তার নাম একসময় ছিল নূরুদ্দীন। সেবার দুর্ভিক্ষ হল, ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, না খেয়ে গরুছাগলের মতো মারা গিয়েছিল মানুষ। তাতে নূরুদ্দীনের পরিবারের সবাই মারা গিয়েছিল, কীভাবে কচুঘেচু খেয়ে বেঁচে ছিল সে একা, সেটা বড় আশ্চর্যের বিষয়।
দুর্ভিক্ষ কারো প্রাণ নিয়েছে, কাউকে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এমনি এমনি ছেড়ে দেয় নি। সবার কিছু না কিছু নিয়েছে। সবাইকে হারিয়ে নূরুদ্দীন অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়ে, একসময় তার নাম বদলে যায়, সবাই তাকে চেনে নূরা পাগলা বলে। এখন তার আসল নাম আর তেমন কেউ মনে করতে পারে না।
সব পাগলের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। নূরা পাগলারও আছে। সে কবরভক্ত। কবরে পড়ে থাকে সারাদিন। কবরের পাশে বসে কথা বলে মৃত মানুষের সাথে। ও আমিনুদ্দি মিয়া, কেমন খবর কও। দিনকাল কেমন চলতাছে? আমার খবর? নাহ, বেশি ভালা না। জিনিসপত্রের দাম বাড়তি। ফসল নষ্ট হইয়া গেল সব। ঐ পাড়ার খলীফার মাইয়ার আইজ বিয়া। বর দেখতে শুনতে মাশা’আল্লাহ ভাল। ঘুমাইলা নাকি, ও আমিনুদ্দি ভাই?
মৃত আমিনুদ্দি ব্যাপারির সাথে সে এভাবেই কথা বলে। কতজন বিদায় নিয়েছে, সবার আশ্রয় এখানে, সবাইকে সে পায়, সবার সাথে কথা বলে। তবে জ্যান্ত মানুষের সাথে তার খাতির কম, তাকে সবাই সমঝে চলে, দেখে একটু ভয়ের দৃষ্টিতে। লোকে বলে, তার চোখের দৃষ্টি খুবই খারাপ, কোন ফলবতী গাছের দিকে তাকিয়ে যদি সে বলে, কী সুন্দর ফল ধরছে, দেইখা যাও, তাহলেই সেই গাছে আর ফল ধরে না। অলৌকিক ক্ষমতাবান বলে সবাই তার থেকে দূরে দূরে থাকে, কেউ কাছে ঘেঁষে না।
আর একটা কাজ নূরুদ্দীন করে বলে জনশ্রুতি আছে, তবে কেউ সরাসরি প্রমাণ দেখাতে পারে না। অমাবস্যা রাতে সে নাকি কবর খোঁড়ে। কবর খুঁড়ে লাশ বের করে মাটির ওপরে ফেলে রাখে, আর কোন ক্ষতি করে না। না, কেউ সরাসরি তাকে কবর খুঁড়তে দেখে নি, কিন্তু অমাবস্যা রাতে অনেকেই তাকে যেতে দেখেছে কবরস্থানের দিকে। তার পরদিনই লাশ পাওয়া গেছে কবরের উপর, অমঙ্গল আশঙ্কায় আবার কবর দেয়া হয়েছে, বেলা ডোবার আগেই। লোকে বলে, নূরা পাগলা মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথে সত্যি সত্যি যোগাযোগ করতে পারে, তার থেকে সে ক্ষমতা নেয়। দিনদিন তার ক্ষমতা বাড়তে থাকবে, কী সেই ক্ষমতা, গ্রামের কেউ জানে না, জানার চেষ্টাও করে না।
খাবার জোটে কী করে নূরা পাগলার? না, সে কোন কাজ করে না। খিদে পেলে কোন বাড়িতে গিয়ে উঠোনে বসে পড়ে বাজখাঁই গলায় বলে, ভাত দে। খাবার দিলে বড় বড় গ্রাসে চুপচাপ খেয়ে উঠে যায়, আর কোন চাওয়া নেই তার। এটা নিয়েও আছে এক ঘটনা। রহিম মোল্লা একদিন তাকে ভাত দেয় নি, বরং ধমক দিয়ে বের করে দিয়েছিল। সাতদিনও যায় নি, তার ছোট ছেলেটা কলেরায় মারা গেল, মেয়েটা শুরু করলো রক্তবমি। শেষে নাকি মোল্লা নূরা পাগলার পায়ে কেঁদেকেটে পড়ার পর সুস্থ হয় সে।
গ্রামের সব মা তাদের ছেলেমেয়েকে কপালে কাজলের টিপ দিয়ে রাখে, কোমরে, গলায় নাহয় বাহুতে বেঁধে দেয় শক্তিশালী তাবিজ, সাত মাইল দূরের রূপগঞ্জ থেকে আনা মন্তাজ পীরের তাবিজ, যাতে নূরা পাগলার নজর না লাগে। কেউ দেখতে পারে না তাকে, সে যেন সাক্ষাৎ একটা অভিশাপ, তাকে দেখলেই সবাই দোয়া দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দেয়।
সবাই যে শুধু ভয় পেয়েই ক্ষান্ত ছিল, তা নয়, পাড়ার মোড়ল আব্দুল গফুর খাঁ গোপনে বৈঠক করে ঠিক করেছিলেন যে নূরা পাগলাকে রাতের অন্ধকারে খুন করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে, না হয় বস্তাতে ভরে মাটিতে পুঁতে ফেলা হবে, যাতে কেউ জানতে না পারে। কীভাবে থানাপুলিশ থেকে বাঁচা যাবে, তাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে খুন করতে গিয়েছিল তার পোষা লাঠিয়াল কাবিলা, অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার আগেই সাপের কামড়ে সে শেষ। আর সে রাতে খাঁ সাহেবের ওঠে প্রচণ্ড পেটে ব্যথা, এখন যান তখন যান অবস্থা। শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেন তিনি, মুখ দিয়ে গেঁজলা বের হতে থাকে। ধরে নিয়েছিলেন, তাঁর সময় শেষ, এমন সময় নূরা পাগলার পায়ে গিয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী। উদাস গলায় নূরা পাগলা বলে, যা, মাফ কইরা দিলাম। তয় এই শেষ, এরপর চেষ্টা করলে কিন্তু … … । ভোররাতের দিকে পেটে ব্যথা সেরে যায় খাঁ সাহেবের, তিনি ঢক ঢক করে তিন গেলাস পানি খেয়ে শান্ত হন।
গ্রামের সবাই একবাক্যে মানে, নূরা পাগলার অনেক ক্ষমতা, নিঃসন্তান নারীরা তার কাছে সন্তানের আশায় একটা “ফুঁ” নিয়ে যে আসতে যায় নি তা নয়। কিন্তু সবাইকে দাঁত খিঁচিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে সে। মামলায় জেতার আশায় কলিমুদ্দি গিয়েছিল নূরা পাগলার কাছে, সে থান ইট ছুঁড়ে মেরেছিল। কিন্তু কলিমুদ্দির আজও বিশ্বাস, সেই থান ইটের মরতবাতেই সে মামলাতে তার জিত হয়। সে সব অনেকদিনের কথা, এখন সে সবার চোখের বিষ।
রাতে এই গ্রামের মানুষ ভুলেও ঘরের বের হয় না, নূরা পাগলা শুধু বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়। রাত্রে তার মুখোমুখি হওয়া মানে নাকি নির্ঘাত মৃত্যু। তাকে সাপে কাটে না, অন্য কোন বিপদ আপদও স্পর্শ করে না। যে রাতে সে বের হয়, সে রাতে রাতচরা পশুপাখির ডাক কেন যেন শোনা যায় না। কিন্তু থেকে গ্রামের মাটি কেঁপে ওঠে, ঠিক যেন ভূমিকম্প। নির্মেঘ আকাশে সেসব রাতে বিদ্যুৎ চমকায়, মানুষজনের নিজের চোখে দেখা।
লোকে বলে, তার গায়ে নাকি আগুন দিলেও সে পুড়বে না। তার নাম কেউ মুখে আনে না, পাছে কোন বিপদ ঘটে। বহাল তবিয়তে আছে সে।
সেই গ্রামে অনেকদিন ধরে কোন চমক ছিল না। শান্ত জীবনধারা। সেখানে অল্প হলেও একটু উত্তেজনার ছোঁয়া লাগলো আশেকান হুজুরের আগমনে।
হুজুর ছ’ফুটের ওপর লম্বা, ধবধবে ফর্সা গায়ের রং, সাদা ফিনফিনে দাড়ি বুক পর্যন্ত। হাতে বাঁকানো লাঠি, বয়স একশো কিংবা দেড়শো যা খুশি হতে পারে। এসে আস্তানা করলেন মোড়লের বাসায়। তাঁর যত্ন আর দেখে কে? লোকমুখে খবর ছড়িয়ে পড়লো, তিনি দেওবন্দ থেকে আসা কামেল পীর, পদব্রজে সেখান থেকে এসেছেন। এই জায়গা তাঁর খুবই পছন্দ হয়েছে, তিনি স্থায়ী হবার খায়েশ প্রকাশ করলেন। মোড়লের টাকাপয়সার কোন লেখাজোকা নেই, তিনি নিজের উঠোনের এক পাশে দোচালা ঘর তুলে দিলেন পীর সাহেবের জন্য, এতবড় কামেল লোক ঘরের সীমানায় থাকবেন, সেটাও তো সৌভাগ্য। গ্রামের লোক ভেঙে পড়লো সেখানে, তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করে গেল সবাই। দেখলেও শ্রদ্ধা হয় তাঁকে, সবাই তাঁর দোয়া নিতে লাগলো।
হুজুর অমায়িক লোক, হাসিমুখে সবার অত্যাচার সহ্য করলেন। তাঁর ইবাদতবন্দেগী দেখে সবার তাক লেগে গেল, তিনি রাতদিন জিকির করেন, মোড়ল সাহেব হলপ করে সবার কাছে গল্প করেন, পীরসাহেব গভীর রাতেও মশগুল থাকেন তাঁর ইবাদতে, মাঝে মাঝে তাঁর ঘর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসে। কখনো ভেসে আসে কথার আওয়াজ। নির্ঘাত তাঁর পোষা জিন আছে। কিছুটা বাড়িয়েই বলেন মোড়ল, তাতে কী এসে যায়?
হুজুরের আকস্মিক আগমনে নূরা পাগলার কথা সবাই যেন কিছুদিন ভুলেই ছিল, কিন্তু আবার মনে পড়লো এক অমাবস্যার পরের রাতে।
মৃত জমির মুনশির লাশ পড়ে আছে কবরের বাইরে, খোলা মুখ দিয়ে ঢুকছে আর বেরোচ্ছে পিঁপড়ার সারি। খবর গেল মোড়লের কাছে, সেখান থেকে আশেকান হুজুরের কাছে।
এবার মোড়ল সাহেব অস্ত্র পেয়েছেন যেন হাতে, বললেন, হুজুর, সব ঐ নূরা পাগলার কাম। আপনে একটা বিহিত করেন।
কপালে ভাঁজ পড়ে হুজুরের, নূরানী চেহারা লাল হয়ে যায়। কও কী, সে কবর খুঁইড়া লাশ বাহির করে?
একে একে অনেক লোকের কথা শোনেন হুজুর, কেউ দেখেনি, কিন্তু সবাই এক কথা বলল, এটা নূরা পাগলার কাজ।
তাকে একটু এইখানে নিয়া আসতে পারবা?
অবশ্যই। এতদিন কেউ নূরা পাগলার গায়ে একটা টোকা দেবার সাহস পায় নি, কিন্তু আজ প্রথম মোড়ল সাহেব তাকে ধরে আনতে বললেন।
হুজুরের সামনে আসার পর তিনি বললেন, এইভাবে ধইরা রাখছ ক্যান? ওরে ছাইড়া দাও।
ছেড়ে দেবার পর মাটিতে বসে পড়লো সে, পিচিক করে থুথু ফেললো। মাটির দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে একদৃষ্টে।
দেখছেন কাণ্ডটা? এতবড় একজন কামেল আদমি সামনে বইসা আছেন, অর কোন হুঁশ আছে?
হুজুর জিজ্ঞেস করেন তাকে, তোমার নামে যা শুনছি, সেইটা কি ঠিক?
চোখ তুলে তাকায় সে, কী শুনছেন?
তুমি নাকি কবর থেইকা লাশ বাইরে নিয়া আসো?
এইটা কী রকম কথা? আমি লাশ বাহির করবো কী জন্য?
লোকজন যে তোমারে কবরস্থানে যাইতে দেখে, সেইটা তো ঠিক।
জবাব দেয় না সে।
বল, ঠিক?
দম নেয় সে, তারপর মুখ খোলে, উনারা নিজেরা বাহির হইয়া আসেন।
বল কী?
জে। আমার সাথে উনারা কথা কন, সুখদুঃখের গপসপ করি।
মিছা কইতাছে হারামজাদা। এইডা অরই কাম। মিনহাজ মিয়া বলে।
জ্বলন্ত চোখে তার দিকে তাকায় নূরা পাগলা, ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যায় মিনহাজ, দিনের বেলাতেও গায়ে কাঁটা দেয় তার।
মাটির দিকে তাকিয়ে বলে সে, আমি কখনো কবর খুঁড়ি না।
হুজুর বললেন, লোকের কাছে কোন প্রমাণ নাই যে তুমিই এই কাজ কর। তয় যদি সত্যিই কইরা থাকো, এইটা আর কইরো না, এতে লাশের অসম্মান হয়।
কিছু বলে না নূরা পাগলা, উঠে আস্তে আস্তে চলে যায়।
গ্রামবাসী হতাশ হয়, তারা ভেবেছিল, এবার এমন শাস্তি দেবেন হুজুর, যে নূরা পাগলার পিলে চমকে যাবে।
প্রতি অমাবস্যাতেই আগের মতো লাশ কবরের বাইরে পড়ে থাকতে দেখা যেতে লাগলো, হুজুরকে বললে তিনি শুধু নিঃশ্বাস ফেলেন, বলেন, ইয়া মাবুদ, তুমিই মালিক।
দেখতে দেখতে কেটে গেল তিনটি বছর।
সে রাতে বুকে ব্যথা উঠলো হুজুরের, বৃদ্ধ মানুষ, সময় বুঝি ফুরিয়ে এলো। মোড়ল জান দিয়ে পড়লেন, কিন্তু ডাক্তার ডাকতে নিষেধ করলেন হুজুর। মোড়লের কানে কানে বললেন, নূরুদ্দীনেরে একবার খবর দিতে পারো? তিনি কখনো তাকে নূরা পাগলা বলে ডাকেন না।
আজ তাকে ধরে আনতে হল না, সে খবর পেয়ে নিজেই এলো। জটাজুট এতদিনে আরও বেড়েছে, দাড়িগোঁফের আড়ালে ঢাকা পড়েছে মুখ। চোখ দুটো লাল, নেশা করেছে কীনা কে জানে।
নূরা পাগলাকে বললেন হুজুর, নূরুদ্দীন, আমি ইশারা পেয়েছি, আমার মৃত্যু হবে। তুমি যে কাজ কর, সেইটা ভালা না। আল্লাহপাক নারাজ হবেন। আমার মৃত্যুর পড়ে তুমি যেন এই কাজ কইরো না, তাতে তোমার খুব খারাপ হবে। আবার বলি, খুব খারাপ হবে।
সে রাতে মারা গেলেন হুজুর। সারা গ্রামের মানুষ কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিল, আর বলতে লাগলো, আহা, ভালা মানুষটা চইলা গেল, আমাগো উপর থেইকা ছায়া সইরা গেল। মোড়ল সাহেব শক্ত মানুষ, তিনিও কাঁদলেন।
অনেক শ্রদ্ধার সাথে সমাহিত করা হল আশেকান হুজুরকে, তাঁর আদেশ অনুযায়ী কবর পাকা করা হল না। তবে তাঁর কবরটা বেশ দূর থেকে দেখা যায়, ঢিবির মতো উঁচু। সব দেখল, সব শুনল নূরা পাগলা, কবর থেকে দূরে বসে রইলো, কাছে গেল না। মানুষজন দেখে, সে কবর থেকে একটু দূরে গাছের নিচে বসে আছে, আর বিড়বিড় করে কী যেন বলছে।
বেশ কিছুদিন গত হল, হুজুরের কবরের ওপর জন্মেছে কচি ঘাস।
নূরা পাগলা হুজুরকে মনে মনে ভয় করতো, তাই এতদিন কিছুই করে নি। দুই অমাবস্যা গেল, কোন কবর খোঁড়া পায় নি গ্রামবাসী। আজ তৃতীয় অমাবস্যা, কী যেন হয়েছে নূরা পাগলার, খুব অস্থির লাগছে।
রাত নামলো। জোনাকি পোকারা আলো ছড়ানো বন্ধ করে দিল, দূরে শেয়ালের ডাক থেমে গেল, নির্মেঘ আকাশে চমকে উঠলো বিদ্যুৎ। গ্রামবাসী অনেকদিন পর প্রচণ্ড ভয়ে কেঁপে উঠলো, সব বাড়ির দরজা জানালা আজ শক্ত করে লাগানো, কাঁথার তলায় সবাই খাড়া করে রেখেছে কান।
খসখস আওয়াজ উঠলো পায়েচলা পথ দিয়ে। বের হয়েছে নূরা পাগলা। গুমগুম শব্দ করে কেঁপে উঠলো মাটি, অমঙ্গল আশঙ্কায় শিউরে উঠছে সবাই।
নূরা পাগলা তখন কী ভাবছে? সে কম ভয় পাচ্ছে না। মারাত্মক পাপের কাজ হবে, সে জানে, কিন্তু তার দুই পা যেন নিজে নিজে চলছে, কোন নিয়ন্ত্রণ নেই তার। মাতালের মতো টলতে টলতে সে হুজুরের কবরের দিকে এগোচ্ছে।
পুনশ্চঃ
নূরা পাগলার লাশ পরেরদিন গ্রামবাসী আবিষ্কার করেছিল হুজুরের কবরের কাছে, সারা শরীর কেউ যেন আগুনে ঝলসে দিয়েছে, খোলা চোখে আতঙ্কের ছাপ। শরীর থেকে সব মাংস কেউ যেন খুবলে তুলে নিয়েছে, কাছে যেতে সাহস পেত না কেউ। দু’দিন পর পচে গিয়ে গন্ধ ছড়ালে সবাই নিয়ে কোনমতে একটা গর্ত খুঁড়ে কবর দেয় সেই লাশ। আশ্চর্য হয়ে দেখে তারা, হুজুরের কবরের মাটি খোঁড়া, দেখা যাচ্ছে হুজুরের মুখ, সেই মুখে আশ্চর্য একটা মৃদু হাসি লেগে আছে, ঠিক যেমন ছিল মৃত্যুর আগের রাতে। হুজুরের কবর আবার আগের মতো করে দেয়া হল।
নূরা পাগলাকে যে জায়গায় কবর দেয়া হয়েছে, সেখানে এখন ফণীমনসা আর অন্যান্য কাঁটাগাছ জন্মেছে, কেউ যেতে পারে না। কেউ অবশ্য যেতে চায়ও না।
অমাবস্যা রাতে আর কোন লাশ বাইরে পড়ে থাকে নি। কিন্তু কেউ কেউ নাকি দেখেছে, আশেকান হুজুরের কবরের পাশে কে একজন বসে প্রতি অমাবস্যায় কান্নাকাটি করে। সবাই বলে, এটা নূরা পাগলার অতৃপ্ত আত্মা, ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত সে এভাবেই কেঁদে যাবে। ভয়ের সাথে দুঃখবোধ হয় গ্রামবাসীর।
………………………………………..(সমাপ্ত)……………………………………