওকে ছেড়ে দিন..
সুরঞ্জন বাবু – এই আস্তে আস্তে মেয়ে হয়ে অতো জোরে কথা বলতে নেই।
আমি বললাম তো ছাড়বো কিন্তু কারণ-টা বলো।
ওই মেয়েটা বললো – কথা দিচ্ছেন? ওকে ছাড়বেন।
সুরঞ্জন বাবু – আমার ভবিষ্যৎ এর বউ এর দিব্যি আগে তুমি কারণ-টা বলো।
ওই মেয়েটা বললো – ও আমাকে খুন করেছে। শুধু আমাকে না আমার বাবাকেও খুন করেছে।
সুরঞ্জন বাবু কিছুক্ষণ ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো – মামনি তুমি কি নেশা করো। না মানে আমার কপালে কি লেখা আছে ” গোয়েন্দা সুরঞ্জন কি পাগল ” কি খিল্লি, কি খিল্লি..
মেয়েটা এবার রেগে গিয়ে সুরঞ্জন বাবুর গলা ধরে হাওয়াই তুলে দিয়ে হাত-টা নামিয়ে ফেললো। সুরঞ্জন বাবু হাওয়াই ভাসছে।
সোম অবাক হয়ে সুরঞ্জন বাবুর আশেপাশে কি যেন খুঁজছে।
সুরঞ্জন বাবু – ওরে পাগল আমার গলায় কোনো দড়ি নেইরে, এই মেয়েটা সত্যিকারের ভূত। এই নিয়ে আর খিল্লি করিস না সোম। এবার তো ভূতে ভয় কর।
মা….তুমি ওকে কেন নেবে সেটা আমাকে একটু বুঝিয়ে বললে তো হয়ে যায়। হাওয়াই ঝোলানোর মানে কি?
ওই মেয়েটা এক টান দিয়ে সুরঞ্জন বাবু-কে নামিয়ে দিলেন।
তারপর বলা শুরু করলো – আমার বাবা জমি বেঁচে দিচ্ছিলো বলে ওর খুব রাগ জন্মেছিলো। শেষে যখন একেবারে রাগ মাথায় উঠে যায় তখন হুমকি দেওয়া শুরু করে। এই হুমকির জন্য আমার বাবা তাড়াতাড়ি কম দামে এই জমি-টা বিক্রি করে দেয়। তাতে ও আরও রেগে যায়। ফলস্বরুপ ওইদিন রাতেই যখন আমি আর আমার বর ঘুমাচ্ছিলাম তখন পাশের বারান্দায় আমার বাবাও ঘুমাচ্ছিলো। কিন্তু এই সয়তান আমার বাবা, আমার স্বামী কে কুপিয়ে খুন করে। আমাকেও ছাড়েনি আমাকে একা মেয়ে নিজের আশ মিটিয়ে নিয়ে জ্বালিয়ে দেয় আমাকে। আর আমাদের তিনজনের দেহ এই বাগানে পুঁতে দেয়।
সুরঞ্জন বাবু – এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানিনা।
ওই মেয়েটা বললো – তখন আপনি অন্য কেসে ব্যস্ত ছিলেন।
মেয়েটা তার কথা শেষ করে ওই ছেলেটার কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো বাগানের শেষ দিকে। কি আশ্চর্য। সুরঞ্জন বাবু দেখলো ওই মেয়েটা দাঁড়ানো মাত্র একটা কুঁয়ো মাটির নীচ থেকে উঠে এলো। ওই মেয়েটা কুঁয়োর মধ্যে ওই ছেলেটাকে ফেলে দিয়ে নিজেও কুঁয়োর মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে দিলো। তারপর কুঁয়ো-টাও মাটির নীচে চলে গেলো। সুরঞ্জন বাবু অবাক। তার এই চাকরী জীবনে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ভূতের খপ্পরে পড়লেন তিনি।
সুরঞ্জন বাবু – আমার বাগান নিয়ে এতো কেলেঙ্কারি আর আমিই কিছু জানিনা।
সবশেষে সোম বলে উঠলো – তারমানে সুরঞ্জন বাবুও ভয় পায়।
সুরঞ্জন বাবু – ক্ষেপেছিস নাকি। আমিতো ইয়ার্কি করছিলাম।
…………………………………………………………… সমাপ্ত ……………………………………………………………….