তারার দেশের অপ্সরী

তারার দেশের অপ্সরী

গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে পুরো শহর। ক্লান্ত শরীরে আমিও প্রায় রাত দুটোয় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
আমি যখন ঘুমে বিভোর তখন আমার কানের কাছে মেয়েলি কন্ঠে কেউ একজন এসে আমার নাম ধরে ডাকছে ।
হৃদয়….
হৃদয় ওঠো…. দেখো আমি আসছি ।
আমি অনেকটা ধড়পড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলাম। আমার জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ে । সেই আলোতে মেয়েটার চেহারা আবছা দেখা যাচ্ছিল তাতেই স্পষ্ট ছিলো মেয়েটা ভয়ংকর সুন্দরী।মেয়েটার চোখে একটু মোটা ফ্রেমের চশমা থাকায় তাকে ভয়ংকর সুন্দরের তুলনায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছিলো । মেয়েটার চুলগুলো বাতাসে উড়ে বারবার তার মুখে পড়ছে আর মেয়েটা হাত দিয়ে চুলগুলো মুখ থেকে সরিয়ে নিচ্ছে ।
চাঁদের আবছা আলোয় মেয়েটাকে দেখা শেষ হলে এবার আমি হুশ এ ফিরি ।
এবার ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেছে । এতো রাতে এই মেয়ে আমার ঘরে কেমন করে এলো । আর আমার নাম ধরে ডাকছে কেনো? আমার নাম জানলো কেমনে ।
অনেকটা ধড়পড়িয়ে হাতের কাছে মোবাইল এর আলোটা জ্বালানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না । এবার মেয়েটি মুখ খুলল….

আরে বেকুব এতো ভয় পাবার কি আছে???আমিই তো নাকি…
.
আমি বিভ্রান্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমিই তো মানে???কে আপনি?
.
সারাদিন যাকে নিয়ে ভাবো আমি সেই!…..
এই বলে আমার হাতটা ধরে টেনে খাট থেকে নামালো..
.
এবার ভয়টা কেমন জানি ধীরে ধীরে কেটে গেলো…আমি নিজেই বুঝলাম না আমি সারাদিন কার কথা ভাবি ।
মেয়েটা আমার হাত ধরে টানছে আর আমি তার সাথে হাটছি….
ঘরের দরজা খুলে এবার সে আমাকে আমার ঘরের বাইরে নিয়ে এলো..
এবার আমাকে নিয়ে চলো…
কোথায় যাবো??
চলো না….তারা গুনতে হবে তো ।

আমিও সাতপাঁচ না ভেবে মেয়েটার হাত ধরে হেটে চলেছি….।
এতক্ষণে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি…।
এবার মনে মনে মেয়েটার নামও ঠিক করে ফেলেছি…
অপ্সরী! মেয়েটার নাম দিলাম অপ্সরী…..
এবার নামটা ধরে ডেকেই ফেললাম…
আচ্ছা অপ্সরী আমরা যাচ্ছি কোথায়??

এতক্ষণে তাহলে আমার নাম মনে পড়লো…হুহ।।(অনেকটা অভিমানী সুরে)
আমিও রীতিমত তাজ্জব বনে গেলাম…মানে টা কি??মেয়েটার নাম কি সত্যিই অপ্সরী?
এবার আমি বুঝতে পারছি…আসলে আমার একজন কাল্পনিক অপ্সরী আছে । সেই এখন বাস্তবে আমার সাথে হাটছে….
এবার আমি তার অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করলাম….
কান ধরে সোজা তার সামনে দাঁড়িয়ে গেলাম…
সরি..!!

না…আগে দুইবার উঠাবসা করো তারপর ভেবে দেখবো তোমাকে ক্ষমা করা যায় কি না ।
আমি একবার ওঠাবসা করতেই আমাকে থামিয়ে দিলো…
হইছে হইছে আর লাগবে না….বলেই আবার আমার হাত ধরে হাটা শুরু করলো ।
আমিও হাটছি…

এবার আমি তাকে প্রশ্ন করলাম আচ্ছা অপ্সরী তুমি আমার ঘরে ঢুকলে কেমন করে..??
সেটা তোমার না জানলেও চলবে….

হাটতে হাটতে আমরা একটা খোলা মাঠে এসে পৌছেছি ।
মেয়েটা এবার আমার হাতটা ধরে দৌড়াতে শুরু করছে….
কি আর করার আমিও বাধ্য ছেলের মত আমিও তার সাথে দৌড় শুরু করলাম ।
মাঠে মাঝখানে এসে আমরা থেমে গেলাম….

এখানে বসো…
আমি বসার সাথে সাথেই মেয়েটাও ধপাস করে আমার পাশে বসে পড়লো…
আমার কাধে মাথা রাখলো…আমার অবশ্য সম্পূর্ণ ধ্যান তখন আকাশের দিকে…।
হাজার হাজার তারার মাঝে একটা চাঁদ আকাশের সৌন্দর্্য টাকে কোটি গুন বাড়িয়ে দিয়েছে….।

অনেক সময় নিরব থাকার পর অপ্সরী মুখ খুললো…
আঙুল দিয়ে উজ্জ্বল একটা তারা দেখিয়ে…

ওই যে তারাটা..ওটা তুমি আর তার পাশের তারাটাই আমি .।

আচ্ছা… আমি কি সব সময় এভাবে তোমার সাথে তারা দেখতে পারবো.. অপ্সরী??
আমিতো দেখতেই চাই…..বাকিটা সম্পূর্ণ তোমার কাছে ।
আমি : এখন কোন কথা না….একদম চুপ।। তারা গুনবো….
এবার আমি তারা গুনতে শুরু করছি….এক,দুই……­…।

এবার তার ভুবনজয়ী হাসি দিয়ে বলল পাগল একটা তুমি এই সব তারা গুনতে পারবে???
গুনে শেষ করতে না পারি…এভাবে প্রতিদিন তুমি আর আমি তারা তো গুনতে পারি ।!

তা তো গুনতেই পারি….কিন্তু এবার যে আমাকে চলে যেতে হবে ।
মানে?? কই যাবা তুমি?
আমার সময় শেষ কাল আবার আসবো….বলেই অপ্সরী উঠে দাঁড়ালো ।
আমি কেনো জানি তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম না….
এবার সে চলতে শুরু করলো…
আমি এক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছি….কিছু দূর যাবার পর মেয়েটা আবার ঘুরে এক দৌড়ে আমার কাছে ছুটে এসে আমার বুকে মুখ লুকিয়ে আমার কাছে আজকের মত বিদায় চাইলো…

আমি কেমন জানি অনুভূতি শুন্য হয়ে গেছি…আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না…
আবার সে ঘুরে দাঁড়িয়ে হাটা শুরু করলো..
আস্তে আস্তে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো মেয়েটা….
এমন সময় ফজরের আজান আমার কানে পড়লো…
আমার ঘুম ভেঙে গেলো….
..
বুঝতে পারলাম সে আমার স্বপ্ন অপ্সরী ছিলো ।
এবার সব কিছু বাদ দিয়ে বিছানা ছেড়ে গোসল সেরে অজু করে নামাজ আদায় করলাম!……
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত