গ্রামের নাম আলালপুর। বায়ান্ন ঘর জোতদার আর জমিদারের বসত। বড় বড় দালানকোঠায় জমিদারদের বসত। পাইকপেয়াদা, বরকন্দাজ, ষোল বেহারা পাল্কি , গায়ক, বাদক কী নেই গ্রামটাতে!
এ-গ্রামের এক জমিদারের নাম লোহারাম মিত্তির। লোকে তাকে বলে ভূতের রাজা। ভূতেরা তার কথায় ওঠবস করে। মিত্তির মশাইয়ের ষোল বেহারার পাল্কিবাহক ষোলজন ভূত। তার লাঠিয়ালবাহিনী সবাই ভূত। এমনকি গায়ক বাদক সবাই ভুত। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গড়াই নদীতে লোহারাম মিত্তির নাইতে যান ষোল ভূত বেহারার কাঁধে চড়ে পাল্কিতে। গিন্নির বাপের বাড়ি যেতেও ষোলবেহারা পাল্কি। গিন্নি বুঝতেই পারেন না বেহারারা তার স্বামীর পোষা ভূত কিনা।
পদ্মার ওপারে বক্সীপুর গ্রামের মিতিন বক্সীর সাথে লোহারাম মিত্তিরের গলায় গলায় ভাব। অন্যদিকে, নিজের গ্রামের শীতল জমিদারের সাথে লোহারামের লাঠালাঠির সম্পর্ক। যদিও শীতলবাবু লোহারাম মিত্তিরের ছোট ভায়রাভাই।
বড় ভায়রা লোহারামবাবুর নামে আজেবাজে কথা বলে বেড়ালেও শীতলবাবু তাঁর সামনে কিছু বলতে সাহস করেন না, রাতবিরেতে কখন না জানি লোহারামবাবুর ভূতেরা তার ঘাড়টি মটকে দেয় এই ভয়ে। মিতিনবাবুর পদ্মার চরে অঢেল জমিজমা। বর্ষায় জমির সীমানা ঠিক থাকে না। জমিতে পলি পড়ে সব একাকার হয়ে যায়। চোত মাসে চরের দখল নিতে গিয়ে লাঠালাঠি হয়। চরের দখল নেওয়ার জন্যে লোহারামবাবুর ভূতবাহিনীকে ভাড়া করার পর থেকে মিতিনবাবুকে আর হার স্বীকার করতে হয়নি। তাই লোহারামবাবুর সাথে মিতিনবাবুর দহরম মহরম অন্য রকমের। শীতলবাবু হিসেব মিলাতে পারেন না, মিতিনবাবু কীভাবে চরের দখল নেন! তবে কি ভায়রাভাই লোহারামবাবুর ভূতবাহিনী সেই কাইজাতে ..
তিনি আর ভাবতে পারেন না। লোহারামবাবুর মানসম্মান আর প্রতিপত্তি দেখে শীতল বাবুর হিংসে হয়। শীতলবাবু বলে বেড়ান, “লোহারামবাবু ভূত পোষেন, আমিও ভূত পুষব।” তবে সেই ভূত পোষার শখ শীতলবাবুর মন থেকে উবে যায় তার গিন্নির মুখঝামটায়।
গিন্নি বলেন, “ জামাইবাবুর সঙ্গে পাল্লা দিও না।”
শীতলবাবু গিন্নির কথা শুনে চুপ মেরে থাকেন।
গিন্নি আবার মুখ খোলেন,“জামাইবাবু হয়ত তোমার মতলবটা জেনে গেছেন, তাই জামাইবাবু গত পরশু পেতনীতলা গিয়েছিলেন ষোল বেহারার পাল্কিতে।”
শীতলবাবু মুচকি হাসলেন। গিন্নির কথাটা ঠিকই। লোহারামবাবু সত্যি সত্যি পেতনীতলা গিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর কী হয়েছিল তা শীতলগিন্নি জানেন না।
পেতনীতলা যাবার পথে একটা বিপত্তি ঘটে। লোহারামবাবু ষোল বেহারার পাল্কিতে চড়ে বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার পর পাকুড়বাগান পেরিয়ে তেঁতুলতলা ছাড়িয়ে একটু এগোতেই শীতলবাবুর নায়েব রামবাবুকে দেখতে পেয়ে বেহারাগুলো পাল্কি ফেলে ভোঁ দৌড়।
লোহারামবাবু প্রথমে বুঝে উঠতে পারেননি, তাঁর বেহারাগুলো তো মানুষ নয়! তবে রামবাবুকে দেখে পাল্কি নামিয়ে রেখে পালাল কেন? পরে তিনি মনে মনে ভাবলেন, ভূতেরা রাম নাম শুনলেই আঁতকে ওঠে। তাই আজ তারা তাদের চোখের সামনে রামবাবুকে জলজ্যান্ত দেখে ভয়ে পালিয়েছে। ঠিকই ভেবেছিলেন, কারণ রামবাবু চলে যেতে না যেতেই ভূতগুলো এক পায়ে দুই পায়ে এসে আবার হাজির !
লোহারামবাবু ভূতগুলোকে আদেশ করলেন , “পাল্কি ফেরা, বাগানবাড়ি চল্।” বাবুর কথা শুনে ভূতগুলো মনে মনে রেগে যায়। তাদের একজন বিড়বিড় করে বলে, “যাচ্ছিলাম একটা শুভ কাজে, এখন সব ভেস্তে গেল। মানুষের পাল্লায় পড়ে কত কী না করতে হয় !”
পালের গোদা গ্যাঘো ভূতটা পাল্কি দুটোর আগে আগে চলছিল। সে বলল, “পা চালিয়ে চল তো দেখি, বাগানবাড়িতে পৌঁছে আমেজ করে মৌজ করা যাবে।”
পালের গোদার কথা না শুনে ভূতেদের উপায় নেই। একজন ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,“আমাগের পালের গোদা গ্যাঘোটার জন্যি ব্যাগার খাটতি হচ্ছে রে তোদের।”
ভূতটার কথা শুনে আর একটা ভূত বলল, “ক্ষেতি কী? বাগানবাড়িটাও দেখে আসা যাবেনে।”
“বাবুর বাগান বাড়ির কী দেখতে হবে! পিংপং?” খটমট নামের শিক্ষিত ভূতটা বলে উঠল। খটমট কলকাতায় থাকা ভূত। ও কত কিছু দেখেছে, আর কত কিছু জানে। বাগানবাড়িতে পৌছে ভূতগুলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
পাল্কি থেকে নেমে লোহারামবাবু বাগান বাড়ির দিকে তাকাতেই চক্ষু চড়কগাছ। বাগান বাড়ির কী শ্রী রে! তিনি মনে মনে ভাবলেন, এ তো দেখছি ভূতের বাগান বাড়ি! কে বলবে মানুষের বাগান বাড়ি ওটা। না জানি এমনটা কে করেছে! শীতলই কি আমার বাগান বাড়িটা কব্জা করে নিয়েছে?
লোহারামবাবু এইসব ভাবছেন এমন সময় বাগান বাড়ির ভেতর থেকে দলে দলে কিম্ভূতকিমাকার চেহারার কারা যেন বেরিয়ে আসতে লাগল। দেখে লোহারামবাবু হতবাক। বুঝতে পারলেন, ওগুলো ভূত। তাহলে ওরা কি শীতলের ভূতবাহিনী?
বাগানবাড়ির গেটে চোখ পড়তেই লোহারাম বাবুর চোখ ছানাবড়া। “তাহলে কি আমার বাগান বাড়ি …..” কথা শেষ করার আগেই লোহারামবাবু ভিমরি খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে গোঁঙাতে লাগলেন।
গ্যাঘো ছুটে এসে লোহারামবাবুর মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে মাথায় ফুঁ দিতে লাগল। চোখেমুখে জলের ছিটে দেয়ার দরকার। কিন্তু পাল্কির বেহারাগুলো কোথায় গেল!
লোহারামবাবুর মাথায় ফুঁ দিতে দিতে এক সময় তিনি চোখ খুলে বললেন, “আমার কিচ্ছু হয়নি, বাবাজি গ্যাঘো! কেবল ওইটে দেখে…”
এই বলে বাগানবাড়ির,গেটের সামনে বড় একটা সাইনবোর্ডের দিকে দেখালেন তিনি। তাতে লেখা “ভূতের বাগান বাড়ি !”
খানিক বাদে লোহারামবাবুর মনে হল তার ছোট ভায়রা শীতলবাবুর মতোই কে যেন এদিকেই আসছে। শীতলই তো ! এ সময় শীতল কেন এখানে।
শীতলবাবু এগিয়ে এসে তার দিকে মুচকি হেসে বললেন,”আপনি এখানে এ অবস্থায় কেন?”
শীতলের কথার কী জবাব দেবেন তা লোহারাম ভেবে পেলেন না। এবার শীতলবাবু বললেন, “দাদা, আপনার বাগানবাড়ি কি ভূতেদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন? সাইনবোর্ডে লেখা দেখছি, ভূতের বাগান বাড়ি?”
এবারও তিনি কোন জবাব দিলেন না। তিনি মনে মনে ভাবলেন, তবে কি আমার বাগানবাড়ি সত্যি সত্যি ভূতের বাগানবাড়ি হয়ে গেছে? নির্ঘাৎ শীতলই এই কু’কাজটা করেছে। এই ভেবে তিনি মনে মনে বললেন, ভূতের রাজা লোহারাম মিত্তিরকে চেন না শীতলবাবু, তোমাকে আমি চিনিয়ে ছাড়ব দু’একদিনের মধ্যে!
কথাটা প্রচার হতে দেরি হয় না। পদ্মাপাড়ের জমিদার মিতিনবাবু খবরটা শোনার পর ভাবলেন, এটা শীতলবাবুর কাজ না হয়েই পারে না। হয়ত শীতলবাবু পটলডাঙা থেকে একপাল ভূত এনে লোহারামবাবুর বাগান বাড়ির দখল নিয়েছে।
আসল খবরটা জানবার জন্যে মিতিনবাবু নিধিরাম গোমস্তাকে পাঠাতে চেয়েও শেষমেষ নিজেই ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলেন। লোহারামবাবুর বাড়ি এসে তাঁর শুকনো মুখটা দেখে তিনি বুঝলেন একটা কিছু ঘটেছে। লোহারামবাবুতো কখনোই ব্যাজার মুখে থাকার মানুষ না।লোহারামবাবুর মুখ থেকে সব বৃত্তান্ত শুনে মিতিনবাবু বুঝতে পারলেন শীতলবাবুই যতসব নষ্টের মূলে!
লোহারামবাবু মিতিনবাবুকে বললেন, “ আমার বাগানবাড়িটা ভূতের বাগানবাড়ি হলে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু তাই বলে দেশের ভূতের বদলে কোথাকার পটলডাঙার ভূতেরা বাড়িটা দখল করে নিয়ে ভূতের বাড়ি বানাবে সেটা তো সহ্য করা যায় না।”
দু’জনে বেশক্ষণ ফিসফাস করে বলাবলির পর মিতিনবাবু বললেন,“পদ্মা চরের দখল নিতে মানুষে লড়াই হয়, এবার না হয় বাগানবাড়ির দখল নিতে ভূতে ভূতে লড়াই হবে !”
লোহারামবাবু কী যেন ভেবে বললেন,“ মিতিনবাবু, ভাবছিলাম, আমার ভূতবাহিনী আমার বিরুদ্ধে গোপনে গোপনে শীতলের পক্ষে কাজ করছে কিনা কে জানে!”
“বলেন কী, লোহারামবাবু!”
“আমার তো সেটাই মনে হচ্ছে। গ্যাঘোটার উপর আমার ভূতেররা মোটেই খুশি নয়। বিষয়টা তদন্ত করার জন্যে খটমট নামের ভূতটাকে লাগিয়েছি। আমার ভূতগুলোকে খুশি করে বাগান বাড়ি থেকে শীতলবাবু’র ভূতগুলোকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।”
“ভূত তাড়ানো গুণীনটুণীন আনা লাগলে আমাকে বলেন আমি ঘোড়া ছুটিয়ে যেয়ে এনে দিচ্ছি।” মিতিনবাবু বলে উঠলেন।
“ না, না গুণীনটুণীনের দরকার নেই। তাহলে তো এ তল্লাটে ভূতের নাম গন্ধ থাকবে না। আমি দেখছি , ভূত দিয়ে ভূত তাড়ানো যায় কিনা।”
মিতিনবাবু চলে যাওয়ার পর খটমট এসে হাজির। লেহারামবাবু যা ভেবেছিলেন তাই। খটমট বলল,“ আপনার উপর ওদের তেমন রাগ নেই, তবে আমাদের পালের গোদা গ্যাঘো’র উপর ওরা বেজায় গোসা করে আছে। ওদের নাকি আপনার কাছে একটা দাবী, দাবীটা কী শত চেষ্টা করেও ওদের কাছ থেকে জানতে পারিনি।”
“কাল রাতে অমাবস্যা, আর বারটাও শনিবার। দক্ষিণগড়ের শ্যাওড়াতলায় আমার ভূতবাহিনীর সবাইকে রাতের আড়াই প্রহরে হাজির হওয়ার কথা জানিয়ে দে, খটমট। আর তখনই আমি ওদের দাবিদাওয়ার কথা শুনব। ” লোহারামবাবু বললেন।
ষোল বেহারার পাল্কিতে চড়ে পরদিন রাতে তিনি দক্ষিণগড়ের শ্যাওড়াতলায় হাজির হলেন। আগে থেকেই পাইক পেয়াদারা বসবার সুন্দর আয়োজন করেছে দেখে লোহারামবাবু বেজায় খুশি হলেন। পালের গোদা গ্যাঘোভূতটা সব কিছু তদারক করছে। লোহারামবাবু ভাবলেন, তাহলে ওরা গ্যাঘোকে অমান্য করার সাহস করেনি।
সভা শুরু হল লোহারামবাবুকে বন্দনা করার মাধ্যমে। তারপর লোহারামবাবু কথা শুরু করলেন,“তোমাদের বন্দনা আমার আর ভাল লাগছে না।”
বাবুর কথা শুনে খটমট বলল, “ আমরাই যখন ভাল নেই আপনি ভাল থাকবেন কীভাবে!”
“ আমার বাগান বাড়ি অন্যদেশের ভূতেরা দখল করে সাইনবোর্ডে লিখেছে ‘ভূতের বাগানবাড়ি’। আর তোরা তা দেখেই ভয়ে পগার পার হলি কেন? জবাব দে গ্যাঘো। এ বিষয়ে আমি তদন্ত করে দেখেছি, তোরা কি তদন্ত প্রতিবেদন শুনতে চাস্?”
গ্যাঘো কোন জবাব না দিলেও সবাই এক সঙ্গে বলে উঠল, “না না, আমরা ও-সব শুনতেটুনতে চাই না।”
“তোদের সর্দার গ্যাঘোর প্রতি তোদের আস্থা কমে গেছে, তাই না?”
এবারও ভূতেরা তার প্রশ্নের জবাব না দেওয়ায় লোহরামবাবু বললেন,“গ্যাঘোই তোদের সর্দার থাকবে,তবে তোদের কোন কথা থাকলে আমাকে বলতে পারিস্ সবার পক্ষ থেকে একজন।”
লোহরামবাবুর কথা শুনে সবাই এক অপরের দিকে তাকাতে থাকে। শেষে মাঝের সারিতে বসা চটরপটর নামের একটা ভূত উঠে করজোরে বলল, “প্রণাম মহারাজ। ভয়ে বলব না—”
তার কথা শেষ করতে না দিয়ে লোহারামবাবু বললেন, “ভণিতা না করে যা বলবি বলে ফেল্।”
“আমাগেরে তো কোন স্থায়ী আস্তানা নেই মহারাজ! আমরা গাছে গাছে, ডালে ডালে কেমনে থাকি তাতো আপনারে বুঝায়ে বলতি হবি নানে। মুনিস্যি সমাজে তো আমাগের কোন জায়গা নেই। আপনার দয়ায় আমাগের নাকে নাকে কতা বন্ধ হইছে, তা নাহলি পারে আপনার লগে আমাগের চলা সম্ভব হতিনি। আমাগের—”
এবারও লোহারামবাবু তার কথা থামিয়ে দিয়ে বললেন,“ যা বলবি সোজা করে বলতি পারিস্ না! খটমট বাবাজি, চরপটর কী বলতি যাচ্ছে তুই যদি জানিস্ তবে তোর মুখ দিয়ে শুনি।”
“আমি তদন্তে যা জেনেছি তা হচ্ছে, আপনার ভূতেরা একটা স্থায়ী আস্তানা হিসাবে আপনার বাগানবাড়িটা চাইছে।” “বাগানবাড়ি কি আর আমার বাগান বাড়ি আছে? এখন তো ওটা ভূতের বাগানবাড়ি!”
“আমাগেরে আদেশ দ্যান আমরা শেতলবাবুর ভূতগুলোরে মেরে ধরে পদ্মার ওপারে রাখে আসতিছি।” ওখানে উপস্থিত ভূতগুলো একসঙ্গে বলে উঠল।
লোহারাম মিত্তির বেশ অনেকটা সময় ধরে ভাবলেন। বিষে বিষে বিষক্ষয়। ভূতে ভূতে ভূতক্ষয়। শীতলের ভূতগুলোকে তাড়াতে না পারলে আমার তো কোন অস্তিত্ব থাকবে না। যাক, ওদের কথায় রাজি হয়ে যাই। ভেবেচিন্তে তিনি বললেন, “আমি রাজি। আমার বাগানবাড়ি তোদের দিয়ে দিলাম। শীতলের ভূতগুলোকে মেরেধরে পদ্মার ওপারে রেখে এসে আমাকে খবর দেওয়ার পর আমি তোদেরকে ঘটা করে ওখানে উঠিয়ে দিয়ে আসব।”
লোহারামবাবুর কথা শুনে ভূতেরা তার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠে সবাই মিলে বলল, “আপনি কন তাহলি পারে শেতলকেও ওদের লগে লগে গাঁও ছাড়া করে দেই।”
“ না না , হাজার হলেও ও তো আমার ভায়রাভাই।”
তারপর দু’দলের ভূতে ভূতে একটা লড়াই হল বটে! আশপাশের লোকজন সে রাতেই ঢের পেল লোহারামবাবুর বাগানবাড়ির দিকে কিছু একটা হচ্ছে। প্রচন্ড ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
সারারাত ধরে দু’দলের ভূতের মধ্যে প্রচন্ড লড়াইয়ের পর ভোরের একটু আগে কারা যেন পদ্মার চরের দিকে দুপদাপ পায়ে ছুটছে বলে মনে হল।
বাগানবাড়ি বেদখলমুক্ত হওয়ায় লোহারামবাবু বেজায় খুশি হলেন। নিজের কথার খেলাপও করলেন না। তাঁর নিজস্ব ভূতেদেরকে বাড়িটা দিয়ে দিলেন। সেই থেকে পাঁচিলঘেরা আম জাম কাঁঠাল গাছে ভরা চকমেলানো বাড়িটা সত্যি ভূতের বাগানবাড়ি হয়ে গেল। সেই আলালপুর গ্রামটা আজও আছে, কিন্তু বায়ান্ন ঘর জমিদার জোতদার আর চকমেলানো দালানকোঠা নেই। ভূতের বাগানবাড়িটা আজ না থাকলেও জায়গা দেখিয়ে লোকে বলে ওটাই হচ্ছে ভূতের বাগান বাড়ি।