এ কাহিনী এতদিন কাউকে বলিনি। জানতাম বড়দের বলে লাভ নেই,তারা একটি বর্ণও বিশ্বাস করবে না। সবকিছু তারা যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করতে চায়।
কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলো যুক্তিনির্ভর নয়। সেগুলো ব্যাখ্যা করাও সম্ভব হয় না। চোখ-কান বুজে শুধু বিশ্বাস করে যেতে হয়। তাই সেই ঘটনাগুলোকে আমরা বলি অলৌকিক ঘটনা। কারণ পৃথিবীতে সচরাচর যা ঘটে, ঘটতে পারে, সেই মাপকাঠিতে এ কাহিনীর বিচার চলে না।
এমনই এক অলৌকিক ঘটনা আমার জীবনে ঘটেছিল একবার। কাজকর্মের অবকাশে সে কাহিনী মনে পড়লে এখনও চমকে উঠি। মাঝরাতে স্বপ্নের মধ্য দিয়ে মাঝেমাঝে দেখি তারই ছায়া। ঘুম ভেঙে বিছানায় উঠে বসি। বাকি রাতটুকু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কাটাতে হয়।
…..আজ থেকে প্রায় ছত্রিশ বছর আগেকার কথা…..
আমি তখন লোচনপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। ইতিহাস ছাড়া অন্য সব সাবজেক্টগুলোয় মোটামুটি ভালই ছিলাম। অঙ্কে বিশেষ ভাল। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ইতিহাসের সাল-তারিখগুলো কিছুতেই কন্ঠস্থ করতে পারতাম না। মোগল আর পাঠান বাদশাহের নামগুলো গোলমাল হয়ে যেত। সতীদাহপ্রথা রোধ লর্ড বেণ্টিঙ্ক না লর্ড ডালহৌসি করেছিলেন – সেটা মাথা চুলকে চুল উঠিয়ে ফেললেও মনে রাখতে পারতাম না।
ফলে ইতিহাস পরীক্ষার দিন আমার অবস্থা রীতিমত সঙ্গীন হয়ে দাঁড়াত। বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে যতগুলো মন্দির পড়ত, সবগুলোতে মাথা ঠেকাতাম। রাস্তার দু’পাশের বড় সাইজের পাথরের নুড়িও বাদ যেত না।
আমার সঙ্গে একই ক্লাসে পড়ত পশুপতি সামন্ত। ইয়া জাঁদরেল চেহারা। অমাবস্যাকেও হার মানানো গায়ের রঙ। ছেলেবেলায় মা-বাবা দুজনকেই হারিয়েছিল। থাকত দূর সম্পর্কের এক পিসির কাছে। সেখানে তার লাঞ্ছনা গঞ্জনার অন্ত ছিল না।
এই পশুপতি অন্য সব বিষয়ে জুত করতে পারত না, কিন্তু ইতিহাসে একেবারে নামকরা ছাত্র। ইতিহাসের শিক্ষক নিবারণ বাবু পর্যন্ত তার উত্তর লেখার তারিফ না করে পারতেন না। আমরা যখন এক ‘পাণিপথের যুদ্ধে’র উত্তর লিখতে গিয়েই আধমরা হচ্ছি, তখন পশুপতি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে যেত।
কিন্তু অঙ্কে পশুপতি সামন্ত’র অবস্থা একেবারে কাহিল। সোজা সোজা অঙ্কগুলো কষতেও হিমশিম খেত সে। একটা বানর চর্বি মাখানো বাঁশে ঘন্টায় দু ফিট উঠছে, আর নামছে এক ফিট, বাইশ ফিট বাঁশের আগায় উঠতে তার কত দেরী হবে – এমন একটা নিরীহ প্রশ্নেও পশুপতি মুখটা এমন করে বসে থাকত, মনে হতো তার অবস্থা ওই বানরটার চেয়েও মারাত্মক।
গরমের ছুটিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পশুপতি অঙ্কের পর অঙ্ক কষে গেছে, গোটা ছয়েক খাতা শেষ, কিন্তু তাতেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারত না। বেচারা নিজেই বলত, ” আমার দ্বারা হবে না ভাই। অঙ্কটা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকবে না”।
আমাদের আমলে প্রাইভেট টিউটর রাখার এত রেওয়াজ ছিল না। তবু আমরা পশুপতিকে বলেছিলাম, একটা ভাল দেখে অঙ্কের মাস্টার বাড়িতে রেখে দে বরং।
পশুপতি কোনও উত্তর দেয় নি। ছলছল চোখে আমাদের দিকে তাকিয়েছিল। তার মনের ব্যথাটা বুঝতে আমাদের অসুবিধে হয়নি। পিসি কোনওরকমে বাড়িতে ঠাঁই দিয়েছে। দু’বেলা দুমুঠো ভাত আর সাধারণ জামাকাপড়ের বদলে তাকে দিয়ে রাজ্যের কাজ করিয়ে নেয়। ছুটির দিন আমরা দেখেছি পশুপতি বসে বসে বেড়া বাঁধছে। এরপর প্রাইভেট টিউটরের বাড়তি খরচের কথা বললে পিসি তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়েই দেবে।
মনে মনে আমি কিন্তু পশুপতিকে হিংসা করতাম। কারণ যে ইতহাসের লবণাক্ত সমুদ্রে আমি হাবুডুবু খাই, কুল পাই না, সেই ইতিহাসেই পশুপতি অবলীলাক্রমে প্রথম হয়। রেকর্ড নম্বর পায়। ইতিহাসের যে সাল-তারিখগুলো আমার কাছে শূলের খোঁচার সামিল, সেসব সাল তারিখ পশুপতি এমনভাবে আউড়ে যায় যেন তা অতি সাধারণ ব্যাপার।
আর একটা কারণও ছিল। আমি আশা করেছিলাম পশুপতি আমায় অনুরোধ করবে, অঙ্কের ব্যাপারে তাকে সাহায্য করার। আমি অঙ্কে ভাল, তাই যাতে ওকে সাহায্য করি। কিন্তু পশুপতি এ বিষয়ে কোনওদিন একটি কথাও বলেনি, অনুরোধ তো দূরের কথা।
আমরা ক্লাসে সবসুদ্ধ আটচল্লিশ জন স্টুডেন্ট তার মধ্যে টেস্টে পাশ করলাম চল্লিশ জন। পশুপতিও একজন। অঙ্কে সে পাশ করেনি, কিন্তু হেডমাস্টারের হাতে পায়ে ধরে ফাইনালে বসার অনুমতি পেল। প্রতিশ্রুতি দিল, মাঝখানের সময়টা সব ছেড়ে শুধু অঙ্ক কষবে।
আমার অবস্থা ঠিক বিপরীত। ইতিহাসে ফেল করলাম না বটে, তবে কোনওরকমে কান ঘেঁষে বেরিয়ে গেলাম। একেবারে টলোমলো অবস্থা। আমিও ঠিক করলাম, ছুটির বেশী সময়টুকু শুধু ইতিহাস পড়াতেই নিয়োজিত করব।
আমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়েছিল বিবিগঞ্জে। আমাদের গ্রাম থেকে চার মাইল দূরে। বাবার এক আলাপী উকিল ছিল সেই শহরে, আমি পরীক্ষার আগের দিন সেখানে গিয়ে উঠলাম। ক্লাসের অন্য ছেলেরা কে কোথায় উঠেছিল, খোঁজ রাখিনি। তখন খোঁজ নেবার মতো মনের অবস্থাও ছিল না।
পরীক্ষার হলে সকলের সাথে দেখা হলো। ইংরেজি, বাংলা দুটো পরীক্ষা নির্বিবাদে শেষ হলো। পশুপতির সিট পড়েছে ঠিক আমার সিটের পেছনে।
তৃতীয়দিন অঙ্ক।
হলে ঢোকবার মুখেই পশুপতির সাথে দেখা হয়ে গেল। একেবারে সামনাসামনি।
কপালে আধুলি সাইজের সিঁদুরের টিপ। পকেট বোঝাই ফুল-বেলপাতা। একরকম তন্ত্রসাজে সজ্জিত হয়েও পশুপতি মুখে নির্ভীক ভাব ফোটাতে পারেনি। দুটি চোখে আসন্ন বিপদের ছায়া।
পরীক্ষা আরম্ভ হলো।
চারটি অঙ্ক শেষ করে পাঁচ নম্বর অঙ্কটি সবে শুরু করেছি, হঠাৎ চেয়ারটা নড়ে উঠল।
পেছনে পশুপতি। ভাবলাম পা সরাতে গিয়ে চেয়ারে হয়তো লেগে গেছে। তাই আবার পরীক্ষার খাতায় মনোনিবেশ করলাম।
আবার নড়ে উঠল চেয়ার।
আড়চোখে পেছনে দেখতেই কানে ফিসফিস শব্দ এল –
“…..এই, অঙ্কগুলো দেখা না! আমি একটাও পারছি না। গোটা তিনেক গার্ড অবশ্য এ ধারে ওধারে ঘুরছেন। তাঁরা খুব কড়া এমন মনে হলো না। দুজনেই হাতে খোলা বই নিয়ে পায়চারী করছেন। পরীক্ষার্থীদের দিকে নয়, তাঁদের নজর বইয়ের পাতায়।
আর একজন একেবারে কোণের দিকে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি যদি একপাশে একটু সরে বসি, তাহলে আমার খাতা দেখে অঙ্কগুলো টুকে নিতে পশুপতির কোনও অসুবিধে হবে না। সব টোকবার দরকার নেই। গোটা চার-পাঁচ অঙ্ক টুকে নিলেই যথেষ্ট। পাশ নম্বর উঠে আসবে।
কিন্তু আমি নিজের শরীরটা দিয়ে খাতাটা আরও ঢেকে বসলাম। যাতে কোনওদিকে কোনও ফাঁক না থাকে। পশুপতি আমার কষা একটা অঙ্কও যাতে দেখতে না পায়।
মনকে বোঝালাম, দুর্নীতির প্রশ্রয় দেওয়া কিছুতেই উচিত নয়। এভাবে পশুপতিকে সাহায্য করা অন্যায়। ধরা পড়লে দুজনেরই সর্বনাশ।
অবশ্য এসব নীতিকথার আড়ালে আমার মনের হিংসেটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল, পশুপতি আমার পেছনে, কাজেই ইতিহাসের দিন তার কাছ থেকে বিশেষ সাহায্য পাব এমন ভরসা কম। তাছাড়া নিতান্ত বেখাপ্পা প্রশ্ন যদি না আসে, তাহলে ইতিহাসে হয়তো কোনওরকমে পাশও করে যেতে পারি। কিন্তু পশুপতির খেদোক্তি শুনে মনে হচ্ছে, একটা অঙ্কও সে এখনো পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি।
আরও কয়েকবার চেয়ারটা নড়ে উঠল, পশুপতির করুণ অনুনয়ের সুর কানে এল। আমি অনড় অটল।
দেখলাম সময় শেষ হবার আধঘণ্টা আগে পশুপতি অঙ্কের খাতা জমা দিয়ে টলতে টলতে বাইরে চলে গেল।
পরের দিন ইতিহাস। আমার অগ্নিপরীক্ষার দিন। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে ইতিহাস বইটা নিয়ে বসলাম। দরকার হলে অনেক রাত অবধি পড়ব।
কিন্তু যত পড়তে লাগলাম, মনে হলো বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারছি না। মোগল সম্রাটদের ছুঁচালো দাড়িগুলো যেন আমার সর্বাঙ্গে ফুটতে লাগল। আগে বাবর না আকবর কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে গেল হর্ষবর্ধনের বাপের নাম গোবর্ধন।
আসল কথা, একে ইতিহাসের জ্ঞান খুব গভীর নয়, তার ওপর আসন্ন বিপদের উত্তেজনা সব মিলে যেটুকু পড়েছিলাম, তা-ও এখন বেমালুম ওলটপালট হয়ে গেল।
সর্বনাশ, মাথায় একেবারে হাত দিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ খুট করে শব্দ। দরজার দিকে চেয়েই চমকে উঠলাম।
চৌকাঠের ওপর পশুপতি দাঁড়িয়ে। সেই কপালে সিঁদুরের মস্ত ফোঁটা, পকেট বোঝাই ফুল-বেলপাতা।
সবিস্ময়ে বললাম, ” এ কি রে, তুই?!”
“…..হ্যাঁ রে, চলে এলাম। একটা গোপনীয় খবর আছে”।
“….গোপনীয় খবর? ”
প্রশ্ন করতে গিয়ে মনে পড়ে গেল রাত ন’টা বাজার সাথে সাথে উকিলবাবুদের বাড়ির গেট বন্ধ হয়ে যায়। বাইরের লোক ঢোকার উপায় নেই।
তাই জিজ্ঞেস করলাম, ” তুই ঢুকলি কি করে?”
“….গেটের কাছে দারোয়ান ছিল, তাকে তোর কথা বলতে গেট খুলে দিল”।
কথা বলতে বলতে পশুপতি আমার সামনে তক্তাপোশের ওপর বসল।
একটু চুপ করে থেকে বলল, ” আমার তো এ শহরে চেনাজানা কেউ নেই। আমি এখানে এক চায়ের দোকানের পেছনে চারপাই পেতে আশ্রয় নিয়েছি। একটু আগে সেখানে দুজন শিক্ষক এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন সম্ভবত আমাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র করেছেন। চায়ের দোকানে বসে তাঁরা সেই ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। আমি পার্টিশনের আড়াল থেকে বসে সব শুনেছি “।
“…..বলিস কি?” উত্তেজনায় টানটান হয়ে বসলাম আমি।
“…..আমি প্রশ্নগুলো বলছি, তুই লিখে নে। তোর কথাই আগে মনে পড়ল, তাছাড়া তোকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেখেছি, তোর আস্তানা চিনি,তাই ছুটে আগে তোর কাছেই এলাম”।
পশুপতির এত কথা আমার কানে গেল না। আমি কাগজ পেন নিয়ে একেবারে তৈরি হয়ে বসলাম। প্রশ্নগুলো জানতে পারলে সারারাত ধরে উত্তরগুলো মুখস্থ করার চেষ্টা করব।
পশুপতি বলতে লাগল –
“…..লেখ, অশোকের রাজ্যশাসন প্রণালী, আকবর ও ঔরঙ্গজেবের শাসননীতির তুলনামূলক আলোচনা, মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ, শিবাজীর সাম্রাজ্য বিস্তারের কাহিনী লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত….. এই ক’টাই শুনতে পেয়েছি আমি”।
“……যথেষ্ট, যথেষ্ট “, উৎসাহে আমি প্রায় চেঁচিয়ে বললাম , ” এই ক’টা ঠিকমতো লিখতে পারলেই হয়ে যাবে। পাশ করার ভাবনা গেল। হয়তো ভাল নাম্বারও পেয়ে যেতে পারি”।
এতক্ষণ পরে পশুপতির জন্য আমার মায়া হলো। বেচারাকে ক’টা অঙ্ক দেখালেই হতো। ইতিহাসের প্রশ্ন জানতে পেরে সর্বাগ্রে তো আমার কাছেই এসেছে।
জিজ্ঞাসা করলাম, ” অঙ্ক কেমন হলো?”
স্পষ্ট দেখতে পেলাম, পশুপতির মুখে একটা বিষাদের ছায়া নামল। একটু যেন বিমর্ষভাব।
অন্যদিকে চেয়ে বলল, ” ওই একরকম। যা হয়ে গেছে তার কথা আর ভাবছি না। পেছন দিকে দেখলে নিজের বড় ক্ষতি হয়। আমি চলি। তুই পড়”।
এই বলে পশুপতি বেরিয়ে গেল।
প্রায় সারা রাতই পড়লাম। ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠতে দেরী হয়ে গেল। কোনওরকমে স্নান সেরে, দুটি মুখে পুরে নিয়ে ছুটতে ছুটতে যখন হলে গিয়ে পৌঁছলাম তখন পরীক্ষা শুরু হতে আর মিনিট দুয়েক।
বেশ খুশী হয়েই প্রশ্নপত্রটা টেনে নিলাম। তারপর অনেকক্ষণ আর চোখের সামনে কিছু দেখতে পেলাম না। পুঞ্জীভূত ধোঁয়া, কখনো গাঢ়,কখনো একটু তরল।
সারা প্রশ্নপত্রে অশোকের নামগন্ধ নেই। বাবর আর আকবরের তুলনার বদলে শাহজাহানের সৌন্দর্যপ্রিয়তার ওপর প্রশ্ন রয়েছে। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের বদলে মারাঠা সাম্রাজ্যের পতনের কারণ নির্ণয় করতে দেওয়া হয়েছে। শিবাজীর জীবনী কোথাও নেই, তার পরিবর্তে হায়দার আলীর উত্থানের কাহিনী। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রশ্নের বদলে রেগুলেটিং অ্যাক্ট – নিয়ে প্রশ্ন এসেছে।
মোট কথা, পশুপতির বলা একটা প্রশ্নও আসেনি।
কিছুক্ষণ পর গোটা প্রশ্নপত্রটাই চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম দু’চোখ জলে ভরে এসেছে।
এমনি করেই বুঝি পশুপতি আমার ওপর প্রতিশোধ নিল।
কিন্তু বিস্মিত হবার আমার আরও একটু বাকি ছিল।
ঘন্টা বাজতে কোনওরকমে খাতাটা জমা দিয়ে বাইরে চলে এলাম। একটু দাঁড়ালাম, যদি পশুপতির সাথে দেখা হয়।
পশুপতিকে দেখতে পেলাম না, রাজীব এসে সামনে দাঁড়াল। আমাদের হেডমাস্টারের ছেলে।
“…..ব্যাপার শুনেছ? ”
“….কি ব্যাপার?”
“…..পশুপতি গতকাল পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে রেললাইনে মাথা দিয়েছে “।
সমস্ত শরীরটা কেঁপে উঠল। জড়ানো গলায় বলল, ” কে বলল?”
“…..বাবা’কে খবর পাঠানো হয়েছিল। বাবা পশুপতির পিসি’কে নিয়ে আজ সকালে এসে পৌঁছেছেন। বাবার কাছেই শুনেছি, কোমর থেকে একেবারে দু’আধখানা হয়ে গেছে”।
“……ক’টার সময় হয়েছে এটা?”
“…..আকন্দপুর এক্সপ্রেস এখান থেকে সন্ধে ছ’টা তিরিশে যায়, সেই সময়েই”।
“……কিন্তু ও যে…..” বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। যে পশুপতি গতকাল সন্ধে সাড়ে ছ’টায় শেষ হয়ে গিয়েছে, সে রাত সাড়ে ন’টায় বহালতবিয়তে আমার ঘরে এসে আমাকে ইতিহাসের একগাদা প্রশ্ন বলে এসেছে – এমন আজগুবি কথা কে বিশ্বাস করবে? বরং আমাকেই পাগল ঠাওরাবে।
মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে সরে এলাম।
কিন্তু একটা কথা আজও বুঝে উঠতে পারি না…..
মৃত্যুর পরেও কি পরলোকগত আত্মার বিদ্বেষ, প্রতিহিংসার প্রবৃত্তি থাকে?
তা যদি না-ই থাকে, তবে পশুপতি ওভাবে প্রতিশোধ নিতে কেন আবার আমার কাছে এসে দাঁড়াবে?
………………………………………….( সমাপ্ত)………………………………………..