ম্যাজিক ল্যাম্পের জিনি আমাকে কিছু কাজ দিয়েছে। তোমাদের কয়েকটা সত্যিকারের ভূতের গল্প শোনাতে হবে। সত্যিকারের আবার ভূত হয় নাকি? ভূত মানেই তো বানানো কথা, যত সব গাঁজাখুরি গল্প। আজ্ঞে না, ভূত অনেকেই দেখেছে। একদম নিজের চোখে দেখা, মোটেই বানানো গপ্প নয়। কেউ আবার অনুভব করেছে, চোখে দেখেনি। সব গল্প তো তোমাদের শোনাতে পারব না। বেছে বেছে কয়েকটা শোনাচ্ছি। প্রতক্ষ্যদর্শীর বিবরণ।
শুরুটা আমার মাকে দিয়েই করি। আমার মা দু’বার ভূতের পাল্লায় পড়েছিল। একবার দক্ষিণেশ্বরে মায়ের শ্বশুরবাড়িতে। আমি তখন খুব ছোটো। মা আমাকে নিয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। গভীর রাতে মায়ের মনে হল বুকের ওপর ভারি কিছু একটা বসে আছে। চোখ মেলতেই দেখতে পেল একজন মহিলা যার গোটা শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা, এমনকি মাথাটাও ঘোমটায় ঢাকা। মায়ের বুকে বসে গলা টেপার চেষ্টা করছে। মা ঠাকুরের নাম করতেই সেই মূর্তি ভ্যানিশ হয়ে গেল। মা কিন্তু আর ঘরে থাকার সাহস পেল না। আমাকে ফেলে রেখেই আমার আম্মাকে ডাকতে চলে গেল। আম্মা পরে বলেছিল ওই প্রেত মূর্তি আম্মার সেজো জায়ের। সে মারা গিয়েছিল কোনও এক অসুখে ভুগে। বেঁচে থাকতে সে সবার সাথে খারাপ ব্যাবহার করত, ঝগড়া করত। আমার সেজোমা অর্থাৎ সেজো জেঠিমাও এই প্রেতমূর্তি একবার দেখেছিল। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না। সেজোমা একা ছিল। সন্ধেবেলা সব ঘরে ঘরে ধূপ দেখাচ্ছিল। হঠাৎ একটা ঘরের বাইরে থেকে একটা অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ে যায় সেজোমার। একটা চেয়ারে বসে বসে কেউ পা দোলাচ্ছে। পর্দার ফাঁক দিয়ে সেজোমা দেখেই তো ভির্মি খাবার জোগাড়। ঘরে তো কেউ নেই। তাহলে এই পা কার? সেজোমা আর ঘরে ঢোকেনি। বাইরে গেটের সামনে চলে গেল। বাড়ির বাচ্চারা সব খেলতে গেছিল। সেজোমা গেটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। একা বাড়িতে ফিরে যাবার আর সাহস পেল না। এই সাদা প্রেতমূর্তিকে বহুবার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকে দেখেছে। অনেক পুজো-আচ্চা, যাগ-যজ্ঞ করা হয়েছিল এই আত্মাকে তাড়ানোর জন্য।
এবার আসি রাঙ্গা জেঠুর কথায়। একবার ছাদে বসে রাঙ্গা জেঠু রাঙ্গামার সাথে গল্প করছে। রাঙ্গামা কোনও উত্তর দিচ্ছে না, শুধু মাথা নেড়ে যাচ্ছে। রাঙ্গা জেঠু ছাদ থেকে নিচে নেমে এসে দেখল রাঙ্গামা রান্নাঘরে। তাহলে ছাদে কে ছিল বল?
আরেক বার মাঝরাতে রাঙ্গাজেঠু ভূত দেখেছিল। রাঙ্গাজেঠুর একটা দোকান ছিল। মাদার ডেয়ারির দুধের দোকান। অনেক রাত অবধি দোকান খোলা রাখতে হত। কারণ মাঝ রাতেই গাড়ি করে দুধ আসত। সকাল হলেই অনেকে দুধ নিতে আসত। রাঙ্গা জেঠু তখন পৈতে পড়ত না। একদিন বেশ রাত হয়ে গেছে। কোনও একটা কারণে রাঙ্গা জেঠু বাইরে গেছে। দোকানে বসে ছিল সেজোজেঠু। হঠাৎ দরজা ঠেলে রাঙ্গাজেঠু ঢুকে পড়ল । চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। দোকানে অনেক কোল্ডড্রিঙ্কস ছিল, রাঙ্গাজেঠু পর পর আট দশ বোতল খেয়ে ফেলল। সেজোজেঠু বার বার করে জিজ্ঞাসা করল কী হয়েছে?
রাঙ্গাজেঠু বলল, রাতে দোকান ছেড়ে একটু বাইরে গেছিলাম। দেখি একটা লোক হঠাৎ গাছ থেকে নেমে এলো। কাছে আসতেই দেখলাম লোকটার মাথাটা নেই একেবারে কবন্ধ। কিছুটা হনুমানের মত চার পেয়ে জীব।
সেই ঘটনার পর থেকে রাঙ্গাজেঠু আবার পইতে পরা শুরু করল। তবে রাঙ্গা জেঠুর ভূত দেখার আরও একটা গল্প আছে। এর মধ্যে একটা হল বেঁশো ভূতের গল্প। গল্প নয় সত্যি ঘটনা। একবার রাঙ্গা জেঠু শ্রীরামপুরের মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ফিরছে। গভীর রাত তখন। হঠাৎ রাঙ্গা জেঠু দেখতে পেল সামনে একটা বাঁশ পড়ে আছে। তখন ওই সব দিকে প্রচুর বাঁশ ঝাড় ছিল। রাঙ্গা জেঠু বাঁশটা ডিঙ্গিয়ে যাবার রিস্ক নিল না। দুবার হাততালি দিল। সঙ্গে সঙ্গে বাঁশটা শোয়া অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। বেঁশো ভূতগুলো ভারী দুষ্টু। রাস্তার ওপর বাঁশ ফেলে রাখে। সেই বাঁশ কেউ ডিঙ্গিয়ে পার হতে গেলেই তাকে বাঁশ সুদ্ধু গাছের ওপর তুলে দেয়। তারপর তাকে ভয় দেখায়।
এবার সেজোজেঠুর গল্প শোনা যাক আবার। সেজোজেঠু অনেক গল্প জানে। অনেক ধাঁধা জানে। মাঝে মাঝে একটু বকে। আমি আবার খালি বকাই খাই। তোমাদের মত শান্ত শিষ্ট নই তো তাই। সেজোজেঠুর ভূত দেখার গল্প শোনো। অনেক বছর আগের কথা। সেজোজেঠুর তখন কম বয়স অনেক। দুর্গাপুরে আমার বড়মার বাড়ি যাচ্ছে। ট্রেন যখন স্টেশানে নামিয়ে দিয়ে গেল তখন রাত ন’টা। খুব ঘন অন্ধকার। সেজোজেঠু রিক্সা পেল না, তাই হাঁটতে শুরু করে দিল। আমার বড়মার বাড়ি যেতে গেলে অনেকটা হাঁটতে হবে।
সেজোজেঠু তারামায়ের নাম করতে করতে এগিয়ে চলল। কিছুক্ষণ পর সেজো জেঠুর মনে হল পাশে একটা লণ্ঠন আপনা আপনি চলছে। লন্ঠনের আলোয় বেশ পথ দেখা যাচ্ছে। সেদিন ছিল অমাবস্যা। বড়মার বাড়ির সামনে গিয়ে সেই আলো ভ্যানিশ হল। সেজো জেঠুর মতে লন্ঠন বাহক মা কালী ছিল, কিন্তু আমি মনে করি মা কালী নয়, মা কালীর কোনও অনুচর ছিল। আর সে ভূত ছাড়া আর কিছু নয়। আমাকে ওরকম লন্ঠন দেখালে আমি তো মরেই যাব। কেউ কোথাও নেই শুধু একটা লন্ঠন আপনা আপনি চলছে ! উফ ভাবতে পারো!
আমার দাদামশাই এর বাড়ি ছিল হাওড়া জেলার বসন্তপুর গ্রামে। সেখানে দাদুদের মা কালীর মন্দির এখনও আছে। এই গ্রামে প্রচুর ভূত ছিল এক সময়। কালী মন্দিরকে সবাই কালীঘর বলত। তার পাশে শিব মন্দির ছিল। আর দামোদরের মন্দির। দামোদর হল নারায়ণ। আমি অনেক বার গেছি। অনেক পুরানো আমোলের মন্দির বাড়িঘর সব। কালীঘরের পাশে ছিল বিশাল একটা চাঁপা গাছ। সেই গাছে ব্রহ্মদত্যি থাকত। তাকে দেখেছিল আমার দাদুর মা। আমার বড়মা হত সম্পর্কে। বড়মা বলেছিল একবারই আমি তাঁকে দেখেছিলাম। শিবরাত্রির দিন রাত জেগে ছিলাম আমরা ক’জন। জেগে জেগে তাস খেলছিলাম। প্রহরে প্রহরে শিবের মাথায় জল দিতে হয়। রাত তখন কত জানিনা, একজন খুব লম্বামত লোক সাদা ধুতি, উড়নি গায়ে দিয়ে খড়ম পরে শিব মন্দিরে ঢুকে পড়ল।
তা ওই ভদ্রলোকই যে ব্রহ্মদত্যি তা কী করে বুঝলে? অন্য কেউ তো হতেই পারে!
না ব্রহ্মদত্যি ছাড়া আর কেউ নয়। দেখেই বোঝা যায়। চোখ দুটো লাল। ঘণ্টা নেড়ে নেড়ে অনেক মন্ত্র বলে পুজো করল, আমরা ভয়ে কাঠ হয়ে ছিলাম। আবার পুজো শেষ হতেই সে চলে গেল আমাদের দিকে ফিরেও তাকাল না।
সেই ব্রহ্মদত্যির অস্তিত্ব সবাই বিশ্বাস করত। আর একটা পুকুর ছিল, যখের পুকুর। এখানে নাকি কে কাকে যখ দিয়েছিল। যখ কী জিনিস না যদি জেনে থাকো তাহলে রবীন্দ্রনাথের সম্পত্তি সমর্পণ গল্পটা পড়ে ফেলো। আগেকার দিনে বড়োলোকেরা তাদের সম্পত্তি মাটির নিচে একটা ঘরে রেখে দিত। আর সেই সম্পত্তি আগলাবার জন্য একটা ছোটো ছেলেকে সেই ঘরে আটকে রাখত। ছেলেটি অক্সিজেনের অভাবে খাদ্যের অভাবে মারা পড়ত। পড়ে থাকত কঙ্কালটা। এরাই যখ হতো। কত ছেলেকে এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে! এই সব নিষ্ঠুর বড়োমানুষদের ধারণা ছিল যখ তাদের সম্পত্তি পাহারা দেবে। তাদের বংশের লোক ছাড়া আর কেউ এই সম্পদে হাত দিলেই মৃত্যু অনিবার্য।
আমার দিদার আর ছোড়দিদার বাপের বাড়ি ছিল গুজুরপুরে। এই খানে যে কে মানুষ আর কে ভূত ছিল তা বোঝা যেত না। এই গুজুরপুরে আমার দিদার বাবা একবার একজন আত্মার অস্তিত্ব অনুভব করেছিল। দিদারা কলকাতায় থাকত পরেশনাথের মন্দির যেখানে। গুজুরপুরে কালে ভদ্রে যেত। গুজুরপুরে মাখন মামা ভূত হয়ে দিদার দিদাকে ধরেছিল। এই গল্প অনেকবার দিদার মুখে শুনেছি। মাখন সম্পর্কে দিদার মামা হত। অনেকেই তাকে মামা বলতো। তার একটা দুষ্টুমি ছিল খাট সমেত ঘরের ছাদে উঠিয়ে দিত আবার নামিয়ে দিত। দিদার দিদাকে যখন ধরেছিল রীতিমত ওঝা ডেকে ঝাড়াতে হয়েছিল। আগেকার দিনে ভূতে ধরা বা হাওয়া-বাতাস লাগা খুব সাধারণ ঘটনা ছিল।
দিদাদের কলকাতার বাড়িতে ভূত হয়েছিল দিদার বড়মা। অর্থাৎ জেঠাইমা। সে নিজের মেয়ের বিয়ের সময় দেখতে এসেছিল। তাকে দেখতে পেয়েছিল দিদার দাদা। সেই বাড়িতে কারোর মৃত্যু হলে আগে থাকতে বোঝা যেত। গভীর রাতে ছাদে কারা দৌড়ে বেড়াত। তিন চার দিন এরকম চলার পর বাড়ির কোনও একজন কেউ মারা যেত। আমার দিদার মেজোভাই গোবিন্দ মারা যাবার দিন কয়েক আগে এই রকম ছাদে পায়ের শব্দ পাওয়া গেছিল।
আমার মা’কে দিয়ে শুরু করেছিলাম। মায়ের ভূত দেখার গল্প এখনও একটু বাকি রয়ে গেছে। মা আমি একবার রাজস্থান বেড়াতে গেছিলাম। বিশাল একটা টুর পার্টির সংগে। মাউন্ট আবুতে পৌঁছাবার পর থেকে শরীরটা আমার খারাপ হয়। হোটেলের রুমে ঢোকার পর থেকে ঘুমে চোখ জড়িয়ে যাচ্ছিল। সেই রাতেই মায়ের মনে হয়েছিল ঘরে কেউ আছে। যাকে ঠিক দেখা যায় না। সে কিছু বলতে চাইছে। আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারিনি, খুবই ঘুমিয়েছি। দ্বিতীয় দিন সকালে আমরা দিলোয়ারা মন্দির দেখতে গেছিলাম। দুপুরে ফেরার পর আমার খুব ঘুম পেয়ে গেল। লাঞ্চ না সেরে আমি ঘুমিয়েই পড়লাম। বিকেলে সবাই নাক্কি লেক দেখতে গেল। আমি পড়ে পড়ে ঘুমোলাম। মা বেরিয়েছিল একটু। কিছু কেনাকাটা করে ফিরল। সন্ধেবেলা আমার ঘুম ভাঙল। একটু কিছু খেয়েই আবার শুয়ে পড়লাম। শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুম। রাত্তিরে ঘুম ভাঙল মায়ের ধাক্কায়। বলল, এই ঘরে আর শোয়া যাবে না, আমরা পাশের ঘরে যাব।
ব্যাপারটা যে কী হয়েছে বুঝতে পারলাম না। কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারলাম না। ভীষণ ঘুমে চোখ খুলতেই পারছিলাম না। কষ্ট করে উঠে পাশের রুমে গেলাম। টুর ম্যানেজার আমাদের ঘরে চলে এসেছেন আর ওনার ঘরটা আমাদের থাকতে দিলেন। পরের দিন মাউন্ট আবু ছেড়ে আমরা পাড়ি দিলাম যোধপুরের উদ্দেশে। হোটেল ছাড়তেই আমার সেই ঘুম ঘুম ভাব চলে গেল। দিব্যি শরীর ঠিক হয়ে গেল। টুর ম্যানেজার বললেন, ওই রুমটা ভাল নয় শুনলাম। বহু বছর আগে এই ঘরটায় একজন ভদ্রমহিলা খুন হয়েছিলেন। তারপর থেকে এই ঘরে মাঝে মাঝে একটু সমস্যা হয়।
মা বলল, রাত্তিরে মনে হচ্ছিল কেউ আমার গলা টিপে ধরেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। পর পর দু’রাত্রি একই অবস্থা।
বাসের সবাই হাঁ করে মায়ের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে লাগল।
রাজস্থানে আমার এক পরিচিত দিদি গেছিল ট্রাভেল এজেন্সির সাথে। ওরা যোধপুরে খুব ভয় পেয়েছিল। এমন একটা হোটেলে উঠেছিল যেটা অভিশপ্ত ছিল। তবে মহিলারা ভয় পায়নি। শুধু পুরুষ সদস্যরা সবাই খুব ভয় পেয়েছিল। ঘুমোলেই মনে হচ্ছিল চোখের সামনে একটা খুন হচ্ছে। এক সাথে সমস্ত পুরুষ সদস্যরা একই দৃশ্য দেখল কী ভাবে? সত্যি সত্যি ওই হোটেলের একজন স্টাফকে কারা যেন নৃশংস ভাবে খুন করেছিল।
আমার বোনের খুব প্রিয় বন্ধু সারদা। সারদার বাড়িতে আমরা একবার বেড়াতে গেছিলাম। আমি আর বোন। ওদের বাড়িটা খুব নির্জন জায়গায়। শহর থেকে বেশ দূরে। আশপাশে কয়েকটা বড় বাড়ি। চারদিকে বড় বড় গাছ। নাম না জানা অনেক অচেনা পাখী ডাকছে। বেশ গা ছমছমে পরিবেশ। সারদার মা একটা অদ্ভুত গল্প বলেছিল। আমি কাকিমার জবানীতেই বলছি।
তখন সারদা খুব ছোটো। ওর বাবা মানে তোমাদের কাকা সেদিন বাড়ি ছিল না। আমি আর সারদা। সামনের একটা বাড়িতে একজন ভদ্রমহিলা মারা গেছেন কিছুদিন আগে। তার বেশ বয়স হয়েছিল। একদিন রাতে হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে গেল। সারা রাত এল না। অন্ধকার ঘরে আমি আর সারদা শুয়ে আছি। বেশ গরমও লাগছে। হঠাৎ একটা কান্নার আওয়াজ দূর থেকে কাছে এল। আমার খুব ভয় করছিল যে এত রাতে কে অমন করে কাঁদছে। জানলা দিয়ে যে উঠে দেখব সে সাহসও পাচ্ছি না। কান্নাটা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে পেছন দিকে বাগানের দিকে চলে গেল। পরের দিন শুনলাম আশপাশের সব বাড়ির লোকেরাই কান্না শুনতে পেয়েছে। তবে সাহস করে কেউ দেখেনি যে ওটা আসলে কী ধরনের জীব ছিল। একটা বাড়ির বাথরুমের জানলা দিয়ে ঢোকার চেষ্টাও করেছে কিন্তু পারেনি। জানলায় সাবান, শ্যাম্পু রাখা ছিল সব কিছু মেঝেতে পড়ে গেছিল।
