(১ম অংশ)
ঘটনার শুরু অনেক বছর আগে। তাও প্রায় ২০০ বছর আগে। তখন গ্রামে এক গরিব কিন্তু সৎ লোক বাস করতো। ধরা যাক তার নাম “নাসির”। তো, সে সৎ হলেও, হঠাত তার মাথায় বড়লোক হওয়ার ভূত চাপে। সে খালি উপায় খুজতে থাকে কীভাবে বড়লোক হওয়া যায়। খুঁজতে খুঁজতে একদিন সে কালোজাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিক সম্পর্কে জানতে পারে। সে অনেক খোঁজাখুঁজির পর এক সাধু বাবা সম্পর্কে খোঁজ পায়, যে কিনা একজন ব্ল্যাক ম্যাজিশিয়ান। নাসির সেই সাধু বাবার সাথে সাক্ষাতের জন্য পাগল হয়ে ওঠে। সে খালি সুযোগ খুঁজতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে একদিন সে সেই সুযোগ পেয়েও যায়। সে সাধু বাবার সাথে সাক্ষাত করে এবং তার ইচ্ছার কথা সাধু বাবাকে খুলে বলে। তার সব ইচ্ছার কথা শুনে সাধু বাবা তাকে সাহায্য করতে চায়। সাধু বাবা তাকে বলে দেয় অমাবস্যার রাতে তার সাথে দেখা করতে। তারপর নাসির বাড়ি ফিরে আসে এবং অপেক্ষা করতে থাকে। নাসিরের অপেক্ষার প্রহর কাটে ১০ দিন পর। ঘুটঘুটে কালো অমাবস্যার রাত। এই রাতেই তার প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা। নাসির সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। সে রাতের অপেক্ষায় উদগ্রীব ছিল। রাত হওয়ার সাথে সাথেই সে আর দেরি না করে চলে যায় সাধু বাবার বাড়ি। গিয়ে দেখে সাধু বাবা তার বাড়ির উঠোনে বিশাল এক চক্র তৈরি করে কি কি সব আঁকাচ্ছেন। তার ভিতর কিছু কুৎসিত ও বিশ্রী ছবিও ছিল। সাধু বাবার আঁকানো শেষ হলে বাবা তাকে বলে সেই চক্রের মাঝখানে গিয়ে বসতে। এতক্ষণ নাসিরের মনে আগ্রহ থাকলেও হটাত সে ভয় পাওয়া শুরু করে। সে বসতে ইতস্তত করে। সাধু বাবা তাকে ধমক দিয়ে ভিতরে বসিয়ে দেয়। নাসির মনে ভয় আর আগ্রহ উভয় নিয়ে সেই চক্রের মাঝখানে গিয়ে বসে। তারপর সাধু বাবা মন্ত্র পড়তে শুরু করে। আস্তে আস্তে সাধু বাবার গলার আওয়াজ বাড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর তার আওয়াজ অনেকটা ভয়ঙ্কর আকারে চলে যায়। এবার নাসিরের মনের সকল আগ্রহ উবে যায়। সে ভয়ে সেই চক্র ছেড়ে উঠে যেতে যেতে চায়। কিন্তু সে খেয়াল করে সে নড়াচড়া করতে পারছে না। তার সম্পূর্ণ শরীর অবশ হয়ে গেছে। সে তারপর মনের অনিচ্ছা নিয়েই সেখানে বসে থাকে। সে রাতের মন্ত্র পড়া শেষ হলে সাধু তাকে কিছু কাজ করতে বলে। নাসির তখন পুরোপুরি ভীত। সে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন সাধু তাকে জানায়, সে এখন এটার ভিতর প্রবেশ করে ফেলেছে। সুতরাং তাকে সেই কাজ করতেই হবে। নাহলে তার বিরাট ক্ষতি হবে। নাসির তখন জানতে চায় কি কাজ করতে হবে। সাধু তাকে ১৩ টা তাবিজ দেয় এবং বলে যে, তাবিজ টাকে এমন জায়গায় পুঁতে দিয়ে আসতে, যেখানে পাশাপাশি ১৩টা লাশ আছে এবং সবাই শনিবারে মৃত্যুবরণ করেছে। এ কথা শুনে নাসির কিছুটা অবাক হয়। কারণ পাশাপাশি ১৩টা লাশ পাওয়া গেলেও, সবাই যে শনিবারেই মারা গেছে তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে সাধু নাসিরকে নিয়ে এক পুরনো শ্মশান ঘাটে যায়। অবাক হলেও নাসির নিজের চোখে দেখে পুরো শ্মশান এ মাত্র ১৩টাই লাশ পুঁতে রাখা হয়েছে। সে ভয়ে ভয়ে এগোতে থাকে। যাওয়ার সময় সাধু তাকে বলে দেয়, যে তাবিজ পোঁতার সময় যদি কেও নাসিরকে পিছন থেকে ডাক দেয়, তাও যেন সে ফিরে না তাকায়। যেভাবেই হোক, একসাথে ১৩টা তাবিজ গাড়তেই হবে। নাসিরের মনে অনেক ভয় কাজ করলেও কিছু করার নেই। সে ওইদিন তাবিজ গেঁড়ে রেখে আসে। তারপর সে খেয়াল করতে থাকে সে আর আগের মত ভয় পাচ্ছে না। সে আবার মনের ভিতর আগ্রহ পায়। সে শিখতে থাকে। সাধু তাকে প্রতি শনিবার দীক্ষা দিতে থাকে। এভাবে সে সাত বছর দীক্ষা লাভ করে। এই সাত বছরে সে অনেক ক্ষমতা অর্জন করেছে। দীক্ষা দিতে দিতে একসময় সাধু খেয়াল করে যে, নাসির এখন অনেক বেপরোয়া হয়ে গেছে। সে কারোর কথাই তেমন গায়ে লাগায় না। এতে সাধুর মনে শঙ্কা জাগে। হঠাত একদিন নাসির সাধু কে বলে, সে অসীম ক্ষমতা লাভে আগ্রহী। সাধু তৎক্ষণাৎ কিছু না বললেও বুঝতে পারে যে বিপদ আসতে চলেছে। নাসিরকে সে একদিন বলে, তুমি যে ক্ষমতা পেয়েছ তাতেই তোমার হয়ে যাবে, তুমি আর বেশি ক্ষমতা প্রত্যাশা করোনা। নাসির এই কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। নাসির মনে মনে রাগে ফুঁসতে থাকে। একসময় নাসির তার গুরুকে খুন করার পরিকল্পনা করে। তারপর সে তার এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করার চিন্তা করতে থাকে। এর মধ্যে হঠাত একদিন সাধু নাসিরকে তার বাড়িতে ডাকে এবং বলে, সে এই সাত বছর সে যে তপস্যা করেছে, আজকে তার শেষ দিন। আজকে তার তপস্যা শেষ হবে। সাধু নাসিরকে বলে সেই মাসের শেষ শনিবার হবে অমাবস্যার দিন, সেইদিন রাতে ১২টার পর তার বাসায় আসতে। নাসির খুব খুশি হয়। কারণ সে তার গুরুকে খুন করার সুযোগ পায়, আবার তার শক্তি বাড়ানোর ও একটা সুযোগ পায়। নাসির খুশিমনেই শনিবার অমাবস্যার দিন রাত ১২টার পরে তার গুরুর বাসায় যায় এবং গুরুকে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষন পর সে দেখতে পায় তার গুরু বাড়ির সামনে খোলা উঠোনে কি যেন বিড়বিড় করে বলছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে কাকে যেন ডাকছে। নাসির ঘরের ভিতর থেকে একটা চাকু নিয়ে বেরিয়েছিল, সেটা নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু একটু কাছে যাওয়ার পর নাসির ভয়ে আঁতকে ওঠে। সে কল্পনাও করতে পারেনি এমন কিছু হতে পারে। সে ভয়ে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। সে দেখতে পায়.
(২য় খন্ড)
নাসিরের গুরু তার উঠোনে যে মন্ত্র পাঠ করছিল তা ছিল মূলত শক্তি ফেরত দেয়ার জন্য। নাসির বুঝতে পারে তার গুরু তার শক্তি ফিরিয়ে নিবে। তার সমস্ত শক্তি পুনরায় আগের জায়গায় চলে যাবে। এটা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তার এত বছরের তপস্যার সাধনার ফল সে এভাবে হারিয়ে যেতে দিতে চায় না। তাই সে দৌড়ে তার গুরুর পিছনে যায়। কিন্তু সে খেয়াল করে তার গুরুর চারপাশে এক বলয় তৈরি হয়ে আছে। যার কারনে সে তার গুরুর আওতায় ঢুকতে পারছে না। সে প্রাণপণ চেষ্টা করে তার গুরুকে থামানোর। এক সময় সে সফল হয়। সে তার গুরুর পিঠে চাকু বসিয়ে দেয়। তার গুরু মন্ত্র পড়া অবস্থায় আস্তে আস্তে মারা যেতে থাকেন। নাসির এতদিন শিখেছিল কীভাবে অন্যদের থেকে শক্তি ভক্ষন করা যায়। সে আজ সেটা তার গুরুর উপর প্রয়োগ করল। সে শক্তির এক অনন্য স্বাদ অনুভব করল। সে বুঝতে পারল তার ভিতর শক্তির জন্য একটা খুধা তৈরি হচ্ছে। তার শক্তি দরকার। যেভাবে হোক, যেমনই হোক। সে বুঝতে পারল এভাবে শক্তি খোঁজার চেয়ে শয়তানের কাছে শক্তি ভিক্ষা করা অনেক সহজ। সে তাই করতে উদ্যত হল। সে পরবর্তী ১০ বছর শুধু শয়তানের তপস্যা করল। যার বিনিময়ে শয়তান তাকে অনেক শক্তি দিল। এই শক্তির বলে সে অনেক কিছুই করতে পারে। তারপর ১৭ বছর পর সে তার গ্রামে ফিরে আসে। সে এসে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সে গ্রামে আসার পর দেখতে পায় এক ক্ষমতাশালী জমিদারকে। তার শখ হয় জমিদার হওয়ার। সে এখন অনেক শক্তির মালিক। সে জমিদারকে বলে তার কাছে ক্ষমতা দিয়ে দিতে। জমিদার স্বাভাবিক ভাবেই রাজি হয়না। সে জমিদারকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখায়। জমিদার তাতেও রাজি হয়না। বরঞ্চ তাকে অপমান করে বের করে দেয়। নাসির ভাবে তাকে শাস্তি দিবে। তাই সে জমিদারের বাড়ির সামনে গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্র পড়তে থাকে। কিছুদিন পর দেখা যায় তাদের বাড়ির সব গাছ শুকিয়ে মারা যাচ্ছে। কিছুদিন পর তাদের বাড়ির সব পশু একে একে মারা যেতে লাগল। তারপর বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চারা আক্রান্ত হতে থাকে। এই অবস্থা দেখে জমিদার কিছু বুঝতে পারেনা। পরে সে বুঝতে পারে এটা সেই নাসিরের কাজ। তখন জমিদার নাসিরের কাছে এসে তার পায়ে পরে ক্ষমা চাইতে থাকে। নাসিরকে জমিদার বলে তার সব ক্ষমতা নিয়ে নিতে। সে নিজে জমিদারের জায়গা ছেড়ে দেয়, আর বলে তাদের বাড়ির সবাইকে সুস্থ করে দিতে। নাসির তখন অট্টহাসি হাসতে থাকে। সে তার ক্ষমতার বড়াই করতে থাকে। সে অনেক অহঙ্কার করতে শুরু করে। জমিদার হওয়ার পর সে একদিন এক যাত্রাপালার আয়োজন করে। সেখানে সে সামনের কাতারে বসে ছিল। এক নিরীহ লোক ভুলে তার সামনে দিয়ে জুতা পায়ে দিয়ে হেঁটে যায়। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে সেই লোকটাকে তৎক্ষণাৎ বীভৎস ভাবে খুন করে। দিন দিন গ্রামে তার অত্যাচার বেড়ে যেতে লাগল। সে কারনে-অকারনে বিভিন্ন মানুষকে হত্যা করতে লাগল। তার প্রভাবে গ্রামের সুখ-শান্তি বিনষ্ট হয়ে যায়। সে এতটাই খারাপ ছিল, যে সে যদি একবার খারাপ নজরে কোন গাছের দিকে তাকাত, সেই গাছে আর কোনদিন ফল-ফুল ধরত না। সেজন্য গ্রামের লোকজন তাকে অনেকটা এড়িয়ে চলত। এর মাঝে একদিন গ্রামের এক সুন্দরি মেয়ের দিকে তার নজর পরে। সে তাকে বিয়ে করতে চায়। সে তাকে অনেকটা জোর করে বিয়ে করে নিয়ে আসে। মেয়েটি যদিও শুরুতে কিছু জানতো না, পরে আস্তে আস্তে মেয়েটা নাসিরের শয়তানের তপস্যা সম্পর্কে জানতে পারে। মেয়েটা নাসিরকে অনেক বোঝায় এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে। কিন্তু নাসির তাতে কর্ণপাত করেনা। নাসির শক্তির জন্য আরো বেশি পাগল হয়ে ওঠে। সে পানির নিচে থেকে তপস্যা করতে শুরু করে। সে শুরুতে ১-২ দিন পানির নিচে থেকে তপস্যা করতো। ধীরে ধীরে সে পানির নিচে থাকার কৌশল রপ্ত করে। এরপর সে একটানা ১০-১৫ দিন পানির নিচে থেকে তপস্যা করতো। তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য সে পানির ভিতরে কাঁচা মাছ ধরে খেত। গ্রামের মানুষ অবাক হয়ে দেখে যখন সে পানির নিচে তপস্যারত থাকতো, তখন পানির উপরের ভাগ দেখলে মনে হত যেন পানি ফুটছে, অনেকটা ফুটন্ত পানির মত। এভাবে সে আরো ক্ষমতা অর্জন করে। এক পর্যায়ে সে একদিন অনুভব করতে পারে যে একদল তান্ত্রিক সেই গ্রামে প্রবেশ করছে। সে তখনি পানির নিচ থেকে উঠে আসে এবং দেখতে পায় আসলেই তান্ত্রিকরা গ্রামে প্রবেশ করেছে। সে তখনি তার বিপদ সম্পর্কে ধারণা করতে পারে। কিন্তু সে মনে মনে খুশিও হয় তার শক্তির কথা চিন্তা করে। সে অহংকারবোধ করতে থাকে। সে পানির নিচ থেকে উঠে আসে এবং পথ ধরে হাটা শুরু করে। ততক্ষনে তান্ত্রিকরা তার বাড়িতে পৌছে গিয়েছে। সে যখন তার বাড়িতে পৌছায় তখন সে দেখতে পায় তান্ত্রিকরা মন্ত্র পড়া শুরু করেছে। তারপর………..
(৩য় অংশ)
নাসির যতক্ষণে তার বাড়িতে পৌছায়, ততক্ষণে তান্ত্রিকরা তার বাড়িতে পৌছে মন্ত্র আওড়ানো শুরু করে দিয়েছে। তারা সব মিলিয়ে ১১ জন ছিল। তাদের ভিতর ৬জন উচ্চস্বরে মন্ত্র জপ করছিল। বাকি ৫জনকে নাসির দেখতে পেলনা। মন্ত্র শুনে নাসিরের রাগ একেবারে মাথায় উঠে যায়। সে রাগে চিল্লাতে চিল্লাতে বাড়িতে প্রবেশ করতে যায় কিন্তু প্রবেশ করতে পারেনা। সে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। সে আবার দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করতে থাকে। এবারের চেষ্টায় সে ভিতরে ঢুকতে সক্ষম হয়। সে খেয়াল করে ভিতরে কোথাও একজায়গায় আগুন জলছে। আর এই আগুনটার কারনে তার সেখানে ঢুকতে কষ্ট হচ্ছিল। ১৫-২০ মিনিট অতিক্রান্ত হওয়ার পর সে কিছুটা আঁচ করতে পারে। সে বুঝতে পারে তাকে শেষ করার জন্যই মূলত এই তান্ত্রিকদের আগমন। তান্ত্রিকরা যখন মন্ত্র পাঠে ব্যাস্ত তখন সে মনে মনে হাসতে লাগল। হাসতে লাগল এই ভেবে যে, সে যদি তান্ত্রিকদের উপর চড়াও হয়, তাহলে এই পুঁচকে তান্ত্রিকদের কি দশা হবে। কিছুক্ষন পর সে সেই দলের আরো ৪জনকে দেখতে পায়। কিন্তু বাকি একজনকে সে খুঁজে পায়না। সে আনমনা হয়ে খুঁজতে থাকে সেই একজনকে। সে অনুভব করতে থাকে সেই একজন মোটামুটি অনেক শক্তিশালী। কিছুক্ষন পর সেই একজন ও বের হয়ে আসে। এবার তাকে দেখে নাসির একটু ভয় পেয়ে যায়। সে দমে যায়। কারণ সেই একজনের চেহারা ছিল হুবুহু নাসিরের গুরুর মত। যাকে সে প্রায় ১৮ বছর আগে মেরে ফেলেছে। সে ভাবতে থাকে কীভাবে এটা সম্ভব। মৃত একজন মানুষ তার সামনে দাঁড়িয়ে, তাও ১৮ বছর আগের মৃত মানুষ। সে ভাবে, এই লোক যেই হোক, তাকে সে শেষ করে দিবে। এবার তাকে সে একদম শেষ করে দিবে। তার সেই আশায় বাধ সাধে সেই তান্ত্রিক এর দল। তারা এসে নাসির এর হাত শক্ত করে জাপটে ধরে রাখে। নাসির তখন এক অতিমানবিয় শক্তির বলে সেই দলের সবাইকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সবাই দূরে ছিটকে গিয়ে পরে। নাসির তখন একটা চেয়ার নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে ঘরের বাইরের দিকে। সেখানে সে এক বিশাল বট গাছের নিচে চেয়ার নিয়ে বসে। বসার পর সে কোন একটা মন্ত্র পড়ে বট গাছের পাতায় ফুঁ দেয়। এর পর সবাই দেখতে পায় শতবর্ষী গাছটা এক নিমিষে রঙ্গিন থেকে সম্পূর্ণ কালো হয়ে যায় এবং একটু একটু করে মরে যেতে থাকে। ততক্ষণে গ্রামবাসী সেখানে উপস্থিত হয়ে গেছে। সেই গাছটা মুহূর্তের ভিতর ছাই এর মত হয়ে যেতে থাকে এবং সেই তান্ত্রিক দলটার একজনের সারা শরীর হঠাত করে মোচড়াতে শুরু করে। মোচড়াতে মোচড়াতে কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। একজনের মৃত্যুর পর আরেকজনের মুখ থেকে ফেনার মত বের হতে থাকে। কিছুক্ষন পর সেও মারা যায়। এভাবে সেই দলের ১১ জনের ভিতর ৫ জন বিভিন্ন ভাবে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুবরণ করে। এরপর তাদের সর্দারকে নাসির বলে বাকি সঙ্গীদের নিয়ে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। তখন তাদের সর্দার ভয়ে নাসিরের কাছে কাকুতি মিনতি করে তার বাকি সঙ্গীদের প্রান ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। নাসির অট্টহাসি হাসতে হাসতে বলে, আমি চাইলে যে কারো প্রান নিতে পারি, ফিরিয়েও দিতে পারি। তোমরা আমার কাছে ভিক্ষা চাইলে আমি দিতে পারি। তখন সেই সর্দার দিকপাশ না ভেবে তার কাছে ভিক্ষা চায়। নাসির তখন তাদের বলে এক গ্লাস পানি দিতে। নাসির সেই পানি নিয়ে কিছুক্ষন তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর সেই পানি আস্তে আস্তে নীল রঙ ধারণ করে। এরপর নাসির তাদের বলে যে, তাদের প্রান আর ফিরানো সম্ভব না। সর্দার তখন নাসিরের সামনে কান্না শুরু করে। নাসিরের তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বলে মনে হচ্ছিল। সে নিজেকে খোদার সমতুল্য মনে করতে থাকে। সে তাদেরকে বলে তারা নাসিরকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, এজন্য নাসির তাদের দলের লোকের প্রান নিয়েছে। নাসির ভাবে যে সরদারকে ছেড়ে দিবে, ঠিক সেই মুহূর্তে নাসিরের গুরুকে খুন করার কথা মনে পরে। তখন সে এক হিংস্র জন্তুর মত হয়ে ওঠে। সে তার চোখের ইশারায় সেই তান্ত্রিক দলকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলে। গ্রামবাসীরা এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে ভয়ে আতংকে কিছু বলতে পারে না। তারা শুধু একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে। এই ঘটনার পর নাসির আকাশের দিকে তাকিয়ে এক হুঙ্কার দেয়, আর গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে সে বলে আজকে থেকে আমিই তোমাদের মালিক। আমিই তোমাদের প্রভু। এর পর নাসির তার তপস্যার জায়গা, অর্থাৎ পানিতে ফিরে যেতে থাকে। এমন সময় সে পিছন থেকে ডাক শুনতে পায়। ডাক দিয়েছিল মূলত সেই তান্ত্রিক দলের এক মেয়ে সদস্য। তার দলের ভিতর একমাত্র সেই বেচে ছিল। সেই মেয়ের ডাক শুনে নাসির পিছনে ঘুরে তাকায় এবং দেখতে পায় তাকে। সেই মেয়ের দিকে নাসির একটা আগুনের গোলা ছুড়ে মারে। মেয়েটার গায়ে গিয়ে লাগে সেই আগুনের গোলা। এরপর সেই মেয়ে কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। এরপর নাসির গ্রামবাসীর দিকে তাকিয়ে আরেকবার ভয়ঙ্কর একটা জান্তব হাসি দিয়ে পানির ভিতর চলে যেতে থাকে। সেদিনকার মত সব ঘটনার অবসান হলে গ্রামবাসীরা আরেকটি ভয়ঙ্কর দিন দেখার জন্য প্রহর গুনতে থাকে।
(চলবে…….)