আমাদের সমাজে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ রয়েছে, যাদের বিশ্বাস ভিন্নতর।
কোন কোন বিষয় এমন রয়েছে, যা কিছু মানুষ বিশ্বাস করে আবার কিছু মানুষ তা অস্বীকার করে।
ভুত- প্রেত ও দৈত্য -দানব এমনই একটা রহস্য, যা অনেক মানুষ না জানার কারনে এগুলোর অস্তিত্ব বিশ্বাস করেনা।
অথচ এগুলো কুরআন- হাদিস দ্বারা প্রমানিত বাস্তব সত্য।
আমাদের সমাজে এগুলোর প্রভাব মাঝে মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়।
সুরা নাস- এ খান্নাস এর কথা বলা হয়েছে,যা জিন ও মানব জাতীয় হয়ে থাকে।
হাদিস শরীফে এসেছে, প্রত্যেক মানুষের সাথে একজন সহচর সয়তান বিদ্যমান থাকে।
এ সয়তানটাই হলো ‘ খান্নাস ‘ তথা প্রেতাত্মা , ভুত।
নবী সুলাইমান আঃ এর সমকালীন মানুষ গুলো বেশি বেশি ভুত- প্রেতের চর্চা করতো।
তাছাড়া দৈত্য – দানবদের দৌরাত্ম্য ছিল বহু ব্যাপক।
ভুত- প্রেত ও দৈত্য – দানবদের জুলুম এত বেশি সীমাতিক্রম করেছিল যে,মহান আল্লাহ পাক ঐসকল অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য তাঁর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালামকে স্পেশাল মুযিযাহ সহ প্রেরণ করেছিলেন।
তিনি খোদায়ী শক্তিবলে জিন- ভুত সহ সব কিছুকে তাবেদারীর ছিকলে আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
হজরত সুলাইমান নবী গত হয়েছেন,আমাদের নবী গত হয়েছেন।
এ কলি যমানায় এসে ভুত-প্রেত ও দৈত্য – দানবের প্রভাব বহুগুণে বেড়ে গেছে।
জন্তু- জানোয়ার, মানুষ,গাছ- পালা সবকিছু আজ তাদের নিগ্রহের শিকার।
যাহোক, আমার গল্পের বিষয় এ সংক্রান্ত হওয়ায় এত লম্বা ভূমিকা টানলাম।
এবার মূল গল্পে আসি।
দাদপুর গ্রাম ঘনবসতিপূর্ণ একটা আদর্শ গ্রাম।
এ গ্রামে স্কুল,মাদ্রাসা,মসজিদ, ঈদগা,গোরস্তান, খেলার মাঠ,বাজার সবই আছে।
আবার আদাড়,বাদাড়, খাল- বিল,শ্বশ্বান, দুষন্তর পুকুর,ডোবা এগুলোও রয়েছে।
এ গ্রামেই বাস করে ‘আফসার চৌকিদার’।
তাকে সবাই চৌকিদার নামেই ডাকে।
অস্থির প্রকৃতির এক রশিক মানুষ হিসেবে সবাই তাকে জানে।
একাধিক বার ঘর – বাড়ি নির্মাণ ও ধ্বংস করা তার অনেকটা নেশা বলা যায়।
কয়েক বছর আগেও একবার আদাড়- জঙ্গলে কুটির নির্মাণ করে সেখানে তাকে একাকী রাত যাপন করতে দেখেছি।
সে অত্যান্ত সাহসী ছিল।
একদিন চৌকিদার তার বাড়ির পাশে ‘চাত্রা’ পুকুরে জাঁখই নিয়ে মাছ মারতে যায়।
সে যেখানেই জাঁখই ফেলে তো শৈল মাছ উঠে; কিন্তু রাখতে পারেনা– লাফ দিয়ে পালায়।
এভাবে সে অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
এ ঘটনার কয়েকদিন পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
দিন- দিন তার অসুখ কমাতো দুরে থাক, আরো বাড়তে থাকে।
ডাক্তার, কবিরাজ, ঝাড়- ফুঁক কিছুতেই কিছু হয়না।
এক পর্যায়ে চৌকিদার শয্যাশায়ী হয়ে নাওয়া- খাওয়া ছেড়ে দেয়।
শরীর শুকিয়ে কংকাল সার হয়ে যায়, সবাই তার বাঁচার আশা ছেড়ে দেয়।
এ অবস্থায় একরাতে এক সয়তান দানব এসে তাকে নিয়ে উড়াল দেয়।
চৌকিদার সব প্রত্যক্ষ করছে; কিন্তু কিছু বলতে বা চিৎকার করতে পারছেনা।
ঐ দানব এক পর্যায়ভেদ তাকে নিয়ে গ্রামের পুর্ব প্রান্তে নদীর ধার ‘বুড়ির ঘাট’ এর বট তলায় নিয়ে যায়।
সেখানে দানব সমাজে চৌকিদারের বিচার হবে।
সেখানে বট গাছের তলে চৌকিদারকে আসামী করে বেধে ফেলা হয়।
দেখতে দেখতে অনেক দানব সেখানে উপস্থিত হল।
দুই জন দৈত্য মিলে একটা চট টেনে বিশাল লম্বা করে মাঠের মধ্যে পাড়লো।
নির্ধারিত সময়ে বিচার আরম্ভ হলে, দৈত্য প্রধান বাদীর মুখ ডিটেইল্স শুনলো।
এদিকে আসামীর জবান সম্পুর্নভাবে বন্ধ,সে শুধু তাদের কান্ড- কীর্তি চেয়ে দেখছে।
চৌকিদার দেখলো, এক সময় তাদের সভা ভাঙ্গলো।
পুনরায় তাকে কাঁধে করে উড়ায়ে নিয়ে যাওয়া হলো বিরান হয়ে যাওয়া পার্শ্ববর্তী বাড়ি ‘সিংয়ের দালানে’।
সেখানে তাকে জিনের বাদশার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
চৌকিদার দেখতে পেল, দেড় হাত লম্বা একটা তামাকের হুঁক্কা জ্বালানো হয়েছে।
পিঠে কুঁজ বিশিষ্ট অথচ লম্বা দেহধারী এক দানব হুঁক্কার সামনে আসন নিল।
ইনিই হলেন জিনের বাদশাহ,দানব রাজ।
তিনি বসেই হুঁক্কাতে দিলেন এক টান।
নিমিশেই ধোয়ার কুন্ডলি পাকিয়ে তামাক নিঃশেষ হয়ে গেল।
বাদশাহ বাদী জিনকে জিজ্ঞাসা করলেন, চৌকিদারের কেস সম্পর্কে।
দানবটি দাঁত কড়মড় করে বল্ল,
” ওঁকে মেঁরেঁ ফেঁলব,ওঁ আঁমাকেঁ জাঁখয়েঁ তুঁলে আঁছাঁড় দিঁয়েঁছেঁ।”
” সোঁ তোঁকেঁ আঁছাড় দিঁল কেঁন? “– বাদশাহ বল্ল।
“হুঁজুঁর আঁমি মাছ রুঁপেঁ খেঁলা কঁরছিঁলাম,সেঁ আঁমাকেঁ আঁছাঁড় দিঁয়েঁছেঁ!”– বল্ল বাদী জিনটি।
এরপর বাদশাহ ঐ সয়তান জিনটিকে বলেছিল যে,সে কেন আদমের জাঁখয়ে ঢুকেছিল? আদম জাতি তো জিন জাতিকে দেখতে পায়না।
যেহেতু চৌকিদার জিনকে দেখেনি, তাই তাকে দোষ দেয়া যায়না।
বাদশা যোখন চৌকিদারকে মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিলেন,তখন সে বাক শক্তি ফিরে পেল।
বাদশাহ চৌকিদারের সাথে কথা বল্লেন, নেতৃস্থানীয় কয়েক ব্যক্তির ব্যাপারে আলাপ করলেন,তাদের কুশল জিজ্ঞেস করলেন।
এর পর ঐ দুষ্ট জিনকে বল্লেন যে, যেখান থেকে আসামীকে আনা হয়েছে, সেখানে পুনরায় তাকে সসম্মানে যেন সে রেখে আসে।
আর চৌকিদারের হাতে একটা চিরকুট দিয়ে বাদশা তাকে বল্লেন যে, বাড়ি না পৌছা পর্যন্ত যেন সে জিন কে চিরকুটটি না দেয়।
রাত আড়াইটার দিকে জিন তাকে নিয়ে বাড়ি পৌছিয়ে দেয়।
অবশ্য ঘরের চালের উপর জিনটি চৌকিদার কে ধমকিয়ে চিরকুট নিয়ে তাকে ফেলে দিয়ে বিদায় নেয়।
চৌকিদারের ছেলেরা চালের উপর ধুপধাপ শব্দ শুনে বাইরে এসে দেখে,চৌকিদার উঠানে পড়ে আছে।
পরে সন্তানদের সেবা সশ্রুসায় চৌকিদার সম্পুর্ন রুপে সুস্থ্য হয়ে উঠে।
এই হলো চৌকিদারের ‘ভৌতিক ভ্রমন’।
বিশ্বাস না হলে,যদি কখনো সম্ভব হয় — দাদপুর গ্রামে এসে আফসার চৌকিদার কে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
এখনো সে দিব্যি বেঁচে আছে।
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক