অভিশপ্ত আয়না

অভিশপ্ত আয়না

একটা দুঃস্বপ্ন। স্বপ্নটা চলছেই।
থামার কোন নাম নেই। হঠাৎ উঠে
বসল সুমন। সারা শরীর ঘামে ভিজে
গেছে। হাঁপ ছেড়ে বাঁচল যেন। এরকম
স্বপ্ন মানুষ দেখে!! ডানদিকে
ফিরে তাকাতেই চমকে ওঠে। আরে
ওটাতো আয়না। আয়নায় নিজেকেই
দেখেছে ও। সারারাত আর ঘুম
আসবে বলে মনে হয়না।আয়নাটি একটি পুরাতন
আ্যন্টিক দোকান থেকে কিনেছিল,,,এর পর থেকে
রোজ একই স্বপ্ন দেখে। এমন একটা
দুঃস্বপ্ন। কে যেন ওকে বেঁধে
দিয়েছিল। পা দুটো খোলা ছিল।
হাঁটছিল ও। আর কোথা থেকে যেন
অজস্র কুড়াল উড়ে আসছিল ওর
দিকে। কিভাবে যে বেঁচেছে
কয়েকবার। একবার ভাবে স্বপ্নটা
নিয়ে। তারপর চিন্তা করে দুঃস্বপ্ন
নিয়ে ভেবে কি হবে? ঘুমানোর
চেষ্টা করি। শুয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ
মিলির কথা ভাবলে হয়তো ঘুম চলে
আসবে। কিন্তু তাও হলনা। রাতটা
কোনমতে পার করল সুমন।
মিলি সুমনকে দেখে চমকে উঠল।
: কি হয়েছে তোমার?
: কিছুনা।
: এমন চেহারা কেন?
: কিছুনা বললাম তো
: বলনা কি হয়েছে?
: চুপ কর তো। কথা বলতে ভাল
লাগছেনা।
এটা ইদানীং সুমনের অভ্যাসে
পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় রেগে
যায়। মিলি কিছু বলেনি। ভেবেছে
সময় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু
সুমনের এই অভ্যাসটা দিন দিন
বাড়ছে। কি হয়েছে ওর? কিছুতো
বলেও না। এ দিকে সুমনের মাথায়
অন্য চিন্তা। ফটোগ্রাফী কোর্সের
জন্য ওকে সোনারগাঁ যেতে হবে।
আগামীকাল। কোনভাবেই মনোযোগ
দিতে পারছেনা। যেভাবেই হোক
আজ রাতে ওর ভালভাবে ঘুমাতে
হবে। কোনভাবেই আজে বাজে কিছু
চিন্তা করা যাবেনা। বাসায়
ফিরে এল ও।
রাতে সময়মত ঘুমাতে গেল। কিছুক্ষণ
পর ওর ঠান্ডা লাগতে শুরু করল। এসি
টা বোধহয় বেশি বাড়ানো। রিমোট
নিয়ে অফ করে দিল এসি। তারপরও
ঠান্ডা লাগছে। ব্যাপার কি?
বাইরে কি বাতাস বেশি? জানালা
তো সামান্য খোলা। উঠে বসল ও।
ডানে আয়নার দিকে তাকিয়ে
ভয়াবহ চমকে গেল। ওটা কি? গাছের
উপর সাদা আলখেল্লা পরা কিছু
একটা দাঁড়িয়ে আছে।
না, শুধু দাঁড়িয়ে আছে তা না।
হাততালি দেয়ার মত করছে।
আয়নায় দেখছে। তারমানে
জিনিসটা ওর পেছনে। ভয়ের শীতল
শিহরণ নেমে গেল ওর মেরুদন্ড
দিয়ে। পেছনে ফিরে তাকাবেনা
চিন্তা করেও পেছনে তাকাল।
কিছুই নেই। আবার আয়নার দিকে
তাকাল। সেখানেও কিছু নেই।
চোখের ভুল? মনের ভুল? সে রাতেও
ঘুম হলনা ওর।
ভোরেই ঘুম ভাঙ্গল। সোনারগাঁ
যেতে হবে। খেয়ে দেয়ে রেডি হল।
বের হয়ে পড়ল। সঙ্গে থাকবে ওদের
টীম। সকাল ৯টার মধ্যে পৌঁছে গেল।
টীম নেমে প্রথমে এলাকাটা
ভালভাবে ঘুরল। মনে খটকা লেগে
আছে সুমনের। জায়গাটা কোথায়
যেন দেখেছে ও। মনে করতে
পারছেনা। কিছুতেই পারছেনা।
ওইতো দাবার বোর্ডের মত মার্বেল
পাথরের মেঝে। ওপরে ঝাড়বাতি
লাগানোর জায়গা। কিন্তু এটা ও
আগে কোথায় দেখেছে। মনে করতে
করতেই ক্যামেরার লেন্সে ছবি
তোলার জন্য চোখ লাগায়। আর
তখনই দেখতে পায় একটা কুড়াল ওর
দিকে ছুটে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে
শুয়ে পড়ে ও। কিন্তু কোথায় কি?
কিচ্ছু নেই। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল
কোথায় দেখেছে এই জায়গাটা।
স্বপ্নে। খুব ভয় পায় সুমন। ভয়ে ভয়ে
আবার ক্যামেরার লেন্সে চোখ
লাগায়। নাহ, এবার কিছু নেই।
বিভিন্ন জায়গার ছবি তুলে টীমসহ
ফিরে আসে ঢাকায়।
দিনে দিনে কাজে অন্যমনস্ক হয়ে
পড়ছে সুমন। ও এ পর্যন্ত যা যা
দেখেছে সেগুলো নিয়েই ভাবে।
মনে মনে সেগুলো ওর করতে ইচ্ছা
করে। পরের দিন রাতে গাড়িটা
নিয়ে চলে যায় আবার সেই
জায়গায়। চিন্তা করে আজ কিছু
একটা হয়ে যাক। মরে গেলে মরেই
যাব। চারদিক অন্ধকার। দূরে স্ট্রীট
লাইটের আবছা আলো। মেইন গেট
খুলে ভিতরে ঢুকে ও। কিছু দেখতে
পায়না। হাটতে থাকে। কিছুক্ষণ পর
সেই ঘরটা খুজে পায়। কিন্তু চিন্তা
করে স্বপ্নের মত কে ওকে বেধে
দেবে যাতে শুধু পা দুটো খোলা
থাকে। চিন্তাটা বাদ দিল। সাথেই
ছিল ক্যামেরা। ছবি তুলল কয়েকটা।
বাসায় ফিরে এল। ওয়াশ করল
ছবিগুলো। ছবিগুলো দেখে ভূত
দেখার মত চমকে উঠল সুমন।
প্রত্যেকটা ছবিতে সাদা কাপড়
পরা ভূতটা। লেন্সের সামনে বা
আশেপাশে। কিন্তু একবারও দেখা
দেয়নি। ভয় পেল ও। মেজাজ ও
খারাপ হল। চিন্তা করল যেই গাছে
ভূতটা দেখেছিল সেখানে যাবে।
কিছুক্ষণের মধ্যে গাছটার নিচে
গিয়ে দাড়াল। কিছুই নেই। কিছুক্ষণ
পর ভূতটা ভেসে এল কোথা থেকে।
ভয় পেল সুমন। থেমে গেল ভূতটা।
তারপর উল্টো দিকে ভেসে চলতে
লাগল। অবাক হল সুমন। কিন্তু ভূতটার
পিছনে পিছনে যেতে লাগল সে।
ভূতটাও যাচ্ছে। সুমনও হাঁটছে।
কিছুক্ষণ পর মনে হল আর যাওয়া
উচিত হবেনা। ফিরতে হবে। কিন্তু
সুমন দেখে পিছনে যেতে পারছেনা
ও। সামনেই চলেছে ওর পা। সামনের
দিকে এগিয়ে চলেছে ভূতটার
পিছনে পিছনে। কখন যে একটা
গোরস্থানের ভেতর ঢুকে পড়েছে
খেয়াল করেনি ও। হাঁটতে হাঁটতে
একটা গর্তে পড়ে গেল ও। ভূতটাকে
এখন আর দেখতে পাচ্ছেনা। উপুড়
হয়ে পড়েছে ও। ঘুরে আকাশের
দিকে তাকাতেই সজোরে একটা
কুড়াল এসে আঘাত করল ওর মাথায়।
মারা গেল সুমন।
সুমনের বাসায় এসেছে মিলি। সুমন
মারা গেছে আজ চারদিন। মিলাদে
এসেছে ও। কেউ কিছু বোঝেনি যে
কেন সুমন ওভাবে মারা গেল। কেঁদে
কেঁদে চোখ লাল হয়ে গেছে
মিলির। অনেক ভালোবাসতো ও
সুমনকে। সুমনের ঘরে ঢুকল ও। সুমন
ব্যবহার করে এরকম কিছু জিনিস
নেবে। সুমনের স্মৃতি হিসেবে।
সুমনের রুমের আয়নার সামনে বসল
মিলি। চোখ লাল। নিজেকে
আয়নায় দেখে অঝোরে কান্না এল
ওর। মুখ নিচু করে কাঁদতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে আয়না দিয়ে
জানালাটা দেখল। গাছটা চোখে
পড়ল। মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে
তাকাল মিলি।
কিন্তু……….. মিলির প্রতিবিম্বটা
মিলির মত উল্টো দিকে জানালার
দিকে ফিরে তাকায়নি। আয়নায়
মিলির প্রতিবিম্বটা লাল চোখে
আর ক্রূর হাসি ঠোঁটে নিয়ে মিলির
দিকেই তাকিয়ে আছে।
মিলি এখনও জানেনা কি অঘটন
ঘটিয়ে ফেলেছে ও……………..
সুমনের পর এবার হয়ত ওর
পালা |

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত