আমি কোনদিন ভূতে বিশ্বাস করিনি। পল্লব, আমার বন্ধুর কিন্তু ভয়ঙ্কর ভূতের ভয়। নিজে তো ভয় পায়ই আবার আমাকে বলে, “ভূত কিন্তু সত্যিই আছে জানিস!”
কী বলবেন ওই রকম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন একজনকে?
“ভূত যদি থাকেই তাহলে আরও অনেক কিছুই আছে,”
আমি তর্ক করে বলি, “লক নেস মন্সটার আছে, ডাইনি বুড়ি বাবা ইয়াগা আছে, রাক্ষস, পিশাচ, পরিরাও আছে!”
তেমাথার মোড়ে যে সাহেব বাড়িটা আছে সেটার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল। বিড়বিড় করে কী একটা বলে একটু দূরে সরে গিয়ে দাঁড়াল পল্লব। শ্বাপদের মতন চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। সব সময় ওই রকম করে পল্লবটা, তর্কটাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে লেজ গুটিয়ে পালাবে!
“কখন থেকে দেহগুলো পড়ে রয়েছে বাড়িটার সামনে অথচ পুলিশ আর অ্যাম্বুলেন্সের পাত্তাই নেই,” একজন গ্রামবাসী বিরক্ত হয়ে বলল।
“রেডিও টিভির লোকজন পর্যন্ত এত দূরে চলে এসেছে অথচ পুলিশের দেখা নেই,” আরেকজন বলল।
“ন’টা পঁয়তাল্লিশ বাজে পল্লব, বাড়ি যাবি তো, নাকি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি?”
“এটা কিন্তু ভয়ঙ্কর সমস্যা তোর ইন্দ্র, আমার কথা কিছুতেই মানতে চাস না! রঙিন সুন্দর এই পৃথিবীটাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে হবে আমাদের সেটা মেনে নে এবার।”
পল্লবের কথার কোন মানে বুঝতে পারছিলাম না আমি। রঙিন সুন্দর এই পৃথিবীটাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে হবে আমাদের মানে কী?
থেমে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম আমি, যদি কিছু বুঝতে পারি ওর হেঁয়ালি। কে একজন ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে চোখ ঢেকে পালাল। কত লোক জড়ো হয়ে গেছে চারিদিকে। রবিবার সকালেও গ্রামের রাস্তায় কত লোক। বেশ সাড়া জাগানো ঘটনা বলেই হয়তো।
ন’টা পঞ্চান্ন হয়ে গেছে তাও পলাশ ওইখান থেকে নড়তে রাজি নয় তাই আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভয়াবহ ঘটনার পরবর্তী অধ্যায় দেখছি।
“প্লিজ আপনারা সরে দাঁড়ান, অ্যাম্বুলেন্স এল বলে,” টিভি স্টেশানের ক্যামেরাম্যান ভদ্রলোক চিৎকার করে গ্রামের লোকজনের ভিড় ঠেলে ঠেলে সরাতে লাগলেন।
জনগণ শুনল ওনার কথা, কিছুটা সরে গিয়ে অনেক দূর থেকে আসা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের জন্যে রাস্তা করে দিল।
আলো জ্বালাতে নেভাতে নেভাতে ক্যাঁ কোঁ শব্দ করে একটা অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হল। মনের ভিতরটা কেমন যেন করে উঠল আমার সেই শব্দে। রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহ দুটোর দিকে তাকিয়ে আরও চমকে উঠলাম আমি।
“ইন্দ্র, সময় হয়ে গেছে রে, এবার এখান থেকে যেতেই হবে,” পল্লব বলে উঠল। তোলপাড় চলছে আমারও বুকের ভিতর সামনের দৃশ্যটা দেখে।
ভূত বলে যদি কিছু না থাকে তাহলে আমাদের শরীরগুলো কী করে সাহেব বাড়ির সামনের রাস্তায় পড়ে আছে আর আমরা বাড়ির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি?
তর্ক করতে করতে কাল মাঝরাতে আমি আর পল্লব পাশের গ্রামের ভূতুড়ে সাহেব বাড়িটায় রাত কাটাবো বলে এখানে এসে হাজির হয়েছিলাম বটে, এখন আবছা আবছা মনে পড়ছে, কিন্তু তারপর কী ঘটেছিল আর আমার কিছুই মনে নেই।
……………………………………….(সমাপ্ত)……………………………..