বৃষ্টি টা এসে পূজোর আনান্দ গুলো মাটি করে দিলো। এই বলে টুল-টা মাটিতে পেতে..মাথার উপরে ভাঁজ করা ত্রিপল-টা বেশ কায়দা করে টাঙিয়ে নিলো রুমা।বেশ টাইট দুটো গিট দিয়ে ত্রিপল এর আগের দুইপ্রান্ত গুলো দুপাশে মাটিতে পোঁতা বাসের আগার সাথে বেধে নিলো।
রুমা পেশায় সে টুকটাক কাজ করে সংসার চালায়। তার স্বামী ভ্যান চালক। রুমা বছর দু-এক ধরে এইখানে কালীপূজোর দুই-তিন দিন ব্যাবসা করতে আসে। রুমার বাড়ি নদীয়ার কোনো এক যায়গাতে।
ত্রিপল-টা বাঁশের সাথে বেঁধে..স্টোভের উপরে ঘুগনি গরম করতে বসালো। তার স্বামী দোকানের ভেতর-টা পরিস্কার করছিলো।
তখন ৭.৪৫ মতন বাজে ঘড়িতে। দোকান – টা বেশ পরিপাটি করে গুছিয়ে যেই দোকানের কাজে হাত লাগাবে রুমা। তখন বাড়ি থেকে রুমার দেওর রুমার বর-কে ফোন করে জানালো যে।
তার মায়ের ভীষণ শরীর খারাপ করেছে,তারা যেন তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসে।
রুমার মাথা-টা ভীষণ গরম হয়ে গেলো। বসতে না বসতে বাড়ির ডাক। আবার মন-টা দুঃক্ষে ভরে উঠলো।
শাশুড়ি মা-কে বড়ো ভালোবাসে রুমা। কি আর করবে রুমা তাড়াতাড়ি করে গুছাতে লাগলো সব কিছু। কিন্তু তার যে আজ একটাকাও লাভ হলো না। পূজোর পর। ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচা,বাড়ির গ্যাসের খরচা,কারেন্টের বিল এগুলোর কোনোটাই জোগাড় হইনি তার।
রাত ৮.১৫ এর মধ্যে দোকান বন্ধ করে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। রুমার হাতে দুইখানা ব্যাগ। আর তার স্বামীর হাতে তিন-টে ব্যাগ। কিছুটা হাঁটা পথ,তার পরে লাইন, সেই লাইন ধরে কিছুদূর হাঁটার পর প্ল্যাটফর্ম।
যাইহোক হাঁটা পথ পেড়িয়ে রেল – লাইন ধরে তারা প্ল্যাটফর্ম এর উদ্দেশ্য রওনা দিলো। আকাশ-টা বাজির বাহারে রঙিন হয়ে আছে।
প্ল্যাটফর্ম এ রাস্তা দিয়েও আসা যায়। তবে ভীষণ ঘুর হয়। তাই লাইন বরাবর আসছিলো।
লাইন বরাবর ও গেলেও বেশ অনেক-টা সময় লাগে। ঘড়িতে সময় তখন রাত ৮.৩৫। যদি ট্রেন সঠিক সময়ে আসে..তাহলে ৯.৩০ এর মধ্যে একটা রাণাঘাট লোকাল পেয়ে যাবে তারা।
যাইহোক তারা প্ল্যাটফর্মের বেশ কাছাকাছি চলে আসে। দূর থেকে প্ল্যাটফর্মের টিমটিমে আলো দেখা যাচ্ছিলো।
হঠাৎ তারা শুনতে পাড়লো। গোঙানির আওয়াজ। আওয়াজ-টা চার নম্বর লাইনের দিক থেকে আসছে। তারা দুজনে ইতস্তত ভাবে দৌড়ে গেলো।
গিয়ে দেখে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক লাইনের পাশে পড়ে আছে। তার বউ হাত দিয়ে যেই দেখতে যাবে ওমনি তার স্বামী তখন তাকে বলে উঠলো হাত দিও না। যদি গুরুতর কিছু ঘটনা হয়। তাহলে বেকার ঝামেলাতে জড়িয়ে পড়বো দুইজনে।
কিন্তু রুমা কোনো কথাই শুনলো না। সে ওই ভদ্রলোক টাকে তুলে উপড়ে বসালো। তাকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে অভুক্ত সে।
ভদ্রলোক বললেন – একটু জল….জল..জল।
রুমা তার স্বামীর হাতের থেকে ব্যাগটা নিয়ে..ব্যাগের ভেতর থেকে জলের বোতল বের করে..ভদ্রলোকের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
লোকটি মনে হয় ভীষণ তৃষ্ণার্ত ছিলো। তিনি
পুরো জলের বোতল-টা নিমেষে শেষ করে ফেললেন।
রুমা – আপনি কিছু খাবেন?
এই বলে রুমা তার ঘুগনি ভরতি টিফিন কৌটো-টা বের করে..সেই কৌটোটার মুখ খুলে ওই ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে দিলেন।
ভদ্রলোক কে দেখে মনে হচ্ছিলো বেশ কয়েক দিন ধরে অভুক্ত। তিনি পুরো ঘুগনি খেয়ে ফেললেন।
চারিদিকে বাজির আওয়াজ। আকাশে হালকা মেঘের আভা। আজ নাকি কলকাতা – তে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে।
তারা প্ল্যাটফর্মের থেকে বেশী দূরে ছিলেন না। হঠাৎ তারা শুনতে পাড়লেন। তাদের গন্তব্য যাওয়ার ট্রেনের খবর ঘোষণা করলো ষ্টেশনে।
ওরা দুই জনেই প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকিয়ে শুনলো সেই ঘোষণা-টা। তারপর দুই জনেই ওই ভদ্রলোক যেখানে বসেছিলো সেইখানে তাকাতেই চমকে উঠলেন।
তারা দেখতে পেলো। ওই ভদ্রলোক-টা ওখানে নেই। এদিকে আবার ষ্টেশনে ঘোষণা হলো ট্রেনের। তারা দুইজনেই ব্যাগ গুছিয়ে প্ল্যাটফর্ম এর দিকে রওনা দিলো।
ট্রেন ধরে ভালোই ভালোই তারা বাড়ি পৌঁছে গেলেন। শাশুড়ি ছোটো ছেলের ঘরে থাকে। তাই ওরা দুইজনেই বাড়িতে গিয়ে আগে মা-কে দেখতে গেলেন।
রুমার দেওর জানালো..ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। ডাক্তার ওষুধ দিয়ে বললো। তিন দিন পর আবার যেতে। ডাক্তার খানা নিয়ে যাবার পর সেমন কোনো সমস্যা হইনি।
ওরা ঘরে চলে আসে। রুমার বড়ো মেয়ে মল্লিকা রান্নাকরে রেখেছিলো।
রুমা ও রুমার বর খেয়ে-দেয়ে শুয়ে পড়ে।
ওরা গ্রামের মানুষ।
রুমা ভোর ৪.৩০ এর মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়ে।
ওঠে আগে উঠোনে ঝাড়ু দেই। তারপর বাসনকোসন মেজে স্বামী – স্ত্রী যে যার কাজে চলে যায়।
তা সেইদিন ও আগে উঠোন ঝাড়ু দেয়। তারপর যেই বাসন মাজতে যায় তখনি তার সাথে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে।
ওইযে টিফিন কৌটো-টা যেটাতে করে ওই লোকটিকে ঘুগনি দিয়েছিলো খেতে।
সেই কৌটোর মধ্যে দেখে ১৫-১৬ খানা ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট মিশিয়ে ছিলো।
টিফিন কৌটোর মধ্যে পয়সা এলো কিভাবে।
রুমা যখন টিফিন কৌটো বন্ধ করেছিলো তখন কিন্তু ওর মধ্যে কোনো টাকা দেখেনি।আর নোটগুলো এতো চকচকে যে মনে হচ্ছে এইমাত্র ব্যাংক থেকে তুলে আনা হয়েছে।
আর ওই ভদ্রলোক টা কিভাবে কাল চোখের সামনে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন এই কথা গুলো আজও ভাবায় রুমা কে।
……………………………………………..সমাপ্ত……………………………………………