এই গল্প শুনে আমার আর বোনের গলা শুকিয়ে গেছিল। কাকিমা বলল, এটা গল্প নয় সত্যি ঘটনা।
আমার এক দিদা ছিল সম্পর্কে মায়ের বড়মামিমা। তার বাড়ি ছিল অম্বিকা কালনায়। সেই বাড়িতে প্রচুর ভূত ছিল। তারা জিনিস লুকিয়ে ফেলতে ভালবাসত। দুধের গ্লাসে চামচ নাড়তে নাড়তে হঠাৎ দেখলে চামচ নেই। চামচ ভ্যানিশ। আবার সাত দিন পর সেই চামচ খুঁজে পেলে তোমার পড়ার টেবিলে।
আমাদের কাঁচরাপাড়াতেও অনেক ভূতের বাড়ি আছে। একসময় যে সব ব্রিটিশদের কোয়ার্টার ছিল সে সব এখন ভেঙেচুরে হানাবাড়িতে পরিণত হয়েছে। অনেক বাড়ি বেশ ভয়ানক। এখনও আত্মাদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। সব বলে শেষ করতে পারব না। একটা জায়গার কথা বলে আজকের আড্ডা শেষ করব। ডাকাতে কালীর মন্দির আছে কাঁচরাপাড়া রেল কোয়ার্টার-এর কাছে। এই মন্দির বেশ পুরানো। রঘু ডাকাতের কালী ছিল একসময় এখানে, নরবলিও দেওয়া হত। মাঝ রাত্তিরে নাকি এখানে অশরীরীরা আনাগোনা করে। বিশেষ করে যারা ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। গভীর রাতে যারা বাড়ি ফেরে তাদের অনেকেই দেখতে পেয়েছে অশরীরীদের। বিশ্বাস না হলে তোমরাও গিয়ে একবার দেখতে পারো। কাঁচরাপাড়ার বেশ কিছু রেল কোয়ার্টারে ভূত আছে। অনেকে সেখানে বাস করতে পারেনি। সেই সব বড় বড় বাড়িগুলো আজ পরিত্যক্ত। বড় বড় গাছ গজিয়ে গেছে ভেতর থেকে।
একটা বিশাল জামগাছ ছিল বেল ইন্সটিউটে। সেই গাছটা নাকি অভিশপ্ত ছিল। বড় বড় জাম ফলে থাকত। মানুষজনকে লোভ দেখাত। সেই গাছে উঠলে ফল অবধারিত ছিল মৃত্যু। ওই গাছ থেকে পড়ে অনেকেই মারা গেছিল, তাই পরে ওই গাছে আর কেউ উঠত না।
আমাদের মিলননগর বটতলাতে আছে একটা ঝাঁকড়া বট গাছ। এই গাছে নাকি বাস করে দুটো ভূত। তাদের আবার মাথা নেই। অনেক রাত্তিরে নাকি তাদের দেখা যায়। এই গাছের তলা দিয়ে সন্ধেবেলা গেলে বাচ্চাদের অসুখ করে বলে অনেকে মনে করে।
ভূত আছে কী নেই তর্কের ব্যাপার। তবে যারা দেখেছে তারা সত্যি বলেই মানে। আর একটা গল্প বলে আমার গল্পের ঝাঁপি এবার বন্ধ করব। তোমাদের জন্য এই লেখাটা নিয়ে চিন্তা করছি। কাল খুব রাত্তিরে ঘুম ভেঙে গেল, মনে হল ঘরে কারা যেন খুব কথা বলছে। ফ্যাঁস ফেঁসে গলা। কী যে বলছে তাও ছাই কিছু বুঝলাম না। মনে হল আমাকে নিয়েই বলছে। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। মাকে জড়িয়ে ধরলাম আর মনে মনে ঠাকুরের নাম করতে লাগলাম। আস্তে আস্তে ফ্যাঁস ফেঁসে গলাগুলো থেমে গেল আর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।