বাংলো রহস্য

বাংলো রহস্য

সকাল ৮:২৩।
ক্রিংক্রিং… ক্রিংক্রিং…
না তাকিয়েই ফোন রিসিভ করলাম।
– হ্যালো স্যার। গুড মর্নিং।
আমিঃ হা গুড মর্নিং।
– স্যার একটা গুড নিউজ আছে আপনার জন্য।
আমিঃ কি বলুন।
– একটা বাংলোর খবর পেয়েছি। ডিল করবো?
আমিঃ কত টাকা?
– মাত্র দেড় কোটি টাকা।
আমিঃ কি বলছেন? দেড় কোটি মাত্র?
– হ্যা স্যার! সেটাই অবাক করার!
আমিঃ কোথায়?
– এই তো স্যার বেশি দূর না শহর থেকে। গাড়িতে যাতায়াত করলে মাত্র ১ঘন্টার এর পথ।
আমিঃ হুম বেশি দূরে বলা যায় না। তা আপনি দেখেছেন নাকি?
– না স্যার। মাত্রই গুগলে লেখা দেখলাম। কিন্তু কে বিক্রি করছে তার কোন নাম নেই। আর ই-মেইল আর ফোন নংও নেই। শুধু এড্রেস আছে।
আমিঃ হুম আচ্ছা এড্রেসটা আমাকে মেইল করে দিন ওকে?
-আচ্ছা স্যার।
ফোন রেখে ভাবলাম একজন একটা বাংলো মাত্র দেড় কোটি টাকায় দিতে চাচ্ছে! আমি তো অবাক মাত্র দেড় কোটি টাকা? তাও এই যুগে? হুম অবাক করার মতো। হয়তো যে কেউ প্রথম শুনলে ভিম্রি খাবে তারপর হাসিতে পেট ফাটিয়ে ফেলবে! হা হা হা! বিশ্বাস হচ্ছে না, দেখতে যেতে হচ্ছে। এমনি শুক্রবার! হাতে তেমন কাজও নেই। তাই একটু বেশিই ঘুমাতাম! কিন্তু তা আর হল না। তবে যা শুনলাম তা ঘুমের চেয়ে অনেক বেশি।
টুং…. টুং….। হ্যা একটা মেইল এসেছে। ওপেন করে দেখলাম একটা এড্রেস। হুম শহর থেকে বেশ দূরে না। তবে কাছেও না। কিন্তু শহরের আশেপাশে এরকম বাংলো আছে তা জানতাম না! অবশ্য জানার কথা নয় কারন আশেপাশে খোঁজ না করে দূরেই বেশি খোঁজ করা হয়েছে। যাক তাহলে শেষ পর্যন্ত মিলল! ব্রেকফাস্ট করে গাড়িটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কিছু কাজের জন্য। কাজ সেড়ে লাঞ্চ করে বেড়িয়ে পড়লাম বাংলোর উদ্দেশ্যে।
`
সময় মত পৌঁছেও গেলাম সেখানে। কিন্তু কোন বাংলো দেখছি না তো! তবে জিপিএস-এ কি রং পয়েন্টিং করছে? না এরকম তো হবার কথা নয়। গাড়ি পার্ক করে বাহিরে দাঁড়িয়ে এদিকওদিক তাকিয়ে দেখলাম। শুধু জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ একটা লোক কোত্থেকে যেন এসে বলল-
– বাংলো দেখতে এসেছেন?
আমিঃ(হকচকিয়ে) হ্যা। কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে?
– এখানে যারা আসে তারা বাংলো দেখতেই আসে কেনার জন্য।
আমিঃ ওহ্ আচ্ছা। তা আপনি কি বাংলোর মালিক?
– না!
আমিঃ তাহলে নিয়ে চলুন বাংলোয়!
– আমাকে অনুসরণ করুন।
বাপরে বাপ! কি গম্ভীরভাবে কথা বলে! বাংলো কিনবো বলে কি মাথা খেয়ে নিচ্ছে? এমনভাবে আমার সাথে কেউ আজ পর্যন্ত কথা বলেনি। শালা এ বাংলো না কিনলে আমি নিশ্চিত এই ব্যাটাকে মারতাম, হুম! ঘন জঙ্গল, তাই গাড়ি ঢুকানো সম্ভব না। হেটেই যাচ্ছি।
`
কিছুক্ষণ হাটার পড় একটা বিশাল বাংলোর সামনে এসে দাঁড়াই। বাপরে বাপ এত্তো বড়? কিন্তু দাম মাত্র দেড় কোটি? হুম বেচারা মালিক মনে হয় কোন পছন্দের খদ্দের পাইনি! আরে এতো কষ্ট করে খদ্দের খোঁজার কি প্রয়োজন ছিল? আমাকেই বললে পাড়তো! অবশ্য আমি কোন সুপারস্টার না যে আগে আমাকে বলবে! হা হা হা হা! এসব আমার ভাবার বিষয় না, ভাবার বিষয় একটাই এতো বড় বাংলো, মডেল অনেক আগের কিন্তু দেখতে এতো নতুনের মতো দেখাচ্ছে কেন? যেন জীবন্ত!! মনে হয় বিক্রি করার জন্য মেরামত করেছে! যাক ভালোই হল আমাকে আলাদাভাবে কষ্ট করতে হবে না। লোকটা আমাকে ভিতরে নিয়ে গেল। সারা বাড়ি আমাকে ঘুরে দেখাতে লাগলো।
বাংলোর গেটে দুটি বিশাল ঈগল পাখির মূর্তি। বাংলোটা পূর্বমুখী। বেশ জায়গা জুড়ে। আশেপাশে একটু ঘন জঙ্গল। সামনে কিছুটা ফাকা জায়গা রয়েছে। একটা ঝর্নাও আছে। তার পাশে একটা মূর্তি। বাংলোটা তিনতলা, কিন্তু বেশ উঁচু। বাংলোটায় একটি বড় গম্ভুজ, তার পাশে আরো দুটি গম্ভুজ। ভিতরের অবস্থা বড়ই অদ্ভুত। আর সকল জিনিশই আগের যুগের। প্রাচীন আমলও ঠিক না, মধযুগও বলা যায় না তবে মধ্যযুগের শুরু শুরুভাব এমনসময়। সামনে অনেক বড় জায়গা জুড়ে বৈঠকখানা! ইংরেজিতে যাকে বলে ড্রইং রুম। ঠিক মাঝখান দিয়ে সিঁড়ি গেছে যা দুইদিকে ভাগ হয়ে উপরে উঠেছে। একভাগ উত্তর দিকে প্রসারিত, অন্যভাগ দক্ষিনে। কিন্তু মজার ব্যাপার এই যে উত্তর দিকে সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ দিকের সেপ কিন্তু সেরকম না। সোজা গিয়েছে ঠিকই তারপর পিছনে মানে পশ্চিমদিকে বাঁক নিয়েছে। কিন্তু তা খুবই অল্প ৫-৬টি রুম। হয়তো এটা গ্রীষ্মকালের আরামের জন্যই করা হয়েছে। বেশ আরামেরই হবে। আমার জন্য এক্কেবারে পার্ফেক্ট! হাটতে হাটতে আমি একটা রুমের সামনে এসে দাঁডালাম। বেশ কারুকার্য করা দরজা। চোখ ধাঁধানো কারুকার্য। কেমন যেন মায়া লাগানো। দরজা খুলে ভিতরে তাকাতেই আমি পুরো অবাক হয়ে গেলাম। ঘরের সবকিছু পরিপাটী, নতুন আর কেমন যেন একটা নেশা লাগানো গন্ধ। আমি সেই নেশার সাগরে ডুবে যেতে লাগলাম। হঠাৎ লোকটার ঝাঁকুনিতে বাস্তবে ফিরে এলাম। ভাবলাম হয়তো লোকেরা বাড়ি দেখতে আসে বলেই এরকম গুছিয়ে রেখেছে। এখানেই আমি থাকব। আর কোম রুমে ঢুকলাম না। আস্তে আস্তে আবার নিচে গেলাম। নিচ আরো অদ্ভুত! কারন বাড়িটি ঠিক আয়নার মতো! নিচে সিঁড়ি দিয়ে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। দুইভাগই ঠিক একই রকম দেখতে মনে হচ্ছে এক অংশ আরেক অংশের প্রতিফলন!!
ঘুরতে ঘুরতেই প্রায় ১ঘন্টা লেগে গেল। কিন্তু লোকটা একবারও কোন কথা বলল না। মনে মনে ভাবলাম এতো বড় বাড়ি, তাও এতো কম টাকায় বিক্রি করছে ব্যাটার মাথায় মনে হয় সমস্যা আছে! সমস্যা থাকলেও ভালো। আমার জন্য বেশ সুবিধাজনক! কম খরচে বড়সড় লাভ! লোকটা আমাকে বলল,
– বাড়ি পছন্দ হয়েছে আপনার?
আমিঃ হা অবশ্যই!
– এখন কিনবেন নাকি পরে?
আমিঃ এখুনি কিনতে চাই।
– তাহলে চলুন বাড়ির মালিকের কাছে।
বুঝলাম মাথায় গণ্ডগোল এর না অন্যকার! যাক একটা রুমে নিয়ে গেল আমাকে। একটা মোটাসোটা স্বাস্থ্যবান লোক। মাথায় টাক। লম্বাও বেশ! মোটা গোফ। তাই গোপালভার বলা যাচ্ছেনা! পড়নে পাঞ্জাবি আর ধুতি। গলায় স্বর্ণের মালাও আছে। মনে হয় কোন বড় ব্যবসায়ী।
– নমস্তেঃ। তাহলে আপনিই বাড়ি কিনবেন?
আমিঃ নমস্তেঃ, আজ্ঞে হ্যা। আমিই কিনবো।
– টাকার ব্যাপারে তো জানেনই!
আমিঃ হ্যা। সব কিছু রেডি। বাড়িও আমার পছন্দের।
– তাহলে বিকেলেই এসে পড়ুন। সাথে টাকাটাও আনবেন।
আরো টুকিটাকি কথাবার্তা বলে আমি চলে এলাম।
`
ফোন করে বাসার কেয়ারটেকারকে সব খুলে বললাম। বলল সে নাকি মালামাল আনার জন্য সব লোক দুপুরেই ম্যানেজ করতে পাড়বে। মালামাল বেশি না, তবুও আনার তো ব্যবস্থা করতে হবে। যাইহোক আমি নিশ্চিন্তে বাড়ির পথে রওনা দিলাম। গিয়ে দেখলাম সব রেডি! কেয়ারটেকার সব লোক রেডি করে প্রয়োজনীয় মালামাল গুছিয়ে রেখেছে। বাহ্! এতোদিনে একটা কাজের মতো লোক পেলাম!
– স্যার সব রেডি।
আমিঃ গ্রেট! এখন গাড়ি এনে এগুলো নেওয়ার ব্যবস্থা কর!
– ঠিক আছে স্যার!
ঠিক ৫:০০টায় বাংলোয় পৌঁছলাম। কাজে লেগে গেল সব লেবারাররা। আমি আর কেয়ারটেকার দুজনে মিলে তাদের সবাইকে কাজের নির্দেশনা দিচ্ছি। সব কিছু নিয়ে আমার সেই পছন্দের রুমেই রাখলাম। জিনিশ তো বেশি না তাই গুছাতেও বেশি সময় লাগেনি। আর সমস্যাও হয়নি। লেবারারদের টাকা দিয়ে বিদায় করলাম। তারপর ভিতরে এসে থাকার ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।

ঘরটা বেশ বড়। আমার থাকার জন্য যথেষ্ট কিংবা তার চেয়েও বেশি। এদিকওদিক ঘুরঘুর করে দেখলাম ঘরটার। সবই কেমন যেন মায়া ধরানো। খাটের উপর আধশোয়া অবস্থায় ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটা বেড় করে কাজ করতে শুরু করে দিলাম। একটা কম্পানির ডিলের জন্য কাল মুম্বাই যেতে হবে। ধুর ছাই! আর ভাল্লাগেনা! এদিকে বাংলো আসার পর নিজেকেই ঠিকমত গুছাতে পারিনি ওদিকে আবার কাজের ডাক। কি আর করার, যেতেই হবে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১১:০০! যাহ্! এতো সময় কোথায় গেল? কাজ করতে করতে ভুলেই গেছি। যাকগে এখন খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেই হল। সকাল সকাল উঠতে হবে। কিচেন রুমে গিয়ে কিছু হালকা খাবার বানানো শুরু করলাম। কিছুদিন আগেই কিভাবে রান্না করতে হয় তা মা শিখিয়ে দিয়েছে। বেশ ভালোই পাড়ি! মুভি দেখতে দেখতে খেতে বসলাম। ভূতের মুভি। বেশ ভয়ানক বানানোরই চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি ওসব কেয়ার করিনা। ওসব দেখতে আমি অভ্যস্ত। খাওয়া শেষ করে কিচেনে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা আটকাতে গিয়েই কেমন যেন একটা অনুভূতি হল। মনে হল কে যেন আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম। কেউ নেই। তাহলে এটা কি আমার ভ্রান্তি? হতে পারে! হয়তো ভূতের ফ্লিম দেখতে গিয়েই এরকম হয়েছে। আর পাত্তা দিলাম না ওসবের। রুমে ফিরে এসে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ভাবলাম সবকিছু কেমন তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। একদিনের মধ্যেই সবকিছু কেমন পালটে গেল। কাল ঘুমিয়েছিলাম এক বিছানায়, আজ ঘুমাচ্ছি অন্য বিছানায়। হুম, সময় এভাবেই সবকিছু পালটে দিবে। দিক পালটে কিন্তু সবকিছু ঠিকমত থাকলেই হয়! ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা টেরই পেলাম না।
`
সকাল ৭:০০।
এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙল। বেশ ভালোই হয়েছে ঘুমটা। ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানালাম। খেয়েদেয়ে ফেসবুকে লগইন করে একটু উকি মেরে দেখলাম কটা মেসেজ, কটা নোটিফিকেশন। নাহ্! তেমন কিছুই আসেনি। লগ-আউট করে বসে রইলাম। মাত্র ৭:৩৫ বাজে। ট্রেন ১০:৪৫ এ স্টেশন থেকে ছাড়বে। মনে মনে ভাবলাম কি করা যায়! হঠাৎ একটা আইডিয়া মাথায় আসলো। বাংলোয় আসার জন্য তো কোন রাস্তা পাইনি। তাই বেশ অসুবিধা হয়েছে। আমার আসতেও অসুবিধা হয়েছে আর মালামাল আনতেও। তাই ভাবছি এবার জঙ্গলটা ঘুরে দেখলে কেমন হয়? ভালোই হবে। জঙ্গলটাও চেনা হবে আর রাস্তাও বের করা যাবে। বের হলাম জঙ্গল পরিদর্শনে। হাতে একটা লাঠি আর একটা ছুরি নিলাম। হিংস্র জানোয়ারও থাকতে পাড়ে। ঘুরতে থাকলাম এক গহিন জঙ্গলে। মনে হচ্ছে এর কোন শেষ নেই। সবকিছু কেমন যেন থমথমে। মনে হচ্ছে সময় আমাকে এই জায়গায় এনে থামিয়েছে। মাঝেমাঝে দুচারটে পাখির ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছেনা। হাটতে হাটতে ঘরের পিছনে আসলাম। ভাবছি এবার পিছনদিকটা ঘুরলে কেমন হয়? একটু হাটার পরই সামনে পড়লো এক বিশাল পুকুর। পাড় বাধাই করা। পুকুরের একটু কাছে গেলাম। বেশ অবাক হলাম। পুকুর বাধাই করা হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু পুকুরের জল একেবারে টলটলে। মনে হচ্ছে এর নিচে যা আছে তা দেখার চেষ্টা করলে দেখা যেতেও পাড়ে। হঠাৎ মনে পড়লো আমি তো পুকুর দেখতে আসিনি। জঙ্গল ঘুরতে এসেছি। সেখান থেকে ঘুরে আবার ঘুরতে শুরু করলাম। আমাদের দেশেই যে কত প্রকার গাছ আছে তা এখানে না আসলে বুঝতাম না। বাপরে বাপ! বুঝতে পাড়ছি না যে কত সময় হাটলাম! প্রায় ১ঘন্টা তো হবেই! হঠাৎ একটা ঝোপ দেখতে পেলাম। মনে হল কি যেন নড়ে উঠলো। হাতের লাঠিটা শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে সামনের দিকে আগালাম। দু কদম পা ফেলতেই আবার নড়ে উঠলো। আমি আবারো অবাক হলাম। খুব সাবধানে ঝোপের দিকে এগিয়ে একটু ফাক করে দেখলাম। যাহ্‌! কিছু নেই! আরেকটু ফাক করতেই ঝোপ থেকে একটা বেড়াল জাতীয় কিছু একটা দৌড়ে গেল। তবে প্রানীটা যে কালো এটা স্পষ্ট। কিন্তু কি হতে পাড়ে? হঠাৎ ভালো করে সামনে তাকাতেই দেখলাম একটা রাস্তা! হ্যা এটাই তো সেই রাস্তা যেটা শহরে চলে গেছে। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম কিছুকিছু জায়গায় গাছের সংখ্যা কম যেটা পথের রুপ নিয়েছে। কোমড় থেকে ছুরিটা বেড় করে ঝোপটাকে কাটলাম। এখান থেকেই আমার গাড়ি ভিতরে নেওয়া সম্ভব। ঘড়ি আনিনি সাথে। তাই সময়ও দেখতে পাড়ছি না। তবে বুঝতে পাড়ছি এক ঘন্টা ক্রস করেছে। ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে গাড়ি নিয়ে বাংলোয় আসতে বললাম। তারপর বাংলোতে ব্যাক করার সিদ্ধান্ত নিলাম কারন ১০:৪৫ এর আগে স্টেশনে যেতে হবে। বাংলোতে এসে দেখলাম সোয়া ৯টা বাজে। দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে রেডি হলাম। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে সময়মত বাংলোয় এসে গেল। তারপর আমিও গাড়িতে চড়ে সোজা স্টেশনে।
`
ট্রেন স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন আসতে মাত্র বাকি বাকি। তাই রেডি হয়ে ব্যাগ কাধে নিয়ে দাঁড়ালাম। এমন সময় একটা বৃদ্ধা মহিলা আমার কাছে এসে ভিক্ষা চাইলো। ভাংতি নেই তাই ১০০টাকাই দিয়ে দিলাম। একটু দূরে গিয়েই হঠাৎ বলে উঠলেন, “তোর সামনে অনেক বিপদ আছে, অনেক কষ্ট করে বেঁচে থাকতে হবে! তোর ঘৃনার মানুষই তোর প্রান বাঁচাবে! মনে রাখিস।” শুনে মনে হল কোন যুবতি মেয়ে রাগি কন্ঠে বলছে! বুকের ভিতরটা কেমন যেন ছ্যাঁত করে উঠলো। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম মহিলার দিকে। ও এ কথা কেন বলল? কি জানে ও? আর আমাকেই বলল কেন? ভাবতে পাড়ছি না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। লোকের ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এলাম। ইতোমধ্যে ট্রেন এসে পড়লো। ট্রেনে বসে বসেও তা ভাবছি। ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, নেই কোন শত্রুতা। তাহলে? তাহলে ও এ কথা কেন বলছে? শুনেছি যাত্রাপথে অমঙ্গল কামনা করলে বা বললে তা সত্য হয়! তাহলে কি? না না! ও তো একটা পাগলী ওর কথা কি করে সত্য হবে? পাগলী না হলে অপরিচিত কাউকে এভাবে কেউ বলে? হুম সেটাই হবে। মনকে যতদূর পাড়লাম এই কথায় সায় দিলাম। কিন্তু মন কি তা মানতে চায়? ঠিক সময় মুম্বাই গেলাম। কাজের চাপে এই কথা প্রায় ভুলতে বসলাম। আর মনে রাখার কোন প্রয়োজন আছে কি? মাথা খারাপ মহিলার! কি বলতে কি বলে ফেলেছে যে জানে! কাজ সেড়ে ঠিক সময় রওনা দিলাম। স্টেশনে এসে ড্রাইভারকে ফোন দিলাম। একটু পড়েই ড্রাইভার এসে পড়লো। ওকে গাড়ি রেখে চলে যেতে বললাম। তারপর নিজেই ড্রাইভ করে বাংলোতে আসলাম। একটু ঘুরে বাংলোর পিছনের জঙ্গল দিয়ে সরাসরি বাংলোয় এসে পৌছলাম। বাংলোটা কেমন যেন খাঁখাঁ করছিল। গাড়িটা বাংলোর সামনে এনে পার্ক করলাম। মানবশূন্য বাংলোর সামনে একা আমি দাঁড়িয়ে। একেবারে শুনশান নীরবতা! এতটাই নীরবতা যে একটা পাতা পড়লেও মনে হয় শোনা যাবে! গেট খুলে ভিতরে ঢুকলাম। আস্তে আস্তে বাংলোর দিকে আগাতে লাগলাম। হঠাৎ একটা টুংটুং শব্দ কোত্থেকে যেন আসতে লাগলো। বোঝার চেষ্টা করলাম কোথা থেকে আসছে শব্দটা? শব্দটা বাংলোর ভিতর থেকেই আসছে। অনুসরণ করতে লাগলাম শব্দটার।

→”নেক্সট পার্ট” শীঘ্রই আসছে…←

বিঃদ্রঃ এই গল্পের স্থান, কাল, পাত্রের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। সম্পূর্নই কাল্পনিক। এই গল্প শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে। যদি এই গল্পের কারনে কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে লেখক আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কেমন হয়েছে জানাবেন। ভূল ত্রুটি মার্জনীয়।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত